রহস্যময় সারপ্রাইজ পর্ব-৫

0
685

#রহস্যময়_সারপ্রাইজ
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা
পর্ব-৫

বসুন্ধরার আবাসিক এলাকার রাস্তা ধরে হেটে হেটে যাচ্ছে একটা ছেলে। হলদে ফর্সা গায়ে সাদা টি-শার্টের উপর নীল চেক শার্ট জড়ানো। পরনে ব্লু ডেনিম প্যান্ট। ফর্সা চেহারার ধসূর কালো ঠোঁট দিয়ে বেশ কায়দা করে সিগারেটে টান দিচ্ছে। খানিক পর পর উদাসীন চোয়ালটা আকাশের দিকে তাক করে নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে। দুই কানে ভর দেয়া কালো-লাল মিশ্রণের হেডফোনটা মাথায় জড়ানো। ভাবভঙ্গিতে আন্দাজ করা যায় গান-টান শুনছে। সিলভার কালার ব্রেসলেট জড়ানো ডান হাতটার তর্জনী আর মধ্যমার মধ্যখানে একটা সিগারেট আটকানো। রুমাল বাধা বাঁ হাতের তালুতে মোবাইল আবদ্ধ। বাদামী চোখের দৃষ্টি মোবাইলের পর্দায় নিবদ্ধ। খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে কিছু একটা দেখছে। চারদিকের কোন খেয়াল নেই তার। ভাবখানা এমন যে দুনিয়া ভেসে যাক তাতেও তার আপত্তি নেই। ছেলেটার ঠিক সামনে কয়েকগজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুলিশের জিপ। ভেতরে পুলিশী পোশাক গায়ে দেয়া মধ্যবয়সী কয়েকজন লোক বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলেটাকে পরখ করছে। তারা কিছু একটা মিলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যর্থতাকে বরণ করে নিয়ে তাদের মধ্য থেকে একজন পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়াল লিস্টে থাকা প্রথম নাম্বারটায় ডায়াল করল। রিসিভ হওয়া অবধি ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। রিসিভ হতেই সাত ইঞ্চি লম্বা স্ক্রিনের স্মার্টফোনটা কানে লাগাল। তারপর বলল,
” ইন্সপেক্টর অধরা, আপনি সিওর এই ছেলেটাই খুনী?মানে একেই খুনের দায়ে গ্রেফতার করতে হবে!”

ভাটারা থানার ওসির কথায় অধরা সামনে থাকা কম্পিউটারের স্ক্রিনে জিপিএস লোকেশনে চোখ বুলিয়ে বলল,
” আমি নিশ্চিত, ইন্সপেক্টর শাহরিয়ার। এই মুহুর্তে আপনার ঠিক সামনে যেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে সেই অপরাধী, যার নাম অভিলাষ। যত দ্রুত সম্ভব তাকে গ্রেফতার করুন!”
হাসান শাহরিয়ার অবিশ্বাস্য গলায় বলল,
“কিন্তু ছেলেটাকে দেখে তো অপরাধী মনে হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা, কোন দ্বিধা নেই। একটা খুনী কি এভাবে চলাফেরা করতে পারে?”

উত্তরে চোখে মুখে বিরক্তির আভা এনে অধরা বলল,
“পারে, যার প্রমাণ আপনার সামনেই আছে। অপরাধী টের পাওয়ার আগেই গ্রেফতার করুন। টের পেলে পালিয়ে যাবে। এমনিই এটা জটিল কেস। এই আসামীকে হাতের নাগালের বাইরে যেতে দিলে আরো জটিল হবে। ”
” আসোলে, খটকা লাগছিলো। আপনি চিন্তা করবেন না,আমি এক্ষুনি গ্রেফতার করছি এবং আপনার কাছে হস্তান্তর করছি।”
“কুইক।”

ফোন রেখে হাসান শাহরিয়ার তার সামনে থাকা ছেলেটার দিকে আরেকবার তাকালো। বুঝার চেষ্টা করলো এই ছেলে আদৌ খুন করতে পারে কি না। চেহারায় উপচে পড়া স্নিগ্ধতা, সেকি নিষ্পাপতার ছায়া! আচ্ছা, একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে খুন করে এতটা নিশ্চিন্তমনে ঘুরে বেড়াতে পারে! খুন করার পর খুনীর চেহারায় ভয়, অপরাধী ভাবটা থাকে। থাকে সন্দেহজনক আচরণ। যা খুনীকে সন্দেহের তালিকায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু এই ছেলেটার চেহারায় ভয় কিংবা অপরাধবোধের লেশমাত্র ছায়া নেই। ছেলেটাকে উদাস লাগছে,অপরাধী নয়। হাসানের বারবার মনে হচ্ছে এই ছেলেটা খুনী হতে পারে না। এত নিষ্পাপ চেহারা নিয়ে কেউ খুন করতে পারে! নিশ্চিত একে কেউ ফাঁসাচ্ছে। হাসানের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো কনস্টেবলের কথায়,
“স্যার ছেলেটা তো চলে যাচ্ছে। গ্রেফতার করবেন না?”
ভাবনা থেকে বের হয়ে হাসান শাহরিয়ার গায়ে জড়ানো সফেদা রঙের শার্টটা টেনে গাড়ি থেকে নামল। তারপর বলল,
“সবাই পজিশন নাও।”

