মেঘে_ঢাকা_চাঁদ পর্ব ৪৩

0
844

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৪৩)
সায়লা সুলতানা লাকী

গভীর রাতে নানির ডাকে ঘুম ভাঙল লাবন্যের। হঠাৎ করেই এমন চিৎকার চেচামেচিতে লাবন্য একটু ভয় পেয়ে গেলো। রুম থেকে বের হতেই দেখল নানি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে জুতা পরছে। বারবার জুতা উলোট পালোট হচ্ছে তার। তাড়াহুড়োয় ঠিক মতো পা ঢুকাতে পারছে না যেনো।এমনটা কখন হয় তা লাবন্য বুঝতে পারে। ভয়টা আরও দ্বিগুন আকার ধারন করল তখন। এরই মধ্যে লিখন শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বের হল ওর রুম থেকে। লাবন্য ঠিক কিছুই বুঝতে পারছে না ঘটনাটা আসলে কি হচ্ছে ?

“তোমরা কেথায় যাও?”
“হাসপাতালে। তুই রুশকে নিয়ে সবধানে থাকিস লাবু।”
“হাসপাতালে? কেন?”
“তোর খালামনি অসুস্থ। ”
লাবন্য খেয়াল করল ওর নানি কোনো কথা বলছেন না, শুধু ঠোঁট নড়ছে আর প্রচন্ড ঘামছেন তিনি । লক্ষ্মণটা ভালো ঠেকল না। হুট করেই দৌড়ে রুমে এসে নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফিরে এসে বলল
“আমিও যাব চলো।”
“আহা! তোর যাওয়ার দরকার নাই তুই রুশকে নিয়ে থাক। ও আবার একা হয়ে যাবে বাসায়।”
“অসুবিধা নাই। বুয়াখালা আছে বাসায়। খালাই যথেষ্ট। এত ভাববার কিছু নাই। সমস্যা হলে আমাদের হাসপাতালে দিয়ে তুমি বাসায় চলে এসো।” বলতে বলতে ও ওর নানির হাতটা শক্ত করে ধরল। ও টের পেলো ওর নানি থরথর করে কাঁপছেন। লাবন্য এবার নানিকে শক্ত করে ধরে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল।

রেহেনা বেগমকে নিয়ে ডাক্তাররা ভেতরে আছেন। বাহিরে হিমেল ওর আব্বুর সাথে দাঁড়িয়ে ছিল নানুকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠল বাচ্চাদের মতো।
“বোকা ছেলে একটা, মায়ের অসুস্থতায় এমন করে কেউ কাঁদে বুঝি? বেক্কল কোথাকার। এখন মনকে শক্ত রাখতে হবে আর বেশি বেশি আল্লাহকে ডাকতে হবে। তাও বুঝিস না? আল্লাহকে ডাক।আল্লাহকে ডাক। বলতে বলতে নিজে একটা চেয়ারে বসলেন। লাবন্য ওর নানিকে ছাড়ল না, পাশেই দাঁড়িয়ে রইল। যতটা সাহস সে হিমেলকে দেখাচ্ছে আসলে তার ততটা সাহস নাই তা অন্তত লাবন্য বুঝতে পারছে।

লিখন চেষ্টা করল ডাক্তারদের সাথে কথা বলে পেশেন্টের বর্তমান অবস্থা জানার জন্য কিন্তু তেমন কোনো সুবিধা করতে পারল না। অপেক্ষা করা ছাড়া যেনো আর কোন কাজ রইল না তখন।

রাতটা কাটল এমন করেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আবার কখনও বসে। সকালের দিকে ডাক্তারের সাথে কথা বলার সুযোগ হল। জানা গেলো রেহেনা বেগমের স্ট্রোকের কথা। প্রথম অবস্থায় শুনে ভয় পেয়ে গেল সবাই। তবে ডাক্তারের সব কথা শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হল। অল্পতেই চিকিৎসা পাওয়ায় তেমন কোনো সমস্যা হয় নাই। বাম হাত আর পায়ের রেসপন্সটা এই মুহুর্তে কম পাচ্ছে তবে অল্প কিছু থেরাপি পড়লেই ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করলেন ডাক্তার । এছাড়া আরও কিছু টেস্ট করাতে হবে যা আজ করানো হবে অন্য কোন সমস্যা হয়েছে কি না তা জানার জন্য । এসব রিপোর্ট পেলে পরে সার্বিক অবস্থা জানা যাবে।

