#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_৪৭
ফাইয়াজের কথা শুনে জাহিদের সন্দেহ হয়। ফাইয়াজ কখনোই বলবে না এখানে জিনিসটা নেই। যদি জিনিসটা সত্যিই না থাকে তবে ফাইয়াজ চাইবে জিনিসটা সবাই খুঁজুক। সেই জিনিস খুঁজে সবাই সময় নষ্ট করুক ও এটাই চাইবে। মানুষকে কষ্ট পেতে দেখতে ফাইয়াজের ভালো লাগে। যেহেতু ও বলেছে এখানে নেই, অর্থাৎ জিনসটা এখানেই আছে। জাহিদ ভালো করে তাকিয়ে দেখলো এখানে বাচ্চাদের একটা সেকশন আছে, যখন এই লাইব্রেরিতে বাচ্চাদের বারণ। আর ওরা পড়ার সময় এই জিনিস টা ছিল না। জাহিদ একটা জিনিস খেয়াল করলো, সাধারণত বাচ্চাদের বই হয় সবচেয়ে ছোট, পাতলা। খুব বেশি পৃষ্ঠা থাকেনা। আর এখানে সব মোটা মোটা বই। ও একটা বই টেনে বার করতেই দেখলো বই গুলোর পেছনে অদ্ভুত কোড। বাচ্চাদের বইয়ে এ ধরণের কোড কেন থাকবে? বইটা হাতে নিতেই ও বুঝলো এর ভিতর কিছু আছে। সাথে সাথেই জাহিদ পুরো শেল্ফটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। সবাই এগিয়ে আসতেই জাহিদ প্রতিটা বই থেকে একটা দুটো করে পেন ড্রাইভ বের করছে জাহিদ। বই গুলো খুলে খুলে ও সাজিয়ে রাখছে। ওয়াজির এসে জাহিদ বলল, “জাহিদ থামো! গুলিয়ে যাবে তো।” জাহিদের তখন মনে হলো এসব গুলিয়ে যেতে পারে। এরপর আরো লোক এসে বইগুলো জব্দ করলো।
নাদিয়া নিস্তব্ধ হয়ে দেখছে এই দৃশ্য। ওর হঠাৎ মনে পড়লো, ও একদিন এসেছিল এইদিকে। তখন ফারাজ আর ঐ মেয়েটাকে দেখেছিল, তাই বইগুলো দেখতে পারেনি। বাচ্চাদের বইয়ের ভেতর এত পেন্ড্রাইভ? ওয়াজির এসে সিকান্দার সাহেব কে বলল,
– স্যার, প্রত্যেকটা বইয়ের পেছনে কিছু কোড লেখা আছে। বইয়ের ভেতরের পেন্ড্রাইভ গুলোর গায়ে একই কোড। আর পেন্ড্রাইভ একটা খুলে দেখেছি, পাসওয়ার্ড চায়।
– আমার মনে হয় সেই পাসওয়ার্ড গুলো ক্লাউডের না, পেন্ড্রাইভের। আর না হলেও আমাদের এক্সপার্টরা আছে কী করতে?
– ওকে স্যার।
সিকান্দার সাহেব ফাইয়াজের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের সাথে আসতে হবে।” ফাইয়াজ মাথা নাড়লো। যাওয়ার আগে জাহিদের কাছে গিয়ে বলল, “কী মনে করেছো, জিতে গেছো? আমাকে আটক করলেও আমাকে ছাড়ানোর জন্য কত লোক চলে আসবে। কারণ আমি একা না, আরো বড় বাবার ছেলেরা আমার সাথে যাবে। আমাকে বাঁচাতে না হোক, অন্তত ওদের বাঁচাতে ওদের বাবারা আমাকে বের করবে। তখন তুই কোথায় যাবি?” জাহিদ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। ওকে আটক তো করা হয়েছে, কিন্তু ও যদি ছাড়া পেয়ে যায়?
ম্যাগনেফিসেন্ট নামক এই ধ্বংসস্তূপ থেকে জাহিদ, নাদিয়া আর ওয়াজির বের হয়ে আসে। রাহু এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে। ওদের দেখে ও এগিয়ে আসে। আশেপাশে মিডিয়ার লোকজন। তারাও ওদের দিকে এগিয়ে এলো। ওয়াজির ওর মাস্কটা পড়ে নিলো তাড়াতাড়ি। তারপর মিডিয়া থেকে নাদিয়া আর জাহিদ কে বাঁচিয়ে বাইরে আনলো। রাহু এবার ওদের একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কী হয়েছে অরনী?
