#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_৩৬
জাহিদ নাদিয়ার মান ভাঙাতে অনেক কিছু করছে। বেচারি এখন আর ওর কোনো কথা কানে নিচ্ছে না। এখন যেন চরিত্র বদলে গেল। আগে শুধু নাদিয়া কথা বলে যেত আর জাহিদ হুম না বলে জবাব দিত। কিন্তু এখন নাদিয়া সেই জায়গায় এসেছে।
– শুনছ, আমার স্ট্রেস বলটা কোথায় গেল?
– কুঁচি কুঁচি করে কেটে ফেলে দিয়েছি।
– কী? এসব কী বলছ?
নাদিয়া কোনো উত্তর দেয় না। জাহিদের অনেক রাগ হতে থাকে। ” সমস্যা টা কী তোমার? আমার উপর রাগ হলে এভাবে ঐ বেচারা কে কেন শাস্তি দেবে।” নাদিয়া কিছু বলে না। জাহিদ বুঝতে পারছে ওর রাগ করা বাঞ্ছনীয়। শুধু শুধুই সেই মিথ্যা গুলো বলেছিল। মিথ্যা কখনোই ভালো না। নাদিয়া বিছানায় ওর জায়গায় শুয়ে পড়লো। জাহিদ ওর জায়গায় বসে এরপর আস্তে আস্তে নাদিয়াকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে। এখন কথা না বলে কোথায় যাবে।
– আমি স্যরি তো।
– দেখো, তুমি বিষয়টাকে অনেক হালকা ভাবে নিচ্ছ।
– একদমই না। এভাবে রাগ করে বসে থাকলে শুধু শুধু রেষারেষি। আমি এমনিতেই তোমার থেকে এতদিন দূরে থাকলাম।
– আমার ও কী ভালো লাগছে? একদমই না। আমিও চাই ভালোভাবে থাকতে। তাই আগেই বলছি, আর কী কী লুকাচ্ছ। ভালো ছেলের মতো সব এখনই বলে দাও। আমি বারবার শক নিতে পারব না।
– আর কিছু লুকাচ্ছি না।
নাদিয়া জাহিদের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। ও এখনো বলেনি ও ম্যাগনেফিসেন্টের ছাত্র। ওর বুকের মাঝখানে কেমন চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভব হলো। জাহিদ এখনো মিথ্যা বলছে! জাহিদ নাদিয়ার সাথে চোখ মেলাচ্ছে না।
– আচ্ছা তো আমাকে সারার কথা বলোনি কেন?
– সারা!
জাহিদ অজান্তেই নাদিয়া কে ছেড়ে দেয়। ও কী করে জানলো? এই মেয়েটা তো দেখছি এভাবে সব জেনে যাবে।
– বল! কী হলো?
– তুমি কী করে জানলে?
– সানি তোমার সামনেই বলল সারা তোমাকে পুরুষ,
নাদিয়া চুপ হয়ে যায়। জাহিদ এবার সোজা হয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকায়। এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
– তুমি আমাকে লজ্জা দিচ্ছ কেন?
– লজ্জা? একদমই না। জানতে চাই। তুমিও তো জানো আমার ব্যাপারে।
– হুম। কিন্তু সারা …. ।
– খুব সুন্দরী?
– সবাই তো তাই বলতো।
– স্মার্ট?
– ছিল।
– দয়ালু?
– প্রিটেন্ড করতো। জানো, ও খুব ভালো প্রিটেন্ড করতো। ওর বাইরের জিনসটা খুব চমকপ্রদ। ভেতর টা একদম ফাঁপা। মানুষ টা, না না, জিনিস টা পুরোই মাকাল ফল।
– কেন?
– পুরোটা বলতে চাইছি না। মনে করিয়ে দিও না। আমাকে এসব নিয়ে আর প্রশ্ন করোনা, আমার মনে পড়ে যায় আমি কত খর্ব, কত ক্ষুদ্র!
