রক্ষিতা
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৫
__‘আমার কিছু টাকা দরকার’
ভ্রু কুচকায় নিফান।
__‘কত টাকা?’
__‘সাত লাখ। হাসপাতাল থেকে কল আসছিল টাকা দরকার। আপনার কথা মতো আপনার বাড়িতে আপনার রক্ষিতা হয়ে আছি শুধু মাত্র টাকার কারনে আর আপনি আমার পাওনাই মিটাচ্ছেন না তাহলে আমি কেন থাকবো?
নিফান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে। আমি হস্পিটালে পে করে দেব। তুমি বাইড়ে যাবে না।
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অর্ঘমা,,
__‘কেন?
নিফান টাই ঠিক করে আয়না চোখ সরিয়ে অর্ঘমার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে অর্ঘমা দিকে ঝুঁকে বলে’
__‘যদি তুমি পালিয়ে যাও।
নিফানের ঝুৃঁকে আসাতে অর্ঘমা নিজেও পিছিনের দিকে ঝুকে যায়। নিফানের বলা কথায় কটমট করে তাঁকায় অর্ঘমা। মৃদু রাগী গলায় বলে,,
__‘আমি আপনার মতো না।’
বাকা হাসে নিফান। অর্ঘমার চোখে ‘ফু’ দিয়ে তার চুল ধরে টান দিয়ে। গাড়ির চাবি আংগুলের ঝুলিয়ে মৃদু কন্ঠে গান গেতে চলে যায়।
অর্ঘমা নিফানের যাওয়ার দিকে ‘হা’ করে তাকিয়ে থাকে। কি হলো ব্যাপারটা এমন ভাব ধরছে যেন ভাজা মাছ উলটে খেতে জানেনা। নিফানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে,,
__‘এই আপনার মনে কি রঙ লাগছে?’
দৌড়ে গিয়ে নিফানের সামিনে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকিয়ে সন্দেহের স্বরে প্রশ্ন,,
__‘কি ব্যাপার? এভাবে সেজেগুজে কই যাচ্ছেন?
ঠোঁট কামড়ে হাসে নিফান। অর্ঘিমা ‘হা’ করে তাঁকিয়ে থাকে। পাগল-টাগল হয়ে গেল নাকি। মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পরে অর্ঘমা।
‘__এই এই আপনি পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি। এখন কি লোকে আমায় পাগলের বউও বলবে।
সত্যি করে বলুন তো জীন ভূতে ধরছে আপনাকে।
নিফান অর্ঘমার সামনে ফ্লোরে হালকা হাটুতে ভর দিয়ে বসে বলে,,
__‘জীন ভুত না। প্রেম রোগে ধরছে। প্রেম করতে যাচ্ছি। সো পথ আটকিয়ে বারবার ডিস্টার্ব করবেনা’
নিফান উঠে দাঁড়িয়ে অর্ঘমাকে ঢেংগিয়ে চলে যায়।
অর্ঘমার নিফানের যাওয়ার দিকে চোখ-মুখ কুচকে তাঁকিয়ে থাকে। তাকে ঘরে আটকিয়ে রেখে প্রেম করতে যাচ্ছে ওয়াও দাড়ুন তো।
_‘এই যে, ম্যানারলেস ক্রাশ হিরো আই লাভ ইউ।’
এই মেয়েটার বাচ্চামি দেখে অবাক নিফান। ভার্সিটির জুনিয়র ফার্স্ট ইয়ারের একটা পুচকি মেয়ে তাকে প্রোপজ করছে।
‘এই য, শুনছেন তো আমি সত্যি আই লাভ ইউ
নিফান বাকা হাসে প্রশ্ন করে,,
__‘ভালোবাসো’?
অর্ঘমা আলাভোলা ভাবে উপর নিচ কয়েকবার মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয় সে ভালোবাসে।
ঠোঁট কামড়ে হাসে নিফান। অর্ঘমা নিফানের হাসি দেখে আর এক দফা ক্রাশ খায়।
নিফান হাতে কিছু এসাইনমেনন্টের খাতা অর্ঘমার হাতে তুলে দিয়ে বলে,,
__‘তাহলে এগুলো লিখে’
অর্ঘমার খুশি খুশি মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায়। ক্রাশ বাসে পরিনত হলো। নিফান তার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে হেসে ফেলে।
__‘থাক বাচ্চা মেয়ে করতে হবে না। যাও তোমার ছুটি তবে ভালোবাসার ভুত নামাতে হবে। এইটুকু বয়সে ভালোবাসার কি বোঝো।
অর্ঘমা চোখ ছোটো ছোটো করে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
__‘আমাকে আপনার বাচ্চা মেয়ে মনে? আমার বয়স কত জানেন? আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে গিয়েছে। ঠিক বয়সে বিয়ে হলে এতদিনে আমি চার বাচ্চার মা হয়ে যেতাম। আমি মোটেও বাচ্চা নই।(মুখ ভেংচে বলে অর্ঘমা)
নিফান তার প্যান্টের পকেটে দুই হাত রেখে টান টান হিয়ে দাড়িয়ে অর্ঘমার দিকে হাল্কা ঝুকে বলে,,
