রহিবে মনের গহীনে পর্ব-১০

0
1804

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_১০
#Nishi_khatun

অরিন কলেজ আর ক্লাস করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে। এই পরিক্ষা তো কখনো সেই পরিক্ষা! নানারকম প্রাক্টিক্যাল ক্লাস, ল্যাব টেস্ট এসবে অরিনে প্রাণ যায় যায় অবস্থা । তবে এসবের মাঝে ভালো একটা দিক আছে যা অরিনের খুব ভালো লাগে।

কলেজে আসা যাবার পথে ইফানের সাথে কথা না হলেও। বাড়িতে রাতের বেলা ইফান অরিনের হোম টিউটর।

অরিনের সব ত্যাড়ামি রাতের বেলা ইফানের সামনে চুপসে যায়। ইফান সারাদিন অরিনের সাথে রুক্ষ ব্যবহার করে। রাতের বেলা নরম স্বরে কথা বলে।
আজকাল অরিন খুব কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে।
নতুন রুপে এই ইফান কে নিয়ে চিন্তা করতে গেলে।
এই লোকটা দিনের একরকম রাতে আরেকরকম। এমন কেনো উনি?

রাতে কেমিস্ট্রি বই পড়াতে গিয়ে ইফান প্রশ্ন করে,”তোমার কলেজে অনেক ছেলে আছে তা-ই না?”

-হ্যাঁ আছে! আপনার কোন দরকার ?

–“উঁহু দরকার নেই! বলছি যে, কোন ছেলে তোমাকে কখনো ডিস্টার্ব করে না তো? যদি ডিস্টার্ব করে আমাকে অবশ্যই বলবে বুঝলে।”

-আমাকে কেউ ডিস্টার্ব করে না! আমি কি সুন্দরি না কি? ছেলেরা তো সুন্দরি স্মার্ট মেয়ের পেছনে বেশি ঘুরাঘুরি করে। আমি তো নরমাল দুধভাত তা-ই কেউ ডিস্টার্ব করে না।

–তুমি কচু জানো আর কচু বোঝ! খালি পারো পণ্ডিতি করে উওর দিতে।

অরিন মুখ ভেঞ্চি দেয়।

–তোমার মত নরম স্বভাবের মেয়ে কে দুষ্টু ছেলেরা টার্গেট করে। তাদের ডিস্টার্ব করে জীবনটা জর্জরিত করে দেয়। শোনো কোন সমস্যা হলে একদম চুপচাপ সহ্য করবে না। তোমার পাশের ভার্সিটি আমি থাকি সমস্যা হলেই আমার কাছে চলে আসবে।

আচ্ছা স্যার সমস্যা হলে যাবো। যদি সমস্যা না হয় তাহলে কি আপনার কাছে যাবার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবো?

–আমি কি সমস্যা সৃষ্টি করতে বলেছি একবার ও?
চার লাইন বেশি বোঝ তুমি। আর শোন কলেজে মেয়ে বান্ধবী ১০০ টা বানাবে তাতে সমস্যা নেই। ছেলে বন্ধু একটাও বানাবে না বুঝলে?

-জি স্যার মনে রাখতে চেষ্টা করবো।
আচ্ছা স্যার একটা প্রশ্ন করবো?

“হ্যা প্রশ্ন করো।”

স্যার আপনি কি আমাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন? না মানে বলছি আমার খোঁজ খবর নিচ্ছেন তা-ই ভাবলাম হয়তো আমার প্রতি দরদ হচ্ছে।
মায়া-টায়া কাজ করছে না তো ঐ টাইপের?

-তোমার এসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই।
তুমি লেখাপড়া করো তাহলে হবে।

“আচ্ছা ঠিক আছে! তাহলে তুম.. আপনাকেও বেশি চিন্তা করতে হবে না।”

ইফান জোড়ে চিৎকার করে,
-” অরিনননননননন!”

