রহিবে মনের গহীনে পর্ব-১১

0
1942

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_১১
#Nishi_khatun

নিজের ডিপার্টমেন্টের ক্লাস করার জন্য প্রবেশ করতে যাচ্ছিল ঠিক সে সময় অরিনের সামনে রাহিল আর সাহিত্য দুজনে ফুল হাতে এসে জোকারের মতো দাঁড়িয়ে পড়ে।

এমন আকস্মিক কান্ডে অরিন একটু হচকিত হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,”আজকে না পহেলা বৈশাখ না বসন্ত কাল! তাহলে ফুল হাতে এভাবে আমার পথ আটকানোর মানে কি?”

রাহিল ভ্রু কুঁচকে বলে,”অরিন তুমি কি ফাইজলামি করছো?”

অরিন তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,”আমাদের কী ফাইজলামি করার মতো গভীর কোন সম্পর্ক আছে?”

সাহিত্য অরিনের হাত ধরে বলে,”দেখ অরিন এটা মজা করা সময় না! তুই বাচ্চা মেয়ে না যে বুঝতে পারবি না আমরা তোর থেকে কি আশা করছি?”

অরিন হাত ঝাটকিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”দু দিন একটু ভালোভাবে কথা বলেছি তার জন্য দুই বন্ধু একসাথে চলে আসছে আমাকে গোলাপ ফুল দিতে। এখানে এতো বোঝার কি আছে?”

সাহিত্য বলে,”আমরা দুজনে তোকে পছন্দ করি।
তুই বুঝেও অবুঝ সাজতে যাচ্ছিস কেনো?”

–আমি কি তোমাদের দু জনকে কখনো বলেছি আমাকে পছন্দ করতে? না আমাকে প্রোপোজ করতে? আমি কখনো এমন কোন ইঙ্গিত করি নাই যার জন্য তোমরা আমার সামনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

অন্তি তাচ্ছিল্যের সাথে অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,”জানো না ছেলে মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না। তারা বন্ধুত্ব করলে তা লীলাখেলাতে পরিণত হবেই একটা সময়। ”

অরিন অন্তির প্রশ্নের উওর দিতে ওঠে বলে,”আমি আগেই বলেছি এখানে লেখাপড়া করতে আসছি। কোন প্রেম- পিরিতি করতে আসি নাই। কিন্তু কিছু আবুল মার্কা লোক যদি সে কথা না বোঝে তাতে আমার কিছু করার নেই।”

রাহিল বলে,”তোমার ঐ সব লেকচার বাজি বাদ দাও। এবার বলো আমাদের দু জনের মধ্যে কার সাথে রিলেশনে যেতে চাইছো?”

অরিন এবার একটু বিরক্তিকর ভাবে বলে,

–“বন্ধুগণ! আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আমার বিয়া ঠিক হইয়া আছে বহুত আগে।
কিছুদিন পর বিয়া হইতেও পারে,না ও হইতে পারে। আবার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হলে তখনো হতে পারে।
এই জন্য কেউ আমার হবু বরের বউয়ের দিকে পিরিতির জন্য হাত বাড়িও না বুঝলে।”

সেখানে উপস্থিত সবাই হয়তো অরিনের কথা ঠিক মতো হজম করতে পারে নাই। তারা হজম না করতে পারলে তা তাদের সমস্যা এতে অরিনের কোন মাথা ব্যাথা নাই। সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের ক্লাস করতে চলে যায়।

এদিকে কলেজের ক্লাস শেষে অরিন বড্ড বিরক্ত নিজের উপর নিজেই। কেন যে সে বিয়ে ঠিকঠাক আছে এই কথাটা আগেই বলে নাই। যদি বলে দিত তাহলে হয়তো এতো কাহিনীর সৃষ্টি হতো না।

” অরিন কি জেনে বসে আছে ইন্টার পড়ুয়া পোলাপান পড়ালেখা বাদ দিয়ে পিরিতির উপর পিএইচডি করতে চাইবে?”

–“ইশশশ! পোলা দুইটার কত শখ। আমার জামাই এর বউয়ের লগে পিরিতি করতে চাইছে। তারা তো জানে না, আমি মিঙ্গেল পারসোন।”

-“আমি আমার আমিটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি!
যে ভালোবাসা পবিত্র সেখানে নেই কোন খারাপনজর, না আছে খারাপ কোন চাহিদা। সে রহিবে আমার মনের গহীনে সারাজীবনের জন্য। সব সময় ভালোবাসার প্রকাশ মুখে করতে হয় না। কিছু অনুভূতি চোখের ভাষাতেও প্রকাশ পায়।”

