রিস্টার্ট পার্ট_২৩

0
3140

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_২৩

জাহিদ ওর বসের সামনে বসে আছে। ফরিদ সাহেব ওকে ডেকে আনলেন জরুরী কথা বলবেন তাই।

– আজকেও লেইট?
– একটু সমস্যায় আছি।
– ইদানিং একটু বেশি সমস্যায় না?
– আগে একদমই ছিল না।
– বিয়ের পর হচ্ছে তাই না? বউগুলো এমনই হয়। তবে তোমার বউ একটু বেশি। এত অসুস্থ হচ্ছে।
– অফিসের কথা থাকলে বলতে পারেন।
– অফিসের কথাই বলছি। এভাবে ইরেগুলার হয়ে গেলে কী করে চলবে?
– আমার পারফরম্যান্স এ কমতি হয়েছে কী?
– হ্যাঁ, অবশ্যই! আগে আটটা নয়টা পর্যন্ত কাজ করতে। এখন পাঁচটা বাজলেই বাড়ি ফিরে যাও।
– পাঁচটার পর অফিসে থাকা টা ফরজ না।
– ফরজ নফল সুন্নত ওয়াজিব সব ইবাদত ই করো। সাচ্চা মুসলমান!!! কিন্তু মিথ্যা ও বলো খুব ভালো।
– কেমন মিথ্যা?
– এই যে বউ, সুই*সাইড অ্যাটেম্পট নিয়েছিল। আমি সব জানি। শেয়ার উইথ মি। বড় ভাই ভাবতে পারো।
– আমার স্ত্রী সুই*সাইড অ্যাটেম্পট নেয়নি।
– তো?
– অ্যাক্সি*ডেন্ট। আমার হাতেও আছে। আমিও কী নিয়েছি?
– গাড়ি তো ঠিক আছে।
– আমি কবে বললাম কার অ্যাক্সি*ডেন্ট?

ফরিদ সাহেব হাসলেন আর মনে মনে বললেন, “হারাম*জাদা!”
– তো কীসে অ্যাক্সি*ডেন্ট?
– বাসার একটা বিশাল কাঁচের জিনিস ভেঙে পড়েছিল। দুজনেই আহত হয়েছি। স্ত্রীর একটু বেশি।
– তোমাদের মধ্যে ঠিক আছে তো সব? ফেসবুকে বউয়ের ছবি দাও না।
– শো অফ টাই প্রেম? কয়দিন আগে ভাইরাল হলাম তো। দেখেননি?
– পা টা কী ভাঙা ছিল না ভেঙেছ?

জাহিদ হাসতে লাগলো। ফরিদ সাহেব ওর দিকে তাকিয়ে রইলেন।
– আপনি কী বলতে চান? আমি আমার বউয়ের পা ভেঙে ওকে সাজেক ঘুরিয়ে এনেছি?
– হতেই পারে।
– এত টা সাইকো রোমান্টিক আমি না।
– তবে মেয়ে মানুষ প্রচুর সাইকো হয়। এটা ওটা ছুঁড়ে মারে। বা কথায় কথায় আত্ম*হ*ত্যার হুমকি দেয়। ভুক্তভোগী তো আমরা পুরুষরা। আমাদের কাজে ব্যাঘাত হয়। এই যে আমার কপালে এই দাগটা বাথরুমে পড়ে না, তোমার ভাবী অ্যাশট্রে ছুঁড়ে মারার জন্য হয়েছিল।
– ছুঁড়ে মারলো কেন? লামিয়ার সাথের ছবি গুলো দেখে?

