#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৩৭)
সায়লা সুলতানা লাকী
রুশের পরীক্ষা সামনে তাই ওকে নিয়ে এখন ওর আব্বু আর ছুটির দিনগুলোতে সকালে খেলতে যায় না। ইদানিং পড়াশোনার জন্যও খুব চাপাচাপি করছে। কোচিংতো আগে একটা ছিলোই এখন আরেকজন হাউজ টিউটর নিয়োগ দিয়েছে ওর পড়াশোনার জন্য । এতসব প্রেসারের কারনেই হয়ত রুশের মেজাজ একটু খিটখিটে হয়ে গেছে ইদানিং । মাঝে মধ্যেই ওর আচরনে তা একটু একটু উপলব্দি করতে পাচ্ছেন ওর নানু।
আজ দুপুরে খেতে বসে প্লেটে মাছ দেখে রেগে গেলো রুশ ভয়ংকর ভাবে। খালাবুয়াকে ডেকে এনে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠল
“খালাবুয়া তুমি সবসময় এসবই কেন রান্না কর? তুমি জানো না আমি মাছ খেতে পছন্দ করি না? মুরগী রাঁধতে পারো না? আমাকে সবসময় মুরগীই দিবা বুঝসো। এগুলা দিলে আমি খাবো না।” কথাটা বলেই ও উঠে গেল। ওর নানু পাশেই বসে ছিলেন কিন্তু কিছুই বললেন না। চুপচাপ নিজের খাওয়ায় মন দিলেন। বুয়া কিছুটা অবাক হল ওর এমন আচরনে। এর আগে কখনওই এমনটা করেনি।
নানি নিজে খেয়ে বুয়াকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। রুশকে একবার ডাকলেনও না বা দ্বিতীয়বার কোন রিকোয়েস্টও করলেন না। ভাবটা এমন যে তিনি এসব বিষয়কে মোটেও গায়ে মাখছেন না।
বুয়া একবার চেয়েছিল একটা ডিম ভেজে দিতে একটু সেধে ভাত খাওয়াতে কিন্তু নানি তা করতে বাঁধা দিলেন ।
বিকেলে লাবন্য বাসায় এসে টেবিলে রাখা খাবার খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সন্ধ্যায় রুম থেকে বের হয়ে দেখল রুশের টিচার আসছে পড়াতে, তাই আর লাবন্য ওর রুমে ঢুকল না। সোজা নানির সাথে কথা বলতে তার রুমের দরজার কাছে গিয়ে থমকে গেল। নানি সম্ভবত বড় খালামনির সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন। কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে তার মেজাজ খুব গরম। একটু সামনে যেতেই শুনল নানি বলছে
“তোর ছেলে কি করবে তা কি আমি ঠিক করব?”
“আম্মা আপনেতো একটু বুঝাইয়া বলতে পারেন।”
“না আমি পারি না।আমি অন্যের ছেলেকে কোন শাসন করতে পারি না। তোর ছেলেকে কিছু বলতে হলে তোকেই বলতে হবে। এসব বাড়তি ঝামেলা আমি ঘাড়ে নিতে পারব না।”
“আম্মা ও আপনার কথা শুনে, আমার কোনো কথা শুনে না। আমার কথা এখন ওর কাছে বিষের মতো লাগে। আমি ডানে বললে ও এখন বায়ে হাঁটে। ”
“তোর এত বাধ্যগত ছেলে হঠাৎ এমন হলো কেনরে রেহানা ? তুই না কত সুন্দর করে ছেলেমেয়ে পালতে পারিস! ভুলতো শুধু রেশমার মায়েরা করে।তাই না? তাইতো বলতি সবসময়।”
“আম্মা এসব ওই লাবন্যের যাদুটোনা। ওর রংঢংএই হিমেলের মাথাটা নষ্ট হইছে। এত এত ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব আনতেছি, ছেলে পছন্দই করতেছে না। ওর এক কথা জীবনে বিয়ে করলে ওই মেয়েরেই করবে,বলেনতো কি সাংঘাতিক কথা!”
