#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_২৬
এই চার দেওয়ালে এখন শুধু ওরা দুজন। নাদিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়া জাহিদ থেকে ওকে বাঁচানোর মতো কেউ নেই। আজকে হয়তো খুব খারাপ একটা বাস্তব দুঃস্বপ্ন লেখা হচ্ছে। নাদিয়ার পুরো জীবনটাই যেন একটা দুঃস্বপ্ন। যে মানুষটাকে ও ভালোবাসে, সে মানুষ টা থেকে ও এ ধরণের আচরণ আশা করে না। তাই হয়তো সেই মানুষ টাকেই বলছে তাকে তার থেকে বাঁচাতে।
“বাঁচাও! বাঁচাও! বাঁচাও!” এই শব্দ গুলো জাহিদ এর আগেও শুনেছে। প্রিয়মের মুখে।
“শুদ্ধ!!! শুদ্ধ !!!! আমাকে বাঁচা!!!! বাঁচা আমাকে!!!”
এই আওয়াজ শুনতেই জাহিদ নিজেকে আবিষ্কার করলো সেই অবস্থায়, যেই অবস্থায় ও কখনো নিজেকে দেখতে চায় নি। ওর হাত নাদিয়ার স্পর্শকাতর স্থানে। সেই মুহূর্তে ওর নাদিয়ার উপর কোনো জোর ছিল না। নাদিয়া ওকে ধাক্কা দিতেই সরে গেল। ও বুঝতে পারছে না এমন টা কেন হলো। নাদিয়ার ছেড়া ব্লাউজ, অশ্রু সিক্ত চোখ, বিধ্বস্ত চেহারা নির্দেশ করছে জাহিদ সেই জিনিস টাই করছিল ও যা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। ও সেই কাপুরুষদের মতো কাজই করছিল , যা ওরা প্রিয়মের সাথে করেছিল। এত নীচে কী করে নেমে গেল?
মুহূর্তেই নিজের প্রতি ঘৃণা জন্ম নিতে শুরু করে ওর। নিজের অজান্তেই চিৎকার করতে থাকে। ওর ক্ষিপ্ত চিৎকারের সময় ওর চশমা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। জাহিদ পাগলের মতো কাঁদতে থাকে। নিজেকে সামলাতে পারে না। ও নাদিয়ার সাথে কী করতে যাচ্ছিল! ওর ম*রে যাওয়া উচিত।
স্তব্ধ হয়ে নাদিয়া জাহিদের এই উন্মাদ কান্না দেখছে। ওর এমন করার পেছনে কারণ কী? তখনই ওর পিপি স্যারের কথা মনে হলো। জাহিদের সেই ট্রমা! সেই ট্রমার কারণে ও হয়তো সেই অ্যাবিউসারের মতোই আচরণ করছে। বুঝতে পারার পর হয়তো এখন এমন চিৎকার করছে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে নাদিয়া ভয়ে ভয়ে জাহিদ কে ছুঁয়ে দেখে। জাহিদ এখনো কাঁদছে। কোনো কথা বলছে না, বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। নাদিয়া জাহিদের কাছে গেল। জাহিদ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নাদিয়া ওর চোখ মুছে দিতেই জাহিদ ওকে জড়িয়ে ধরল। জাহিদ ওকে জড়িয়ে ধরেই কান্না করছে। নাদিয়া অজান্তেই ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ও কিছুই বুঝতে পারছে না। একটু আগের জাহিদ আর এখনকার জাহিদে আকাশ পাতাল পার্থক্য। সারারাত ও নাদিয়ার বুকে মাথা রেখে কান্না করল। কোনো কথা বলল না, শুধুই কান্না করল, যেন ও অনেক ভয় পেয়েছে। নাদিয়া ওকে সান্ত্বনা দিয়ে গেল। জাহিদ যেন একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে নাদিয়ার কাছে। নাদিয়ার ও আর ভয় লাগছে না। ও অনবরত হাত বুলিয়ে গেল। অপেক্ষা করে গেল, কখন ও কিছু বলবে। ভোররাতে ওরা দুজন ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে নাদিয়ার দেরিতে ঘুম ভাঙল। কিন্তু, ওঠার পর ও আর জাহিদ কে দেখল না। কাল রাত যা হয়েছিল তা কী স্বপ্ন ছিল? একদম না। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকার পর নাদিয়া সিদ্ধান্ত নিল পিপির সাথে দেখা করবে।
– তুমি এতদিন পর! কী জন্য এসেছ?