ফরিদ সাহেবের চেহারা বদলে গেল। আজকে উনি নিশ্চিত হলেন কাজটা জাহিদের ছিল। তখন জাহিদ এই কোম্পানিতে নতুন আসে। অনেক ভদ্র আর লাজুক ছিল সে। তবে বিদেশে ভার্সিটিতে অনেক নাম ডাক ছিল। রেজাল্ট আর স্কিল ভালো। তাই ফরিদ সাহেব জাহিদ কে তার আন্ডারে নিলেন। একটু বলদ প্রকৃতির, সব কাজ করানো যাবে আয়েশেই। একটা মেগা প্রজেক্ট ছিল, ব্রীজ বানানোর। জাহিদ রাত দিন জেগে সেই প্রজেক্টের কাজ করছিল। ফরিদ সাহেব ওকে আশ্বস্ত করলেন জাহিদ ই ওনাকে অ্যাসিস্ট করবে। নতুন এমপ্লয়ি তাই মেইন প্রেজেন্টেশন ও দেবে না। বাচ্চা ছেলে হিসেবে ওটাও খারাপ না। কিন্তু প্রেজেন্টেশনের আগের দিন ও শুনতে পারে ফরিদ সাহেব আসলে জাহিদ কে না , জায়গা টা লামিয়া কে দেবে। আর জাহিদের কষ্টের পুরো ক্রেডিট টা নিজে নেবে। জাহিদ নাকি সাধারণ একজন এমপ্লয়ি। ইন্টার্ন না হলেও এখানে আসা বাকি ইন্টার্নদের মতোই। এসব শুনে জাহিদের খুব খারাপ লাগছিল। প্রিয়ম ঠিকই বলত, মানুষ ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভেবে নেয়। তাই একটু অভদ্র হওয়া উচিত। নিজের বিনয়ী ভাবকে কখনো দুর্বলতা ভাবতে দেওয়া উচিত না। তখন ঠান্ডা মাথায় জাহিদ তাদের এই অন্তরঙ্গ ছবি তুলে ফরিদ সাহেবের স্ত্রী কে পাঠিয়ে দেয়। এই ছবি দেখে ফরিদ সাহেবের স্ত্রী তার মাথা ফাটিয়ে দেন। কোনো উপায় না পেয়ে শেষ মুহূর্তে প্রেজেন্টেশন টা বাচ্চা ছেলে জাহিদ ই করে। আর তার জন্যেই তারা বিশাল এই প্রজেক্টটি পান। সেখানে থাকা সিনিয়ররা অনেক অবাক হন। ওর প্রশংসা করে ওকে আরো কাজ দিতে থাকে। অল্প কিছুদিনেই প্রমোশন বোনাস আর গাড়ি। এত কম সময়ে বেশ উন্নতি করেছে জাহিদ। ও আসার পর ফরিদ সাহেব আর একটিও প্রমোশন পাননি। হয়তো আর কিছুদিনেই জাহিদ ওনার চাকরিটাও খাবে। তাই কোনোভাবে যদি ওর একটা বদনাম বের করতে পারলে তো ওকে বের করা সহজ হবে।

জাহিদ ওর অমায়িক হাসি দিয়ে বাকি এমপ্লয়িদের ও মন জয় করে নিয়েছে। একের পর এক প্রজেক্ট ওদের হাতে। সব আবার সুষ্ঠু ভাবেও হচ্ছে। কোনো টাকা পয়সা এদিক ওদিক যাচ্ছে না। সব ভালোই তদারকি চলছে। দিন শেষে সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল সরকারের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছে, আর জাহিদ সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল এর। ভালো ইঞ্জিনিয়ার ভালো সরঞ্জাম সব জোগাড় করতে অনেক পরিশ্রম আর ভালো নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছে জাহিদ। ফরিদ সাহেব এসব সহ্য করতে পারেন না।

– এই ডিলটা ও ডান?
– জ্বী। (হেসে)
– আসলে তোমার হাসিটাই যথেষ্ট। এই হাসি দিয়ে সব প্রজেক্ট পেয়ে যাও, তাই না?
– শুধু আমার হাসিই যথেষ্ট হলে বাসে বাসে চিরুনি ব্রাশ বিক্রি করতাম। আমার আরো কিছুও আছে।
– শেষে কী হয় তা দেখা বাকি।
– যার শুরুটা শুদ্ধ, শেষটা ও শুদ্ধ ই হবে।

এই কথা বলে জাহিদ সেখান থেকে চলে আসে। ” হারাম*জাদার একটা দুর্বলতা যদি পেতাম!” ফরিদ সাহেব বিড়বিড় বলেন।

এদিকে মিষ্টির থেকে নাদিয়ার ঠিকানা নিয়ে মিশান ওর সাথে দেখা করতে আসছে। বিকেল বেলা ফল আর ফুল নিয়ে নাদিয়ার বাসার সামনে। কলিংবেল বাজিয়ে অপেক্ষা করছে। জাহিদ এসে দরজা খুলল। মিশান ওর দিকে তাকালো। জাহিদ চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। একটু সময় লাগলেও চিনতে ভুল হয়নি।

– আপনি আমার ঠিকানা পেলেন কী করে?
– পেয়েছি একভাবে। আপনি?
– বেরিয়ে যান! নইলে এখানে ও পুলিশে দেব।
– এক মিনিট, পুলিশ?
– গেট লস্ট!

