মেঘ ভাঙ্গা রোদ্দুর পর্ব-২০

0
2416

#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর। [২০]

– তোর জিবনে এমন একজন আসবে যে তোকে তোর চেয়ে বেশী ভালোবাসবে। তোর খেয়াল রাখবে যত্ন নিবে।আলিহানের কথা শুনে অধোর চেপে হাসে রাহি। আড় চোখে রাহনাফের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। রাহি কি আর কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারবে যতটা সে রাহনাফকে ভালোবাসে। হয়তো না, আবার হয়তো হতেও পারে। একজন মানুষের জিবনে অন্য একটা মানুষের জায়গা কখনো শূন্য পরে থাকে না, কেউ না কেউ এসে সেই শূন্য জায়গাটা পূর্ন করে দেয়। রাহনাফকে পেয়ে গেলে হয়তো একাকিত্বের স্বাধ নেওয়া হতো না। তাই পছন্দের কিছু জিনিস না পাওয়াই শ্রেয়। সবসময় যে পছন্দের সব জিনিস পেতেই হবে সেটা কোন সংবিদানে লেখা নেই। মাঝে মাঝে প্রিয় কিছু মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের পছন্দের জিনিস হাসি মুখে বিসর্জন দিতে হয়। তাতেও একটা সুখ আছে, যে সুখ সবাই বুঝে না। রাহনাফের দিকে তাকিয়ে থাকে রাহি। আলিহান রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

– অনেকক্ষণ এসেছিস, এবার বাসায় চলে যা। আমিও যাই দেখি ওদিকে মৌ অপেক্ষা করছে। বউ আমার অপেক্ষা করতে করতে বুড়ি হয়ে গেলো।

– শালা বউয়ের কাছে যাবি সেটা আগে বললেই পারতিস। রাহনাফের কথা শুনে বাকা চোখে ওর দিকে তাকায় আলিহান। তারপর বলে উঠে,

– তুইও চল না আমার সাথে। তোর লেখিকা সাহেবার সাথে দেখা হয়ে যাবে।

আলিহানের কথা শুনে কিছুক্ষণ মৌনতা অবলম্বন করে রাহনাফ। মৌনতা ভেঙে সে বলে উঠে,

– এখন না পরে এক সময় দেখা করে নিবো। লেখিকা ম্যাম এখন তার ডিবেট নিয়ে ব্যাস্ত। আমি তাকে ডিস্টার্ব করতে চাইনা।

– তুই তাকে ডিস্টার্ব করতে চাস না নাকি সে ডিস্টার্ব হয় না, কোনটা? প্রশ্ন ছুড়ে দেয় আলিহান। সে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাহনাফের দিকে। রাহনাফের জবাব কি হয় সেটা জানার জন্যে। রাহনাফ আলিহানের কথার প্রতিউত্তরে বলে,

– দুটোই। আমার লেখিকা সাহেবা আমাকে পাত্তা দেয় না। আমি যে তার প্রেমানলে পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছি সেটা কি সে দেখতে পাচ্ছে না। আর কত পুড়াবে সে আমায়। ভাই তোর শালীটাকে একটু বুঝা। আর কত পুড়াবে সে আমাকে। শুধু আমাকে লাগবে তার, এমন একটা চুক্তি হোক আমি খুব করে চাই।

