যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ০৬

0
1889

#যদি_বলি_ভালোবাসি♥
#PART_06
#FABIYAH_MOMO

ঘুম…ভাঙলো। গাড়ির মুগ্ধ পরিবেশে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…মাত্র চোখ খুলল। শরীর টানা দিয়ে চোখ কচলে ভালোভাবে তাকালাম…’নূর-ই-আজমীর’ আমার সামনে! সবুজে সবুজে ঘেরা আমার স্বপ্নের জায়গা…ছোটবেলা থেকে ঘুরতে যাওয়ার সেই ড্রিম স্পট নূর-ই-আজমীর!!

গাড়িটা ঠিক মাঝ বরাবর দাড় করানো।একদম মেইন গেট দিয়ে ঢুকে প্লেসটার কেন্দ্রে। আমি জানালায় উকি ঝুকি দিয়ে দেখে চলছি!! আমার চোখদুটো পরম শান্তি পাচ্ছে সবুজে ঘেরা সেই জায়গার মাঝে। এক বুক শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে ছেড়ে দিলাম…এক চিলতে ধূলো নেই, সতেজতার সুভাষ শুধু শ্বাসে শ্বাসে নিঃশ্বাসে। হঠাৎ খেয়াল হলো মুগ্ধ ভাইয়া পাশে নেই। আমি গাড়িতে একা ঘুমিয়ে আছি।। গাড়ির দরজা খুলে বাইরে বের হলাম। পা নামাতেই জুতা ভেদ করে পায়ের সাইডে ঠান্ডা ঘাসের পরশ জাগাচ্ছে…কি এক অজানা স্নিগ্ধতা। আমি গাড়ির দরজা লাগিয়ে হেটে চলছি মুগ্ধ ভাইয়ার খোজে…আশেপাশে মানুষজন নেই। আমি একদম একা, কেউ নেই।সারি সারি সবুজ গাছগাছালি…রাস্তার ধার ধরে বিভিন্ন রঙবেরঙের ফুলের মেলা.. অপরূপ সুন্দর!!! শান বাধিয়ে গাছতলা সাজানো। পুরো সৌজন্যমূলক জায়গা।। একটু হেটে সামনে গেলে কানে নদীর কলধ্বনি ভেসে আসে…ইট বাধানো নকশা করা রাস্তা ধরে সামনে হেটে চলছি। একটু এগিয়ে বামে মোড় নিলে নদীর মাঝে ঢেউ তোলা মনোরম দৃশ্যপট চোখ পড়ে…সাথে বাতাসের শো শো প্রতিধ্বনি…!! এদিক ওদিক তাকাতে চোখ গেল ডাক্তার সাহেবের দিকে। উনি বেন্ঞ্চির উপর হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। শার্টের দুই বোতাম খোলা। চুলগুলো বাতাসে ছুটে চলছে…উনি সুন্দর দেখতে কিন্তু বন্ধ চোখে আরো বেশি সুন্দর… তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে ঘন্টাখানিক জুড়ে। আমি চুপচাপ উনার কাছে যেয়ে পাশে বসলাম। উনার গায়ে মাতাল করা এক ঘ্রাণ আছে…ছেলেদের শরীরে মাদকতার ঘ্রাণ থাকে আজব? উনি আমার সিলগালা পার্সন হলে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়তাম!! সমস্যা একটাই উনি এখনো মুখ ভার করে দূরে ঠেলে দিতে ব্যস্ত!! হঠাৎ বন্ধ চোখে পাশ থেকে বলে উঠলেন-

-ঘুম হয়েছে?
-হুম…সেই ঘুম। প্লেসটা অনেক অনেক সুন্দর…ফটোতে যেমন দেখেছিলাম তার চেয়ে হাজার গুনে বেশি সুন্দর…

