#যদি_বলি_ভালোবাসি ♥
#PART_24
#FABIYAH_MOMO
পেশেন্টের চেকআপ আধা ছেড়েই গাড়ির চাবি নিয়ে দৌড় লাগালাম! আমার অতি শীঘ্রই বাসায় পৌছাতে হবে! নাহলে দূর্ভোগ ঘটে যাবে! লিফটের সুইচে চাপ দিয়ে যাচ্ছি! চাপ দিয়ে যাচ্ছি! লিফট খুলছেই না! নার্স একটা পেছন থেকে ডেকে আসলো,
–ডক্টর কাইন্ডলি আপনাকে ওয়েট করতে হবে, লিফট নিচে যাচ্ছে, লোড বেশি মানুষের।
মাথায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকলে বাসায় না জানা সিচুয়েশন আমি হ্যান্ডেল করতে পারবো না! নো! লিফট নয়, সিড়ি হোক! সিড়ি দিয়েই নামবো!
–আই হেভ টু গো নার্স! টেক কেয়ার প্লিজ! পেশেন্টদের চলে যেতে বলুন !
নার্সের কথা শোনার জন্য সেকেন্ড ফিল টাইম আমার নেই! সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামছি, নার্স ওয়ার্ড বয়….সবাই অনেকটা সাসপেন্স নিয়ে তাকিয়ে আছে! বাট আই হেভ টুগো! নাথিং টু ডু! ওর মাথা ঠিক নেই! কাল রাতের কথা শুনে আমার ভয় করছে এখন! কি থেকে কি করে ফেলে! গড! হেল্প প্লিজ!
–স্যার ইর্মাজেন্সি! পেশেন্টের শারীরিক অবস্থা ভালো না….আপনাকে চেক করতে হবে!!
আমার ইনটার্ন ডক্টর চিৎকার করে সেকেন্ড ফ্লোরের সিড়ি ধরে বলছে, থামার ইচ্ছে নেই, তাও গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে তাকিয়ে জোরে বলি,
–ডক্টর নিহালকে বলুন! আমার যেতে হবে! আই কান্ট ওয়েট! ডিপলি সরি !
গাড়ি স্টার্ট করে স্পিড বারিয়ে দেই! হসপিটাল রোড “স্পিড রুলস” মেনে গাড়ি চালানো উচিত! সময় নেই! হাতে একদমই সময় নেই! বুকের ভেতর ঝড়ের তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে! মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে! ও একা বাসায়! কি পাগলামি করে ফেলে!! কি হতে পারে! কি হতে পারে বাসায়! কেউ কিছু বললো? বাজে স্ল্যাগ এগেইন দিলো? shit shit shit! Shit peoples! আই টোটালি হেট দ্যাম! আই জাস্ট হেট দ্যাম! ক্লাসলেস! লো মেন্টালিটির বুলিং পিপল! কন্ট্রোল মুগ্ধ! কন্ট্রোল ওর কিচ্ছু হবে না! নট এ্যা স্ক্র্যাচ! বি কাম! স্টে কাম!
পার্কিং লজে গাড়ি পার্ক করে উপরে চলে যাই। ঘড়ির টাইম দেখছি! পনের মিনিটের জ্যাম রাস্তা সাত মিনিটে কভার! মম যেন ঠিক থাকে, প্লিজ! আর পেরেশানি উঠাতে পারছিনা! লিফটের দরজা খুলতেই দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছি। ও ভেতর থেকে খুলছে না! মাইন্ড ইজ আউট অফ সেন্স! কিছু থিংক করতে পারছিনা! কোথায় ও? কিছু হলো! না পেরে দরজা ঘুষাতে লাগলাম, এক্সট্রা চাবি সাথে রাখতে মনে নেই। নেবার ফ্ল্যাটের দরজা খুলল,
–এক্সকিউজ মি?
