যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ৩৯ শেষ পর্ব

1
7176

#যদি_বলি_ভালোবাসি♥
#সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে
#PART_39_LAST
#FABIYAH_MOMO

রাত ন’টা। মুগ্ধ ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে বই পড়ছেন। মাইক্রোবায়োলজির বই মেবি। মনিরা তার রুমে ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি এখনো জেগে আছি। বৃষ্টির তীব্রতা কমে গেছে। কিন্তু আকাশ চমকানো থামেনি। পুরো আকাশ ফেটে দিনের আলোতে পৃষ্ট হয়। বিকট শব্দ করে ফের কালো অন্ধকারে ঢেকে পড়ে। ঘুম পেয়েছে। চোখ কচলাতে কচলাতে আমি ড্রয়িংরুমের দিকে গেলাম, উনি বইয়ের ভেতরে মগ্ন। হাই তুলে উনার কাধে মাথা দিয়ে সোফায় বসলাম। উনি বইয়ের পাতা উল্টিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

–জেগে আছিস কেন? আমার জন্য?
–হু।
–মনিরার সামনে কিস করা উচিত ছিলো?
–উহু।
–আমাদের মধ্যে প্রাইভেসি নেই? তুই যখন তখন উদ্ভট আচরন করিস, ইজ ইট কুল?
–সরি। ভুলে ভুল করে ফেলেছি।
–আদার টাইম এসব কিছু ফেস করতে যেন না হয়।
–রেগে আছেন?
–নাহ্।
–সরি।

উনি মনিরার সামনে কিস করাটা নিয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে আছেন। যদিও কোনো আঙ্গিকে সেটা প্রকাশ করছেননা। হঠাৎ দরজায় কলিংবেল এবং নক পড়লো। আমি কাধ থেকে মাথা উঠিয়ে মুগ্ধের দিকে তাকালাম। উনি দেয়াল ঘড়ির কাটায় তাকিয়ে আছেন। বইটা বন্ধ করে উনি আমায় বললেন-

–রাত নয়টায় কে আসবে? বাইরের অবস্থাও তো ভালো না।

আমি সোফা থেকে উঠে ওড়না টেনে মাথায় দিয়ে নিলাম।
— একবার দরজাটা খুলে দেখুন। ভাই আসলো নাকি? উনার তো কোনো খোজ পাওয়া যাচ্ছেনা।
–হতেও পারে। আচ্ছা ওয়েট আমি দেখছি।

উনি দরজা খুলতে গেলেন। আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিষ্প্রাণের মতো হয়ে আছি। ভাইয়ার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। কল করলে কলে পাওয়া যায় না। মুগ্ধ বাসায় আসার সময় ভাইয়ার অফিস থেকেও ঘুরে এসেছেন কিন্তু ভাই নাকি অফিসেও আসেনা। মুগ্ধ একজন কালো কোর্ট পড়া ভদ্রলোককে ভেতরে আসতে দিলেন। ভদ্রলোকের হাতে ছোট ব্রিফকেস আমাকে দেখেই একগাল হাসি দিলো। আমি বিনীত ব্যবহার করে উনাকে বসতে বললে মুগ্ধ দরজা লাগিয়ে আমার পাশে এসে দাড়ান। আস্তে স্বরে মাথা একটু নামিয়ে বলেন-

–পাকনি তোর আব্বু-আম্মু তোকে মাফ করে দিয়েছে?

আমি আশ্চর্য হয়ে আছি প্রশ্নের কথা শুনে। আব্বু-আম্মু মাফ তো দূরে থাক! কলটা রিসিভ করেনা। আমাকে উনারা মাফ করবেন কিনা তার সাথে এই রাতের বেলা ভদ্রলোকের আসার কি সম্পর্ক!

