রহিবে মনের গহীনে পর্ব-২৬

0
1849

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_২৬
#Nishi_khatun

ইফান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,”এখানে তোমাকে বউ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি বলে একদম নাচানাচি করবে না। যেখানে তোমার যে সম্মান পাওনা সেখানে সে সম্মান তুমি পাবে।”

অরিন বলে, “তাহলে স্ত্রীর অধিকার কেন দিচ্ছেন না আমাকে?”

ইফান বলে,”স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে স্থায়িত্ব আল্লাহ পছন্দ করেন, আল্লাহ সম্পর্কে ছাড়াছাড়ি পছন্দ করেন না।তা-ই আমিও সম্পর্কটা কে অস্বীকার করতে পারি না। তবে কেন জানি সম্পর্কটা কে গ্রহণ করতে কষ্ট হয়। আমি চাই তুমি বাহিরে গিয়ে নিজের লেখাপড়া কমপ্লিট করো। এসব সংসারের ঝামেলায় পড়ে নিজের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করিও না।”

অরিন চুপচাপ ইফানের কথা গুলো হজম করে।
সে আর কথার কোন প্রতি উত্তর করে না।

এরপর বাড়িতে ফিরে আসে অরিন একবার ইফানের স্থানে নিজেকে দাঁড় করে চিন্তা করে,
“আমাকে ইফান বারংবার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার জন্য নিজের থেকে দূরে রাখে।
তার মানে ইফান নিজের ছায়া আমার মাঝে খোঁজে। ইফান নিজের যে স্বপ্ন পূরণ করতে পারে নাই ধোঁকা খাওয়ার জন্য! সে স্বপ্ন আমাকে দিয়ে পূরণ করতে চাইছে। হ্যা আমি তো তার স্ত্রীর। তার দ্বীনের অর্ধেক আমি। সে হয়তো ভয় পাচ্ছে আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিলে হয়তো আমি তার স্বপ্ন পূরণ নাও করতে পারি?
হ্যা এমনটাও সম্ভব তো। হয়তো তখন তার সাথে সুখে সংসার করার জন্য আমি মরিয়া হয়ে তর্কবিতর্তে জড়াতে পারি। কী দরকার তাকে দ্বিতীয় বার কষ্ট দেওয়ার? ”

এদিকে জিনিয়া ইফান আর অরিনকে একা সাথে তাদের রুমে ডেকে পাঠায়।

ইজাজ তখন তাদের দু জন কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমরা ইহানের জন্য পাত্রী দেখেছি।
তোমরা দুজনে অনুমিত দিলে ইহানের বিয়ের কথা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।”

অরিন খুশিতে লাফিয়ে ইয়াহহহহু বলে ওঠে।

ইফান অরিনের হাত ধরে নিজের পাশে এসে দাঁড় করিয়ে চোখ রাঙাই। অরিন মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

ইফান বাবা- মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ইহানের বিয়ের বয়স হয়েগেছে। আশা করি আমাদের দু জনের জন্য ইহানের বিয়েতে কোন সমস্যা হবে না। আমাদের দু জনের এ বিয়েতে কোন আপত্তি নেই।
আর যদি পাড়াপড়শি কে নিয়ে চিন্তা করো তাহলে সে সমস্যার সমাধান আমি করবো তোমরা চিন্তা করিও না।”

অরিন মুখ গম্ভীর করে ইফানের দিকে তাকিয়ে থাকে।

ইফান ধমকের সুরে বলে,”কী তোমার কোন আপত্তি আছে?”

অরিন – আমি কেন আপত্তি করতে যাব।
আমার তো আরো খুশি খুশি লাগছে!
আমি বিয়েতে কত মজা করবো।
উফফফফফ ভাবতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছি।

ইফান ধমক দিয়ে বলে,
“যার কিছুদিন পর বিয়ে থুক্কু পরিক্ষা সে এখানে আসছে ইহানের বিয়ে নিয়ে মজা করতে। তোমার পরিক্ষার আগে কারো বিয়ে হবে না। ইহানের বিয়ে হবে তোমার পরিক্ষার শেষে।”

জিনিয়া- হ্যা! ইফান ঠিক কথা বলেছে,
তোমার পরিক্ষার পরে আমরা বিয়ের ডেট ফিক্সড করবো।”

অরিন তাদের কথা শুনে চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো রিয়াক্ট করে।

ইফান গম্ভীর শুরে বলে,”অরিন যাও পড়তে যাও।”

অরনি মনমরা হয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে।

অরিন প্রস্থান করতেই ইফান গম্ভীর সুরে বলে,
“তোমরা ইহানের বিয়ে দিবে ভাল কথা।
ইহানের সাথে এ বেপারে কথা বলেছো?”

ইজাজ তখন গম্ভীর সুরে বলে,

“বড় ভাই দুই বছর বিয়ে করে চুপচাপ বসে আছে।
আর ছোট ভাই বিয়ের জন্য মানসম্মান সব ধুয়ে দিচ্ছে। আর সে যে গভীর জলের মাছ তা তোমার না জানলেও চলবে। সে তোমার মত বউকে ছাত্রী বানিয়ে রাখার মানুষ না।
সে নিজর বউ নিজেই খুঁজে রেখেছে। ”

ইফান ভ্রূ কুঁচকে বলে,
“তার মানে প্রেম করে বসে আছে তোমার ছোট ছেলে? আফসোস আমিই শুধু….”
বাকি কথা বলার আগেই ইফান চুপ হয়ে যায়।

ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ইজাজ বলে,
“ধুর তোর মতো গাধা দুনিয়ায় একটাও দেখি নাই।
বিয়ে দিলাম ছোট বাচ্চা মেয়ের সাথে।
যাতে করে কয়েকবছর হালাল ভাবে চুটিয়ে প্রেম করতে পারি। কোথায় সেকাজ না করে বিয়ে করা বউটার সে গৃহশিক্ষক হয়ে বসে আছিস? আচ্ছা দু একদিন কি প্রেমের পাঠদান করেছিস? উঁহু! মনে হয় না তোর মত নিরামিষ এমন কাজ করতে পারে। ধুর তোর থেকে ইহান ভাল!”

