#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৫]
অন্ধকারময় ঘরে বসে আছে মনিরুল ইসলাম। হাতে কফির মগ মাথায় নানা চিন্তা। এই রুমের মতো অন্ধকার তার জিবন। তিক্তময় অতীত থেকে বাচতে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে তার জীবন। একা এই ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। তার এই একাকিত্ব জিবনে না আছে কোন পছন্দের মানুষ না আছে কোন বন্ধু বান্দব। এমনকি বাসায় একটা কাজের লোকও নেই। সারাদিন কলেজ আর রাতে নিজেই নিজের কাজ করেন তিনি। কফির মগ শব্দকরে টেবিলের উপর রেখে উঠে দাঁড়ালেন মনিরুল ইসলাম। অন্ধকার হাতরে কাবার্ড থেকে একটা কালো হুডি বের করে সেটা পরে নিলেন। মাথাটা থাকতেই ক্রুর হাসি হাসলেন তিনি। এই কালো হুডিতে অন্যরকম একটা শক্তি আছে। যার কারনে এটা পরার পর নিজেকে অনেক শক্তিশালী মনেহয় তার। মুখে পৈশাচিক হাসি নিয়ে একটা রুমে গেলেন তিনি। রুমটা দেখতে কোন একটা ল্যাবরেটরির থেকে কোন অংশে কম নয়। একদিকে বড় এক ডেক্সটপ। মনিরুল ইসলাম ডেক্সটপের সামনে বসলেন। ডেক্সটপের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে King নামটা। তিনি নামের উপর ক্লিক করলেন। ডেক্সটপের পর্দায় ভেসে উঠলো একটা মেসেজ,
” এই ডিটেকটিভ অনেক বাড়াবাড়ি করছে। আমার ভাইয়ের পায়ে গুলি করেছে। ওর একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে।” নিচে লেখা “KING”
মনিরুল ইসলাম দ্রুত হাতে টাইপ করলো,
” তুমি নিজের কাজ করো। এই ডিটেকটিভকে আমি দেখে নিবো।” নিচে লেখলো, “DEATH”
ডেক্সটপ থেকে মুখ সড়িয়ে মুখটা গম্ভীর করে হাতের আঙ্গুল দিয়ে চসমাটা উপরের দিকে তুলে গলার স্বর শক্তকরে বলল, “ডেথকে ধরবে। এত সহজ ডেথকে হাতের নাগালে পাওয়া। ডেথ এর রাজ্যে আমিই রাজা। এই রাজ্যে যে রাজত্ব করতে আসবে তার একটাই শাস্তি, মৃত্যু।”
অট্টহাসিতে ভেঙে পরলো মনিরুল ইসালাম।
” অনেক বার বেড়েছে তোমার ডিটেকটিভ। এবার তোমার দিকটা দেখতে হবে।” KING তার কাজ করে নিবে। এপর্যন্ত যতগুলা মানুষের সাথে কাজ করছে তার মধ্যে কিংকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে। ছেলেটার মধ্যে স্পেশাল কিছু রয়েছে যার কারনে ডেথ তাকে বেশ পছন্দ করে। “কিং” বছর বিশের এক যুবক। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারর ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাদে ইন্টারনেটের এই নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে পারে। কৌতুহল বসত সে একদিন ডুকে পরে ডাক নেটে। সেখানে অবশ্য আরো একটা কারন আছে আর সেটা হলো, নিজের পরিচিতি বৃদ্ধি করা। যেটা যে অল্প সময়ের মাঝে পরেছে। ডাক নেটে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সময় একাদিন তার কাছে মেসেজ আসে ডেথ এর কাজ থেকে। যেখানে ডেথ তাকে তার হয়ে কাজ করতে বলেছে। বিনিমনে সে পারিশ্রমিক তো পাবেই সাথে তার পরিচিতিও হবে। সেই থেকে ডেথ এর সাথে কাজ করে কিং। ডেথ কিংকে চিনলেও কিং কখনো ডেথকে দেখেনি। সময়সময় মেসেজের মাধ্য তথ্য পাঠানো হয়েছে তার পার্সেল সেটা কুরিয়ারের মাধ্যমে। তবে সেখা ডেথ ব্যতিত অন্য কোন নাম ছিলো না। কিং ছেলেটা যেমন সাহসী তেমন দুরন্ত। তাই তো ডেথ তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে না হলে বাকিদের মতো কিং ও হয়তো ডেথ এর কবলে পরে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতো।
____________________________
ঋতুর ধারায় প্রকৃতি জগতে প্রানের সজীবতা রং রুপ ও সিগ্ধতা নিয়ে আসে শরৎ ঋতু। শরৎের ভোরে বয়ে চলেছে ঝিরঝিরি হাওয়া। ছোটছোট পাখিদের বেপরোয়া ধাপাধাপি ও মিষ্টি কলতনে ভরে উঠে চারিদিকে। ভোরের ধবধবে নীল আকাশের বুকে সাদা পেচার মতো তাকিয়ে আছে ভূমি। প্রকৃতির এই অভূত পূর্ন সৌন্দর্য তাকে স্পর্শ করছে কিনা। কৃষ্ণভ্রমরের মতো রাশীরাশী চুল বাতাশে দোল খেয়ে বারি খাচ্ছে ভূমির কোমড়ে। হুস নেই ভূমির। আরাভের সাথে তার তিনদিন যাবৎ কথা হয়না। কলেজ থেকেও ছুটি নিয়েছে সে। আচ্ছা সে কি জানেনা,
” তাকে দেখার জন্যে আমার অক্ষিদ্বয় প্রতিনিয়ত অপেক্ষায় থাকে।”
“এত সকালে ছাদে কি করছিস বোন?”
