যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ৩৬

0
1775

#যদি_বলি_ভালোবাসি ♥
#PART_36
#FABIYAH_MOMO🍁

রান্নাঘরে চায়ের পানি বসাতে পানি চুলোয় দিয়েছি। তিনকাপ পরিমান পানি, হাতের কাছে চাপাতা, চিনি, গুড়োদুধ নিয়ে দাড়িয়ে আছি। আব্বুকে কল করবো কিনা ভাবতেছি উনাদের সাথে কথার বলার উছিলা খুজতেছি। একটু কথা বলতে চাই। আব্বুর কন্ঠস্বর শুনতে চাই, “মা” ডাকটা প্রাণপণে পেতে চাই। জানি ডাকটা হারিয়ে ফেলেছি। আমি আর ফিরে পাবো না। মুগ্ধ রেস্ট নিচ্ছেন। উনাকে বিরক্ত করলে চলবে না। চায়ের পানি টগবগ করছে, চাপাতা দিয়ে দিলাম। মনিরার উদ্দেশ্য ডেকে বললাম,

–মনু চুলোর চায়ের পানিটা দেখ তো। চুলোর কাছে আয়…

মনিরা ডাক শুনেই চলে এলো। দুপুরে মুগ্ধ ওকে রাক্ষসের মুখোশ পড়ে ভয় দেখিয়েছে তারপর থেকে কুনো হয়ে গেছে। ছোট থাকতে ভূতুড়ে স্পটের শিকার হয়েছিলো মনিরা, সেই ভয়টা এখনো কাটেনি। মুগ্ধ সার্প্রাইজ দিবে ভেবে মুখের উপর ভয়ংকর মুখোশ পড়ে ঢুকে আর মনিরা তা দেখে ভয়ে শেষ।

–তুই যা আমি চা বানায়া খাইতাছি। তোর বলে ঘুমে ধরছে, যা ঘুমা গিয়া।
–যাচ্ছি…মনু? চামচ, মগ তাকের তিন নাম্বার কোনায় রাখা আছে নিয়ে নিস। আমি যাই। চুলোর আচঁ বাড়াবি না!

মনিরা চুলোর ধারে চায়ের জন্য দাড়িয়ে রইলো। আমি হাই তুলে রুমের দিকে যাচ্ছি। মুগ্ধ উপুড় হয়ে কাথা দিয়ে খালি গায়ে ঘুমিয়ে আছেন। গোসল সেরেই নাকে মুখে খাবার গিলে বিছানায় ক্লান্ত শরীরে শুয়ে পড়েছেন। এক পলক উনার দিকে তাকিয়ে জানালার কাছে গেলাম। বৃষ্টির গতি কমেনি। থাই গ্লাস ঝাপসা করে একনাগাড়ে বৃষ্টি পড়ছে। আকাশের অন্ধকারের জন্য দিনের আলো নেই, রুমের মধ্যেও লাইট জ্বালাইনি। অন্ধকার হয়ে আছে রুম। থাইগ্লাসে হাত রাখলাম। ঠান্ডা পরশ। বক্ষপিন্জরে ঠান্ডার অনুভবতায় শিরশির করে উঠলো যেমন। লোমস্তর কাটা দিয়ে ঠান্ডার স্পর্শে জেগে উঠলো। অদ্ভুত আনন্দ। ঠান্ডা পরিবেশে বুক ভরে গরম শ্বাস ছাড়লাম, ঠোটে হাসি চলে আসলো। টেবিলের উপর তিন সারিতে বই সাজানো। দুই সারি উনার, একসারি আমার। বৃষ্টির মেঘলা বর্ষনে বই পড়ার ইচ্ছা জাগলো। তুলে নিলাম “আমার আছে জল” —হুমায়ুন আহমেদ। মুগ্ধের সাইন্স ফ্রিকশন বইয়ের মাঝে রোমান্টিক উপন্যাস বেমানান লাগে। হয়তো একসময় উনি শখের বশে কিনেছেন। বইটা নিয়ে বিছানায় হেলে উনার পিঠের উপর শুলাম। বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় মন দিলাম। উনি নড়েচড়ে উঠলেন। আমি একধ্যানে বই পড়ছি। হঠাৎ ঘুমে ঢুলু কন্ঠে বললেন,