***

অধরার সামনে বসে আছে অভিলাষ। ভাটারা থানা পুলিশ অধরার কথায় অভিলাষকে তাদের থানার অন্তর্ভুক্ত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আটক করে মিরপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। আটক করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে থানায় আনা হয়েছে। এই মুহুর্তে তারা বসে আছে এক আঁধার ঘরে। যার মধ্যখানে একটা টেবিল ও দুটো চেয়ার পাতানো। টেবিলের উপর হাত ভাজ করে চেয়ারে বেশ আয়েশ করে বসে আছে অধরা। তার পিছনে গোটা পাঁচেক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। অধরার বিপরীত মুখী চেয়ারটায় অধরার মুখোমুখি বসে আছে অভিলাষ। অভিলাষের চোখে মুখে ভয়ের লেশ মাত্র নেই। সে ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। ভাবখানা এমন যেন সে থানায় নয়, নিজ বাসায় আছে। আর ঘটিত ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অভিলাষের চেহারায় একটা নিষ্পাপ ছোঁয়া লেগে আছে।যেন অভিলাষের চেয়ে নিরীহ মানুষ আর দুটো নেই । অধরার চোখে মুখে রাগের গাঢ় রেখা স্পষ্ট । অভিলাষকে অন্তর্ভেদী চোখে খানিক পরখ করে অধরা রাশভারি গলায় বলল,
“তো মি.অভিলাষ, এবার বলুন ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু এবং পরিসমাপ্তি কোথায় এবং কিভাবে করলেন সব?”
“কী করেছি আমি!” বিস্মিত স্বরে ভ্রু কুঁচকে বলল অভিলাষ। অধরা ও ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আপনি সত্যিই বুঝতে পারছেন না, আপনি কী করেছেন?”

শীতল, স্বাভাবিক স্বরে অভিলাষ উত্তর দিলো,
“নাহ, আমার জানামতে আমি এমন কিছু করিনি যার কারণে আমাকে আটক করা যাবে। আপনারা বিনাদোষে আমাকে আটক করেছেন। ”

“রিমান্ডে নিয়ে টর্চার শুরু করলে সব মনে পড়বে। একটা জলজ্যান্ত মানুষকে খুন করেছেন। আবার বলেন কিছু করেন নি!” অধরার স্বরে রাগ ঝরে পড়ল। তার কথায় অভিলাষ বিস্মিত চোখে তাকাল। এমন একটা ভাব যেন সে অধরার মুখ থেকে অপ্রত্যাশিত কোন খবর শুনেছে। যা শুনে সে বিস্ময়ের সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেছে। অভিলাষ বিস্মিত কন্ঠে বলল,
“আপনি বলতে চাইছেন,আমি খুন করেছি?”

” আপনি করেন নি!”
ভ্রু কুঁচকে বললো অধরা। অভিলাষ দ্বিধাগ্রস্ত চেহারায় বলল,
” আমার সাথে খুনের কী সম্পর্ক! আমি আজ অবধি কাউকে ছুরিঘাত ও করিনি, সেখানে খুন তো অনেক পরের কথা। আমার মনে হয় আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ”
” চোর চুরি করে কখনো বলে, আমি চুরি করেছি? সমস্ত প্রমাণ আপনাকেই খুনী বলে উল্লেখ করে। আপনিই প্রতিভাকে খুন করেছেন।” দৃঢ় স্বরে বলল অধরা।
অভিলাষ অবিশ্বাস্য চাহনি দিয়ে বলল,
“আমি খুন করব, তাও যাকে কিনা আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তাকে! এর থেকে আমি নিজেকে নিজে খুন করেছি বললে কথাটা শুনে আমার কষ্ট কম হতো।আমি প্রতিভাকে খুন করব কেনো! আমি তো ওকে ভালোবাসি। আমি প্রতিভাকে খুন করিনি।”
আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে উঠলো অভিলাষ। তার অবুঝপনা দেখে অধরার রাগ তখন মাথায় চলকে উঠেছে।
টেবিলে বাড়ি দিয়ে রাগত স্বরে বলল,
” আপনি যদি খুন না করে থাকেন, তবে আপনার ঘরে প্রতিভার লাশের সাথে পাওয়া চিরকুট,নেম কার্ড,আর প্রতিভার গায়ে থাকা ড্রেস,নেকলেস কেনার রিসিট পাওয়া গেলো কিভাবে! সব কিছু আপনাকে খুনীই প্রমাণ করে। তাই ভালোয় স্বীকার করুন অন্যথায় রিমান্ডে নেয়া হবে। তখন নিশ্চয়ই ভালো হবে না?”

