#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_০৮
#Nishi_khatun
সাদা কলেজ ড্রেসের সাথে মাথায় সাদা হিজাব পড়ে শুভ্রকন্যার বেশে রেডি হচ্ছে কলেজে যাবার উদ্দেশ্যে।
আজ কলেজে অরিনের প্রথম দিন। তার মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে। আহা কি মজা নতুন নতুন ফ্রেন্ডস হবে। নতুন পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারবে।
এদিকে সকালে ইফান জামিলা কে বলে,”অরিন কে ডেকে আনতে। এখন যদি বাহির না হয় তাহলে তাদের পৌঁছাতে দেড়ি হয়ে যাবে।”
জামিলা ডাকতে যাবে তার আগেই অরিন সেখান এসে উপস্থিত হয়।
–“আমি এসেছি চলুন স্যার! এবার তাহলে যাওয়া যাক তা-ই না।”
ইফান অরিনের কথা শুনে ওর দিকে তাকাতেই বড় রকমের একটা ধাক্কা খায়। আল্লাহ ওর সামনে মনে হচ্ছে কোন শুভ্রপরী দাঁড়িয়ে আছে। সাদারঙের ড্রেসের সাথে সাদা হিজাবে মাশাল্লাহ্ সেই সুন্দর লাগছে। আকাশ থেকে নেমে আসা সদ্যজাত কোন ফুটন্ত ফুল। যার সৌন্দর্য চারিদিকে একাই ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে পড়ছে।
ইফান মুগ্ধনয়নে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। কে বলবে এই মেয়েটা এডাল্ট নয়? শতপুরুষের মনে দোলা দিতে সক্ষম এই কিশোরী কন্যা।
জামিলা তখন ইফান কে জোড়ে ডাক দিয়ে বলে,”বাবাই অরিন আইছে! তোমরা জলদী রওনা দেও নয়তো দেড়ি হয়ে যাবে।”
জামিলার কথায় ইফানের ধ্যান ভেঙ্গে যায়।
আল্লাহ এই মেয়েকে এতোদিন কোন রুপে দেখেছি? আর আজ কোন রুপে দেখছি? এর দিকে বেশি তাকিয়ে থাকা যাবে না নয়তো অন্যকোন জগতে হারিয়ে যেতে হয়। অরিন মায়াবতী তবে কার জানি না।
-“স্যার! এবার রওনা না দিলে কিন্তু আমাদের যেতে খুব দেড়ি হয়ে যাবে।”
ইফান অরিনের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে বলে,”আমি তোমার কোন ক্লাসের টিচার? তখন থেকে আমাকে স্যার স্যার করছো কেন?”
-“আপনি ভার্সিটির লেকচারার! যে স্টুডেন্টদের শিক্ষা দেয় সেই তো গুরুজন। আর যে গুরুজন তাকে স্যার ছাড়া আর অন্য কিছু বলে সম্বোধন করা উচিৎ না।”
–আমি ভার্সিটির টিচার, তোমার কলেজের স্যার না। সো আমাকে তুমি স্যার বলে ডাকতে যাবে না বুঝলে।”
-“তাহলে আপনাকে কী বলে ডাকবো আমি?”
“কেনো আগে যা বলে ডাকতে! তাই বলে ডাকবে আমাকে!”
–“স্যার আপনাকে আমি আগে কখনো কোন কিছু বলে সম্বোধন করি নাই। আর যা বলে ডেকেছি তা হয়ত আর ডাকাটা মোটেই উচিৎ হবে না। বুঝতেই পারছেন কী বলতে চাইছি আমি। ”
ইফান অবুঝদের মতো করে বলে,”সে যা ইচ্ছা হয় তা বলে সম্বোধন করবে, তবু স্যার ডাকবে না তাহলে হবে।”
জামিলা বলে,”ঐ মাইয়া বাবাই রে ভাইজান ডাকলেই তো পারো।”
অরিন ভ্রূ কুঁচকে ইফানের দিকে তাকিয়ে
সোজাভাবে উওর দেয়,
–“উনাকে মরে গেলেও ভাই ডাকতে পারবোনা।
কারণ তার সাথে আমার ভাই বোনের সম্পর্ক না। তাছাড়া তার সাথে আমার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। আর যেহেতু আমার আপন ভাই আছে তা-ই এক্ট্রা ভাইয়ের দরকার নেই।”
বলে হনহন করে বাড়ির বাহিরে চলে আসে।
এসে সোজা গাড়িতে বসে বিড়বিড় করতে শুরু করে,”ঐ শয়তান জামিলা বেডির কী শখ! আমি আমার স্বামী কে না কি ভাই ডাকতে যাবো? আজব পাবলিক। কোন দুঃখে আমি আমার পাপ বাড়াতে যাবো?”