–আমি ঘুমাচ্ছি পাকনি, পিঠের উপর শুলি?
আমি বইয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে আছি। তবুও ছোট করে বললাম….হু।
–পিঠের উপরে কেউ ঘুমায়? সরে আয়।
–উহু
–উহু কি? সরে আয় বলছি।
–আপনার কি খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছে? বিরক্ত বোধ করছেন?
–তুই দেখি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার ধান্দায় আছিস। পিঠের উপরে কেউ ঘুমায় নাকি বোকা! আমার কাছে এসে বুকে ঘুমা।
–আমি বই পড়ছি মুগ্ধ, ঘুমাচ্ছি না। আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ…পড়তে দিন।
–পাঠ্যবই পড়ছিস?
–না, উপন্যাস। “আমার আছে জল”।
–তাহলে তো পিঠে ঘুমানো মানা যায় না!!

আমি অবাক হয়ে বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পিঠ থেকে মাথা সরালাম। পিঠে ঘুমাতে কর্জ দেওয়া লাগে? আমি উঠে বসতেই উনি ঠিক হয়ে শুলেন। চোখ কচলাতে আমার হাত টান দিয়ে বুকের উপর চেপে ধরলেন।

–বইটা একসময় পড়তাম। এখন আর পড়া হয়না…
আমি বুকের উপর মাথা রেখে বই মেলে পড়তে শুরু করলাম। বইয়ে তাকিয়ে বললাম,
–আপনি কিনেছেন? নাকি গিফট ?
–কিনেছিলাম।

দুজনেই চুপ। উনার বুকে মাথা দিয়ে আমি বই পড়ে চলছি, উনি ঘুমিয়েছেন কিনা ধ্যান নেই।হঠাৎ উনি ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠলেন,
–রাফিন ভাইয়ের বউ চলে গিয়েছে জানিস?
আমি ফিক করে হেসে দিয়েও নিজেকে বাধা দিলাম। মনিরা আমাকে খবরটা আগেই কানে দিয়ে দিয়েছে এটা উনাকে জানালে ঝটকা খাবেন। তার চেয়ে বরং চুপ থাকি, উনার কথায় আবারো বিনোদন নেই। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম,

–বউ চলে গেছে? যাক ভালো। অন্যের বউয়ের দিকে বেহায়া নজরে তাকিয়ে থাকলে নিজের বউ তো আর দুধে ধোয়া তুলসি পাতা হবেনা। এটা হবারই কথা। এরপর বলুন কি হয়েছে,

মুগ্ধ হাসলেন। আমি না দেখেও উনার হাসিটা বুঝতে পেলাম। উনি আমার হাত থেকে বইটা নিয়ে বালিশের ওখানে রেখে দিলেন। টেনে নিয়ে বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে কোমল ঠোট ছুয়িয়ে বললেন,

–পাকনা পাকনা কথা না বললে চলে না?
–আমি সে কথার কি বললাম? রাফিন কত্তো বড় বদ পুরুষ আপনি জানেন! আপনাকে কত্ত বলেছি ও একটা ফালতু! ওর সাথে এমন হবে নাতো ভালো মানুষের সাথে এমন হবে??
–নাহ্ তুই ঠিক। আল্লাহ ভালো মানুষের সাথে অবিচার করেনা। কিন্তু বাড়ির মান ইজ্জত নেমে গেছে, রাফিন ভাই সামনে কি করবেন কেউ জানেনা। সারাদিন স্মোক করতে থাকে, রুমের দরজা বন্ধ, সকাল নেই দুপুর নেই, সে ঘরকুনো হয়ে গেছে।
–একদম ঠিক হইছে! একদম ভালো! লুচ্চামির নজর যদি সর্তক করার পরও ঠিক না করে তাহলে বিচার এমনি হওয়া উচিত!
মুগ্ধ হোহো করে হাসলেন। কাথা দিয়ে আমাকে ঢেকে দিয়ে বললেন,
–চোখের পাতা লাগিয়ে একটা লম্বা ঘুম দে। বৃষ্টির দিনে ঘুমের বড় দরকার। ঘুমা প্লিজ।
.
.

