যদি তুমি জানতে’পর্ব-২২

0
572

#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_22
রাতে হাতে মেহেদি লাগিয়ে ঘুমিয়ে যায় রুপা। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় রুপার । পুরো হাত লেপ্টে আছে মেহেদি তে,এমন কি বিছানার চাদরও। রাতে মেহেদি হাতে লাগিয়ে শুকানোর অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে রুপা।
রুপার এই সাজসকাল বেলার চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে আসলো সাহেলা বেগম।
-‘ কি হয়েছে, হয়েছে কি? চেঁচাচ্ছিস কেন? কি আবার অঘটন ঘটালি?’
-‘ দেখা আম্মু হাতের অবস্থা দেখো। আজ আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবো কিভাবে? চাদর,বালিশ সব নষ্ট হয়েছে।’
সাহেলা বেগম কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
-‘বিছানার চাদর,আর বালিশ নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। রাতে হাত ধুয়ে ঘুমাসনি কেন?’
রুপা মিনমিন করে বলল,
-‘ ঘুমিয়ে পরেছিলাম।’
-‘ ফুল হাতার ড্রেস পড়িস দেখা যাবে না।’
রুপা মন খারাপ করে বসে থাকে। তুরান কত আগ্রহ করে মেহেদি এনে দিয়েছে। বলেছে সকালে এসে দেখবে কেমন হয়েছে! এখন তো দেখানোর মত অবস্থা নেই। তুরান আরো বলেছে মেহেদি শুকানোর পর হাত ধুয়ে ঘুমাতে। এক গাদা কথা শুনতে হবে আজ আবার।
তুরান ছাদে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রুপা আসছে না কেন? শরৎ এর পুরো আকাশ জুড়ে খন্ড খন্ড শুভ্র মেঘ। নীল আকাশের মাঝে সাদা মেঘের খন্ডগুলো চমৎকার ভাবে ফুটে রয়েছে। শরৎ এর আকাশ জুড়ে থাকা সাদা মেঘ আর সেই সাথে উড়ে যাওয়া সাদা বক যে মনোযোগ দিয়ে দেখে নি সে বোধ হয় বাংলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে নি। তুরান মগ্ন হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হঠাৎ আকাশের এমন সৌন্দর্য টা কেন ভালো লাগলো কে জানে। নাকি প্রেমে পড়লে সবই ভালোলাগে?
পিছন থেকে এসে আচমকা তুরানের কলার টেনে ধরে রুপা। তুরান তাল সামলাতে না পেরে রুপার গায়ে হেলে পড়ে। রুপা বেশ মজা পেয়েছে!
এখন ছাদে যে কেউ আসতে পারে তাই তুরান একটু ব্যবধান রেখে দাঁড়ালো। কেউ দেখে ফেলবে বা কেউ সন্দেহ করবে এমন চিন্তা ভাবনা রুপার কখনোই ছিলো না। এসব চিন্তা ভাবনা রুপার মনে কখনো উঁকি দেয়ই না বোধ হয়।
-‘ আমি কতক্ষন ধরে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছি অথচ নিজে মগ্ন হয়ে আকাশ দেখছে। আকাশ টা কি আমার থেকে সুন্দর।’
তুরান হেসে ফেলে।
-‘ পৃথিবীতে তোমার থেকে সুন্দর কিছু নেই তো।’
-‘ খুব ঢং শিখছেন দেখছি!’
হঠাৎ একটা কথা তুরানের মাথায় নাড়া দেয়। রুপার মুখে সব সময় আপনি শুনতে অভ্যস্ত তুরান। কখনো তুমি বলে নি। ব্যাপার টা তো খুব অদ্ভুত!
-‘ কি হলো আবার কি চিন্তা করছেন?’
-‘ তুমি আমায় আপনি না বলে তুমি বলতে পারো না?’
রুপা নাক মুখ কুঁচকে বলে,
-‘ তুমি টুমি ভালোলাগে না আপনিই ভালোলাগে। আপনি করে বললে প্রেম প্রেম পায়।’
তুরান একটু ভেবে দেখলো রুপা আসলে খারাপ বলে নি। রুপার মুখে আপনি করে বলা টা ই বোধ হয় বেশী ভালো লাগে। আর ওঁদের প্রেম তো ইউনিক, অদ্ভুত রকমের। তাই আর চার- পাঁচ টা কমন প্রেমের মত তুমি বলে না বলাই শ্রেয়। ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে তুরান বলে,
-‘ সারাজীবন আপনি করে ই বলো বুঝলে রুপা বাবু টা? আচ্ছা.. আচ্ছা হাতে মেহেদি দেও নি রাতে? ইস! শরৎ এর আকাশ দেখে দেখে সবই ভুলে গেছি।’
রুপাও এ প্রসঙ্গ টা ভুলে খুব স্বস্তি তে ছিলো। রুপা হাত দুটো পিছনে লুকিয়ে ফেলে।
-‘ রাগ দিবেন না প্লীজ। রাতে মেহেদি দিয়ে ঘুমিয়ে গেছি। সকালে উঠে দেখি হাত লেপ্টে গেছে।’
এই বলেই কেঁদে দেয় রুপা। তুরান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সব সময় একটা ভুল কাজ করে ‘রাগ দিবেন না প্লীজ’ বলে কেঁদে দেওয়া রুপার অভ্যাস। কেউ যদি রাগ দেওয়ার আগেই কেঁদে দেয়, তাঁকে রাগ কিভাবে দেয়?
তুরান রুপার হাত দুটো সামনে এনে বলে,
-‘ এই টুকুর জন্য কেউ কাঁদে বলো? তোমার এই লেপ্টানো মেহেদির রঙের মাঝেও যে ভালোবাসা খুঁজে পাই।’
রুপা কান্নাকাটি বাদ দিয়ে হেসে দেয়। ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে বলে,
-‘ এভাবে কান্নার একটা সুবিধা আছে আপনি রাগ দিতে পারেন না।”
-‘ তোমরা মেয়েরা কান্নার মাধ্যমে যুদ্ধও জয় করতে পারবে। এবার বাসায় যাও গোসল দিয়ে রেডী হয়ে নেও,শাড়ী পড়বে কিন্তু। আর এভাবে সময় অসময় আমাদের মানুষ ছাদে দেখলে সন্দেহ করবে।’
রুপা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
-‘ যাবো না।..লাগবে!’
তুরান ভ্রু কুঁচকে বলে,
-‘ লাগবে মানে? কি লাগবে?’
রুপা মুখ টা তুরানের কানের কাছে নিয়ে বললো,
-‘ চুমো লাগবে চুমো।’
এটা বলে তুরানের দিকে তাকাতেই ভীষন লজ্জায় পড়ে যায় রুপা। নিজের ব্রেকলেস কথার জন্য নিজের কানের উপরই দুইটা থাপ্পড় দিয়ে ইচ্ছা করে।
তুরান ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে রুপাকে কাছে টেনে বলে,
-‘ চোখ বুঁজো।’
রুপা চোখ বুঁজলেও ওর চোখের পাতা কাঁপছে। তুরানের নিঃশ্বাস রুপার মুখে বারি খাচ্ছে। আবার সেই ভালোলাগার অনুভূতি তে নিজেকে হারিয়ে ফেলে রুপা।
তুরান আলতো করে নিজের ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দিলো রুপার কপালে। রুপা কেঁপে উঠলো।
সিঁড়ি তেই কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে দুই জন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। সাহেলা বেগম নয়ত?বিয়ে বাড়ির পিচ্চির দল ছাদে এসেছে।
রুপা তুরানের দিকে না তাকিয়ে দ্রুত ছাদ থেকে নেমে গেলো। তুরান মনে মনে পিচ্চি গুলোকে গালি দিচ্ছে। ডিস্টার্ব করার সময় পেলো না আর!
রুপা খুব সহজ সরল ভাষী । নয়ত কেউ এভাবে নিসংকোচ ভাবে চুমো চাইতে পারে? বিশাল এই সৃষ্টি জগতে রুপা যেন আল্লাহর সৃষ্টি স্পেশাল মানুষ।