– আমি জানি আপনি রাগ করবেন। আমি আমার থেরাপি কন্টিনিউ করছি। কিন্তু এটাও জরুরী।
– বলো।
– কাল রাতে, শুরু থেকে বলি। আমি ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম…
সব শুনে পিপি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। জাহিদ আরো বড় কেস, যা উনি ভাবছিল। ওর এখনই চিকিৎসা দরকার।
– নাদিয়া, ও কালকে তোমাকে রে*প করতে চাইছিল!
– হুম। অবিশ্বাস্য, তবে সত্যি।
– আকাশ পাতাল ইমোশন চেঞ্জ! ওর নিজের প্রতি কোনো কন্ট্রোল নেই। তোমাকে আঘাত করছে বুঝতে পেরে আবার রিগ্রেট হচ্ছে।
– হ্যাঁ।
– ও ঠিক নেই।
– আমিও জানি। এখন কী করবো?
– আমি যা বলব তা করবে?
– হ্যাঁ। সব করবো। ওর জন্য আমি সব করতে পারি।
– ওর থেকে দূরে থাকো।
নাদিয়া চুপ হয়ে গেল। এটা সম্ভব না। পিপি কী পাগল হয় গেছে?
– হ্যাঁ এটাই। ওর থেকে সরে এসো। এই যে রিস্টার্ট, এই সম্পর্ক টা হওয়াই উচিত হয়নি। এটা অনেক ভুল একটা সম্পর্ক। এটা এখানেই শাট ডাউন করে দাও।
– অসম্ভব! আমি পারব না।
– নাদিয়া, বলেছিলাম এখন ভালোবেস না। নিজের বিপদ নিজেই ডাকছো। ও নরমাল না। ও মেন্টালি সিক! তুমি ওর সাথে থেকো না।
– আমার অসুস্থতার সময় তো উনি ছিলেন। এখন আমি?
– তোমার টা আর ওর টা আলাদা। কাল হঠাৎ করে ওর এই রূপ। ও তোমাকে রে*প করতে যাচ্ছিল নাদিয়া! দ্যাটস আ ক্রাইম! সেন্সে আসো। পরশু খু*ন করে দিতে পারে। ও কেমন আক্র*মণাত্মক তা তুমি নিজে দেখেছ। আ’ম স্যরি, আমিই বলেছিলাম একটা চান্স দাও। ওর সত্যি জানবো। কিন্তু ও এরচেয়েও ভয়ংকর। ওর সাথে সারাদিন থাকা বিপদজনক! ওর ইমোশনের প্রতি ওর কোনো কন্ট্রোল থাকবে না। ওর এখন তোমাকে না, ডাক্তার দরকার। ট্রিটমেন্ট দরকার! তোমার নিজের ও ডাক্তার দরকার। দুজন অসুস্থ মানুষ কী করে থাকবে?
– আই কান্ট লিভ হিম!
নাদিয়ার চোখ দিয়ে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে খুবই অসহায় লাগছে। ভুল মানুষকে ভালোবাসার ফল এমনই নির্মম। তাকে ছাড়া যায় না, তার সাথে থাকাও যায় না। পিপি তার কপালে হাত দিয়ে বসে আছেন। তিনি আফসোস করছেন, কেন ওদের একসাথে রাখতে চেয়েছিলেন। ওরা তো একসাথে থাকার মতো না। দুটো জীবন একবারে নষ্ট।
– আর কোনো উপায় নেই?
– তুমি ওকে ডাক্তার দেখাও। তবে তাও একসাথে থেকো না। ওর যত কাছে যাবে, তত বিপদে পড়বে।
– ওনার সাথে কী হয়েছে তা জানলে?
– ব্যাপারটা ওখান থেকে এখন অনেক দূর চলে গেছে। শোনো নাদিয়া, এখন যদি তুমি সুস্থ হতে আমি বলতাম তুমি ওকে ডাক্তার দেখাও। ওর পাশে থাকো। ওকে সাহস দাও। তোমাকে তোমার অবস্থান বুঝতে হবে।
– কোথায় যাবো?