“হুমম বড়ই সাংঘাতিক! এখন তুই কি করতে চাস?”
“কি করতে চাই মানে? ওই বেয়াদব মেয়েকে আমি কোনোদিনই আমার ছেলের বৌ করব না। দেখলেন না হুমার সাথে কি ব্যবহারটা করল?”
“ও হুমার সাথে কোন ভুলই করে নাই। ভুল যা করার তা হুমাই করেছিলো।”
“আম্মা আপনে ওই মেয়ের কাছে থেকে থেকে পুরাই অন্ধ হয়ে গেছেন। আপনে ওর শয়তানি রুপটা দেখতে পাচ্ছেন না।”
“তাহলে আর শুধু শুধু আমাকে কল দিচ্ছিস কেন? একজন অন্ধ কি করে তোর সমস্যা সমাধান করবে।”
“বুঝছি আম্মা আপনে আমার কোন কাজই করবেন না। আচ্ছা রাখি।”
“হ্যা রাখ।ভালো থাকিস।”
লাবন্য দূরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনল আর মনে মনে হাসল নানির উত্তরগুলো শুনে। একটু সময় নিয়ে ভাবল চলে যাবে কি না, পরে আবার ঢুকে পড়ল নানির রুমে ।
“তুই? পড়তে বসিস নাই?”
“না, তুমি চা খেয়েছো? টেবিলে দেখলাম না তোমাকে তাই….”
“হুমম আমি আসরের পরপরই চা খেয়েছি…..”
“রুশও!”
“উঁহু, ওকে খেতে ডাকিনি।”
“ওমা, তাই নাকি, কেন? দুপুরে কি একটু বেশই ঘুমিয়েছিলো নাকি? এখনতো টিচার চলে আসছে দেখলাম।”
“হুমম, এখন পড়ছে পড়তে দে, ক্ষুধাটা ভালোমতো লাগুক তারপর দেখি কি করে?”
“মানে?”
“মানে হইল রুশ বাবা আইজকা দুফুরে কিছু খায় নাই। অনেক মেজাজ দেহাইছে আমার লগে। মাছ রানছি হের লেইগ্যা।” রুটির বেলুন হাতে তাসলিমা এসে দাঁড়ালো দরজায়।
“কি বলছো তুমি? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না? রুশ মেজাজ দেখাইছে তোমার সাথে? এত্তো বড় সাহস ওর?”
“তাসলিমা তুই যা রুটি রেখে আগে লাবুকে চা দে।”
“নানি তুমি কিছু বলো নাই?”
“আস্তে আস্তে, এতটা হাইপার হলে চলবে কীভাবে? সব কিছুর রিয়েক্ট সাথে সাথে করতে হয় না। ওর এখন বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময়তে খুব সাবধানে চলতে হয়। এমন হুটহাট চিৎকার চেচামেচি করলে ফলাফল ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হয়।”
“তুমি বুঝছো, ও কতটা বেয়াদব হইছে, এসবই ও ওর আব্বুর লাই পেয়ে করেছে। তাকে কি এসব জানিয়েছো? কি বলে সে এসব শুনে?”
“চুপ, একদম চুপ। তুই হলি সবচেয়ে বড় বেয়াদব। ফাজিল মেয়ে একটা নিজের বাপকে সম্মান দিতে জানে না। তুই কি রুশকে আদব কায়দা শিখাবি? সবকিছুতেই বাপকে প্রতিপক্ষ বানানোর একটা বদ অভ্যাস তৈরি হইছে তোর মধ্যে ।”
“সরি।”
“কিসের সরি, ফাজিল মেয়ে একটা, বাপ কখনও কারো প্রতিপক্ষ হয়?”
“বললামতো সরি।”
“এগুলা আর করবি না।”
“ঠিক আছে করব না।”
“রুশকে খাবার নিয়ে কোন কথা বলবি না। ও যা করছে তা শুধু আমিই দেখব। সাবধান যদি ভাইকে কোনো দয়া দেখাতে যাস..”
