মেঘ ভাঙ্গা রোদ্দুর পর্ব-১৯

0
2464

#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর। [১৯]

কখনো কখনো সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কালো মেঘ এসে ভেঙে দেয় সাজানো সংসার। আবার অনেক সময় দুর্ঘটনায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় একটি পরিবার। যে কারণেই হোক, মানুষকে দুঃসময় কাটিয়ে নতুন করে শুরু করতে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থাকার লড়াই। সংসার ভাঙ্গনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয় তার মাকে। সন্তানকে বড় করার জন্য তাকেই হয়ে উঠতে হয় বাবা-মা দুই-ই। একইসাথে সামাজিক ও পারিবারিক চাপ কাটিয়ে একা এগিয়ে চলা বেশ কঠিন। আজকের সমাজে এমন সিঙ্গেল মাদার বা একক মায়েদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও নেহায়েত কম না। দিনে দিনে পরিবার ভাঙ্গনের সংখ্যাটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে একক বাবা মায়ের সংখ্যা। তবে একদিন আমাদের দেশেও একক বাবা মা শব্দটার প্রচলন হবে। তখন একক বাবা মায়ের সন্তানরা যখন তার বাবা-মাকে সিঙ্গেল বাবা – মা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিতে তখন লোক সমাজের কাছে শুনতে হবে না, তোমার বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছিলো তো! নাকি তোমার মা কুমারী মা হয়েছিলো। একটা সন্তানের জন্যে এর থেকে খারাপ কথা আর কি হতে পারে। দীর্ঘ শ্বাস নেয় মেহের। তার এই ভাবনা আধো পূর্ন হবে তো।

৩০
রাহনাফের মনটা আজ তিক্ততায় ঘেরা। তিক্ত মনে বাসার সামনে পুকুরপাড়ে বসে পুকুরে মাটির ঢিল ছুড়ে মারছে সে।যার ফলে পুকুরের পানিতে তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্য সময় হলে রাহনাফ তরঙ্গ দেখার জন্যে হলেও উৎসাহ নিয়ে পুকুরের পানিতে ঢিল ছুড়তো। কিন্তু আজ সে নিজের মনের তিক্ততা দূরীকরণের জন্যে ঢিল ছুড়ে মারছে। কোন কিছুতে মন বসাতে পারছে না। ঢিল ছুড়তে ছুড়তে একসময় ক্লান্ত হয়ে যায় রাহনাফ তবুও ওর মনের তিক্ততা দূর হয়না। এতদিন পর নিজের মাকে চোখের সামনে দেখেও তার থেকে মুখ লুকিয়ে চলে আসাটা নিজের কাপুরুষের পরিচয় বহন করে। দুপুরে কোচিং থেকে ফেরার সময় রাস্তায় জ্যামে আটকে যায় রাহনাফ। আর সেই জ্যামেই সে তার মাকে দেখতে পায়। বড় গাড়িতে একটা সাদা থান পরে বসে আছে তার মা। জানালা দিয়ে শুধু মায়ের মুখ দেখেছিলো সে আর তার কাধে থাকা সাদা থানটা। এতগুলো বছর পর নিজের মাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় রাহনাফ। মা-কে হাড়িরে ফেলার কষ্ঠে বুকটা তার হাহাকার করতে থাকে। চারিদিকে কেমন শুন্যতা অনুভকরে সে। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে তার মায়ের মুখখানা দেখতে থাকে। গাড়িতে বসে থাকা রাহনাফের মা যখন জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকায় তখন রাহনাফ হাতদিয়ে তার মুখটা ঢেকে ফেলে। তার মনের মাঝে ভীতি সঞ্চার হয় তার মা তাকে দেখলে হয়তো কষ্ট পাবে। পরক্ষনে মনে হয় আচ্চা রাহনাফের কথা তার আধৌ মনে আছে কি! নাকি তার নতুন সন্তানদের পেয়ে তার কথা ভুলে গেছে তার মা। ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। রাস্তায় জ্যাম ছুটলে রাহনাফের মায়ের গাড়িটা চলে যায় আর রাহনাফের হাত দিয়ে মুখ ডেকে উকি মেরে তাকিয়ে থাকে সেই গাড়ির দিকে। যদি তার মায়ের মুখখানা আর একবার দেখতে পায়। সেই থেকে মন খারাপ হয়ে আছে রাহনাফের। পুকুরে একের পর পর ঢিল ছুড়ছে সে এমনি সময় তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। বুক পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে মোবাইলের স্কিনে আলিহানের নামটা জ্বলজ্বল করছে। কল রিসিভ করে মোবাইলটা কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে আলিহান বলে উঠে,

– একটু মাঠে আসতে পারবি?