জাহিদ ওর দরজা বন্ধ করে দিল। এই লোকটা এত বছর পর ওর ঠিকানা পেল কোথা থেকে ? মিশান ভাবছে এই লোকটা কে? ও আবার দরজায় কড়া নেড়ে বলল, “আমি মিশান! আপনি চিনতে ভুল করছেন।” জাহিদ ঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে আছে। এই বদমাশ টাই মিশান ভাইয়া! ওর কী কিছু মনে নেই?

মিশান মিষ্টিকে কল করল। ঠিকানা তো এটাই। ও বারবার নক করেই যাচ্ছে। নাদিয়া এখন ঘুমাচ্ছে। কীভাবে বিদায় করা যায়?

– অরনী আছে?
– এখানে কোনো অরনী থাকে না।
– কেন?
– আমি কী জানি?

জাহিদ আবার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়। কী অদ্ভুত লোক রে বাবা! মিশানের এবার সন্দেহ হচ্ছে। ও মিষ্টি কে একটা ছবি পাঠাতে বলল। ভালো করে ছবি গুলো দেখে ভাবে, ‘এটাই অরনীর স্বামী। ওকে তো কোথায় দেখেছি মনে হচ্ছে। মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিল। হারাম*জাদা!!!’ মিশান এবার জোরে জোরে কলিং বেল বাঁজানোর সাথে দরজায় আঘাত ও করে যাচ্ছে। জাহিদ দরজা খুলতে চাইছে না। নাদিয়ার ঘুম ভেঙে গেল। ও উঠে আসে।

– কে জাহিদ?
– জানি না! আপনি ভেতরে যান। অপরিচিত লোক।
– কিন্তু অভদ্রের মতো শব্দ করছে কেন?

” দরজা খোলো! ইউ বাস্টা*র্ড!”

এই শব্দ টা শুনে ওর পরিচিত মনে হলো। নাদিয়া রেগে দরজা খুলল। মিশান ঘরে ঢুকে পড়ল।

– এই শয়তান! এত বছর পর পেলাম তাহলে। আমি আফসোস করি বিয়ের ছবি গুলো না দেখা। কিছুদিন আগের ছবিটাও সাইড থেকে তাই বুঝিনি। তোর ভাগ্য খুব ভালো রে!
– তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বলছ কেন? এই সাহস তোমাকে কে দিয়েছে!!!
– ওহ! তুমি তো ওর আসল রূপ জানো না। ও একবার আমার সাথে জার্মানে মদ্য খেয়ে মাতলামো করেছে। ওর কারণে আমাকে সেখানে জেলে যেতে হয়েছিল!

নাদিয়া অবাক হয়ে জাহিদের দিকে তাকায়। জাহিদ ও একদম অবাক। নাদিয়া বুঝতে পারছে না এসব কী বলছে? জাহিদ মদ্য কেন খাবে? জাহিদ মাথা নেড়ে অপ্রস্তুত হয়ে অস্বীকার করল। নাদিয়া এবার রেগে মিশানকে বলল,

– তুমি একটা মিথ্যেবাদী! উনি তো বার্মিংহামে ছিলেন।
– ট্রিপে তো যাওয়া ই যায়। যেন এক দেশ থেকে এক দেশে যাওয়া যায় না!
– মিথ্যে কথা! উনি কোনোদিন ও ট্রিপেও যাননি। উনি আমাকে বলেছেন।
– ওকেও কিছু বলতে দাও। একটু আগে তো আমাকে চিনতে পেরে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছিল। নইলে তো আমার মনেই হতো না। আর মিথ্যা ও বলছিল এখানে নাকি কোনো অরনী থাকেনা। তোমার এত বিশ্বাস কেন এই বদমাশটার উপর!
– শাট আপ!

