রহিবে মনের গহীনে পর্ব-১২

0
1830

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_১২
#Nishi_khatun

গম্ভীর আওয়াজে ইফান প্রশ্ন করে,
–“তোমার সাথে ঐ দুইটা ছেলে কে ছিলো?”

ইফানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে অরিনের সারা শরীরের রক্ত শীতল হয়ে যায়।

“আচ্ছা ইফান কে যদি সব সত্যি বলে দেই তাহলে কি সে আমাকে বিশ্বাস করবে? না কি আমাকে ভুল বুঝবে?”

যা আছে কপালে তা-ই হবে। সে যখন রাহিল আর সাহিত্যকে আমার সাথে দেখেছে তখন সব কিছু বলে দিব। এতে যা হবার তা-ই হবে। একটা সত্যি আড়াল করতে হাজারটা বাহানা বানাতে চাই না।

শান্ত চাহনিতে ইফানের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
– “আমি যদি আপনার কাছে কিছু কথা বলি! তাহলে কি আপনি আমার সব কথা কোন প্রকার সন্দেহ না করে বিশ্বাস করতে পাড়বেন?”

ইফান অরিনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে, “আগে বলবে তো, তারপর না হয় আমার উত্তর জানতে পারবে!”

অরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেলে বলল,
– “ঐ দুইটা ছেলে আমার বন্ধু হইতো! তবে আজকের পর থেকে আশা করি ওরা আর আমার বন্ধু থাকবে না।”

–“কেনো বন্ধু থাকবে না?”

কারণ আমি ওদের বন্ধু ছাড়া কখনো কোন কিছুই ভাবি নাই! তবে আজ ওরা দুজনে বন্ধুত্বের নামের উপর কলঙ্ক লেপে দিয়েছে।

-কেন! কি করছে ওরা দুজন?

আজ ওরা দু জন একসাথে আমাকে প্রোপোজ করে ছিল। আমি সোজা দু জন কে রিজেক্ট করে দিয়েছি।

-কেন একজন করলে বুঝি একসেপ্ট করতে?

–“আপনি পাগল না কি? আমি তো কোন দিন ও কারো প্রপোজাল এপ্রুভ করবো না। কারণ আমি জানি এসব প্রেম- পিরিতি হারাম। তাছাড়া আমার এসব প্রেম পিরিতি করার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ আমার ভবিষ্যৎ তো অনেক আগেই ঠিক হয়ে গেছে। আমি লেখাপড়া করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিবো।

ইফান – তুমিও পারো কাহিনী করতে। আমার তো আফসোস হচ্ছে! বেচারা ঐ ছেলে দুইটার কচি হৃয়দ ভেঙে চুরমার করে দিয়ে এসেছো তুমি।

–আমার তো রাগ হচ্ছে ওরা কী ভাবে পারে বন্ধুত্বের মতে সম্পর্ক কে এভাবে কলঙ্কিত করতে? তাছাড়া বাদ দিন তো ওদের কথা। আমার এসব পোলাপান পছন্দ না। যারা লেখাপড়া করার বয়সে আসে হারাম সম্পর্ক গড়তে।

ইফান বলে,
-“জানো আমাদের সমাজে মেয়েদের সব কিছুতে দোষী ভাবে। তাদের ঘাড় দোষ চাপিয়ে দিতে পারলেই সবাই মহারাজা! ”

–আপনি কি এই ঘটনাতে আমাকে দোষী ভাবছেন?

“আমি কি এমন কথা একটি বার বলেছি? ”

নাহ,বলেন নাই,কিন্তু….

