#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[৪]
ঠোঁটের কোণায় কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ধরে রেখে সাহিল অমায়িক হাসল। জিনিয়া আর ও ভীত হয়ে ডাক দিল,
‘ আব্বা?
তরিনা খাতুন পানির গ্লাস এনে দেয় জিনিয়াকে। জিনিয়া না না করে উঠে বলে,
‘ আমি পানি খাব না, কিছুই খাবনা। আমি আব্বার কাছে যাব। আমাকে যেতে দিন।
জিনিয়ার কান্না দেখে সাহিল বিরক্ত হলো। সাগরকে বলল,
‘ বাবা এই প্যা প্যা শোনার জন্য এই মেয়েকে তুমি এখানে এনেছ?
সাগর আহমেদ হাসে হা হু করে। বলে,
‘ শফিক্কের মেয়ে শফিক্কের মতো ভীতু। তার ভাই নাকি আবার পুলিশের চাকরি করে?
জিনিয়া বাম হাতের কব্জি দিয়ে চোখ মুছে বলে,
‘ আমি আম্মার কাছে যাব। আমাকে যেতে দিন। ভাইয়া শুনলে,,,,,
সাহিল এগিয়ে আসল। জিনিয়ার একহাত শক্ত করে ধরল। জিনিয়া কান্না থামিয়ে হাতটার দিকে তাকাল। তারপর সাহিলের দিকে। আঙুলের ফাঁকে আঙুল গলিয়ে শক্ত করে হাত ধরেছে সাহিল। যেন ছাড়ার নয়৷ জিনিয়াকে টেনে নিয়ে গেল৷ শফিক সাহেবের চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসছে৷ সাহিল গেইট খুলল। গেইটের বাইরে জিনিয়াকে দাঁড় করিয়ে দিল। বলল,
‘ আব্বার বয়স হচ্ছে তাই উল্টাপাল্টা কথা বলে আজকাল। ওসব কানে নেওয়ার দরকার নেই।
জিনিয়া হা করে তাকিয়ে থাকল। সাহিল মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ যাও তোমার আব্বার কাছে।
জিনিয়া নিজের বন্দী হাতটার দিকে তাকাল। বলল
‘ হাত ধরে রেখেছেন, যাব কি করে?
সাহিল তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দিল। যদি ও ছাড়তে একটু সময় নিল৷
হাত ছেড়ে শার্টে হাতটা মুছে নিল। জিনিয়া বলল,
‘ আমার হাত কি নোংরা নাকি?
সাহিল ঘনঘন মাথা নাড়ল। বলল,
‘ কখন বলেছি?
জিনিয়া বলল,
‘ তাহলে মুছার কি আছে?
সাহিল বলল,
‘ মুছে ফেলা ভালো।
জিনিয়া ঠোঁট গোল করে বলল,
‘ ওহহ।
শফিক সাহেব দৌড়ে এল। জিনিয়াকে দেখে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। জিনিয়ার কাছে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরল। জিনিয়া শফিক সাহেবকে জড়িয়ে ধরে হেসে দিল। বলল,
‘ আব্বা আমি আছি তো।
শফিক সাহেব কোনোকথা বললেন না। সাহিল বাপ মেয়ের কান্ড দেখে মাথা চুলকালো। তারপর গেইটের ভেতর ডুকে পড়ল। জিনিয়া বলল,
‘ আব্বা তুমি একটু বেশি করো। তুমি অমন না করলে তো আন্কেল অমন করত না। তোমার মেয়েকে কি তারা খেয়ে ফেলছে?
শফিক সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলালেন। হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
‘ তোমাকে আমি এইবার ভালো ছেলে দেখে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেব আম্মা। ওই সাগরগের নজর পড়ছে তোমার উপর। ওই বাড়িতে তোমাকে আমি জীবনে ও বিয়ে দেবনা।
জিনিয়া হাসল। শফিক সাহেব বলল,
‘ তোমার হাসি পাচ্ছে?
