#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_১৩
#Nishi_khatun
“আনিসা”
অরিনের সামনে দু জন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে।
তারা তাকে দেখে আনিসা বলে চিৎকার করে ওঠে।
ইফান আর অরিন কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছিল সে সময় ওদের বাড়ির সদর দরজারতে এমন ঘটনা সৃষ্টি হয়।
ইফান সামনের ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে বলে,”আরে মামুজান আর নানি মা তোমরা এতোদিন পর হঠাৎ এভাবে আসলে যে?”
নানি মা অরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোদের বাড়িতে চাঁদেরহাট বসবে সেখানে আমি আসবো না তা কি হতে পারে?”
মামুজান কোন উত্তর দেয় না। তার দৃষ্টি এখনো অরিনের উপর স্থীর। সে তার মা’কে উদ্দেশ্য করে বলে,”মা দেখো না মেয়েটা একদম আনিসার কার্বন কপি।”
ইফান তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ও হচ্ছে অরিন! বাবার বন্ধুর মেয়ে। আমাদের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছে। এই এদিকে আসো অরিন পরিচিত হও আমার মামুজান আর নানি মা।”
অরিন তাদের দু জন কে উদ্দেশ্য করে সালাম আদানপ্রদান করে।
নানি মা তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলে,”থাক ইমামুদ্দিন সব স্থানে ঐ নামটা বারবার প্রকাশ্যে আনবার দরকার নেই।”
ইমামুদ্দিন বলে, “কিন্তু মা মেয়ে পুরো আ….!”
-আহহহহ ইমাম তোমারে কত বার বলছি চুপ থাকো?
ইফান তখন প্রশ্ন করে,”নানি মা আনিসা কে গো? আগে কখনো এই নাম শুনি নাই তো।”
ইমামুদ্দিন কিছু বলবে তার আগে মা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”বাহিরে লোক সম্পর্কে তোমার না জানলেও চলবে। ঐ সব কথা বাদ দাও। ”
জিনিয়া রান্নাঘরের কাজ করছিল এদিকে তার মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে হাতের কাছ ফেলে রেখে ছুটে চলে আসে। এসেই মা কে জড়িয়ে ধরে।
মা কে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে অভিমানি কন্ঠে বলে,”তোমার উপর রাগ করেছি আমি। তোমাদের কতো বার আসতে বলেছি তবু আসো নাই। আজ কেন আসছো? আর আসছো যখন একা কেন আসলে? বাবা কোথায়? আর বাড়ির বাকি সদস্যরা কখন আসবে?”
নানি মা মেয়েকে কাছে টেনে ড্রয়িংরুমের শোফাতে বসে মেয়ের কপালে চুমা দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে থাকে,”রাগ করিশ না মা! জানিস তো নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথায় থাকতে ভালো লাগে না। তার উপর বয়স তো কম হচ্ছে না। শরীরটা খুব একটা ভালো থাকে না।”
জিনিয়া নরম কন্ঠে বলে,”আমার বাড়িতে এসে তোমরা কিছুদিন থাকলে আমারো ভালো লাগে। বাবা- মা’র সেবাযত্ন করার একটু সুযোগ পেতাম। তবে তোমরা কই দাও সে সুযোগ? ”
ইমামুদ্দিন বলে,”বাহ বাহ বাহ! কী দারুণ? মা মেয়ে একসাথে হয়ে একমাত্র ভাইটা কে ভুলে গেছে।”
নানি মা – এই তুই এতো হিংসুক কেন? সারাবছর তোর কাছে থাকি। কয়েকবেলার জন্য মেয়ের বাড়িতে এসেছি সেখানে এসেও ন্যাকামি শুরু করেছিস? ”
ইমামুদ্দিন – বাড়িতে তুমি আর রিনের জন্য কিছু বলে শান্তি নেই। এবাড়িতে ইফান একমাত্র আমাকে তা-ই না ভাগ্নে আমার? ইফানের কাঁধে হাত রেখে বলল।
ইফান মুচকি হাসি দিয়ে সম্মতি প্রকাশ করে।
অরিন এক কোণায় দাঁড়িয়ে মা মেয়ের খুনশুটি দেখাতে মশগুল। নিজের মায়ের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
সে সব মনে করতেই চোখজোড়া ভিজে আসছে বারবার। নিজের নির্লজ্জ চোখের পানি গুলো এতো বেহায়া যে বারবার মুছে দিচ্ছে তারপর ও অঝর ধারায়
ঝরে যাচ্ছিল।
জিনিয়ার মায়ের নজর হঠাৎ করে অরিনের উপর পড়ে। অরিনের সাথে নানির চোখাচোখি হতেই অরিন দ্রুত স্থান ত্যাগ করে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে আসে।