– কেন??

– রাহি এসেছে তোর সাথে দেখা করতে। আমি আর রাহি মাঠের পাশে বসে আছি।

– ওকে আমি আসছি। কল কেটে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় রাহনাফ, মোবাইলটা আবার বুক পেকেটে রেখে হাটা শুরু করতে মাঠের দিকে।

প্রায় দশ মিনিট পর রাহনাফ মাঠে পৌছায় গিয়ে। মাঠের এক পাশে কৈশোররা ক্রিকেট খেলছে। রাহনাফকে দেখে দুজন ছেলে দৌড়ে আসে তার কাছে আর বলে তাদের সাথে ক্রিকেট খেলতে। রাহনাফ তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে অধোরে হাসির রেখা টেনে জবাব দেয় সে আজ খেলবে না। তারপর সে চলে যায় মাঠের অন্যপান্তে বসে থাকা রাহি আর আলিহানের কাছে। রাহি মন মরা হয়ে বসে আছে আর আলিহান ওর পাশে বসে ওকে কিছু বলছে। রাহনাফ ধীর পায়ে ওদের কাছে দাঁড়াতেই রাহি উঠে দাঁড়িয়ে যায় সাথে আলিহানও। রাহনাফকে দেখে রাহি স্মিত হাসে তারপর সে কিছু বলবে তার আগেই রাহনাফ বলে উঠে,

– রাহি আই এম সরি। মাথা নিচু করে ফেলে রাহনাফ।

রাহি কিছুক্ষণ রাহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখমুখে তার না পাওয়ার হাজারও যন্ত্রনা, কষ্ট। রাহির চোখদুটো যেন বারবার বলে চলেছে, ভালোবাসি রাহনাফ ভালোবাসি। স্মিত হাসে রাহি। অতঃপর সে বলে উঠে,

– সরি তো আমার বলা উচিৎ রাহনাফ। আমার বুঝা উচিৎ ছিলো জোড় করে কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তবে তুমি আমার আপুকে ভালোবাসো এতেই আমি অনেক খুশি। মেহের আপু আমার বোন। আমার বড় বোন সেটা তুমি আমার আগে থেকেই জানো রাহনাফ। আজ আলিহান ভাইয়া না বললে তো আমি সত্যিটা জানতেই পারতাম না, আমার আপুর উপর দিয়ে কত কষ্ট লাঞ্ছনার ঝড় বয়ে গেছে। আমার বাবা তার মনস্কামনা পূরণের জন্যে মেহের ও তার মায়ের জিবনটা এমন ভালো নষ্ট করেছে। রাহনাফ তুমি আমাকে ভালোবাসো না এতে আমার কোন কষ্ট নাই। তুমি আমাকে নাই ভালোবাসো, আমার আপুকে তো ভালোবাসো তুমি এতেই আমি খুশি। এভাবেই সারাজীবন আমার আপুকে ভালোবেসো তুমি রাহনাফ। দেখবে একদিন আপুও তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। আমরা তো আছিই, হেল্প করবো তোমাকে। কথাগুলো বলে ভুবনবুলানো হাসি দেয় রাহি। রাহনাফ অবাক দৃষ্টিতে রাহির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এটাই কি সেই রাহি যে কয়েকদিন আগেও তাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে দিচ্ছিলো। রাহনাফকে পাবে না হাতের রগ কেটে সুইসাইড করতে যাচ্ছিলো আর আজ সে কি সুন্দর অনায়াসে কথাগুলো বলছে।

– হ্যলো মিস্টার না হওয়া দুলাভাই, কোথায় হাড়ালেন আপনি? রাহনাফের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে রাহি।