জাহিদ এবার রাগান্বিত নাদিয়া কে থামাতে আসে।
– আপনি উত্তেজিত হবেন না। আর মিস্টার মিশান, আমি কিছু বলছি না মানে এই না যে আপনি যা তা বলতে পারেন না। আপনি অনেক নীচ লোক! উনি রেগে যেতে পারেন, তাই আমি দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
– এই মিথ্যুক! তুই মারামারি করিসনি আমার সাথে। এই চেহারা আমি কখনো ভুলব না। ইনোসেন্ট এভিল!
– মুখ সামলে কথা বলুন। আপনাকে আমি প্রথম দেখছি।

মিশানের মাথা ঘুরে গেল। ‘এ কী বলছে! ওকে শায়েস্তা করা আমার জানা আছে। রিভার্স সাইকোলজি। ‘

– সেদিন মাতাল অবস্থায় একটা মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে ঝামেলা করেছিলে। মানা করায় হাতাহাতি করোনি? এরপর তোমার জন্য উল্টো আমাকে জেলে যেতে হয়েছিল।
– রাবিশ! আপনাকে আমি প্রথম দেখছি। আর আমি জার্মান কী করে যাব? হয়তো আমার মতো চেহারার কারো সাথে মাতলামো করেছেন। আমার মতো দাঁড়ি অনেক লোকের আছে। ভুল হতেই পারে। অভদ্রতা কেন করছেন?
– সত্যি কথা বলো!!!!

নাদিয়া “চুপ!!!” বলে চিৎকার করে উঠল। এরপর মিশান কে দুই হাতে দিয়ে ঠেলে বের করে দিল। ও এখনো দুর্বল হওয়ায় জাহিদ ওকে সামলালো।

– আপনি বিশ্রাম নেবেন, চলুন।
– আ’ম স্যরি।
– কেন?
– এই মিশান ভাইয়া এমন। বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে। আপনাকে শুধু শুধু এত বাজে কথা বলল।
– ইটস ওকে।

জাহিদ ভাবতে থাকে। এটা বানিয়ে বানিয়ে বলা কথা নয়। এটা অর্ধেক সত্যি আর অর্ধেক মিথ্যা। জাহিদ ট্রিপে গিয়েছিল। তবে অফিসের কাজে। ওর সাথে কিছু বিদেশি কলিগ ছিল। একজন নারীও ছিল। জাহিদ মদ্য পান করে না, তবুও সৌজন্য রক্ষার্থে বারে বসেছিল। সেখানে মিশান আর ওর বন্ধুরা জাহিদের নারী কলিগের গায়ে হাত দেয়। জাহিদ রেগে গিয়ে তখন মিশানকে অনেক মেরেছিল। ওর মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারেনি জাহিদ। এইসব লম্পট দের দেখলে ওর রক্ত গরম হয়ে যায়। পরবর্তীতে মিশান আর ওর বন্ধুরা জেলে যায়। এক রাত লক আপে থাকতে হয়। ওরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে জাহিদ কে শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেবার নিরাপত্তার জন্য ও আগে আগেই দেশে চলে আসে। তখন পুলিশ স্টেশনে মিশান বাংলাতেই ওকে দেখে নেওয়ার কথা বলে। দেশে এসে ওকে মারবে এমন হুমকি দেয়। প্রথমে জাহিদ একটু ভয় পেলেও আস্তে আস্তে ভুলে যায়। তবে চেহারা ঠিকই মনে আছে।

আর ট্রীপের ব্যাপার টা লুকানোর একটা অহেতুক কারণ আছে। নাদিয়া যখন ওকে ট্রীপের কথা জিজ্ঞেস করছিল তখন ও ইচ্ছে করেই বলেছে কখনো যায়নি। নাদিয়া ওকে যে সহানুভূতি দিচ্ছিল ওর সেটা অন্যরকম লাগছিল। খুব ভালো লাগছিল। এখন এই মিশান আরো উল্টো পাল্টা কী কী বলছে। ভালো এটাই, এমনই চলতে দেওয়া। নাদিয়া এমনিতেই ওকে বিশ্বাস করে। রাতে নাদিয়া ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ও আবার নাদিয়ার ফোন চেক করে পিপির আসা ইমেইলগুলো ডিলিট করে দেয়। যদিও একটু অপরাধবোধ কাজ করে, কিন্তু এটাই করতে হবে। ও নাদিয়া কে এমন কিছু দেখতে দেবে না যাতে ওর কষ্ট হয়, এমন কিছু শুনতে দেবে না যাতে ও কষ্ট পায়। দরকার হলে সারাজীবন ওর সাথে অন্ধ আর বধির হয়ে থাকবে। এতদিন যখন ও চলে যেতে বলেছিল, তখন পৃথিবীর সব কিছু ওদের এক করতে চেয়েছে। এখন যখন ও নাদিয়ার সাথেই থাকতে চায় তখন আবার সবাই ওদের আলাদা করতে চায়। এ কী পরীক্ষা নিচ্ছে আল্লাহ্ ওর।