অন্ধকার রুমে লাইট জালানো হয়নি। আমি ঘুমের চোখেই হাত নাড়িয়ে বুঝে গেলাম পাকনি এখনো ঘুমের দেশে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, পশ্চিম আকাশে সূর্যের অস্ত হয়ে গেছে। বুক থেকে আস্তে ধীরে ওকে নামিয়ে আমি ঘুম থেকে উঠে বসলাম। বৃষ্টি এখনো হচ্ছে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ফ্রেশ হয়ে গায়ে টিশার্ট পড়ে লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। চেনা আমার রুমটা তিনমাস পর দেখছি, আগের মতোই আছে। টেবিলের পাশে এক গাদা নতুন বই ছাড়া সব আগের মতোই। বইগুলো ওর। একবার তাকালাম। ও ঘুমুচ্ছে। বাচ্চা ছোট্ট মেয়ের মতো কাথা মুড়ে ঘুমিয়ে আছে। চুলের খোপা নষ্ট হয়ে মুখ ঢেকে দিয়েছে, দেখতে অবশ্য দারুন লাগছে!! দরজা খুলে বাইরে গেলাম। শ্যালিকা সাহেবা আমার কি করছে দেখা দরকার। একটু ফাজলামি করলে দোষ কি?? মনিরা রুমে বসে ছেলেদের মতো মোবাইলে গেমস খেলছে। পাশে বসে একটা খোচা মেরে বললাম,

–ও শ্যালিকা, এক কাপ কফি দাও তো প্লিজ, তোমার বান্ধুবী কি যে জ্বালিয়েছে না…মাথা এখনো ভারী হয়ে আছে।

মনিরা আড়চোখে জবাবটা দিল-
–আমার বান্ধুবীরে নিয়া আপনে গীবত করতাছেন ভাই! আমার সামনে চুসকামি চলবো না!!

মনিরার মুখের ওয়ার্ড সর্বদা ইউনিক। ইউনিক মিনস টোটালি না শোনা ওয়ার্ড। “চুসকামি” কি জিনিস বাপদাদার জন্মেও শুনেছি কিনা ডোন্ট নো! এই মূহুর্তে আমিও একটা বোকার মতো তাকিয়ে আছি।

–চুসকামি কি শব্দ শ্যালিকা?এই ওয়ার্ড তো আমি কোনো বইয়ের পাতায় পড়িনি!!
–ভাই সব যে বইয়ের পৃষ্ঠায় ঘাইটা পাইবেন কোথাও বলা আছে? আন্ঞ্চলিক ভাষা। চুসকামি দিয়া কথা লাগায়া ভালো মানুষী হওয়া বোঝায়।
–ওহ্ তোমার মানে ঘুরেফিরে সেই গীবতেই আটকালো? আমি ভালো মানুষী করলাম?
–মাইয়াটা আপনার জন্য রাতের বেলা ঘুমাইতে পারে না, খাওয়াদাওয়া ডাস্টবিনে চড়ছে….আপনে ওর নামে বলতেছেন আমার বান্ধুবী আপনারে জালায়। জাতি এমন ঘোর পাপ মানবো না ভাই।