“মাত্থা খারাপ, আমার কোন দয়া নাই। তুমি যেভাবে বলবা সেভাবেই হবে। এখন একটু ঠান্ডা হও। তোমার বিপি হাই হয়ে যাবে। তোমার হিমুকে একটু ডাকবো নাকি বাসায়? ও মালা নিয়ে আসলে হয়তো তুমি…”
“লাবু তুই যা রুমে যা।তাসলিমা চা দিয়ে আসবে রুমে।”
“আচ্ছা যাচ্ছি।” বলে উঠে গেল। লাবন্য খেয়াল করল ওর নানি বেশ চিন্তিত রুশের বিষয়টা নিয়ে সাথে খালামনিও অনেক চাপে রেখেছেন। নিজের রুমে এসে ভাবল বিষয়টা নিয়ে হিমেলের সাথে কথা বলবে কি না। এরপর আর কল দিলো না। মনে মনে বলল খালামনির কোন বিষয় নিয়ে সরাসরি হিমেলের সাথে কথা বলাটা ওর ঠিক হবে না। হিমেল যেমন ওর আর ওর আব্বুর মাঝে আসতে চায়নি ঠিক তেমনি ওরও উচিৎ হবে না ওদের মাঝে যাওয়া। কিন্তু রুশের বিষয়টা ওর মনটাকে একটু একটু অস্থির করে তুলতে লাগল।
রাতে ডিনারের সময় লিখনকে টেবিলে দেখে লাবন্য অবাক হলো না। মাঝে মধ্যেই খেতে বসে। আজও তেমনটা ভেবে লাবন্য চুপচাপ নিজের চেয়ার টেনে বসল। রুশকে এখনও মাছ দিয়েই ভাতের প্লেটটা এগিয়ে দিল আর তাতেই ও দুপুরের মতো রেগে উঠলো ওর আব্বুর সামনেই। লিখন ভেবেছিলো হয়তো ছেলে বাপকে দেখে এতটা সাহস করবে না। কিন্তু ওর ধারনা ভুল প্রমান করে রুশ কর্কশ গলায় বুয়াখালাকে ডাকতে শুরু করল তখন লিখন থামিয়ে দিল ছেলেকে
“রুশ, তোর সমস্যা কি? কী হয়েছে? বুয়াকে ডাকছিস কেন?”
“আব্বু শোনো আমি খালাকে দুপুরে বলেছি আমি মাছ খাবো না। তারপরও খালা মাছই দিয়েছে আমাকে। এই দেখো, দেখো। এগুলা কি ভালো লাগে?”
“হুমম, বুঝলাম, তা তুই মাছ খাবি না কেন?”
“আব্বু প্লিজ, আমার মাছ খেতে ইচ্ছে করে না। আমার ভালো লাগে না।”
“তোর আম্মু থাকতেতো খেতি।”
“আম্মু বেছে দিতো।”
“তুই এখন বড় হয়েছিস, এখনতো নিজেরটা নিজেকেই করতে হবে এটাতো বোঝতে হবে?”
“প্লিজ আব্বু আমি মাছ খাবো না বলছি আমাকে এ নিয়ে কোনো ফোর্স করো না।”
“ও কে, তুই মাছ খাবি না ভালো কথা, টেবিলে সবজি আছে ডাল আছে তা দিয়ে খেয়ে নে।”
“কেন বাসায় মুরগী নাই? খালাকে যে মুরগী রাঁধতে বললাম খালা বানায় নাই কেন ?”
“তুই বুয়াকে বলছিস, বুয়াতো তোর কথা শুনবে না। তুই কি বুয়াকে অর্ডার করতে পারিস? তুই কি সেরকম কেউ? বুয়া আছেন তোর ভালোমন্দ দেখার জন্য, টুকটাক সাহায্য করার জন্য। তোর হুকুম শোনার জন্যতো না। তোর খালা কি তোর ছোট যে তুই ইচ্ছে হলেই অর্ডার দিবি তাকে?”
“আব্বু..”