এসব কিছু চিন্তা করতে করতে অরিন বাসস্টপের কাছে আসছিল। তখন হঠাৎ করে রাহিল আর সাহিত্য অরিনে দুইপাশ দিয়ে দু জন হাঁটতে শুরু করে।
অরিন একবার তাদের দেখেও না দেখার ভান করে চলতে থাকে।

হঠাৎ করে রাহিল অরিনের হাত ধরে!
সাথে অরিন রাহিল কে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। এমন আকস্মিক কান্ডে রাস্তার আসে পাশের সব মানুষেরা হা করে তাকিয়ে থাকে।

তখন সাহিত্য সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে,”এখানে কোন তামাশা হচ্ছে না! আপনারা সবাই নিজেদের কাজে মন দেন।”

সাহিত্য রাহিল কে উঠে আসতে সাহায্য করে।

সাহিত্য রেগে বলে,”এতো ভাবের কি আছে অরিন?”

-আমি ভাব নিচ্ছি না! তোমাদের কী সমস্যা তা-ই বলো?

রাহিল বলল-
“তোমার বিয়ে ঠিকঠাক হবার কথাটা আমাদের হজম হয়নি! এখন যুগ বদলে গেছে এতো ছোট বয়সে কোন মেয়ের বাবা- মা মেয়ের বিয়ে ঠিকঠাক করে রাখবে না।”

–“তোমরা এতো ছোট বয়সে প্রেম করতে চাইলে দোষের কিছু নাই? আর বাবা- মা সন্তানের বিয়ে ঠিক করে রাখলেই যতো সমস্যা? হালাল হারামের মধ্যে পার্থক্য জানো তোমরা?”

সাহিত্য বলল- তুমি লেখাপড়া নিয়ে এতো মাতামাতি করো। সেখানে তোমার বাবা- মা বিয়ে ঠিক করে রাখছে এটা মানা সম্ভব না।

–এটা আমার মাথা ব্যাথা না! আমার সম্পর্কে কতোটা জানো? আমার পরিবার! আমার লাইফ স্টাইল এসব সম্পর্কে কোন ধারণা আছে? না নেই! কারো সম্পর্কে না জেনে বুঝে তোমাদের মতো কিছু চিপ মাইন্ডের মানুষ মন নিয়ে খেলতে চলে আসে। তবে এই অরিনের মনটা অন্য কারো নামে রেজিস্টারি করা। তা-ই তোমাদের এসব কথায় আমার মন খারাপ হবে না।

সাহিত্য – আমরা জানি না!
জানারা জন্য তো রিলেশন করতে চাইছি।

— এই তোমাদের নাক- লজ্জা বলে কিছু নাই তা-ই না? নয়তো দুই বন্ধু কীভাবে এক মেয়ের পেছনে ঘুরছো? তোমাদের মাইন্ড কতোটা লো তা আগে বুঝলে কখনো কথা বলা তো দূরে থাক মিশতাম না। এটা আমারি ভুল।

রাহিল – মেয়েদের এতো ভাব থাকা ভালো না।
তোমার তো দেখছি অহংকার অনেক। ভাবের ঠেলাতে মাটিতে পা পড়ছে না।

-এটাকে অহংকার বা ভাব বলে না!
আমার আত্মসম্মান বোধ এটা।
বাই দা রাস্তা তোমরা তোমাদের পথে যাও আর আমাকে আমার পথে যেতে দাও।
আমি চাই না তোমাদের জন্য আমার কোন সম্পর্ক বিষাক্ত হোক।

সাহিত্য বলে,”দেখবো অরিন তোমার এই ভাব কতোদিন থাকে।”

ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাইলে সারাজীবন এমন হাসি-খুশিতে থাকবো আমি আর আমার ভালোবাসা।
তারপর ওদের দু জন কে এক্সকিউজ মি বলে বাসস্টপ থেকে কিছুটা দূরে চলে আসে।

এসে দেখে ইফানের গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে।
গাড়িতে বসতে গিয়ে দেখে আজ ইফান আগেই গাড়িতে বসে আছে।

তবে আশ্চর্যজনক বেপার হচ্ছে এই এক বছরে ইফান কখনো পেছনে শিটে অরিনের সাথে বসে নাই। আজ প্রথম বার সে পেছনের শিটে বসে আছে।
এমনিতে মন মেজাজ ভালো নেই। তা-ই ইফান কে নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা হচ্ছে না এই মুহূর্তে। চুপচাপ ইফানের পাশে বসে বাহিরে দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে থাকে।

(দুঃখীত গল্পটা রেগুলার দিতে পারছি না। আবার পর্ব অনেক শব্দের লিখতে পারছি না। আমি কুষ্টিয়া আমার গ্রামের বাড়িতে এসেছি। বুঝতেই পারছেন গ্রামের বাড়িতে আসলে আর যাই হোক মোবাইল নিয়ে গল্প লেখার মতো সময় হয়ে ওঠে না)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here