অভিলাষ নির্মল কন্ঠে বলল,
“বিশ্বাস করুন ম্যাডাম, আমি কিছুই করিনি। কিসের ড্রেস? কিসের চিরকুট! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

অধরা জিহাদকে ইশারা করল। জিহাদ দুটো জিপার প্যাকেট টেবিলের উপর রাখল। প্লাস্টিক জিপার প্যাকেটের ভিতর রিসিট,নেম কার্ড আর কালার পেপার দেখা যাচ্ছে। অধরা প্যাকেট দুটো ইশারা করে বলল,
” এ জিনিসগুলো আপনার রুম থেকে জব্দ করা হয়েছে। লাশের সাথে ও ঠিক এমন কালার পেপার, নেম কার্ড, এবং রিসিটে কেনা ড্রেস পাওয়া গিয়েছে। এ সম্পর্কে আপনার অযুহাত, মানে মতামত কী?”

প্যাকেট দুটোতে চোখ রাখতেই বিস্ময়ে অভিলাষের চেহারার রঙ পাল্টে গেলো। যেন সে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য নিউজিল্যান্ডের লেক রোটোমোহনার সিলিকা নামক গোলাপি-সাদা সিঁড়ির মতো উপত্যকাটির সৌন্দর্য খুব কাছ দেখছে। বিস্ময়ে তার চোখের পাতা অব্দি নড়ছে না। সে অবাক চোখে টেবিলের উপর থাকা প্যাকেট দুটোর দিকে তাকিয়ে রইল। খানিক তাকিয়ে তারপর চোখ উঠিয়ে অধরার দিকে তাকাল। অধরা প্রশ্নবোধক চাহনিতে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“এখনো বলবেন আপনি কিছু করেন নি?”

“এ..টা কিভাবে সম্ভব! ”
বিচলিত কন্ঠে বলল অভিলাষ । সচেতন চোখে তাকিয়ে অধরা বলল,
“এই অসম্ভবকেই আপনি সম্ভব করেছেন। এখন বলুন, খুন কিভাবে করেছেন আর আপনি ছাড়া এসবে কে জড়িতে আছে।”
তৎক্ষনাৎ উত্তর দিল না অভিলাষ। নির্মল, শূন্য চোখে চেয়ে রইল। তারপর করুণ গলায় বলল,
“আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে ম্যাডাম। ”

অভিলাষের কথা এড়িয়ে অধরা বাঁকা হেসে বলল,
“আপনি প্রতিভাকে স্কুল জীবন থেকে বিরক্ত করতেন। প্রতিভার বিয়ের আগে মাত্রাধিক বখাটেপনার জন্য আপনি জেলে ও গিয়েছেন। জেল থেকে বেরিয়ে এসেই আবার আপনি আপনার বখাটেপনা শুরু করেছেন। তুরাগের এক্সিডেন্ট করিয়েছেন, প্রতিভার ছবি অশ্লীলভাবে এডিট করে হুমকি দিয়েছেন। সেই সাথে খুন করার হুমকি দিয়েছেন। এসব করেছেন প্রতিভাকে পাওয়ার জন্য। আর যখন এসবে ও প্রতিভাকে ভাগে আনতে পারেন নি তখন ওকে খুন করলেন। দেখুন, শাক দিয়ে মাছ ঢেকে লাভ নেই। আমি জেনে গিয়েছি সব। সুতরাং সময় অপব্যয় না করে স্বীকার করে ফেলুন।”

