রক্ষিতা আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-১৬

রক্ষিতা
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১৬
বিস্মিত চোখে অর্ঘমার দিকে তাঁকিয়ে আছে নিফান। ঠিক তার একটু দূরে দাঁড়িয়ে অর্ঘমা। দুটো বাচ্চাকে রেগে রেগে কিছু বলছে। শুকনো ঢোক গিলে নিফান। শ্বাস আঁটকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয় তার। ১৫টা বছর পর অর্ঘমাকে নিজের চোখে। নিজের সামনে দেখছে সে। ভ্রম নয় তো। চোখ ডলে আবার তাঁকায়। না সে অর্ঘমাকেই দেখতে পাচ্ছে। আবেগে আপ্লুত হয়ে নিফান অর্ঘমার কাছে যেতে নেয়। কিছু একটা ভেবে দাঁড়িয়ে যায় সে। এখন সে অর্ঘমার সামনে গেলে অর্ঘমা ঠিক কেমন রিয়াক্ট করতে পারে ভেবে আর আগায় না। তবে দূর থেকে দেখে এত বছরের চোখের তৃষ্ণা মিটায়।
বান্দরবানের একটা কাজ পরে যাওয়ায় রাতে ঢাকা থেকে রওনা দেয় নিফান। সকালে পৌছে। কাজ সেরে হোটেলে যেতে নিলে দূরে একটা স্কুলের সামনে অর্ঘমার মতো কাউকে দেখে দাড়িয়ে যায়। এত বছর পর কাঙ্খিত মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছে সে।

“স্কুল থেকে বেড়িয়ে “অহনিফা আর অর্নিফ কে কিছুক্ষন বকে তাদের ক্লাসে যেতে বলে ভার্সিটির উদ্যেশ্যে রওনায় দেয় অর্ঘমা। তবে পথে মনে হলো কেউ তাকে ফলো করছে। বেশ কয়েকবার পিছনে তাঁকিয়ে কাউকে না দেখে। নিশ্চিত হয়ে নিজ গন্তব্যে যায় সে। তবুও মনের ভিতর খচখচনি হচ্ছিলো। মনে হলো খুব আপন কেউ তার আশেপাশে কোথাও আছে। তাকে দেখছে। এসব নিজ মনে হাসে অর্ঘমা। ছেলে-মেয়ে দুটো ছাড়া তার আপন বলতে আর আছেই বা কে? থমকায় অর্ঘম, সত্যি কি নেই? নিফান কি তার নিজের নয়। নিজ মনে উত্তর দেয় সে,, ‘নিফান কি কখনো তাকে আপন ভেবেছিল? সে একা ভাবায় তো নিফান তার আপন, নিজের মানুষ হয়ে যায় না। মৃদু হেসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে টিচার্স কক্ষে যায় সে। কিছুক্ষন পর তার ক্লাস শুরু হবে।
“ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামায় নিফান। ভার্সিটির ভিতরেই গেছে অর্ঘমা। গাড়ি থেকে নেমে। একটা স্টুডেন্টেকে ‘অর্ঘমার” নাম বলে প্রশ্ন করে জানতে পারে অর্ঘমা এই ভার্সিটির একজন প্রফেসর। হাসে নিফান। তার অর্ঘমা একজন প্রফেসর। ছোটো অর্ঘমা যে প্রতিদিন প্রফেসরদের কান মলা খেত। সে এখন নিজেই কিনা ভার্সিটির প্রফেসর। ভেবে আবার হাসে নিফান। তার আজ হাসার দিন। কখনো ভাবেনি বান্দরবানে এসে সে অর্ঘমার খোজ পাবে। যদি জানতো তাহলে এত বছর সময় নষ্ট করতো না। ছুটে চলে আসত অর্ঘমার কাছে। গাড়িতে অপেক্ষা করছে নিফান। আর কোনো ভাবে অর্ঘমাকে হাত-ছাড়া করতে চাচ্ছে না। তাই ভার্সিটির ছুটি অব্দি সে এখানে থাকবে।