ইফান বুঝতেছে না তার বাবা তাকে অপমান করছে না কি জ্ঞান দান করছে? কিছুই ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে না।

এদিকে বাবা- মা’র রুম থেকে প্রস্থান করে ইফান ভাবতে থাকে অরিন কেমন মেয়ে হ্যা? সে বাড়ির বড় বউ তাকে ধুমধাড়াক্কার সাথে বাড়িতে মেনে নিচ্ছে না তারপর ও সে খুশিতে গদগদ। এটাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এই অরিন শুধু জানে আমার কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে।
থাক অরিনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।
আমি নিজেই কখন কি চাই নিজেই বুঝতে পারি না।
সে কি করে বুঝবে আমার মনের খবর?

এদিকে ইফান বাড়িতে ফিরে রাতে লাইব্রেরী রুমে গিয়ে ইফান কে প্রশ্ন করে,
“ভাই দিয়েছিস তো ক্যাচাল লাগিয়ে!”

ইফান – মানে কি বোঝাতে চাইছিস?

ইহান – তুই নিজে তো বিয়ে শাদী করবি না,
বিয়ের মজাও বুঝবি না। আমাকে কেন আমার হবু বউটার থেকে দূরে রাখার জন্য এমন পাক্কা ব্যবস্থা করেছিস? এই খরিনে পরিক্ষার জন্য আমার বিয়ের ডেট পিছিয়ে দিয়েছিস তুই।

ইফানের গরম লাগছে এমন ভাব নিয়ে বলে,
“এই অরিন রুমের বাহিরে যাও তো!
এখানে আবহাওয়া প্রচুর গরম।
তোমার মত বাচ্চা মেয়ের থাকা উচিৎ হবে না।”

অরিন সম্মতি জানিয়ে লাইব্রেরী রুম থেকে বাহিরে প্রস্থান করে।

ইহান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“দেখ আমি যদি ভ্যাজাল সৃষ্টি করি তাহলে তোর লেটে হওয়া বিয়েটা আরো কয়েকবেলা পর হতে পারে।
কারণ বড় ভাইয়ের আগে ছোট ভাই বিয়ে করলে তা দৃষ্টিকটু দেখায়। সেখানে আমি নিজে তোর বিয়ের জন্য অনুমিত দিয়ে। শুধু মাত্র দুই মাস অপেক্ষা করতে পারবি না?”

ইহান বিরক্তিকর ভাবে বলে,”না আমি অপেক্ষা করতে পারবো না!”

ইফান সাথে সাথে জোড়ে বলে,”তাহলে তুই কাল পরশু বিয়ে করে নে। আমার কোন সমস্যা নেই।
তবে তোর বিয়েতে আমি উপস্থিত থাকবো না।
শুধু বিয়েতে না এবাড়ি ছেড়ে চলে যাব অরিনকে সাথে নিয়ে।”

ইহান ভ্রূ কুঁচকে বলে,”তুই যাবি যা!
নিষেধ করেছে কে? অরিনকে কে টানছিস এখানে?”

ইফান- যার জন্য ভাইয়াকে সাথে ঝগড়া করছি তাকে কি করে এবাড়িতে রেখে যায়? কখনো কাউরে দেখেছিস নিজের কলিজা অন্যের নিকটে বন্ধক রাখে?”

ইহান হচকিত হয়ে বলে,”মানেহহহ!”

ইফান বলল,”কোন কিছুই না রে ছোট ভাই,
সুখে থাক ভালো থাক আমাকে ভুলে সুখে সংসার কর।”

ইহান -ভাই তুই বদলে গেছিস!

ইফান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,” হ্যা! না বদলে উপায় আছে? আর কতোকাল জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকবো?
আমার জন্য অন্য কারো সাজানো স্বপ্নের বাসর অবেলায় নষ্ট হচ্ছে। ”

ইহান ভাইয়ের এমন বদলে যাওয়া রুপ দেখে অবাক। তবে খুশি হয়েছে মনে মনে অনেক। তারপর ইহান ইফানকে বলে,
“ভাই তোর অরিনকে সাথে করে বাড়ি ছেড়ে যাবার দরকার নেই। আমি দুমাস পরেই না হয় বউ রে আদর সোহাগ করবো।”

ইফান- এইবার না তুই লাইনে এসেছিস।
এই বিয়ের যতো আয়োজন সব আমি নিজে দাঁয়িত্ব নিয়ে পালন করবো তোর বিয়েতে কোন সমস্যা হবে না।

ইহান ভাইকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ বলে।

তখন ইফান ভাইয়ের পিঠ চাপরে বলল,
এইবার লাইনে আসছিস,,,,৷

(একটু ব্যস্ত আর অসুস্থ তারপরও চেষ্টা করছি রেগুলার গল্প দিতে। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো)



চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here