–উনারা আমার সাথে যোগাযোগ রাখেননি মুগ্ধ, মাফ করার তো প্রশ্নই উঠেনা।
–এই লোক যে বলছে তোর নামে প্রোপ্রার্টি আছে।তার ব্যাপারে তথ্য দিতে এসেছে। এর মানে কি?
–এর মানে আপনি আমার কাছ থেকে পাবেন? যারা আপনার ওয়াইফের নিকৃষ্ট চেহারাই দেখতে চায়না, ধিক্কার – অভিশাপ জানায় তার জন্য প্রোপ্রাটির কথা? অবিশ্বাস্য !
–আচ্ছা তুই আয়। চা-পানি সাথে নিয়ে আসিস।
–আপনি বসুন আমি আসছি।

আমি মনিরার রুমের দরজা খুলে উকি দিলাম ও জেগে আছে কিনা। একটা ডাক দিলাম– “মনু জেগে আছিস?”। মনিরার ঘুম পাতলা। এক ডাকেই ও সজাগ হয়ে উঠে যায়। আমার সামান্য ডাক শুনে ও নড়ে সায় দিয়ে বলল, “হ্যা বল,”। আমি ভেতরে ঢুকে ওর বিছানার পাশে বসলাম। মনিরা ওপাশ থেকে এপাশ আমার দিকে ফিরে তাকালো।

–মনু, বাসায় একটা লোক এসেছে। সে আমার প্রোপ্রার্টি বিষয়ক কি নিয়ে জানি তথ্য দিতে আসছে।
–বেডায় কি ফেক? দেখিস কইলাম যুগ ভালো না, চোর-ডাকাতও হইতে পারে। ভাই কই? ভাইরে একলা রাইখা আসছোস? শালীর ঘরে শালী! বেডায় যদি ছুড়ি হান্দায়া দিলো!! এই বয়সেই তো বিধবা হইয়া দাসীর মতো ঘুরবি!
–উফ! মনিরা ফাজলামি বন্ধ কর! সবসময় তোর ফাজলামির পেচাল শুনতে ইচ্ছা করেনা। শোন আমার কথা! উনি ওই ভদ্রলোকটার সাথে কথা বলতেছে, তুই একটু উঠ। চা করে দে। আমি যাচ্ছি।
–আচ্ছা যা আইতাছি।

মনিরাকে বলে আমি ড্রয়িংরুমে গেলাম। মুগ্ধ ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছেন। আমি উনার পাশে যেয়ে বসতেই লোকটা ব্রিফকেস খুলে কিছু ডকুমেন্টস বের করে আমার দিকে দিয়ে বলল,

–আপনি তো মম? আবিরের বোন?
আমি মাথা ঝাকিয়ে উনার হাত থেকে কাগজগুলো নিলাম। মুগ্ধ তাকে জিজ্ঞেস করে বলল-

–জ্বি পেপারস কিসের? ক্যান আই সি?
–ইয়েস সিউর।

মুগ্ধ আমার হাত থেকে কাগজ নিয়ে নিজে খুলে খুলে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখতে লাগলেন। এগুলো প্রোপ্রার্টির পেপার। মুগ্ধ সবটা চেক করে লোককে বললেন-

–এগুলো আমার ওয়াইফের নামে কেন? আবির তো এসবের একচুয়েল মালিক। ও কেন বোনের নামে সম্পত্তি লিখে দিলো?
–জনাব, সেটা তো আমি জানি না। আমার কাজ আবিরের সম্পত্তির ইনফরমেনশন তার আসল হকদারকে জানানো। সেটা আপনার ওয়াইফ। আচ্ছা আজ উঠি। আমি দুঃখিত রাত করে এখানে চলে আসলাম।

ভদ্রলোক একজন এডভোকেট। জমিজমার কাজ নিয়ে ওকালতি করে। সে আমাদের সবটা বুঝিয়ে ব্রিফকেস হাতে প্রস্থান করলেন। মুগ্ধ প্রোপ্রার্টির কাগজ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন-