দরজায় ঘুষানো অফ করে হাফাতে হাফাতে হাতের মুষ্টিমেয় তে ফু দিচ্ছি, সি ইজ এ্যা গার্ল।
–আপনি মমকে খুজছেন? ও তো বাসায় নেই, পনের মিনিট আগে বেরিয়ে গেছে। আমার কাছে বাসার চাবিটা রেখে চলে গেল, তাড়াহুড়ো তে ছিলো খুব।
–প্লিজ প্লিজ আপু বলবেন প্লিজ….ও কোথায় গেছে? একজেক্ট লোকেশন বলেছে? কিছু তো জানবেন!! প্লিজ প্লিজ হেল্প করুন!
মেয়েটা থুতনিতে হাত রেখে ভেবে থেমে বলল,
–সরি, ভাইয়া। মম আমাকে কিছু জানায়নি, কিছু জানিয়েছে বলেও মনে পড়ছে না । আমি দুঃখিত। এনি প্রবলেম?
–নো আপু, ইটস ওকে। থ্যাংকস!! থ্যাংকস এ্যা লট।
আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, ও চলে গেছে? ছেড়ে চলে গেলো? আমার কথা একবারো মাথায় আসলোনা? আমার কি হবে? তুই এত্তো বড় স্বার্থপর হলি কিভাবে মম! আমি কি নেই রে? আমার কি খারাপ লাগে না! এই শহরে কোথায় খুজবো! কোথায় পাবো?ফ্যান্টাসটিক মম পাকনি!! ক্ল্যাপ ক্ল্যাপ!! হাততালি দেওয়া উচিত তোর ড্রামা সিনে! ডেয়ার ডেভিল মেয়েটা হালকা আসা ঝড়ো হাওয়ায় নেতিয়ে গেল! ওয়াও ম্যান! জাস্ট ওয়াও!
চোখের সামনে ধোয়াশা কাজ করছে, ধুকধুকনির হাই স্পিডে “ব্রেথ ইন ব্রেথ আউট” থেরাপি এপ্লায় করছি, আই নিড টু থিংক! কাম ডাউন! ও কোথায় যেতে পারে! কোথায় থাকতে পারে! এভ্রিথিং টু এভ্রিথিং! এনি সোর্স অফ ইনফরমেশন!আই নিড! গাড়িতে বসে ইয়ারপড লাগিয়ে ড্রাইভ করছি, রাস্তার দুধারে জানালা দিয়ে উকি দিচ্ছি। নেই ও। কোনো ক্লু-ও নেই। থট আসলো শাকিলকে কল করার।আমার ব্যাচমেট। লোকেটর কানেকশন! ও মেবি এনিহাও হেল্প করতে পারবে। ডিরেক্ট কল টু শাকিল ইয়ার!
–হ্যালো শাকিল দোস্ত! আর্জেন্টলি নিড হেল্প! প্লিজ দোস্ত, কিছু কর! আমার ইনফরমেলন লাগবে ইন্সট্যান্টলি!
–মুগ্ধ? আর ইউ ওকে ডুড? হোয়াট হেপেন্ড!
–ইয়ার, নাম্বার নোট কর! আমার এই নাম্বারের লোকেশন লাগবে ! কোথায় শো করছে টেল মি ব্রো কুইক!
–ওয়েট ওয়েট ডুড, আ’ম ট্রায়িং!! পাঁচ মিনিটের মধ্যে কল করছি।
শাকিল পার্ফেক্টলি টাস্ক কমপ্লিট করলে জেনে যাবো মম কোথায়! স্টে কাম মুগ্ধ!! মাথা ঠান্ডা! হ্যা ও ঠিক থাকবে, কিচ্ছু হয়নি ওর। জাস্ট কুল, টেক ব্রেথ…ডিপ ব্রেথ!! গাড়ি ঘুরিয়ে এলাকার যত রাস্তা ও গলি ছিলো দেখা প্রায় শেষ। আমি মমকে কোত্থাও পাচ্ছিনা। একটা মেয়ে দিনের আলোতে বেরিয়ে গেলো… কোনো চিহ্ন নেই? কোথায় গেলো! পুলিশে কল করবো? মিসিং রিপোর্ট? রায়হান! ওর ভাই তো পুলিশ ডিপার্টমেন্টে! ইয়েস, গট ইট!!