ঠোট চেপে হাসি ছাড়া উপায় থাকলো না। দুই বান্ধুবী দুই পদের। একজন বরিশালের ডায়নামাইট, আরেকজন ঢাকার ডেভিল। দুই জেলার দুই ভয়ংকর আগুন এক হলে সর্বনাশ! হারামিখোর পাব্লিকের পার নেই। আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিবে, সেই ছাই দিয়ে ওরা পাতিল মাজবে…নিঃসন্দেহে বলা যায়। আমি মনিরাকে আর বিরক্ত করলাম না। কফির জন্য আমি কিচেনে চলে গেলাম। ছোট পাতিলে পানি বসিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলাধুলা দেখছি। সন্ধ্যার টাইমে নিজ নিজ বাসা থেকে বাচ্চাদল বাবা মায়ের সাথে বাইরে বেরিয়েছে। হাতে সবার একটা একটা করে ছাড়া। তবে এখন বৃষ্টি নেই। আজ থেকে দশ-পনের বছর আগে এরকম আমরাও খেলতাম। খেলার সাথী ছিলো পাকনি। এলাকার সব বাচ্চারা একত্র হলে গোল্লাহুট, কাবাডি, চোর-পুলিশ খেলতাম। এখনো হাসি পায় ছোটবেলার স্মৃতিবিজরিত হাসিমাখা দিনগুলোকে ভেবে। কত হেসেখেলে দিন কাটিয়েছি।। পানির ফুটন্তভাব চলে এসেছে, কফির কৌটা থেকে কৌশলে কফি পাউডার নিয়ে ঢেলে দিলাম। হঠাৎ কানে বিড়াল কান্নার আওয়াজ আসলো। আওয়াজটা আমার ভেতর তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে। আমি জানালা দিয়ে উকি দিচ্ছি কোথা হতে কান্নার শব্দ আসছে। একি? বিড়াল কান্নার আওয়াজ আরো বাড়ছে। সেই সাথে আমার মধ্যে ঝড়ের আগত কিছুর আভাস হচ্ছে। খারাপ কিছু হবে?? আগের মতো খারাপ কোনো দূর্ঘটনা? বিড়ালই তো কাদঁছে। তা নিয়ে মনের মধ্যে ভয় কেন হচ্ছে? এতো ভয় হচ্ছে? আমি তো ভয় পাই না।। এ কোন বিপদের ভয়? আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে…ধুকপুক করে চলছে। বুকের বামপাশে হাত দিয়ে বুলাচ্ছি, নিজেকে শান্ত করছি। মুগ্ধ টেক ব্রেথ ডুড, টেক ব্রেথ, লম্বা লম্বা শ্বাস নে।। লম্বা করে শ্বাস ছাড়। হ্যাঁ এইতো, এইতো হয়েছে…ব্রেথ ইন ব্রেথ আউট। ব্রেথ ইন ব্রেথ আউট।……আমি চোখ বন্ধ করে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছি ও ছাড়ছি। পেছন থেকে একজোড়া হাত আমাকে জাপটে ধরলো। চোখ খুলে হাতের উপর তাকাতেই একটা হাত টেনে বামপাশে রাখলাম। এখনো কাপছে যন্ত্রটা।

–আপনার কি হয়েছে? হার্টবিট ফাস্ট কেন?

ও হাতটা সরাতে চাইলো আমি ছাড়লাম না। চেপে ধরে আছি বামপাজরে। কফির দিকে তাকিয়ে দেখি শুকিয়ে তলায় লেগে গিয়েছে, খাওয়ার উপযুক্ততা কম। তিতা লাগবে। চুলার চাবি ঘুরিয়ে অফ করে দিলাম।

–সার্ডেনলি হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেছে, পাকনি।। রিজন.. আই ডোন্ট নো।

ঝট করে আমার হাতের নিচ থেকে ওর হাত সরিয়ে নিলো। আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে কপালে ভাজ ফেলে বলল,

–আপনার বিহেবিয়ার কেমন লাগছে মুগ্ধ, আপনার কি হয়েছে? হঠাৎ আপনি সন্ধ্যাবেলা একা রান্নাঘরে কফি বসিয়ে দাড়িয়ে আছেন। রক্ত সন্ঞ্চালন দ্রুত চলছে, কি হয়েছে বলবেন?
–রিজন শুনলে হাসবি?
–আশ্চর্য! হাসবো কেন? আপনি বলবেন!
–বিড়ালের কান্না শুনছিলাম। মানুষের মতো কান্না। কিন্তু ড্যাম সিউর ওটা বিড়াল ছিলো। আমার বিষয়টা নিয়ে খারাপ লাগছে। আচ্ছা কিছু হবে? বলনা…আমার প্রচণ্ডরূপে খারাপ লাগছে। কি জানি হবে পাকনি। আম্মু বিড়ালের কান্না নিয়ে শঙ্কায় থাকতো। আবার কিছু হবে? আমি কি তোকে হারিয়ে ফেলবো?