“আমিতো অবাক হলাম তুই কীভাবে তাকে ডাকলি তা শুনে৷ তোর আম্মু শুনলেতো…।তুই হঠাৎ করেই এমন হয়ে গেলি, খালা এত আদর করে তোকে আর তুই তার সাথে চিৎকার করলি, তার মনে কষ্ট দিলি?”
“সরি আব্বু।”
“সরি তুই আমাকে বলছিস কেন? কষ্ট আমিও কিছু পেয়েছি কিন্তু মেইনলি তুইতো কষ্টটা দিয়েছিস তোর খালাকে।তাই না?”
“ভাই থাক আর বইক্কেন না, আমি কষ্ট পাই নাই। আমি একটা ডিম ভাইজ্যা দেই, রুশ বাবা ভাত খাইয়া লও। দুফুরেরও খাও নাই।”
“সে কি কথা? তুই দুপুরে খাস নাই, কেন? ”
“খেতে ইচ্ছে করে নাই।”
“তুই টেবিল থেকে খাবার রেখে উঠে গেছিস? কি সাংঘাতিক! রেশমা থাকলেতো আজ গোটা তিনচার পিঠে পড়তোরে বাপ। কি ভয়ংকর কাজ করছোস তুই। আমারতো শুনেই…. ”
“সরি আব্বু আমার ভুল হয়েগেছে আর কখনও করব না।” বলে রুশ কেঁদে ফেলল।
লাবন্যের নানি খাওয়া শেষ করে উঠে গেলেন নিজের রুমে। লাবন্য কি করবে তাই ভাবছে। একবার ভাবলো উঠে গিয়ে ভাইকে আদর করবে। আবার ভাবলো তাতে হয়ত সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই নিজেও খাবার শেষ করে উঠে নিজের রুমে চলে গেল।
লিখন চুপচাপ ছেলের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
“আব্বুরে তোদের মা তোদের পাশে নাই। কিন্তু তোদের সুভাগ্য যে তার প্রতিনিধি একজন আল্লাহ তোদের কাছে পাঠিয়েছেন। যে সামনে থেকে তোদের দেখাশোনা করছেন তোদের ভালোমন্দ বুঝছেন এটাকেই এখন মনে হয় আল্লাহর রহমত। দুপুরে যখন মাছটা খেতে ইচ্ছে করল না তখন পাশে নানুকেই বলতে পারতি মাছটা বেছে দিতে। কি পারতি না? তার সামনে এভাবে খাবার রেখে উঠে গেলি কিন্তু তিনি তোকে কিছুই বললেন না কেন তাইতো বুঝতে পারলাম না।”
“নানুমনি আমাকে অনেক ভালেবাসেন, অনেক আদর করেন।তিনি কোনোদিনও আমাকে আম্মুর মতো মারবেন না।”
“এতটা আদর যিনি করেন তার সামনে তোর এমন আচরন করাটা কি ঠিক হল?”
“না আব্বু আমার ভুল হয়েছে। ”
“এসব আমাকে না বলে আমি যাওয়ার পর নানুমনিকে বলিস। তোরা বেয়াদবি করবি তা কিন্তু তিনি সহ্য করতে পারবেন না। তিনি কিন্তু তোদের মাঝে তার মেয়েকে খুঁজে ফিরেন সব সময়। তোদের খারাপ কিছু তাকে বড় কষ্ট দেয়।” কথাটা শেষ করে লিখন আর বসল না উঠে চলে গেল নিচে। রুশ চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল টেবিলে। এরপর উঠে নানুর রুমে ঢুকল।
“আসসালামু আলাইকুম নানু।”
“ওয়ালাইকুম আস সালাম। ”
“এইতো তোমার রাগ এখন নাই হয়ে গেছে, ঠিক বলছি না নানু?”
“কিসের রাগ?”