এমনটাই হয়, প্রতিবার জাহিদের সাথে খোলামেলা কথার পর কেমন একটা অপরাধবোধ ঢুকিয়ে দেয় ওর ভেতরে। নাদিয়ার মনে হতে থাকে ও কতটা নির্দয়। বার বার ওকে একই জায়গায় দাঁড় করায়। জাহিদ আবার নাদিয়ার খুব কাছে এসে বলে,
– তোমার এক্স খুব ভালো মানুষ ছিল। সে তোমাকে আজ ও শ্রদ্ধা করে। তাই হয়তো তুমি বারবার সারা নামের মেয়েটা কে তার জায়গায় রেখে চিন্তা করো। তোমার মনে তার জন্য শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু আমার মনে সারার জন্য অগণিত ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নেই। কারণ ও আমার প্রাক্তন নয়। ওর জায়গাটা আমার মনে তোমার মনের সেই মিশান ভাইয়ার মতোই।
– জ্বী?
– হয়তো আরো খারাপ। জীবনে আমি কোনো নারীকে এতটা ঘৃণা করিনি করবো ও না। তাই নারী বা মানুষ বলে আমি সম্বোধন করব না। দুনিয়ার সবচেয়ে কুৎসিত সৃষ্টিতে তার স্থান থাকবে।
– ও কী করেছিল তোমার সাথে?
– সবসময় সবকিছু আমার সাথে হতে হবে কোনো কথা নেই। আবার ভেবো না ও আমাকে ছ্যাঁকা দেওয়ার জন্য সাধারণ পুরুষের মতো ওর নামে গালমন্দ করছি। তবে আমি আর একটিবার ও ওর কথা শুনতে চাই না।
নাদিয়া বুঝতে পারে এই বিষয়টা অনেক স্পর্শকাতর। সেই প্রচন্ড আঘাত থেকেই হয়তো সে তার সমস্ত জীবন নারী জাতি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। ওর মনে হতে থাকে, এই সারা কী সেই সারা?
স্কুলের লাইব্রেরিতে বই খুঁজছে নাদিয়া আর ওয়াসি বসে আছে। ওয়াসি খুব উদ্ভট আচরণ করছে। ওর নাদিয়ার জন্য মায়া হচ্ছে। ভাবছে, ও কী সব বলে দেবে?
– কী হয়েছে ওয়াসি?
– কিছু না, আচ্ছা। শোনো, তুমি কী ম্যাগনেফিসেন্টের কোনো পুরনো ছাত্রকে চেনো?
– না তো।
– জিজ্ঞেস করেছ?
– খোঁজ নিয়েছি।
– পাও নি?
– না।
ওয়াসি ভাবছে এই শুদ্ধ কত চালাক। মেয়েটার থেকে সব গোপন করে চলছে। মেয়েটা যখন জানবে একদম ভেঙে যাবে।
– কী হয়েছে? কিছু জানতে পেরেছ?
– না। তোমার স্বামী কোথায় চাকরি করেন?
“শশশশ! এটা লাইব্রেরি। আপনারা শিক্ষক হয়ে এ ধরণের আচরণ করলে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? গল্প করার জায়গা তো এটা নয়।” ওয়াসি আর নাদিয়া তাকিয়ে দেখলো একটা অগোছালো চুলের ছেলেকে। ছেলেটা কালো হুডি আর সোনালী ফ্রেমের গোল চশমা পড়েছে। চশমার ফাঁকে ওর চোখ খানিকটা কুঁচকে আছে তা বোঝা যাচ্ছে। বিরক্তি টা একদম স্পষ্ট। তার হাতে চার পাঁচটা বই ও আছে। নাদিয়া তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– আপনি কে?
– আমি লাইব্রেরিয়ান।
– আপনার নাম? আগে তো দেখিনি।
ছেলেটা মুখে আঙুল দিয়ে চলে গেল। ওয়াসি বইয়ে মনোযোগ দিলো। যাওয়ার আগে নাদিয়া একটা বই ইস্যু করতে গেল,
– এই বইটা নিচ্ছেন যে আগের বইগুলো ফেরত দিয়েছেন?