__‘তাই? তা তোমার বয়স কত?
অর্ঘমা ভাব নিয়ে বলে,,
__‘১৯+’ জানেন! পাপা কে এত করে বললাম পাপা আমি তো বড় হয়ে গেছ দেখো আমার বিয়ের বয়সও পার হয়ে গেছে এবার আমাকে বিয়েটা দিয়েই দাও আমার ধারা লেখাপড়া হবেনা। দাদুন কেউ বলেছি জানেন? কিন্তু কেউ আমার কথাটা শুনলোই না উলটো আমাকে জোড় এডমিশন কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দেয়। আমি কিন্তু মোটেও ভাল করে পড়েনি তারপরও আমার চান্স হয়ে গেল। এখন আমাকে বাড়ি ছেড়ে এই চট্টগ্রামে থাকতে হচ্ছে একা একা। (মন খারাপ বলে অর্ঘমা)
‘নিফান অর্ঘমা কথা শুনে হোহো করে হেসে দেয়। অর্ঘমা নিফানের হাসির দিকে পলকহীন ভাবে তাঁকিয়ে থাকে।
__‘এই অর্ঘমা’
কারো ডাকে পাশে তাঁকায় অর্ঘমা তার বান্ধবি নিহিতা তাকে ডাকছে। অর্ঘমা নিফানের দিকে এক পলক তাঁকিয়ে। এসাইনমেন্ট গুলো গুছিয়ে হাতে নিয়ে বলে,,
__‘কালকের মধ্যে এটা করে দেব। আজ আসছি।
দাত বের করে হেসে চলে যায় অর্ঘমা। নিফান অর্ঘমার যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে বিড়বিড় করে বলে,,
_‘অর্ঘমা’ মানে সূর্য। নাইস নেইম’
অর্ঘমার যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে মুচকি হাসে।
রাত ন’টায় বাড়ি ফেরে নিফান এসে দেখে অর্ঘমা হাতে নেলপলিশ দিয়ে হাতে ‘ফু’ দিয়ে শুকাচ্ছে।
চোখ টানটান করে তাকায় নিফান মনে হচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস। অর্ঘমার দিকে এক পলক তাকিয়ে ফ্রেস হতে চলে যায়। ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ গিয়ে দেখে কোনো খাবার নেই।
হাক ছেড়ে ডাকে অর্ঘমাকে। হাতে আংগুল ফুটাতে ফুটাতে রুম থেকে বের হয় অর্ঘমা। এসে বড় করে আলশে দিয়ে বলে,
_‘ডাকছেন?
নিফান ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,,
_‘খাবার কই’
অর্ঘমা মেকি হেসে বলে,,
_‘কেন আপনার প্রেমিকা খাবার রান্না করে নিয়ে এসে খাইয়ে দেয়নি।’ আমি তো ভাবছি আপনার প্রেমিকা নিজ হাতে খাইয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে আপনাকে তাই আর খাবার রাখিনি সব খেয়ে নিয়েছি।
থতমত খায় নিফান। চুপসে যাওয়া মুখে বলে,
_‘সব?
_‘হ্যা সব’। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি যাচ্ছি ঘুমতে আপনিও ঘুমিয়ে পরুন।
নিফান কে ফেলে ঘুমতে চলে যায় অর্ঘমা নিফানের যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পরে। অর্ঘমাকে জ্বালাতে গিয়ে নিজেই ফেসে গয়ে জ্বলছে।
খানিক্ষিন পর হো হো করে হেসে দেয় নিফান। অনেক দিন পর আগের অর্ঘমা কে দেখতে পেয়েছে সে। অর্ঘমা দরজার পাশ থেকে নিফানের হাসি দেখে মুচকি হেসে কিচেনে চলে যায়। খাবার এনে গম্ভির মুখে ডাইনিং এ নিফানের সামনে রাখে। তা দেখে নিফান ঠোঁট কামড়ে হাসে। অর্ঘমা তাকে শাসানোর শুরে বলে,,
__‘এই খবরদার ঠোঁট কামড়ে হাসবেন না।তাহলে এই খাবারের জায়গা ডাস্টবিনে হবে। তারপর আপনার সেই প্রেমিকার কাছে গিয়ে তার হাতের রান্না করা খাবার খেতে হবে আমার ঘরে খাবার জুটবে না।
কথাটা বলে কিছুক্ষন চুপ থেকে মৃদু স্বরে বলে,,
__‘অবশ্য আমার ঘর কোথায় আমি তো আপনার ঘরে আপনার ‘রক্ষিতা’ হয়ে আছি বউ না।’
হালকা হেসে ঘরে চলে যায় অর্ঘমা। নিফানের হাসি হাসি মুখখানা চুপসে যায় অর্ঘমার বলা কথায়। আচ্ছা সে কি খুব বেশি কষ্ট অসম্মান করে ফেলছেনা মেয়েটাকে। এটা কি তার প্রাপ্য? অন্য কারো কাজের শাস্তি সে কেন পাবে? পরক্ষনে নিফান ভাবে না ঠিক আছে এটাই ঠিক। সেও তো অন্য কারো ফল ভোগ করছে। অর্ঘমা তার বোন। তাই অর্ঘমাকে শাস্তি পেতে হবে। বাবা- মায়ের কর্মের ফল যেমন সন্তান পায়। তেমনি বড় ভাইয়ের কর্মের ফল বোন ও পাবে।
মিনিছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে নিফান। অর্ঘমা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাকে। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন সময়টা কিচ্ছুক্ষন অনুভব করে নিফান। খানিক পর তআর হাত পিছনে নিয়ে অর্ঘমার হাত খামচে ধরে তাকে টেনে তার সামনে দাড় করায়। অর্ঘমার চোখে পানি। নিফানের হাতের বাধন হালকা হয়। শীতল চোখে অর্ঘিমার দিকে তাকায়।
অর্ঘমা ফুপিয়ে ওঠে তাকে প্রশ্ন করে,,
__‘আপনি কি সত্যি’ই আমাকে কখনো বিন্দু মাত্র ভালোবাসেননি নিফান?
চলবে