রহিবে মনের গহীনে পর্ব-০৭

0
1802

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_০৭
#Nishi_khatun

অরিন সকালের নাস্তা করে ড্রয়িংরুমে বসে টিভিতে ডোরেমণ দেখছিল। ঠিক সে সময় তার সামনে ইফান এসে উপস্থিত হয়।

ডোরেমণ দেখার মাঝে বাধা পরাতে মুখটা কালো করে ভ্রু কুঁচকে সামনে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে দেখে তার সামনে আর কেউ না ইফান দাঁড়িয়ে আছে।

-কী চাই আপনার? সামনে এমন পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? আপনার জন্য আমি কার্টুন দেখতে পারছি না।”

ইফান সোজাসুজিভাবে বলে,”দ্রুত রুমে গিয়ে রেডি হয়ে এসো। আমার সাথে বাহিরে যাবে কাজ আছে।”

-আমার জানা মতে আপনার সাথে আমার কোন কাজের সম্পর্ক নেই? তাহলে কেন আপনার কথা শুনতে যাবো?

–ইফান রেগে শক্ত কন্ঠে জোড়ে ধমক দিয়ে বলে,”অরিনননন বেশি কথা বলবে না! আমি যা বলেছি তা-ই করো। আমি বাহিরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি দ্রুত বাহিরে চলে এসো। না হলে তোমার খবর আছে।”

অরিন ইফানে ধমক শুনে বুঝতে পারে এখন লেকচারার এর সাথে মোটেই ত্যাড়ামি করা যাবে না।
তা-ই দ্রুত নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দ্রুত তৈরি হয় বাহিরে যাবার জন্য। এরপর জিনিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে আসে।

তারপর ইফানে সাথে গাড়িতে বসে রওনা দেয়।
গাড়ি ড্রাইভার ড্রাইভ করছিল তার পাশেে শিটে ইফান বসে। অরিন পেছনের শিটে একলা বসে।
অরিন জানে না তারা কোথায় যাচ্ছে।
গাড়িটা নিজ গতিপথে চলছে তো চলছে….
পুরো গাড়ির মধ্যে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। না ইফান কোন কথা বলছে না ইফান কে ডিস্টার্ব করার জন্য অরিন কোন কথা বলছে।

ইফান ভেবেছিল সারাপথ হয়তো অরিন নানারকম প্রশ্ন করে তার মাথা খেয়ে নিবে। তবে তার সব চিন্তা ভাবনা কে ভুল প্রমাণিত করেছে অরিন। ইফান কখনো স্বপ্নেও ভাবে নাই অরিন এমন চুপচাপ দুই ঘন্টার জার্নি করবে।

অরিন গাড়িতে বসে বাহিরে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখাতে এতোটাই ব্যস্ত ছিলো কখন যে সে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছে তা বুঝতেও পারে নাই।

ইফানে ডাকে তার ধ্যান ভাঙ্গে। গাড়ি থেকে নেমে দেখে সে একটা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তবুও কোন অনুভূতি প্রকাশ করে না। ইফানে হাতে অনেক কাগজপত্র! সে সব কিছু নিয়ে ইফান হাঁটতে শুরু করে। তার পেছনে পেছনে অরিন ও সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কিছু সময় পর ইফান অরিনের কলেজে ভর্তির সকল ফর্মালিটি কমপ্লিট করে। তারপর তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়।

ইফান তখন বলল,
–” সো আজকে থেকে কলেজ স্টুডেন্ট! তোমার অনুভূতি কেমন? ”

অরিন মলিন হাসি দিয়ে বলে,”সব অনুভূতি ভাষাতে প্রকাশ করা যায় না। সে কথা বাদ দিন! এখানে হোস্টেলে থাকার কোন ব্যবস্থা আছে না?”

-হ্যা আছে! সে খোঁজ দিয়ে তোমার কি কাজ?

–মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”আমার জন্য আপনি
বাড়িতে শান্তিতে থাকতে পারেন না। আপনার
বাবা- মা আমার জন্য আপনাকে বকাঝকা করে।
কি দরকার বলুন অযথা আপনাদের বাড়িতে বোঝা হয়ে থাকার? তাছাড়া আপনাদের সাথে আমার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। শুধু মাত্র আব্বুর সাথে আঙ্কলের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো বলে যে আমার দাঁয়িত্ব নিতে হবে এর মানে হয় না। তাছাড়া কলেজে যখন হোস্টেলের ব্যবস্থা আছে। তখন আপনাদের বাড়িতে থাকার দরকার মনে করছি না। যদি এখানে থাকতে কখনো কোন সমস্যা হয় তখন না হয় আপনাদের বাড়িতে যাবো?”

