রহিবে মনের গহীনে পর্ব-২০

0
2004

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_২০
#Nishi_khatun

প্রতিদিনের মতো আজকেও ইফান আর অরিন কলেজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে যাচ্ছিল।
ঠিক তখন ইহান এসে বলে,

–“ভাই আজকে তোর কষ্ট করার দরকার নেই।
অরিনের কলেজের পথে দিকে আমি যাচ্ছি আজ। শুনলাম তোর পরিক্ষার ডিউটি চলছে অন্য ভার্সিটিতে। তাহলে কেন শুধু শুধু তুই এতোটা পথ পাড়ি দিকে যাবি?”

ইফান- আমার কোন সমস্যা হবে না!
আমি অরিনকে নামিয়ে দিয়ে নিজের ভার্সিটিতে চলে যাব।

– আজব কাহিনী না ভাই? আমি যখন ঐ পথে যাচ্ছি তখন কেন তুই শুধু শুধু কষ্ট করতে যাবি?
তাছাড়া তোর যেমন অরিনের প্রতি দাঁয়িত্ব আছে।
ঠিক তেমন ভাবে আমারও একটা দাঁয়িত্ব আছে।
তাই তুই চাইলেও জোড় করে আমার অধিকার নষ্ট করতে পারিশ না।

আজব ভাই তুই আমার।
শালা রাতের ঘুমটা হারাম করে শান্তি লাগেনি তোর কলিজায়? এখন আমার সারাদিন মাটিতে মিশিয়ে দিতে হাজির।

মনে মনে এসব কথা বিড়বিড় করার পর ইফান জোড়ে বলে,

“আচ্ছা সমস্যা নেই! তবে খুব সাবধানে অরিনের সাথে যাবি কোন সমস্যা হলেই আমাকে কল করবি।
আর হা আশার পথে না হয় আমি অরিনকে সাথে করে নিয়ে আসবো।”

ইহান ভ্রূ কুঁচকে বলে,

“কেন আমি যদি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি তাহলে আসার পথে দাঁয়িত্ব নিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতেও পারবো। তা নিয়ে তোর এতো চিন্তা করার দরকার নেই।তুই নিজের কাজে মনোযোগ দে ভাই।”

ইফান মুখটা গোমরা করে অরিনের সামনে এসে ওর হাত ধরে গাড়ির সামনের শিটে বসিয়ে দিয়ে বলে,

–“ইহান তুই পেছনের শিটে বসে যাবি। আর হ্যা আজকে তুই আমার গাড়িটা নিয়ে যাবি আমি তোর বাইকটা নিয়ে যাবো! ”

ইহান দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে,

” এটা সম্ভব না! তোর গাড়ি আছে তা-ই অরিন তোর সাথে গাড়িতে যেত। যেহেতু আমার বাইক আছে তা-ই আজ অরিন আমার বাইকে যাবে। এখানে তুই একদম পণ্ডিতি করতে আসবি না। জানিস ত আমি কেমন টাইপের যা বলি তা-ই করি।”

এরপর ইহান কালো হেলমেট পরিহিত হয়ে অরিনকে তার বাইকের পেছনে বসিয়ে ইফানের কলিজায় আগুন জ্বালিয়ে ধরিয়ে তার সামনে দিয়ে শো শো করে চলে যায়।

ইহানের মাথায় যদি হেলমেট না থাকতো তাহলে ইহানের দুষ্টুমি মাখা হাসি সবাই দেখতে পেত।

ইফান যদি বড় এডাল্ট ছেলে না হতো তাহলে শিউর মাটিতে দুই পা ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে দিয়ে বসে চিৎকার করে কান্নাকাটি করত। ইফানের এখন মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজার টুকরোটা ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে।

জিনিয়া ইফানের সামনে এসে বলে,

“কি হলো তুই এভাবে এখানে মুখটা গোমরা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

ইফান রাগী কন্ঠে বলে,

“আরো ডেকে আনো তোমার আদরের ছেলেটা কে দেশে। দেশে এসেই আমার আর অরিনের পিছনে মাছির মতো ভনভন করে। তোমার ছোট ছেলের এতো কিসের ইন্টারেস্ট অরিনের প্রতি? শুনে রাখো মা!
তুমি ইহান কে অরিনের থেকে দূরে থাকতে বলবে নয়তো আমার যেদিকে ইচ্ছা হবে আমি কিন্তু চলে যাব।”

এদিকে ইহান আজকে অরিনকে তার কলেজের গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। অরিন কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতেই সাহিত্য আর বাকিরা সামনে এসে রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে বলে,

–“বাহ সুন্দরি! তুমি তো দেখছি বড়লোকদের বাইকের পেছনে বসে চলাফেরা করো? তা এতোদিন যে বাসে যাতায়াত করতে? আজকে আবার এই সুন্দর যুবক কি তোমার প্রেমিক ছিলো? যে তোমাকে তার বাইকের পেছনে করে কলেজের গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেল?”

