রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ। [১০]

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১০]

দিয়া ইমাদের ফরেন্সিক রিপোর্ট এসেগেছে। দুজনেই ড্রা*গ নিতো। নিয়মিত ড্রা*গ নিতো তারা। তবে মৃত্যুর দিন ইমাদ কোন প্রকার ড্রা*গ নেয়নি। দিয়ার শরীরেরও সামন্য পরিমান পেয়েছে। তবে এইটুকু ড্রা*গস কারো মৃত্যর কারন হতে পারেনা। যেহেতু তারা দুজনের ড্রা*গ এডিক্টেট তাই তাদের মৃত্যুটা চাপা পরে গেলো কলেজে।তবে ভূমি সে এখনো ভূলতে পারেনি সেদিনের ঘটনা। চোখ বন্ধকরলে এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠে দিয়া ইমাদের মর্মান্তিক ঘটনা। ছয়দিন পর আজ কলেজে যাচ্ছে ভূমি। আসলে ভূমির কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না, দিয়া নেই একা একা কলেজে কার ভালোলাগে। তবে আরাভের সাথে তার কথা বলতে হবে। সামনা সামনি কথা বলবে ভূমি।

________________
ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর রফিক মির্জা সকাল সকাল দিগন্তকে ডেকে পাঠিয়েছে। জরুলি তলফ না হলে তিনি এত ইমারজেন্সি ডেকে পাঠান না তাই দিগন্ত ডাকার সাথে সাথে এসে হাজির। রফিক মির্জার সামনে বসে একটা ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে দিগন্ত। রফিক মির্জার দৃষ্টি উপরে ঘুর্নায়মান পাখার দিকে। রুমে এসি থাকতে পাখার কি খুব দরকার। এই অপচয় টুকু কি না করলেই নয়। পাখার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে কিছু ভেবে চলেছেন তিনি। দিগন্তের ডাকে হুস ফিরে তার।
” স্যার, কেইসটা খুব জটিল। কোন প্রমান ছাড়া শুধুমাত্র সন্দেহের বসে এমন একটা পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে।”

” প্রমান-ই বের করতে হবে। যে এই কাজগুলো করছে সে ধরা ছুয়ার বাইরে।”

” কিন্তু, পরে যদি আমাদের সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হয়।”

” হবে না। ভুল প্রমাণিত হবে না।” পুলিশ ফিফটি পারসেন্ট স্টুডেন্টদের ব্লাড টেষ্ট করিয়েছে তাদের মধ্যে থার্টি পারসেন্ট ডা*গএডেক্ট।বিশেষ করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ার, বায়োলজি ক্যামেস্ট্রি এন্ড ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের ছেলেগুলো। তুমি বুঝতে পারছো দিগন্ত, ওই কলেজে ড্রা*গ ডিলার না থাকলে এমনটা হতো না।তাছাড়া ওই কলেজের একটা শিক্ষককে দেড় বছর আগে ড্রা*গ এডিক্টেটের কারনে বহিষ্কার করা হয়েছিল।শুনেছি সে আবার ওই কলেজে জয়েন করেছে। আমাদের মেইন টার্গেট হবে ওই শিক্ষকটা, জুহায়িন আহমেদ আরাভ।”

“স্যার কি নাম বললেন!”

“জুহানিয় আহমেদ আরাভ। তারপর ড্রয়ার থেকে একটা ছবি বের করে দিগন্তের হাতে দেয়। ছবি দেখে দিগন্ত হতবাগ। আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকে ছবির দিকে। মনে মনে বলে উঠে,

” আরাভ। এমন সুন্দর মনের অধীকারি কখনো এটা করতে পারে। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি আরাভ। আমার কাকিমনি মানুষ চিনতে ভুল করতে পারে না। আর ভূমি ভুল মানুষকে ভালোবাসতে পারেনা। আমার বিশ্বাসটা যেন জিতে যার আর স্যারের সন্দেহ হেরে যাক।”

দিগন্তকে চুপকরে থাকতে দেখে রফিক মির্জা আবার বললেন,
” পুলিশ এই কেইসের তদন্ত করবে না। আড়ালে থেকে তদন্ত করতে হবে। পুলিশ পিছিয়ে গেছে। তাই আমাদের করতে হবে।”

” ফিল্ড ওয়ার্ক করতে হবে?”