– দুটো বাকি।
– কবে দিচ্ছেন?
– কাল। চিন্তা করবেন না, আমি ফাস্ট রিডার। রেকর্ড যখন দেখছেন দেখুন তো কয়টা নিয়েছি আর কয় দিনে ফেরত দিয়েছি।
– হুম।
– নাম কী আপনার?
– রোহান।
– আগে দেখিনি যে?
– ছুটিতে ছিলাম।
– একদম শুরুতেই?
– হ্যাঁ। ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমি আবার ভেঙে ভেঙে ঘুরি না। একসাথে ঘুরি।
– আমি নাদিয়া।
– জানি। আর উনি ওয়াসি।
– কী করে জানেন?
– রেকর্ড আমার সামনে।
– ও আসলেই তো!
– আর আগের লোকটা আমাকে বলেছে দুজন টিচার স্টুডেন্টদের থেকে বেশি এখানে থাকে। কিছু মনে করবেন না। এমনিতেও কম মানুষ আসে এখানে। কারো আর লাইব্রেরিতে আগ্রহ নেই। এখন যদি কথা বলেন বাকিরা যারা আসে তাদের মনোযোগ নষ্ট হয়। তখন তারাও আসবে না। এমনি কেউ না থাকলে আমরা বই নিয়ে গল্প করতে পারি।
ওয়াসি ও আশে। রোহান ওয়াসির বই ইস্যু করে দেয়। ওয়াসি আর নাদিয়া একসাথে গাড়িতে উঠে,
– এই লাইব্রেরিয়ানকে ও আগে দেখিনি।
– আমরা আসার আগে নাকি ছিল।
– একদম নার্ড।
– লাইব্রেরিয়ানরা এরকম ই হয়।
নাদিয়া এবার আর অনুমতি নিল না। রেডিওটা চালিয়ে দিলো। আরজে ঐশীর শো শুরু হবে।
– তোমার কী খেয়ে দিয়ে কাজ নেই? রেডিও শোনো সারাদিন।
– তুমি গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দাও।
– এই আরজে ঐশী আমার ভালো লাগে না।
– কেন? ও কী ক্ষতি করেছে?
– ও কী ভালো করে সারাদিন বকবক ছাড়া?
– অনেক ভালো কাজ করে। ও না যে গান চালায়, সব সিচুয়েশনের সাথে মিলে যায়। প্রথম দিন যখন ওকে শুনি সেদিন আমার খুব মন খারাপ ছিল। প্রিয়মের জন্মদিন ছিল। তখন আমি গাড়িতে বসে কাঁদছিলাম। আর ও আমাদের প্রিয় গানটা চালালো। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো আমি আর প্রিয়ম এক সঙ্গে গানটা শুনছি।
– আর? এক্সকে গালাগাল ছাড়া তো আর কিছু করে না।
– কে বলেছে করে না? প্রতিদিন কিছু না কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ে আলোচনা করে। রিলেটেবল জিনিস।
– যেমন? আমার এক্স ধোঁকাবাজ!
– তুমি এত রাগছ কেন? ওর কথা তো একদম ঠিক। কমন বিষয় থাকে যেমন, বিশ্বাসঘাতকতা। আসলে যারা বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার তারা একটু একাকীত্বে ভোগে। ঐশী যখন কথা বলে তাদের মনে হয় নিজের কথা গুলোই শুনছে।
– তোমার সাথে পারা যাবে না। ফ্যানগার্ল সব।
কিছুক্ষণ পর আরজে ঐশী শো শুরু করলো। আজকে কথা বলছে সন্দেহ নিয়ে।
” হারানোর ভয় থেকে সন্দেহ শুরু হয়। সন্দেহ করা টা অনেকে ভালোবাসার রূপ মনে করে। বেশি ভালোবাসে তাই সন্দেহ করে।”
– দেখলে, সন্দেহ করা কে রোমান্টিসাইজ করছে।
– একদম না। পুরোটা শুনো।
” কিন্তু আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে সন্দেহ করে কী তাকে অসম্মান করা না? ঈর্ষা খুবই খারাপ জিনিস। বিষের মতো। বিশ্বাস ও তো ভালোবাসার রূপ। সম্মান আর বিশ্বাস না থাকলে, ভালোবাসা কী সম্ভব?”
