যদি তুমি জানতে’পর্ব-২৫

0
474

#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_25
হঠাৎ রুপার এমন এবনরমাল আচরণের কারন খুঁজে পাচ্ছেনা তুরান। রুপা ওকে ক্যারেক্টারলেস বললো কিন্তু কেন? আর হঠাৎ মালিহার গালে চড় দিলো কেন? অনেকক্ষণ পর আসল বিষয়টা তুরানের মাথায় আসলো। মালিহার সাথে কথা বলার কারনে কি রুপা ওকে ভুল বুঝেছে। কোন মেয়ের সাথে কথা বলার কারনে কেউ এমন সিন ক্রিয়েট করে? রুপার অন্তত জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো মেয়েটা কে? সেই কতক্ষন ধরে রুপা কে খুঁজতে ছিলো তুরান। কোথায় ছিলো এতক্ষন রুপা?
হঠাৎ একটা বিষয় মনে মনে পড়তেই তুরান চিন্তায় পড়ে গেলো।‌‌‌রুপা তো আর পাঁচটা মানুষের মত স্বাভাবিক না । রুপার আচরণে স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। রুপা ছোট খাটো বিষয় নিয়ে অনেক বড় কান্ড ঘটাতে পারে। এমনকি রুপা কোন কারনে কষ্ট পেলে নিজের শরীরে আঘাত করতেও বিন্দু মাত্রও বিচলিত হয় না। তুরানের চিন্তা ক্রমে ক্রমে গাঢ় হতে লাগলো। সত্যিকারের একটা চিন্তায় পড়ে গেলো তুরান। রুপা তো তুরানের কথা কোন যুক্তিই শুনতে চাইবে না। রুপা যেমনি হোক তুরান তো রুপা কে ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসা সব ধরনের সমস্যা কে উপেক্ষা করতে পারে। তুরানের মাথায় এখন একটা চিন্তাই কাজ করছে রুপা যেন ওর ক্ষতি না করে । যেভাবে হোক রুপাকে বুঝিয়ে ঠিক করতে হবে। রুপা তো এমনই ওর প্রতি রাগ করেই বা কি হবে?
দিন টা ভালোই যাচ্ছিলো তুরানের। হঠাৎ ঝামেলা বেঁধে গেলো। রুপার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার মুহূর্তের কথা ভাবতেই শিউরে উঠছে তুরান।কত সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট হয়ে গেলো কি এক আজাইরা কারনে।সব ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো তুরান। রুপার জন্য মনটা বড্ড ছটফট করছে।‌
বিছানার উপর আধশোয়া অবস্থায় বসে রইল রুপা। অশান্তি লাগছে রুপার।‌‌‌‌‌কখনো উঠে বসে,কখনো একটু হাঁটে। আবার বালিশে হেলান‌ দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় বসে থাকে। অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না রুপা।‌ রুপার মনে এখন ঠিক অস্থিরতা কাজ করছে না, রুপার মনে এখন কাজ করছে তুরানের উপর ক্ষোভ।রুপা মনে মনে তুরানের সাথে কথা না বলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছে। তুরান কেন অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলো? তুরানের সামনে বসে ওই মহিলা আর মেয়েটা অপমান করলো রুপাকে অথচ তুরান কোন প্রতিবাদ করলো না । তীব্র অভিমানে ছেয়ে যাচ্ছে রুপার মন। চাপা কষ্ট কাজ করছে রুপার মনে। রুপা মনে মনে ভেবে নিলো রুম থেকে কয়েক দিনে বের হবে না। তুরানের সামনেও পরবে না। যত ইচ্ছা মেয়েদের সাথে কথা বলুক, রং ঢং করে কথা বলুক। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে মন থেকে কষ্ট দূর করতে চাচ্ছে রুপা। অবাধ্য চোখ জোড়া বুঁজে শুয়ে রইলো, নিজেকে ঘুমে মগ্ন রাখার চেষ্টা করছে যথারীতি।
তুরান বাসায় এসে রুপার রুম টার দিকে তীব্র কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। চার দিকে নিরব একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। তুরান হয়ত আশা করেছিলো বাসায় এসে রুপার চেঁচামেচি শুনবে ‌। কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না। সাহেলা বেগম রুপার রুমের পাশে একটা ইজি চেয়ারে ‌ খুব আয়েশ করে বসে রইলো। সাহেলা বেগমের ভাব- ভঙ্গিমা খুব স্বাভাবিক। তুরান আড়ালে দাঁড়িয়ে সাহেলা বেগমের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করে রুপার রুমটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো তুরান তেমন কোন লাভ হলো না। রুপার কোন খোঁজ নিতে পারলো না। তুরান হতাশ হয়ে রুমে চলে গেলো। তুরান এরকম পরিস্থিতির উপর যেন বিরক্ত হচ্ছে খুব।‌ বিকালে রুপা ছাদে গেলে সবটা বুঝিয়ে বলবে ,এ ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই। তুরান রুমে এসে গোসল সেরে নিলো। শরীরটা খুব ফ্রেশ লাগছে এখন। গোসলের পর চা বা কফি খাওয়া তুরানের অভ্যাস। দক্ষ হাতে চা তৈরি করে নিলো দ্রুত। দীর্ঘ দিন এভাবে ব্যাচেলর থাকতে থাকতে মেয়েলি সব কাজই মোটামুটি নিজের প্রয়োজনে শিখে ফেলেছে।তুরান বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর বইয়ের পাতায় একটু- আধটু চোখ বুলাচ্ছে। তুরানের চোখে ডাক্তারের দেওয়া সেই মোটা ফ্রেমের চশমা টা। বই পড়ার সময় ছাড়া চশমাটা চোখে দেয় না তুরান। চশমা পড়তে তেমন ভালোলাগে না।‌ আর চশমা পড়লে চেহারায় কেমন একটা হাবা হাবা‌ ভাব চলে আসে।