কিন্তু টিন্তু বাদ দাও! চুপচাপ বসে থাকতে পারলে থাকো নয়তো চুপ থাকো।

অরিন আর কোন কথা বলল না। গাড়িটা বাড়ির সামনে এসে থামতে-ই ইফান গাড়ি থেকে আগে নেমে অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,

-“আজকের পর আর কখনো ভুল করেও ঐ দুই ছেলের সাথে মিশবে না। কোন প্রকারের যোগাযোগ করবে না। ওরা দু জন কেনো? আর কখনো কোন পুরুষের সাথে বন্ধুত্বের দরকার নেই। এটা আমার আদেশ ভাবতে পারো নয়তো আমার ওয়ার্নিং। ”

ইফান চলে যেতেই অরিন গাড়ি থেকে নেমে দেখে ওর চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে। নিজের চোখের পানি মুছতে-ই ওর ঠোঁটের কোণায় প্রাণবন্ত হাসির ঢেউ খেলতে শুরু করে। আজকে অরিনের চোখে যে পানি সেই পানি দুঃখের নয় খুশির অশ্রু!
ইফান আজ অরিন কে আপন ভেবেছে তা-ই তো তাকে আদেশ করেছে। এই প্রথম বার সে আমাকে কোন কিছু করতে বারণ করেছে। আমি তো সারাজীবন তার এই আদেশ পালন করতে রাজী আছি হাসি মুখে।

বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে ইফান মুখটা মিষ্টি কুমড়োর মতো ফুলিয়ে বসে আসে।

অরিন জিনিয়াকে জিজ্ঞাস করে-
‘আন্টি গো লেকচারার সাহেবের মুখটা ঐ রকম গোমড়া কেন?’

জিনিয়া ছেলের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে বলল-
” ইফানের জন্য আজ সারপ্রাইজ আসছে তো তা-ই।”

আল্লাহ গো আল্লাহ! কারো জন্য সারপ্রাইজ আসলে কেউ এমন করে মুখটা গোমরা মুখ করে রাখে?

-ঐ কাজ তোমার লেকচারার সাহেব করে।
তবে সারপ্রাইজ টা তোমার জন্য তোলা রইলো রেডি থাকো। দ্রুত সারপ্রাইজ পাবে অনেক গুলো।

সত্যি আন্টি অনেক সারপ্রাইজ পাবো?
আমি তো সারপ্রাইজ পেতে খুব ভালোবাসি।

ইফান ঝটপট করে বলে ওঠে,”সারপ্রাইজ কি না জেনে শুনে খুশিতে এতো লাফালাফি করার কি আছে!”

-এই আপনি এমন কেনো? সারপ্রাইজ যা ইচ্ছা হোক তাতে সমস্যা নেই। আমি তো আপনার মতো নিরামিষ না।

ইফান মুখে বিরক্তিপ্রকাশ করে বলে ওঠে,
“শোনো মেয়ে আজকের পর থেকে তুমি নিজের রুমের বাহিরের কম আসবা। দরকার হলে তোমার খাবার রুমে পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রয়োজন ছাড়া তোমাকে যেন রুমের বাহিরে না দেখি।”
বলেই গটগট করে নিজের রুমে চলে যায়।

অরিন অবাক হয়ে জিনিয়া কে প্রশ্ন করে,

-“আজকে আপনার ছেলের কি হয়েছে?
এতো শাসন-বাড়ণ করছে যে আজ?
সারপ্রাইজ এর কথাটা হয়তো তার হজম হচ্ছে না।
এই হজম না হবার কারণ টা কি জানতে পারি?”

জিনিয়া বলে,
–“অপেক্ষা করো সঠিক সময় সবটাই জানতে পারবে। সময়ের আগে কোন কিছু অগ্রিম জানা ভালো না। নয়তো সেই জিনিষের মূল্য থাকে না।”

অরিন আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে খাওয়া- দাওয়া করে বিকাল বেলা একটু ছাঁদে ভ্রমণ করতে যায়। ছাঁদের এক কোণায় দোলনা আছে সেখানে বসে মনের সুখে দোল খাচ্ছিল আর গুণগুণ করছিল।

kahan gayi meri Jannat,
kahan se lau maa
Mujhe loriya Suna ye
Maa Meri maa
Jin ke Sar per Mamta Ke duaaen Hain
Kismat wale wo hai jinki mai hai
ruhu to Hoti Hai per Jaan nehi hoti
Unse Poochho jinki maa nehi hoti
Lori Sunati Hai Chupke Sunati Hai
Yad Tumhari Mujhko Jab Jab Mukhko
ati Hai ati Hai