– অনেক কিছু। সব একসাথে বলা সম্ভব না। তবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
– কীসের?
– ওদের সবার অপকর্মের। আচ্ছা জাহিদ, ওখানে ঐ ভিডিও টা থাকবে? ওরা কী শাস্তি পাবে?
জাহিদ নেতিবাচক মাথা নাড়ে। ওয়াজির নাদিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে জাহিদ কে নিয়ে চলে আসে। এখন ওদের সামনে আরো বড় লড়াই। সব গুলো পেন্ড্রাইভ ফরেন্সিক এ পাঠানো হয়েছে। সাথে সিপিইউ ও। সত্যিই ফরেন্সিকে পাওয়া গেছে সেই সিপিইউ এর সবই ভুয়া। আর সবগুলো পেন্ড্রাইভ একটা সার্বজনীন পাসওয়ার্ডে খুলেছে। সব পেন্ড্রাইভেই কিছু না কিছু ভিডিও ছিল যেখানে কাউকে অত্যাচার করা হচ্ছে। আর সেই ভিডিও অত্যাচারীদের বাবা বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। এদের এসব ভিডিও ফাইয়াজ কেন রাখলো? প্রশ্নের উত্তর জানতে ওকে যখন জেরা করা হয় ও সবই বলে,
“আমি খুবই সাধারণ ক্ষমতাবান ব্যবসায়ী পরিবারের গরীব ছেলে। আমার দাদুর পাঁচ ছেলে ছিল। সবচেয়ে অকর্মণ্য আমার বাবা। আমরা ক্ষমতাধর হয়েও ক্ষমতাধর ছিলাম না। আমার না, ছোটবেলা থেকেই সবার পর ছড়ি ঘোরানোর শখ ছিল। এক দিন আমার বড় চাচার ছেলের ক্যামেরা দিয়ে আমি বড় চাচার একটা ভিডিও করি। সেই ভিডিও তে বড় চাচা দাদুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল। এটা দেখার পর দাদু বড় চাচাকে উত্তরাধিকার থেকে বহিষ্কার করে আর আমাকে একটা হ্যান্ডিক্যাম উপহার দেন। এরপর থেকেই আমি এর ওর আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করি আর ছোটখাটো ব্ল্যাকমেলিং শুরু করি। একদিন না আমার দাদু মারা যান। আর এরপর আমার চাচারা আমার বাবাকে নামমাত্র একটা অংশ বুঝিয়ে দেন। সবচেয়ে লস করা অংশটা। আর এই ম্যাগনেফিসেন্টের সবচেয়ে ছোট ট্রাস্টি আমরা। আমার অনেক লজ্জা হতো। মুখ দেখাতে পারতাম না আমি। তখন আমি ক্ষমতাবান হতে চাইতাম। আমার ইশারায় সব ক্ষমতাধর লোকেরা নাচবে, সেই স্বপ্ন আমার ভেঙে যাচ্ছিল।”
“এই কারণেই আপনি ভিডিও ধারণ করেন? এতে কী লাভ?” জেরাকারী অফিসার।
“অনেক লাভ। একবার বাবা একটা ডিল পাচ্ছিল না। আমি তখন সেভেনে পড়ি। যার সাথে ডিল হবে তার ছেলে আমার সিনিয়ার ছিল। ওর একটা ভিডিও তুলে বাবাকে দিলাম। সেখান থেকেই মূলত আমার বিজনেস শুরু। এভাবে আগাতে আগাতে আজকে আমরা ম্যাগনেফিসেন্টের সবচেয়ে বড় ট্রাস্টি। ”
“মেইনলি কী বিজনেস?” অফিসার।
” মেইন অনেক বিজনেস আছে। যেটা আপনারা দেখতে পারবেন। কিন্তু আমার এই বিজনেস টা দিয়ে আমি আরো ক্ষমতাধরদের নাচাই। কারো ডিলের দরকার হলে আমাকে ফোন ঘুরিয়ে পয়সা পাঠিয়ে দেয়। আমি ভিডিও পাঠিয়ে কাজ বের করে দেই। আমার কাজ ওদের দিয়ে এসব করানো, ওরা একটা মজা পায়। আর এদিকে আমি সব রেকর্ড করি। আমিও মজা পাই। ওরা ভাবে আমি ওদের ছেলেমেয়েদের স্ট্রং বানাচ্ছি। ওরা স্ট্রং তো হচ্ছেই, সাথে