ওয়াসি এবার অন্য দিকে তাকাচ্ছে। আর নাদিয়া হাসি আটকে রেখেছে। এরপর বলল, “হেটার সব।” গান শুরু হয়েছে, গাড়িও জ্যামে পড়েছে। গানের মাঝপথে ওয়াসি বলে,
– আজকের গানটা কী তোমার সাথে এই মুহূর্তে রিলেটেবল? আর সন্দেহ কোথায় এখানে? এটা তো প্রেমের গান।
– অবশ্যই, এর একটা লিরিক্স আছে। শুনতে থাকো। আর সব তো আমার সাথে যায় না। হয়তো কোথাও অন্য কারো সাথে যাচ্ছে।
“Tumhein koi aur dekhe to jalta hai dil
Badi mushkilon se phir sambhalta hai dil
Kya kya jatan karte hain tumhein kya pata”
পাশের গাড়িতে জাহিদ বসে আছে। নাদিয়া আর ওয়াসি কে আনন্দে দেখে ওর চেহারার রং যেন বদলে গেলো। এই সম্ভাব্য নকল ওয়াসিকে ওর সহ্য হয় না। এর মুখোশ টা যদি টেনে ছিড়ে ফেলা যেত। নাদিয়া পাশে তাকাতেই দেখে পরিচিত গাড়ি। এরপর ও জানালা দিয়ে মাথা বের করে বলে,
– জাহিদ! তুমি বাড়ি যাচ্ছ?
– না , হাঁটে যাচ্ছি।
ওয়াসি হেসে ফেলল। সে খুব ভালো করেই বুঝেছে জাহিদ ওকে একদম পছন্দ করে না। তবে নাদিয়া ও লজ্জা পেয়েছে। জাহিদের এই ভেবে খারাপ লাগছে যে নাদিয়া হয়তো ওয়াসির সঙ্গ টা বেশি উপভোগ করছে। তাই তো কত ফ্রি হয়ে গেছে অল্প দিনে।
– তুমি মাথা ভেতরে ঢোকাও।
– কেন?
– ঢোকাও বলছি। বিপদজনক এটা!
নাদিয়া মাথা ঢোকালো। এরপর ওয়াসি বলল,
– সামনে গিয়ে তোমার বরের গাড়ি তে উঠে যেও।
– ভালো আইডিয়া।
নাদিয়া জাহিদ কে কল করল। জাহিদ মুখ ভার করে ফোন তুলল,
– সামনে আসো। আমি তোমার গাড়িতে উঠবো।
– এটা তোমার ও গাড়ি।
– তাই?
নাদিয়া হেসে ফোনটা কেঁটে দেয়। ও নামতেই ওয়াসি রেডিও টা অফ করে দেয়। কিন্তু বুঝতে পারে জাহিদ ও একই জিনিস শুনছে। এরপর গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে বলতে থাকে, ” দিলে তো বেচারার মুড খারাপ করে। ঐশী তোমার কাজ নেই?” নাদিয়া গাড়িতে এসে বসতেই জাহিদ বলে,
– প্রতিদিন ওর গাড়িতে আসো কেন?
– ও বলে তাই। পরিচিত তো।
– বিরক্ত হয় না?
– না। ও নিজেই বলে।
নাদিয়া দেখলো জাহিদ ও রেডিও শুনছে।
– তুমিও শোনো?