উনি চোখ খুলে আকাশে তাকিয়ে বললেন-
-একটু বেশি সুন্দর…
-ভাইয়া আপনি কি এখনো রাগ? বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে বলিনি, রাগের মাথায় মুখ ফসকে বলে ফেলেছি।মাফ করবেন প্লিজ?
-ভুলের জন্য অনুতপ্ত? নাকি ড্রামা?
-হ্যাঁ আমি অনুতপ্ত। ভুলবশত আপনাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছি, আমি মন থেকে দুঃখিত।
-বাসায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে? আন্টিকে বলে এসেছিস তুই আমার সাথে? একচুয়েলি নো টেনশন..আবিরকে বলে দিয়েছি বাসায় ম্যানেজ করতে। সো এনজয় টুডে..
-এডভান্স!! কিন্তু এখানে মানুষ নেই কেনো?
-মানুষ রাখার প্রয়োজনবোধ করিনি। পুরোটা স্পট বুকড! অনলি ফর ইউ! বেশি প্রবলেম হলে বলিস রাস্তা থেকে কুকুর ধরে পাশে বসিয়ে দেব,
-না খবরদার! আপনি হলেই চলবে। কোনো দ্বিতীয় জন্তু লাগবেনা। যাই হোক জায়গাটা মনোমুগ্ধকর!!
-উহু, মমমুগ্ধকর
-আরেকবার? কি যেন বললেন?
-নাথিং..গো এন্ড এনজয়,
-যাবো কেন?আপনার পাশে বসলে সমস্যা? কাল তো ঠিকি ওই লাল্লু পেত্মীর সাথে গা ঘেষে বসেছিলেন! এখন আমি বসলে প্রবলেম!
-মুখের ভাষা ঠিক করে কথা বল, সি ইজ ইউর সিনিয়র!
-আপনার কি বউ লাগে বউ! কিসের সিনিয়র গিরি দেখাচ্ছেন!খ্যাত একটা! ওইটারে আমি সম্মান দিব! ইম্পসিবল!

-জেলাসি…আই লাইক ইট!!তুই আমার পাশে বসবি রাইট? ওকে ডান। বাট তোর কিছু করতে হবে!!
-কিছু করতে হবে মানে? এটা কেমন কথা?
-সিম্পলি ফ্যাক্ট। সারা রাস্তায় ড্রাইভিং করতে করতে আ’ম টায়ার্ড। আই নিড রেস্ট…আর তাছাড়া পুরো প্লেসটা বুক করলাম… আমার তো স্পেস লাগবে, রাইট?
-ঘাসের উপর শুয়ে পড়ুন।
-নো!
মুগ্ধ ভাইয়া ‘নো’ বলেই আমার কাধে মাথা এলিয়ে দিলেন। উনি ডানপাশে আমি বামপাশে বসেছি। কাধে মাথা হেলিয়ে রেস্ট নেওয়ার কান্ডে আমি অবাক! উনি চোখ বন্ধ করে বলে উঠলেন-
-ওই মেয়েটা আমার মামাতো বোন, বউ না। বোন কখনো বউ হয়না।
-তো আমি কি? বোন না? বন্ধুর বোন তো?
-হুশ! কিসের বোন? ছোটবেলায় পুরো এলাকা জানতো তুই আমার বউ আবার বোন কোত্থেকে উড়ে আসলো?
-ছোটবেলার সাথে বড়বেলা জোড়া?
-অবশ্যই জোড়া। ছোটবেলা না হলে বড়বেলা আসতো না।
-বেশি হচ্ছেনা?
-বেশিতে যাইনি। সময় হোক কনভার্ট হবো।

আমি চুপ করে আছি। সামনে নদীর ঢেউ তোলা আহরন…পেছনে বেন্ঞ্চির সাথে বটগাছের আচ্ছাদন। আমি বামপাশে, উনি ডানপাশে কাধে মাথা হেলিয়ে ঘুম। নদীর বুকে রোদ ঢলে পড়েছে..পানি উজ্জ্বলবর্ণ ধারন করেছে। ভেবে চলছি….তিনদিন আগে দুমকা হাওয়ার মতো কেউ একজন আসলো, আমাকে চমকে দিয়ে সে তার যথাযথ কাজ করলো, কখনো রোমান্টিক, কখনো চড়, কখনো অপমান, কখনো কেয়ার। যাকে তিনদিন আগেও সহ্য করতে পারতাম না তার এক ডোজে আমি কাবু! ভাবা যায়? সামান্য কি থেকে কি হলো আমি জেলাসি হয়ে বোকা বনে গেলাম!! সামনে কি হবে জানি না…কিন্তু মন বলছে উনাকে দূরে ঠেলতে না। সবসময় মন ও মন্তব্য পাশে রাখা উচিত, একদম উনার মতো পাশে। ঘুমের মধ্যে মুগ্ধ ভাইয়া আমার ডান হাত পেচিয়ে কাধে মাথা ঘষে নিলেন। আসলে কলেজে যেতেই দেখেছি, গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডের হাত পেচিয়ে পাশাপাশি হেটে চলে আর উনার ক্ষেত্রে ভিন্ন।