আমার ও লাভ হচ্ছে। আ’ম লাইক আ মাফিয়া। ” ফাইয়াজ জোরে জোরে হাসলো। অফিসারের খুব ঘৃণা হলো। অফিসার কৌতুহল নিয়ে বলল, “কিন্তু আপনি এগুলো আমাদের এভাবে বলে দিচ্ছেন কেন?” ফাইয়াজ চুপ করে রইলো কতক্ষণ। এরপর বলল, “এতক্ষণে ও বোঝেননি? আরে আমি এখানে থাকলে আরো অনেকের ছেলেমেয়েরা এখানে চলে আসবে। এরপর ওরা ওদের ছেলেমেয়েদের এখানে থাকতে দেবে? ওদের সম্মান বাঁচাতে হলেও আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। আমি এখানে বেশিক্ষণ থাকছি না। তাই এসব বয়ান রেকর্ড করলেও কিছু হবে না।”
সত্যিই ফাইয়াজ এখানে আসার পর থেকে অনেক ফোন এসেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও মিটিং ডেকেছেন।
“এমন হবে জানলে আমি কখনোই এই নির্দেশ দিতাম না। যা ভেবেছি তার চেয়ে অনেক বেশি! আমাদের পার্টির ই অর্ধেক। আর প্রায় সব ধনকুবেরদের সন্তানেরা জড়িত। ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।”
একজন অফিসার বললেন, “মাফ করবেন স্যার, আইনের চোখে এরা সবাই ক্রিমিনাল। কার কী পরিচয়, এতে কী আসে যায়?”
“আসে যায়! শুধুমাত্র ম্যাগনেফিসেন্টে রেইড আর ট্রাস্টি গ্রেফতারের পর থেকে শেয়ার বাজারে যে দরপতন হয়েছে তা থেকে আন্দাজ করতে পারছেন আপনারা? দেশটা শুধু সৎ মানুষের নয়, ক্রিমিনালদের ও। ঐ সুদখোর বেইমান রাঘব বোয়াল ব্যবসায়ীদের কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল আছে। হঠাৎ করে এত বড় ধাক্কা আসলে একটা জাতীয় দুর্যোগ হবে। আমাদের রাজস্বে ঘাটতি হবে। আপনার নিশ্চয়ই ক্রাইসিস টা বুঝতে পারছেন।” প্রধানমন্ত্রীর এই কথা শুনে সবাই কমবেশি ঘাবড়ে গেছে। এতদিনে এই ম্যাগনেফিসেন্ট বাগে এসেছিল, আর এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই একে রক্ষা করছেন! সত্যি বলতে একজন প্রধানমন্ত্রী শুধু এক পক্ষকে নিয়ে ভাবলেই চলে না, তাকে খারাপ নিয়ে ও ভাবতে হবে। দুর্নীতি যখন একটি দেশের শিরায় শিরায়, তখন হঠাৎ এর অভাব অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। যখন নেশা হয়ে যায়, তখন তা ছাড়া চলাও যায় না।
“গরিবের রক্ত চুষেই তারা আজ এত বড় হয়েছে। তখন থেকেই তাদের এভাবে ফুলানো ফাঁপানো হয়েছে। এরকম দোহাই দিয়ে না জানি কত ধনীর দুলাল আজ নিষ্পাপ শিশু। তখন থেকেই এদের চেপে ধরলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। আর আজ এদের ছেড়ে দিলে সামনে আরো খারাপ দিন দেখতে হবে।” সিকান্দার সাহেবের এই কথা শুনে সবাই ভেবে দেখছে, তার কথায় যুক্তি আছে।
“কিন্তু এরকম আবেগ দিয়ে দেশ চলে না। এই চেয়ারের কত ভার, তা আপনারা বুঝবেন না। এই লিস্টে থাকা সকল শিল্পপতির প্রতিষ্ঠানে অনেক লোক কর্মরত আছে। এরকম একটা ক্রাইসিসে খুবই সাধারণ ভাবে তারা লোক ছাঁটাই করবে। কষ্ট কারা পাবে? শিল্পপতি? না তাদের কর্মচারী আর তাদের পরিবার?”