নিজের চোখেরজল মুছে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে,”মা বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার।
জীবনে প্রতিটা মুহূর্তে তাদের পাশে দরকার হয়।
নিজের সুখের দিন সুখ ভাগাভাগি করে নিতে হয়।
ঠিক তেমন ভাবে দুঃখের দিন তাদের বুকে মাথা
রেখে জড়িয়ে ধরে অশ্রু বিষর্জন দিয়ে মনটা হালকা করা যায়। চলার পথে তাদের দিকনির্দেশনার দরকার। তাদের ছায়াতে জীবনে সব রকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়।

আজ যদি আমার বাবা মা জীবিত থাকতো তাহলে প্রতিটা দিন অবশ্যই আজকের দিনের থেকেও বেশি খুশির হইতো। তবে আফসোস করি না! কারণ বাবা- মা’র পৃথিবীর বুকে সময় ফুরিয়ে গিয়েছিল তা-ই তার চলে গেছে। তাদের জন্য কষ্ট পেয়ে মন খারাপ করে থাকা যাবে না। জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। জীবনটা আমার দু দিনের মেহমান। এখানে এতো বাড়াবাড়ি না করাটা ভালো। আমার নসীবে হয়তো এতিম হওয়া লিখা ছিলো তা-ই আজ এতিম আমি।
চোখ জোড়া বুজতেই দু ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। চোখেরজল গুলো বড্ড বেহায়া নিজের কন্ট্রোলে থাকে না।

এমন সময় কেউ অরিনের মাথায় হাত বু্লিয়ে দিচ্ছে। চোখ মেলে তাকাতে-ই সামনে জিনিয়া কে দেখে।

জিনিয়া দ্রুত অরিনকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।

জিনিয়া পরম মমতার সাথে অরিনের কপালে চুমা দিয়ে বলল-
“মা- বাবা কে বুঝি বড্ড বেশি মনে পড়ছে আমার আম্মুর? ”

–হ্যা একটু আকটু তো মনে পড়বে-ই!
যারা আমার পৃথিবী তাদের কি ভুলে যাওয়া সম্ভব?
আপনি কি পারবেন আপনার বাবা- মা কে ভুলে যেতে?

“উঁহু কখনো না! কে বলেছে তাদের ভুলে যেতে? তাদের কথা হৃয়দের গহীনে গেঁথে রাখবা সারাজীবন।”

-তারা তো সারাজীবন থাকবে আমার মনখুঠুরি তে বন্দীপায়রা হয়ে।

জিনিয়া- আজকে যা মন খারাপ করা করে নাও।
কাল থেকে আর মন খারাপের সুযোগ পাবে না।
তুমি জীবনে যে সব কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে সব কিছু পাবে ইনশাআল্লাহ।

অরিন কোন প্রশ্ন করবে তার আগেই জিনিয়া বলে,”কোন প্রশ্ন নয়! নিজের রুমে যাও লেখাপড়া তে মন দাও।”

অরিন সম্মতি প্রকাশ করে চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়।

(আমি আগেই বলেছি গ্রামের বাড়িতে আছি। এখানে এসে মোবাইলের কথা মনে থাকে না। গল্প লেখার মন মানুষিকতা হয়ে ওঠে না। আর কিছু মানুষ বলেছেন ইরেগুলার গল্প দেওয়ার কি দরকার?
তাদের জন্য বলছি আমি ইচ্ছা করে গ্যাপ দিচ্ছি না। আমিও মানুষ আমারো পারোসোনাল লাইফ আছে।
আশা করি গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই।)



চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here