রাহনাফ চোখের পলক ফেলে মিটমিট করে নেয় কিছুক্ষণ তারপর বলে,

– আসলে ভাবছিলাম, এটাই কি সেই রাহি যাকে আমি চিনি। না মানে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহিকে আমি চিনিনা। বড্ড অচেনা লাগছে।

– তুই একদম ঠিক বলেছিস রাহনাফ। রাহনাফের কাধে হাত রেখে বলে আলিহান। প্রথমে আমিও অবাক হয়েছিলাম। রাহির হঠাৎ করে এমন পাল্টে যাওয়া আমাকে খুব অবাক করে দিয়েছিলো। পরে যখন জানতে পারলাম রাহি ছোট চাচা আর মেহেরের সম্পর্কটার কথা জানতে পেরেছে আর সেটা নিয়েই কিছুদিন যাবৎ একটু ডিস্টার্ব আছে তাই আজ আমি ওকে সবটা বলি। তবে মজার ব্যাপার কি জানিস রাহনাফ, রাহি যেদিন জানতে পেরেছে মেহেরে ওর বড় বোন সেদিনিই কিন্তু কোন প্রশ্ন না করে মেহেরকে নিজের বোন হিসাবে মেনে নিয়েছে। মানতে পারেনি শুধু মেহু। রাহি যখনি ওকে আপু বলে ডাক দেয় তখনি মেহু অগ্নিমূর্তি রুপ ধারন করে।

– এটাই কি স্বাভাবিক নয়। মৃদু হেসে বলে রাহনাফ। মেহেরের জায়গায় আমরা যে কেউই এমনটা করতাম।

– হ্যাঁ হ্যাঁ, মেহু যা করে সবটাই তো তোর কাছে রাইট। একদিকে মেহুর কথা অন্যদিকে পুরো পৃথিবীর মানুষের কথা, তবুও তুই মেহুকেই রাইট ধরবি। মেহু যা করুক সবই ঠিক আর বাকি সবাই ভুল। চোখ টিপ দিয়ে বলে আলিহান।

আলিহানের কথার কোন জবাব দেয়না রাহনাফ, অধরোষ্ঠ চেপে হাসে।

– তুমি ঠিক বলেছো রাহনাফ। আপু যতটা না কষ্টে লালিত পালিত হয়েছে তার থেকেও বেশী সে লাঞ্ছনা সহ্য করেছে। আন্টি তার নিজের জায়গা ঠিক রেখে আপু আর মৌ আপুকে বড় করে তুলেছে। আজকাল আন্টির মতো মানুষ কোথায় পাওয়া যায় বলো। আন্টি চাইলে আমাদের এই সমাজের নিয়ম পাল্টে দিতে পারে। তার সিদ্ধান্তকে সবার সম্মান জানানো উচিৎ। মেহু আপু আর কষ্ট পাবে না। রাহনাফ যদি তুমি আমার আপুকে একটুও কষ্ট দাও তবে তোমাকে,,,

– একবার আপনার বোনকে আমার হাতে তুলে দিন। কথা দিচ্ছি কখনো কোন অভীযোগ করতে দিবো না। ভালোবাসায় তার জিবন রাঙিয়ে তুলোবো। রাহিকে থামিয়ে বলে রাহনাফ।

– হুম দিবো দিবো। আপুকে তোমার হাতেই তুলে দিবো মিস্টার রাহনাফ।

– মৃদু হাসে রাহনাফ। আলিহান রাহির মাথায় চাপট মেরে বলে,

– তুই কবে এত বড় হয়ে গেলি। আমিতো জানতাম আমার রাহি বোনুটা রাগী বদমেজাজি খিটখিটে। তারও এত সুন্দর একটা মব আছে সেটা জানতাম না। আই ওয়িশ তোর জিবনে এমন কেউ আসুক যে তোকে তোর চেয়ে বেশী ভালোবাসুক।

চলবে,,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

[আসসালামু আলাইকুম। ব্যাস্ততার কারনে দুইদিন গল্প দেইনি তার জন্যে দুঃখিত। এতটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে কাউকে জানাতেও পারি নি। দুঃখিত আমি আপনাদরে অপেক্ষা করানোর জন্যে]#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর। [১৯]