রেহেনা বেগম এখন ঘুমাচ্ছেন তাই আর কেউ দেখা করতে পারল না। লিখন সবার জন্য সকালের নাস্তা অর্ডার করেছিল। এখন নানিকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল কেন্টিনে খাওয়ানোর জন্য। লাবন্য খাওয়ার পর নানিকে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগল তার ঔষধগুলো নিয়মিত করার জন্য। কিন্তু তিনি গেলেন না। পরবর্তীতে লিখনের সাথে হিমেলই বের হয়ে গেল নানির ঔষধ গুলো নিয়ে আসার জন্য। লিখন রুশকে স্কুলে দিয়ে অফিসে চলে গেল। হিমেল ঔষধ বক্স নিয়ে আবার হাসপাতালে ফিরে এল।
সারাদিন এক প্রকার চাপা উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে কেটে গেল। ঘুম ভাঙার পর রেহেনা বেগম মা’কে পাশে পেয়ে যেন অনেক সাহস আর শক্তিও ফিরে পেলেন কিন্তু বাম হাতটা ঠিকমতো নাড়াতে পারছেন না বলে একটা সময় কেঁদেই ফেললেন। লাবন্যের নানি তখন অনেক কিছু বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বোঝতে শুরু করলেন বারবার বললেন “এই সময়টা আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা নিচ্ছেন ইমানের, এখন ধৈর্য হারা হলে চলবে না। বেশি বেশি আল্লাহকে ডাকতে হবে। আল্লাহর সব ঠিক করে দিবেন মনের জোর ধরে রাখতে।”
লাবন্য চুপ করে পাশে দাঁড়িয়ে একটা অসুস্থ মেয়ের জন্য তার মায়ের পরম ভালোবাসা মাখা সাপোর্ট প্রত্যক্ষ করল । আর বারবার নিজের মায়ের মুখটা কল্পনা করল, যাকে সবসময় নিজের প্রয়োজনে কাছে পেত ঠিক এমনি করেই ।
নাজমুল সাহেব সকালে বসায় চলে গিয়েছিলেন রেহেনা বেগমের সাথে একবার দেখা করেই। হিমেলই পাঠিয়ে দিল কারন তার ঘুমের দরকার। রাতে ঘুমাতে পারেন নাই। এখন একটু রেস্টে না পেলে পরে তারও বিপি বেড়ে যাবে। তখন বিপদের উপর বিপদ হবে।

লাবন্যকে একা পেয়ে হিমেল কাছে এগিয়ে এসে বলতে শুরু করল
“ছোট আপু খুব ঝামেলায় আছে। ননদগুলো মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে তার শাশুড়ি আপাকে খুব আদর করত। নানান কাজে হেল্প করত। এখন সব চেঞ্জ হয়ে গেছে। ননদরা জব করে তাদের সংসারও এখন আপুকেই দেখতে চাপ দিচ্ছে । এত প্রেসার আপু একা নিতে পারছে না। দুলাভাই এ ব্যাপারে ভালোমন্দ কিছুই বলছে না। আপা খুব কাঁদতেছে ওখানে বসে। গতরাতে নাকি আপুর শাশুড়ি বলেছেন “না পারলে দেশে চলে যাও।” এটা শোনার পর থেকেই আম্মুর শরীর একটু একটু খারাপ হতে শুরু করেছে কিন্তু আমাদের কাউকে কিছু বলে নাই। হঠাৎ করেই রাতে আব্বু ডেকে বলল এম্বুলেন্স ডাকতে। ভেবে দেখতো তখন আমার মনের অবস্থাটা কেমন ছিল ? এখনও মনে হচ্ছে সেই ভয়ানক ঘোরটা কাটে নাই। প্রচন্ড ভয় পেয়েছি আমি।”