“অহনিফা” রাগে মুখ গম্ভীর করে আছে। তার পাশে অর্নীফ মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিচ্ছুক্ষন আগে অহনিফার বকা খেয়েছে সে। প্রথমে টিচার্সের বকা। তারপরে মাম্মামের বকা। এখন আপুর বকাও খেল। অভিনান হয় অর্নীফের। অহনিফার সাতগে কোনো কথা না বলে তার পাশ থেকে উঠে পিছনে গিয়ে বসে। অহনিফা তা খেয়াল করলেও কিছু বলেনা। কারন সে এখন খুব রেগে আছে। সাব্বিরের জন্য মাম্মামের কত বকা খেল। এই সাব্বির কে সে ছাড়বে না। খানিক আগে অবশ্য সাব্বির কে শাসিয়েও এসেছে। স্কুলের ভিতর মারলে দোষ। তবে স্কুলের বাইরে মারলে তো আর টিচার্স কিছু বলতে পারবে না। এই সাব্বিরটা মিনমিনে শয়তান নিজে প্রথমে অর্নীফ কে মারলো। তার শোধ নিতে যখন অহনিফা তাকে মারলো অমনি টিচারের কাছে বিচার দিলো। একে সে দেখে নিবে। যদি সাব্বিরের দফারফা না করতে পারে তাহলে তার নামও “অহনিফা আহমেদ” নয়।
স্কুল ছুটির পর “অহনিফা” আগে বের হয়ে যায় স্কুল থেকে পিছন পিছন অর্নীফ আসছিল। “অহনিফার যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে স্কুলের এক বড় ভাই তাকে টিচ করে কথা বলে। কথা কানে যাওয়া মাত্র থমকে দাঁড়ায় অর্নীফ। ঘাড় বাঁকিয়ে ছেলেটাকে এক পলক দেখে, বাঁকা হেসে স্কুল থেকে বেড়িয়ে যায় সে। দৌড়ে গিয়ে “অহনিফার” হাত আঁকড়ে ধরে হাটে। অর্নীফকে এক পলক দেখে মৃদু হাসে অহনিফা। ভীষন ভিতু অর্নীফ তাকে ছাড়া এক পাও চলতে পারে না। অহনিফা আগলে নেয় তাকে। অর্নীফ ভীতু চোলহে আশেপাশে তাঁকিয়ে বোনের সাথে লেগে লেগে হেটে চলে। একবার ঘাড় বাঁকিয়ে পিছন থাকা সাব্বিরের দিকে তাঁকায়। সাব্বির অর্নীফের চোখের দিকে তাঁকিয়ে । ভয়ে দৌড়ে অন্য পাশে চলে যায়। বাঁকা হেসে অহনিফার হাত শক্ত করে অাঁকড়ে ধরে। সামনে রাস্তায় এসে অর্ঘমাকে দাঁড়ানো দেখে দৌড়ে তার কাছে যায় দু’জন। ভার্সিটির ক্লাস শেষে স্কুলে দু’জন কে নিতে আসে অর্ঘমা। তাদের হাত থেকে ব্যাগ দুটো নিজের কাছে নেয় সে। গাড়িতে ব্যাগ দুটো রেখে। সামনে স্কুল লাগাওয়া রেস্টুরেন্টে যায় অর্ঘমা। আজ দু’জন কে খুব বকেছে। তাই তাদের মন ভালো করতে সামন্য কিছু খাওয়া দাওয়া।
“দূর থেকে তিন জনকে দেখে নিফান। হতবাক হয়ে তিনজন কে দেখছে। বাচ্চা দু’টো কে জমজ মনে হচ্ছে প্রায় এক রকম চেহারা। আচ্ছা এরা কি তার আর অর্ঘমার সন্তান। চোখের কোনে পানি চলে আসে নিফানের । ১৫ বছর পর চোখের সামনে নিজের সন্তানকে দেখছে। বুক কাপে তার ইচ্ছে করছে। তিন জনে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে। কিন্তু! তা কি আদেও সম্ভব। মাক্স পরে মুখ ঢেকে তাদের পিছু পিছু নিফানও রেস্টুরেন্টের ভিতরে যায়।

“মুখ গম্ভীর করে রেখেছে “অহনিফা” তবে সেদিকে অর্নীফের কোনো মন নেই সে নিজের পছন্দের খাবার পেয়ে সব ভুলে শুধু খাওয়ায় ব্যাস্ত। অর্ঘমা দু’জনকে পরখ করে মৃদু হেসে। অহিনিফার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে। অর্নীফ সেটা দেখে জ্বলে ওঠে। বলে,
__‘বকেছো দু’জনকেই মাম্মাম। তাহলে আপু কে একাকে কেন আদর করছো? দিস ইস নট ফেয়ার মাম্মাম।
ভ্রু কুচকে তাঁকায় “অহনিফা” রাগ নিয়ে বলে,,
__‘তুই খাচ্ছিস যখন খা না। পুরু রেস্টুরেন্টের সব খাবার তোরে পেটুক পেটে ভর। আমার আদরে ভাগ বসাতে আসছিস কেন? ভুলে যাস না বকাটা আমি তোর কারনে খেয়েছি।

চলবে?
(অহনিফা আর অর্নীফ কেমন লাগছে বলতে ভুলবেন না)
(দু-এক লাইনের মন্তব্য আশা করছি। এত কষ্ট করে লিখছি এই টুকু তো আশা করতে পারি। পড়ে দেখিনায় শব্দে ভুল থাকতে পারে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here