–তুই সিরিয়াসলি কিছু জানিস না? আবির হঠাৎ করে ওর নামের সব সম্পত্তি তোর নামে কেন লিখে দিলো?
–আমি নিজেও জানিনা। আব্বু-আম্মু গতবছর বলেছিলো দুই ভাইবোনকে সম্পত্তি ভাগযোগ করে বন্টন করে দিবে। ভাইয়া একটু বেশি সম্পত্তি পাবে আর আমি কম পাবো। এখন দিয়েছে কিনা আমি জানিনা।
— না না….ঘাপলা আছে। তোর কথা মতে আঙ্কেল আন্টি আবিরের নামে সম্পত্তি লিখে দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। কিন্তু তোর নামে সম্পত্তি দেওয়া নিয়ে আমাদের বিয়ের ম্যাটারে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। এখন তোকে তারা সম্পত্তি লিখে দিবে বলে মনে হয়না। লয়ার টা বলল, তোর বাবা তার পুরো প্রোপ্রার্টি আবিরের নামে লিখে দিয়েছে। তোকে কিচ্ছু দেয়নি। বাট আবির তার পুরো প্রোপ্রার্টি তোর নামে দিয়ে দিয়েছে। ভাবতে পারছিস?
–না…ভাইয়ু কেন এই কাজ করবে? উনারা সম্পত্তি দেয়নি তা নিয়ে আমার কোনো রাগ নেই। কিন্তু ভাই নিজের সবটুকু লিখে দিবে?
–ডোন্ট নো! আবিরের সন্ধান লাগবে। ও কেন পাগলামো করলো ডোন্ট নো! আঙ্কেল আন্টিকে কল করবি?
–উনারা আমার সাথে কথা বলেননা। ফোন দিলেও ধরেননা।
–তাহলে থাক। লাগবে না। চল ঘুমাবো।

মনিরা আমাদের সামনে চায়ের কাপ নিয়ে ট্রে ধরে আসতে নিলো। মুগ্ধ ওকে থামিয়ে বলল-
–শ্যালিকা ওয়েট। তোমার আর কষ্ট করতে হবে না। যার জন্য চা এনেছো সে চলে গেছে। তুমি বরং ঘুমাও গিয়ে।
মনিরা মাথা নাড়িয়ে বলল-
–আচ্ছা ভাই যাচ্ছি।

মুগ্ধ আমার হাত ধরে রুমে আনলেন। আমি বিছানায় পা উঠিয়ে কাথা মেলে শুয়ে পড়লাম। উনি টেবিলের উপর থেকে সেলফোনটা নিয়ে কাকে যেন কল করলেন-

–হ্যা হ্যালো কোনো খোঁজ পাইছিস? না রে…আমি ওর অফিসে গিয়েছিলাম বাট নো নিউজ! কি করা যায় দোস্ত?
–…………………………………………..
–আমিও তো হেল্পলেস। ওর কোনো এড্রেস নেই, কিছু নেই। ও তো বাচ্চা ছেলে না যে হাত ছেড়ে দিলেই গুম হয়ে যাবে। আচ্ছা কোনো খোঁজ পেলে বলিস। ওকে। বায়।

ফোন রেখে উনি কাথার মধ্যে ঢুকে পড়লেন। আমাকে টেনে জাপটে ধরে বললেন-

–আফিদ, শাকিল ওরা কেউ জানেনা। আবির কিভাবে নিখোজ হয়ে গেল কিছুতেই মাথায় আসছেনা। আচ্ছা সেদিন কলে আর কিছু বলেছিলো?
–আপনি তো সামনে ছিলেন, কি কথা বলেছি তা শুনেছেন। আমি নিজেও ভাইয়ার নিখোঁজের কারন খুজে পাচ্ছিনা। উনার তো কারো সাথে দুশমনিও নেই।
–দেখি…কাল সকালে কি করা যায়। আপাতত ঘুমা।

বলেই কপালে একটা আলতো স্পর্শ একে দিলেন। দুইহাতে আরেকটু চেপে ধরে বললেন-

–“কক্সবাজার যাবো পাকনি। হানিমুন ফ্যাক্ট!!হসপিটাল থেকে ছুটি গ্রান্টেড!!”
.
.

