যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ১৯

0
1724

#যদি_বলি_ভালোবাসি♥
#PART_19
#FABIYAH_MOMO

ফাইলের উপর রাখা অচেনা ফোনটাকে হাতে নিলাম…ফোনে কোনো লক সিস্টেম নেই। সোয়াইপ করতেই লক খুলে যায়। বর্তমান যুগে পাসওয়ার্ড ছাড়া ফোন? ভাবা যায়? ডায়াল করলাম মুগ্ধের নাম্বার,যেহেতু আমার অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজন তাকে কল করার। ফোন বাজছে, তথাপি রিসিভ-

–হ্যালো হ্যা বল, ঘুম থেকে উঠেছিস?পায়ের ব্যাথা কমেছে?
–আপনি আমাকে জাগিয়ে তুলে গেলেন না কেন? ডাক দিলে কি আমি উঠতাম না?
–প্লিজ টেল মি, পায়ের ব্যাথা কেমেছে?
–না কমেনি! এক কিন্ঞ্চিত কমেনি! শুনছেন! ক মে নি !
–আবারো উল্টো উত্তর। আমার সাথে ত্যাড়ামি না করে একটু আদর করলে কি হয়? মায়া লাগে না এই মাসুম ইনোসেন্ট ছেলেকে দেখে?
–ইনোসেন্ট মাই ফুট! আপনি একটা বদ! কথা বলবেননা আমার সাথে!
–আরে আরে রাগ স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর। মাথার তাড় ছিড়ে ঢিলে হয়ে যাবে!!আমার জন্য ভাব প্লিজ? তুই গেলে অকালে আমিও পাগল হয়ে যাব।
–মুগ্ধ আমি আপনাকে দেখবো প্লিজ! আপনার কাল জ্বর ছিলো। আজই আপনাকে হসপিটালে যেতে হলো? আমি আসবো!!

উনি হাসলেন, বুঝলাম আমি। সমস্যা একটাই হাসিটা দেখতে পারছিনা। ভেবেছিলাম সকালে উঠেই উনার নিষ্পাপ মায়া জড়ানো মুখটা দেখবো…কিন্তু উনি ডেকে গেলেন না। হাসি রেখে বলে উঠলেন-

–দেখতে ইচ্ছে করছে?
–খুব। প্লিজ কিছু করুন!!
–সাফিনকে বলে দিচ্ছি তোকে আমার এখানে নিয়ে আসতে…তুই রেডি থাকিস।
–খেয়েছেন কিছু?
–আসলে…মানে হলো…আচ্ছা মম আমি একটু পরে কল করি? বিজি!! সরি…

মনে হচ্ছে কথা এড়াচ্ছেন। সকালে খাননি উনি।

–আচ্ছা। রাখুন।

ফোন কেটে বদ্ধ রুমের দরজা খুলছি। অবশ্য মুগ্ধের রেখে যাওয়া চাবি দিয়ে। ওড়না দিয়ে ঘোমটা টেনে নিজের কামিজে একবার চেক করে নিলাম, যদিও আমার সালোয়ার কামিজ পড়ুয়া অবস্থায় কিচ্ছুই দৃষ্ট থাকে না। আল্লাহর নাম নিয়ে দরজা খুলে একবার উকি দিলাম বাইরের হাওয়ায়… বেশ!!ড্রয়িংরুম খালি। রুমের দরজা থেকে বেরিয়ে আরেকটু দেখে নিলাম… রাফিনের দরজা খোলা না বন্ধ।। যাক বন্ধ। কপালের কাছে ঘোমটা টেনে পায়ের ব্যাথা সাইডে ফেলে দেয়াল ধরে মেইন দরজার কাছে যাচ্ছি। সম্পূর্ণ ভর দিয়ে দাড়ানো সম্ভব না হলেও দেয়ালে হাত রেখে এগুচ্ছি। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন মাথায় ঘোমটা দেওয়া ওড়নাটা টান মারলো। একপায়ে কুতকুত খেলার মতো দাড়িয়ে আছি, দেয়ালে হাত। কাটা পা হাটু গুজিয়ে শূন্যে উঠিয়ে রেখেছি। মনের মধ্যে আবারো রাফিন নামক শয়তানের ভয়! মুগ্ধ নেই। আঙ্কেল অফিসে থাকবেন, বাসার সবাই রুমে রুমে দরজা ঠেকিয়ে অন্যমনস্ক। পিছন থেকে মাথার ওড়নাটা টেনে টেনে আমার কাছ থেকে নিতে লাগল, আমি একহাতে ওড়না পেচিয়ে আটকানোর ট্রায় করছি, পিছন থেকে ওড়না টেনে নিয়েই যাচ্ছে ও।