অনেকক্ষন ধরে উনি চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছেন। ডাক দিয়ে তুলিনি। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে পরিণত হচ্ছে…বাসায় যাব। হাত উঠিয়ে উনাকে সরিয়ে ফোন করতে যাব সেটারও সুযোগ নেই। আমি ছাড়তে চাইলে আরো জোরে হাত আকড়ে চেপে ধরে। আধঘন্টা পর উনি আমার কাধ থেকে মাথা উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখছি। উনার চুলগুলো বড্ড খারাপ…কেমন যেন দাড়িয়ে দাড়িয়ে থাকে। ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে…নড়ঝরে উনার কোমল কালো চুল…
আমি বেন্ঞ্চ থেকে উঠতে নিব উনি টান মেরে পাশে বসিয়ে নিলেন। ঘুমে ঢুলু চাহনিতে আমার দিকে কাছে মুখ এনে কপালে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলেন। হালকা হেসে ঘুম চোখে গালে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বলে উঠলেন-
-থ্যাংকিউ,
-ধন্যবাদ কেন?

উনি আমার দুইগালে দুইহাত দিয়ে কপালে কপাল লাগিয়ে আস্তে করে বলে উঠলেন-
-কি জানি!!জানি না!! এখনো অজানা!!
মুগ্ধ হেসে দিলেন। কপালে আলতো চুমু দিয়ে বলে উঠলেন-
-বাকিটা জমা থাক। বিয়ের পর দিব। চল খাব। সকাল থেকে কিছু খাইনি।

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালেন। আমার হাত ধরে লান্ঞ্চ স্পেশাল কটেজে নিয়ে গেলেন। আমাকে চেয়ারে বসিয়ে উনি আরেকটা চেয়ার টেনে বিপরীত পাশে বসলেন। একজন ওয়েটার এসে সব খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিলে উনি বলে উঠলেন-
-মিস্টার প্লেট একটা! একটা হলেই এনাফ।
আমি একটু কৌতুহল হয়ে বলে উঠলাম-
-একটা কেন? আমি খাবোনা?

উনি কথা কানে নিলেন না। ওয়েটার একটা প্লেটে খাবার সার্ভ করে মুগ্ধ ভাইয়ার আদেশানুযায়ী আমাদের একা ছাড়লেন। উনি আমার দিকে খাবার তুলে বললেন-
-আমি খাইয়ে দিবো দ্যাটস হোয়াই। আবির বলল তুই নাকি এখনো ওর হাতে খাবার তুলে খাস,
-আমার খেতে ইচ্ছে করে না। এজন্য ভাইয়া জোর করে খাবার ঠুসে খাওয়ায়!!
-গুড!!খাওয়ার সময় কোনো কথা নেই। চুপচাপ খাবি।

উনি ভাইয়ার মতো লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে লাগলেন। অবশ্য ভাইয়ার বাজে অভ্যাস আমাকে কথার বাহানায় পেট জ্যাম করে খাইয়ে দেয়া…কিন্তু এক কথায় বিরক্তিকর!!! মুগ্ধ ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দিয়ে নিজের খাওয়া শেষে কটেজ থেকে নিয়ে গেলেন।। পাশে হাটছি উনার। আমি উনার কাধ বারবর উচ্চতাবিশিষ্ট! এতো শর্ট আমি! বাহ্ মুখের উপর ইজ্জত! এখন রাস্তা দিয়ে হাটতে গেলে মানুষ আমাকে বেটে বলবে!
হঠাৎ উনি পাশ থেকে আমাকে টান দিয়ে সামনে এনে দাড় করালেন। ঠোটে দুষ্টু হাসি!! হাসির তালে মূহুর্তেই উনার চেহারা পাল্টে আকষর্নীয় হয়ে উঠল, মাথায় কি বুদ্ধি পাকাচ্ছেন আল্লাহ মালুম!! উনি চোখটিপ মেরে ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে টান মেরে ঠোটে ঠোট ছুয়িয়ে ছেড়ে দিলেন। আমি স্তদ্ধ! চোখ বড় হয়ে বের হয়ে আসছে আমার! উনি হুটহাট করেন টাকি! সাহস দেখিয়ে সাথে আসলাম ঠিকি! কিন্তু উনি তো দেখি আমার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন!