অধরার কথায় ও অভিলাষের চেহারায় কোন ভয়ের রেখা উঁকি দিলো না। ভয়ের পরিবর্তে দেখা দিলো এক রাশ বিমর্ষতা।
অভিলাষ বিষণ্ণ গলায় বলল,
“আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি যে, আমি প্রতিভাকে স্কুল জীবন থেকে ভালোবাসতাম,এখনো ভালোবাসি। আপনারা যেটাকে বিরক্ত করা বলেন আমি সেটাকে ভালোবাসা প্রকাশ বলি। আমি সবসময় প্রতিভার কাছে বিভিন্নভাবে নিজের ভালোবাসাটা তুলে ধরেছি। আমি শুরু থেকেই চাইতাম প্রতিভা আমাকে বুঝুক, আমাকে ভালোবাসুক। আমি সুন্দরভাবেই ওকে ভালোবাসার কথা বলতাম,কখনো গিফট পাঠাতাম, কখনো বা চিঠি। সেই ক্লাশ নাইন থেকে ওকে আমি ভালোবাসি। সেই থেকে আজ এগারোটা বছর ধরে আমি ওর জন্য,ওর ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করে আসছি। আমার ভালোবাসাটা যদিও সবার কাছে উত্যক্ত আর বখাটেপনা। ভালো না বাসলে ইভটিজার, ভালোবাসলে প্রেমিক। ও আমাকে ভালোবাসলে এসব হয়তো ভালোবাসার পাগলামী নামে আখ্যায়িত হতো। প্রতিভা আমাকে পছন্দ করতো না বলেই আমি ইভটিজার, বখাটে। কিন্তু ম্যাডাম বিশ্বাস, করুন, আমি কখনোই ওর গায়ে হাত দিই নি, শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও করিনি। আমার ভালোবাসা প্রতিভা বুঝতোনা বলেই ওকে আমার কাছে আনার জন্য হুমকি দিতাম। প্রতিভার বিয়ের আগে জেলে যাওয়ার কারণ ছিলো তুরাগ।”

“তুরাগ!”
কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বললো অধরা। অভিলাষ নিষ্পলক চেয়ে চাপা স্বরে বলে ওঠল,
“হ্যাঁ তুরাগ,তুরাগই ছিলো মূল কারণ, প্রতিভার আমার প্রত্যাখ্যান আর তুরাগের সাথে অতি মেলামেশা। যা আমার একদমই সহ্য হতো না। আমি কোনভাবেই তুরাগকে প্রতিভার সাথে সহ্য করতে পারতাম না। ভালোবাসায় ভাগ হয় না বলে কথাটা আমার মাথায় ঝেকে বসেছিল প্রতিভার বিয়ের কিছু সময় আগেই। অনেক দিন চুপ থাকলেও তখন আর চুপ থাকতে পারিনি। অনিশ্চিত অপেক্ষা জিনিষটা ভয়ংকর। এই ভয়ংকরী অনিশ্চিত অপেক্ষাই আমাকে ভয়ংকর করে তুলেছে। আমি প্রতিভার ভালোবাসার কাঙাল ছিলাম। যখন ওর জীবনে কেউ ছিলো না তখন প্রতিভা আমাকে এড়িয়ে গেলেও আমার অতটা খারাপ লাগতো না। কিন্তু প্রতিভা যখন নিজের জীবনে তুরাগ নিয়ে আসল, তখন আমাকে ওর করা প্রত্যাখানটা মেনে নিতে কষ্ট হতে লাগল। দীর্ঘ দেড় বছর আমি নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকারো সাথে সহ্য করেছে। হঠাৎ যেন আমার সহ্য ক্ষমতা বিলীন হয়ে গেল। সব কিছুর মাঝেই আমার একটা কথাই মনে হতো, তা হলো প্রতিভাকে আমার চাই। ও শুধু আমার। আমি নিজেকে গুছিয়ে একটা কাজ জোগাড় করলাম। তারপর ভালোভাবেই প্রতিভাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলাম। কিন্তু আমি তখনও প্রত্যাখ্যান উপহার পেয়েছি। তারপর ও আমি হাল ছাড়িনি। কয়েকবারই প্রস্তাব দিয়েছি। প্রতিবারই জবাব ‘না’ এসেছে। সাথে অপমান আর অপদস্ত তো আছেই। প্রতিভার বাবা মা আমাকে জানিয়েছিল তারা আমাকে নয় তুরাগকেই তাদের মেয়ে জামাই হিসেবে মেনে নিবে। হাতাশা আমাকে আবারও ঘিরে ধরল। আমি আর নিতে পারছিলাম না। উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম এসবের প্রভাবে। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে যা মনে আসছিল তাই করেছি। ওকে হুমকি দিয়েছি তুলে নিয়ে ধর্ষণ করার। ফলাফল আমার জেল হলো আর প্রতিভার বিয়ে। তাও তার ভালোবাসার মানুষের সাথে।”

থামল অভিলাষ। তার চোখে মুখে হতাশার রেখা ফুটে উঠল। বিষন্ন মুখে হাসি আভা দেখা গেল, সে হাসিটা বিদ্রুপের। অধরা প্রশ্ন করল,
“জেল থেকে বের হয়ে এসবের প্রতিশোধ নিতে তুরাগকে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের জোরে তুলে বেঁচে গেল। এতকিছুতেও যখন ওদের আলাদা করতে পারেন নি তখন প্রতিভাকে খুন করলেন। তাই তো?”