–তোকে ওড়না ছাড়া ভালো লাগে। আমার সামনে ওড়না ছাড়া বুক দেখিয়ে চলবি। কালরাতে তোর আর রাদিফের মধ্যে কিছুই হয়নাই আমি জানি। ওই ধোকাবাজ জীবনেও নিজে সুখে থাকবো না তোকেও সুখ দিতে পারবোনা। অপশন দেই তোকে! রাত হলে চলে আসিস। রাদিফের চেয়ে ভালো সুখ দিবো!!!

রাফিনের অশ্লীলভাষী কথাবার্তা একবার যদি মুগ্ধকে শোনাতে পারতাম! মুগ্ধ জেনে যেতো শ্রদ্ধেয় গূনধর রাফিন ভাই কত বড় নিমোক হারাম! ওড়না পিছন থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রাফিন, অবশিষ্ট আছে হাতের দুই কবজি সমান ওড়নার লম্বাংশ। পা টা ফ্লোরে নামালাম। হুলফুটানো কাটার মতো ফ্লোরের টাইলসে পা টা ব্যথা করে উঠলো। চোখ কুচকে শ্বাস ছেড়ে পেচানো ওড়নার হাতটা দিয়ে দিলাম এক টান! রাফিনের হাত থেকে ওড়নার বেসামাল ছিটকে এসে নিজের কাছে ফিরে আসলো। রাফিনের দিকে ঘুরে গলায় ওড়না দিয়ে নিলাম। রাফিনের গায়ে নীল টিশার্ট, ইয়েলো শর্টস। রূপ দেখে ভালো-খারাপ বিবেচনাকারী ব্যক্তিবর্গের জন্য রাফিন বেস্ট। কেননা, রাফিনের রূপ আছে কিন্তু আসল রূপের বৈশিষ্ট্য নেই।আর চরিত্র? তাহলে বলব, অধমের চেয়েও বিস্তার কিছু।

–আমার ওড়নার কথা বললি না? তোর সামনে ওড়না ছাড়া ঘুরবো? পতিতালয়ে খুজিস! তোকে ওড়না ছাড়া বুক দেখিয়ে তোর লালসা মিটিয়ে দেওয়ার মানুষ অভাব পড়বেনা! আমার আর মুগ্ধের সম্পর্কের কথা তুই অন্তত মুখে না বলিস তো ভালো হয়! উনি তোর চেয়ে বহু লাখ গুনে সুখ দিতে জানে রাফিন! তোর মতো বজ্জাত নেওড়া ওগুলো জানে না! উনার আর আমার মধ্যে মনের খোরাক চলে! শরীরের চাহিদা না! তুই আরেকবার উনার বিষয়ে মুখ তুলে কথা বলছোস! কসম খোদার! আমি তোর অবস্থা কি করবো! আল্লাহ জানেন! দূরে থাকিস!

.
.
গাড়িতে বসে আছি। মেইন দরজার বাইরে থেকে সাফিন ভাই এসে নিয়ে গিয়েছেন। রাফিনের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হওয়ার আগেই সাফিন ভাই এসে সবটা পিষে দেন। পায়ের ব্যাথা আজ খুব জটিল আকারে যন্ত্রণা করছে। সাফিন ভাই ড্রাইভিং সিট থেকে বলে উঠলেন-

–মম আর কতদিন সহ্য করবি? তোর মতো মেয়ে রাফিনের মতো রাস্তার ছেলেরে দমাইতে পারতাছেনা!! বিশ্বাস করা যায় না বইন!! হালা দিন দিন চাঙ্গে উঠতাছে!!