-অরিনের মুখে এতো কথা শুনে ইফানের প্রচুর রাগ হলো। তবুও সে কোন টু শব্দ করে না। চুপচাপ গাড়িতে বসে পড়ে। সে ভেবেছিল অনেক বেলা হয়ে গেছে দুপুরবেলার খাওয়াটা খাওয়া হয়নি ওটা না হয় যাবার পথে কোন ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কমপ্লিট করে যাবে। তবে অরিনের মুখের বুলি শুনে ইফানের সে ইচ্ছা মরে গেছে।

এরপর বাড়িতে এসে ইফান মুখ গোমড়া করে গটগট করে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। অরিন তো হাসি মুখে আঙ্কল আন্টির সাথে কথা বলে।

জিনিয়া জিজ্ঞাস করে,
“আম্মাজান আজকে কলেজে ভর্তি হয়ে কেমন লাগছে তোমার?”

-আন্টি এতো কষ্ট করে আমাকে ঐ কলেজে ভর্তি না করালেই পারতেন। এখানে কাছাকাছিতে কোন কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলেই পারতেন।

অরিনের মুখে আন্টি ডাক শুনে জিনিয়া একটু চিন্তায় পরে যায়। এতোদিন হলো এবাড়িতে এসেছে মেয়েটা কখনো তাকে কোন কিছু বলে সম্বোধন করে নাই। আজ প্রথম বার সে তাকে আন্টি বলে ডাকছে।

অরিন ইজাজ কে উদ্দেশ্য করে বলে, “আঙ্কল ধন্যবাদ আমাকে এতো নামি-দামি কলেজে ভর্তি করানোর জন্য। আমি কোনদিন ও আপনাদের এই উপকারের কথা ভুলতে পারবো না।”

ইজাজ অরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”উপকারের কি আছে? এটা তো আমাদের কর্তব্য। তুমি আমাদের মেয়ে হলেও তো এই কাজটা করতাম।”

অরিন ভাবছে সে হোস্টেলে থাকার কথাটা তাদের কাছে বলবে কি না? পরে ভাবলো ইফান কে তো বলেছি সে নিশ্চয় তার বাবা- মা কে বলবে।
সারাদিন না খেয়ে-দেয়ে জার্নি করে ক্লান্ত এখন ফ্রেশ হওয়ার দরকার।

নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হতেই একজন মধ্যবয়সী মহিলা এসে অরিনকে ডাক দেয় বলে,”আফায় আপনারে নিচে খাইতে আইতে কইছে! আফনে জলদী নিচে আহেন!”

অরিন ভ্রূ কুঁচকে মহিলার দিকে তাকিয়ে আছে।
তাকে আগে কখনো দেখে নাই তা-ই তাকে জিজ্ঞাস করে, “কে আপনি? আপনাকে তো আগে কখনো এ বাড়িতে দেখি নাই?”

মহিলা বলে,”আমার নাম হইলো জামিলা সুন্দরি! এবাড়িতে কাজ করি। তা আপনে কেডা? আগে তো দেহি নাই এই বাড়িতে?”

অরিন – আমি এ বাড়ির মেহমান। আপনি এবাড়িতে কাজ করেন তাই না? তাহলে কয়েকমাস কেনো ছিলেন না এখানে?”

জামিলা বলে,”আপনে কয়েক মাস এই বাড়িতে আইছেন আল্লাহ গো আল্লাহ! আফায় আমারে কিছুই কইলো না! আর কিছুই হুনলাম না আমরা।”

-এতোদিন কোথায় ছিলেন আপনি?

– ‘আফার আম্মায় অসুস্থ ছিলো! আমি হেতির আম্মার দেখাশোনা করতে গেছিলাম। আম্মায় এহন সুস্থ তা-ই আমি ফিরে আইছি।’

-ওহ আচ্ছা। আপনি নিচে জান আমি আসছি।

জামিলা চলে যেতেই অরিন নিজের ভেজা চুলগুলোকে অবহেলার সাথে এলোমেলো করে কোন রকম মাথায় ওড়না দিয়ে নিচের দিকে ছুটতে থাকে।কারণ ক্ষুধায় পেটের মধ্যে ইঁদুর বিড়াল মারামারি শুরু করে দিছে।

এদিকে খাবার টেবিলে এসে দেখে ইফান খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। জামিলা ইফান কে জামাই আদর করে খাওয়াচ্ছে। ইফানের মাথায় জামিলা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,”আফা বাবারে ঠিকমতো খাওয়ান নাই কেন? বাবাই আমারা শুখাই কাঠ হয়ে গেছে। হাড্ডি গুড্ডি সব দেখা যাইতেছে।”

অরিন চোখ বড় বড় করে বলে,”আন্টি আপনার ছেলের শরীর সাস্থ মাশাল্লাহ্ সব দিক দিয়ে ঠিক আছে। ঐ খালাআম্মার চোখে সমস্যা আছে!”

