রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ। [২১]

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[২১]

মোটরবাইকে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে একজোড়া কপোত কপোতী। মুক্ত পাখিয়ে ন্যায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। সামনের জন মনে অনাবিল সুখ নিয়ে বাইক চালাচ্ছে আর পিছনের জন তাকে দু-হাতে জড়িয়ে পিঠে মাথা রেখে উপভোগ করছে রাতের শেষভাগের সিগ্ধ হাওয়া। এমন সুন্দর মাতাল করা হওয়া দুজনের মনের ভিতরের সুপ্ত প্রেমকে জাগিয়ে তুলছে। ইচ্ছে করছে এমন করেই কেটে যাক আরো হাজার বছর। তারা এভাবেই পারি দিতে পারবে কয়েক হাজার বছর। আচ্ছা, প্রিয় মানুষটার সংস্পর্শে এত সুখ কেন? মনে হয় সে তার কাছে থাকলে আর কিছু চাওয়ার নাই। ভূমি আরাভের পিঠে নাক ঘসলো। আরাভের পিঠ দিয়ে হীম শীতল শ্রোত বয়ে গেলো। মনে হয় যেন বরফের রাজ্যে ভাচ্ছে সে। অধোর কামড়ে ড্রাইভ করায় মন দিলো সে। ভূমি আরো শক্তকরে আরাভকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
” ফর হোয়াট?”
” আজকের এই মুহূর্তের জন্যে। এমন সারপ্রাইজ আমায় মাঝে মাঝে দিবে।”
আরাভ হাসলো। কিছু বলল না। আরো কিছুক্ষণ পর ওদের বাইক একটা গ্রামের রাস্তায় ডুকলো। গ্রামের কাচা রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে আরাভ। কাচা রাস্তায় আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু, যার ফলে ভূমি আরো বেশী করে লেপ্টে যাচ্ছে আরাভের সাথে। কিছুক্ষণ পর আরাভ একটা নদীর সামনে এসে বাইক থামালো। আরাভ বাইক থেকে নেমে ভূমিকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে চলল নদীর তীরের দিকে। পারে এসে একটা নৌকা বাধা দেখে দু’জনে নৌকায় উঠে বসে। আচমকা ভূমিকে নিজের বুকের সাথ চেপে ধরে আরাভ। আকস্মিক ঘটনায় ভুমি কিছুক্ষণ চুপকরে থাকে তারপর আরাভের পিঠে নিজের হাত বুলায়। তারপর ভূমিকে ছেড়ে দিয়ে ভূমির মুখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। চাঁদের সিগ্ধ আলোতে ভূমির মুখটা আরো বেশী সিগ্ধ লাগছে। আকাশের দিকে তাকালো আরাভ, ওর খুব বলতে ইচ্ছে, হেই অন্ধকারের সিগ্ধ আলোর রশ্মি, তোমার এখন ডুবে যাওয়া উচিৎ, আমার কাছে তোমার চেয়েও সিগ্ধ আমার চাঁদ আছে। মুখে বলল, “কে বেশী সিগ্ধ, চাঁদ নাকি আমার নীলাদ্রিতা। অবশ্যই আমার নীলাদ্রিতা। আরাভের এমন কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল ভূমি। আরাভ ভূমির মুখটা দু-হাতে তুলে মৃদু হাসলো। তারপর ভূমির অধোরে নিজের অধোর বসিয়ে দিলো। ভালোবাসায় আবেশে ভড়িয়ে দিতে লাগলো ভূমিকে। ভূমিও আরাভের মাথায় হাত রেখে রিসপন্স করলো। আরাভ ভূমির অধোর ছেড়ে ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে। গলায় ঘাড়ে প্রেমের উষ্ণে ভালোবাসার সাগরে ভেসে যেত লাগলো ভূমি। আরাভ ভূমির গলা ছেলে ওকে নিজের কোলে বসিয়ে দুহাতে বুকে জড়িয়ে রাখলো। ভূমিও আরাভের বুকে মাথা রেখে উপভোগ করতে লাগলো তাদের এই ভালোবাসাময় মুহূর্ত। দু’জনে চুপ। কেউ কোন কথা বলছে না। মৌনতা যেন তাদের ব্রত। শুধু একে অপরের হৃদস্পন্দন উপভোগ করছে। কিছুক্ষণ পর মৌনতা ভেঙে আরাভ বলল,

“আগামি কাল ডেথ এর মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমি।”

ভূমি অবাক। এমন সময় এই কথা সে এক্কেবারে প্রত্যাশা করেনি। নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আরাভ আরো শক্তকরে জড়িয়ে ধরে। ভূমি বলল,
” ডেথ! আচ্ছা ডেথ কে জানতে পেরেছো?”