জিনিয়া হাসতে হাসতে বলল,
‘ ফালতু ব্যাপার নিয়ে কেন চিন্তা করো আব্বা? আমার অনিচ্ছায় কি কেউ আমায় বিয়ে করতে পারবে? আর তুমি আমার জন্য যাকে সিলেক্ট করবে, তাকেই আমি বিয়ে করব। তোমার অনিচ্ছায় কিচ্চু হবেনা আব্বা।
শফিক সাহেব মেয়েকে বুকে আগলে রাখে। বলে,
‘ তোমাকে নিয়ে যত চিন্তা আমার?
সাহিল পা বাড়াল ঘরের দিকে। সাগর সাহেব এসে বলল,
‘ দিয়ে আসলি?
সাহিল কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
‘ আমি এই নিয়ে আর কোনোকথা বলতে চাইছিনা। আমি তোমাকে দ্বিতীয়বারের মতো একবার ও বলিনি যে মেয়েটাকে আমার চাই।
সাগর সাহেব বললেন,
‘ কিন্তু তোর তো বিয়ে করতে হবে। তাই না? তোর তো কোনো মেয়েই পছন্দ হয়না।
সাহিল গর্জে উঠল।
‘ কেন বিয়ে করতে হবে? বিয়ে করে তুমি কি উদ্ধার করে ফেলেছ?
সাগর সাহেব থতমত খেয়ে বলে,
‘ এইভাবে রাগ করছিস কেন? শফিক্কের মেয়েকে পছন্দ হয়েছে তা নিজ থেকে বললি। তাই বলছিলাম আর কি। যাইহোক অন্য কোনো মেয়েকে মনে ধরলে বলিস আমায়। তোর দাদি ও কুঁজো হয়ে যাচ্ছে। তার বলশক্তি কমছে। রান্নাবান্না করে তোদের খাওয়াতে কষ্ট হয়। একজনকে তো লাগবেই যে এই সংসারের হাল ধরবে। সবকিছু দেখে রাখবে।
সাহিল হাত নেড়ে বলল,
‘ লাগবেনা। গ্রান্ডমা না পারলে রান্না করতে হবেনা। হোটেল থেকে কিনে এনে খাব। আর পারলে নাহিলকে একটা বিয়ে করিয়ে দাও।
নাহিল চিল্লিয়ে উঠে। না না করে বলে,
‘ এখন না ভাই। একটা সঠিক সময় আছে। তুমি বড়ভাই বিয়ে না করলে আমি কিভাবে করি? জিনিয়াকে বাদ দাও, অন্য কাউকে দেখো। মেয়ের তো অভাব নেই তাইনা। তোমার তো সব আছে। কিসের অভাব?
সাহিল তাকাল নাহিলের দিকে। নাহিল চুপ হয়ে গেল। মাথা নামিয়ে বলল,
‘ সরি ভাই।
সাহিল গর্জে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ আমার কিসের অভাব? জানতে চাস?
নাহিল মাথা নাড়াল। সাহিল বলল,
‘ আমার একটা মায়ের অভাব। যাহ পারলে আমার মাকে নিয়ে আয়। খুঁজে নিয়ে আয়। যাহ। বাবা তুমি পারবে?
সাগর সাহেব থতমত খেয়ে বলে,
‘ মা?
সাহিল গটগট পায়ের আওয়াজ তুলে চলে যায়। নাহিল বলল,
‘ ভাই রেগে যাবে জানলে বলতাম না।
______________________
হসপিটালের করিডোর বসা আর্তনাদ করা একজন মহিলা। কিছুক্ষণ আগেই তার সন্তান মারা গিয়েছে। মায়ের আহাজারিতে ভরপুর হলো পরিবেশ। অপারেশনটি শফিক সাহেবের করার কথা ছিল কিন্তু তিনি করেননি। তার শরীর অসুস্থ বোধ করায় তিনি অপারেশনটি করাতে চাননি। মৃত ব্যক্তির বাবা শফিক সাহেবের উপর রেগে গেলেন। বিশ্রী গালিগালাজ করে বললেন,
‘ আপনি অপারেশন করাননি কেন? কার হাতে এত বড় দায়িত্ব সপে দিয়েছেন?