অরিন দ্রুত নিজের বই খাতা নিয়ে স্টাডি রুম থেকে দেই দৌড়।

ইফান নিজের মাথার চুল টেনে বলে,”উফফফফফ! মেয়েটা সব সময় অতিরিক্ত কথা বলে।
আমার অতিরিক্ত কথা বলা মেয়ে পছন্দ না।
একটু চঞ্চল কম হবে তা নয়তো আমার চিন্তা ভাবনার বাহিরে মেয়েটা। বারংবার ভাবি রুক্ষ ব্যবহার করবো না, কিন্তু মেয়েটা বাধ্য করে। সারাদিন সে ভাব নিয়ে চলে, যেন মনে হয় আমি তার প্রতিবেশি।
আর রাতের বেলা মনে হয় আমি তার টিউটর কম গার্ডিয়ান। উপফফফ কেন যে অন্য মানুষের কাছে ওরে টিউটর নিতে দিলাম না।
বাহিরে প্রাইভেট পড়তে গেলে যদি খারাপ হয়ে যায়।
বা নিজের লক্ষ থেকে দূরে সরে আসে।
সেসব কিছু চিন্তা করে মেয়েটাকে কোথাও বাহিরে পড়তে দেই নি। এএইটাই আমার কাল হলো।”

জিনিয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছেলের সব কথা শুনেছে। সে তো মা! আর সব মায়েরা সন্তানদের মনে কথা বুঝতে পারে। জিনিয়া বুঝতে পেরেছে তার ছেলে আস্তে আস্তে অরিনের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
অরিনের সকল আচরণ তার ভালো লাগতে শুরু করেছে। নয়তো যে মেয়েকে দু চক্ষে দেখতে পারে না। তাকে নিজে থেকে এগিয়ে পড়াতে চাইতো না। অরিনে বাহিরে অন্য কারো কাছে পড়াতে ইফান অনুমিত দেয় নি। সে নিজে দাঁয়িত্ব নিয়ে অরিন কে পড়াবে বলে স্থির করে।

জিনিয়া গলা ঝেড়ে কাশি দিয়ে বলে,” আমার ছেলে যে অরিনের প্রতি আসক্ত হচ্ছে তা সে বুঝতে না পারলেও বাড়ির সবার চোখে ঠিকি পড়ছে।”

-মা,তুমিও না কি যে বলো! আমি আর ভালোবাসা? ভালবাসা ইফান কে ভালোবাসে না মা। ইফান কাউকে ভালোবাসতে জানে! না ইফানকে কেউ ভালোবাসতে পারে। ইফান এসবের যোগ্য না।

জিনিয়া ছেলেকে জড়িয়ে ধরে।

–“ইফান মা কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। ”

কান্নারত অবস্থায় বলে,
–“মাগো সবাই তোমার ছেলের বাহিরের রুক্ষপ্রকৃতির স্বভাব দেখে ঘৃণা করে। কেউ রুক্ষতার ঐ পৃষ্ঠায় যায় না। কেউ আমাকে আমার মতো বোঝে না।
দরকার নেই আমার কারো।
আমি অরিনকে চাই-না জড়াতে আমার জীবনের সাথে। অরিনকে আমি প্রতিষ্ঠিত হতে যতো ভাবে সাহায্যের দরকার সব ভাবে সাহায্যদান করবো।
তবে কখনো আমি এমন কোন ব্যবহার করবো না
যার জন্য সে আমার প্রতি দুর্বল হয়।”

জিনিয়া ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে থাকে,”থাক বাবা! তোর মনের পুরাতন ব্যাথা জাগানোর দরকার নেই। বাদ দে অতীতের কাহিনী। অতীত কখনো বর্তমান সাজাতে পারে না। তা-ই ভুলে যা সেই কালো অতীত। ”

–হ্যাঁ! মা ভুলে যেতে চাই আমি আমার অতীত।
তবে কেনো জানি বারবার অরিনের সব কিছুতেই আমি আমার অতীতের ছায়া স্পষ্ট দেখতে পাই।
যে অতীত ভুলতে আমি মুখোশের উপর মুখোশ পড়েছি সে অতীত যে বড্ড বেহায়া।
বারবার সামনে এসে দাঁড়ায় নানা বাহানায়।