সকালে অফিসে যাওয়ার আগে নাদিয়া কে সাবধানে থাকতে বলে যায়। আবার অফিস থেকে তাড়াতাড়িই চলে আসে। কেমন একটা বন্দি জীবনযাপন করছে ও।ভালোবাসার বন্দি জীবন। প্রতি মুহুর্তে হারাবার ভয়। জাহিদ ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখে ওর ফোন বাঁজছে। নাদিয়া দেখতেই যাচ্ছে কার ফোন, জাহিদ ছোবল দিয়ে ফোনটা নিয়ে জোর করে হাসি দিয়ে বারান্দায় যায়। পিপি ফোন করেছে।

– কী চাই?
– আ’ম স্যরি। আমি তোমাকে যেভাবে বলেছি, তুমি ভুল বুঝেছ। আমি তোমাকে অপরাধী বলিনি।
– কীসের কথা বলছেন?
– সেদিনের। তুমি আবার আসো, কথা বলি।
– স্যরি। আমরা আর আসব না।
– তোমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
– শেষ। আমরা এখন বেটার।
– তুমি যা করছ সেটা সত্যিই বাজে। এভাবে আমাকে ওর কন্টাক্ট লিস্ট থেকে ব্লক করে কী লাভ! তুমি ব্যাপার টাকে টক্সিক করছ। সত্যি থেকে যতই পালাও না কেন, সত্যি তোমার কাছে চলে আসবেই।

জাহিদ ফোন কেটে দিল। ঘরে যেতেই নাদিয়া বলল,

– কী হয়েছে?
– কিছু না।
– পিপি স্যার কী বলল?
– নরমাল খোঁজখবর। আপনি কেমন আছেন, এসব।
– আমার সাথে কথা বলল না যে?
– আপনাকে আগে সুস্থ হতে বলল। সেখানেই ফোকাস রাখতে বলল।
– ওহ!

এদিকে পিপি আর ওনার স্ত্রী বসে আছেন। লাউড স্পিকারে কথা উনিও শুনছিলেন।

– দেখলে, সাসপিশিয়াস।
– অনেক।
– নাদিয়া এখন ওর পরিবারের সাথে ও সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে। আর আমার সাথেও সব ব্লক।
– এর মানে এখন শুধুই জাহিদ ওর সাথে। ওর আশা ভরসা নির্ভরতা সব শুধুই জাহিদ।
– জ্বী।
– ও চাইলেই ওর সাথে যা ইচ্ছা করতে পারে। ও ওকে এক প্রকার বন্দি করে রেখেছে বলা যায়।
– ও তেমন না।
– ও যেমন দেখায়, ঠিক তেমন না। ওর অন্য রেকর্ডিং শুনে মনে হলো একজন মানুষ, আর এখন পুরো ভিন্ন মানুষ। নাদিয়ার ব্যপারে ওর হঠাৎ এতটা পসেসিভ হওয়াটা একদমই স্বাভাবিক না। একজন এত শান্ত আর ভদ্র ছেলে একদম মধ্যবিত্ত পরিবারের, এত কম সময়ে এত উন্নতি! হি ইজ ইন্টারেস্টিং।
– মেন্টালি সিক ও। আ’ম প্রিটি শিওর হি ওয়াজ অ্যাবিউসড। ওর মস্তিষ্কে এর প্রভাব আছে। এখন আচরণেও স্পষ্ট।
– আচ্ছা নাদিয়া কে কী এখন থেরাপিস্টের কাছে নেবে? কাকে রেকমেন্ড করেছ?
– মুনির। এখন আর ওখানে নেবে না আমি নিশ্চিত। কিন্তু আমার ওদের সব আপডেট লাগবে। আমি চাইলেই অন্য নাম্বার থেকে নাদিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে পারি, বা ঠিকানা বের করে যেতে পারি বাসায়। কিন্তু ব্যাপারটা তখন আরো মেস হয়ে যাবে। জাহিদ জানলে কী হতে পারে সেই আন্দাজ আমার আছে।
– তোমার কী মনে হচ্ছে না আমরা একটু বেশি ইনভেস্টেড।
– ইউ নো দ্য রিজন।
– ডোন্ট বি পার্সোনাল। আফটার অল ওরা অপরিচিত ই। আর তুমি ইমোশনাল হয়ে ওকে যে ডিজিএফআই এর কথা বললে, এটা কতটা কনফিডেন্সিয়াল তুমি তো জানো। বেচারা তা শুনে আরো ভয় পেয়ে গেছে।
– ভুল টা আমি বুঝতে পেরেছি। আর এ ও বুঝেছি, সামথিং ইজ রিয়েলি রং উইথ হিম।

