যদি তুমি জানতে’পর্ব-৪

0
609

#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_4
-‘আংকেল এবাসায় থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি কালকেই বাসা ছেড়ে দিবো।’
তুরানের কথায় অবাক হয়ে আজিজ চৌধুরী তুরানের দিকে তাকায়। অবাক হবারই কথা! কত অনুরোধ করার পর আজিজ চৌধুরী তুরান কে বাসা ভাড়া দিয়েছে। নয়ত এমন ব্যাচেলর ছেলেকে কে ই বা বাসা ভাড়া দিবে?একটু থেমে তুরান আবার বলল,
-‘পুরো মাসের ভাড়া দিয়ে দিবো। এখন তো মাসের অর্ধেক।’
-‘তা তুমি এত অনুরোধ করে বাসা ভাড়া নিলে,এখন আবার ছেড়ে দিতে চাচ্ছো?’
-‘আসলে আমার একটু প্রবলেম হচ্ছে এখানে।’
-‘তোমার প্রবলেম সলভ করার জন্য তো আমি আছি। এখানে তোমার কি প্রবলেম হচ্ছে সেটা তুমি আমায় বলবে না?’
পর্দা আড়ালে দুই’টা কৌতূহলি চোখ দেখা যাচ্ছে। যে নিজেকে আড়াল রেখে আজিজ চৌধুরী আর তুরানের কথা শুনছে। তুরান আড় চোখে দেখে বুঝলো রুপা ছাড়া আর কে!
তুরান কে নিরুত্তর দেখে আজিজ চৌধুরী আবার বলল,
-‘কি প্রবলেম তোমার বলো? রুপার কারনে কোন সমস্যা হচ্ছে? ও কি তোমায় কোন রকম ডিস্টার্ব করছে?’
হ্যাঁ বলতে গিয়েও থেমে যায় তুরান । রুপা যতই যা করুক,রুপার প্রতি আলাদা টান কাজ করে তুরানের। মেয়েটা অবুঝ প্রকৃতির! ওর ঘাড়ে দোষ না দেওয়াই ভালো।
ইতস্তত বোধ করছে তুরান। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়া ভাব নিয়ে বলল,
-‘আংকেল আমার বেরুতে হবে এখন।আসছি! পরে কথা বলবো আপনার সাথে!’
আজিজ চৌধুরীর ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে পরলো তুরান। লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। একদম বেয়াক্কেল হয়ে গেলো যেন! কেন বাসা ছাড়বে তার উপযুক্ত কারন দাঁড় করিয়ে আজিজ চৌধুরীর কাছে যাওয়া উচিত ছিলো! এভাবে হুট করে গেলো। রুপার দোষ দিতে গিয়েও বিবেকে বাধা দিলো। মেয়েটা একটু অদ্ভুধ টাইপের। কেমন সহজ-সরল,মায়া-মায়া চেহেরা।
ভেবে চিন্তে একটা অজুহাত বের করে না হয় বাসা ছাড়ার কথা বলবে। কাঁধের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকায় তুরান। চাপা কন্ঠে বলল,
-‘রুপা।’
রুপার চোখ গুলো ভেজা।কাঁদছে মেয়েটা। কেন কাঁদছে বুঝতে পারছে না তুরান।
-‘কি হয়েছে? এখানে আসছো কেন?’
আচমকা তুরান কে জড়িয়ে ধরে রুপা।
-‘আপনি এখান থেকে যাবেন না প্লীজ! বাবা-মা তাহলে আমায় দোষ দিবে! আজিজ চৌধুরী আমায় এ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবে।’
কারেন্টে শক খাওয়ার মত কেঁপে উঠে তুরান। এভাবে কাউকে জড়িয়ে ধরা যায় জানা ছিলো না তুরানের। নিজেকে সামলিয়ে বলল,
-‘আরে এভাবে জড়িয়ে ধরেছো কেন? ছাড়ো,ছাড়ো। কেউ দেখে ফেললে বাজে ভাব্বে।’
রুপা কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,
-‘ছাড়বো না। আগে বলেন যাবেন না । আমি আপনার শার্ট,প্যান্ট ফেরত দিয়ে দিবো।’
রুপার স্পর্শে অদ্ভুধ শিহরন অনুভব করছে তুরান। মেয়েটার মাঝে সংকোচ বোধ নেই? থাকলে কি এভাবে কাউকে জড়িয়ে ধরে?
-‘না যাবো না। ছাড়ো এবার।’
তুরান কে ছেড়ে দেয় রুপা। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। তুরান একটা চেয়ার টেনে বলল,
-‘বসো এখানে।’
রুপা এক বার তুরানের দিকে তাকিয়ে বাধ্য মেয়ের মত বসল।তুরান রুপার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসলো।
-‘এখানে বসতে হলে কান্না থামাতে হবে।’
চোখের জল মুছতে মুছতে রুপা বলল,
-‘আপনি যদি বাবার কাছে আমার নাম বলতেন তাহলে আম্মুকে কথা শুনাতো খুব। তারপরও বুঝে গেছে হয়ত আমি আপনায় ডিস্টার্ব করছি তাই আপনি চলে যেতে চাচ্ছেন।’
-‘সে জন্যই বলি নি।’
তুরানের মাথায় ব্যান্ডেজ করা। রুপা তুরানের কপালের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ আমি ইচ্ছা করে গ্লাস মারি নি।’
-‘তো কিভাবে মেরেছো?’
-‘জানি নি।’
তুরান একটু চুপ থেকে বলল,
-‘আচ্ছা তুমি তোমার বাবা-মায়ের কাছে থাকো না কেন?’
-‘তো আমি কার কাছে থাকি?’
-‘আজব! সাহেলা আন্টি তো তোমার খালা। আই মিন তুমি তোমার খালার কাছে কেন থাকো?’
-‘না, না উনি আমার মা। আরেক টা ডাইনি মহিলা আছে সে বলে আমি নাকি তার মেয়ে। কিন্তু আমার মনে হয় আমি সাহেলা আম্মুর মেয়ে।’
ফিক করে হেসে দেয় তুরান। সাহেলা আম্মুর মেয়ে! কি আজব কথা!
-‘তোমার আম্মু কে সেটা তুমি বলতে পারো না? এক জন বললেই হলো নাকি!’
-‘হ্যাঁ পারি তো বলতে। আপনার সাহেলা আন্টিই আমার আম্মু ।’
ধুর! হিসেব মিলাতে পারছে না তুরান। এই মেয়ের মেন্টালিটি প্রবলেম আছে।
-‘তুমি যদি আমায় আর কোন রকম ডিস্টার্ব করো আমি কিন্তু চলে যাবো । এটা তোমার লাস্ট চান্স।’
মাথা ঝাঁকিয়ে রুপা বলল,
-‘আচ্ছা ।’
চলবে…
(ব্যস্ত আমি তবুও ছোট করে একটা পার্ট লিখলাম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here