শফিক সাহেব বুঝিয়ে কূল পেলনা। ডক্টর সীমান্ত অপারেশন করিয়েছে। এই পর্যন্ত সে অনেকগুলো অপারেশন করিয়েছে। এখানে অপারেশনের ভুল নয়। রোগীর আয়ু এতদিন ছিল। এখানে ডাক্তারের কোনো হাত নেই। মৃত ব্যক্তির বাবা শফিক সাহেবের কথা শুনতে চাইলেন না। কলার চেপে ধরলেন। সীমান্ত কোথা থেকে যেন এসে জোরে চড় বসাল ওই লোকটার গালে। দূরে ছিটকে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিল লোকটি। কেঁদে উঠে বলল,
‘ আমার কতবড় ক্ষতি হয়ে গেল। ছেলে এত তাড়াতাড়ি চলে গেল?
শফিক সাহেব চোখ বড় বড় করে বলল,
‘ সীমান্ত এটা ঠিক হয়নি। ওনার মাথা ঠিক নেই এখন।
সীমান্ত চেঁচিয়ে বলল,
‘ আপনার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেছে স্যার। আমার সহ্য হয়নি। তাদের বুঝা উচিত সবকিছু আমাদের ডক্টরদের হাতে থাকেনা।
শফিক সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বললেন,
‘ রোগী জ্বর ছাড়া তেমন কোনো রোগ ছিলনা। কিন্তু রিপোর্টে এসেছে রোগীর কিডনি নেই। দুটো কিডনিই নেই। আমি বুঝতে পারছিনা সীমান্ত। কি হচ্ছে এসব হসপিটালে?
পরপর তিনটা রোগীর এই অবস্থা। অথচ তারা হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন রোগ নিয়ে। রোগীর পরিবার জানলে কি হবে? আমি আমাদের চাকরির কথা ভাবছিনা। রোগীর পরিবারের কথা ভাবছি। সাধারণ মানুষের আমাদের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাবে।। সীমান্ত বলল,
‘ স্যার এটা নিয়ে ভাবার তেমন কিছু নেই। আপনি চিন্তা করবেন না। ০ আমরা রোগীর আগের কোনো সিটিস্ক্যান কিংবা এক্সরে রিপোর্ট দেখলে ঠিকই সব জানতে পারব। যে রোগীর আগে কিডনিজনিত কোনো সমস্যা ছিল কিনা। আপনি জানেন স্যার কিডনিজনিত সমস্যার কারণে কিন্তু ঘনঘন জ্বর হয়, বমি ভাব হয়, রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। প্রথম রোগীটির রক্তশূণ্যতা ছিল। শফিক সাহেব চেয়ারে বসে পড়েন। মাথা হাত রেখে বলেন,
‘ কিছু একটা আমাদের সবার চক্ষুর অগোচরে হচ্ছে সীমান্ত। আমরা দেখতে পাচ্ছিনা হয়ত।
সীমান্ত শফিক সাহেবের হাত ধরল। বলল,
‘ স্যার আমি আছি। চিন্তা করবেন না প্লিজ। আমি দেখছি ব্যাপারটা।
শফিক সাহেব সীমান্তর দিকে তাকালেন। বললেন,
‘ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি সীমান্ত।
সীমান্ত হাসল। বলল,
‘ আমি আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টায় থাকব স্যার।
সাহিলকে ডুকতে দেখা গেল হসপিটালে। শফিক সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। সীমান্তকে বললেন,
‘ সাহিল এখানে কি করছে? কে অসুস্থ? ওর বাবা, কাকা?
সীমান্ত ও সাহিলকে দেখল। বলল,
‘ সাহিল?