– কী?
– শো?
– হ্যাঁ। তুমিই তো বললে।
– বাহ!
– তোমার হাতে বই?
– তোমার গুলো পড়তে পড়তে অভ্যাস হয়ে গেছে।
জাহিদ মুচকি হাসে। এরপর গাড়ি চালাতে চালাতে নাদিয়ার হাত ধরে। রেডিওতে আরজে ঐশী বলছে ওর ফ্যান মিটিং হবে কাল। জাহিদ বলে,
– যাবে?
– কে নিয়ে যাবে?
– বা রে, আপনি কী এখনো সিঙ্গেল?
– না। কিন্তু দুপুরের দিকে।
– ক্লাস আছে?
– ক্লাস দুপুরের আগে শেষ। পিচ্চিদের ক্লাস নেই। তাও সকালের দিকে।
– চলো। আমার একটু দেরি হতে পারে। লাঞ্চের পর আসবো। তুমি থেকো।
– ঠিক আছে। তোমার অফিসে?
– সুখবর আছে। আমরা আজফারদের প্রজেক্ট টা পেতে পারি। তাই সবাই আমার উপর খুশি। সেই খুশিতে আমি একটু তাড়াতাড়ি বের হলে সমস্যা নেই।
পরদিন নাদিয়া আগে আগে চলে যাচ্ছে। ওয়াসি ওর পেছন পেছন এলো।
– কই যাও?
– একটা জায়গা।
– কোথায়? চলো যাই। আমার ও ক্লাস শেষ। একা একা ঘুরতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় যেন কলেজে পড়ি।
– আচ্ছা চলো।
একটা মলের ফ্লোরে ফ্যান মিটিং হচ্ছে। আরো অনেক রেডিও স্টেশন এর আরজেরা আছে। ওয়াসি প্রথমে বুঝতে পারেনি নাদিয়া কার কাছে এসেছে। নাদিয়া হ্যাপি এফ এম এর স্টলে গিয়ে আরজে ঐশী কে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। ওর মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। কীভাবে শুরু করবে। আর জে ঐশী নিজেই তাকে সালাম দিলো।
– আমি আপনার শো শুনি সবসময়।
– ধন্যবাদ।
– আপনি আমাকে চিনবেন কি না জানি না। আমি আপনাকে প্রায় এস এম এস করি। আপনি পড়েন না।
– খুব কম পড়া হয়। তার জন্য দুঃখিত। অনেক মেসেজ এসে থাকে।
– কিন্তু আমি মেসেজ না করলেও আপনি সবসময় আমার মুড অনুযায়ী গান বাজান। কী করে জানেন?
– জানি না, তবে মিলে যায়।
– আপনার বাজানো গান আমার মুডকে অনেক হেল্প করে। ধন্যবাদ।
– আপনাকেও ধন্যবাদ আমার শো শোনার জন্য।
ওয়াসি সেখানে চলে আসে। কিন্তু ঐশী কে দেখে সে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে। কিন্তু ঐশী ওকে চিনে ফেলে। নাদিয়া কিছু একটা বুঝতে পেরে পেছনে তাকায়। এরপর ওয়াসি কে ডাকে। ঐশী খানিকটা অবাক হয়। তারপর সে জিজ্ঞেস করে,
– উনি কী আপনার সাথে?
– হুম। আমার বন্ধু, ওয়াসি।
– ওয়াসি!!!
– এই ওয়াসি, আমি এখানে।
ওয়াসি অপ্রস্তুত হয়ে ওদের সামনে আসে। ঐশীর চোখ যেন ছলছল করছে। ওয়াসির মুখেও হাসি নেই।
– এই যে, ওয়াসি। ওকেও আমার জন্য তোমার শো শুনতে হয়।
– ওহ! আপনার কী আমার শো ভালো লাগে?