জিনিয়া- দ্রুত অরিন কে টেনে নিজের কাছে এনে বলে,”ভুল করেও ইফান কে নিয়ে কিছু বল না। জামিলা আফা ইফান কে খুব ভালোবাসে।
নিজের সন্তানের মতো ইফান কে যত্ন করে।
আর শোন ওর যে ত্যাড়া ভাষাতে কথা ওসব নিয়ে কখনো কিছু বলবে না।”

অরিন জি আচ্ছা বলে চুপচাপ খাবার খেতে শুরু করে।

তখন জামিলা জিনিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আফায় এই মাইয়া কে? আগে কোনদিন তো হেতিরে দেহি নাই?”

– তোমার ভাইজানের বন্ধুর মেয়ে। আমাদের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করবে। ইফানের মতো অরিনের ও যত্ন নিবা বুঝলে? অরিন আমার কলিজার টুকরো সোনার মেয়ে।

জামিলা বলল,
– ”আফা হেতির বাড়িতে কি সমস্যা? এইহান থাইকা কেন পড়বো? তাছাড়া হেতির বাবা- মা কেমন ধাঁচের? যুবতী মাইয়া আপনা গো বাড়িতে পাঠায় দিলো? মাইয়া তো বেশ ভালাই যুবতি বিয়ার উপযুক্ত। হেতিরে সমস্যা থাকলে মাইয়ার বিয়ে দিয়ে দিতে পারতো।”

জিনিয়া শক্ত কন্ঠে বলে,”জামিলা তোমাকে ভালোবাসি তার মানে এই নয় যে অরিনের ফ্যামিলি সম্পর্কে তুমি যা ইচ্ছা তা-ই বলবে? ওর বাবা মা নেই। তাছাড়া কে থাকবে আর কে থাকবে না সে সব নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।”

নিজের বাবা মা’র কথা শুনে অরিনের গলা দিয়ে খাবার আর নিচে নামছিল না তা-ই সে চুপচাপ খাবার প্লেট হাতে তুলে নিয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়। বিয়ে? বিয়ে হয়ছে তার! তবে নেই কোন অধিকার। তারপর প্লেট পরিষ্কার করে হাত ধৌত করে নিজের রুমে চলে আসে।

তখন জামিলা বলে,”আফা যানতাম না হেতির বাবা মা নাই।”

-“এখন তো জানতে পারলে? এবার হেতিরে না বলে অরিন বলবে। আর তাছাড়া অরিনের সম্পর্কে বাড়তি কোন কথা বলবে না আর জানতে চেষ্টা করবে না বুঝলে। ”

জামিলা মাথা নাড়িয়ে নিজের কাজে মন দেয়।

এদিকে অরিনের মন খারাপ তা-ই সে ছাঁদে গিয়ে চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আফসোস আজ নিজের বাবা- মা নেই বলে সবাই যখন সুযোগ পাই কথা শুনিয়ে দেয়। আপনজন ছাড়া দুনিয়াতে বসবাস করাটা কঠিন।

কয়েকদিন পর থেকে অরিনের কলেজ শুরু। তা-ই কলেজের প্রয়োজনীয় সব কিছু ইফান নিজেই কিনে আনে। তারপর নিজ দাঁয়িত্বে তা অরিনের হাতে দিয়ে সবটা বুঝিয়ে দেয়।

অরিন ছোট একটা শব্দ ধন্যবাদ বলে ইফান কে এড়িয়ে চলে আসে। কি দরকার তার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলে মায়াতে জড়ানোর? অরিন বুঝতে পারছে এখানে সে সবার দাঁয়িত্ব মাত্র। তা-ই তাদের নিজের সাথে দায়বদ্ধ করে রাখবে না। নিজেকে সময় দিবে দিন-দুনিয়া ভুলে যাবে।

(গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই! সামনের পর্বে হয়তো অরিন বদলে যাবে😒)




চলবে…..!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here