নাদিয়া জাহিদকে পিপির দেওয়া কার্ড টি দেয়। জাহিদ কার্ড টি দেখে।

– এই যে, ওনার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। কিন্তু আমার এখনো ফোন করার সময় হয়নি।
– লাগবে না। স্যার বললেন অন্য জন রেকমেন্ড করবেন। আরো ভালো। ততদিন বিশ্রাম নিন। আর চিন্তা করবেন না। ওকে?
– ওকে।

জাহিদ যা করছে তা অনৈতিক ও অন্যায়। তবে খুব তাড়াতাড়ি একজন সাইকোলজিস্ট খুঁজতে হবে যে সুই*সাইড সারভাইভর এক্সপার্ট। নইলে ওর নাদিয়া আবার কী করে বসে। এদিকে মিশান ওর সহযোগী বন্ধুদের জাহিদের ছবি পাঠায়। সবাই নিশ্চিত এটা সেই লোক। ওকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। মিশান ঠিক করেছে ওকে নিজের মতো করে শিক্ষা দিবে। সেই লক্ষ্যে পরদিন মিশান জাহিদ ফেরার জন্য ওর বাসার নীচে অপেক্ষা করছে। জাহিদ গাড়ি থেকে নামতেই ওর সামনে আসে।

– ক্যান উই টক?
– কেন?
– ইম্পরটেন্ট।
– আচ্ছা, ঐদিকে চলো।

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে ওরা দুজন। রাস্তাটা ওদের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দূরে।

– তুমি মিথ্যে কেন বলছ?
– আমার ইচ্ছা।
– অরনীকে কী করে চিনিস? আমার সাথে শত্রুতা করে,
– একদম ই না। তুমি কোনো লিস্টেই পড়না। মানতে হবে, রিভার্স সাইকোলজি টা ভালো ছিলো। তবে আমার সাথে না। তুমি কী ভেবেছিলে আমি রেগে গিয়ে বলব মলেস্ট আমি না তুমি করছিলে। তারপর প্রমাণ হয়ে যাবে। হাহাহ!
– কেন মিথ্যা বলছ জানতে পারি?
– না। তবে তোমাকে সাবধান করছি, ওনার আশেপাশে ও যাতে না দেখি। লিভ হার এলোন!
– তবে তুমি স্বীকার করছ জার্মান গিয়েছিলে। আর তুমি অনেক রাগী। এতটাও ইনোসেন্ট না।
– হ্যাঁ। আমি এতটাও ইনোসেন্ট না। ছিলাম একসময়। কিন্তু মানুষ তখন ভালো মানুষির ফায়দা উঠিয়েছিল। আমি বাইরে যা দেখাই , তার থেকে একদম ভিন্ন। তুমি তো জানো কেমন?
– তো তোমার ঘাড় ত্যাড়া?
– আর ইউ রেকর্ডিং দিস?

মিশান অবাক হয়ে গেল। ও ফোন বের করে স্বাভাবিক হয়ে বলল,
– ইয়েস। তুমি ধরা পড়ে গেছ।
– আইফোন?
– থার্টিন।
– তোমার ধৈর্য অনেক কম। অল্পতেই রেগে যাও, তাই না? (হেসে)
– ইয়েস, অ্যাঙ্গার ইস্যুস। আ’ম প্রাউড অফ দিস। অরনী আর আমি একদম সেম সেম না?
– এটা শোনাবে অরনীকে?
– হ্যাঁ। পুরো পরিবারকেই। আমার অহংকারী মামার মেয়ের জামাই নিয়ে যে দম্ভ! সব শেষ হয়ে যাবে।
– তাহলে শুনুন, আমি অরনীকে অনেক ভালোবাসি। খুব খুব ভালোবাসি।