সাফিন ভাই যথাযোগ্য ঠিক বলছে। রাফিন প্রথম দিন থেকে যা করতো, এখন সেটার গ্রাফ বিবেচনা করলে শীর্ষ থেকে শীর্ষ তালিকা উঠে যাচ্ছে, আর আমি হাতে হাত রেখে সময়ের অপেক্ষায় আছি।

–সাফিন ভাই, মুগ্ধকে জানালে উনি শতভাগ বিশ্বাস করবেন? রাফিন যে একটা কুলাঙ্গার অধম! এটা সবার জন্য অজানা ভাই।
–সত্য কি কোনোদিন চোখের সামনে আসবো না রে? তুই ওই হালার কুকীর্তি সহ্য করবি?
–সত্য কোনোদিন ঢাকা পড়েনা বড় ভাই। সময় আসুক।

উনার হসপিটালের সামনে দাড়িয়ে আছি, খুব বড় হাইফাই হসপিটাল। আমি দাড়িয়ে আছি মুগ্ধের পাঠানো এক নার্সের হাত ধরে। উনি হুইলচেয়ার পাঠিয়েছেন আমাকে উনার কেবিন নেওয়ার জন্য। সাফিন ভাই বলে উঠলো-

–কেরে বইন…মুগ্ধ দেখি তোকে রোগী বানায়া হাসপাতালে তুলতাছে!!! তুই দেখি পা ভাঙা রোগী!!

হোহো করে হেসে কুটিকুটি সাফিন ভাই। নার্স-ও দেখি মুখে উপর হাতের আড়াল দেখিয়ে মুখ টিপে হাসছে। কেমন লজ্জায় পড়ে গেছি!! উনার অতিরিক্ত কেয়ার আমার জন্য ইজ্জতের চৌদ্দটা বানায়! নার্স হাসির স্বচ্ছতায় বলে উঠলেন-

–ভাবী প্লিজ বসে পড়ুন। ছোট ভাই কিন্তু নারাজ হবে। আপনার পায়ের দিকটা মাথায় রেখেই হুইল চেয়ারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বসুন।

সাফিন ভাইয়ের দিকে ঠোট উল্টে নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছি, উনি পেটে হাত দিয়ে হাসি থেকে হাসির উচ্চক্রমে উঠে যাচ্ছেন! টোটালি ফায়ার! হুইলচেয়ারে বসে ভ্রু যুগল একত্রে কুচকিয়ে বসে আছি। সাফিন ভাই বিদায় দিয়ে চলে গেলেন। নার্স চেয়ার ঠেলে হুইলচেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে হসপিটালের ভেতরে নিয়ে গিলেন, লিফটের দরজা ওপেন করে নাম্বারিং ডাটায় ‘ফোর’ নং-এ ক্লিক করে দিলেন। লিফটের দরজা অফ। লিফটে মানুষ কম, আমি সহ চারজন।

নার্স আমাকে একটা কেবিনের সামনে দাড় করিয়ে দরজায় নক করলেন। বড় করে দরজায় নেমপ্লেট বসানো- “Dr. Radeef A.Mugdho, Neuro Specialist”. ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো-

–কাম ইনসাইড প্লিজ।

কেমন ফুরফুরে লাগছে উনার হসপিটালে এসে!!ইশশ… নরম গলায় এর্ট্রেক্টেট ভয়েজটা ‘কাম ইনসাইড প্লিজ!!’ আচ্ছা উনি এখন আমায় দেখে কি করবেন? আদর নাকি শাষন? ডোন্ট নো!! নেমপ্লেট, কেবিন সবই উনার এচিভম্যান্ট। এই মানুষের কেন সুখ আসবেনা? ওই রাফিনের কপালে সুখ আসবে? হাও ফানি!! নার্স আমার চেয়ার ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। ডক্টর রাদিফ এ. মুগ্ধ এসির নিচে চেয়ারে বসে লিখালিখি করছেন। সেই মনমুগ্ধকর ফর্মটা! শার্ট – প্যান্ট, হাতে ঘড়ি, ম্যাশ ফর্ম!! নার্স আমাকে উনার টেবিলের সামনে রেখে বলে উঠলো-

–আপনার ডক্টর এসে পড়েছে, স্যার। আমি আসি।

নার্স কি বললো? আমি উনার ডক্টর? আমি ডক্টর কোন দিক দিয়ে? মুগ্ধ উনার লিখার ডায়েরীটা অফ করে কলমের মাথায় দুইবার টিপ দিয়ে কলম বন্ধ করে নিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে কনুই টেবিলে রেখে বলে উঠলেন-

–তো বলুন মহাশয়া আমাকে কোন মেডিসিন দিয়ে ট্রিটমেন্ট করবেন??? লাভ থেরাপি অর লিপিস্টিক টেস্ট??