“এরজন্যই বলি মা থাকতে মায়ের কদর করো। আর যদি কোনোদিন শুনি তুমি খালামনির সাথে কথা বন্ধ করেছো তবে দেখে নিও আমি কি করি! আমাকে মেনে নেয়া না নেয়া এটা তার ইচ্ছা তাই বলে তুমি কেন তাকে এমন মেন্টাল প্রেসার দিবা? এটাতো এক প্রকার টর্চার করা। এগুলা বন্ধ কর।”

“কি করব আমি তাতো আমি নিজেই যেনো বুঝতে পারছি না।”
“তোমাকে বোঝতে হবে না। যা হবে তা ভালোই হবে। এটা আমার কথা না নানির কথা। তুমি শুধু তোমার ডিউটি পালন করো। পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর।”

আর কথা বাড়ালো না নানির ডাকে দুজনই কেবিনে ঢুকলো।

মায়ের শারীরিক অবস্থার কথা বোনদের জানানোর পর থেকে বোনরা একটু পর পর হিমেলকে কল দিয়ে খবরাখবর নিতে লাগল। আর হিমেলও আপডেট দিয়ে যেতে লাগল।

ছোট মেয়েটা মায়ের অবস্থার কথা শুনে দেশে আসতে চেয়েছিল কিন্তু পারিবারিক ঝামেলার কারনে আর পারবে না তা জানিয়ে দিল। হোমায়রা প্রথম অবস্থাতেই নাজমুল সাহেবকে জানিয়ে দিল কিছুদিন আগেই এসে গিয়েছে তাই আর এখন আসতে পারবে না। আরও বলল একজন কেয়ারটেকার রেখে দিতে মায়ের দেখাশোনা করার জন্য। নাজমুল সাহেব হ্যা না কিছুই বললেন না মেয়েকে, তাদের দুজনের কথা শুনে চুপ হয়ে রইলেন।

হাসপাতালে থাকতে লাবন্যের নানির কষ্ট হচ্ছে ঠিকই কিন্তু অসুস্থ মেয়েকে রেখে তিনি আর নড়লেন না। আর তাই লাবন্যও বাসায় গেলো না। দুদিন পর হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে দিলো রেহেনা বেগমকে। বাসায় যখন নিয়ে যাওয়া হল তখন লাবন্যও সাথে গেলো। ভুলেই গেলো ওর খালামনি ওকে কি বলেছিলো এই বাসায় আসা নিয়ে। মনে হল ও সব কষ্ট ভুলে গেছে। খালামনিকে ধরে ধরে তার রুমে নিয়ে গেলো। হিমেল কোলে তুলে নিতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু ডাক্তার বলে দিয়েছেন তাকে আস্তে আস্তে হাঁটাতে। কিছু থেরাপিও দিয়েছেন এগুলো প্রতিদিন বাসায় বসে করাতে হবে। একজন থেরাপিস্টও ঠিক করে দেওয়া হল যিনি বাসায় এসে একঘণ্টা থেরাপি দিয় যাবেন।
বড় মেয়ের বাসায় কখনও এসে থাকা হয়নি লাবন্যের নানির। তাই হয়ত খুব একটা সহজ হতে পারছিলেন না। ওদিকে রুশকে নিয়েও কিছুটা টেনশন হচ্ছিলো তাই তিনি লাবন্যদের বাসায় চলে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু লাবন্য মানা করল বলল
“নানি এখন খালামনির বেশি দরকার তোমাকে। তুমি খালামনির কাছেই থাকো কিছুদিন। রুশকে আব্বুর হেফাজতে ছেড়ে দাও, সেই দেখুক তার ছেলেকে। তুমি তোমার মেয়েকে দেখো। ”
যদিও লাবন্য বোঝে এই সময়তে এই দায়িত্ব লিখনের জন্য একটু সমস্যা হয়েই দাঁড়াবে, কিন্তু এছাড়াতো আর কোন পথ নেই, তাই জানিয়ে দিল ওর আব্বুকে ।