এমন সময় ইফার বাড়ির বাহিরে গাড়ির কাছে আসছিল। অরিন ইফানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাশাল্লাহ্ আমার জামাই দেখতে অনেক সুন্দর। কি সুন্দর হ্যান্ডসাম পোলাদের মতো ভাব নিয়ে নেভি ব্লু শার্ট পড়ে হাতা ফোল্ড করে হিরোদের মত ভাব নিয়ে আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে সে যে আমার কাছে নয় গাড়ির কাছে আসছে তা আমি খুব ভালো করে জানি।
গাড়িতে বাসার পর সেদিনের মতো নিরবতা।
সবাই চুপচাপ কেউ কথা বলতে জানে না।
কলেজের কাছাকাছি আসতেই একটা বাসস্টপ পড়ে অরিন সেখানে গাড়ি থামাতে বলে।
-এখানে গাড়ি থামাতে বলছো কেন? এখনো আরেকটু পথ পাড়ি দিতে হবে তারপর আমাদের গন্তব্য।
”আমি চাই- না আমার জন্য আপনার প্রফেশনাল লাইফে কোন সমস্যা হোক। এখান থেকে কলেজ পর্যন্ত আমি একলা যেতে চাই। আপনার পরিচিত তা সবাইকে জানাতে চাই না”
ইফান চুপচাপ দ্বিতীয় কোন কথা বলে না।
কেনো জানি অরিনের কথার কোন উওর খুঁজে পাচ্ছে না সে।
গাড়ি থামতেই অরিন গাড়ি থেকে নেমে পথ চলতে শুরু করে। পেছনে ফিরে একটি বার তাকিয়ে দেখেনা। পিছনে তাকালে হয়তো দেখতে পেত একজোড়া দৃষ্টি তার চলার পথে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে।
অরিন পেছনে তাকিয়ে নিজেকে দুর্বল করতে চাইছে না। তাকে তো একলা চলতে শিখতে হবে। বাকিটা জীবন নয়তো সংগ্রাম করবে কি করে?
ইফানের গাড়িটা অরিনকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। অরিন গাড়িটা চলে যাওয়া দেখে তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
–“তুমি রহিবে মনের গহীনে একটা অনুভূতির দল হয়। তবু কোনদিন বুঝবে না এই অবুঝ মনের ব্যাথা। যাও তুমি তোমার পথে! কখনো দাঁড়াবো না সে পথেরকাঁটা হয়ে।”
অরিন কলেজে প্রবেশ করার পর নিজের সাইন্সের ডিপার্টমেন্টে চলে যায়। কারণ আজকের প্রথম ক্লাস তাদের এখানে শুরু হবে।
ডিপার্টমেন্টে প্রবেশ করে নিজের কেমেস্ট্রি ক্লাস রুম খুঁজে বাহির করে। সেখান প্রবেশ করতেই সে একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে লাগে।
তবে সে পরার আগেই তাকে কেউ একজন ধরে ফেলে।
অরিন চোখ বড় বড় করে তাকে জড়িয়ে ধরে রাখা হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে থাকে। আল্লাহ গো আল্লাহ ধাক্কা খাইলাম মেয়ের সাথে আর আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে কোন পুরুষ মানুষ।
“আল্লাহ শেষ পর্যন্ত এই দিন দেখার বাকি ছিলো? আমি আজ পর্যন্ত হিরোদের মতো জামাই এর সাথে ধাক্কা খাইলাম না। সেখানে কেমিস্ট্রি ক্লাসে কেমেস্ট্রি করছি ছি ছি ছি!”
দ্রুত ছেলেটার কাছ থেকে সরে এসে কঠোরভাবে বলে,”আমাকে স্পর্শ কেন করতে আসছে?”
মেয়েটা এসে বলে,”এক্সকিউজ মি ম্যাডাম!
রাহিলের সাথে এভাবে কথা বলতে পারেন না।
যে না চেহারা সুরত! তোমার ঐ রুপ দেখে যায়নি তোমাকে স্পর্শ করতে।”
রাহিল বলল,
-“তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে আমাদের সাথে পড়। শোন! তোমাকে স্পর্শ করার কোন ইচ্ছা ছিল না। অন্তির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়লে প্রচুর ব্যাথা পেতে তুমি। প্রথম দিন ক্লাসে এসে নিশ্চয় আহত হলে ভালো লাগতো না?”
অরিন প্রথম দিন ক্লাসে এসে কোন ক্যাচাল করতে চাইছিল না তা-ই নরমাল হয়ে বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই ধন্যবাদ। ”
তখন অন্তি এসে বলে,”দুঃখীত এই দুর্ঘটনা সৃষ্টি করার জন্য! আমি অন্তি আর যে তোমাকে সাহায্য করেছে তার নাম রাহিল। তোমার নাম কি?”