ও হুহু করে হেসে দিলো। কৌতুক বলেছি বোধহয় ও হেসে দিলো। আমি কড়া করে তাকালে ও একমূহূর্তে হাসি থামিয়ে দেয়। এরপর বলে-

–আপনিও না!! ডাক্তার মানুষ! তার মুখে কুসংস্কারের কথা মানায়? বিড়াল কাদঁতেই পারে। আমাদের যেমন কষ্ট থাকে ওদেরও থাকে। তাই বলে কাদতে পারবেনা?

আমি এই মেয়েটাকে বোঝাতেই পারছিনা আমার কেমন খারাপ লাগছে। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। কিছু হারিয়ে ফেলবো!কি যেন হারিয়ে ফেলবো! কি হারাবো? আমি বোঝাতেই পারছিনা।। ও আমার বুকে মাথা লুকালো। খুব করে ইচ্ছে করছে ওকে নিজের সাথে এটে দেই। কিছু যে হবে কি যে হবে… আমি টানাটানিতে থাকতে চাইনা! ওকে নিয়ে বাচঁতে চাই! আর অশান্তি চাইনা ! এই ছোট্ট দুনিয়াতে আর বিপদের আশ্রয় চাইনা! ঝড় ঝামেলা পোহানোর মনোবল আমার পক্ষে আর উঠানোর শক্তি নেই। আমি দূর্বল। খুব দূর্বল! ও বুকের বামপাশটায় আলতো এক চুমু দিয়ে দিলো। বামপাশে কাপাকাপি সচল, হৃৎপিন্ডের পেশিতন্তু এখনো স্বাভাবিক কাঠামোতে নেই, ধকধক করে চলছে।

–ভয় কেন পাচ্ছেন? হার্টবিট খুব ফাস্ট চলছে মুগ্ধ, শান্ত হন প্লিজ। কুসংস্কার মানবেন না। এগুলো পুরোনো যুগের রীতিনীতি ছিলো, শান্ত হন।

শ্বাস আমার ঘন হয়ে আসছে। ভয় পাচ্ছিনা কিন্তু ভয়াবহ হচ্ছে। ওকে যেভাবে চেপে ধরেছি শ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম ওর। কিন্তু আমার অবস্থা দেখে ওকিছু বলছেনা। ও পিঠে হাত ছুয়িয়ে দিতেই বললো,

–মুগ্ধ আপনি বিনা কারনে ভয় পাচ্ছেন। কিচ্ছু হবেনা। দেখি আসুন তো, আপনার এই রান্নাঘরে থাকা লাগবে না। রুমে আসুন। আমি মনুকে বলে দিচ্ছি গরম এককাপ কফি করে দিতে।

মুগ্ধকে টেনে রুমে নিয়ে গেল মম। পথিমধ্যে মনিরার রুমে উকিঁ দিয়ে বলল- “মনু তোর ভাইয়ের জন্য কফি কর। উনার শরীরটা ভালো না। ওই বয়ড়া! শুনছোস! ফোন রাখিস, কফি না করলে আরেক লাত্থি কোন জায়গায় পড়বো বুঝিস!”। মনিরা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল- ” হ বইন যাইতাছি খাড়া।। লাত্থালাত্থি করা লাগবো না ওইটা ভাইয়ের সাথেই করিস!!”। মম মুগ্ধের কাছে চলে গেল। মনিরা কফি বানানোর কথা শুনে হাই তুলতে লাগল। ফোন বাবাজির চার্জ শেষ, চার্জের পিনে ফোন ঢুকিয়ে মনিরা রান্নাঘরে গেল। মনেমনে বলল, ভাই একটু আগে তোরে নিয়া চুসকামি করতে আইছিলো, নাইলে তখনই চাকফি বানায়া খাওয়াইতাম। শালিকার কাছে দুলাভাই পল্টি মারতে আইছিলো!! দিছি ইজ্জত! হা হা হা!!

–আচ্ছা আপনার হয়েছে কি বলুন তো? কি নিয়ে টেনশন আপনার? আমি সুস্থ সবল দেহে দাড়িয়ে আছি আপনি আমাকে কি নিয়ে বেহুদা টেনশন করছেন।। মুগ্ধ! আমি আপনার সাথে কথা বলছি! তাকান আমার দিকে!