৩১,
হে বসন্ত, খনিকের মায়ায় যাসনে তুই চলে, যদিও যাবি, যাস তুই আমায় একটু বলে। যাবার সময় দিস আমায় তোর রঙের একটু খানি ছোয়া। দিবি কি আমায়?? আমি এই অল্প খানি চাই, সারাজীবন থাকবো আমি তোরই অপেক্ষায়। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো রাহনাফ। রাত এখন বারোটা ছুঁইছুঁই, কিছুক্ষণ পর বারোটা বাজবে। ঘড়ির কাটা যখন বারোটার মাঝামাঝি পৌঁছাবে তখনি রাহনাফ তার জিবনের আরো একটা বছর পিছনে ফেলে চলে যাবে। হাড়িয়ে যাবে আরো একটা বছর তার জিবন থেকে। মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ সে। আকাশের মতোই তার জিবনটা মুক্ত। না আছে কারো শাসন আর না আছে বারন। যে দিকে খুশি যাও বলার কেউ নেই। শাসন করারও কেউ নেই। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে মেহেরের নাম্বারে ডায়াল করলো সে। প্রথম কল কেটে গেলে আবার ও কল করে সে। দ্বিতীয়বার রিং হতেই কল রিসিভ করে মেহের। ঘুৃম ঘুম চোখে নেশালো কন্ঠে বলে উঠে,

– আপনি এত রাতে!

– ঘুমচ্ছিলেন নাকি?

– হ্যাঁ।
রাহনাফের খুব খারাপ লাগলো মেহেরের ঘুমটা ভাঙিয়ে দেওয়ার কারনে। কেন যে সে এত রাতে কল করতে গেলো। তবে মন্দ হয়নি। এত রাতে কল না করলে মেহেরের এমন আফিম মেশানো কন্ঠ সে শুনতেই পেত না।

– কিছু বলবেন আপনি? ওপাশ থেকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মেহের।

– কালকের দিনটা আমার নামে করে দিন লেখিকা সাহেবা। শান্ত কন্ঠে বলে উঠে রাহনাফ।

– কাল কি কোন বিশেষ দিন নাকি?

– একটু স্পেশাল।

– কি স্পেশাল শুনি। উৎসাহ নিয়ে বলে মেহের।

– কাল সকালে আমি আপনার অপেক্ষা করবো লেখিকা সাহেবা। কল কেটে দেয় রাহনাফ। বুকপকেটে মোবাইল রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বাকরে শ্বাস ফেলে।

চারিদিক থেকে আযানের সুমিষ্ট সূর ভেসে আসছে মেহেরের কানে। আযানের সূর শুনে ঘুম কেটে যায় মেহেরের। আড়মোড়া হয়ে উঠে বসে বড় করে হাই তুলে ওয়াশরুমে চলে যায়। তারপর ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজ আদায় করে নেয় সে। নামায শেষে মনে হলো আর একটু ঘুমিয়ে নেই। একরাশ ঘুৃম এসে ভীড় জামালো মেহেরের দু-চোখের পাতায়। কিন্তু এখন তো ঘুমালে চলবে না। দুদিন পর ডিবেট। ভালো করে প্রিপারেশ নিতে হবে। এবারের ডিবেটটা যে করেই হোক তাকে জিততেই হবে। কিন্তু তার দু-চোখ সেটা মানছে না। তারা বারবার করে বলছে, আর একটু ঘুমিয়ে নে। ঘুমালে ক্ষতি কিসের। ঘুম মানুষের শরীর মন দুটোকেই সুস্থ রাখে। সু্স্বাস্থ্যের জন্যে ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্কের নিউরোন বিশ্রাম পায়। প্রতিটি নিউরোনের বিপরীতে ১০ টি করে গ্লিয়াল সেল রয়েছে যা ঘুমের মধ্যে তৎপর হয়ে ওঠে। তেমনি এই গ্লিয়াল সেলগুলো নিউরোনের ভেতরে যে টক্সিন থাকে তা ধুয়ে মুছে পরিচ্ছন্ন করে এবং পরবর্তী দিনের কাজের জন্যে প্রস্তুত করে। অর্থাৎ তখন ব্রেনের টিস্যুগুলো রিপেয়ার হয়। ঘুম ব্রেন সেলকে সতেজ রাখে। ভালো ঘুমালে স্মৃতিশক্তি এবং ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে মস্তিষ্ক ব্যবহারের সক্ষমতা, তার মানসিক অবস্থা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। ফলে তিনি পূর্ণ একাগ্রতা ও সর্তকতার সাথে প্রতিটি কাজ করতে পারেন। সারাদিনে ঘটে যাওয়া মাসেল, সেল ও হাড়ের ক্ষয়ক্ষতির মেরামত হয় ঘুমের মধ্যে। অবশেষে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরে মেহের। কিছুক্ষণের মধ্যে সে হাড়িয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে। দেখতে থাকে নানা রং বেরঙ্গেস স্বপ্ন। ঘুমের মধ্যে হেসে উঠে সে। হঠাৎ মোবাইলের বিকট শব্দের ঘুম কেটে যায় মেহেরের। রিংটোনে গাড়ির হর্নের শব্দ! মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় তার। এটা নিশ্চয় আলিহানের কাজ। সে ছাড়া আর কেউই এই কাজ করতে পারে। তাড়াতাড়ি করে বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটা বের করে মেহের। স্কিনে রাহনাফের নামটা জ্বলজ্বল করছে। অটোমেটিক তার কপালে কয়েটা ভাজ পরে যায়। রাহনাফ সাতসকালে কেন কল করেছে! অবাকে চেয়ে বেশী চিন্তিত মেহের। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলো বাহিরে এখন আবছা অন্ধকার। আচ্ছা রাহনাফের কিছু হয়নি তো, ও ঠিক আছে তো! নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মেহেরের ছোট্ট মাথায়। চটজলদি কল রিসিভ করতে গিয়ে কেটে যায়। নিমিষেই মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে যায় তার। ততক্ষণাৎ আবারও কল করে রাহনাফ। মেহের তাড়াতাড়ি করে কল রিসিভ করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওপাশ থেকে রাহনাফ বলে উঠে,