জাহিদ হাসছে, আর মিশান রেগে আছে। ওর মনোযোগ ভ্রষ্ট হতেই মুহূর্তেই ওর হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে পাশের রাস্তায় ফেলে দেয় জাহিদ। মিশান কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা গাড়ি চলে গেল। না, ওর আইফোনের কিছু হয়নি। জাহিদ হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। মিশান রাস্তায় থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে। ফোনটা এখনো একটু ভালো। স্ক্রিন হয়তো শেষ। এখনো হাতে পেলে রেকর্ডিং পাওয়া যাবে। কিন্তু রেড সিগনাল হচ্ছেই না। পরক্ষণেই ওর ফোনটা একটা গাড়ির চাকার নীচে চলে গেল। মিশান স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। জাহিদ ডান হাত দিয়ে ওর দাঁড়ি চুলকে খুব মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে কিছু একটার অপেক্ষা করে। মনে মনে গুনছে, ” থ্রি, টু , ওয়ান!” সাথে সাথেই রাগান্বিত মিশান তেড়ে গিয়ে জাহিদ কে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে থাকে। মিশানের মারে ওর চশমাও ভেঙে যায়। জাহিদ আর্তনাদ করতে থাকে। “বাঁচাও! বাঁচাও!” মিনিটেই আশপাশ থেকে অনেক মানুষ ওকে বাঁচাতে আসে। এরপর ওদের দুজনকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জাহিদের হালকা পাতলা ফার্স্ট এইড হয়। ইন্সপেক্টর ওদের সামনে বসে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

– আপনি ওনাকে এভাবে মারলেন কেন?
– ও আমার ফোন রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল।
– কেন ফেলেছেন।

জাহিদ ওর গাল ধরে বলল,

– ফেলিনি। মিথ্যা কথা। উনিই আমাকে শুধু শুধু মারতে লাগলেন।
– মিথ্যাবাদী! আমি তোকে মেরেই ফেলব!

অন্যান্য অফিসার রা মিশানকে ধরে জোর করে লক আপে ভেতর নিয়ে যায়। জাহিদ ভয়ে ভয়ে বলে,

– আমার বাসায় একটু ফোন করতে পারি? আমি চশমা ছাড়া দেখতে পাই না। আমার স্ত্রী আমার চশমা নিয়ে আসুক।
– তার আগে বলুন আপনারা কী একে অপরকে চেনেন?
– জ্বী। এতটাও না। উনি আমার স্ত্রীর ফুফাতো ভাই।
– নিজের বোনের স্বামী কে কেন মারবে? আপনার বোনের প্রতি দেখছি কোনো মায়া নেই, সব মায়া ফোনের প্রতি?

মিশান চিৎকার দিয়ে বলে , ” অরনী আমার বোন না! কে বলেছে বোন? শুধু বোন বোন আর বোন! আমি মানি না ও আমার বোন। তুই জানিস আমি রেগে যাব! তাই ইচ্ছে করে করছিস!” পুলিশ তখন বুঝতে পারে আসল ব্যাপার কী।

– নতুন বিয়ে?
– না। একবছর হবে সামনেই।
– ইনি এতদিন কোথায় ছিলেন?
– জার্মান।
– ওওও!

পুলিশ ভাবছে বেচারা স্বামী। বউয়ের কাজিন লাভার এসে আস্ত ধোলাই দিয়েছে। এটা খুব কমন সিন। একটু পর নাদিয়া আসলো হন্তদন্ত হয়ে। ঘরের পোষাক পরে আর শুধু একটা শাল জড়িয়েই বেরিয়ে গেছে। জাহিদ তো কিছু দেখতে পারছে না। নাদিয়াই ওকে খুঁজছে। বেবি ব্লু শার্টে নোংরা লাগা, বিধ্বস্ত উষ্কো খুষ্কো চুল নিয়ে ওর দাঁড়ি ওয়ালা স্বামী, জাহিদ। ওর চোখে চশমা নেই, থানার একটা কোণায় অসহায়ের মতো বসে আছে। নাদিয়ার ওকে চশমা ছাড়া দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এভাবে ছিল না। নাদিয়া গিয়ে ওর সামনে বসলো,

– আপনি ভালো আছেন? এই অবস্থা কে করল?
– কে? নাদিয়া?
– হ্যাঁ।
– আমার চশমা?
– ও! ভুলে গেছি। আমি তো ভয় পেয়েছিলাম। আপনি থানায় কেন?
– মিশান ভাইয়া ঝামেলা করেছে।
– কোথায় লম্পট টা!