উনি বিছানায় বসে ফ্লোরের দিকে চোখ নামিয়ে তাকিয়ে আছেন। আমায় কথা কান অবধি পৌছালো কিনা বুঝলাম না। আমি ঝাঝ গলায় বললাম-

–আপনি তাকাবেন! কি হয়েছে আপনার! আশ্চর্য মুগ্ধ! আপনি একজন ওয়েল প্রোফেট ডক্টর কিসের বিড়াল কান্না নিয়ে টেনশন করছেন! আপনি কি পাগল! কি হলো কি!! আমার তো মাথাই কাজ করছেনা!

উনি মাথা তুলে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন। চোখের গভীরে অতলস্পর্শী ভয়। নতুন শঙ্কা জড়ানো কি যেন ভয়। এ ভয় তো আগে কখনো দেখিনি। উনি কেন ভয় পাবেন? বড় জোয়ান ছেলের মনে ভয়ের আপোষ কত বিশ্রী লাগে উনি জানেন না? ছেলেদের ভয় পাওয়া যায় নাকি!! কঠিন তক্তাবিশিষ্ট পাথর ওরা। ভয় কেন হবে?এই মুগ্ধকে চেনা যাচ্ছে না। ভয়ে কুপোকাত হওয়া ছেলে উনি না। রুমের থাইগ্লাস একটু ঠেলে দিলাম। ঠান্ডা হওয়া আসছে। ফ্যান অফ করে বিছানায় বসলাম। উনার মাথাটা নিয়ে কোলে রেখে দিলাম। কোলে মাথা দিয়ে উনি চোখ বন্ধ করে আছেন। আমি চুলগুলো আলতো করে টেনে দিচ্ছি। হঠাৎ করে প্রানবন্ত একটা ছেলে চুপ হয়ে গেছে…..চরম ভাবাচ্ছে। হাসির ঝিলিক ঠোটে নেই, মুখে আধার ছায়া ভয়। কি নিয়ে ভয় আমাকে জানানো প্রয়োজনবোধ করেননি। উনি নিজের মধ্যে কারনসহ পুরো বিষয়টা জব্দ করে রেখেছেন। ভারী পল্লববিশিষ্ট চোখের পাপড়িগুলো হাতের আঙ্গুলে ছুয়িয়ে দিলাম। উনি স্থির হয়ে আছেন। চোখ অফ।। জানালা দিয়ে চোখ ফেরালাম বৃষ্টিময় কালো আকাশের দিকে। কিছু সময় পর উনি বলে উঠলেন-

— ভয় করছে।

আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, আমার ডানহাতটা উনি দুহাতের ভাজে মিলিয়ে ধরেছেন। চুলে ডুবানো হাতটা উনার গালে রেখে বলে উঠলাম-

–কি নিয়ে ভয়? ভয় কেন পাচ্ছেন? আপনার ভয় পাওয়া মানায়?
চোখটা বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন। আর বললেন-
–জানি না,

“জানিনা” বলতেই কোথায় যেন বাধা পেলো। উনি চুপ করে রইলেন। গালটা চেপে ঠোট ছুয়িয়ে দিলাম। উনি চোখ বন্ধ করে চুপটি হয়ে স্থির থাকলেন। হঠাৎ ফোন আমার বাজতে লাগল। হাত বাড়িয়ে বালিশের কাছ থেকে ফোন নিতে দেখি ভাইয়া কল করেছেন। আমি রিসিভ করলাম।

–হ্যা ভাই বলো, কি মনে করে ফোন করলা?
–মুগ্ধ আসছে? ও বাসায়?
–তুমি বাসায় আসো, দেখে যাও আসছে কিনা।
–তুই বল, ও বাসায়?
–ভাই তুমি এভাবে বলছো কেন?
— ওরে বল তোকে নিয়া এই মূহুর্তে আমাদের বাসায় আসতে!
— ভাই কিছু হইছে? তুমি এভাবে বলতেছো কেন?
–সময় কম! তুই ওরে বল বের হইতে! আমি অফিস থেকে রওনা দিতেছি!
–তুমি কিছু বলবা ভাই? ভাই! ফোন কেটো না..হ্যালো..হ্যালো ভাই?

-চলবে

-Fabiyah_Momo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here