#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_3
ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো রুপা। পাশে বসে আছে সাহেলা বেগম ।
-‘তুমি তুরানের চায়ের মগ ভাঙলে কেন? তোমায় কত দিন না বলছি ভাংচুর করবে না। তুরান যদি তোমার বাবার কাছে বিচার দিতো?’
অপরাধীর ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে আছে রুপা।
-‘তুমি যদি আমার কথা না শুনো তাহলে তোমায় তোমার বাবা-মায়ের কাছে দিয়ে আসবো।’
অসহায় দৃষ্টিতে সাহেলা বেগমের দিকে তাকায় রুপা। অনুনয় করে বলল,
-‘না আর এমন করব না। প্লীজ আমায় ওঁদের কাছে দিও না। ওঁদের আমার ভালো লাগে না। ওরা মারে আমায়।’
-‘এমন কাজ করলে সবাই মারবে।’
রুপা আর কোন কথা বলে না। সাহেলা বেগম বেরিয়ে গেলো রুম থেকে । আজিজ চৌধুরী বাসায় ফিরিছে। গোসল সেরে আধ শোয়া অবস্থায় খাটে বসে বই পড়ছে। সাহেলা বেগম টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। ডাইনিং রুম থেকে ডাক দিলো আজিজ চৌধুরী কে। সাহেলা বেগমের ডাকে সারা দিয়ে ডাইনিং রুমে গেলো আজিজ চৌধুরী ।
বেশ মনযোগ দিয়ে বই পড়ছিলো। সাহেলা বেগমের চিল্লাপাল্লার জন্য বই পড়া আর হলো কোথায়? বাংলার প্রতি ঘরে একটা করো প্রধানমন্ত্রীর বাস। তা হলো ঘরের বউ। সমস্ত অফিসের হাজার হাজার মানুষ চলে আজিজ চৌধুরীর হুকুমে। আর আজিজ চৌধুরীর চলতে হয় বউয়ের কথায়। বউয়ের কথা অমান্য করার সুযোগ নেই। দুই দিন রান্না বন্ধ তাহলে।
বিরক্ত নিয়ে ডাইনিং রুমে গেলো আজিজ চৌধুরী । চেয়ায় টেনে বসে সাহেলা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘একটু পর খাওয়া যেত না নাকি? বই পড়ছিলাম একটু ।’
রাগান্বিত দৃষ্টিতে সাহেল বেগম আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকায়।
-‘না,না থাক। খাওয়া শেষে বই পড়বো নে বই।’
প্রতিদিন ডিউটি সামলানো ,আবার আজিজ চৌধুরীর পছন্দের খাবার গুলো রান্না করা। বাসার সব কাজ এক হাতে করে সাহেলা বেগম । আজিজ চৌধুরী ভেবে পায় না এই মানুষটা এত ধৈর্য কোথায় পায়? নিঃসন্তান সাহেলা বেগম । পরিবার বলতে আজিজ চৌধুরী আর সে। দুই জনের মানুষের সংসারে কাজের লোকের কি দরকার? আর মেয়ে হয়ে জন্মিয়েছে ,স্বামী কে যদি রান্না করে না খাওয়াতে পারে তাহলে গৌরব টা কোথায়? সুন্দর চিন্তা ধারার মানুষ সাহেলা বেগম । টাকা পয়সার কোন কমতি নেই। এত কিছুর পর শুধু অপূর্নতা একটাই। সন্তান নেই।
খাবার মুখে দিয়ে আজিজ চৌধুরী বলল,
-‘তোমার রান্না তুলনা নেই সাহেলা।’
-‘পঁচিশ বছর ধরে প্রশংসা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত।’
আজিজ চৌধুরী হেসে বলল,
-‘আমি তো তোমার হাতের রান্না খেতে খেতে ক্লান্ত হই না।’
কথা বাড়ায় না সাহেলা বেগম । শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে। তাড়াহুড়া করে খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
আজিজ চৌধুরী বই হাতে নিয়ে আবার বসলো। লোক টা বই পোকা। বই পড়ার প্রচুর নেশা।
-‘রুপার অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে? এভাবে আর কত দিন? মেয়েটার মেডিকেল স্টুডেন্ট। কি শার্প ছিলো মেয়ে’টা।’
চোখ বুঁজেই ঘুম ঘুম চোখে সাহেলা বেগম বলল,
-‘আগের থেকে কিছুটা সুস্থ । আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি। বাকীটা আল্লাহর ইচ্ছা।’
কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরলো সাহেলা বেগম।
.
ছাদে শার্ট,প্যান্ট রোদে শুকাতে দিয়েছিলো তুরান। এখন দেখছে না। মেজাজ খারাপ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশী বিরক্ত হচ্ছে। এ কাজ রুপা ছাড়া আর কে করবে?
তুরান দরজা নক করতেই সাহেলা বেগম দরজা খুলে দিলো। তুরান বিব্রতকর পরিস্থিতি তে পরে গেলো। অন্য কেউ যদি লুকিয়ে রাখে? এভাবে জিজ্ঞেস করাটা বড্ড বেমানান।
-‘কি বাবা কিছু বলবে?’