সীমান্ত সাহিলের উদ্দেশ্যে গেল। পেছনে কাউকে অনুসরণ করতে দেখে সাহিল থমকে গেল। কিন্তু পিছু ফিরে দেখল না। উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে গিয়ে দাঁড়াল নির্জন জায়গায়। সীমান্ত সাহিলের কাঁধে হাত রাখতেই সাহিল ঘুরে কষে এক চড় বসাল সীমান্তের গালে। সীমান্তের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। সাহিল দাঁতে দাঁত চেপে সীমান্তের কলার চেপে ধরল। গালের অন্যপাশে আরেকটা চড় বসিয়ে বলল,
‘ কুত্তার বাচ্চা, যা বলেছি তাই করবি। এর চাইতে বেশি কিছু করতে যাবিনা একদম। নইলে মেরে একদম গুম করে রাখব।
সীমান্ত গালে হাত দিয়ে চেয়ে রইল সাহিলের দিকে। চোখ দুটো সাহিলের চাইতে ও ভয়ংকর হিংস্র জন্তুর মতো। সীমান্ত ক্ষেপে উঠল। সাহিলের গলা চেপে ধরতে গেলে দুইতিনজন নার্স একসাথে এসে আটকে ফেলল সীমান্তকে। সীমান্ত ছোড়াছুড়ি করেও ছাড় পেলনা। মুখে বলল,
‘ আমি এই চড়ের শোধ নেব।
সাহিল দৌড়ে এসে গলা চেপে ধরল সীমান্তর। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ আরেকটা কথা এই মুখ দিয়ে যদি বের করিস, তাহলে,,,,,,
নার্সগুলো বলল,
‘ স্যার প্লিজ আপনারা ঝগড়া থামান। প্লিজ।
সাহিল ফিরতে গিয়ে আবার ও থমকে গেল। বলল,
‘ ওদের ক্ষতিপূরণ দিবি নইলে তোর চাকরি নেব আমি কুত্তার বাচ্চা।
সীমান্ত বলল,
‘ তুই ও কুত্তার বাচ্চা। আরেহ তা বলছি কেন? তোর তো মা-ই নেই।
সাহিল ক্ষেপে এসে সীমান্তর হাঁটুতে জোরে লাতি বসালো। সীমান্ত পড়ে গেল।
নার্সগুলো ধরাধরি করে সীমান্তকে নিয়ে গেল। সাহিল জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিল। কেবিনের বাইরে থাকা বেঞ্চে বসল। কানে বেজে উঠল,
‘ তোর তো মা-ই নেই।
সাহিল কানচেপে ধরল। অসহ্য যন্ত্রণায় মাথা ব্যাথা উঠল। উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরতেই তার হাতের বাহুর সাথে লেগে গিয়ে একটি মেয়ে দেয়ালে ছিটকে পড়ল। মেয়েটির আর্তনাদ ভেসে আসতেই সাহিলের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠল।
জিনিয়া চোখ খুলে বলল,
‘ চোখে দেখেন না। মনে হচ্ছে রাস্তায় হাঁটছেন? দেখে দেখে হাটবেন তো।
সাহিল চোখ বড়বড় করে তাকালো। মাথা নামিয়ে বলল,
‘ সরি।
জিনিয়া সাহিলকে দেখে অবাকসুরে বলল,
‘ আপনি এখানে?
সাহিল কিছু বলল না। জিনিয়া বলল,
‘ আপনি কি কোনো কারণে আপসেট?
সাহিল তারপরে ও উত্তর দিল না। জিনিয়া আর কোনোকিছু জিজ্ঞেস করল না। শফিক সাহেব চলে এলেন তারমধ্যেই। জিনিয়া আর সাহিলকে একসাথে দেখে বললেন
‘ সীমান্তর কি হয়েছে?
জিনিয়া বলল
‘ সীমান্ত?