রাত জাগা হতে শুরু করে খালামনির খাবার, গোসল, কাপড়চোপড় পরাটাও লাবন্য নিজ হাতে করিয়ে দিতে লাগল। কেন জানি ওর নানি ইচ্ছে করেই এসব কাজে ইনভলভ হলেন না। দূর থেকে লাবুকে দেখেন তার মেয়ের সেবাযত্ন করতে। রেহেনা বেগম নিজেই এখন অনেকটা অশান্তিতে আছেন। মাঝে মধ্যেই ছোট মেয়ের সাথে টুকটাক কথা বলেন। হিমেল ওর ছোট বোনকে আগেই বলে দিয়েছে ওর কোন সমস্যার কথা যেনো মা’কে এই মুহুর্তে সরাসরি না বলে। তাই হয়ত বোনরা আর কোন সমস্যার কথা বলে না মা’কে । কিন্তু রেহেনা বেগম ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করে “এখন অবস্থা কেমন? ” মায়ের প্রশ্ন শুনেই মেয়ে ঝটপট উত্তর দেয়, “এখন ভালো আর কোনো সমস্যা হয় নাই।”
মনে হয় এই উত্তরের অনেক শক্তি, যা রেহেনা বেগমকে নতুন করে প্রান শক্তি ঢেলে দেয় মনের মধ্যে ।

তখন দূর থেকে লাবন্য শুধু নিজের জন্য আক্ষেপই করে নিজের ভাগ্য নিয়ে। ওর জন্য এত ডিপলি ভাবার জন্য কেউ নেই পৃথিবীতে। আবার যখন নানিকে দেখে তখনই আক্ষেপ ভুলে মনে মনে শুকরিয়া জানায় আল্লাহর দরবারে।

লাবন্য বাসায় আসায় হিমেল মনে মনে অনেক খুশি হয়। ওর বিশ্বাসও ছিল এমনটাই করবে বন্য। খেতে বসে ইচ্ছে করেই প্লেটে খাবার তুলে নেয় না। একটা সময় দেখে ওর বন্যই ওর জন্য প্লেটে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। তখন ওর মনের আনন্দ আর কেউ টের পায় না। সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে হতে দেখে বন্য এক কাপ চা দিয়ে যাচ্ছে ওর রুমে। তখন ওর ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে খুব করে আদর দিতে। কিন্তু কখনোই পারে না। তবে রাতে বন্যের জন্য নিজে চা বানিয়ে দিয়ে আসে মায়ের রুমে। ওর মায়ের চোখে চোখ পড়লেই বলে উঠে “বন্য তুইতো রাত জাগিস তাই চা দিলাম এটা খেয়ে নে তাহলে তোর সুবধা হবে। ”

ওর মা তখন মিনমিন করে বলবে, “রাত জাগার কি দরকার? আমার দরকার হলেতো আমি ডাকতেই পারবো, তখন উঠলেই হয়। শুধু শুধু জেগে থাকার কি দরকার?”

“কোনো দরকার নাই কিন্তু আমার মনে হয় আমি ঘুমিয়ে গেলে তুমি ডাকবে না। তুমি তখন কষ্ট করবে, আর নয়তো নানিকে ডাকবে। নানিতো আরও পারবে না পরে দুজনেই আরও সমস্যায় পরবে। তাই জাগি বুঝছো? দ্রুত সুস্থ হও তাহলেই আর রাত জাগবো না।”
রেহেনা বেগম আর কিছু বলেন না চুপ হয়ে যান। ইদানিং কি যেনো হয়েছে তার, প্রায় সময়ই চুপ থাকেন।