তন্ময়ের কথায় সামনে তাকায় ভূমি। মাথা নাড়িয়ে বলে,
” এমনি, সকালটাকে উপভোগ করছিলাম।”
তন্ময় কথা বাড়ালো না। টাওয়ালটা মেলে দিয়ে নিচে চলে গেলো। ভূমির বিষন্ন মুখে সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকলো। আরাভের ফ্ল্যাটে যাওয়াটাকি ঠিক হবে। চলে যাবে আরাভের ফ্ল্যাটে। হ্যাঁ, যাওয়া যায়। অধোরে হাসি ফুটে উঠলো তার। হাসি হাসি মুখ নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে ভূমি। আলমারিতে নিজের জামাকাপড় বের করতে গিয়ে চোখ পরে আরাভের কোটের দিকে। যেটা সেদিন ভূমির গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলো আরাভ। কোটটা বের করে সেটা নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো ভূমি।
আজ আর কলেজে যাওয়া হলো না ভূমির। আরাভের ফ্ল্যাটের সামনে এসে রিক্সা থেকে নামে। রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিনিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। আরাভের ফ্ল্যাটের সামনে এসে লম্বাশ্বাস নেয় তারপর কলিংবেল বাজায়। সোহান এসে দরজা খুলে দরজার সামনে ভূমিকে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ভূমি এখানে আসবে সেটা তো জানায়নি আরাভ। সোহান মৃদু হেসে বলে,
” আরে ভাবি আপনি এখানে? না মানে আরাভ তো কিছু বলেনি।”
” আসলে আমি কাউকে না জানিয়ে চলে আসছি। ভাবলাম সারপ্রাইজ দেই।
” ওও আচ্ছা। আসুন ভিতরে আসুন।”
সোহান দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালে ভূমি ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রয়িংরুমে সকলে বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা বলছিলো। হয়তো গুরত্বপূর্ণ কিছু কথা। বেশ মনোযোগ দিয়ে আলোচনা করছে সবাই। সাথে দিগন্তও আছে। এই সময় এখানে ভূমিকে দেখে উপস্থিত সকলে অবাক। সকলের দৃষ্টি এখন ভূমির উপর। আরাভের ভ্রুযুগলে সুক্ষ্ম ভাজ তবে মুখে তার প্রাপ্তির হাসি। ভূমি বলল,
” না আসলে আমি আরাভকে এই কোটটা দিতে এসেছিলাম।”
তবুও সকলের উৎসুক দৃষ্টি। ভূমির কথা যেন তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। আরাভ স্মিত হেসে হাত বাড়িয়ে ভূমিকে নিজের কাছে ডাকলো। এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে আরাভের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করলো ভূমি। তাই মাথা নিচু করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে এখন নিজেকেই গালি দিচ্ছে, “কেন সে এখানে আসতে গেলো। আরাভ যখন তার সাথে দেখা করছে না তার মানে সে ব্যাস্ত। সবটা জেনেও কেন ভূমির মন শান্ত থাকতে পারেনা। এখন সবাইকে কি করে বুঝাবে সে, তার প্রান প্রিয়র দেখা না পেয়ে মনটা ছটফট করছিলো বলেই তো সে এখানে এসেছে।” আড় চোখে সবার দিকে তাকালো একবার। সবাই কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরাভ এখনো তার দিকে একটা হাত বাড়িয়েই রেখেছে। একটা গম্ভীর কন্ঠশ্বর শুনে সামনে তাকালো ভূমি। দিগন্ত, হ্যাঁ দিগন্ত-ই বলল,
” একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলছি। এভাবে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে আরাভের পাশে গিয়ে বসো।”
সবাই দিগন্তের দিকে তাকালো। আরাভের দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হলো। দিগন্তের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করলো সে।তখন দিগন্ত বলল,
” আসলে আমার একটু তাড়া আছে তাই বলছিলাম।”
আরাভ কিছু বলল না। ভূমির দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
” এসো, আমার পাশে বসো।”
ভূমি গিয়ে আরাভের পাশে বসলো। আরাভ আবার বলল,
” ক্লাস নেই আজ?”