শফিক সাহেব বললেন,
‘ তুমি এখানে কেন এসেছ আম্মা? কোনো প্রয়োজন?
জিনিয়া বলল,
‘ তোমার জন্য টিফিন এনেছি আব্বা।
শফিক সাহেব ইশারায় জিনিয়াকে আসতে বললেন। জিনিয়া তার পিছু পিছু গেল। যেতে যেতে বলল,
‘ কি হয়েছে আব্বা?
শফিক সাহেব মেয়েকে চুপিসারে বললেন,
‘ সাগরগের ছেলের সাথে কথা বলিওনা তুমি। ছেলেটা ভালো কিন্তু, আমি তোমাকে তার কাছে বিয়ে দেবনা।
জিনিয়া হেসে ফেলল। বলল,
‘ আব্বা তুমি আজেবাজে ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাও কেন বলোতো। সৌজন্যেতার খাতিরেই তো কথা বললাম।
শফিক সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আবার চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বললেন,
‘ তুমি সৎ উকিল হও। মিথ্যার সাথে লড়ে সত্যকে ছিনিয়ে আনো। সবখানেই মিথ্যের ছড়াছড়ি এখন।
জিনিয়া বাবার হাত ধরল।
‘ কি হয়েছে আব্বা? কোনো সমস্যা?
শফিক সাহেব বললেন,
‘ এই হসপিটালে অনৈতিক কাজকারবার চলছে মা। তোমার ভাইয়ার সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে এই বিষয়ে। সীমান্তর হুট করে আবার কি হলো?
জিনিয়া মাথা দুলালো। শফিক সাহেব হুট করে এক প্রশ্ন করে বসল,
‘ সীমান্ত ভালো ছেলে। না?
জিনিয়া হঠাৎ অমন প্রশ্নে লজ্জায় পড়ে গেল। মাথা নামিয়ে বলল,
‘ তুমি তো তাই বলো।
শফিক সাহেব হেসে জিনিয়ার মাথায় হাত বুলালেন। বললেন,
‘ আচ্ছা।
_______
মাঝরাতে হঠাৎ নিজের ফোনকল বেজে উঠল। জিনিয়া ঘরে লাইট জ্বালিয়ে ফোনটা খুঁজে নেয়। অপরিচিত ফোনকল। প্রথমেই রিসিভ করতে না চাইলে ও পরে রিসিভ করে নিল। কানে দিয়ে হ্যালো বলার আগেই ওপাশের পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
‘ পাশের বাড়ির ছেলেটাকে কি আপনি পছন্দ করেন? আমি সাহিলের কথা বলছি।
জিনিয়া আমতাআমতা করে বলে,
‘ আপনি কে বলছেন? এটা কেমন প্রশ্ন?
ওপাশের লোকটি কর্কশ গলায় বলে,
‘ যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দিন।
জিনিয়া বলল,
‘ পছন্দ না অপছন্দ ও না।
লোকটি কিছুক্ষণ পর আবার বলল,
‘ ছেলেটির কাছ থেকে নিজেকে সাবধানে রাখবেন।
জিনিয়া জানতে চাইল।
‘ কে বলছেন আপনি?
লোকটি কোনো উত্তর দিল না। ফোন কেটে গেল। জিনিয়া আবার কল দিল৷ কিন্তু ফোন আর গেলনা।
তারপরের দিন সকাল সকাল জিনিয়া ছাদে গেল। সাহিলকে দেখতে পেলনা। সময় করে সন্ধ্যার দিকে গেল। সাহিলকে দেখা গেল কফির মগ হাতে। জিনিয়াকে দেখে সাহিল চলে যেতে চাইল। জিনিয়া ডাকল,
‘ আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।
সাহিল অন্যদিকে তাকিয়ে জবাব দিল। বলল,
‘ জ্বি।
জিনিয়া বলল,
‘ আপনি অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন কেন?