অভিলাষ বিমর্ষচিত্তে বলল,
” এ কথাটা ঠিক যে, জেল থেকে বের হওয়ার পর আমি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম। সেই সাথে কথাও ঠিক যে, বরাবরের মতো তখনো আমার শত্রুতা শুধু মাত্র তুরাগের সাথেই ছিলো। তুরাগকে সহ্য হতো না। তুরাগকে সরাতে চাইতাম। তাই এক্সিডেন্টে করিয়েছি। কিন্তু সে প্রাণে বেঁচে গেলো। এতেও যখন প্রতিভা আর তুরাগকে আলাদা করতে ব্যর্থ হলাম তখন প্রতিভাকে হুমকি দেয়া শুরু করলাম। এসব করেছি শুধু মাত্র প্রতিভাকে নিজের করার জন্য। তখনো প্রতিভাকে পাওয়ার ক্ষীণ আশা আমার মনের কোণে জমাট বাধা ছিল। আমি ভেবেছিলাম প্রতিভাকে ব্ল্যাকমেইল করলে প্রতিভা ভয়ে তুরাগকে ডিভোর্স দিয়ে আমার কাছে আসবে। আমার ক্রিয়াধারা এতটুকুতেই সমাপ্তি হয়েছিলো। ও যখন আমার কাছে আসেনি তখন আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি। হতাশাকে বরণ করে তাকে নিজের মতো থাকতে দিয়েছি। ”

“এত তাড়াতাড়ি আপনার হাল ছেড়ে দেয়াটা অবিশ্বাস্য আর বেমানান লাগছে কেন যেন। মনে হচ্ছে আপনি কিছু লুকাচ্ছেন। সত্যিই কী তাই? ”
ঠোঁট উল্টিয়ে বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করল অধরা।

অভিলাষ টলমল চোখে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
” যার জন্য এগারোটা বছর অপেক্ষা করেছি, যাকে এগারোটা বছর ভালোবেসে এসেছি সেই মানুষটা যখন অন্য একজনকে ভালোবেসে তার ভালোবাসার চিহ্ন পেটে ধারন করে। তখন সেই কথা জেনেও আমার হাল ধরে রাখা নিতান্তই বোকামি নয় কি!”

অভিলাষের কথা শুনে অধরার মাঝে সন্দিহান গলায় বলল,
“প্রতিভার প্রেগন্যান্সির কথা আপনি জানতেন!”
“হ্যাঁ। জেনেছি বলেই ছেড়েছি ওকে। ”
নির্দ্বিধায় বললো অভিলাষ। অধরা প্রশ্নবিদ্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“কিভাবে এবং কবে জেনেছেন?”

“প্রতিভা মারা যাওয়ার পনেরো কী বিশ দিন আগে, একদিন ও বেরিয়েছিলো চেকাপ করতে। ওকে ফলো করতে করতে আমিও হাসপাতালে চলে গেলাম। গিয়েই জানতে পারলাম যে ও প্রেগন্যান্ট। অন্য কারো ভালোবাসা শরীরে বহন করছে শুনে আমার দুনিয়াটাই ঘুরে গিয়েছিলো সেদিন। ইচ্ছে করছিলো সব শেষ করে দিই, কিন্তু পারি নি। নিজেকে সামলে নিলাম। প্রতিভা একদিন বলেছিল, ভালোবাসা মানে কিন্তু ভালোবাসার মানুষটিকে তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের কাছে বন্দি রাখা নয়। সত্যিকারের ভালোবাসা হলো ভালোবাসার মানুষটিকে ভালো রাখতে শিখানো, তার সুখ খুঁজে তাকে উপহার দেয়া। বিপরীত মানুষটিকে আকঁড়ে রাখায় নয়, বিপরীত মানুষটিকে ভালো রাখার মাঝেই ভালোবাসা। আমি সেদিন বারবার প্রতিভার বলা কথাটা আওড়ালাম। তারপর অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম, আকঁড়ে ধরে নয়, ভালোবাসার মানুষটিকে ভালো থাকার সুযোগ করে দিবো। আমি না হয় ওকে নাই বা পেলাম! নাই বা পেলাম ওর ভালোবাসা। আমি তো হতাশা আর অসুখী জীবনটাকে আপন করে নিয়েছি। আমার খুব একটা কষ্ট হবে না। কিন্তু যাকে আমি ভালোবাসি, সে তো এসবে অভ্যস্ত নয় । নিজে সুখী হতে গিয়ে প্রতিভাকে অসুখী জীবন উপহার না দিয়ে বরং নিজে অসুখী জীবনকে বরণ করে নিয়ে প্রতিভাকে সুখী জীবনই উপহার দিলাম নাহয়! ভালোবাসাটা সুখে থাকুক,আমার সাথে না হয় অন্য কারো সাথে! আমি তাকে ভালোবেসে যাবো না হয় দূর থেকেই! সেদিন থেকেই ওর থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছি। সেদিনের পর আর কখনো ওকে কোন প্রকার বিরক্ত করিনি।”

এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে থামলো অভিলাষ। চোখজোড়ায় মুক্তোর দানার মতো জ্বলজ্বল করছে অশ্রুফোঁটো। গলা কেঁপে উঠছে বিষন্নতায়। চোয়ালে হতাশার ছায়া। অধরা মনোযোগী শ্রোতার মত অভিলাষের সব কথা গুলো শুনল। অভিলাষ কথাগুলো মনের অন্তঃস্থল থেকে নিংড়ে আবেগ মিশিয়ে উপস্থাপন করেছে। শুনতে খারাপ লাগছিল না। অধরার মনে হচ্ছিল সে কোন আসামীর সামনে নয় বরং কোন কবির সামনে বসে আছে।

মানুষ প্রেমের পড়ার পর কবি হয় নাকি কাব্য রচনার গুন মনে পুষেই প্রেমী হয়! একটা বখাটের মনেও এতটা প্রেম ভালোবাসা থাকতে পারে কল্পনাতীত ছিল অধরার। আহ্! প্রেম! তুমি ছন্দে আনন্দে মানুষ আর মানুষের মন দুটোকেই বদলে দাও।

একটা লম্বা শ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করল অধরা। তারপর নড়েচড়ে বসে বললো,
“আপনার কথা অনুযায়ী আপনার মূখ্য কথা হলো আপনি প্রতিভকে খুন করেন নি, তাই তো?”

” প্রতিভাকে বিরক্ত করতাম, নানাবিধ হুমকি দিতাম ঠিকই কিন্তু আজ অবধি কখনো ওর গায়ে একটা নখের আঁচড় ও দিই নি। আমি মানষিক ভাবেও প্রতিভাকে কষ্ট দিতে চাই নি কখনো। কিন্তু প্রতিভা আমার ভালোবাসা বুঝতো না,অগ্রাহ্য করতো বলেই রেগে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই কষ্টে দিয়ে ফেলতাম। কিন্তু কখনোই ওর চোখের পানি অবধি আমি সহ্য করতে পারতাম না। ওর কষ্টে আমার কষ্ট হতো। যেখানে আমি কখনো ওকে নখের আচঁড় ও দিতে পারি নি সেখানে ওকে খুন করার কথা ভাবাও কল্পনাতীত। আমি নিজেকে মারতে পারি, ওকে নয়। আমি ওকে খুন করিনি। ” দৃঢ় হয়ে এলো অভিলাষের গলা।

অধরা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আপনি ওকে এত ভালোবেসে থাকলে ওর মৃত্যু আপনার মাঝে কোন পরিবর্তন আনছে না কেনো?আপনি তো দিব্যি আছেন।”

তৎক্ষনাৎ উত্তর দিল না অভিলাষ। উদাস হলো। রুমটায় ঢেকে গেল নিস্তব্ধতার আলখাল্লায়। নিরবতাময় রুমটায় বেশ শব্দ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সেই দীর্ঘশ্বাসটাকে ভেতরকার কষ্টের ঝড়ের বহিঃপ্রকাশ ও বলা যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভিলাষ করুণ কন্ঠে বলল,
“একটা মেয়ে নিজের কষ্টটা যত সহজে প্রকাশ করতে পারে একটা ছেলে ততটা সহজে কখনোই প্রকাশ করতে পারে না। মেয়েরা কেঁদে কেটে চোখের পানিতে কষ্ট ঝরাতে পারে, ছেলেরা পারেনা। কারণ, রীতিমাফিক ছেলেদের কান্না করা নিষিদ্ধ, প্রেমিকার বিরহে উদাস হওয়া ঘোরতর অপরাধ। সেই সাথে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো হাস্যকর কথা। আমার কষ্টটা আমি প্রকাশ করতে পারছিনা।
তাছাড়া, আমি চাই প্রতিভার খুনীর বিচার হোক। তাইতো নিজের কষ্টটা মনে চাপা রেখে কষ্টটাকে দীর্ঘশ্বাসে প্রকাশ করে স্বাভাবিক ভাবে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।”