– বাবার বাড়ি যাও। চিন্তা করো না, আমি কথা বলবো ওনাদের সাথে। তোমার সুস্থতা আগে।
– আর জাহিদ?
– আহ! ওর ব্যাপারেও দেখবো। ওর জন্য খুঁজছি। তুমি এত স্মার্ট একটা মেয়ে, তুমি কী করে এখন বোকার মতো এসব ভাবছো? আজকে গিয়ে জাহিদ কে বলো তুমি কিছুদিন বাবা মায়ের কাছে থাকবে। তোমার বাসায় ভালো লাগছে না।
– উনি কী বুঝবে?
– ওকে বলো, চাকরি করার জন্য তুমি এখন কিছুদিন ওখানে থাকবে। এরপর ওকে আস্তে আস্তে বোঝাবো, বুঝিয়ে ডাক্তারের কাছে পাঠাবো। আর ও বুঝলে না বুঝলে কী আসে যায়!
– একসাথে থেকে করলে কী হবে?
– হি ইজ অবসেসড উইথ ইউ!!
– কী?
পিপি এটা বলতে চাইছিল না। কিন্তু এখন ওকে সেখান থেকে বের করতে হলে বলতেই হবে,
– এটা এখনো একটা ধারণা। কিন্তু সত্যি ও হতে পারে।
– অবসেসড না। হালকা পাতলা আমিও জানি এসব ব্যাপারে। উনি আগে আমাকে পাত্তাই দিত না। কথা বলত না ঠিক করে।
– ইটস বিকজ হি নিউ দ্যাট হি কান্ট কন্ট্রোল হিস ইমোশন। ও তোমার থেকে দূরে থেকে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতো। ও ইদানিং অনেক পসেসিভ হয়ে গেছে। এটা নরমাল না। আচ্ছা, ওর সাথে তোমার কী আগে দেখা হয়েছিল?
– না। প্রশ্নেই উঠে না।
– ও হয়তো তোমাকে চিনতো? কানেকশন খোঁজো। কোনো বন্ধু, কোনো স্কুল।
পিপি চাইছে নাদিয়া প্রিয়মের কথা নিজে থেকে ভাবুক। নাদিয়া ভাবছে, কিন্তু কিছু পাচ্ছে না।
– কী করে? কোনো কানেকশন নেই। আমাদের দেখা একদম ব্লাইন্ড ডেটে। ওনার ফুফু তো কয়েক বছর আগেই আমার খালার এলাকায় আসে।
– কয় বছর?
– আমাদের বিয়ের প্রায় এক বছর আগে। আমি তো তখন খালার বাসায়ও যাইনি। দেখা হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
– স্কুল ?
– আমি বাংলা মিডিয়াম আর উনি ইংলিশ। উনি যে স্কুলে ছিলেন আমি তো নাম ই শুনিনি। কোথায় তাও জানি না। কোনো কানেকশন নেই।
– স্টিল, তুমি বাবার বাড়ি চলে যাও। আর আজকে এখানে এসেছ এটা ওকে ভুলেও বলবে না।
– আপনি এভাবে কেন বলছেন যে ও কোনো ক্রিমি*নাল বা সাইকো?
– কারণ হি ইজ নট নরমাল। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এমন হতে পারে না।
নাদিয়া সেখান থেকে বাসায় চলে আসে। ওর ক্ষণে ক্ষণে কান্না পাচ্ছে। ও এভাবে জাহিদকে ছেড়ে যেতে পারবে না। এদিকে সারারাত কেঁদে চোখ ফুলিয়ে রাখা জাহিদ এভাবে অফিসেও কাজ করেছে। সন্ধ্যার পর ও বসে আছে অফিসে। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। এই চেহারা ও কিছুতেই দেখাতে পারবে না। রাত দুইটায় বাসায় ফিরে অন্যরুমে ঘুমিয়ে পড়ে জাহিদ। এরপর সকাল হতেই আবার বেরিয়ে যায়। নাদিয়া আজ আর ওর দেখা পেল না। আজকেও আবার একই কাজ। দুদিন যাবৎ নাদিয়া ওর অপেক্ষা করছে। বাধ্য হয়ে ও জাহিদ কে মেসেজ করে, ” কথা বলা দরকার।”
নয়টা বাজে জাহিদ বাড়ি ফিরে। ওর চেহারা একদম বিধ্বস্ত। একদম ঘুমায়নি দেখেই বোঝা যায়। নাদিয়ার একটু মায়া লাগলো। তবুও আসল কথা বলা দরকার। দুজন বসার ঘরে বসে,
– আমি বাড়ি যাব।
– জ্বী!
ওরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে। তো শেষ পর্যন্ত চলেই যাচ্ছে। জাহিদের অজান্তেই ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নাদিয়া বিচলিত হয়ে বলল,
– বেড়াতে। এমনি! আবার আসব তো। মা বলছিল, সেজন্য।
– আ’ম স্যরি। আমি করতে চাইনি। আমি জানি না কেন,
– সেজন্য না। আমি এমনি যাব। বিয়ের পর মেয়েরা যায় যে তেমন।
– দূরে থাকাই ভালো। চলে যান। আমি কেন সেদিন হাতটা ধরেছিলাম? উচিত হয়নি।
– আপনি এমন করছেন কেন?
– আমি সব শেষ করে দিয়েছি। আমার মতো মানুষের একা থাকাই ভালো। আমি অনেক জঘন্য মানুষ।
– আপনি ভালো মানুষ। আপনি অনেক ভালো মানুষ। আমি দেখেছি। শুধু একটা ঘটনা দিয়ে আপনি খারাপ হয়ে যাবেন না।
– তো চলে যাচ্ছেন কেন?
নাদিয়া চুপ হয়ে গেল। জাহিদ ওর চোখ মুছে উঠে যাচ্ছিল। এবার নাদিয়া ওর হাত ধরে ফেলল।
– আমি যাচ্ছি না। আমি যাবো না।
– কেন?
– আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না। এমনি বেড়াতে যাচ্ছি।
– আপনার কী আমার জন্য খুব সিমপ্যাথি? সেজন্যই বলছেন, তাই না?
– সিমপ্যাথি সবার জন্য হয়। রাস্তার কুকুর বিড়ালের জন্য ও সিমপ্যাথি হয়। আপন মানুষের জন্য সিমপ্যাথি হয় না।
– আমি কী আপন মানুষ?
– হ্যাঁ।
– আমার জন্য কী হয়?
নাদিয়া উঠে দাঁড়ালো। জাহিদ অপেক্ষা করছে। কী হয়? ভালোবাসা? ভালোবাসা বলবে? অনেক বড় ফাঁসা ফেঁসে গেছে। কেউ একজন বলেছিল না তপস্যা। তপস্যা করতে হচ্ছে। ও জানে, ও ভুল করছে। কিন্তু ভুল করতেই ইচ্ছে করছে। ওকে ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না।
– কেয়ার। আপন মানুষের জন্য কেয়ার হয়।
– কেয়ার!
– আপনি ও তো করেন, আমার জন্য।
– হুম।
– ওটাই। আপনার টা কী সিমপ্যাথি?
– না।
– ওটা কী?
– কেয়ার!
ওটা ভালোবাসা। অনেকদিনের পুরনো ভালোবাসা। সেটা বলা যাবে না। জাহিদ আর নাদিয়া পাশাপাশি শুয়ে আছে। ওরা কেউই ঘুমাচ্ছে না। কাল নাদিয়া বাবার বাড়ি চলে যাবে। আর ওরা দুজনেই জানে নাদিয়া আর আসবে না। এটাই শেষ চলে যাওয়া। দুজনেই সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর নাদিয়া বলে,
– আমরা কী কাডেল করতে পারি?
– জ্বী?
– ঐদিনের মতো আমাকে আরেকবার জড়িয়ে ধরবেন?
জাহিদ নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরে আছে। ওর মুখটা নাদিয়ার কাঁধে। ও সর্বস্ব দিয়ে নাদিয়াকে অনুভব করছে। ওর নিঃশ্বাসের সাথে নাদিয়া ওর রক্তবিন্দুতে প্রবেশ করছে। সেই রক্ত ওর শিরা উপশিরা হয়ে পুরো শরীরে বাহিত হচ্ছে। ওর হৃৎপিন্ড ফুসফুস আর মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু নাদিয়া নাদিয়া নাদিয়া! কিন্তু নাদিয়া সোজা হয়েই শুয়ে আছে। ওর মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরছে।
– আমাদের কী আগে কখনো দেখা হয়েছিল?