নাদিয়া ওয়াসির হাত চেপে ধরে সে যাতে উল্টো পাল্টা কিছু না বলে। ঐশীর দৃষ্টি সেদিকে যেতেই ওয়াসি হাত ছাড়িয়ে বলে,
– ভালো। গান গুলো ভালো।
– আমার কথা?
– ভালোই!
– এক্সকিউজ মি, আমি আসছি।
ঐশী সেখান থেকে চলে গেল। ওয়াসি যেন বিচলিত হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর সেখানে জাহিদ আসলো। নাদিয়া জাহিদের দিকে তাকাতেই ওয়াসি চলে গেলো,
– ও এখানে কী করছে?
– একা ছিল তাই নিয়ে আসলাম।
– ও কী রাহু নাকি?
– এভাবে বলছ কেন? রাহুর মতোই।
– কিন্তু রাহু না। দেখা হয়েছে?
– হ্যাঁ। উনি একটু অন্য জায়গায় গেলেন।
– এখন কী করবো?
– আশেপাশে একটু ঘুরি।
জাহিদ আর নাদিয়া আশেপাশে ঘুরে দেখছে। হঠাৎ মলের একটা বাচ্চা নাদিয়ার জামায় কোক ঢেলে দিলো। নাদিয়া তাই তা পরিষ্কার করতে ওয়াশরুমে গেল। জাহিদ লেডিস ওয়াশরুম থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে নাদিয়ার অপেক্ষা করছে। কিন্তু হঠাৎ ও খেয়াল করলো ওয়াসি একটা মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে কী যেন বলার চেষ্টা করছে। মেয়েটা শুনতেই চাইছে না। জাহিদ কাছে গিয়ে লুকিয়ে ওদের কথা শোনার চেষ্টা করলো,
– সব মিথ্যা! ইভেন নামটা ও।
– আ’ম স্যরি। হয়তো পরে একদিন এক্সপ্লেইন করবো। এখনকার জন্য, শুধু স্যরি।
– ছি! শুধু স্যরি বলতে লজ্জা করে না। আমি পাগলের মতো এই চার বছর ধরে তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। মাঝে মাঝে ভেবেছি তুমি মরে গেছ নাকি। সবাই বলেছে তুমি মজা করেছ কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি।
– চার না, কম। পৌনে চার বছর।
– এটা কী কম? পৌনে চার বছর কারো জন্য অপেক্ষা করে দেখ, বুঝবে।
– আমি কী কখনো বলেছিলাম অপেক্ষা করতে?
ঐশী রেগে ওয়াসির কলার চেপে ধরে,
– কী নামে ডাকবো তোমাকে? তোমার আদ্যপান্ত সবই মিথ্যা। যদি মিথ্যা বলার ই থাকতো তো আমাকে নিয়ে কেন খেলেছ? তোমার নাম্বার টাও ভুল। কেন দিয়েছিলে? কিছু না দিলেও চলতো। শুধুমাত্র তোমার জন্য আরজে হয়েছি। ভেবেছিলাম কোনো একদিন আমার কণ্ঠস্বর তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। আমি তোমার কী ক্ষতি করেছিলাম?
– আমি ও বা তোমার কী ক্ষতি করেছি? তুমি এত পাগল কেন? আমরা কয় যুগ না, কয় বছর প্রেম করেছি ঐশী?
– শাট আপ!
– কয় মাস?
– চুপ!
– সপ্তাহ?
– আরেকটা কথা বললে …
– পাঁচ দিন! পাঁচ দিনের মধ্যে দুই দিন ঝগড়া করেছ, একদিন দিন স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছ আর একদিন সুন্দর করে তাকিয়ে দেখেছ। শেষ দিন নাম্বার বিনিময়। এটার জন্য পৌনে চার বছর আমাকে লাগাতার রেডিওতে যা তা বলে যাচ্ছ। মুভ অন!
– তুমি এক টা জানোয়ার! মিথ্যেবাদী! ধোঁকাবাজ! ঐ মেয়েটাকে ও কী ফাঁসাচ্ছো?