অভিলাষের কথা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হলোনা অধরার। তবুও সে চেপে গেল। পরবর্তী প্রশ্ন করল,
” আপনি যদি খুন না করে থাকেন, তবে আপনার রুমে চিরকুট নেমকার্ড,রিসিট আসলো কোথা থেকে এবং কেন? তাও সেগুলো, যেগুলো প্রতিভার লাশের সাথে পাওয়া গেছে!”

অভিলাষ আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি দিল,
” আমি প্রথমেই বলেছি, আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে ম্যাডাম। আমি এসবের কিছুই জানি না। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পেশায় একজন ক্ষুধে ব্যবসায়ী। বাবা অবসরপ্রাপ্ত গার্মেন্টস কর্মী। আমার সীমিত আয়ে সংসার চলে। আমি লাখ পাঁচের ডায়মন্ড সেট আর দশ হাজার টাকার ড্রেস কিনবো কিভাবে! যেখানে আমাদের নুন আনতে পান্তা পুরায় সেখানে পাঁচ লাখের ডায়মন্ড সেট কেনা, তাও আবার ভালোবাসার মানুষটাকে খুন করে তার লাশকে পরানোর জন্য! ব্যাপারটা হাস্যকর নয় কি! বাকি রইলো, চিরকুট আর নেমকার্ডের কথা, চিরকুট আর নেমকার্ডের লেখার সাথে আমার লেখার আকাশ পাতাল তফাৎ। এগুলো আমার লেখা নয়, অন্য কারো লেখা। কেউ ইচ্ছে করে প্রতিভাকে খুন করে প্রমাণ আমার রুমে রেখে গিয়ে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমি কিছুই করিনি।”

অভিলাষের স্পষ্ট জবাবের বিপরীতে অধরা রাগ ঝাড়ল,
“অন্য কেউ আপনার বাসায় গিয়ে আপনার রুমে এসব রেখে গিয়েছে, আপনি দেখেন নি। মজা করছেন আমাদের সাথে?”

” আমি থাকাকালীন সময় আমার রুমে এসব কিছুই ছিলো না।হয়তো আমার অনুপস্থিতিতেই কেউ রেখে এসেছে। ” অধরার রাগের বিপরীতে অভিলাষ কোমল জবাব দিল।
অধরা রাগ সংবরণ করে বলল,
“প্রতিভা খুন হওয়ার দিন রাতে আপনি কোথায় ছিলেন?”
“বাসায় ছিলাম।”
“রাতে দারোয়ানকে কল দিয়েছেন কেনো?”
“আমি কোন ফোন করিনি।”
“আপনার নাম্বার থেকে কল গিয়েছিলো দারোয়ানের কাছে। ”
“আমার ফোন চুরি হয়েছিলো তার দশ দিন আগে। সেখানে আমার নাম্বার থেকে কল যাবে কিভাবে?” নিরীহ মুখভঙ্গী অভিলাষের। অধরা সন্দিহান মুখে বলল,
“কিন্তু আপনার সিম তো এখনো আপনার হাতে।”
“ফোন হারানোর পর গতকালই সিম তুলেছি।”

অধরা কপালের চামড়া উপর নিচ করল। তারপর প্রশ্ন করল,
“সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু আপনি খুন না করলে পরিবার নিয়ে পালালেন কেনো?”
“আমি পালাই নি। আমার খালু কাল রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হুট করে। তাকে দেখতেই রাতের বেলা আমরা তিনজন ছুটে গিয়েছিলাম। যখন আসছিলাম তখন দারোয়ান গেঁটে ছিলো না তাই দেখেনি। আর ধুলোবালির এলার্জি থাকায় আমার মুখে মাস্ক ছিলো। যার কারণে যারা ছিলো তারা কেউ আমাকে চিনেনি।”