প্রশ্নটা শুনে জাহিদ ঘাবড়ে যায়। নাদিয়া উত্তরের অপেক্ষা করছে। জাহিদ আবার কান্না করছে। সেই জলে নাদিয়ার ঘাড় ভিজে যাচ্ছে।
– দেখা হয়েছিল?
– নাহ!
– কাঁদছেন কেন?
– দেখা হয়নি কেন, তাই। (কাঁদো কাঁদো গলায়)
– দেখা হলে অনেক ভালো হত, তাই না?
– হুম।
– আমি জানতে পারতাম কী হয়েছিল আপনার সাথে।
– হুম।
– আপনি জানতে পারতেন, আমার কথা।
– হুম।
– আপনি কী তখনো আমাকে বুঝতেন?
– আপনি কী আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন?
– কখনো না।
– যাবেন না প্লিজ! নইলে আমার কী হবে? আমি কী করে থাকব? আমার খুব ভয় করে। (কাঁদতে কাঁদতে)
– আমি যাব না।
নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ টা সৃষ্টির আদি থেকে। যে জিনিসে যত নিষেধাজ্ঞা, সেই জিনিসটা তত প্রিয়। সমস্ত কৌতুহল যেন সেই দিকেই। বিবি হাওয়ার সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল গ্রহণের মাধ্যমেই এত কিছু। যুগে যুগে এই কৌতুহল অনেক কিছুই সৃষ্টি করেছে। যাকে যেটা মানা করা হয়, সে সেটাই করে। কী ক্ষতি হবে, আমি সেটা দেখতে চাই।
নাদিয়া পাশ ফিরে জাহিদের দিকে তাকালো। ওর অশ্রু সিক্ত চোখ মুছে দিল। এরপর জাহিদের দুই চোখে চুমু খেল। নাদিয়া এখন সেই নিষিদ্ধ জিনিসটাকে গ্রহণ করবে, যেই জিনিসটা ওর জন্য ক্ষতিকারক। সব বাঁধা ভুলে নাদিয়া জাহিদের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ মিলিয়ে নিজেকে বিলীন করে দিল।
“আমার প্রতিটি রক্ত বিন্দু,
আমার পুরো শরীর
ছিন্নভিন্ন হলেও
এই আত্মা রবে তোমার ই।
পুরো পৃথিবী আমায় করলেও বারণ,
আমি তোমার প্রেমেই হবো বিলীন।
তোমার প্রেম যেন অন্ধকার সমুদ্র,
রহস্যময়, যাওয়া বারণ
তুমি শুধু তুমি,
সেটাই যথেষ্ট কারণ।
তোমার জন্যই জন্ম আমার
তোমার জন্যই ধ্বংস,
আমি পরোয়া করি না কারো
কারণ প্রেম অবিনশ্বর।
তোমার আগুন ছুঁয়ে আমি ছাই হয়ে যাবো,
তোমার অন্ধকারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো,
তোমার গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাবো,
আমি তোমার প্রেমে বিলীন হয়ে যাবো।”
ধ্বংসের পথে পা বাড়াতে ভালোই লাগে। এটা মানুষের একটা বৈশিষ্ট্য। ধ্বংস অনিবার্য জেনেও অনেক কাজ করে বসে। শেষ টা জানা থাকে, তবুও ভালোই লাগে। নাদিয়া জানে ও একটি টক্সিক রিলেশনশিপে আছে, তবুও ওর জাহিদের সাথে থাকতে ভালো লাগে। এই কষ্টে একটা ভালো লাগা আছে। কষ্টের মধ্যে একটা মধুরতা আছে। সেই অনুভূতি কে বিটারসুইট বলা যায়। দিন শেষে আমাদের সবার জীবনই বিটারসুইট।
শুদ্ধ আর প্রিয়ম একটি জায়গায় বসে আছে। প্রিয়ম ওর স্কুল ইউনিফর্ম , আর শুদ্ধ ওর অফিসের পোষাকেই।
– অনেকদিন পর।
– হুম। কেমন আছিস?