কখনো কখনো সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কালো মেঘ এসে ভেঙে দেয় সাজানো সংসার। আবার অনেক সময় দুর্ঘটনায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় একটি পরিবার। যে কারণেই হোক, মানুষকে দুঃসময় কাটিয়ে নতুন করে শুরু করতে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থাকার লড়াই। সংসার ভাঙ্গনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয় তার মাকে। সন্তানকে বড় করার জন্য তাকেই হয়ে উঠতে হয় বাবা-মা দুই-ই। একইসাথে সামাজিক ও পারিবারিক চাপ কাটিয়ে একা এগিয়ে চলা বেশ কঠিন। আজকের সমাজে এমন সিঙ্গেল মাদার বা একক মায়েদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও নেহায়েত কম না। দিনে দিনে পরিবার ভাঙ্গনের সংখ্যাটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে একক বাবা মায়ের সংখ্যা। তবে একদিন আমাদের দেশেও একক বাবা মা শব্দটার প্রচলন হবে। তখন একক বাবা মায়ের সন্তানরা যখন তার বাবা-মাকে সিঙ্গেল বাবা – মা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিতে তখন লোক সমাজের কাছে শুনতে হবে না, তোমার বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছিলো তো! নাকি তোমার মা কুমারী মা হয়েছিলো। একটা সন্তানের জন্যে এর থেকে খারাপ কথা আর কি হতে পারে। দীর্ঘ শ্বাস নেয় মেহের। তার এই ভাবনা আধো পূর্ন হবে তো।

৩০
রাহনাফের মনটা আজ তিক্ততায় ঘেরা। তিক্ত মনে বাসার সামনে পুকুরপাড়ে বসে পুকুরে মাটির ঢিল ছুড়ে মারছে সে।যার ফলে পুকুরের পানিতে তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্য সময় হলে রাহনাফ তরঙ্গ দেখার জন্যে হলেও উৎসাহ নিয়ে পুকুরের পানিতে ঢিল ছুড়তো। কিন্তু আজ সে নিজের মনের তিক্ততা দূরীকরণের জন্যে ঢিল ছুড়ে মারছে। কোন কিছুতে মন বসাতে পারছে না। ঢিল ছুড়তে ছুড়তে একসময় ক্লান্ত হয়ে যায় রাহনাফ তবুও ওর মনের তিক্ততা দূর হয়না। এতদিন পর নিজের মাকে চোখের সামনে দেখেও তার থেকে মুখ লুকিয়ে চলে আসাটা নিজের কাপুরুষের পরিচয় বহন করে। দুপুরে কোচিং থেকে ফেরার সময় রাস্তায় জ্যামে আটকে যায় রাহনাফ। আর সেই জ্যামেই সে তার মাকে দেখতে পায়। বড় গাড়িতে একটা সাদা থান পরে বসে আছে তার মা। জানালা দিয়ে শুধু মায়ের মুখ দেখেছিলো সে আর তার কাধে থাকা সাদা থানটা। এতগুলো বছর পর নিজের মাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় রাহনাফ। মা-কে হাড়িরে ফেলার কষ্ঠে বুকটা তার হাহাকার করতে থাকে। চারিদিকে কেমন শুন্যতা অনুভকরে সে। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে তার মায়ের মুখখানা দেখতে থাকে। গাড়িতে বসে থাকা রাহনাফের মা যখন জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকায় তখন রাহনাফ হাতদিয়ে তার মুখটা ঢেকে ফেলে। তার মনের মাঝে ভীতি সঞ্চার হয় তার মা তাকে দেখলে হয়তো কষ্ট পাবে। পরক্ষনে মনে হয় আচ্চা রাহনাফের কথা তার আধৌ মনে আছে কি! নাকি তার নতুন সন্তানদের পেয়ে তার কথা ভুলে গেছে তার মা। ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। রাস্তায় জ্যাম ছুটলে রাহনাফের মায়ের গাড়িটা চলে যায় আর রাহনাফের হাত দিয়ে মুখ ডেকে উকি মেরে তাকিয়ে থাকে সেই গাড়ির দিকে। যদি তার মায়ের মুখখানা আর একবার দেখতে পায়। সেই থেকে মন খারাপ হয়ে আছে রাহনাফের। পুকুরে একের পর পর ঢিল ছুড়ছে সে এমনি সময় তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। বুক পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে মোবাইলের স্কিনে আলিহানের নামটা জ্বলজ্বল করছে। কল রিসিভ করে মোবাইলটা কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে আলিহান বলে উঠে,

– একটু মাঠে আসতে পারবি?