মনিরা আজ গ্রামে চলে যাবে। সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ। লম্বা ছুটি পেয়েছে সে। বায়না করে বসলো, বরিশাল যাবে, আঙ্কেল-আন্টিকে দেখতে যাবে। শত হোক ওর বাবা-মা। যতই মূল্য মনিরাকে না করুক, মনিরা কখনো তার দায়িত্ব ভুলেনা, সময় সুযোগ দুটো পেলেই চলে যায় ভিটেমাটি দেখতে। গ্রামীণ জীবন উপভোগ করতে। যাওয়ার আগে বলে গেল-

–দোস্ত আবার যখন আসুম তোর লিগা গ্রামের রোদে বানানো আচার আনুম। কলমডা না কামড়ায়া খাওয়া-দাওয়া করিস। শরীর কিন্তু পোক্ত না হইলে কাবাডি খিলাড়ি আসতে কেলেঙ্কারি করবো!! বুঝিস!!

মনিরাকে ধরে এই সম্ভবত প্রথম কান্না করে দিছিলাম। কারন, ও আমার বান্ধুবী না। আমার বোন। কিছু কিছু সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ক লাগেনা ঠিক মনিরা আর আমার সম্পর্কের মতো। আমাকে দেখাশুনা করেছে, সাহস দিয়েছে, শাষন করেছে, ঝগড়াও করেছে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি মনে ধরার মতো কাজ আমাদের কিডন্যাপিং টিম!! কি প্ল্যান গুলোই না করেছিলাম। ইতির লিস্ট বানানো,কাজি আনানো, সাফিন ভাইয়ের সব জোগাড় করা, মনিরার মুখের লাগামহীন কথাবার্তা, মিরা আপুকে বেহুশ করা, আবির ভাইয়ার এন্ট্রি দেওয়া….আমাদের বিয়ে কোনো নরমাল বিয়ে না!! সেটা আমাদের যারা চিনে তারা কয়েক জনমেও ভুলবে বলে মনে হয়না। মিরা আপুকে বিয়ের কারনে হারিয়ে ফেলেছি। আমার চাচাতো, সহোদর বোনের মতো আগলে রাখা মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমার কারনে, মিরা আপু ও আবির ভাইয়ের বিয়েটা হলোনা। প্রেমটা হয়েছিলো ঠিক কিন্তু বিয়ের কাঠগড়ায় পৌছালো না। আজীবন একটা দুঃখ থেকে যাবে মনে।