– আমি কেমন থাকবো? ম*রা মানুষ কেমন থাকে রে?
– আ’ম স্যরি। আমি কিছুই করতে পারিনি।
– তুই তো অনেক ভালোই আছিস আমার বান্ধবী কে নিয়ে। শুধু আমিই নেই। সবাই ভালো আছে। ঐ ব্লাডি বাস্টা*র্ড গুলোও!
– আমার কী দোষ! আমি এত বছর ভুগেছি। আজকে গিয়ে একটু শান্তি পেলাম। আমাকে একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে দে। অরনীর কী দোষ? আমরা অনেক কষ্ট করেছি। আমাদের ও তো শান্তিতে বাঁচতে ইচ্ছে হয়।
– এই দুনিয়ায় সবার শান্তিতে বাঁচতে ইচ্ছে হয়। শুধু একজন ধর্ষি*তা ছাড়া। আমার ধর্ষ*ক গুলো নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমি ম*রে গেলাম। বেঁচে থাকলেও এর ব্যতিক্রম হতো না। শুদ্ধ, তুই আর অরনী সুখে শান্তিতে সংসার কর। তোরা অনেক কষ্ট করেছিস। বিনা দোষে এত গুলো বছর।
– তুই ম*রে গেলি কেন? তোর বাচ্চার কী দোষ ছিল? আমি বলেছিলাম আমি ভিডিওটা ডিলিট করে দেব। সেদিন তুই মানা করে দিলি। বললি তুই ওদের শাস্তি দিতে চাস। তোর বাচ্চাকে জন্ম দিতে চাস। তবে কেন মরে গেলি? তোর যদি এই বাচ্চা জন্ম না দিয়ে সাধারণ ভাবে বাঁচার ইচ্ছা থাকতো আমি সব ডিলিট করে দিতাম। কেন করলি এমন!
– ভিডিও ডিলিট হলে কী আমি জাস্টিস পেতাম? ওরা কী শাস্তি পেত? উল্টো ওদের পাপ মুছে যেত। আমি বেঁচে থাকলে জীবন্ত লা*শ হতাম। কারণ এই সমাজে ধর্ষ*করা দোষী নয়, ধর্ষি*তারাই দোষী!
– তারপরও আত্ম*হ*ত্যা কোনো কিছুর সমাধান না।
– কে বলছে এই কথা? যে কি না নিজেই স্কুলের ছাঁদ থেকে লাফ দিতে যাচ্ছিল।
– তাই জন্যই বলছি। আমি বেঁচে আছি। লড়াই করে বেঁচে আছি।
– আর প্রতি মুহূর্তে ম*রছিস। প্রতিবার অরনীর মুখোমুখি হওয়া যেন একেকটা মৃ*ত্যু। তারচেয়ে ভালো আমি একেবারেই মরে গেছি।
– তো আমি কী করবো? ওনাকে সত্যি টা বলে দেব?
– হুম। কয়দিন কাপুরুষের মতো বাঁচবি? একদিন না একদিন তো সত্যিটা সামনে আসবেই। অরনী কে সত্যি টা বলে দে।
– না! সত্যি জানার পর উনি আর বাঁচবে না। তুই জানিস না উনি অনেকবার আত্ম*হ*ত্যার চেষ্টা করেছে।
– যতদিন ও সত্যি জানবে না, ততদিন চেষ্টা করবে।
– আমি বলতে পারব না। উনি আমাকে ঘৃণা করবেন।
– তোর কোনো দোষ নেই। তুই আর আমি দুজনেই ভুক্তভোগী। ও তোকে ঘৃণা করবে না। উল্টো তুই নিজেকে ঘৃণা করবি। ওর থেকে আর কিছু লুকাবি না। বলে দে, তুই কে? আমার সাথে কী হয়েছিল, সব।
– উনি তখন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
– এভাবে আর কতদিন থাকবি?
– যতদিন থাকা যায়।
– তবে তোরা এভাবেই থাক। আমি অপেক্ষা করবো।
– কীসের?
– যেভাবে তোদের বিয়ে হয়েছে, সেভাবেই সত্যি টা সামনে আসার।
(চলবে)
(দুঃখিত। আজকেও ক্লাস থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই দেরি হলো।)