#যে_শ্রাবণে_এলে_তুমি💕💕
#পর্ব:31
#লেখনিতে:মৌসুমী
রাত বাড়ার সাথে সাথে নিরার শরীরের তাপটাও বাড়ছে হা হা করে।সেই তাপে ফারদিনের বুকটাও পুড়ে যাচ্ছে।শরীরের ব্যাথায় গুঙাচ্ছে মেয়েটা।চোখ আর ঠোঁটগুলো রক্ত জবার মত লাল হয়ে আছে।ফারদিন আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে তার নিরাকে।অনেক্ষণ হয়েছে ঔষুধ খাইয়েছে তবুও জ্বরটা কমছেনা।মনে হচ্ছে আরো বেড়ে গেছে জ্বরটা।নিশ্বাস থেকে আগুন বের হচ্ছে।ফারদিন মনে মনে নিজেকে নিজেই দোষি ভাবছে,তার জন্য ই নিরার এই অবস্থা।কাল রাতে রাগের মাথায় ওভাবে না কামড়ে হয়তো এই জ্বরটা হতোনা।আজ সারাদিন ও সেভাবে মেয়েটার খবর রাখেনি।রাখলে হয়তো আগেই টের পেতো ।
অনেক্ষণ একিভাবে থাকার ফলে ফারদিনের হাতটা ব্যাথা করছে।নিরার মাথাটা বালিশে রেখে এবার উঠে বসলো।নিরার শরীরের উত্তাপটা এখন অনেকটাই কমেছে।নিশ্বাসটাও স্বাভাবিক তাপমাত্রার মনে হচ্ছে।গোঙানিটাও নেই এখন।ঘুমাচ্ছে মেয়েটা।ফারদিন যখন নিরার পাশে শুয়ে নিরাকে জড়িয়ে ধরলো তখন খুব অবাক হয়ে গেছিলো কারণ নিরা গাঁ তখন জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিলো।নিরা সেই জ্বর নিয়েও ফারদিনকে বার বার দূরে ঠেলে দিচ্ছিলো আর বলছিলো,আমাকে ধরবেননা।আমি তো সস্তা মেয়ে, আমাকে একদম ধরবেননা বলে হু হু করে কাঁদছিলো ।কাঁদতে কাঁদতেই পড়ে চুপ হয়ে গেলো।জ্বরে তাকে তখন একদম কাবু করে ফেলেছিলো।ফারদিন তখন কোলে করে খাটের ওপর নিয়ে এসে শুয়িয়ে দেয় আর উৎসের কাছ থেকে ঔষুধ এনে সেটা খাইয়ে দেয়।
রক্ত জবা ফুলের মত লাল টকটকে ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ফারদিন আনমনেই বলে উঠলো,,,
ওগো রুপসি,তুমি জানোকি?
তোমার ওই ঠোঁটের প্রেমে,
পড়েছি আমি সেই শ্রাবণেই।
বৃষ্টিমাখা সন্ধ্যেতে তোমার ওই আখিঁতে ,
আটকে গেছি আমি খুব যতনেই।
ওগো রুপসি ,তুমি জানোকি?
নিরার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এবার তন্দ্ররাও ভিড় জমালো ফারদিনের ওই চোখে।ঘুমের কাছে হার মেনে শুয়ে পড়লো সে নিরাকে নিজের বাহুতে বন্দি করে।
বর্ষাকাল এবারের মত যাওয়ার জন্য পায়তারা জুরেছে।আসছে শরৎকাল।শরৎকে স্বাগত জানাতে আকাশ থেকে পড়ছে বৃষ্টির ধারা।সকাল থেকে ঝমঝম করে পড়ছে তো পড়ছেই থামার অবকাশ নেই।দক্ষিণের জানালার ধারে বসে বসে বৃষ্টিটাকে মনভরে উপভোগ করছে নিরা আর ফারদিন।কেউ কোন কথা বলছেনা।মাঝেমাঝে চোখাচোখি হচ্ছে এই যা।
নিরার এখন জ্বর নেই বললেই চলে।সকালের নাস্তার পর ফারদিন জ্বর করে আরো একবার ঔষুধ খাইয়ে দিয়েছে।তবে শরীরটা হালকা ম্যাচম্যাচ করছে।নিরার মন বলছে,ইস এখন একটু যদি ভিজা যেতো এই বৃষ্টিতে তাহলে ম্যাচম্যাচানি ভাবটা হয়তো কেটেই যেতো।কিন্তু সেটা শুধু কল্পনাতেই সম্ভব বাস্তবে নয়।তার মা তো তাকে কোনমতেই ভিজতে দিবেনা।
ফারদিন নিরার ভাবনার মাঝেই জানালার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে করতেই বললো,
-আমি আজ রাতে আসবোনা।তুমি সাবধানে থেকো আর ঔষুধগুলো ঠিকমত খেয়ো।
নিরা হাতটা জানালার বাইরে দিয়ে বৃষ্টির ফোটা নিয়ে খেলতে খেলতেই বললো,
-কখন বের হবেন?
-বিকেলে।
-বৃষ্টি যদি থাকে তবে?