” নাহ তবে সন্দেহ করছি। আমার সন্দেহ সঠিক হলে কাল সকালেই জানতে পারবো।”

” তুমি কাকে সন্দেহ করছো?”

” মনিরুল স্যারকে।”

” মনিরুল স্যার।” অবাক হয়ে বলল ভূমি।

” হ্যাঁ। দিয়াকে ড্রা*গ দিয়ে ওকে হ্যালুশোলেট করা। দিগন্তকে নিজের হাতের তৈরী করা কেক খাওয়ানো আর ডিটেকটিভ বয় ডাকটা। এই ডাকটাই আমার সন্দেহের প্রধান কারন।”

“মনিরুল স্যার এমনটা করেছেন। ভাবতেই পারছিনা। স্যারকে কত ভালো করছিলাম।”

” প্রত্যেক জিনিসের দুইটা দিক থাকে। একটা ভালো অপরটা মন্দ। মনিরুল স্যারের সাথে যেটা হয়েছে সেটা খুব খারাপ হয়ে। দেশ এবং দেশের প্রতি পচন্ড ঘৃনা আর রাগ থেকে এমন একটা পথ সে বেছে নিয়েছে। অতিরিক্ত রাগ আর ঘৃনা দুটোই মনুষ্যজাতির জন্যে অভিশাপ। ঘৃনার থেকে মানুষের ভিতরে যে প্রতিশোধপরাণ মানুষটা তৈরী হয় সেটা খুব ভয়ংকর। জ্বলন্ত অগ্নিগিরি মতো। সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। হয়তো তার জায়গায় থাকলে আমিও এমন কিছু করতাম। আমার তার প্রতি কোন রাগ নাই। তবে দেশের এই সাধারণ মানুষজনের জন্যে তাকে আটকাতেই হবে।”

কথা বলতে বলতে আরাভের হাত আলগা হয়ে আসলো। ভূমি সোজা হয়ে বসে বলল,
“দেশের প্রতি তার এত ঘৃনা?”
” হুম।আমার একটা কথা রাখবে নীলাদ্রিতা?”
” বলো।”
” কাল রাত বারোটার ওর কি হবে সেটা কারো জানা নেই। তবে ডেথ এমন কিছু যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তুমি আমায় কথা দাও, যা কিছু হোক তুমি নিজেকে শক্ত রাখবে। একদম ভেঙে পরবে না।আমি না ফেরা পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হবে। নিজেকে শক্তরেখে সত্যের মুখোমুখি হয়ে সবটা সামলাবে।”

ভূমির মন অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠলো। দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। কম্পায়িত হাত রাখলো আরাভের গালে। আরাভ ভূমির হাতের উপর হাত রেখে তাতে ঠোট ছোঁয়ালো। ভূমি বলল,
” তোমার কিছু হবে না তো।”
” আমার কিচ্ছু হবে না। আমার কিছু হতেই পারেনা, না হলে আমার নীলাদ্রিতার কি হবে। আমার নীলাদ্রিতার জন্যে হলেও আমাকে ঠিক রাখতে হবে। তুমি শুধু কথা দাও নিজের খেয়াল রাখবে।”

ভূমি শক্তকরে আরাভকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” তুমি ঠিক থাকলেই আমি ঠিক থাকবো।”