– একটু জানালার কাছে আসবেন লেখিকা সাহেবা। দু-চোখ আমার বড্ড তৃষ্ণার্থ আপনাকে দেখার জন্যে। প্লিজ লেখুকা সাহেবা আমার চোখের তৃষ্ণাটা মিটিয়ে দিন।

রাহনাফের কথা শুনে আপবাআপনি চোখ বড় বড় হয়ে যায় মেহের। ভ্রু কুচকিয়ে মোবাইলের নাম্বরটা একবার দেখে নেয়। নাম্বার তো ঠিকই আছে তাহলে জানালার কাছে আসতে বলল কেন? বিছানা ছেড়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে উকি দেয় মেহের।

– ডান পাশে তাকান লেখিকা সাহেবা রাহনাফের কথামতো ডানের দিকে তাকাতেই আবছা আলোয় দেখতে পায়, বাসার সামনে বাইকের উপর বসে আছে কেউ।

– ওটা আপনি! প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মেহের।

– নিচে আসুন।

– পাগল হয়ে গেছেন আপনি? এত সকালে আমার বাসার সামনে কি করছেন আপনি?

– উঃহ আপনি এত প্রশ্ন করেন কেন? তাড়াতাড়ি নিচে আসুন। মশায় কামড়িয়ে আমার অর্ধেক রক্ত শেষ করে দিয়েছে বাকি অর্ধেকটা শেষ করার আগে চলে আসুন।

– কোথায় যাব আমি?

– বলেছিলাম না লেখিকা সাহেবা আজ সারাদিন আমার নামে করে দিবেন।

– তাই বলে এত সকালে!

– হ্যাঁ। চলে আসুন আমি অপেক্ষা করছি। কল কেটে দেয় রাহনাফ। মেহের রুমে এসে বিছানার উপর মোবাইল রেখে গলায় উড়না পেচিয়ে চলে যায় বাহিরের দিকে।

চলবে,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

[আপনাদের এতদিন অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্যে দুঃখিত। আগামিকাল থেকে রেগুলার গল্প দিবো। আর হ্যাঁ সবার মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। আসসালামু আলাইকুম ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here