সাহিল মাথা তুলে। বিড়বিড় করে বলে,
‘ এই মেয়েটা একেবারে বেশরম।
জিনিয়া বলল,
‘ আপনি কি করেন? শুনেছি বিদেশ থেকে আপনি পড়াশোনা করে এসেছেন।
সাহিল বলল,
‘ হ্যা।
জিনিয়া বলল,
‘ আবার মাথা নিচু করেছেন কেন?
সাহিল মাথা তুলে বলল,
‘ হ্যা।
‘ কাল আমার ফোনে একটা ফোনকল এসেছে। লোকটা বলেছে যে,
‘ আপনার কাছ থেকে নিজেকে সাবধানে রাখতে।
সাহিলের বিশেষ ভাবান্তর দেখা গেল না। বলল,
‘ রাখবেন।
‘ কেন? আপনি কি আমার জন্য ক্ষতিকর?
সাহিল হাসল। বলল,
‘ যে বলেছে তাকে জিজ্ঞেস করোনি কেন?
জিনিয়া বলল,
‘ ইয়ার্কি করবেন না একদম। আমি ইয়ার্কির মুডে নেই।
সাহিল হাসল। বলল,
‘ আমি ও না।
জিনিয়া বলল,
‘ আপনি আমাকে পছন্দ করেন?
সাহিল ভড়কে গেল। গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বলল,
‘ মানে?
জিনিয়া বলল,
‘ সত্যিটা বলবেন।
সাহিল অন্যদিকে তাকিয়ে দু পা তিন পা হেঁটে বলল,
‘ যদি উত্তরটা হ্যা হয় তখন?
জিনিয়া বলল,
‘ তাহলে আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিন। ওই অপরিচিত লোকটি কেন বলল, আপনার কাছ থেকে আমাকে সাবধানে থাকতে?
‘ সাবধানে থাকতে কি কোনো সমস্যা? সাবধানে থাকবে। ব্যস।
জিনিয়া বলল,
‘ পারব না।
সাহিল মাথা তুলে বলে,
‘ তোমারই ক্ষতি।
জিনিয়ার মুখ মলিন হয়ে যায়। সে বলে,
‘ আপনি পছন্দের জিনিসকে ছাড় দিচ্ছেন কেন?
সাহিল হাসল। বলল,
‘ কেড়ে নেব?
জিনিয়া বলল,
‘ দরকার হলে তাই করবেন।
সাহিল হাসল। রাগে জিনিয়ার কপাল ঘেমে উঠল। সে ওড়না দিয়ে কপাল মুছল।
সাহিল বলল,
‘ লোকটা বোধহয় বুঝে গিয়েছে তুমি আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছ। তাই সাবধান করেছে। তুমি জানো না,
‘ প্রেমে পড়া বারণ
কারণে অকারণ
জিনিয়া রাগ আকাশ ছুঁল। বলল,
‘ আমি আপনাকে মেরে ফেলব।
সাহিল হাসল আবার ও। বলল,
‘ মরতে তো চাই। সুযোগটা কই পাই?
জিনিয়া ফুঁপাতে থাকল। সাহিল আলো আঁধারিতে আড়চোখে একটুখানি দেখল জিনিয়াকে। ভাবল,
‘ এত কুৎসিত মেয়েমানুষ ও হয়?
জিনিয়া ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল,
‘ আপনার জীবনে ও বিয়ে হবেনা। দেখে নিয়েন।
সাহিল আর ও জোরে হাসল। বলল,
‘ শাপ দিচ্ছ?
জিনিয়া গলার স্বর উঁচু করে বলে,
‘ হ্যা শাপ দিচ্ছি। দেখে নেবেন, আপনার বিয়ে হবেনা। আপনি বউ পাবেন না একদম।
সাহিল হো হো করে হাসতে থাকে। জিনিয়া ওড়না ঝেড়ে গটগট পায়ে হাঁটে। পেছনে সাহিলের হাসি থামার নয়। জিনিয়া রেগেমেগে শফিক সাহেবের কাছে গেল। বাবার হাত থেকে সংবাদপত্র কেড়ে নিয়ে বলল
‘ বাবা আমি খুব জলদি বিয়ে করব। যাকে ইচ্ছা তাকে।
শফিক সাহেব হেসে ফেলল। বলল,
‘ এতদিন পর বললে। বাহঃ। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দেব।
জিনিয়া চট করে মাথা তুলল। বলল,
‘ নাহ।
শফিক সাহেব হেসে বলে,
‘ কি?