রাত ২.৪৫ মিনিট। শরীর প্রচণ্ড দূর্বল লাগছিলো এখন কিছুটা আশানুরূপ সুস্থ বোধ করছি। জানালা দিয়ে এয়ারলাইন্সের বড় বড় নামটা দেখছি। আমি ফ্লাইটে বসে আছি। ফ্লাইট ছাড়বে ২.৫৫ মিনিটে। নিজের স্বেচ্ছায় জানালার কাছে সিট বুকিং করেছি। অন্ধকার আকাশ দেখতে দেখতে ইউএস যাবো বলে। দেশের মাটি ত্যাগ করতে চলেছি। এদেশে আর থাকবো না। বহু কষ্ট-দুঃখ-লান্ঞ্চনা সয়ে বিদেশের অন্য মাটিতে পা ফেলবো। পেটের বাচ্চাকেও এদেশের নিশ্বাসে শ্বাস নিতে দিবো না। ছয়মাস হতে চলেছে তবুও আমি ফ্লাইট জার্নি করতে বাধ্য হয়েছি। থাকবো না! ফিরবো না! কক্ষনো চোখ তুলে তাকাবো না নিষ্ঠুর দেশের মানুষ জনের কাছে! আমার কোনো আপনজন নেই এখানে! কেউ নেই। বাপেরবাড়ি নেই। শ্বশুরবাড়ি আরো আগে নেই। হাতেগোনা কটা মানুষ আছে, তাদের নিয়ে কৃতজ্ঞতার শ্বাস অন্তিম পযর্ন্ত ফেলবো! ইতি…বান্ধুবী!! ভালো থাকিস, বৈবাহিক জীবন তোর সুখের হোক এই কামনা করি। শাফিন ভাই….ভাই তুমি আমার বড় ভাই বুঝলা!! বাসার ছাদে কতো আড্ডা দিছি আমরা!! তুমি কতো চড়-চিমটি দিছো!! অমূল্য স্মৃতি বড় ভাই!! প্রোমোশন পেতে পেতে একদিন মমকে দেখতে চলে এসো!! অপেক্ষায় থাকলাম। মিরা আপু….আমার আপু, আদরের আপু। একদিন কত জালাতাম তোমাকে। কত ইনিয়ে বিনিয়ে গালি দিয়েছি তুমি প্রতিবার কড়া কথা শুনিয়ে কথা বন্ধ করে দিতা। কিন্তু আপু জানো? বিয়ের দিন তুমি যে সাহায্য করছো, নিজের শ্বাস দিয়েও তোমায় কৃতজ্ঞতায় পূর্ন করতে পারবো না।দাম্পত্য জীবনে ভালো থেকো আপু।। মনিরা….”দ্যা বরিশাইল্লা খ্যাত!”…নামটা গর্বের সাথে বলে বলে দুনিয়ার নানা ফাজলামি করেছি। অগনিত..হিসাব ছাড়া ফাজলামি!! দোস্ত তুই আমার বান্ধুবী না রে…তুই তো শালা বান্ধুবী হওয়ার গূনাবলি রাখলি না!! আপন বোনও কখনো এতোটা করেনা যতটা আদরযত্ন তুই করছিস। তুই আমার বান্ধুবী? হুর শালা! তুই আমার বোন ! বান্ধুবী বলবিনা! বান্ধুবী বললে পরপর লাগে। “বইন” বলে একটা চিৎকার যখন দিস… বিশ্বাস কর কলিজা ঠান্ডা হয়ে আসে! তুই আমার বান্ধুবী না। বোনের চেয়েও বেশি! অনেক বেশি! মনু? তোকে খালামনি ডাকার বাচ্চাটা দুনিয়ায় আসলে তোর ব্যাপারে সবার আগে বলবো! বেস্টফ্রেন্ড বলা মনিরা মেয়েটা আমার রক্তের সম্পর্ক ছাড়া বোন ছিলো!!বোন।।
রাফিয়া…আমার একমাত্র ননদ!! “মম আপু” বলে ছোট থেকে আমার পিছু ঘুরা রাফুটা বড্ড বড় হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসি রাফু টুনটুনি !! তোমার জন্য আবরার ভিলার নানা খবর দূরে বসেও পেয়ে যেতাম। একমাত্র তোমার জন্য।। রূপা…আমার মুগ্ধের পিছে খারাপ নজর দেওয়া অপ্সরী সুন্দর মেয়েটা!! শুনলাম তোমার সাদা চামড়া দেখেও কেউ তোমাকে পছন্দ করছেনা। বিয়ে হচ্ছেনা। আমি তোমায় অভিশাপ বা দীর্ঘ নিশ্বাস দেইনি রূপা। উপরওয়ালা মহান আল্লাহ বিচার করছেন। আর কিছু বলার নেই। তোমার কারনে প্রথমবার মুগ্ধ আমায় অপমানকর চড় দিয়েছিলেন। তাতে আমায় হায় নেই।ভালো থেকো।। রাফিন ভাই….আপনার সাথে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই।। আপনি ইতালি চলে যাওয়ার পর সব কানেকশন ব্রেক করে দিয়েছেন। আপনার জন্য অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি।কটু কথা শুনেছি। কিন্তু জানেন সবচেয়ে বড় পাওয়া কিসে ছিলো? আপনি ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। ক্ষমা চাওয়া কিন্তু বড় কঠিন কাজ। সবাই তা পারেনা। আপনি সেটা পেরেছেন ভাই। নিজের অহংকারকে সাইডে ফেলে মাফ চেয়েছেন। আপনাকে নিয়ে আমার মনে কোনো অভিযোগ বা নালিশ নেই।