জিনিয়া কে তার মা প্রশ্ন করে,”কি রে মা মেয়েটা ঐ ভাবে চলে গেলো কেনো রে? আর মেয়েটার চেহারাতে কেমন জানি বিষণ্ণতায় গ্রাস করা ছিলো।”
মা অরিনের বাবা- মা নেই। মেয়েটা ছোট আর জানো তো মা বাবা ছাড়া মেয়েদের জীবনে কতো ঝড় আসে। আমরা চাইনি মেয়েটা এসবের কোন কিছুর মুখোমুখি হোক। তা-ই তোমার জামাই আর আমি মিলে সিদ্ধন্ত নিয়েছে ওর গ্রাজুয়েশনের দাঁয়িত্ব আমরা নিবো। জানো না মেয়েটা খুব ভালো। একটু চঞ্চল টাইপের তবে ভদ্র আর মিশুক অনেক। কয়েকদিন থাকবে তো থাকলে বুঝতেই পারবে না ও আমাদের আপন কেউ না। মেয়েটা খুব সহজেই সবাই কে আপন করে নিতে জানে।
জিনিয়ার মা সাথে সাথে রুক্ষ কন্ঠে বলে ওঠে,”জিনিয়া তোমরা এতিম মেয়ের দাঁয়িত্ব নিবে ভালো কথা।
তা-ই বলে সেই এতিম মেয়েকে নিজের ঘরে এনে রাখবে? যুবতি মেয়েকে বাড়িতে রাখে মান-সম্মান নষ্ট করতে চাইছো? দু দিন পর পাড়াপড়শি ঐ মেয়ে আর তোমার ছেলেদের নিয়ে নানারকম কুকথা বলবে সে সব হজম করতে পারবে তো? নিজের ঘরে বিয়ের উপযোগী দুইটা ছেলে আছে সেখানে এমন যুবতী মেয়ে কোন আক্কেলে ঘরে রেখেছো? মেয়েটাকে হোস্টেলে রেখে প্রতিমাসের খরচ বুঝিয়ে দিলেই পারতে। দেখো দু দিন পর মেয়েটার জন্য তোমাদের মাথা লজ্জায় নিচু না হয়ে যায়।”
জিনিয়া নরম কন্ঠে বলে,”মা মেয়েটা যদি আমার আপন কেউ হতো তখনো কি অরিনের জন্য তোমার মুখ থেকে এমন কঠোরতা প্রকাশিত হতো? মেয়েটা শুধু মাত্র পর বলে এতো অবহেলা? ”
ইফান এগিয়ে এসে বলে,”নানি মা অরিন আমাদের বাড়িতে আজ প্রায় একবছরের মতো আছে। কই আশেপাশে কেউ এখনো খারাপ কোন মন্তব্য করে নাই। কারণ তারা সবাই অরিনকে খুব ভালো করে জানে। মেয়েটা যদি এতিম না হতো কখনো আমাদের বাড়িতে আসতো না। ওর ভাই- বোন সব আছে। তবে আফসোস ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে আজ সে আমাদের সাথে থাকতে বাধ্য।”
নানি- এবার তাহলে বোঝ! মেয়েটার পরিবারে কোন সমস্যা আছে। নয়তো ভাই- বোন কি ভাবে পারে ছোট বোন কে ফেলে দিতে?
-নানি আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। অরিনের ভাই বোন তাকে ফেলে দেয় নি। তারা কেউ দেশে থাকে না। তবে হ্যা ছোট বোনের সাথে রেগুলার যোগাযোগ আছে তাদের। আর হ্যা আমরা শুধু মাত্র অরিনের দেখাশোনার দাঁয়িত্ব নিয়েছি। অরিনে যাবতীয় খরচাদি তার ভাই বহন করে। অরিনের পেছনে আমাদের এক টাকাও খরচ করতে হয় না।”
-এতোই যখন টাকা আছে তখন বোন কে তাদের কাছে নিয়ে গেলেই তো পারে?
তাদের পারিবারিক বেপারে আমাদের নাক না গলানো উচিৎ। আশা করবো নানি মা আপনি অরিনকে আমাদের বাড়িতে থাকা নিয়ে কোন কথা শোনাবেন না। বলেই বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে আসে।
ইফান এসে দেখে অরিন আজ ড্রাইভারের পাশের শিটে বসেছে। ইফান গাড়িতে বসার সময় প্রশ্ন করে,”তুমি সামনে কেনো বসলে আজ?”
-কিছুদিন পর থেকে তো আর আপনি সব সময় সাথে থাকবেন না। তা-ই এখন থেকে নিজেকে একা চলাচলের যোগ্য করে গড়ে তুলছি।
মানে কি বলতে চাইছো?
-কি জানি নিজেই তো জানি না! আপনাকে কি ভাবে বোঝাতে যাবো?
নিজে যা বোঝ না তা আমাকে কেন বলতে আসো? এই আমার পাশে এসে বসো বলছি।
-দুঃখিত লেকচারার সাহেব আপনার এই কথা মানতে পারছি না। আমি বড় হয়েছি অনেকটা তা-ই আপনার সাথে যাওয়া আসাটা লোকজন ভালো দৃষ্টিতে দেখে না। সেখানে পাশাপাশি বাসাটা তো আরো দৃষ্টি কটু দেখায়।
“তুমি কি আমার পর না কি যে দৃষ্টি কটু দেখাবে?”
আমাদের মাঝে তো কোন সম্পর্ক নেই!
যার জন্য দৃষ্টি কটু লাগবে না?
ইফান কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়।
এরপর আর কোন কথা বলে না। এভাবে তাদের সেদিনটা পাড় হয়ে যায়। বিকালে বাড়িতেও সেভাবে ফিরে আসে।
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা আজ রি চেক করা হয়নি। গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)
.
.
.
চলবে…!