–হ্যালো! রায়হান চিনেছিস!
–ধুর ব্যাটা! জোক্স মারলি! কি কস এগলা! চিনতাম না কেন!
–দোস্ত দোস্ত….হেল্প কর!! প্লিজ হেল্প কর!! তোর বড় ভাই পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা না? উনাকে রিকুয়েস্ট কর, আমার ওয়াইফের মিসিং রিপোর্ট ডায়েরি করতে!! কাইন্ডলি দোস্ত,
–কি হইছে মুগ্ধ?? তুই ব্যাটা বউয়ের গুম রিপোর্ট লির্খাবি? ভাবি রাগ করছে?
–তোকে সব বলব প্লিজ রায়হান! এখন আমার ক্লেরিফিকেশন দেওয়ার টাইম নেই দোস্ত!! ও বাসায় নেই, কোন্ ঝামেলায় পড়লো! প্লিজ বড় ভাইকে বল!!
–তুই চিন্তা করিস না। আমি দেখতেছি। ভাবীর অল ডিটেলস আমার কাছে সেন্ড কর! ফটো দিস!
–আমি মেইল করছি!
–আচ্ছা তুই পাঠা। আমি খবর নিয়ে জানাচ্ছি। ব্যাটা টেনশন করিস না! ভাবী ঠিক থাকবো!!
–হোপ সো দোস্ত! আমি এলাকার সব রাস্তা, অলিগলি ঘুরে ওর নাম নিশানা পাচ্ছি না!! এমনে কেউ চলে যায়!
–টেনশন করলেই টেনশন বাড়বো! টেনশন নিস না। আমি দেখতেছি।
আমার বন্ধুমহলের বারোজন সদস্যকে কোনো না কোনো কাজে লাগিয়ে মমর খোঁজে পাঠিয়েছি। শাকিল বলল, লাস্ট লোকেশন ছিলো বাসায় দ্যান সুইচ অফ! ফোনের লোকেশন ট্রেস করা যাচ্ছে না! রায়হান হাতেপায়ে অনুনয় করে ওর বড় ভাই রিফাতকে মিসিং রিপোর্ট লিখিয়েছি। ২৪ ঘন্টা না হলে মিসিং রিপোর্ট লিখা হয়না কিন্তু রিফাত ভাইয়ের সুপারিশে কাজ হয়েছে। আফিদ পাশের এলাকায় খুজছে, সিহাব রেলস্টেশনে, সাকিব লন্ঞ্চ-টার্মিনালে, বাশার বাস-স্টেন্ডে, রাজিব দুই এলাকার অলি-গলি, আমির সুনশান সড়কে, মিনহাজ বাসার নিচে অপেক্ষা, সজিব পার্কে, সজল বালুর মাঠে, আবির ওদের বাসার নিচে। সবাই মিশনে নেমেছি! আমার একটা কলে ওরা সবাই আমার সাহায্যের হাত বারিয়ে দিয়েছে! আ’ম ব্লেশ্ড! সবাই নিজেদের পার্সোনাল লাইফ ফেলে, জব ছুটে আমার হেল্পে এক্টিভ হয়েছে, ওয়ান এন্ড অনলি মেইন কোর্স “মম এখন কোথায়?”। বারো জন কনফারেন্স কলে কানেক্টেড। পুলিশ আমাদের হেল্প করতে পারবেনা। টাইম লাগবে।
–আফিদ বলছি! পাশের এলাকায় কেউ ভাবীকে দেখেনি। সে এখানে আসেনি। ওভার এন্ড আউট !
–সজিব হেয়ার ! পার্কে ভাবী আসেনি। ইটস কনফার্ম !
–সজল টকিং ! এখানে কেউ নেই। খালি।
–বাসস্টেন্ডে ভাবী নেই। কপি বাশার!!