তুরান আমতা আমতা করে বলল,
-‘আসলে আন্টি ছাদে শার্ট,প্যান্ট শুকাতে দিয়ে ছিলাম। এখন দেখছি না। রুপা কি লুকিয়ে রেখেছে কিনা তাই একটু জিজ্ঞেস করতে আসলাম।’
একটু থেমে তুরান বলল,
-‘না,না আন্টি রুপা না ও লুকাতে পারে। একটু জিজ্ঞেস করতে আসছি একটু।’
-‘রুপা তো মাঝে মাঝে এমন করে। তোমায় ক্ষ্যাপাতে নাকি ওর ভালোলাগে। তুমি বসো আমি দেখছি।’
তুরান সোফায় বসলো। কি বাজে একটা অবস্থা! এই ভয়ে অনেক দিন ছাদে কাপড় শুকাতে দেয় নি। রুমে তিন দিনেও শুকায় না। তাই আবার বাধ্য হয়ে ছাদে শুকাতে দিলো।
-‘কি কালার শার্ট তোমার?’
সাহেলা বেগমের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো তুরান।
ঠোঁটের কোনে চিলতে হাসি ফুঁটিয়ে তুরান বলল,
-‘ব্লাক শার্ট,ব্লাক প্যান্ট।’
এটকু চুপ থেকে সাহেলা বেগম বলল,
-‘মেয়েটা কে নিয়ে আর পারি না!’
মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে সাহেলা বেগম আবার বলল,
-‘তোমার শার্ট, প্যান্ট রুপার গায়ে। ঘুমাচ্ছে ও। ঘুম থেকে উঠুক।’
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে রইল তুরান। সাহেলা বেগম আবার বলল,
-‘তোমায় খুব ডিস্টার্ব করছে রুপা তাই না?’
ডিস্টার্ব না শুধু মাথা খাচ্ছে আমার! ভদ্রতার খাতিরে তুরান বলল,
-‘না,না আন্টি তেমন ডিস্টার্ব করছে না।’
ঘুম থেকে উঠে হেলেদুলে এলোমেলো ভাবে হেঁটে এসে বলল,
-‘শার্ট, প্যান্টের জন্য এসেছেন বুঝি? আমার ব্লাক কালার ফেবারিট। তাই নিয়ে আসছি। দিবো না আর।’
কি সাবলীল ভাবে কথা বলছে বেয়াক্কেল মেয়েটা। তুরান ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে। সাহেলা বেগম রাগান্বিত দৃষ্টিতে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে। রুপা ভয়ে চুপসে গেলো। ভয় মাখা দৃষ্টিতে তুরানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘সামান্য একটা শার্ট, প্যান্টের জন্য বাসা পর্যন্ত এসেছেন?’
-‘শ্যাট আপ!’
সাহেলা বেগমের কথায় ভয় পেয়ে যায় রুপা।
-‘এক্ষুনি শার্ট, প্যান্ট চেঞ্জ করে দিয়ে দেও ওকে।’
-‘এক্ষুনি কিভাবে চেঞ্জ করবো? মানুষের সামনে বসে চেঞ্জ করা যায়।’
রুপার কথা শুনে রীতিমত লজ্জায় পরে গেলো তুরান। সাহেল বেগম চোখ লাল করে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে।
রাগ চেপে বলল,
-‘যাও রুমে গিয়ে চেঞ্জ করো।’
-‘না দিবো না বলছি তো।’
রুপার গালে কষিয়ে চড় মারে সাহেলা বেগম। তুরান হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
সাহেলা বেগম চেঁচিয়ে বলল,
-‘তোমার জন্য মানুষের কাছে ছোট হতে হচ্ছে আমার।এমন করলে তোমার বাবা-মা কে খবর দিবো।’
অপরাধ বোধ কাজ করছে তুরানের মাঝে। এভাবে চড় না দিলেও হত। তুরান বলল,
-‘থাক আন্টি! ওকে কিছু বলেন না।’
তুরান হিসেব মিলাতে পারছে না। রুপা কি সাহেলা বেগমের মেয়ে না?
রুপা কাঁদছে গালে হাত দিয়ে। তুরানের মায়া হচ্ছে। তুরান বুঝতে পারছে না মেয়েটা এমন কেন?
-‘আন্টি রুপা আপনার কে হয়?’
-‘বোনের মেয়ে।’
কথা বাড়ালো না তুরান।
-‘আন্টি আমি আসছি। ও তো এমনই। ওকে কিছু বলে লাভ নেই। ওর যদি ইচ্ছা না হয় শার্ট, প্যান্ট ফেরত দিতে হবে না।’
হাতের কাছের গ্লাসটা আচমকা রুপা ছুড়ে মারলো তুরানের মাথায়। চিৎকার করে বলল,
-‘ইতর,শয়তান তোর শার্ট, প্যান্টে আগুন দিবো । তোর জন্য আম্মু আমায় মেরেছে।’
তুরানের কপাল থেকে রক্ত পরছে। সাহেলা বেগম ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।
তুরান কপালে হাত দিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
কি করবে রুপাকে চড় দিবে? না! এই বাসায় আর থাকা যায় না। বড্ড বেশী করছে মেয়েটা।
চলবে…