-আমাকে কে নামিয়ে দিয়ে গেছে তা নিয়ে তোমাদের গবেষণা না করলেও চলবে।তাছাড়া তোমাদের মত ছেলেদের সাথে কথা বলা উচিৎ না।

তাই বলে অরিন ওদের এড়িয়ে নিজের ক্লাস করতে চলে যায়। কলেজ ছুটির পর গেটের সামনে এসে দেখে এক সাইডে ইহান বাইকের উপর হেলমেট মাথায় দিয়ে বসে আছে। অরিন দ্রুত ইহানের কাছে চলে যায়। অরিন কে দেখে ইহান বাইক স্টার্ট দেয়। তারপর কিছুসময়ের মধ্যেই সবাই চোখের সামনে থেকে ভ্যানিশ হয়ে যায়।

এদিকে ইফান বাড়িতে এসে দেখে অরিন এখনো ফিরে আসে নাই। কেন জানি প্রচুর বিরক্তি লাগছিল।
তারপর ও নিজের বিরক্তিবোধ নিয়ে রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে ড্রয়িংরুমে চুপচাপ বসে থাকে।

জরিনা খালা শরবতের একটা গ্লাস ইফানের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে,”বাবাই শরবত টা দ্রুত খেয়ে নাও।
যে গরমের গরম পরছে আল্লাহ জানে এইবার মানুষেরা রমজান মাসের রোজা কেমনে রাখবে। ”

ইফান শরবতের গ্লাস টা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে বলে,”খালা রমজান মাস রহমতের মাস।
সে মাসে এই গরমের কোন প্রভাব মুসলিমদের উপর পড়বে না। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে নিজের বর্তমান নষ্ট করবার দরকার নেই। আপনি বরঞ্চ নিজের কাজ থাকলে কাজ করেন নয়তো আসরের ওয়াক্ত চলছে নামাজ পড়ে আসেন।”

জরিনা লজ্জায় পেয়েছে। আসলে আজ সে আসরের ওয়াক্তের নামাজ পড়ার কথা ভুলে গেছে।
ইফান আবার নামাজের বিষয়ে কাউরে ছাড় দেয় না। কাজের চাপে মাঝেমধ্যে জরিনা খালা নামাজের কথা ভুলে যায়। তবে ইফান বাড়িতে থাকলেই নামাজের কথা মনে করিয়ে দেয়। জরিনা দ্রুম প্রস্থান করে।

এদিকে এতো সময় হয়ে গেছে অরিনের ফিরে আসার কোন খবর দেখছে না। মনে মনে প্রচুর রাগ হচ্ছে অরিনের উপর। মেয়েটা এমনিতে নিজের কোন খেয়াল রাখে না। তার উপর আজ আবার সাথে গেছে ইহান। এতোটা দুষ্টু তাকে ইফান একটুও ভরসা করতে পারে না। আর যে স্পিডে বাইক চালাবে না জানি কোন দুর্ঘটনায় হলো কি না।

ইফান বিরক্তিবোধের সাথে চুপচাপ বসে তাদের অপেক্ষা করছিল। তখন হঠাৎ করে সদরদরজার দিকে নজর যেতেই দেখে ইহান আর অরিন হাসি মুখে ভেতরে প্রবেশ করছে।

-আমি যে মেডাম ফুলির চিন্তায় অস্থির হয়ে আছি সেদিকে কি তার খেয়াল আছে? উঁহু একটুও খেয়াল নেই থাকলে কখনো এতোটা দেড়িতে বাড়ি ফিরে আসত না।

জিনিয়া রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে প্রশ্ন করে,”কি রে তোদের বাড়িতে ফিরে আসতে এতো দেড়ি হলো কেন?”

ইহান বলে,”আর বলিও না আম্মা! জানো তো আমার মাঝেমধ্যে রাক্ষসী খুধা লাগে। আজকেও তা-ই হইছে প্রচুর খুধা লাগছিল তা-ই আসার পথে একটা ভাল রেস্টুরেন্টে বসে আরাম করে খাবার খেয়ে অরিনের সাথে এদিকে সেদিকে একটু ঘুরাঘুরি করে তারপর বাড়িতে এসেছি। ভালো কাজ করছি না মামনি? ”

জিনিয়া ইফানের দিকে তাকিয়ে বলে,

–“হ্যা বাবা খুব ভালো কাজ করেছ! এতো ভাল কাজ করেছ যে কোথাও পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি বলে দ্রুত প্রস্থান করে।”

ইফান আর কি বলবে ছোট ভাইকে কিছু না বলতে পারছে না সইতে পারছে।

রাতের বেলা অরিনকে পড়ানোর সময় ইফান মুখটা গোমরা করে রেখেছিল। অরিন বুঝতে চেষ্টা করেছো সমস্যা কোথায় কিন্তু বুঝে উঠতে পারে নাই।

এদিকে দেখতে দেখতে রমজান মাস চলে আসে।
পুরো পরিবার খুব সুন্দর ভাবে রমজান মাসের ইবাদতে মশগুল থাকে। এদিকে রোজার শেষে ঈদের পিপারেশন নিয়ে সমস্যা হয়। ঈদ করতে তাদের গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে। ইফান একদম যাবে না বলে জিদ করে বসে আছে। সে যাবে না ভালো কথা কিন্তু অরিনকে সে যেতে দিবে না।

বেচারি অরিন পড়েছে মহাবিপদে। কী জ্বালা রে বাবা।এই লেকচারার তো দেখছি মহা ঘাড়ত্যাড়া। নিজে আনন্দ করবে না সাথে আমার আনন্দ মাটি করবে।

(যারা গল্পটা পড়েন তারা প্লিজ বলবেন গল্পের পর্বের সিরিয়াল কি বড় করবো না দ্রুত ৪/৫ পর্বের মধ্যে শেষ করে দিতে চেষ্টা করবো? না কি ৩০/৩৫ পর্বের করবো? গল্পটা যেহেতু আপনারা পড়েন সেহেতু আপনাদের কাছ থেকে মতামত আশা করবো।)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here