জিনিয়া মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘ আমি বিয়েই করব না। কখনো না। এটা বলতে এসেছি।
শফিক সাহেব জিনিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘ সাগরগের নজর পড়ছে তোমার উপর। শালা শয়তান ফাঁদ পেতে বসে রয়েছে। সুযোগ পেলেই আমাকে গুতো মেরে বসবে।
জিনিয়া হাত ছুঁড়ে বলল,
‘ সবসময় শুধু ঝগড়ার কথা। তুমি ভালো করে কথা বলতে পারোনা? তোমার থেকে দেখে দেখে তারপর উনি শিখবেন। দুইজনই বলদের মতো। খালি ঝগড়া করে।
জায়িদ এসে শফিক সাহেবের পাশে বসে। বলে,
‘ জুনু তুই নাকি বিয়ের জন্য লাপাচ্ছিস? চিন্তা নাই। আমার এক কলিগ আছে। অন্য থানায়। পুলিশ অফিসার। বেশ দেখতে।
বলেই চোখ টিপল জায়িদ। জিনিয়া রেগে বলল,
‘ বিয়ে করবনা আমি। তোমাদের জ্বালায় আমি চলে যাব এই বাড়ি ছেড়ে।
জাহেদা মুখ ভাঙ্গায়।
‘ ঢং কত? চলে যাবে। কোথায় যাবি?
বেডির রাগ বেশ্যা
বেডার রাগ বাদশা
মনে রাখিস।
শফিক সাহেব ধমক দেয়।
‘ কিসব ফালতু কথা বলছ জাহেদা? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
জিনিয়া কেঁদে দেয় মায়ের কথা শুনে। রুমে গিয়ে ধপ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। জাহেদা চেঁচিয়ে যায়।
‘ নবাবজাদীরে কিছু বলা ও যায়না। রাগ কত তার? বাপ তেল মালিশ করতে করতে আর রাখেনাই। মেয়ে শুধু তার আছে। আর কারো নেই৷
শফিক সাহেব ধমকে বলে,
‘ হ্যা আমারই আছে। তুমি দেখছ না সাগরকে, তার আছে মেয়ে? আমি কত লাকি তুমি দেখেছ?
জাহেদা বিড়বিড় করতে করতে চলে যায়৷
_____________
প্রখর রোদের উত্তাপে ঘেমে একাকার জিনিয়া। রোজ রোজ তার এক ডিউটি। গরম গরম ভাত দিয়ে যাওয়া বাবাকে। ঠান্ডা ভাত খেতে পারেনা। তাই তাকেই দিয়ে যেতে হয়। হসপিটাল থেকে সোজা লাইব্রেরিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু চেম্বারে গিয়ে জিনিয়া তার বাবাকে দেখল না। দুই তিন কেবিন ঘুরল। কয়েকটা নার্সকে জিজ্ঞেস করল। নার্সের সংখ্যা ও কম দেখা যাচ্ছে। জিনিয়া একটি কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে ডুকল। অন্ধকার কেবিনটি। জিনিয়া ডাকল,
‘ আব্বা?
জিনিয়া কেবিনটি থেকে বের হয়ে অন্য কেবিনে ডুকল। হসপিটালে আজকে পেশেন্টের ও চাপ কম। আব্বা গেল কোথায়? গ্রিলের পাশে ফুলের টবে খসে মাটিতে পড়ে গেল। জিনিয়া সেটি তুলে জায়গামতো রাখল। আবার ডাকল,
‘ আব্বা?