১২জন ১২টা প্লেসের লাস্ট কালেক্টেড তথ্য নিয়ে আমার কাছে সাবমিট করছে। রাত এখন আটটা। গাড়ি নিয়ে কোন্ এলাকায় ঢুকেছি নাম জানিনা, রাস্তা চিনি না। সর্বশেষ তথ্যটা দিলো শাকিল!
–হ্যালো…. শোননন!!! তোর বাসায় লোকেশন শো করতেছে ভাবী চলে আসছে মুগ্ধ!! গ্রীন লাইট শো করছে!!
–ভাই! তোর কাছে কৃতজ্ঞ থাকলাম! আমার বিপদের টাইমে তুই হেল্প করলি!! তোরে যত থ্যাংকস বলবো তত কম ভাই!
আমার “কৃতজ্ঞ” কথাটা শুনে কলের মধ্যে পুরো বারোটা একসাথে গালি দিয়ে উঠলো- “*******”! গাড়ি চালানো অবস্থায় হেসেই দিলাম। বছর পাল্টে গেলো কিন্তু বন্ধুত্ব পাল্টালো না। আমার একটা ডাকে সব আবার পুরোনো তরিকায় হাজির!! খুশিতে চোখ ছলছল করে আসছিলো, দমিয়ে রাখলাম। আমার খেলার সাথী, বন্ধুমহল, স্কুল লাইফের সবগুলো একযোগে এগিয়ে আসলো। আমি না একা ছিলাম না। ওরা ছিলো। প্রতিটা টাইমে টাইমে কলের মধ্যে বলে উঠতো- “ওই শালা! শালা তুই একটা **! ভাবীর সাথে পোংটামি না করে ভালো মানুষের মতো বিয়ে করতি! এইদিন নসিবেও দেখত হইতো না! সব তোর দোষ শালা!”। আমি উদাস হয়েও হাসতাম। বিদেশ যাওয়ার পর, ওদের সাথে যোগাযোগ লুজ করে ফেলেছিলাম। দেশে ফিরে আসার পরও আউট অফ কানেকশন। কখনো এভাবেও আল্লাহ আমাদের মিলিয়ে দিবে আশা করতে পারিনি। গাড়ির ধুম স্পিডে বাসায় চলে এসেছি। দৌড়ে লিফটের “আট” নং বাটনে ক্লিক করে ইয়ারপডে হাত লাগিয়ে বললাম,
–থ্যাংকস দোস্ত! তোদের সব গুলোকে থ্যাংকস!! আমি……..
–থামো মিয়া! কি বললা?? এমনে ছোট করলা? বন্ধু পাতছো থ্যাংকস মারানের লিগা! তোমার থ্যাংকস চাইছি? সামনে আহিস! সবডি মিল্লা লাত্থির কেলানি দিলে হুশ আইবো! বন্ধু হইছি! বন্ধুর আপদে একলা রাখার লিগা নি! ******* শালা!
.
.
লিফটের ডোর ওপেন হওয়া মাত্রই ফ্ল্যাটের দরজায় ধুমাধুম ধাক্কা। বারোজনের এগারোজন কল কেটে দিয়েছে সিচুয়েশন মাফিক কাজ বুঝে, একজন ছিলো ওপাশে আমি কাটতে ভুলে গিয়েছি। আফিদ বলল,
–আস্তে ধাক্কা মুগ্ধ! পাগলের মতো সিনক্রিয়েট করিস না! তোর ধাক্কার শব্দ আমি এখান থেকে পাচ্ছি!
–কল রাখ!
ইয়ারপড খুলে নিয়ে পকেটে পুড়ে রাখলাম। দরজা খুলল মম। সুস্থ স্বাভাবিক অবাক চোখে চেয়ে আছে। চুলে তোয়ালে ঘষছে, দেখে মনে হচ্ছে গোসলে ছিলো আমার জোরদার দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে ও বেরিয়ে আসে।
–আপনি দেরি করলেন কেন? আমি অপেক্ষা করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। আপনার কোনো আসার নামই নেই!! আটটার উপরে বেজে গেছে আপনি এখন ফিরলেন।কাজটা ঠিক করেননি মুগ্ধ। আমি রাগ করেছি। কথা বলতে আসবেননা। হুহ!
