রক্ষিতা আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-৮

রক্ষিতা
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৮
বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে অর্ঘমার। নিজেকে হারিয়ে ফেলছে সে। নির্জীব লাগছে এমন তো সে নয়। কখনো কোনো কিছুর অভাব অর্ঘমার ছিলনা। পরিবারের ছোটো মেয়ে সে। মাম্মা-পাপার আদরের রাজকন্যা ভাইয়ার আদরে বোন। দাদুমের আদরে নাতনি। দুঃখ কি অভাব বলতে সে কখনো বুঝেনি। মুখ ফুটে কিছু চাওয়ার আগে সব তার সামনে হাজির হতো। পাপ্পা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন ভাইয়া পুলিশের এস আই। মাম্মাম কলেজ প্রফেসর। এমন কি দাদুমও ছোটো খাটো বিজনেস করতেন। সে পরিবারের ছোটো বিধায় বেশ আদরের ছিল। তার সাথে দুষ্ট। কখনো কোনো কিছুর অভাব তার ছিল না। নিফান কে প্রথম দেখাতে ভালবেসে ফেকে সে। ১৯ বছরের জীবনে কাউকে দেখে তার মনে হয়নি যে ‘একে’ তার পছন্দ হয়েছে। নিফান একমাত্র পুরুষ যে ছিল তার মনের অধিকারী। কিন্তু নিঝুম তাকে মাঝ পথে এসে ছেড়ে চলে যায়। তার কিছুদিন পরে ভাইয়া। ভাইয়ার সাথে বাবা-মাও। একের পর এক ধাক্কা সামলাতে না পেরে মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে অর্ঘমা। আথে তার সবুকে ব্যাথার রোগের শুরু। শ্বাসের উপদ্রব থাকলেও সেই ঘটনার পর সেটা বেড়ে যায়। দাদুম ছিল তার একমাত্র আপনজন। বাংলাদেশে চিকিৎসায় যখন অর্ঘমা সুস্থ হচ্ছিলোনা তাকে নিয়ে সিংগাপুর যাওয়া হয় সেখানে চিকিৎসা হয় তার। তারপর সুস্থ। অর্ঘমার চিকিৎসার পিছনে জমানো সব টাকা- কিছু জমি খরচ হয়ে যায়। শুধু থেকে যায় তাদের সাত তলা বিশিষ্ট বাড়িটা। বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে চলে যায় তাদের দু’জনের। কিন্তু বিপদ তাদের পিছন ছাড়েনি। দু’এক বছর পর অর্ঘমার দাদির ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরে। অর্ঘমা চোখে অন্ধকার দেখে। একা একাটি মেয়ে যার কেউ নেই। এক দাদি ছিল সেও পরপারে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়িয়ে রেখেছে। শেষ ভরসা বাড়িটা সেটা বিক্রি করে দাদুমের চিকিৎসা করতে চায় অর্ঘমা। সেখানেও বাদ সাধে দাদুম। তিনি চাননি মাথার ছাদ হাড়াতে। তার কিছু হয়ে গেলে অর্ঘমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই বাড়িটা ছাড়া। যখন সব পথ বন্ধ হয়৷ তখন ফেরেস্তা রুপে সামনে আসে নিফান সে সাহায্য করে কিন্তু সাহায্যর বিনিময়ে নিজেকে বিক্রি করতে হয় অর্ঘমার। নিফান কিনে নেয় তাকে। অবশ্য লোক দেখানো বিয়ের রেজিস্ট্রি অবশ্য করেছিল। চার কলেমা আর কবুল ও পরেছিল। কিন্তু সেটা নামে পবিত্র বন্ধন। যাতে তার অর্ঘমাকে ছোঁয়াটা হারাম নয় হালাল হয়। প্রথম প্রথম তাকে মানুষিক অত্যাচার করলেও কখনো শারিরীক, যৌন অত্যাচার নিফান তাকে করেনি কিন্ত আজ তাও করছে। নয় মাস হয়ে গেছে এখনো বাকি ন’মাস তাকে নিফানের সাথে থাকতে হবে তারপর চুক্তি শেষ। ইদানীং বুকে খুব কষ্ট হয়। নিজেকে আবারো পাগল মনে হয় অর্ঘমার। ইদানিং সে তার চোখের সামনে মাম্মাম-পাপা, ভাইয়া সবাইকে দেখতে পায়। তাদের সাথে কথাও বলে কিন্তু সে জানে তারা কেউ বেঁচে নেই তবুও। ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে অর্ঘমা। তার মনে হচ্ছে। সে আগের মতো কল্পনায় নিফান কে দেখতে পাচ্ছে। এটা শুধু ভ্রম সে আবার পাগল হয়ে যাচ্ছে। তাই নিফানকে সে তার কাছে দেখতে পাচ্ছে। এ ভ্রমে যদি নিফান তাকে হাজারো অত্যাচার করে তাতেও সে খুশি নিফান কে তো নিজের কাছে পাশে দেখতে পাচ্ছে।

বেশ রাত করে বাড়িতে আসে নিফান। আজও ড্রাংক ঘরে এসে দেখে আজও রুমের লাইট অফ তবে ড্রিম লাইট জ্বালানো। ড্রিম লাইটের আলোতে অর্ঘমাকে দেখা যাচ্ছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাঁকিয়ে আছে। পাতলা সাদা জর্জেট শাড়িতে বেশ আবেদনময়ী লাগছে তাকে। নিফানের কথা মতো সে আসার আগে নিজেকে তার জন্য তৈরি করে রাখে অর্ঘমা। চোখ পিট পিট করে বেশ কয়েক বার সেদিকে তাঁকিয়ে হেলেদুলে অর্ঘমার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। অর্ঘমার উন্মুক্ত পেটে হাত ছোঁয়ায়। কেপে উঠে অর্ঘমা চোখ বন্ধ করে নেয়। নিফান অর্ঘমাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। পিঠ থেকে চুল সরিয়ে ঠোঁট ছোয়ায় সেখানে। কোলে তুলে নেয় অর্ঘমাকে বিছানায় শুইয়ে তার চাহিদা মেটায়।
ভোরে ঘুম ভেংগে যায় অর্ঘমার। ব্যাথায় টনটন করছে তার শরীর। কিন্তু নড়ার উপায় নেই। নিফান তার উপরে শুইয়েই তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। এক পলক নিফানের দিকে তাঁকায় অর্ঘমা। কোনো রকমে নিফান কে সরিয়ে গায়ে শাড়ি জড়িয়ে উঠে ফ্রেস হতে যায় অর্ঘমা। ফ্রেস হয়ে এসে আয়নায় নিজেকে দেখে। আজ কেমন পরিপূর্ণ নারী মনে হচ্ছে নিজেকে। অত্যাচার করার জন্য হলেও তার স্বামী তার কাছে এসেছে তাকে ছুঁয়েছ। তাকে পরিপূর্ণ এক নারীতে পরিনত করেছে। নিজের শরীরে নিফানের দেয়া দাগ গুলোতে হাত বুলায় অর্ঘমা। তার স্বামীর দেয়া চিহ্ন এগুলো। একজন নারীর কাছে এর চেয়ে বড় চাওয়া কি আছে। কিন্তু তার স্বামী তাকে পরিপূর্ন ঠিক’ই করেছে তবে ভালবেসে নয়। তাঁকে অত্যাচার করার পন্থা হিসেবে৷ মৃদু হাসে অর্ঘমা। তাঁর জীবনের ২৬ বছর একা কাটানোর পর সে এখন পরিপূর্ণ এক নারী। ২৬ বছরের জীবনে সে প্রথম কোনো পুরুষের ছোঁয়া পেয়েছে তাও কম কিসে। হোক না তা অত্যাচার। চোখের কোনের জল মুছে কিচেনে চলে যায় অর্ঘমা। নিফান ওঠার আগে খাবার রেডি করতে হবে। বাড়ির সব কিছু সার্ভেন্টের দায়িত্বে থাকলেও রান্নার দায়িত্ব শুধু তার। নিফানের আদেশ তা। যা হয়ে যাক রান্না অর্ঘমা কে করতে হবে। অবশ্য সেটাও অত্যাচারের অন্য এক পন্থা। তবে নিফান তো জানেনা। আজকের অর্ঘমা চার বছর আগের অর্ঘমা এক না। আজকের অর্ঘমা এতিম। ঘর ছাড়া। কারো টাকায় কেনা ‘রক্ষিতা’। যে রান্না থেকে শুরু করে সব পারে। চার বছর আগের অর্ঘমা ছিলো বাবা-মায়ের আদরে বাদর হওয়া রাজকন্যা, ভাইয়ের কলিজার টুকরো। মলিন হাসে অর্ঘমা রান্নার জোগাড় করতে করতে পাশে তাঁকায়। দেখে তার মা দাঁড়িয়ে আছে পাশে। মা’কে দেখে মলিন হেসে বলে অর্ঘমা,,