.
.
গাড়িতে বসে আছি, বাসায় চলে যাচ্ছি। একটা দিনের ব্যবধানে মুগ্ধ ভাইয়া হৃদমাঝারে অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছেন। আসলেই কিছু একটা আছে উনার মানে! দূরে যেতে ইচ্ছে করেনা, কাছে রাখলে দূরে রাখতে ইচ্ছেনা।।। রাস্তা এখন নিরিবিলি, তেমন গাড়ি চলছে না। রাস্তায় কোনো লাইট নেই প্রচুর অন্ধকার। ঘুট্ঘুটে অন্ধকার যাকে বলে। গাড়ির ফ্রন্ট লাইট ছাড়া অন্যকোনো আলোক উৎস নেই। আমি নিরবতা চ্ছিন্ন করে বলে উঠলাম-
-আপনি বিদেশ কেন চলে গেলেন? কারন কি ছিলো? বলবেন প্লিজ?
-বিশেষ কারনটা বিশেষের খামে বিশেষ্য থাকুক। আমি চাই না ওই খামের মুখটা খুলে সামনে আনতে..
-আপনি অদ্ভুত জানেন? আগে পেচালো কথা বলতেন না, কিন্তু এখন? সব কথাতেই “প্রশ্নবোধক” লাগিয়ে দিচ্ছেন,
-প্রেম করেছিস? নয়টা বছর দূরে ছিলাম, সুযোগটাও মেবি কাজে লাগিয়েছিস। যাই হোক ফ্র‍্যাঙ্কলি এ্যান্সারটা দে, কুইক
-যদি বলি হ্যা তবে কি বলবেন? আর যদি বলি না তবে কি কিছু করবেন?
-আমি উত্তর দিতে বসে নেই, নিড দ্যা পিউর এ্যান্সার,
-হ্যা করেছি। দুইটা প্রেম চুটিয়ে করেছি,

উনি একটু হাসলেন। রাতের অন্ধকারে ঝকঝকের দাতের হাসি…হাসিটা খুব সুন্দর।
-মিথ্যে বলা বন্ধ করলি না…
-আপনি কি আমায় ভালোবাসেন?
হঠাৎ ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে দিলেন। আমি উনার দিকে উত্তর পাওয়ার জন্য অধীর হয়ে আছি!! কি বলবেন উনি!! হ্যা নাকি না!!লোয়ার লিপটা দাতে চেপে গাড়ি স্টার্ট দিলেন কিন্তু জবাব দিলেন না। মুখে একরাশ হতাশা নিয়ে আমি জানালা দিয়ে রাতের আকাশে চোখ ফেরালাম। আমি নিজেই ভালোবাসি কিনা জানি না…আর উনি তো ছেলে! কেন ভালোবাসবেন? কটেজে ছেলে মানুষী ব্যবহার দেখিয়ে চুমু দিয়েছিলেন এর চেয়ে বেশি কিছু না। আর আমি তো উনার চোখে কুৎসিত….

মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে ওই প্রশ্নের পর আরেকটা বাড়তি কথা বলিনি। আমার চুপ থাকাই শ্রেয়। উনি আবার গাড়ি থামিয়ে বলে উঠলেন-
-তুই বস আমি আসছি। সাবধান! মনের ভুলেও গাড়ি থেকে নামবি না। আমি আসছি…