– না। ও আমার কলিগ। আর ও বিবাহিত। আমি এমনি ওর সাথে এসেছি। ওর হাসবেন্ড ও আসবে এখানে। আর আমি মেয়েদের পেছনে সময় নষ্ট করি না যেমনটা তুমি আমার পেছনে করেছ। সবাই হাসবে এসব শুনলে। কাউকে আবার এসব বলো না।
ওয়াসি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। ঐশী তার রক্ত রাঙা চোখ দিয়ে ওয়াসির দিকে তাকিয়ে বলল,
– ইউ নো হোয়াট! ফা*ক ইউ ওয়াজির!
– আস্তে, তোমার ফ্যানরা তোমার মুখে এই ভাষা শুনলে তুমি ক্যান্সেল হয়ে যাবে।
– আই হোপ তুমি জ্বলো সারাজীবন! জীবনেও শান্তি পাবে না!
ঐশী সেখান থেকে চলে আসছিল, ওয়াসি ওকে থামিয়ে দেয়,
– মুভ অন করো। বিয়ে করে ফেলো বা প্রেম করো। জাস্ট আমাকে নিয়ে আর পড়ে থেকো না।
– তুমি আমাকে কী মনে করেছ? আমি তোমার কথা শুনবো?
– না শুনলেও এভাবে অল্পদিনের পরিচয়ে কাউকে নাম নাম্বার দিয়ে দিও না। অনেক বড় বিপদে পড়তে পারো। আমার না হয় কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না।
ঐশী ক্রোধে দাঁতে দাঁত চেপে সোজা হেঁটে চলে গেল।
জাহিদ পুরোটা দেখলো। তারমানে এ ওয়াসি নয়, অন্য কেউ। কিন্তু কে? নাদিয়া কে ওর থেকে দূরে রাখতে হবে। কিন্তু সে অত্যন্ত নির্দয় একটা মানুষ। এভাবে কোনো মেয়ের মন ভাঙে নাকি। এইজন্যই মেয়েটা রেডিও এত ছ্যাঁকা ওয়ালা গান বাজিয়ে মানুষের মুডের বারোটা বাজায়। এসব ভাবতে ভাবতে জাহিদ সেখানে থেকে চলে আসলো। এরপর নাদিয়াকে নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। ওর খুব ইচ্ছে নাদিয়াকে খুব দামি কিছু উপহার দেওয়ার। কিন্তু খুব সম্ভবত ওর এসব জিনিসের কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। তারপর ও ওরা একটা ডায়মন্ডের দোকানে ঢুকলো।
– আর ইউ শিওর?
– হ্যাঁ। পেন্ডেন্ট দেখতে পারো।
– না থাক।
– এই! আমাকে আন্ডারস্টিমিট করো না। আমি বোনাস পেয়েছি।
নাদিয়া ডিজাইনের বদলে দাম দেখছে। সবচেয়ে কম দামিটাই নেবে। আর তাই করলো। জাহিদ সেটা রেখে একটা খুব সুন্দর পেন্ডেন্ট দেখলো। নাদিয়া আবার দাম দেখছে। জাহিদ নাদিয়াকে আয়নার সামনে এনে ওর গলায় জিনিস টা রেখে ওকে দেখায়। এরপর মাথা নিচু করে আস্তে করে ওর কানে কানে বলে,”বাজেটের ভেতরে আছে। ” এরপর আলতো করে চুমু এঁকে দেয়। নাদিয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে। এরপর ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, ” তোমার গিফ্ট লাগবে?” জাহিদ নাদিয়ার হাত ধরে বলে, “বাসায় গিয়ে দিলেই হবে।”
এসব কিছুর মধ্যে জাহিদের কানে একটা আওয়াজ আসে, “শুদ্ধ!!!” জাহিদ আচমকা পেছনে দাঁড়িয়ে দেখে সারা ওর পেছনে দাঁড়ানো।
(চলবে)