” হ্যাঁ, আমি জানি তুমি পারবে। যাদি না পরো তাহলে অন্য কাউকে,,,,

” নো স্যার, আমি এই কাজটা করতে চাই। কখন যেতে হবে।”

” আজই যাও। আমি আর সময় নষ্ট করতে চাইনা।”

দিগন্ত রফিক মির্জাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। মনটা অস্থির করছে। এই অস্থিরতার কারন খুঁজে পেল না সে। বাকি সব কেইসের মতো এটাও সে তদন্ত করবে তাহলে এত অস্থিরতা কেন? নাকি আবার ভূমির মুখোমুখি হওয়ার ভয়। গাড়ির স্টিয়ারিং চেপে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো দিগন্ত। ভূমিকে নিয়ে আর ভাববে না। ওকে নিয়ে ভাবার কোন অধীকার নেই তার। চোখ বন্ধকরে সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর কল করলো মায়ের নাম্বারে,,,

” হ্যালো মা,,,,

” হ্যারে খোকা, কেমন আছিস? মনে পরলো মায়ের কথা?”

” আমি ভালোআছি মা। তুমি ভালো আছতো?”

” হ্যা।”

” আচ্ছা মা শুননা, তোমায় কিছু বলার ছিলো।”

” হ্যা বল কি বলবি?”

” আসলে বলছি যে, মা,, মা তুমি না মেয়ে দেখতে চেয়েছো আমার বিয়ের জন্যে। এবার দেখতে শুরু করো। বিয়ে করবো।”

” এই খোকা তোর মাথা ঠিক আছে।”

” হ্যা, মা আমি ঠিক আছি। তুমি মেয়ে দেখতে থাকো। আমার হাতে একটা কাজ আছে এটা শেষ করেই বাড়ি আসবো বুঝলে। এবার রাখি কেমন, ভালো থাকো।”

ওপাশ থেকে কিছু বলছিলো তার আগেই দিগন্ত কল কেটে দিলো। দিগন্ত জানে এখন কি নিয়ে কথা বলবে।তাই হয়তো মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো। যে মানুষটা তার জিবন থেকে হাড়িয়ে গেছে তাকে নিয়ে আর কোন কথা নয়। নতুন করে জিবন শুরু করবে সে। চোখ বন্ধকরে পরপর কয়েকবার শ্বাস নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় দিগন্ত।

দুপুর বারোটার দিকে ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হয় দিগন্ত। প্রথমে প্রিন্সিপ্যাল স্যারে থেকে অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন ক্লাস পর্যবেক্ষণ করে সে। তারপর যায় মনিরুল ইসলাম স্যারের সাথে দেখা করতে। ডিপার্টমেন্টের হেড হিসাবে তার থেকেও অনুৃমতি নেওয়া প্রয়োজন। মনিরুল স্যারের কেবিনে গিয়ে অবাক দিগন্ত। মনিরুল স্যার তখন লেপটপে কিছু করছিলেন। দিগন্তকে বসতে বলে সে তার কাজে মন দিলো। দিগন্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মনিরুল স্যারের দিকে। মনিরুল ইসলাম স্যার নিজের কাজ শেষ করে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” বলুন আমি আপনার কি সাহায্য করতে পারি।”