ইন্সপেক্টর নাদিয়া কে দেখে ওর কাছে যায়। ওনারা আশা করেনি মেয়েটা এমন হবে। ওনারা ভেবেছিলেন কোনো সদ্য কলেজ পাশ করা কেউ হবে।

– আপনার স্বামী?
– জ্বী।
– ঐ যে আপনার ভাই।
– ঐ শয়তান টা!

নাদিয়া তেড়ে লক আপের কাছে গেল। মিশান ভেতর থেকে আশা নিয়ে সামনে আসলো।

– অরনী! তুমি জানো ও স্বীকার করেছে ও জার্মানে গিয়েছিল। ও একটা মিথ্যেবাদী!
– শাট আপ! তুমি এত নীচে নামবে আমি জানতাম না! তুমি ওনাকে শুধু শুধু মারলে কেন?
– কারণ ও আমার ফোন ভেঙে ফেলেছে। আমি ওর কনফেশন রেকর্ড করেছিলাম তাই।
– তুমি যাতে এখানে পঁচে ম*রো আমি সেই ব্যবস্থা করবো।

নাদিয়া ইন্সপেক্টরের কাছে গিয়ে বলে,

– ইন্সপেক্টর, কমপ্লেইন লিখুন।
– কীসের?
– ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট আর হ্যারাসমেন্টের।
– আই থিংক আপনারা ফ্যামিলি।
– নো! এর শাস্তি হওয়া উচিত। এত বছর আগে যা হয়নি তা এখন হবে।
– ওকে আমি লিখছি।

জাহিদ নাদিয়ার কাছে এসে বলল,

– থাক। উনি ভুল বুঝতে পারবেন। আমরা কমপ্লেইন করছি না।
– না কেন করব না!
– আপনার ফুফু আবার ঝামেলা করবে। আর আমি নিজেও কোনো ঝামেলা চাই না।
– ও যদি আবার করে?
– একটা ওয়ার্নিং দিয়ে দিন।

ইন্সপেক্টর মিশানকে ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিল। ওর সব ইনফরমেশন রাখলো। বাসায় ও ফোন করে জানালো সে নাদিয়ার স্বামী কে মেরেছে। মিশান এখন আরো রেগে আছে।

অনেক রাত হয়ে গেছে। জাহিদ চোখে দেখতে পারছেনা। নাদিয়া হাত দিয়ে ওর শার্ট ঠিক করলো। ফার্মেসি থেকে একটা মাস্ক কিনে ওর মুখে পড়িয়ে দিল। কাঁটা দাগ গুলো যাতে না দেখা যায় তাই চুলগুলোও হাত দিয়ে ঠিক করে দিল। এমনিতেও সোসাইটি সেক্রেটারি ওদের উপর নজর রাখছে। এ কয়দিনে ওরা অনেক ঝামেলা করেছে। ওরা দুজন পাশাপাশি হাঁটছে, নাদিয়া ওর হাত বাড়িয়ে জাহিদের হাত ধরে ফেলল। জাহিদ খানিকটা অবাক হয়, কিন্তু নাদিয়ার চেহারা তো দেখতে পাচ্ছে না।

– আপনি পড়ে যাবেন তাই ধরলাম। সমস্যা হবে?
– না।

ওরা আর কোনো গাড়ি পেল না। তাই পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে। দুজন একসাথে হাতে হাত রেখে হাঁটার খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু এভাবে না। জাহিদের খুব ভালো লাগছে। প্রিয়মের কাছে শুনেছিল নাদিয়া নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সত্যি, ও ম্যাগনেফিসেন্টে থাকলে এভাবেই ওকে মার থেকে বাঁচাতো। এই সহানুভূতিটা পাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল ওর।

– কী হয়েছিল?
– কী?
– মিশান ভাইয়ার সাথে? কী বলেছিল?
– বলেছিল ঐদিনের কথা। জার্মানে হাবিজাবি।
– আর ফোন?
– উনিই, রেগে ছুড়ে ফেললেন। (ইতস্তত করে)
– জানতাম। অনেক বেয়াদব ও।
– আর কেমন সাইকোর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল।
– সেদিন ও করেছিল।
– কোন দিন?
– থাক।
– ও! স্যরি।
– না ইটস ওকে।

ওরা হাত ধরেই বাড়ি ফিরল। বিল্ডিংয়ের লোকেরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সেদিন না সুই*সাইড অ্যাটেম্পট নিলো। আজকে একদম হাত ধরে আসছে। আর ঝামেলা হলে ওদের ফ্ল্যাটের মালিককে বলে বের ওদের করে দিতে হবে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here