“অনেক ছোট চুনো পুঁটি দের খেয়েই তারা আজ রাঘব বোয়াল। ব্যাপারটা সেটা নয়। আমিও সবার কথা ভাবি। আপনার মতো তৃণমূল পর্যায়ে না। তবে আমার আরেকটা প্ল্যান আছে। আমরা এই ব্যাপারটাকে একেবারে মাটি না দিয়ে অল্প অল্প করে যদি সামনে আনি?”
প্রধানমন্ত্রী সিকান্দার সাহেবের কথা শুনতে তাকে কাছে ডেকে আনলেন, “তোমার প্ল্যান কী?”
“কিস্তিতে। আমরা একটা গবেষণা করবো। এখন সবাই সজাগ হয়ে গেছে যদিও। আমরা এসব ব্যক্তিদের সাজাবো। তাদের পাপ আর বাপ অনুযায়ী। একটা ডেটাবেস অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর আমরা কয়েকজন করে ধরবো। এতে প্রেসার টা কম থাকবে আর কাজ ও হবে। বিশেষ করে ট্যাক্স আদায়ের আগে আমরা কাজ শুরু করবো। ট্যাক্স চুরি করা ব্যক্তিদের সন্তানদের ভিডিও ফাঁস করা হবে। মার্কেটে একটা রিউমার ছড়াতে হবে। সেই রিউমার অনুযায়ী সময়মতো ট্যাক্স আসবে। আমাদের জিডিপির জিডিপি, আর রাঘব বোয়ালদের রাঘব বোয়াল। তবে আমি একটা কথা দিতে পারছি না। ”
“কী কথা?”
“যে সকল ক্রাইম খুবই গর্হিত, আমি সেসবের বিচারিক কার্যক্রম চাইবো। যেমন প্রিয়মের কেস। এরকম আরো আছে। এইসব ভিকটিম অনেকেই আত্ম*হ*ত্যা করেছে, এদের শাস্তি চাই।”
“অবশ্যই, সেই কথা আমি তোমাকে দিচ্ছি। তবে আজকের বৈঠকের কোনো কথা আমি চাই না এখান থেকে বের হোক।”
জনগণ মুখিয়ে আছে জানার জন্য, এই রেইডের ফলাফল কী হতে পারে? নাকি আগের মতোই সরকার ধনীদের কথাই ভাববে? ফাইয়াজকে সত্যিই জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হলো। ঠিক সেটাই হলো, যেটা ও ভেবেছিল। বেশিদিন ওকে ধরে রাখতে পারেনি। মাঝখানে একটা দিন খুব থমথমে গিয়েছে। না জাহিদ কিছু বলেছে, না ফাইয়াজ। অর্ঘ্যদীপ ও কিছুদিনের জন্য বাইরে কোথাও যাবে ভাবছে। সারা আগেই চলে যায় গেছে। ভিরাজ আর আসেনি। আজফারের পক্ষে এখন যাওয়া সম্ভব না। কারণ কিছুদিন আগেই তারা দেউলিয়া হতে চলেছিল। এখন এই মুহুর্তে পালাতে চাইলেও সম্ভব না। ফাইয়াজের থেকে লোন নিয়ে নিজেদের ব্যবসা বাঁচাতে চেয়েছিল। এখন যদি চলে যায় তো আবার সব ডুববে। আর সানি এ সব কিছুই জানে না। সে প্রতিদিনের মতোই জেলে, শুধু বের হওয়ার দিন গুনছে। ফাইয়াজের কথামতো খেলার দ্বিতীয়ার্ধ এখনো বাকি। জাহিদ না হয় একটা গোল দিয়েই দিলো, ফাইয়াজের হ্যাট্রিক করা বাকি।
আবার একটা সকাল হলো। সেই সকাল বাকি সকালের মতোই ছিল। সবাই সবার মতো কাজে ছিল। পুলিশ ও তাদের মতো কাজে বেরিয়েছে। হঠাৎই ফাইয়াজের দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। ওর চাকর দরজা খুলতেই এত পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে গেল। তারা ঢুকে ফাইয়াজ কে কাগজ দেখিয়ে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে গেল। ঠিক একই কাহিনী আজফার আর অর্ঘ্যদীপের সাথে হয়েছে। আরেকটু দেরি হলেই হয়তো ও আজ দেশ ছাড়া হয়ে যেত। বেচারা এখনো বুঝতে পারছেনা ওকে কেন আটক করা হয়েছে? বিগত কয়েক বছরে সে ম্যাগনেফিসেন্টের মুখখানা ও দেখেনি। সেখানকার কোনো কাজে যুক্ত থাকা তো দূরেই থাক।