আমি অরিন! তোমাদের সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।
তখন পেছন থেকে বাদরের মতো লাফ দিয়ে সাহিত্য এসে বলে,”বাহ বাহ বাহ,কী দারুণ কাহিনী! কেমেস্ট্রি ক্লাস শুরুর আগেই দেখছি অন্তি অরিন আর রাহিলের কেমেস্ট্রি শুরু। দেখা যাক তোমাদের এই নতুন কেমেস্ট্রি কতো দূর যায়।”
অরিন বলল,
– “আমার কারো সাথে কোন কেমেস্ট্রি করার শখ নেই। আমি এখানে লেখাপড়া করতে আসছি প্রেম- পিরিতি নয়!”
–তুমি এই সাহিত্যের সাহিত্যিকথা হয়ে যাও! তাহলে তোমাকে প্রেম-পিরিতি করতে হবে না। সাহিত্যজগৎ এর রাজরানী হয়ে থাকবে।
অরিন মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
–“সাহিত্য তোমার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। তবে এখন আমাদের নিজেদের স্থানে বসা উচিৎ ক্লাস শেষে না হয় সবার সাথে পরিচিত হওয়া যাবে।”
অন্তি অরিন কে সাথে করে তার বান্ধবীদের সাথে বলে। অন্তির আরো দুইটা বান্ধবী আছে মাইশা আর নাবিলা। অরিন তাদের সাথে পরিচিত হয়েছে। তারপর ক্লাস শেষে সবাই কলেজের ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। সেখানে অরিন ও বসে তাদের সাথে আড্ডা দেয়।
সবার সাথে পরিচিত হয়ে অরিনের বেশ ভালো লাগছিল। অনেকদিন পর সে অনেক মানুষের সাথে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছে। এটাই অনেক বড় পাওনা।
মাইশা আর নাবিলা কলেজের হোস্টেলে থাকছে আর অন্তির বাড়ি কলেজের কাছেই তা-ই সে বাড়ি থেকে রেগুলার যাতায়াত করবে। সাহিত্য আর রাহিলে বাড়ি কিছুটা দূরত্বে। তবে অরিনের মতো বহুদূরের তারা কেউ নয়।
সাহিত্য আড্ডার সময় অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,”অরিন রে তোর কি এন্ট্রি ছিলো ক্লাসরুমে।
প্রথম দিন ক্লাসে এসেই তুই রাহিলের বুকে।
ইশশশ আমার বুকে পড়লে কি হতো?”
অরিন -আমার জামাই এর সর্বনাশ হইতো আর কি হইতো?
রাহিল আর সাহিত্য একসাথে চিন্তিত হয়ে বলে,
–” এই অরিন তুমি বিবাহিত?”
অরিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”বিবাহিত হইলে কি জামাই আমার লেখাপড়া করতে দিতো? সারাদিন তার সংসার আর বাঁচ্চাদের চিন্তায় অস্থির হয়ে থাকতাম। লেখাপড়ার কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতাম না। বিয়ে করে সংসার করা এই অরিনের উদ্দেশ্য নয়।আমার ইচ্ছা লেখাপড়া করে নিজেকে নিজের যোগ্য করে গড়ে তোলা।”
রাহিল আর সাহিত্য একসাথে হাফ ছেড়ে বলে,”যাক বাবা বাঁচা গেলো। আমাদের গ্রুপে কেউ বিয়াত্ত না। আমরা সবাই সিঙ্গেল। নিজেদের মধ্যেই মিঙ্গেল হয়ে রইবো চিরকাল। ও সাথী রেএএএএ!”
অরিন মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”আচ্ছা তোমরা থাকো! আমার এবার যাওয়া উচিৎ। অনেক সময় হয়েগেছে এখন না গেলে আরো অনেক বেশি লেট হবে।”
সাহিত্য বলে,”তোমার বাড়ি তো অনেক দূরে।
তুমি হোস্টেলে থাকলেই তো পারো।”
–দেখি ফ্যামিলি থেকে যদি অনুমিত দেয় তাহলে অবশ্যই থাকবো।
সাহিত্য আর রাহিল অরিনের সাথে বাসস্টপ পর্যন্ত আসে, কারণ বাসস্টপ ছেড়ে কিছুদূর গেলেই ওদের দুজনের বাড়ি।
ওদের দু জনকে বিদায় দিয়ে দেখে রাস্তার পাশে ইফানের গাড়ি পার্ক করে রাখা। গাড়ির কাছে এগিয়ে যেতেই লক্ষ করে ইফান গাড়িতে নেই শুধুমাত্র ড্রাইভার বসে আছে।
অরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পেছনের শিটে গিয়ে বসে ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আঙ্কল চলেন!”
(দুঃখীত দুদিন গল্পটা কন্টিনিউয়াস করতে পারি নাই। একটু ব্যস্ত ছিলা। একদিন বাসায় মেহমান ছিলো তো দ্বিতীয় দিন ওয়াজ মাহফিল শুনতে মাদ্রাসাতে ছিলাম। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে রেগুলার দিতে চেষ্টা করবো।)
”
”
”
চলবে….