-উপায় নাই যেতেই হবে।
-ওহ।তারপর আবার দুজনেই চুপ।রাস্তার ওপাশে ফুটপাত ধরে অনেকেই হাতা মাথায় হেঁটে চলেছে।হয়তো তাদের খুব জরুরি কাজ আছে তাই এই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছুটছে।
”
”
ফজিলা তোমার কি মনে পড়ে আমাদের প্রথম দিনের কথা?তোমাকে যেদিন তোমাদের বাড়িতে দেখতে গেলাম সেদিন তুমি মস্তবড় ঘোমটা টেনে বসেছিলে আমার সামনে একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ে।
-তা আর পড়বেনা মনে।
-জানোতো আমার প্রিয় রং নীল হয়ায় তোমাকে নীল রঙের শাড়ীতে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ।বন্ধু রশিদের ধাক্কায় আমার হুশ ফিরেছিলো।
-তা আর বলতে।আমার চাচাতো বোনেরা তা নিয়ে আমাকে সেদিন অনেক ক্ষেপিয়েছিলো।হি হি।
জামান সাহেব মুগ্ধ চোখে ফজিলা বেগমের হাসি দেখছে।কে বলবে এদের বয়স হয়েছে।এখুনো তারা যতটা রোমান্টিক এখনকার ছেলে-মেয়েরাও এতটা রোমান্টিক না।ছেলেরা,ছেলের বৌয়েরা কেউ নেই বাড়িতে,বক্কর নাক ডেকে তার ঘরে ঘুমাচ্ছে আর এদিকে দুই বুড়ো,বুড়ি বারান্দায় পাশাপাশি বসে বৃষ্টিবিলাস করছে আর আগের স্মৃতিগুলোকে উল্টিয়ে দেখছে।
বৃষ্টির কারণে বক্কর ও বাড়ি যেতে পেরেছিলোনা নাস্তা আনতে।ফজিলা বেগম নিজেই কোনরকম বানিয়েছেন।নিহা এ বাড়িতে বৌ হয়ে আসার পর থেকে ফজিলা বেগমকে কোন কাজ ই করতে দিতোনা।সে কারণে এখন রান্না করতে তার আর মোটেও ইচ্ছে করে না।নিহা বাপের বাড়ি বেড়াতছ গেলেও সেখান থেকেই বেশিরভাগ সময় খাবার পাঠিয়ে দেয় ।মাহফুজা বেগম ফোন করে বলেছেন দুপুরের খাবার যে করেই হোক তিনিই পাঠাবেন তাই নিশ্চিন্তে জামান সাহেব আর ফজিলা বেগম হাতে হাত রেখে বসে আছে।
”
”
নিহা এ বাড়িতে আসার পর থেকেই দেখছে উৎস ফোন নিয়েই বেশিরভাগ সময় পড়ে থাকছে।এবার যে ইন্টার পরিক্ষা দিবে তার পড়ার কোন লক্ষণ ই নেই।সারাক্ষণ ফোন আর ফোন।
এখন যে নিহা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার সেদিকে কোন লক্ষ্য ই নেই।সে একধ্যানে মোবাইল টিপছে।নিহা হঠাৎ উৎসর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো।
উৎস বললো,
-আপু দাও ফোনটা,,
-তোর পড়াশোনা নেই?সামনে যে ইন্টার পরিক্ষা তোর সে খেয়াল আছে?
-আপু পড়িতো,সারারাত পড়ি,,
-সারারাত পড়িস নাকি এই মেয়ের সাথে চ্যাট করিস?ফোনটা উৎসর চোখের সামনে তুলে ধরলো নিহা।
উৎস কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।মাথা চুলকাচ্ছে সে অনবরত।এভাবে বোনের কাছে ধরা পড়ে যাবে বুঝেনি।
-কে এই মেয়ে?
-আপু আম্মুকে বলোনা এসব,
-আগে বল?কে এই মেয়েটা?
-ওর নাম ছায়রা বানু।
-কিহ,,কি নাম বললি?
উৎস মিটিমিটি হাসছে।
-একদম হাসবিনা,বল কি নাম,এত সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ের নাম ছায়রা বানু আমি মানতে পারছিনা।
-না মানলে না মানো,ওর নাম ছায়রা বানুই।আমি ওকে ওই নামেই বেশি ডাকি।
-আমাকে রাগাসনা উৎস ,বল না হলে আম্মাকে ডাকছি আমি,,,আম্ম… বলিসনা আপু আমি বলছি.
উৎস নিহার মুখটা তাড়াতাড়ি চেপে ধরেছে।নিহা উম উম করছে শুধু আর চোখের ইশারায় উৎসকে মুখ থেকে হাত সরাতে বলছে।
কি ব্যাপার শালাবাবু,আমার বৌকে কি মারার চেষ্টা করছো নাকি?ফয়েজের কথা কানে যেতেই সেদিকে তাকিয়ে উৎস নিহার মুখটা ছাড়লো।ছাড়া পেয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ দম নিয়েই দমাদম উৎসর পিঠে তাল ফেলতে শুরু করলো,মানে গদাম গদাম করে মারতে।
চলবে….