বিকেলে রেহেনা বেগমকে বসিয়ে লাবন্য চুলে চিরুনি করে দিচ্ছিল তখন তিনি আস্তে আস্তে বললেন
“আমার জন্য এত কিছু কেন করছিস?”
“তাহলে আর কে করবে?”
“আমার ছেলেকে বিয়ে করাবো, ওর বৌ এসে করে দিবে।”
“হাহাহা, সেটাতো খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেতো করবে তার শাশুড়ির জন্য । আর আমিতো করছি আমার খালামনিরটা। দুটো কি এক হল? মায়ের বোন খালা, মায়ের চেয়ে ভালা। আমিতো সেই ভালা মানুষটার জন্য করছি। যার মধ্যে মায়ের মতো একটা ফিলিং আছে”
লাবন্যের কথা শেষ হতে না হতেই শুনতে পেলো রেহেনা বেগম হুহু করে কাঁদতে শুরু করেছেন। লাবন্য কথা থামিয়ে সামনে এসে দেখে নিল সত্যি সত্যিই কি খালামনি কাঁদছেন কি না!
“কি হলো খালামনি? এমন কি কঠিন কথা বললাম যে তুমি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করলা? যা সত্য তাইতো বললাম।”
“কি জন্য কাঁদছি তা তোকে বলতে হবে নাকি?”
“আহা রেগে যাচ্ছো কেন? কাঁদতে ইচ্ছে হলে কাঁদবে, তাতে কোনো সমস্যা নাই। কাঁদলে চোখ আর মন দুটোই পরিস্কার হয়..”
“থাম থাম থাম, এত বকবক করিস কেন? এখনই আম্মু রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন তোকে।” হিমেল হাসতে হাসতে মায়ের পাশে এসে বসল।
“উঁহু, হয় নাই। এই তোর ফাঁকিবাজ মা কি তোকে কিচ্ছু শিখায় নাই? নিজেতো ছিলো একটা অপদার্থ, মেয়েকে শিখাবে কি? মেয়ে যে……” লাবন্যকে থামিয়ে দিয়ে রেহেনা বেগম আস্তে আস্তে বললেন

“রেশমা যখন স্কুলে যেতো তখন প্রতি সকালে সাদা ফিতা আর চিরুনি নিয়ে আসত আমার কাছে। যতক্ষণ না দুই বেনী করে দিতাম ততক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করত। স্কুলের নিয়ম ছিল সাদা ফিতা দিয়ে চুল বেনী করে আসতে হবে। ও পারতো না, পুরোপুরিই আমার উপর নির্ভর ছিলো। আজ ওর মেয়ে আমার চুলে বেনী করে দিচ্ছে…. ”
“শোনো শোনো শোনো, আমি কিন্তু প্রতিদান দিচ্ছি না। এই ঘটনা আমি জানতাম না। তুমি বললা পরে জানলাম।”
“রেশমার জ্বর হলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো। আম্মা আব্বার জন্য ওকে কাছে নিয়ে রাখতে পারতো না। ঘুমের মধ্যে মাঝে মধ্যে আমাকে আম্মা মনে করে জড়িয়ে ধরতো। তখন আর আমি ওর হাত সরিয়ে দিতাম না। খুব মায়া লাগতো।
স্কুল থেকে ফেরার পথে পেয়ারা বরই তেঁতুল যাই কিনে আনত আমাকে রেখে কখনও খেতো না। ভাইরা ওর জন্য কিছু আনলেও আমাকে দিয়ে খেতো। আম্মা বলতো ওর মায়ার শরীর। অথচ ওর কপালটাই খারাপ, জীবনে নিজেই কারো মায়া পেলো না ঠিক মতো।” আর বলতে পারলেন না কাঁদতে লাগলেন তখন। লাবন্যের চোখও ছলছল করে উঠল। মায়ের জন্য খালামনির এই উপলব্ধিটা ওর চাওয়া ছিল অনেক পুরোনো। এমন একটা সময় উপলব্ধিটা আসল যখন ওর আম্মুই নাই দুনিয়ায়। আম্মুর জন্য বড় আফসোস হতে লাগল লাবন্যের মনে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here