দুপুর হতে হতে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়লো পুরো বাংলাদেশ। তাদের আটক করার কোনো কারণ তো থাকবে? দুপুর পার হবার আগে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পক্ষ থেকে একটা সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে প্রিয়মের কেসের বর্ণনা করা হয়। সাথে এই তিন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর দুই অভিযুক্তদের মধ্যে একজন বিদেশী নাগরিক, আরেকজন বিদেশে সাজাপ্রাপ্ত। আরেকজন নারী, অর্থাৎ সারা স্বীকার করেছেন সরাসরি প্রিয়মের খাবারে ঔষধ মেশানোর কথা। তাকেও গ্রেফতার করার ইচ্ছা আছে। সবার বিভিন্ন ডিটেইলস মিডিয়াতে ফাঁস হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। বিশেষ করে সারার কনফেশন।
এদিকে প্রিয়মের পক্ষ থেকে ওর ভাই কেস করতে রাজি নয়। ওর বাবা এমনিতেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জাহিদ তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা আর অত্যাচারের মামলা করেছে। প্রিয়মের পক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত ওর মা এসেছে এই মামলা করতে। একটা দিনেই কেমন ওদের জীবন পাল্টে গেলো। ওরা এখন আসামী। আশেপাশে ছি ছি হচ্ছে ওদের নিয়ে। রাতারাতি সারার কোম্পানির স্টকরেট তলানিতে এসেছে। সারাকে সবাই চাপ দিচ্ছে পাওনা মেটানোর জন্য। শেয়ারহোল্ডারদের চাপাচাপি তে সারা এখন বিপর্যস্ত।
এদিকে ভারতের সোস্যাল মিডিয়া তে ভিরাজের বিরুদ্ধে হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন চলছে। ভিরাজের বাবা একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। তার বিরুদ্ধে ও অনেক অভিযোগ আসছে এখন। তাকে বরখাস্ত করার প্রস্তাব এসেছে। ভিরাজ তখন ভারতে ছিল না যদিও। সে কানাডায় সময় কাটাচ্ছিল। তবে ওর আর ওর বাবার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার একদম শেষ। কান্নাকাটি করা ছাড়া ওর আর কিছুই করার নেই। সে তো এমন ছিল না। সে খুবই সাধারণ ছেলে ছিল। কিন্তু সাধারণ হওয়ার মূল্য ছিল অনেক করুণ। ওদের সাথে না মিশলে সম্মান থাকবে না স্কুলে। বড় হয়ে বাবার মতো ক্ষমতাধর হতে হবে। ওদের সাথে উঠে বসে ক্ষমতাধর হওয়ার শিক্ষা নিতে গিয়ে আজ কোথায় চলে এলো। প্রিয়মকে ধর্ষণ করার সময় পিশাচের মতো আনন্দ ও নিজেও করেছে। শুধু প্রিয়ম না, আরো সবাই কে অত্যাচার অপমান করতে ওর ও ভালো লাগতো। কেন এমন ছিল? কী দরকার ছিল? একটু আগে ওর বাবা ফোন করে ওকে ভৎসর্না করেছে। নিজের উপর খুব ঘৃণা হচ্ছে ওর। কষ্টে ঘৃণায় দু বোতল হুইস্কি শেষ করে ফেলেছে। আরেক বোতল আনতে গিয়েই ওর হঠাৎ মনে হলো ও প্রিয়ম কে দেখেছে। ভয়ে উল্টো দিকে ফিরতেই পা পিছলে নিজের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দা থেকে পড়ে গেল ভিরাজ।
বিকট শব্দে বিল্ডিংএর মানুষেরা নীচে এলো। তারা ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনলো। অ্যাম্বুলেন্স আসতে আসতেই ভিরাজ আহলুওয়ালিয়ার সেখানে মৃ*ত্যু হলো। বাইশ তলা থেকে পড়লে বেঁচে থাকার কথা না।
” হারাধনের ছয়টি ছেলে
হলো প্রকাশ পাপ,
একটি মরলো পা পিছলে,
রইলো বাকি পাঁচ।”
ভিরাজের মৃ*ত্যুর খবর ধীরে ধীরে মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়লো। হয়তো পাপের শাস্তি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ফাইয়াজ, ওর মুখে এখনো একটা ঠান্ডা হাসি আছে। অর্ঘ্যদীপ আর আজফার কে ও একই সেল এ রাখা হয়েছে। অর্ঘ্যদীপ সেল এ ঢুকেই ফাইয়াজের গলা চেপে ধরলো। “ইউ বাস্টা*র্ড! কে বলেছিল তোকে ওসব ভিডিও রাখতে। ইউ স্কাউন*ড্রেল!”