” স্যার, আপনি আমায় চিনতে পারছেন?” উৎফুল্ল হয়ে প্রশ্ন করে দিগন্ত।

মনিরুল স্যার দিগন্তের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ায়। না সে চিনতে পারেনি।দিগন্ত বলে,
” ২০১৬ সালে আমাদের কলেজে একটা সেমিনারে আপনি গিয়েছিলেন। আপনার নতুন ওয়েবসাইট, “বুক অফ বেঙ্গলী “নিয়ে আলোচলা করছিলেন। যেখানে সকল ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে তাদের পাঠ্যবই পড়তে পারবে। স্যার আপনার মনে আছে সেখানে আমিও আপনার সাথে কাজ করছিলাম। তারপর যখন আপনার অটোগ্রাফ চাইলাম তখন আপনি অটোগ্রাফের পরিবর্তে আপনি কয়েকটা ডিজিট লিখে দিয়েছিলেন।”

মনিরুল কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
” ও হ্যাঁ মনে পড়ছ। সিপি মার্কেটিং সম্পর্কে আপনার ধারনা ভালো ছিলো।এখন কি করছেন আপনি?”

দিগন্ত একটা ফাইল বাড়িয়ে দেয় মনিরুল স্যারের দিকে। স্যার ফাইলটা দেখে বলে,
” ঠিক আছে, আপনি যখন খুশি আমার ক্লাস করতে পারেন। আর আমার কোন সাহায্য লাগলে অবশ্যই বলবেন। আপনাকে সাহায্য করতে পারলে ধন্য হবো।

” ধন্যবাদ স্যার এবার তাহলে আসি।

মনিরুল স্যারের সাথে হাত মিলিয়ে দিগন্ত প্রস্থান করে। এবার গন্তব্য তার জুহায়িন আহমেদ আরাভ স্যার।”

___________________
একটা ফাকা রুমে ব্রেঞ্চের উপর বসে আসে আরাভ। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ভূমি। ভূমি চোখ ছলছল করছে। নাক লাল। মনে হচ্ছে কেঁদেছে। আরাভের চোখে অসহায়ত্ব, করুন চোখে তাকিয়ে দেখছে ভূমিকে। ভূমির এই অবস্থা দেখে তারও কষ্ট হচ্ছে তবে সে পারছে না ভূমিকে সত্যটা বলতে। যেটা ভূমির মনে আরো সন্দেহ জাগিয়ে তুলছে। সন্দেহের বীজ প্রথম অঙ্কুরিত হয়েছিল দিয়ার মৃত্যুর দিন। ভূমি প্রশ্ন করলো,
” তাহলে আপনি বলবেন না সত্যিটা?”

” এখন বলতে পারবো না। একটু সময় দাও তোমাকে সবটা বলবো।”

” আপনি কখন জেনেছিলেন, দিয়ার মৃত্যু কথাটা?”

” রাতেই।”

” ওহ।তাহলে এটা প্ল্যান ছিলো।”

” বলতে পারো।”
” আপনি কি করে জানলেন আরাভ।”
” তুমি কি আমায় সন্দেহ করছো?”

কোন জবাব এলো না ভূমির দিক থেকে। আরাভ তার জবাব পেয়ে গেছে। কিছুক্ষণ ভূমির দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায়। ভূমির মুখোমুখি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভূমির গালে হাত রেখে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলে,

” সারা দুনিয়া আমায় অবিশ্বাস করলেও আমার কিছু যায় আসে না। তবে তোমার চোখে এই অবিশ্বাস আমি দেখতে পারছি না ভূমি। আজ সন্ধ্যায় তুমি তোমার সব উত্তর পাবে। তবুও তুমি আমায় অবিশ্বাস করো না। তহলে আমি বিষাদের অনলে পুড়ে পুড়ে খয় হবো। তোমার চোখে প্রেম দেখতে চাই, ভালোবাসা দেখতে চায়। অবিশ্বাস, ঘৃনা এসব সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।”