আরো কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেও তেমন কোন কিছু স্বীকার না করায় অভিলাষকে দুই দিনের জন্য রিমান্ডে পাঠানো হয়। রিমান্ডে ও তেমন কিছু বের করা যায় নি তার থেকে। সে আগের কথাগুলোই বলছে। অভিলাষের বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোন প্রমাণ নেই অধরার কাছে। অভিলাষের হাতের লেখা এবং অধরার লাশের সাথে পাওয়া চিরকুটের লেখার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, অভিলাষের মা বাবার ব্যাপারে খবর নিয়ে জানা গেছে তারা অভিলাষের খালার বাসায় আছে। যেটা বসুন্ধরার আবাসিক এলাকায়। সেই সাথে এ কথাও সত্য যে অভিলাষের খালু সত্যিই অসুস্থ। আর অভিলাষের রুমে পাওয়া রিসিট পর্যবেক্ষণ করে ঐ শপ দুটোতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বুঝা গেলো, প্রতিভা হত্যার দু’দিন আগে মাস্ক লাগিয়ে একটা ছেলে এসে নেকলেস আর ড্রেস নিয়ে গেছে। দৈহিক গঠন দেখে বলা যায়, ছেলেটা অভিলাষ নয়।

এসবের ভিত্তিতে অভিলাষের কথার সত্যার ব্যাপারে অধরার ধারণা জন্মাল। মনে হতে লাগল, অভিলাষকে কেউ ফাঁসিয়েছে! সব কিছুর দোষ অভিলাষের ঘাড়ে ছাপিয়ে নিজেরা সরে গিয়েছে! অভিলাষ আর তার পরিবার বাসা থেকে বসুন্ধরায় যাওয়ার পর কেউ যাবতীয় প্রমাণাদী অভিলাষের রুমে রেখে গেছে। কিন্তু কে করছে এসব!

***

রিমান্ড শেষে অভিলাষকে আদালতে হাজির করা হবে। আদালতে নেয়ার পথে মাঝ রাস্তায় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আকস্মিক হামলা করে পুলিশ ভ্যানের উপর৷ কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ি থেকে অভিলাষকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। চারদিকে খবর দেয়া হয়। অধরা ফোর্স নিয়ে পৌঁছে যায় সেখানে। চারদিক তল্লাশি করার পরও অভিলাষকে পাওয়া গেল না।

পরদিন সকাল সকাল থানায় কল আসে। বলা হয় ভুঁইয়া ভিলার অদূরে থাকা ঝোপ জঙ্গলে একটা পোড়া লাশ পাওয়া গেছে। অধরা তৎক্ষনাৎ তার টিম নিয়ে সেখানে পৌঁছে গেল। লাশ দেখে আঁতকে উঠল সবাই। কী মর্মান্তিকভাবে খুন করা হয়েছে! খুন করে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। শরীরে হাড্ডি ছাড়া কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। পাশেই লাশের পরিধেয় কাপড় পড়ে আছে।
কাপড় দেখে আরেক ধপা চমকে গেলো অধরা। সাদা গেঞ্জি, নীল টি-শার্ট। গতকাল অভিলাষের গায়ে জড়ানো পোশাকের সাথে মিলে যায়। তারমানে এই লাশ অভিলাষের! অধরা হাতে গ্লাভস পরে লাশের কাছে গেলো। লাশ দেখার পর অভিলাষের পরে থাকা শার্ট হাতে নিলো। তল্লাশি করে শার্টের বুক পকেটে থাকা কালো ছোট্ট চিরকুট নজরে এলো তার।

চিরকুটে লেখা একটা গানিতিক সংখ্যা। কালো চিরকুটের মাঝে কালো কালি দিয়ে লেখা “২০১” তারপর একটা হাসির ইমুজি আঁকা। অধরা বেশ কিছুক্ষণ চিরকুটের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে আন্দাজ করছে খুনী এই সংখ্যা দিয়ে কিছু একটা বুঝিয়েছে। কিন্তু কী! এই সংখ্যার মর্মার্থ কী হতে পারে? সংখ্যাটা মাথার উপর দিয়ে গেল অধরার। অধরার এই চিরকুট নিয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে সূত্র বের করবে বলে চিরকুটটা প্লাস্টিক জিপার প্যাকেটে রেখে কনস্টেবলকে দিয়ে দিলো যাতে এটা ফিঙ্গার প্রিন্ট বিভাগে পাঠানো হয়।
তারপর অভিলাষের লাশের দিকে নজর দিল। ঘন্টা খানেক সময় নিয়ে লাশ এবং আশেপাশে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন সূত্রই পাওয়া গেল না। শেষে লাশ ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে অধরা থানায় ফিরে আসল।

তার মাথায় ঘুরতে থাকল চিরকুটের সংখ্যাটা। ‘২০১’ এর মানে কী? কী বুঝিয়েছে খুনীপক্ষ!
চোখ বন্ধ করে মনে মনে অংক কষছে অধরা। মিনিট পনেরো পরে আকস্মিক চোখ খুলে অস্ফুট কন্ঠে বলল,
“তুরাগ!”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here