আরাভ ভূমিকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো চুপচাপ। ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটে উঠছে। চাঁদমামা ডুবে যাচ্ছে তার কুলায়।চারিদিকের নিকষ কালো অন্ধকার কাটিয়ে একটু একটু করে দিনের আলোয় আলোকিত হচ্ছে এই রঙিন দুনিয়া। আরাভ আর ভূমি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উপভোগ করে ভোরের আলো ফুটে উঠার দৃশ্য।পূর্ব আকাশে যখন সূর্যিমামা উকি দিচ্ছে তখন আরাভ ভূমিকে নিয়ে সেখান চলে আসে। প্রায় সাতটার দিকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো আরাভ আর ভূমি। ভূমি আরাভের রুমে দিয়ে এলো ঘুমানোর জন্যে। আর নিজে গেলো মায়ের রুমে। অনিমা বেগম বিছানা ঘুচাচ্চিলেন এমন সময় আরাভ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

” মা, মাথায় একটু জাত বুলিয়ে দাওয়া ঘুমাবো।”
” সে কিরে এখন ঘুমাবি কেন? কলেজে যাবিনা আজ?”
” আজ যাবোনা। তুমি এখানে বসতো। আমায় মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।”

অনিমা বেগম মুচকি হাসলেন। এই ছেলের পাগলামি এখনো গেলো না। মৃদু হেসে ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আরাভ অনিমা বেগমের কোলে মাথা তুলে দিলেন। দু’চোখ বন্দ করে বলে,
” ঠিক দশটার দিকে ডেকে দিবে। আচ্চা মা আজ সকালের মেনু কি?”
” কি খাবি বল।”
” তোমার হাতের স্পেশাল ভুনা খিচুড়ি খাওয়াবে।”
” ঠিক আছে। তুই ঘুমা আমি রান্না করবো।”

আরাভ আর কিছু বলল না। চোখ বন্ধকরেই ঘুমানোর প্রচেষ্টা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে বলে উঠলো,
” আমার রুমে ভূমি আছে। ওর জন্যেও রাধবে মা।”

অনিমা বেগম হাসলেন। মৃদু হেসে মাথা নাড়ালেন। তবে সেটা আরাভের চোখে পরলোনা। মনের সুখে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন অনিমা বেগম।”

_____________________
দ্রুত হাতে লেপটপে কিছু টাইপ করছিলো মনিরুল ইসলাম। তার কিসের এত ব্যাস্ততা কে জানে। সমস্ত ধ্যানজ্ঞান দিয়ে লেপটপে কিছু টাইপিং করছে। এদিকে দিগন্ত কখন থেকো ডোর নক করছে শুনতে পারছে না সে। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুখের বিরক্তির শব্দ করলো। তারপর বিনা পারমিশনের রুমে ডুকে পরলো। সামনে কারো ছায়া দেখে হচকচিয়ে উঠেন মনিরুল ইসলাম। চমকে উঠে সামনে তাকিয়ে দিগন্তকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি তুলার বৃথা চেষ্টা করলো। দিগন্ত স্মিত হেসে বলল,
” সরি। আসলে অনেকবার নক করার পরেও আপনি রিসপন্স করছিলেন না তাই বিনা পারমিশনল চলে আসলাম। আপনি কি ব্যাস্ত।”

মনিরুল ইসলাম ইতস্ততভাবে একটু হাসলো। যেটা চোখ এড়ালো না দিগন্তের। অতঃপর বলল,
” না না একদম-ই নয়। আপনি বসুন না প্লিজ।”

দিগন্ত স্মিত হেসে মনিরুল ইসলামের সামনের চেয়ার টেনে বসে পরলো। তারপর তার সাথে কিছু কথা বলে নিলো। দিগন্ত উঠে চলে যাচ্ছিল এমন সময় বলল,
” আজ তো আপনার আমাদের ডিপার্টমেন্টে যাওয়ার কথা। কখন যাচ্ছেন।”

” এইতো কিছুক্ষণ পরেই রওনা দিবো।”

” আমি কি যাব আপনার সাথে। না যদি কোন প্রয়োজন পরে।”

” তার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি আপনার কাজ করেন। আমি চলে যেতে পারবো। আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন?”

