#যদি_বলি_ভালোবাসি♥
#PART_37
#FABIYAH_MOMO🍁
আবির ভাইয়া অস্থিরতার সাথে কেন ওখানে যেতে বলছে কোনো বুঝার উপায় নেই। ভাই কখনো এভাবে হুট করে আব্বুর বাসায় ডাকবে না। মুগ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, ফোন কান থেকে সরিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিলাম, কিন্তু কাজ হলো না। মুগ্ধ ধরে ফেললেন এবং বললেন-
–আমি তোকে কোত্থাও নিয়ে যাচ্ছিনা। আমার বাইরে যেতে ইচ্ছা নেই। আবিরকে টেক্সটে বলে দে, আমরা যাচ্ছিনা।
–কেন? কারন কি?
–আমি বলেছি ব্যস কথা এদিকেই শেষ। আমি যাবো না। তুইও যাবিনা।
–আপনি উদ্ভট আচরন করছেন কেন? বিড়াল কান্না শুনে আপনি বেকে বসেছেন।। মুগ্ধ! আপনি সাইন্স ফিল্ডের মানুষ! ফাওল কথায় কান দিয়ে সেখানে যাওয়ার বরবাদ কেন করছেন!
–আমার কথা কখনো ভালোভাবে শুনবি? না সিরিয়াসলি! আমার কথাটা ত্যাড়ামি না করে সহজভাবে কানে নেওয়া যায় না? আমি কি ফাউল?
–আল্লাহ! আমি ফাউলের কি বললাম? আমি আপনাকে ফাউল ইন্ডিকেট করে কখন শুনালাম?
–চুপ! কথা শুনবি নাকি শুনবি না! জাস্ট এ্যান্সার ইট!
মুগ্ধ কেমন আজগুবি ব্যবহার শুরু করেছেন আমি কোনো খাপ খাওয়াতে পারছিনা। আচ্ছা বিড়াল কান্না দিয়ে অশুভ কিছু বোঝাচ্ছেন? কেমন কথা এটা! এইসব কথা এইযুগে খাটে? মানুষ হাসবে ! মুগ্ধ কোল থেকে মাথা উঠিয়ে জেদ ধরে বসলেন যাবেন না মানে স্ট্রিকলি উনি যাবেন না! এই বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়ে গেল একদফা। উনিও কথা শোনাচ্ছেন আমিও পাল্টা কথার জবাব দিচ্ছি। ফলাফল হলো এই, ঝগড়ায় পরিণত হলো। মুখ কালো হলো।
–আপনার এই ফালতু রাস্তার ছেলের মতো ব্যবহার আমার কখনো সহ্য না! সেদিনও রূপার অভিনয়ে গলে চড় দিয়েছিলেন আপনি, ভুলিনি! আমাকে এত্তো অপমান করেছেন তবুও কিচ্ছু বলিনি! আপনি সব সময় নিজেরটা খাটান! কি পেয়েছেন আমায়! সস্তা বাজারজাত সামগ্রী? যখন ইচ্ছে যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করবেন এবং ব্যবহার শেষে ফেলে দিবেন! কি পেয়েছেন টাকি !
উনি রাগে গজগজ করছেন। কপালের নীল রগগুলো ফুলে উঠেছে। ঠাসস করে টেবিলের উপর থেকে কাচের শোপিসটা আছাড় মারলেন। ঝংকার বাজিয়ে শোপিসটা খন্ড বিখন্ড হয়ে গেল। রাগ তাতেও উনার কমলো না। কাচেরঁ গ্লাসটা ছুড়ে মারলেন। ফ্লোরে ছিটকে গুড়ো হলো। টেবিল ল্যাম্প, উনার হাতের ঘড়ি একেএকে সব আছড়ে ফেললেন। আমি উনার কর্মকাণ্ড দেখে চরম পরিমাণে রেগে আছি, খারাপ কিছু আমিও যেন করে না ফেলি তাই দরজা খুলে হনহন করে বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে যেতেই মনিরা দাড়ালো। কৌতুহল দৃষ্টিতে বহু রকমের প্রশ্ন করে বসলো, দোস্ত কি হইছে, ঝগড়া করতেছিস কেন, ভাঙচুর কেন? একটাও উত্তর না দিয়ে মনিরার রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দেই। মনিরা দরজায় নক করতে লাগল। খুলি নি। মাথা আমার ধরে গেছে, রাগে ফুসফুস করছি, নিজেকে রাগের আগ্নেয়গিরির মসিবত থেকে দূর করছি। ওয়াশরুমে গিয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগলাম। নিজেকে শান্ত করা বড্ড প্রয়োজন, উনি পাগলের মতো কাজ করছেন। পুরো নস্টালজিক পাগল! ভাই জরুরী কারনে যেতে বলেছে উনি কুসংস্কারের তাগিদে কোথাও যাবেন না বলে দিলেন। এগুলো সুস্থ ব্যক্তির কাজ? উনি পাগল! আস্তা পাগল একটা!