“ওইযে দুপুরে আমি একটা মিসটেক করে ফেলছিলাম। হুজুর বলেছেন সালাম বিনিময় হলে দুজনের মনে শান্তি বর্ষিত করেন আল্লাহ। তখন ওখানে কোনো রাগ থাকে না। তার মানে এখন তোমার মনে শুধু শান্তি আর শান্তি।”
“আমিতো রাগ করিনি।”
“তাহলে আসো আমাকে মাছ বেছে দাও, আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে দুপুরে খাইনি। এখন না খেলে মরে যাব।” বলে নানুর হাত ধরে টানতে লাগল।
ওর নানু এসে টেবিলে বসে মাছ বেছে বেছে নিজের হাতে ভাত মাখিয়ে খাওয়ায় দিলেন রুশকে। কেন জানি তার চোখ বারবার ভিজে আসতে চাইছে কিন্তু তিনি তা ভেঁজাতে চাচ্ছেন না মনপ্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করছেন।
“নানুমনি তুমি কি জানো তুমি আম্মুর চেয়ে দুইগুন ভালো আর একগুন কম ভালো।”
“কি রকম?”
“দুপুরে আমি যা করেছি এমন যদি আম্মুর সামনে করতাম তবে আম্মু প্রথমেই দুইটা চড় দিতো, তারপর আব্বুকে বিচার দিতো। চিৎকার চেচামেচি করে আমাকে ইচ্ছেমতো বকা দিতো।
শাস্তিস্বরূপ দুইদিন কথা না বলার হুমকি দিত। আম্মু পিটায়ে হলেও দুপুরে ওই মাছ দিয়েই খাওয়াতো। কিন্তু তুমি তা করোনি। তাই তুমি আম্মুর চেয়ে ভালো।”
“আর কম ভালো কেন?”
“আম্মু আর যাই করতো আমাকে না খেয়ে ঘুমাতে দিতো না আর রাতে ঠিকই মুরগী দিতো।”
“তাই?”
“হুমম।”
“নানাভাই শোনো পৃথিবীতে মায়ের মতো আর কেউ হয় না। কখনওই কাউকে নিজের মায়ের সাথে তুলনা করো না। এতে নিজেও কষ্ট পাবে আর তোমার মা’ও কষ্ট পাবে। মায়ের তুলনা শুধু মা’ই হয়। আল্লাহ মা’কে শুধু মা করেই বানায়।তার আর অন্য কোন পরিচয় হয় না।”
রুশের খাবার শেষ হলে পরে রুশেকে ওর রুমে ঘুমাতে যেতে বলে তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন। দুপুর থেকে মনটা কেমন ভার হয়ে ছিল, এখন অনেকটা হালকা লাগছে। কিন্তু লিখনকে বেশ চিন্তিত বলে মনে হল। কিন্তু কেন তা আর জানতে ইচ্ছে করল না তার। তাই মোবাইলটা সাইলেন্ট করে শুয়ে পড়লেন।
সকালে বেশ ছুটাছুটি শুরু হল সবার, লিখন কল দিয়ে জানিয়েছে যে আজ ও অফিসে লেটে যাবে। তাই ওরা তিনজনই জলদি জলদি রেডি হয়ে বের হয়ে গেল। সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দোতলায় বিরাট ঝগড়াঝাটির আওয়াজ শুনতে পেলো। লাবন্য একবার আড়চোখে ওর নানির দিকে তাকাল কিন্তু তিনি বেশ স্বাভাবিকভাবে হেঁটে নেমে গেলেন, আশেপাশে তাকালেন না। রুশ নীচতলায় নেমে একবার লাবন্যকে বলল
“আপু শুনছো দাদি কেমন চিৎকার করছে।”
লাবন্য ওর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল আর আস্তে করে বলল
“সবতো আর রেশমা হয় না। অপেক্ষা কর আরও কত কি দেখবি। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।”
সিএনজি ডেকে এনে সামনে দাঁড়িয়ে সিকিউরিটি গার্ডটা হাসতে হাসতে বলল
“আজ দুইদিন ধইরা যে কি গেঞ্জাম চলতাছে আপনেগো দুইতলার বাসায়।আল্লাহরে আল্লাহ, নিচে বইসা কান ঝালাপালা হইয়া গেছে।”
লাবন্য কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু ওর নানি সেই সুযোগটা দিলেন না। ওকে টেনে সিএনজিতে উঠে গেলেন।
চলবে।