ভূমির কপালে কপাল ঠেকিয়ে রইলো আরাভ। ভূমি আরাভের বাহু চেপে ধরে বলে,
” আপনাকে অবিশ্বাস করার ক্ষমতা আমার নেই, আর ঘৃনা! সেটা কখনো ভাবতে পারিনা। তবে ভয় হয়। আপনাকে হাড়িয়ে ফেলার ভয় প্রতিনিয়ত তাড়া করে। আপনাকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না আরাভ।”

আরাভ ভূমিকে ছেড়ে একটু দুরত্ব নিয়ে দাঁড়ায়। অধোর প্রসারিত করে ভূমির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বুকের বা পাশটায় আঙ্গুল দেখিয়ে বলে,
” এইখানটায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। একটু জড়িয়ে ধরবে।

ভূমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। এর আগে কখনো মাথা রাখা হয়নি আরাভের বুকে। কখনো আবদ্ধ হয়নি আরাভের বাহুবন্ধনে। লজ্জার গাল রক্তিম বর্ণ ধারন করতে থাকে। আরাভ বলে,
” তুমি লজ্জা পাচ্ছো। ঠিক আছে আমি তোমায় হেল্প করছি।”
বলেই ভূমিকে জড়িয়ে ধরে আরাভ। ভূমির হাত ও খেলা করে আরাভের পিষ্ঠদেশে।

আরাভের ক্লাস শুরু হবে আর দশ মিনিট পর। ভূমিকে ছেরে একটু দূরত্ব নিয়ে দাঁড়ায়। হাতে থাকা গোল্ডেন ওয়াচের দিকে তাকিয়ে বলে,
” সেকেন্ড ইয়ারে একটা ক্লাস আছে। যেতে হবে।”

” হুম আমারও ক্লাসে যেতে হবে।”

” আচ্ছা শুনো, এই ক্লাস শেষ করে আমার গাড়ির কাছে যাবে। বের হবো।”

” আপনার ক্লাস নেই।”

” না আজ আর নেই।”

চল দেরী হচ্ছে। ভূমিকে সামনের দিকে ইশারা করতেই ভূমি মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। আরাভ ভূমির পিছু যায় তবে দূরত্ব রেখে। ভূমি ওর ক্লাসে যেতেই আরাভ অফিস রুমের দিকে যায়। অফিসরুমের সামনেই দেখা দিগন্তের সাথে। দিগন্তকে দেখে আরাভ একগাল হেসে বলে,
“হ্যালো ডিটেকটিভ।”

দিগন্ত হেসে আরাভের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
” হ্যালো।

আরাভ হাত মিলিয়ে বলে,
” এখানে কি মনে করে?”

” কাজের তাড়নায় আসতেই হয়।

” চলুন ভিতরে বসে কথা বলি।”

আরাভ আর দিগন্ত মুখোমুখি বসে আছে। দিগন্তের মুখ উৎফুল্ল প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্যে আর আরাভের মুখ গম্ভীর। দু-হাত চিবুকে রেখে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকে দিগন্তের দিকে। দিগন্ত বলে,
” আমার প্রশ্নের জবাব পাইনি।”

আরাভ পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিগন্তের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
” সন্ধা সাতটায় এই ঠিকানায় আসবেন। আপনার সব জবাব পেয়ে যাবেন।” আরাভ উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ” আসছি আমার ক্লাস আছে।” আরাভ চলেই যাচ্ছিলো তখন দিগন্ত দাঁড়িয়ে বলে,
” সব প্রমান আপনার এগিয়েন্সটে। সবার সন্দেহ আপনার দিকে। এবার কি বলার আছে আপনার।”

আরাভ দাঁড়িয়ে যায়। মৃদু হেসে বলে,
” কারো মনের সন্দেহ দূর করার দায় আমার নয়। আমি যদি ভুল না করি তাহলে কে সন্দেহ করলো আর কে না করলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার রাস্তায় আমি ঠিক। সময়মতো চলে আসবেন।” বলেই আরাভ বেড়িয়ে যায়। দিগন্ত আরাভের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,” কি এটিটিউড।”

চলবে,,,,,,

Mahfuza Afrin Shikha.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here