আমি ঘামে দুইধাপে ভিজে গোসল, ও বাসায় নরমাল দিনের মতো বিহেব করছে!! মম আমার হাত টেনে ভেতরে আনলো, দরজাটা লাগিয়ে দিল। এখনো স্তব্ধ হয়ে আছি ওর স্বাভাবিকতায়। চুলের পানিতে ভিজা তোয়ালটা দিয়ে আমার মুখ মুছে দিচ্ছে, আমি বলির পাঠার মতো চুপ করে আছি।
–ঘামে চুপচুপ কি করে? এসির নিচে ছিলেন না? গাড়ির এসি কি নষ্ট হলো মুগ্ধ? ঘামের ভেজা থেকে জ্বর এসে পড়বে তো।। দেখতো…চুলগুলোও ভিজেচিপসে ঠান্ডা হয়ে গেছে। আপনি কেয়ারলেস কেন!
ভেবেছিলাম বাসায় এসে বিক্ষোভের আগুন ধরাবো, ও আমায় মাতাল বানিয়ে দিচ্ছে। গোসল শেষে ওকে না সদ্য ফোটা পদ্মের মতো চমৎকার লাগে। আলাদা মিষ্ট সুভাষ, গন্ধ মাতোয়ারা ফুলেল বাস। আমি রাগ দেখাতে পারছিনা, জ্যামে আটকে থাকা গাড়ির মতো হয়ে গেছি। কি করলো ও? কিছু কি করেছে? সারাদিন আমাকে পাগলের মতো নাচিয়ে ঘুরিয়ে বাসায় এসে গুমোট বানাচ্ছে!! পাকনি আমায় টেনে নিয়ে বেডরুমে গেল, আলমারি খুলে আমার টিশার্ট, ট্রাওজার, টাওয়েল নামিয়ে ওয়াশরুমের ক্লথ হ্যাংকারে রাখলো। আমার সামনে টুল রেখে তাতে দাড়িয়ে ওর চুলে মোড়ানো তোয়াল খুলে আমার ভেজা চুলগুলোকে তর্জমা করতে লাগলো।
–আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? প্রথম দেখলেন? রূপার মতো সাদা চামড়া নেই কিন্তু!! মনে মনে ওর প্রতিচ্ছবি নিয়ে কল্পনা জল্পনা করলে খবর আছে বলে দিলাম!!গোসলের জন্যে ফর্সা ফর্সা লাগছে।
মেজাজটা শিখায় উঠলো! কিসের সাথে কিসের কম্পেয়ার করছে! রূপা কি আমার বউ! লাইফ পার্টনার? নাথিং! আমি তোকে ছাড়া এক্সট্রা অপশন রাখিনি নট বানাবো! রাদিফ আবরার মুগ্ধের যদি বউ,পার্টনার, লাইফলাইন রাখে দ্যাট আজীবন মম থাকবে!
–মুগ্ধ একটা উচু দেখে টুল আনবেন তো!!আমি আপনার উচ্চতা ছুতে পারিনা। কেমন আনইজি লাগে জানেন? লম্বা লম্বা করেছি, কিন্তু লম্বা বর পেয়ে ভোগান্তিতে আছি। পায়ের তালুতে ভর দিয়ে আরো উচু হতে হচ্ছে, এরপর যদি আপনার চুলগুলোকে পেতাম..চলতো!! দেখছেন? আমি পারছিনা। আচ্ছা সারাদিন কোথায় ছিলেন বলুন তো? আমার চিন্তা মনে আসেনি?
চিন্তার টপিক উঠাতেই কষিয়ে মারি এক থাপ্পর! ও থাপ্পরের বেগে নিচে পড়তে নিলে আমার শার্টের কলার আকড়ে নড়বড়ে হয়ে উঠলো। আমার তখন রাগ। হাত শক্ত করছি থাপ্পর মারবো তিনটা! নো থামাথামি! কাদোকাদো গলায় বলল,
–গায়ে তুললেন? ওয়াদা ভেঙ্গে দিলেন মুগ্ধ? চড় দিলেন?