” কলেজে যাইনি।”
আরাভ ভূমির আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুল ডুবিয়ে দিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল,
” আমরা যে কি বলছিলাম?”
দিগন্ত আড় চোখে আরাভ ভূমির হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি আছে এই দ্যা ডেথ এলিমেন্ট-এ।
আরাভ লম্বা একটা শ্বাস টেনে বলতে শুরু কীলো,
” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে ইউনাইটেড স্টেটে মাফয়া দলগুলোর মধ্যে একটা বিশেষ ধরনের ড্রা*গের প্রচলন ছিলো। তবে কিছু মাসের মধ্যে সেই ড্রা*গের ব্যাবহার সম্পর্ন বন্ধ করে করে দেওয়া হয় এবং সেই সঙ্গে ড্রাগের উৎপাদন ও সম্পর্ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পিছনে কি কারন সে সম্পর্কে কোন কারন জানা যায়নি। ওই ড্রা*গের সে সমস্ত উপাদান ছিলে সেগুলোর তথ্য ইউনাইটেড স্টেটের নিজেস্ব ডেটাবেজে অত্যন্ত সুরক্ষিত ভাবে গোপন রাখা হয়েছে। সেই ডেটাবেজ থেকে আমরা ওই তথ্য বের করে নেই। আসলে প্রচলিত কোন ড্রা*গের সাথে “দ্যা ডেথ এলিমেন্ট এর উপাদান মিল না পাওয়ায় আমরা বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ ড্রা*গ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে দিয়েছিলাম। বুঝতেই পারছেন এই কাজটা এক প্রকার চুরি করার মতোই। তবে আমরা কারো পার্সোনাল তথ্য কাউকে বিক্রি করিনি। শুধু মাত্র নিজেদের যেটুকু প্রয়োজন সেইটুকু নিয়েছি। এইরকম বিশেষ ড্রা*গের খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত ওই বিশেষ ড্রা*গের নামটা জানতে পারি। আশ্চর্যজনকভাবে ওই বিশেষ ড্রাগের সাথে “দ্যা ডেথ এলিমেন্ট এর সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। ওই ড্রা*গ এর নাম দেওয়া হয়েছিলো।” দ্যা ফরবিডেন”!
“দ্যা ডেথ এলিমেন্ট” কে সোজা বাংলায় “দ্যা ফরবিডেন” এর রিমেক-ই বলা যায়।
” দ্যা ফরবিডেন” সম্পর্কে খুব বেশী জানা না গেলেও এটুকু জানা গেছে, সেই সময়ে এই ড্রাগের কারনে বহু মানুষের প্রান গেছে। তাই কয়েক মাসের মধ্যে এই ড্রাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। বিষয়টা সমনে আসার পর থেকে আমরা মারাত্মক কিছু খারাপের আশংকা করছি। এই সময় আমাদের দেশকে খুব একটা সুরক্ষিত বলে মনে হচ্ছে না। আমার কাছে আমার প্রতিশোধটা অনেক বড়। তবে এখন এসব কিছুকে ছাপিয়ে গেছ আসন্ন ভবিষ্যৎ এর চিন্তা। এই ড্রা*গ যে কতটা ভয়ংকর তা কম বেশী আমরা সবাই জানি। সেখা একটা নিষিদ্ধ ড্রা*গ যা এক সময় বহু মানুষের প্রান নিয়েছে সেই ড্রা*গ নিয়ে ডেথ কি করতে পারে সেটা ভাবনারও বাইরে। এতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রতিশোধ নিয়ে ভাবলেও এখন আমাদের মূল চিন্তা দেশের আসন্ন ভবিষ্যৎ কে রক্ষা করা। আমরা চাইনা আর কেউ ডেথ এর শিকার হোক। তাতে যদি আমাদের জিবন চলে যায় তাও আমরা এর শেষ চাই। জিবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ডেথ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে আমরা বদ্ধপরিকর।”
কথাগুলো বলে থামে আরাভ। ওর চোখের দৃঢ়তা প্রকাশ করে কথাগুলোর গুরুত্ব। ভূমির চোখমুখে ফুটে উঠে আতঙ্ক। আরাভ লক্ষ করতেই মৃদু হেসে বলে,
” এত চিন্তা করো না নিলাদ্রিতা।” ভূমির আরো কাছে গিয়ে বলে, ” তোমার চোখ ভয় নয় প্রেম দেখতেই বেশী পছন্দ করি।”
তবুও যেন আতঙ্ক কমে না ভূমি। ভয়ে চোখমুখ রক্তশূন্য হয়ে যায়। আরাভ তাহমিদকে এদিকটা সামলাতে বলে ভূমিকে নিজে নিজের পার্সোনাল রুমে যায়।
চলবে,,,,,,,,,,
#Mahfuza Afrin Shikha.