” আরাভের বসায় যাবো। একটু কাজ আছে।”

” আচ্ছা।” দিগন্ত চলে যাওয়ার জন্যে সামনের দিলে পা বাড়াতেই মনিরুল ইসলাম পিছু ডাকলো। তারপর একটু ইতস্তত টেবিলের উপর একটা চকলেট রাখলো। তারপর বলল,
” আমার নিজের হাতের বানানো। খেয়ে দেখেন ভালোলাগবে।”

দিগন্ত চকলেট হাতে নিয়ে মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল,
” পরে খেয়ে নিবো।”

” এই না না, আপনি এখুনি খেয়েনিন।” তড়িৎগতিতে বলল মনিরুল ইসলাম। দিগন্ত তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো এময় তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। দিগন্ত চকলেট পকেটে পুরে মোবাইল হাসে নিয়ে মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল, চকলেটের জন্যে ধন্যবাদ। খেয়ে অবশ্যই জানাবো।” তারপর কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে যায়।

দিগন্তের চলে যাওয়ার পর মনিরুল ইসলাম রহস্যময় হাসি দিলো। তার এই হাসির এই অর্থ বুঝা দায়। দ্রুত হাতে টাইপিং করতে করতে বিড়বিড়াল,
” তোমদের চলন ডালে ডালে আর আমি থাকি মূলে। কান্ড সহ পাতার খবর আমার জানা। যাই হোক এবার তাহলে মুখোমুখি দেখা হচ্ছে।”

আরাভ ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই চোখ আটকে গেলো রান্নাঘরে যেখানে অনিমা বেগম রান্না করছেন আর ভূমি তাকে হেল্প করছে। আরাভ নিঃপলক সেদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ঠোঁটের কোনে তার হাসির আভা। মনে মে বলল,
” আমি তো এভাবেই দেখতে যেচেছি আমার পরিবারকে। তবে একটু কমতি লাগছে। ছোট্টবাচ্চা ছাড়া বাড়িটা শূন্য কুলার মতো মনে হয়। আজকের কাজটা শেষ করি। তারপর খুব তাড়াতাড়ি আমি আমার বাড়ি পূর্ণ করে ফেলবো।”

আরাভ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
” মা আর কতক্ষণ লাগবে।”

অনিমা বেগম রান্নাঘর থেকে জবাব দিলেন,
” এইতো হয়েগেছে তুই ড্রাইনিং এ বস।”

অনিমা বেগম খাবার পরিবেশন করছেন আরাভ আর ভূমি পাশাপাশি বসে আছে। ভূমি অনিমা বেগমকে বলল,
” মামনি তুমিও বসোনা। আমরা সবাই একসাথে খাই।”

” তুই শুরু কর আমি বসছি।”

সবাই মিলে এক সাথে গল্প বলার ফাকে খাবার খাচ্ছে। এমন সময় আরাভের সেলফোনটা বেজে উঠে। স্কিনে ডিটেকটিভ নামটা জ্বলজ্বল করছে। আরাভ কিছুক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থেকে কল রিসিভ করলো। নরম কোমল শান্ত কন্ঠে বলল,
” কাজ হয়েছে?”
ওপাশ থেকে দিগন্ত বলল,
” হুম। ভাগ্যিস ঠিক সময়ে সোহান কল করেছিলো না হলে আমাকে হয়তো চকোলেটটা খেতে হতো।”
” ওটা ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠিয়ে দাও। আর হ্যাঁ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি ফরেন্সিক রিপোর্ট চাই।”
” ঠিক আছে।”
কল কেটে দিলো দিগন্ত। আরাভ আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

________________________
রুমজুরে পায়চারী করছে আর হাতের তালু ঘসছে আরাভ। তাহমিদ তুহিন আর সোহান পিসির সামনে বসে মনিরুল ইসলামের এর সম্বন্ধে তথ্য বের করার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ আগেই দিগন্ত ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে দিয়েছে। হ্যাঁ দিগন্তকে দেওয়া সেই চকলেটের মধ্যে “দ্যা ফরবিডেন” ড্রা*গ পাওয়া গেছে।এখন সবাই সিউর এই ডেথ আসলে মনিরুল ইসলাম। তাই তারা সকলে মিলে মনিরুল ইসলামের বায়োডাটা চেক করছে। এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে মধ্যে মনিরুল ইসলামের পালিত বাবা মায়ের নাম আর ওনার বর্তমান বাসস্থান সম্পর্কে জেনেছে। তবে মনিরুল ইসলাম কি করতে চাইছে সেটা এখনো অজানা। আরাভ সারা রুমজুরে পায়চারী করেও কিছু বুঝতে পারলো না। এদিকে বিকাল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে প্রায়। কোন কোল খুঁজে পাচ্ছে না আরাভ সহ তার সঙ্গিরা। কিছুক্ষণ পর আরাভের ফোনে দিগন্তের কল আসলো। ওপাশ থেকে দিগন্তের কথা শুনে আরাভ স্তব্ধ হয়ে গেল। পুরো জ্ঞান শূন্য হয়ে পরে আরাভের মাথা। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠে,
” স্যারকে এখনি হসপিটাল এডমিট করো।”