ওর গলা টিপে ধরলাম! ইচ্ছা করছিলো টিপে দম করে মেরে ফেলি! কলটা কাটার পর থেকে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ওকে কোথায় কোথায় না খুজেছি! আমি রাস্তার লেলিয়ে দেওয়া কুকুরের মতো হাহাকার করেছি। হঠাৎ দম বন্ধ নিয়ে কাশাকাশি শুরু ও, গলা থেকে হাত ছাড়ানোর নানা চেষ্টা চালাচ্ছে। আমার মাথায় রাগে টগবগ করছে, ফুটন্ত পানির বাষ্পের মতো।
–শ্বাশ্বাস ননিতে পা..রছিনা, ছাড়ু…(কাশতে লাগলো)
গলা ছাড়লাম। ও কাশতে কাশতে গলা ধরে নিচে নামতে গেলে টুল থেকে পা ফসকে পড়তে নেয়। কোমর চেপে বুকের সাথে টেনে ধরি, ও বিবশ হয়ে গলা ধরে কাশছে। একহাতে কলার ধরে কাশাকাশি ও জোরেশোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। ভেজা চুলে হাত ঢুকিয়ে টেনে ধরি, ও চোখ কুচকে কাশছে,
–কো থা য় গিয়েছিলি ! জবাব দে ! আমার সাথে নাটক করবি না ! গলা আবার ধরলে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলবো !
চোখ খুলল। ভারী করে ঢোক গিলল। কলারের হাতটা ছেড়ে দিল। অনুতপ্ত হয়ে বলল,
–আব্বুকে দেখতে গিয়েছি মুগ্ধ। আব্বু অসুস্থ।
চুল টেনে ধরা ছাড়লাম। ঘাড়ে হাত রেখে আরেকটু কাছে আনলাম,
–মিথ্যে বললে জিহবা কেটে দিবো! সত্য বল! কোথায় ছিলি! ফোন বন্ধ কেন!
–সত্যি বলছি আব্বুকে দেখতে গিয়েছি, ফোনে চার্জ শেষ যায়, চার্জ দিতে গেলে পানিতে পড়ে ভিজে যায়, ওটা রোদে শুকাতে দিয়ে আমি আব্বুকে দেখতে যাই। সত্যি বলছি।
গালে ঠোট ছুয়িয়ে দেই। জড়িয়ে ধরি ওকে। কি ভয়টাই পেয়েছিলাম। আমাকে কোনোভাবে ইনফর্ম করতো!! বড্ডো উন্মাদের মতো টোটাল এরিয়া, এলাকা, রোড খুজেঁছি। নিজের ইর্ন্টানাল সিচুয়েশন মেবি ডিস্ক্রাইব করার মতো ছিলো না। I was afraid!
ও পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার শার্ট ঘামে সিক্ত। কাধের হাড্ডিটায় ওর মুখ মিলে আছে, ঠোট ছুয়ে আছে ওর। মাথাটা কানের সাথে ঘেষা।
–কি হয়েছে বলুন না? আপনি চড় মারলেন, গলা টিপে ধরলেন। আমায় মেরে আরেকটা বিয়ে করবেন নাকি? করলে সমস্যা নেই তো…আমি অনুমতি দিয়েছি।
–জাস্ট শাট আপ! চুপ! মুখ বন্ধ! কথা বলবি না বেয়াদ্দপ!
–আচ্ছা, Zip up কথা বলবো না। মুখ বন্ধ।
.
.