ভিজা চুল বালিশে ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছি। মাথা এখনো ধরে আছে। পাশের রুম থেকে জিনিসপত্র ভাঙার শব্দ আধঘন্টা আগে বন্ধ হয়েছে, এতোক্ষন প্রচুর ভাঙ্গচুর হয়েছে। আশেপাশের মানুষ কি ভাববে, কেমন ছি ছি করবে সেটা তো গীবতের বাহানায় শুনতে পাবো। আমাদের মধ্যে ঝামেলা কখনো হয়নি, হলেও সেটা মিটে যেতো, কিন্তু আজ উনি যেটা করলেন আমি দুইদিন কথা না বললে তখন আমার অর্ন্তরাত্মা ঠান্ডা হবে। ফালতু লোকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। রাত এখন নয়টা পন্ঞ্চান্ন। একটুপর দশটা বাজবে। এখন আর কোনো বিকট শব্দের আনাগোনা নেই। শব্দহীন। থেমে থেমে মনিরার গলার আওয়াজ পাচ্ছি, ও পরিস্থিতি বাতলে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে ঘন্টা দুই আরো পেরুলো, ঘড়িতে বাজলো বারোটা। চোখে ঘুম নেই। রুমে ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে মাথার নিচে দুহাত দিয়ে শুয়ে আছি। অবেলায় মাথায় পানি ঢালাতে ঠান্ডা বসে গেছে, কিছু করার নেই ঔষধ ওই রুমে রাখা। একটুপর দরজায় কেউ নক করলো। বিছানায় শুয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
–কে? মনু তুই? প্লিজ চলে যা। আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না!
জবাব দিলো না। কিন্তু নক করে গেলো। এটা মুগ্ধ! মনিরা হলে ঝট করে ফটাফট জবাব দিয়ে দিতো, কিন্তু মনিরা না মুগ্ধ নক করছেন। দরজার নব্ ঘোরালো, খুলে ভেতরে আসতে পারলেন না। দরজা ভেতর থেকে লক করেছি। ওকাত হয়ে শুয়ে পড়লাম। কোনো কথা বলবো না ফালতু লোক! এখন কানে তাক লাগিয়ে দরজায় নক করছে। এক স্পিডে নক করেই যাচ্ছে। ঊফ! আরামে একটু শুবো! নসিবে আমার শান্তিটুকু এই ফালতু নষ্টালজিক মানুষের জন্য নেই। বাধ্য হয়ে দরজা খুলতে গেলাম।নাহলে শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা নাক ছিটকে তামাশা করবে। দরজা খুলে দিলাম। হাত ভাজ করে উনার দিকে শক্ত করে তাকিয়ে আছি। উনি একপলক আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন। রাগীগলায় বললাম,
–ফালতু লোকের চেহারা দেখতেও ঘেন্না লাগে আমার! চলে যান! শান্তি দিন একটু!
উনি অপরাধীর মতো মাথা ঝুকিয়ে নিলেন। আসামী নিজে এসেছে জেলখানায় ধরা দিতে! কিন্তু আমার কোনো শাস্তি দেওয়ার মুড নেই। বিদায় করে বিছানায় একটু গা এলিয়ে ঘুমাতে চাই। হঠাৎ উনি জাপটে ধরলেন। ঠেলতে ঠেলতে রুমের ভেতরে ঢুকে পা ঠকে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমার কানেকানে বললেন-
–ফালতু লোককে ঘেন্না করলেও আদর করতে হবে। এই ফালতু লোকের কেউ নেই। আমার ভুল হয়েছে, তোকে রাগের মাথায় ওসব কথা কিভাবে বলে ফেলবো, বুঝতে পারিনি। প্লিজ আমার ভুল হয়েছে।
–আমাকে গলানোর চেষ্টা করবেন না! ছাড়ুন আমি আপনার কথা শুনতে চাইনা।
–শুনতে হবে। জোর করে বিয়ে করেছিস এখন শুনবি না কেন? আরো করে বেশি শুনবি!
উনি ছেড়ে দিলেন। গালে চুমু একেঁ দিলেন। আমার আধো ভেজা চুলগুলাকে হাতের আঙ্গুলে ঝেড়ে দিতে বললেন,
–মাথাব্যাথা করছে তোর? রাতের বেলা চুল ভিজালে শুকাবে? ঠান্ডা লাগবে না!!
আমি উনার হাতটা সরিয়ে সজোরে এক ধাক্কা দিলাম। উনি দূরে সরে গেলেন। তর্জনী উঠিয়ে আমি রাগ নিয়ে বলে উঠি-
–আহলাদ দেখাতে আসবেন না! আপনি বিদায় হোন এই রুম থেকে! বের হোন বলছি! খবরদার! আমাকে টাচ করতে আসছেন তো!