__‘তোমার রাজকন্যা রান্নাটা ঠিকঠাক করছে তো মাম্মাম? দেখ আমি রান্নাও শিখে গেলাম। প্রিন্সেস অর্ঘ রান্না শিখে গেছে অদ্ভুত না। প্রিন্সেস অর্ঘ এখন কিচেনেও যায়। তুমি কিন্তু পাপ্পা আর ভাইয়া কে বলো না ওরা খুব কষ্ট পাবে। সব কথার মতো এটাও আমাদের সিক্রেট।
মায়ের দিকে চোখ সরিয়ে নিজের মনে বলে অর্ঘমা,
__‘তুমি এখন যাও তো মাম্মাম। তোমার সাথে এভাবে একা একা কথা বলতে দেখলে মানুষ আমায় পাগল ভাব্বে। ওরা তো আর জানেনা যে তুমি আসো আমার কাছে। আমি তোমমাদের দেখতে পাই। কথা বলতে পারি। শুধু,,
মন খারাপ করে বলে অর্ঘমা,,
__‘শুধু ছুঁতে পারিনা’

আজকাল প্রতিদিন নিফান অর্ঘমার সাথে মিলিত হয়। অর্ঘমাও তাকে বাধা দেয়না। বরং বলা যায় বাধা দিতে পারেনা। কারন নিফান তার হক বুঝে নিচ্ছে৷ অর্ঘমা তা দিতে বাধ্য। তবে নিফান কখনো তাকে ভালবেসে কাছে টেনে নেয়নি। প্রতিবার এক অজানা আক্রোশ নিয়ে তার কাছে আসে নিফান। তাদের মধ্যে তেমন কথাও হয়না শুধু প্রতি রাতে শরীরের সাথে শরীরের মিলন হয়। আজও নিজেকে নিফানের জন্য তৈরী করে রাখে অর্ঘমা। প্রতি রাতে’ই নানা ভাবে নিজেকে নিফানের সামনে প্রেজেন্ট করে। তাদের মধ্যে যেটুকু হয় তা শুধু প্রফেশনাল। নিফান তাকে টাকা দেয়। অর্ঘমার টাকার বিনিময়ে শরীর দেয়। এভাবে চলছে দিন। প্রতিদিনের মতো ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে বাড়ি ফিরে নিফান। তবে আজ একা না সাথে উরবুশি নামের মেয়েটা। অবাক হয় অর্ঘমা। এখন উরভুশিকে কি দরকার। যেখানে সে আছে। নিফান হয়তো তার মনের প্রশ্ন বুঝতে পেরেছে তাই কাটকাট গলায় উত্তর দেয়,
__‘প্রতিদিনের জন্য তো তুমি আছো। আজ আমার ওকে দরকার তাই ওকে এনেছি। আজ তোমার ছুটি পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পরো। বুকের ভিতর ক্ষতবিক্ষত হলেও মুখে তা প্রকাশ করে না অর্ঘমা। নিশ্চুপ ভাবে হেটে পাশের ঘরে চলে যায়। যেতে যেতে শুনতে পায় পাশের ঘরের ছিটকিনি আটকানোর শব্দ।

চলবে,
(ভালো ভালো মন্তব্য চাচ্ছি,, আগের পর্বের মতো ভালো মন্তব্য নিশ্চয়ই পাবো আগের পর্বের রেসপন্স দেখে। আজকে এই পর্বটা আবার দিলাম। এই পর্বেও রেসপন্স করলে ভালো কিছু দেব)
(যথেষ্ট শালীন ভাবে দেয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরো ভুল হলে জানাবেন। গল্পের নাম’ই যখন ‘রক্ষিতা’ এটুকু না লিখলে নয়। এটুকু না হলে গল্পের নামের কোনো মানে থাকে না। তবে অশ্লীল কিছু মনে হলে জানাবেন আমি সংশোধন করবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here