আজফার গিয়ে অর্ঘ্যদীপ কে থামালো। “থাম! নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কোনো লাভ নেই। ফাইয়াজ কিছু একটা তো করবে।”
ফাইয়াজ নিজের কলার ঝেড়ে বলল, “আমাকে এখানে রাখা যাবে না। আমার ব্যাক আপ আছে।” আজফার আর অর্ঘ্যদীপ কৌতুহল নিয়ে বলল, “কী ব্যাক আপ?”
“আমি একা ডুবব না। আমার সাথে সবাই ডুববে। সবার ছেলেদের বাঁচাতে হলেও আমাকে বের করতে হবেই। আমি এখানে থাকলে সবার ভয় থাকবে। একমাত্র আমাকে আমাকে বের করতে পারলেই সবার ছেলে বাঁচবে। নইলে আমি এখানে আর দুই দিন থাকি, বাইরে সবার ঘাম ঝড়ে যাবে। ভেতরে আমি কার কার নাম বলব, কে কে আমাকে দিয়ে ডিল করিয়েছে। এসব ভেবেই সবাই আমাকে বের করবে। রিল্যাক্স! একবার বের হই, লুজার কে ও দেখবো।”
এদিকে সব বড় বড় ব্যবসায়ী যারা ফাইয়াজ কে দিয়ে কাজ করিয়েছিল, তাদের গোপন মিটিং হচ্ছে।
” ফাইয়াজ যে কত বড় একটা সাপ সবাই বুঝেছ! ওকে দুধ কলা দিয়ে পুষেছি। ও এখন আমাদেরই দংশন করছে। ”
“তবে কী ওকে বের করবো? ওকে ছাড়াতে অনেক কাজ করতে হবে।”
” বের করার মতো অবস্থায় ও আর নেই। হয়তো এতক্ষণে নাম বলেও দিয়েছে। কে জানে? এমন করলে কেমন হয়, যদি ওকে রাস্তা থেকেই সরিয়ে দেই?”
ফাইয়াজ, আজফার আর অর্ঘ্যদীপ কে কোর্টে চালান করা হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে নেওয়ার সময় হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলো। পুলিশ ভ্যানে উদ্দেশ্যে করে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে।
“ব্রেকিং নিউজ! আজ সকালে কোর্টে নেওয়ার পথে ম্যাগনেফিসেন্ট কান্ডের আসামি ফাইয়াজ, আজফার আর অর্ঘ্যদীপের ভ্যানে হামলা করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছয়জন পুলিশ আহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে ঘটনাস্থলে তিন আসামির একজন কে ও পাওয়া যায় নি। ধারণা করা হচ্ছে তারা সাজা থেকে বাঁচতে পালিয়ে গেছে। সর্বশেষ খবর জানতে আমরা যাচ্ছি আমাদের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নুসরাতের কাছে। নুসরাত, ”
” জ্বী সুলতানা, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা কেউই ঘটনাস্থলে নেই। একজন আহত পুলিশ বলছেন তারা হয়তো পালিয়ে গেছে। আর সেজন্য দেশের সব সীমানা ও বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।”
টিভিতে এই খবর দেখে সবাই ভেঙে পড়লো। নাদিয়া রেগে রিমোট ছুঁড়ে মারলো টিভির দিকে। এই তো ওর মনে হয়েছিল প্রিয়ম জাস্টিস পাবে, এখনই তো শুরু হয়েছিল সব, তার আগেই শেষ!
(চলবে)
[আমি বলেছিলাম ব্যস্ত থাকবো। সোম মঙ্গলবার আসবে না। একদম বুধবার আসবে। তাও 🤦🏽♀️]