আমি হাবার মতো বসে আছি। কিসব ট্রিটমেন্টের কথা বলছেন? জীবনে ভাই আমি এইগুলার নামই শুনিনাই! আমি ব ও-আকার ‘বো’, ক আকার ‘কা’ ”বোকা” হয়ে উনার দিকে প্রশ্নের সংযোজন ঘটাতে থাকলে উনি চেয়ার থেকে উঠে আমার হুইল চেয়ার টেনে উনার চেয়ারের সাথে ঘেষিয়ে দিলেন। উনি উনার চেয়ারে বসে আমাকে কোলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-

–আমাকে দেখার ইচ্ছা পূরন হলে আমার মেডিসিন কি নিতে পারি?
–কি মেডিসিন?কিসের মেডিসিন? আপনার তো জ্বর নেই।

উনি কপালে ঠোট ছুয়িয়ে ঠোটে আলতো ছুয়িয়ে দিলেন। স্নিগ্ধ গলায় বলে উঠলেন-

–মেডিসিন নিলাম বুঝলি। ইউনিক না? একচুয়েলি জানিস? নিয়মিত ডাক্তারদেরও মেডিসিন নেওয়া লাগে। নইলে ডাক্তাররা রোগী দেখতে পারেনা।।অন্যমনস্কে ভুগতে ভুগতে বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
–আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?
–মেবি!! গড নোওস!!! খাইসিস? ওহ নো ! আমি তো খাবার রেখে আসতেই ভুলে গেছি। জাস্ট ওয়েট!!

উনি ডেস্কের উপর থেকে টেলিফোনের বাটনে ক্লিক করে কল করলেন-

–হ্যালো, আসলাম চাচা… স্যান্ডউইচ, কলা, জুস নিয়ে আসেন। হ্যা আমি কেবিনেই আছি। আপনি একটু কুইক পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।

.
.

মুগ্ধ কারেক্ট সাতটার দিকে আমাকে নিয়ে বাসায় এসেছেন। পায়ের কারনে গাড়ি থেকে উনি কোলে তুলে বাসায় ঢুকলে দেখি উনার ফুপিরা বাসায় এসেছেন। দুই ফুপি ও তাদের পরিবার। সবাই আমাদের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। বড়জন বলেই ছাড়লো-

–বাড়ির ছেলে বড়দের সামনে বউ কোলে ঘরে ফিরছে! এইদিনও দেখতে হলো ভাবী? আমার স্বামী আপনার সামনে কখনো কোলে তুলে নিছিলো ভাবী বলেনতো?

বড়ফুপি আন্টির দিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছেন। আন্টি হিমশিম করছেন জবাবদিহি করতে। ছোটফুপি আমার দিকে কিটমিট করে কথা বলছেন যা বড় ফুপির কানে যাচ্ছিলো। আমাদের কানে না। রূপাও সোফার একপ্রান্তে বসে আছে। মুগ্ধ পরিস্থিতি লাঘব করতে হাসিমুখে বলে উঠলেন-

–ফুপি দাদাভাই বলেছিলো, বিয়ে করলে বউয়ের সুখ থেকে দুঃখ পযর্ন্ত সব দেখাশোনার দায়িত্ব বরের চোখবন্ধ করে পালন করতে হয়। তুমি খেয়াল করলে দেখবে, মমর পায়ে ব্যান্ডেজ করা। ওর পা কেটে গিয়েছে, হাটতে অসুবিধা। আমি চোখের সামনে আমার বউয়ের কাটা পায়ে হাটা দেখে শান্তি পেতে পারিনা ফুপি। ভুল বুঝে থাকলে আমাকে মাফ করো। দুঃখিত, আমার ব্যান্ডেজ চেন্জ করতে হবে। আসছি।

সবার মুখে সুই ঢুকিয়ে সেলাই করে দিলেন মুগ্ধ। উনার কথার গলা এমনেই গায়ে লাগে, ফুপিদের জন্য কেমন লাগছে হয়তো পরে জানতে পারবো।