তুরান নিজেকে বইয়ের পাতায় মগ্ন রাখতে চাইলে রাখতে পারছে না। বার বার রুপার কথা মনে পড়ছে। তুরান চায়ের কাপ টা বেড সাইডে রাখলো। বইটা আর চশমা‌ টাও রেখে দিলো। তুরান চোখ বুঁজে আজকে‌ পুরো দিনের সব ঘটনা আরেক বার ভেবে নিলো। আজকে দিনটা তুরানের কাছে অনেক টা স্পেশাল। কারন রুপার ঠোঁটে প্রথম চুমো খেয়েছে।‌ সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিলো অনুভূতি টা। কেমন তীক্ষ্ণ একটা অনুভুতি, এমন অনুভূতি কখনো ভোলার নয় । এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো তুরান।
রুপা অনেকক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। ঘুমিয়ে মানুষ সব মান,অভিমান ভুলে থাকতে পারে। ঘুম কি একটা অদ্ভুত জিনিস। রুপা কিছুতেই রুম থেকে বের হতে চাচ্ছে না।
নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাচ্ছে, তাই টেবিলের কাছে রাখা খাতা আর পেন্সিল টা হাতে নিলো। রুপার কেন জানি হঠাৎ মনে হলো সে খুব ভালো ছবি আঁকতে পারে।‌ রুপার সাথে মাঝে মাঝে অদ্ভুত কান্ড ঘটে। মাঝে মাঝে রুপার মনে হয় সে অনেক কিছু জানে। এটা কেন মনে হয় রুপা জানে না। আর জানতেও চায় না। এসব নিয়ে ভাবতে গেলে রুপার মাথায় পেইন হয়। অথচ সাহেলা বেগম সব সময় রুপা কে এসব নিয়ে ভাবতে বলে। মাঝে মাঝে একারনে সাহেলা বেগমের প্রতি চরম বিরক্ত হয় রুপা।
রুপা অবচেতন মনে ছবি আঁকতে চেষ্টা করলো। রুপার ধারনা মিথ্যা না আসলেই রুপা খুব দারুন ছবি আঁকতে পারে। রুপা অবাক হয়ে যায়। এর আগে কেন রুপার মনে হলো না যে ও এত ভালো আঁকতে পারে? যদি জানতো তাহলে তুরানের একটা ছবি আঁকত।‌ এখন তো তুরানের সাথে রাগ রুপা,তাই তুরানের ছবি আঁকার কথা মাথায় আনছে না রুপা।
ঘুম থেকে উঠে তুরান দেখে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তুরান তড়িঘড়ি করে ছাদে যায়। ছাদে নেই রুপা। রুপা হয়ত আরও আগে এসে তুরানের জন্য অপেক্ষা করে চলে গেছে। তুরানের নিজের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। অস্থির হয়ে ছাদে পাঁয়তারা করতে লাগলো। হঠাৎ তুরানের মনে হলো এখন আর অপেক্ষা করে লাভ নেই। তাই তুরান যেভাবে হোক রুপার রুমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রুমে যাওয়া সম্ভব না হলেও জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া তো যাবে।
রুপার রুমের জানালা ভিতর থেকে আটকে দেওয়া। রুপা কি রাগ করে তুরানের কাছে থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখছে? ক্লিয়ারলি বিষয়টা বুঝতে পারছে না রুপা। এত টাইম রুপা তো কখনো তুরানের চোখের আড়ালে থাকে নেই। আর রুপা যদি তুরানের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করত তাহলে তুরান কে ছাদে না দেখে অবশ্যই তুরানের রুমে যেতো। তার মানে রুপা রাগ করে আছে,ইভেন তুরানের কোন খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করে নি।
তুরান আজিজ চৌধুরীর বাসার সামনে ঘুরঘুর করতে লাগলো। বিকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আজিজ চৌধুরীর রুম থেকে রুপার কথায় শব্দ আসছে। তুরান জানালার ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু দেখা গেলো না কারন জানালার পর্দা গুলো দেওয়া। রুপা রাগ করে নি , করেছে চাপা অভিমান। রাগ করলে হয়ত এতক্ষনে এসে তুরানের গালে কষিয়ে কয়েকটা থাপ্পর দিতো। রুপার এমন শূন্যতায় তুরান অনুভব করছে রুপা কে কতটা ভালবাসে। আসলে মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষ টার সাথে দূরত্ব তৈরি করে , নিজের গুরুত্বটা বুঝাতে হয়।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here