সবার কথাই চোখ বন্ধ করে একে একে বলে ফেললাম। মনের কোনে বদ্ধ রুমে সব কথা বলে ফেললাম। আরো দুইজন মানুষের কথা না বললে এখনো আমি ‘আমি’তে নেই। তারা দুজন আমার দুইটা পরিস্থিতির হাল ধরতে শিখিয়েছে। একজন ছোট থেকে শিখিয়ে দিয়েছেন, আরেকজন বড় হওয়ার পর থেকে শেষ মূহুর্ত পযর্ন্ত শিখাচ্ছেন। একজন আবির ভাই। আরেকজন রাদিফ আবরার মুগ্ধ। হারিয়ে ফেলেছি একজনকে। সে আমাকে না জানিয়ে পরগামী পথে চলে গিয়েছে। এক্সিডেন্ট নামক শব্দের কাছে সে হেরে গেল। আমি মরার আগ পযর্ন্ত ভুলবো না। কত ত্যাড়ামি করেছি, কথা শুনিনি। আমি কেন ত্যাড়ামি করলাম? কেন কথাগুলো শুনলাম না। এখন যে বড্ড মিস করছি! হাসিখুশি আমাদের রঙিন খামে বর্নালী দিনের সময়গুলো মিস করছি। ফিরে পাবো না…আর ফিরে পাবো না…আগে জানলে আমি কখনো এমন করতাম না। আমাকে একা ছেড়ে সূদুর পথে পাড়ি দিয়ে নিঃসঙ্গে চলে যাবেন! আমি আদৌ কল্পনার জগতে ভাবতে পারিনি। চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু পড়ছিলো। গাল বেয়ে থুতনি বেয়ে ঝড়ে পড়ছিলো। তার কথা স্মরন হলেই আমার চোখে নিয়ন্ত্রণক্ষমতা কাজ করেনা। কান্না ধেয়ে এসে পড়ে। অশ্রু পড়তে থাকে। হঠাৎ অনুভব হলো চোখের পানি কেউ সযতনে মুছে দিচ্ছেন। গাল মুছে দিচ্ছেন। চোখ খুললাম। আমার দিকে তাকিয়ে সে আমার পেটের উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে শান্ত হতে বললো। আরেকহাতে তার টিস্যু। টিস্যুটা নিয়ে গালের নিচের প্রান্তে মুছে দিয়ে বললেন-

–নিজের কেয়ার না নিলে বেবি ভালো থাকবে? ভমিটিং অফ হয়নি, প্লিজ কান্নাকাটি করিস না। ইটস হার্মফুল!

নাক টেনে সিটে মাথা হেলে দিলাম। উনি আমার কাধের পিছন দিয়ে হাত ঢুকিয়ে আগলে ধরলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-

–কিছু আনবো? ভুখা হয়ে বসে আছিস, কিচ্ছু মুখে নিচ্ছিস না…কি যে করি আমি?

আমার মাথায় বুলিয়ে দেওয়া হাতটা টেনে পেটের উপর রেখে দিলাম। চোখ বন্ধ করে বললাম-
–খিদে নেই, জোড়াজুড়ি করবেন না। বমিভাব কাটেনি। একবার কাটুক আমি কিছু খাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই বলবো।
–কিছুক্ষনের মধ্যে ফ্লাইট ছেড়ে দিবে, তখন খেতে ইচ্ছে করবে? করবে নাতো।
–খাবো না প্লিজ। খারাপ লাগছে আমার।

আমি মুগ্ধকে ফোর্স করা থেকে বিরত থাকতে বললাম। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে খাওয়া মানেই বমি করে ঢেলে দেওয়া। এতে আমি উইক ফিল করি প্রচুর। প্রেসারও অনেক সময় লো হয়ে যায়। উনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেন আমার প্রেগন্যান্সিতে কমর্ফোট ফিল করানোর। কিন্তু আমার মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। বেবি আসার পর থেকে উনার সাথে ঠিক করে কথাও বলিনা। জিদ কাজ করে। বিরক্ত লাগে। কখনো গালিগালাজ করেও ফেলি, উনি চুপ করে থাকেন। নিজের উপর ছিছি করতে থাকি ডিপলি কেন মুড সুইং হবে!! মুগ্ধ সুযোগ বুঝে কপালে চুমু দিয়ে দিলেন। হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। খারাপ লাগছে, অস্থিরতা কাজ করছে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-