উনি হাসতে লাগলেন। ঠোট কুচকে হাসি। কোমরে হাত রেখে উনি মাথাটা কিছু বেকিয়ে হাসি দিয়ে বললেন,
–রাগলে কিউট লাগে কেন? কেন কেন? আচ্ছা আমি তো ফালতু লোক? ঘেন্না লাগে ঠিক না? চলে যাবো? বাইরে চলে যাই?
–সেটা আপনার ব্যাপার! যাবেন নাকি মরবেন আমাকে বলতে আসবেন না!
–ওহ্ হ্যাঁ ঠিক তো! আচ্ছা মরে যাই? সিরিয়াসলি মরবো? তুই যদি এক্ষুনি হ্যাঁ বলিস আমি এক্ষুনি মরতে যাবো। যাবো?
–মরে যান! চেহারা দেখাতে আসবেন না! ফালতু বিশ্রী চেহারা আমি দেখতে চাই না!
–আমার ফেস বিশ্রী?
–আকাশের মতো বিশ্রী! চলে যান বলছি!
–তাহলে এমন বাজে ফেস নিয়ে তোর সামনে থাকা যায় না। তোর জন্য সুন্দর ফেসওয়ালা দরকার। আমি মরেই যাই। আমি তো “ফালতু” দেখতে, “ঘেন্না” লাগে, “আহলাদ দেখাই….যোগ্য না ঠিক না? তোর সামনে এবিলিটি-ই নেই আমার, থেকে লাভ আছে? সরি চলে যাচ্ছি।
পাগলের মতো কথাগুলো বলছিলেন আর এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন। দরজার কাছে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন। উনার মাথা ঠিক নেই, মাথায় কুসংস্কারের কথা ঢুকিয়ে কি আবোলতাবোল বলছেন… আল্লাহ জানেন। সত্যি সত্যিই খারাপ অঘটন ঘটিয়ে ফেলে নাকি উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম-
–থামুন! এক মিনিট!
উনি থামলেন। কাছে গিয়ে কপালে ও গালে হাত রেখে দেখলাম জ্বরটর এসেছে কিনা। নাহ্ সব নরমাল। তার মানে মাথায় ভয়ের কুচক্রী পাকিয়েছেন। হাতটা ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় বসালাম। উনি মাথা নামিয়ে চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে করেছেন। থুতনি ধরে আমার দিকে করলাম।
–মাথার তাড় কি ঢিলে হয়ে গেছে? পাগলের মতো যা তা বলছেন কেন?
আমার দিকে ড্যাবড্যাবে তাকিয়ে আছেন উনি। পরক্ষনে বললেন,
–ঘুমাবো।
কাছে আসলেন। মাথাটা আমার কাধে ছেড়ে দিয়ে টেনে নিয়ে আমাকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়লেন। উনি কেমন উটকো ব্যবহার করছেন, মন মানছেনা কিছু। কি নিয়ে ভয় পাবেন? একবার বললে কি চলতো না? উনি চোখ দুটো বন্ধ করে আছেন। ঘুমাননি জানি। কপালে, গালে, চুলের পরশে চুমু দিয়ে দিলাম। চোখ খুলে তাকালেন,
–সাজেক যাওয়া ক্যানসেল আমরা সাজেক যাবো না।
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–কেন! যাওয়া কেন ক্যানসেল হলো?
–পরে যাবো প্লিজ এখন না।
–আচ্ছা বাদ। ঘুমান।
–আমি আকাশের মতো বিশ্রী দেখতে পাকনি?
–ছি কার সাথে তুলনা করছেন? আকাশ কালু! বদনজরওয়ালা পুরুষ! ও ভালো না!
–কারোর মেবি কিছু হবে। আমার মন বলছে নেগেটিভ কিছু ফেস করতে হবে।
–বিড়ালের কান্না মাথা থেকে ফেলবেন! আমি কিন্তু আপনাকে কুটিকুটি করে ফেলবো!
–ঝগড়ার সময় তোকে কিউট লাগে!! রাগে নাক ফুলালে আরো বেশি সুন্দর লাগে কেন? রাগলে সুন্দর দেখায় কোথায় বলা আছে?
–জানি না যে…আচ্ছা রাগের মাথায় আমাকে অতগুলো কথা শুনালেন কেন? সবসময় আপনি আমায় কথা শুনান!
–ঝগড়া না হলে মজা আছে? সম্পর্কে একঘেয়েমি ভাব লাগে। মাঝেমাঝে ঝগড়া করবো, কথা কাটাকাটি করবো, সব করবো, বাট রাত হলে একসাথেই ঘুমাবো যতকিছু হোক।
–আপনার সাথে তর্ক করে পারা যায়না বুঝলেন? আপনি মারাত্মক ঝারি মারতে পারেন।
সেদিন রাতে আমাদের সাজেক যাওয়া বাদ পড়েছে ঠিক, কিন্তু এক হওয়াটা বাদ পড়েনি। ভালোবাসার দোটানায় স্নিগ্ধ পরশে উনি ভরিয়ে দিয়েছিলেন।মনোমুগ্ধকর মূহুর্ত!!
-চলবে
-FABIYAH_MOMO🍁