– কেন??

– রাহি এসেছে তোর সাথে দেখা করতে। আমি আর রাহি মাঠের পাশে বসে আছি।

– ওকে আমি আসছি। কল কেটে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় রাহনাফ, মোবাইলটা আবার বুক পেকেটে রেখে হাটা শুরু করতে মাঠের দিকে।

প্রায় দশ মিনিট পর রাহনাফ মাঠে পৌছায় গিয়ে। মাঠের এক পাশে কৈশোররা ক্রিকেট খেলছে। রাহনাফকে দেখে দুজন ছেলে দৌড়ে আসে তার কাছে আর বলে তাদের সাথে ক্রিকেট খেলতে। রাহনাফ তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে অধোরে হাসির রেখা টেনে জবাব দেয় সে আজ খেলবে না। তারপর সে চলে যায় মাঠের অন্যপান্তে বসে থাকা রাহি আর আলিহানের কাছে। রাহি মন মরা হয়ে বসে আছে আর আলিহান ওর পাশে বসে ওকে কিছু বলছে। রাহনাফ ধীর পায়ে ওদের কাছে দাঁড়াতেই রাহি উঠে দাঁড়িয়ে যায় সাথে আলিহানও। রাহনাফকে দেখে রাহি স্মিত হাসে তারপর সে কিছু বলবে তার আগেই রাহনাফ বলে উঠে,

– রাহি আই এম সরি। মাথা নিচু করে ফেলে রাহনাফ।

রাহি কিছুক্ষণ রাহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখমুখে তার না পাওয়ার হাজারও যন্ত্রনা, কষ্ট। রাহির চোখদুটো যেন বারবার বলে চলেছে, ভালোবাসি রাহনাফ ভালোবাসি। স্মিত হাসে রাহি। অতঃপর সে বলে উঠে,

– সরি তো আমার বলা উচিৎ রাহনাফ। আমার বুঝা উচিৎ ছিলো জোড় করে কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তবে তুমি আমার আপুকে ভালোবাসো এতেই আমি অনেক খুশি। মেহের আপু আমার বোন। আমার বড় বোন সেটা তুমি আমার আগে থেকেই জানো রাহনাফ। আজ আলিহান ভাইয়া না বললে তো আমি সত্যিটা জানতেই পারতাম না, আমার আপুর উপর দিয়ে কত কষ্ট লাঞ্ছনার ঝড় বয়ে গেছে। আমার বাবা তার মনস্কামনা পূরণের জন্যে মেহের ও তার মায়ের জিবনটা এমন ভালো নষ্ট করেছে। রাহনাফ তুমি আমাকে ভালোবাসো না এতে আমার কোন কষ্ট নাই। তুমি আমাকে নাই ভালোবাসো, আমার আপুকে তো ভালোবাসো তুমি এতেই আমি খুশি। এভাবেই সারাজীবন আমার আপুকে ভালোবেসো তুমি রাহনাফ। দেখবে একদিন আপুও তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। আমরা তো আছিই, হেল্প করবো তোমাকে। কথাগুলো বলে ভুবনবুলানো হাসি দেয় রাহি। রাহনাফ অবাক দৃষ্টিতে রাহির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এটাই কি সেই রাহি যে কয়েকদিন আগেও তাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে দিচ্ছিলো। রাহনাফকে পাবে না হাতের রগ কেটে সুইসাইড করতে যাচ্ছিলো আর আজ সে কি সুন্দর অনায়াসে কথাগুলো বলছে।

– হ্যলো মিস্টার না হওয়া দুলাভাই, কোথায় হাড়ালেন আপনি? রাহনাফের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে রাহি।