–আমার কাছে কিছু আছে দেখবি? জানি টাইমটা তোর জন্য ঠিক না বাট জিনিসটা দেখা অত্যন্ত জরুরী।

চোখ খুলে মাথা উপরনিচ নাড়িয়ে বললাম “হু”। উনি পকেট থেকে একটা সাদা ভাজ করা কাগজ হাতে দিলেন। হাতে দিয়েই বললেন-
–প্রমিস কর! এটা পড়ে কাদবি না! গুড গার্লের মতো হাসি দিয়ে ভুলে যাবি। ওয়াদা?

কাগজটা হাতে নিয়ে বললাম-

–ওয়াদা। কাদবো না। হাসি দিয়ে ভুলে যাবো।
উনি ঠোটের আরেক স্পর্শ আমার হাতে একে দিলেন। আমি কাগজের ভাজ খুলে পড়তে লাগলাম।

আমার ভুটকি বোন,
তোর সাথে অনেক কথা বলার ছিলো বলার টাইম পাইনি। মুগ্ধের সাথে তুই ভালো আছিস দেখে আত্মাটা শান্তি হয়ে গেছে। চিন্তা নাই। আব্বু-আম্মু তোকে ত্যাজ্য করে দিলো এটা নিয়ে মাথা ঘাটিস না বোন। তুই তোর জায়গামতে ঠিক আছিস। আসলে, তোকে একটা কথা বলতে চাই, কথাটার আগাগোড়া কিভাবে শুরু করে উপস্থাপন করবো জানি না। আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা। তুই জানোস। কাগজ-কলমে লিখে দিতেছি একদিন তুই চিঠিটা পেলে পড়িস। আমার সম্পত্তি তোর নামে লিখে দিলাম। আমার কোনো ইচ্ছা নাই, শিকদার বংশের পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে গলাবাজি করার। আব্বু তোকে এক রত্ন কিছু দিলো না আমি কষ্ট পাইছি। তোরে ছোটবেলা থেকে মানুষ করছি, বিপদাপদ থেকে সার্মথ্য মতো বাচাইছি। একদিন তুই জিজ্ঞেস করছিলি আমার স্পষ্ট মনে আছে, “ভাই আমাকে সবাই আদর করলেও আব্বু-আম্মু সবার মতো আদর করেনা কেন?”, আমি বলছিলাম, আমাদের আব্বু-আম্মু সবার চেয়ে আলাদা। জানোস! ওইদিন তুই ওইটুক বাচ্চা আসল কথা ধরছিলি। আমিও ওই আসল কথাটা জানতাম কিন্তু তোরে কখনো জনাইনি। তোর মনে কত বড় ধাক্কা লাগবো আমি টের পাই। আমিও কথাটা শুনে ধকলে ছিলাম। আব্বু-আম্মুর একটা মেয়ের শখ ছিলো, আব্বুর একটু বেশি শখ ছিলো বলতে পারিস। আমি হওয়ার পর আম্মু বড় একটা অসুখে ফাসে আর আব্বুর ডায়াবেটিস সমস্যা ধরা পড়ে। তখন আর মেয়ের শখ ‘শখ’ হয়ে থাকতে পারেনা। আব্বু-আম্মু অনেক উদাস থাকতো। এরপর একদিন এতিম খানা থেকে মেয়ের দত্তক নিলো। মেয়ের বয়স ছিলো এগারো মাস। ওই বাচ্চাটা তুই ছিলি। তোরে নিজের সন্তানের মতো উনারা দুইজন পালে, বড় করে, পড়াশোনা করায়। দাদাভাই ছাড়া তোর পালিত হওয়ার ঘটনা কেউ জানতো না। তখন মুগ্ধের পরিবার নতুন নতুন আমাদের পাশের খালি জায়গা কিনে বিল্ডিং করে। কেউ জানতো না তুই দত্তক নেওয়া। আমিও এই ঘটনা জানতাম না, জানছি তোর পনেরতম জন্মদিনে। তাও আব্বুর সাথে তোরে নিয়ে ঝগড়া করতে যেয়ে। তুই দোষ করলে আব্বু অকথ্য ভাষায় কথা বলতো, আর তুই তখন আমারকে জিজ্ঞাসা করতি, “আব্বু আমাকে ছোট ছোট ভুলে গালি দেয় কেন?”। জবাব দিতে পারতাম না। কারন, এতো বড় তিতা সত্য হজম করার বয়স হয়নাই। তোরে আদরও কিন্তু কম করেনি। অনেক আদর করছে। যা চাওয়া হতো সব হাতের কাছে এসে পড়তো। উনাদের মনে তোকে নিয়ে দাগ লাগছে এই কারনেই তুই দোষ যখন করলি অনেক বড় দোষ করে ফেললি। এমনেই ছোট ছোট ভুলে তোকে কথা শুনাতো, আর তুই উনাদের মতের বিপক্ষে যেয়ে দোষ করে ফেললি। আমি বলবো, তুই দোষ করোস নাই, ঠিক কাজ করছোস। পন্থাটা ঠিক হয়নাই। তোরে যে কতো আদর করে নিজের পুতুল বোনের মতো রাখছি, তুই তো জানোস। তোর আবির ভাই তো মিথ্যা কথা বলেনাই। ধোকা দেয়নাই। তোর সাথে আমার জেনেটিক সম্পর্ক নাই। কিন্তু তবুও বোনের মতো রাখছি। ভাই হয়ে তোকে কিছু দিতে পারলাম না তাই নিজের নামে জায়গাটা তোর নামে লিখে দিছি। দেখে রাখিস ভুটকি। তুই তো একটা ভুটকি। ভুটকি-ই থাকবি….