মুগ্ধ আমার পায়ের ব্যান্ডেজ চেন্জ করে নতুন পট্টি বেধে দিয়েছেন, কাটা জায়গায়টা কাচা হয়ে গিয়েছে। তাই আজকের জন্য ব্যান্ডেজ বেধে কাল সকালে খুলে দেয়া হবে। উনি ফ্রেশ হয়ে রাতের আহার আনতে যাবেন। আন্টি আমাদের জন্য কখনো রান্না করবেননা কথাটা রাফিয়াকে দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভ্রান্তিকর দিন চলছে আমাদের। এলোমেলো সব, অগোছালো। মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে রেখে আমার গালে ও কপালে ঠোট ছুয়িয়ে বাইরে গেলেন খাবারের জন্য। রাফিন বাসায় নেই, রাফিয়া জানালো সে আঙ্কেলের অফিসে নাইট ডিউটিতে আছে। আমি বিছানায় পা উঠিয়ে পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে বসে আছি। হঠাৎ দরজায় নক করলো কেউ,

–এক্সকিউজ মি, আমি ভেতরে আসতে পারি?

রুমে ঢোকার অনুরোধ শুনে আমি দরজার দিকে তাকালে দেখি রূপা দাড়িয়ে আছে। খুব সুন্দর দেখতে। বড় টানা চোখ, গোলাপী ঠোটের মিষ্টি হাসি, আমার চেয়েও ধবল সুন্দরী বলা চলে। আমি ওকে ভেতরে আসতে এক হাসি দিয়ে সায় বোঝালাম। ও আসলো এবং আমার পাশে বসলো। কালো সুতির কুর্তি পড়নে, নীল জিন্স, হাতে ব্রেসলেটভর্তি, চার আঙ্গুলে ষোলটার মতো রিং পড়া। যুগের সাথে তাল মেলানো মর্ডান, স্টাইলিশ মেয়ে। ও গলা ঝেড়ে বলে উঠলো-

–নাম মম? কিউট।
–থ্যাংকিউ আপু।
–আমি মুগ্ধের তিন মান্থের ছোট। সো ডোন্ট কল মি ‘আপু’।
–আপনি উনাকে ‘রাদিফ’ ডাকেননা?
–নো। মুগ্ধ ইজ কুল নেম। স্ট্রেট ফরওয়ার্ড একটা কথা বলি! পেটে কথা রেখে পেচিয়ে বলার হেবিট আমার নেই। মুগ্ধকে তুলে নিয়ে কেন বিয়ে করলে?
–সরি….মুগ্ধকে তুলে নিয়ে বিয়ে করবো কিনা সেটা আমার ডিসিশন। আপনাকে কেন এ্যান্সার দিতে হবে?

রূপা বুঝি ক্ষেপে গেল, ঠোটদ্বয় ভিজিয়ে মুগ্ধের চেয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-

–কজ প্রোর্পাটি আমার ছিলো!
–ওওও আচ্ছা!! প্রোপার্টি? আপু শুনেন, উনি কোনো জায়গা বা সম্পত্তি না। একজন এডাল্ট ছেলে। নিজের লাইফের ছোটবড় সকল সিদ্ধান্ত নিজে একাই নিতে পারেন। আপনিও জানেন ছেলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেয়ে তাকে বিয়ে করলেও সাথে রাখতে পারবেনা। অযাচিত কথা না বলে লজিকক্যালি কথা বলুন।

রূপা একটা ফিকে হাসি দিল। আমার হাতের উল্টোদিকের সাথে ওর হাতের উল্টোদিক পাশাপাশি ওতপ্রোত করে রাখলো। আমাকে দেখিয়ে বলল-

–তোমার গায়ের চামড়া দেখো আর আমার গায়ের চামড়া দেখো। তফাত দেখতে পারলে তুমি নিজেই বুঝবা মুগ্ধ তোমাকে না আমাকে ভালোবাসে! তুমি ওর দুইদিনের বউ! আমাকে রেখে বিয়ে করছে কজ তুমি একটা বেশ্যা মেয়ে! তোমার কাজই তোমার এটা সুন্দর সুন্দর ছেলে দেখে জামাই পাতানো!
–আপনি আমার বয়সে বড় বলে কদর করছি আপু! আমার চরিত্র নিয়ে আপনার কাছে লিখিত দলিল চাইনি আমি! ভালো হবে মুখ বন্ধ করে বেহায়ার মতো চলে যান!

রূপা দাত কটকে আমার গালে চড় বসিয়ে দিলো-

–বেশ্যার মুখে চরিত্রের কথা মানায় না..মেয়ে! সাত বাজারে চরিত্র বেচে ভালো ঘরের ছেলে ধরলেই মানুষ তোমাকে নমঃ নমঃ করবে না!

-চলবে

-Fabiyah_Momo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here