ডাক্তার সাহেব আমার সাথে কথা বলছেননা।পাশের রুমে ল্যাপটপ নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছেন। আমি রাতের খাবারের জন্য টেবিল সাজাচ্ছি। উনাকে ডাকব কিভাবে ভাবছি। টেবিল সাজিয়ে কাগজ-কলম নিয়েছি। কিছু একটা লিখে দিয়ে মন গলিয়ে ডাকব উনাকে। “আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে ডাক্তার সাহেব!!আপনার এই দূর্বল হৃদয়ের রোগীকে একটু দেখে যান, রাতের খাবারটা খেয়ে যান, আমি কিন্তু রূপাকে ডাকব!!” বদ্ধ দরজার নিচের অংশে টোকা মেরে ওপাশে পাঠিয়ে দিয়েছি। দেখি কিছুক্ষণ, কি করে উনি। আব্বুকে দেখতে যাইনি মিথ্যা বলেছি। রূপা আমাকে ভুয়া কথা বলে বাইরে আসতে বলেছে আমিও গিয়েছি। রাস্তায় আব্বুর কাছে যেতে নিলে ফুপি ও রূপার সাথে ঝিলপাড়ে দেখা হয়। উনারা বলেছেন, আন্টি অর্থাৎ মুগ্ধের মা-কে চক্রান্ত করে রেখেছেন, মুগ্ধের ডিভোর্স করিয়ে রূপাকে গলায় ঝুলিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দিবেন। রাফিন নাকি বিয়ের পিড়িতে বসেছে শুনলাম, আজকালকার মধ্যেই লোক দেখানো নিমন্ত্রণ পাঠাবে এখানে। আব্বু আমাকে এখনো আমাকে চোখের বিষ ভাবেন, আম্মুর খানিকটা অভিমান গলেছে। নিমন্ত্রণ পেয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে পুরোটা মুগ্ধের উপর ছেড়ে দিবো, আমার চেয়ে ভালো উনি বিষয়টা বুঝবেন।
আমি উনাকে নিয়ে ইনসিকিউর ফিল করতাম না, ইদানিং করি। কাল আমরা একটা মাস পেরিয়ে আবার জমালয়ে যাচ্ছি, রাফিন নামক জমের বিয়ে খেতে। ঠিক শুনেছেন, আমাদের বিয়ের একমাস পূর্তি হয়েছে, তারই মাঝে খবর আসলো আমাদের ইনভিটেশন দেয়া হয়েছে স্বামীর বড় ভাইয়ের বিয়ের দাওয়া খেতে। এক সপ্তাহ আগে আমাদের আসতে বলা হয়েছে, আসছে শুক্রবার বিয়ে পড়ানো হবে। রাফিনের বিয়ে ফুপির পছন্দমতো মেয়ের সাথে নির্ধারণ করা হয়েছে। মেয়ে সুন্দর। আমাকে নিয়ে হল্লা মাতানো পাব্লিকরা ঠান্ডা হয়ে পড়েছে, যেহেতু বিয়ের আমেজ এলাকার ও আশেপাশের মানুষরা আমার অতীতটা অতীত করে রেখেছে।
মুগ্ধ এবং আমি বাসায় পা রাখলাম এক মাস পর। হাতে দুইজনের দুইটা লাগেজ ছাড়া কিচ্ছু আনিনি, বিয়ের আয়োজন শেষ হলেই ফিরে যাব। বাড়ির মানুষের রূপ বদলে গেছে, সবাই আমাদের হাসিখুশি স্বাগত জানিয়েছে। রাফিয়ার মুখটা অন্য চেহারার প্রখর বোঝাচ্ছিলো, আমাকে দেখলেই ভয়ে লুকিয়ে পড়তো। প্রথমদিন সেটা বুঝে খেয়ালিপনা করেছি, কিন্তু একসময় মাথায় ঘাটতে থাকলো, রাফিয়া কেন লুকোবে? মুগ্ধ বিয়ের বাজার-সদাইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, কাজের ফুরসতে ছুটি চেয়ে নিল এক সপ্তাহের মতো। রূপাও রূপান্তরিত লাভ করেছে, আগের গালাগাল ভাবটা উবে গেছে।
রাতে আশ্চর্যজনক এক কাজ ঘটলো! আমি চলে গিয়েছিলাম বেকায়দায়।
-চলবে
-Fabiyah_Momo