জিনিয়া ছেলের কপালে চুমা দিয়ে বলে,”বাবা অনেক রাত হয়েছে! যা ঘুমিয়ে পড় নয়তো শরীর খারাপ করবে। তখন অরিনের ভবিষ্যৎ সুন্দর করে সাজাতে পাড়বি না।”

–দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে স্টাডি রুম থেকে বেড়িয়ে আসে ইফান। তবে দরজার আড়ালে যে আরো একজন ছিলো তা কেউ জানতে পারলো না। দুজনের দৃষ্টির আড়ালে তৃতীয় কারো চোখেরজল ঝরছিল ঝরঝর করে। তা তারা দুজন হয়তো কখনো জানতে পাড়বে না। সব সময় সব কিছু সবাই জানতে পারে না। লোকচক্ষুর আড়ালে কিছু কাহিনী থেকে যায়।

সকালে প্রতিদিনের মতো আজকেও একসাথে অরিন আর ইফান বেড়িয়ে যায়। মাঝপথ অরিন ইফান কে প্রশ্ন করে,”সুখ ও দুঃখ অনুভূতি সৃষ্টিতেও রসায়নের হাত আছে নাকি?”

ইফান গম্ভীর কন্ঠে বলে,”এখানে না তুমি আমার স্টুডেন্ট না আমি তোমার স্যার। যা প্রশ্ন আছে রাতে পড়ার সময় করবে। এইভাবে রাস্তার মাঝে উওর দিতে পারবোনা। ”

আচ্ছা থাক আপনাকে উওর দিতে হবে না আমি বলছি আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।

– সুখ দুঃখের অনুভূতি সৃষ্টিতেও রয়েছে রসায়নের হাত। আমাদের দেহনিঃসৃত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থই মূলত এসব অনুভূতির কারণ। সুখের জন্য যে উপাদানগুলো দায়ী সেগুলো হলো :
– Seratonin
– Dopamine
– Norepinephrine.
সুখের রেসিপি তো দিয়ে দিলাম। এখন এ রেসিপি দেখে দেখে তৈরি করে ফেলো “The solution of happiness” আর এ Happiness বিলিয়ে দাও সবার মাঝে।

ইফান হচকিত হয়ে বলে,”তুমি কি বলতে চাইছো? ”

–বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে কুচুপাতা।

“মানে কি?”

গাড়ি নিজ গন্তব্যে এসে পড়ে। গাড়ি থেকে নামার আগে ইফান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“মানবদেহে ২০টির মতো অ্যামিনো এসিড উৎপন্ন হয় যার মধ্যে ১০টি না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না। ঐ দশটি এসিড হচ্ছি আমি। যা আপনার জীবনে না থাকলে আপনি রংহীন প্রাণহীন জড় পদার্থ। ”

ইফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
–“তোমার মাথা ঠিক আছে তো? না কি পাবনাতে যোগাযোগ করতে হবে?”

-আপনি ইচ্ছা করলে নিজের জন্য যোগাযোগ করতেই পারেন সমস্যা নেই। তবে আমার জন্য কষ্ট করার দরকার নেই।
বলে নিজের পথে হাঁটতে শুরু করে।

ইফান বেঁচারা হাবলুর মতো চুপচাপ গাড়িতে বসে থাকে।

এদিকে মনের সুখে ইসলামিক গান গাইতে গাইতে কলেজের রাস্তায় অরিন হাঁটতে থাকে।

“Allahi Allah Kya Karu
Dukh Na Kisi ko diya karo
Jo Duniya Ka Malik Hai
Naam Usi Ka Liya Karo..”

(আমি কিন্তু কোন মুভির গান লিখি নাই!
আর পর্বটা কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না কেউ!)



চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here