দিগন্তের সাথে কথা বলার সময় আরাভের উত্তেজনা দেখে তাহমিদ প্রশ্ন করে,
” এমন ছটফট করছিস কেন? ওদিকে সব ঠিক আছে তো?”
” না ঠিক নেই। কিচ্ছু ঠিক নেই।”
” কি হয়েছে?”
” ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের গোপন ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। যেহেতু এটা স্ট্রোং পাসকোড দেওয়া ছিলো এবং সিকিউরিটি খুব প্রবল। পাসকোড ছাড়া এটার ভিতরে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে সাইলেন বেজে উঠলো। তাই ডেথ আজ ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সেখানকার প্রধান রফিক মির্জাকে দ্যা ফরবিডেন ড্রা*গ দিয়ে তাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পাসকোড জেনে নিয়েছে।”

” ওহ মাই গোড। এটা তো সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। এবার উপায় কি?” উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলো তুহিন।”

” রাত বারোটার পর ডেথ দেশের সমস্ত গোপন তথ্য নিয়ে অন্যদেশ চলে যাবে। তারপর সেখানে আমাদের দেশের তথ্য বিক্রি করে দিবে। তোরা বুঝতে পারছিস আমাদের দেশ এখন কতটা হুমকির মুখে।”

” এমনটা হতে দেওয়া যাবে না।”

” আমি বের হচ্ছি। তোরা ডেথ এর সমস্ত ইনফোরমেশ কালেক্ট কর। তারপর চলে আসবি মনিরুল স্যারের এর ঠিকানায়। আর তাহমিদ তুই আমাকে মনিরুল স্যারের পালিত বাবা ঠিকানা দেয়।”

” মনিরুল স্যারের পালিত বাবার ঠিকানা দিয়ে তুই করবি।”

” স্যার ওখানেই আছেন। চারিদিকে যখন ঘৃনা আর বিতৃষ্ণায় মন ভরে উঠে তখন একটু ভালোবাসা পেলে মন সেখানেই ঠায় পেতে চায়। মনিরুল স্যার তার পালিত বাবাকে যতটা ঘৃনা করতেন ঠিক ততটাই ভালোবাসতেন তার পালিত মাকে। তাই তার শেষ সময়টুকু তিনি তার পালিত মায়ের স্মৃতি সাথে কাটাতে চান। আর এটাই হিউম্যান সাইকোলজি।”

কথাগুলো বলে বেড়িয়ে যায় আরাভ। আর বাকিরা তাদের কাজে লেগে পরে। আরাভ সেখান থেকে সোজা নিজের বাড়ি চলে আসে। ভূমও তখনো ওদের বাড়িতেই ছিলো। আরাভ বাড়ি যেতেই ভূমি একগাল হেসে আরাভের সামনে এসে দাঁড়ায়। আরাভ ভূমিকে পাশ কাটিয়ে নিজের কাবার্ড থেকে একটা লাল হুডির মতো জ্যাকেট নিয়ে ভূমির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভূমির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়। পিছন থেকে ভূমি প্রশ্ন করে,
” এটা কিসের জ্যাকেট?”
” এটা বুলেট প্রুফ।”

আরাভ পিছন ফেরে বলে, মায়ের একটু খেয়াল রেখো। আমি আসছি।” আরাভ বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার সময় অনিমা বেগমের রুমে উকি দিয়ে দেখে অনিম। বেগম মনের যত্নে আরাভের জন্যে সুতার গেঞ্জি তৈরী করছে। আরাভ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর সে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে।

চলবে,,,,,,,,,

#Mahfuza Afrin Shikha.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here