–অসমাপ্ত_জীবনকাহিনী🍁

-Fabiyah_Momo

#বিদ্র গল্পটা শেষ কিন্তু গল্পের আবহমান ঘটনা এখনো চলছে। “মম-মুগ্ধের” চরিত্রের আড়ালে আসল নামধারী দুটো চরিত্র হলো “চারু-আদনান”। ঘটনাটা উনাদের ঘিরে ছিলো। উনাদের নিয়ে ছিলো। আমি ঘটনাটা ২০১৮ সালে শুনেছিলাম। মামার বন্ধুর ঘটনা ছিলো। যতটুকু যেভাবে যেরকম শুনেছি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রতিটা পার্টে চেষ্টা করেছি উনাদের লাইফের ঘটনাগুলো ফুটে উঠুক। কয়েক জায়গার ঘটনা শুনে কান্না এসেছিলো, কয়েক জায়গায় ঘটনা শুনে শ্রদ্ধায় ভরে আসছিলো। চারু মামী আসলেই একজন সাহসী মেয়ে এবং মহিলা। আদনান মামাকে দেখলে গর্ব করতে ইচ্ছে করে। অসাধারণ তারা। উনাদের জীবনকাহিনী এখনো চলছে। তাই আমি সমাপ্ত লিখেও অসমাপ্ত বলতে বাধ্য হয়েছি। শিফা ও আকাশের সাথে কি হয়েছে জানি না, তাই বাড়তি কিছু লিখতে ইচ্ছে করেনি। যতদূর যাদের সাথে যা যা পরিণাম হয়েছে লিখেছি। অনেকে বাজে মন্তব্য করেছেন, অনেকে বলেছেন মানুষের জীবনে নাকি এতো দুঃখ কষ্ট নেই….সবই বানোয়াট লিখেছি, হেনতেন অনেককিছু। তাতে আমার নিজের কোনো আক্ষেপ নেই। ফিরবো নতুন গল্প নিয়ে আরো একবার। উৎসাহ- প্রেরনার জন্য অবশ্যই আবদার রইলো। তবে আজ গল্প শেষে রিভিউ চাই🤧💞💞

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here