রুপা গোসল সেরে নিলো। ভেজা চুল গুলো দ্রুত হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিলো। সিল্কের কালো রঙের একটা শাড়ি পড়লো, কালো রঙের চুড়ি,কানে কালো খাঁজকাটা ঝুমকো। থুতনির নিচে কালো কুচকুচে তিলটাও যেন শাড়ী,চুড়ির সাথে ম্যাচিং করে আছে।
তুরান জানালার ফাঁক দিয়ে বরাবরের মত একটা কাগজ ছুঁড়ে মারলো।
‘ টিয়া কালারের লুঙ্গি, আর হলুদ ফতুয়া নেই তো। কি পড়বো আমি এখন?’
তুরান এত ফাজলামি করতে পারে রুপার জানা ছিলো না।
রুপা হনহন হয়ে রুম থেকে বেরুলো।
-‘ আজকে স্নো, পাউডার, ফাউন্ডেশন, মেকআপ ,আই লাইনার, লিপস্টিক,কাজল ,টিপ সব দিতে পারবেন। ইচ্ছা করলে কনের মত করে পার্লার থেকে সেজেও আস্তে পারেন।’
রুপার কথা শুনে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ার মত অবস্থা তুরানের। রুপার এমন রাগ করে কথা বলা টা বেশ লাগে! তুরান সিরিয়ার ভাব নিয়ে বললো,
-‘ আমার কাছে নেই তো,তুমি ধার দিবে?’
রেগেমেগে রুমে দিকে পা বাড়ালয় রুপা। তুরান পিছন থেকে ঢেকে বলে,
-‘ ম্যানিকুইন রুপা! লিওনার্দো দা ভিঞ্চি যেমন বছরের পর বছর ধরে মোনালিসা কে এঁকেছিলো ,আমি তোমায় আমার মনের রং তুলিতে হাজার বছর ধরে হাজার রুপে আঁকতে চাই!’
তুরানের কথা না শুনেই চলে গেল রুপা। তুরান হতাশ হয়ে নিজের মনে বলল,
-‘ এত মহা মূল্যবান প্রেম উক্তি কেউ মিস করে। ধ্যাত!’
রুপা কালো পরী সেজেছে,তুরান সম্পূর্ণ হোয়াইট পড়লো। হোয়াইট শ্যার্ট, প্যান্ট,শু।শুধু সানগ্লাস টা ব্লাক।
যেকোন মেয়ে একবার দেখলে আর একবার দেখার ইচ্ছা পোষণ করবে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here