‘কোথায় যাচ্ছেন’ বলার আগেই উনি গাড়ি থেকে নেমে হন্তদন্তে কোথায় যেন চলে গেলেন। আমি গাড়ির ভেতর একা মাঝপথে সুনশান রাস্তায় বসে আছি। ভূতের ভয় আমি ছোট থেকে পাইনা…ভয় বলতে বুঝি মানুষ নামক হিংস্র পশুরওয়ালা চক্ষু জীবের দিকে। ওরা ডেন্জারাস টাইপের। দেখতে দেখতে অনেক সময় পার হয় কিন্তু মুগ্ধ ভাইয়ার আসার নাম নেই। না পারতে গাড়ি থেকে নামলাম। রাস্তার দুইপ্রান্ত কেমন তব্ধ লেগে আছে। কেউই নেই। দুইহাত দিয়ে ঠোটের চর্তুপাশ ঘিরে চিৎকার করে ডাকলাম ‘মুগ্ধ ভাই’। আরো কয়েকটা ডাক ছাড়লাম কিন্তু না কাজ হলো না। আমি গাড়ি রেখে ফোনের লাইট জালিয়ে রাস্তা ধরে হাটতে থাকি। তিনমিনিট হাটলে মনে হয় কেউ পিছন থেকে ফলো করছে। আমি হাটলে সেও হাটে… আমি থামলে সেও থামে। আব্বু বলেছিলো ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতে নেই। কেন বলছেন উত্তর দেননি। ওড়না মুচড়ে থেমে আছি..কান সজাগ! পিছনে যেই আসছে সে আস্তেধীরে কাছে আসছে। আমি এক চান্সে পুরো শরীর ঘুরিয়ে পিছু ঘুরে দাড়ালাম! ফোনের ফ্লাশ মারতেই ধক করে কলিজা চেপে আসলো! সামনে এক দাড়িগোফ ওয়ালা মোটা স্বাস্থ্যবান লোক! চোখগুলো লাল! হাতে মদের বোতল, বড় বড় কাধ সমান চুল! আমি দাতে দাত লাগিয়ে থরথর করে কাপছি…লোকটাকে দেখে আমার মনস্তাত্ত্বিক শক্তি “খারাপ লক্ষন ” বলে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে।। আমি কাপা গলায় বলে উঠলাম,

-ককে আপপনি..ককি চচাই!

লাল চক্ষু ভয়ঙ্কর চাহনি দিয়ে লোকটা আমার আপাদমস্তক বুলিয়ে নিচ্ছে। জিহবা দিয়ে উপর ঠোটটা ভিজিয়ে আমার সামনে আসতে লাগল। ফোনের হাত তুমুল কাপছে…মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে…সামনে বিপদসংকেত সাইরেন বাজিয়ে ধেয়ে আসছে!! আমি পিছাতে থাকি, পিছাতে থাকি….সে বড় বড় পা ফেলে মদের বোতলে ঢোক গিলে সামনে আসতে থাকে। এক চিৎকার দিয়ে ‘হেল্প’ বলে দৌড়াতে নিলে সে আমার পায়ে হুট করে মদের কাচের বোতল ছুড়ে পারে! নিমিষে কাচের বোতলটা রাস্তায় বারি খেয়ে অর্ধেকটা আমার পা আচড়ে রক্তাক্ত করে দেয়। আমি পা ধরে ঠোট কামড়ে খিচে বসি। লোকটা ডান কাধে একবার বাম কাধে একবার মাথা লাগিয়ে পৈশাচিক হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। শয়তানের আস্তানায় পা আটকালে শয়তান যেমন বিজয়ী দেয় লোকটা ওরকম হাসি দিচ্ছে।
আমি বহুকষ্টে উঠে দাড়াই। পালানো ছাড়া উপায় নেই! পালাতে হবে! পায়ের জুতা কাটা জায়গার সাথে দন্দ্ব পাকিয়ে রক্ত ভাসিয়ে ব্যাথা দিচ্ছে..পা খুড়িয়ে পিছাতে থাকি…লোকটা এবার বাধ মানলো না দৌড়ে এসে আমার ওড়নায় টান দিতে গলায় হাত বাড়ালো! আমি ‘মুগ্ধ’ বলেই চোখ কুচকে দাড়িয়ে পড়লাম। হঠাৎ কেউ গলা বরাবর হাত রেখে পেছনে টেনে মিশিয়ে ধরলো! আমার মাথায় ঠোট ছুয়িয়ে দিচ্ছে…..চুলে নাক ঘষছে। ডানপাশ থেকে হাত ঢুকিয়ে বাম পাশের কাধে জড়িয়ে ধরেছে। চোখ নামিয়ে গলায় ধরা হাতের দিকে তাকাই। ফোল্ডেড হাতার কনুই অংশটায় নীল শার্টটা দৃশ্যমান। গায়ের স্মেলটা নাকে আসতেই আমি শব্দ করে বলে উঠলাম, “মুগ্ধ ভাই”। আমি উনার উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরতে নিলে উনি থামিয়ে দিলেন। কানে মুখ এনে বলে উঠলেন-

“ভয় পাচ্ছিস? ভয় পাবিনা!! গাড়ি থেকে নামতে মানা করেছিলাম সিনু!!”

-চলবে

-Fabiyah_Momo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here