রাহনাফ চোখের পলক ফেলে মিটমিট করে নেয় কিছুক্ষণ তারপর বলে,

– আসলে ভাবছিলাম, এটাই কি সেই রাহি যাকে আমি চিনি। না মানে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহিকে আমি চিনিনা। বড্ড অচেনা লাগছে।

– তুই একদম ঠিক বলেছিস রাহনাফ। রাহনাফের কাধে হাত রেখে বলে আলিহান। প্রথমে আমিও অবাক হয়েছিলাম। রাহির হঠাৎ করে এমন পাল্টে যাওয়া আমাকে খুব অবাক করে দিয়েছিলো। পরে যখন জানতে পারলাম রাহি ছোট চাচা আর মেহেরের সম্পর্কটার কথা জানতে পেরেছে আর সেটা নিয়েই কিছুদিন যাবৎ একটু ডিস্টার্ব আছে তাই আজ আমি ওকে সবটা বলি। তবে মজার ব্যাপার কি জানিস রাহনাফ, রাহি যেদিন জানতে পেরেছে মেহেরে ওর বড় বোন সেদিনিই কিন্তু কোন প্রশ্ন না করে মেহেরকে নিজের বোন হিসাবে মেনে নিয়েছে। মানতে পারেনি শুধু মেহু। রাহি যখনি ওকে আপু বলে ডাক দেয় তখনি মেহু অগ্নিমূর্তি রুপ ধারন করে।

– এটাই কি স্বাভাবিক নয়। মৃদু হেসে বলে রাহনাফ। মেহেরের জায়গায় আমরা যে কেউই এমনটা করতাম।

– হ্যাঁ হ্যাঁ, মেহু যা করে সবটাই তো তোর কাছে রাইট। একদিকে মেহুর কথা অন্যদিকে পুরো পৃথিবীর মানুষের কথা, তবুও তুই মেহুকেই রাইট ধরবি। মেহু যা করুক সবই ঠিক আর বাকি সবাই ভুল। চোখ টিপ দিয়ে বলে আলিহান।

আলিহানের কথার কোন জবাব দেয়না রাহনাফ, অধরোষ্ঠ চেপে হাসে।

– তুমি ঠিক বলেছো রাহনাফ। আপু যতটা না কষ্টে লালিত পালিত হয়েছে তার থেকেও বেশী সে লাঞ্ছনা সহ্য করেছে। আন্টি তার নিজের জায়গা ঠিক রেখে আপু আর মৌ আপুকে বড় করে তুলেছে। আজকাল আন্টির মতো মানুষ কোথায় পাওয়া যায় বলো। আন্টি চাইলে আমাদের এই সমাজের নিয়ম পাল্টে দিতে পারে। তার সিদ্ধান্তকে সবার সম্মান জানানো উচিৎ। মেহু আপু আর কষ্ট পাবে না। রাহনাফ যদি তুমি আমার আপুকে একটুও কষ্ট দাও তবে তোমাকে,,,

– একবার আপনার বোনকে আমার হাতে তুলে দিন। কথা দিচ্ছি কখনো কোন অভীযোগ করতে দিবো না। ভালোবাসায় তার জিবন রাঙিয়ে তুলোবো। রাহিকে থামিয়ে বলে রাহনাফ।

– হুম দিবো দিবো। আপুকে তোমার হাতেই তুলে দিবো মিস্টার রাহনাফ।

– মৃদু হাসে রাহনাফ। আলিহান রাহির মাথায় চাপট মেরে বলে,

– তুই কবে এত বড় হয়ে গেলি। আমিতো জানতাম আমার রাহি বোনুটা রাগী বদমেজাজি খিটখিটে। তারও এত সুন্দর একটা মব আছে সেটা জানতাম না। আই ওয়িশ তোর জিবনে এমন কেউ আসুক যে তোকে তোর চেয়ে বেশী ভালোবাসুক।

চলবে,,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

[আসসালামু আলাইকুম। ব্যাস্ততার কারনে দুইদিন গল্প দেইনি তার জন্যে দুঃখিত। এতটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে কাউকে জানাতেও পারি নি। দুঃখিত আমি আপনাদরে অপেক্ষা করানোর জন্যে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here