২০২ নাম্বার কেবিন থেকে কারো গোঙানোর শব্দ ভেসে আসছে। জিনিয়া দুরুদুরু বুক নিয়ে সেদিকে পা বাড়াল। দরজা ঠেলার আগেই ছোট্ট কাচ দিয়ে দেখার চেষ্টা করল ভেতরে কি হচ্ছে?
জিনিয়ার চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে গেল।
হাত থেকে টিফিন বক্স পড়ে গেল। আওয়াজ হলো জোরে। জিনিয়া গালে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠল। পা ধরে নিচে বসে পড়ল। কেবিনের দরজা ঠেলে নার্সের পোশাক পরা মুখে মাক্স দেওয়া কয়েকজন বের হয়ে এল। জিনিয়া তাদের দেখে ভয়ে আর ও জোরে চিৎকার করে উঠল। ডাকল,
‘ আমার আব্বা। আব্বা? আমার আব্বাকে কি করেছেন? কারা আপনারা?
তাদের মধ্যে একজন এসে জিনিয়ার মুখ চেপে ধরে টিস্যু দিয়ে। তার এত চিৎকার চেঁচামেচি কেউ কি শুনল না? জিনিয়া ছটপট করতে করতে একসময় জ্ঞান হারালো। স্ট্রেচারে তুলে সাদা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হলো জিনিয়াকে। তারপর একটি কারে তোলা হলো। চাপা আনন্দে আত্মহারা হলো লোকগুলো। কারো কারো লিপ্সা হলো বন্ধ চোখের মেয়েটির শরীরের খাঁজ দেখে।
শফিক সাহেবের জ্ঞান ফিরল প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ। উঠেই তিনি আশেপাশে চোখ বুলালেন। দৌড়ে কেবিন থেকে বের হলেন। কিছু মনে পড়ল না তার। কি হয়েছিল?
জাহেদাকে ফোন করে বলল,
‘ আমার টিফিন পাঠাওনি কেন?
জাহেদা চেঁচিয়ে বলল,
‘ বাপ বেটির হয়েছেটা কি? ফোন তুলছেনা কেন?
শফিক সাহেবের চোখ গেল মাটিতে। টিফিনবাক্স পড়ে রয়েছে মেঝেতে। পিঁপড়ে ও চলে এসেছে সেই খাবারে। শফিক সাহেব খাবারগুলো ছুঁয়ে বলল,
‘ জিনু কি এসেছিল? জাহেদা তুমি কি জিনুকে পাঠিয়েছ?
জাহেদা চিল্লিয়ে উঠে।
‘ সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা এখনো বাসায় ফিরল না। আমার তো চিন্তা হচ্ছে এখন। জায়িদ ও জেলার বাইরে। কি করি আমি?
শফিক সাহেব মাথা চেপে ধরে বলে,
‘ জাহেদা আমার মেয়ে কোথায়? টিফিনবাক্স তো এখানে কেবিনের বাইরে পড়ে আছে দেখলাম। তোমার মেয়ে আমাকে না খাইয়ে কোথায় গেল?
জাহেদা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। বলে,
‘ এগুলো কি বলছেন? জিনু আপনার কাছে যায়নি? কোথায় সে?
শফিক সাহেব মেঝেতে বসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে বলে,
‘ আমার দুর্বল দুর্বল লাগছে জাহেদা। হাঁটার শক্তি পাচ্ছিনা। জায়িদকে আমার মেয়েকে এনে দিতে বলোতো তাড়াতাড়ি। তাড়াতাড়ি বলো।
জাহেদা চেঁচিয়ে কাঁদে। জায়িদকে ফোন দিতে থাকে অবিরত। আশপাশের প্রতিবেশীরা চলে আসে। সাগর ছাদ থেকে উঁকি দিয়ে দেখে জাহেদার কান্না। জাহেদা সবাইকে বলে,
‘ আমার জিনুকে পাওয়া যাচ্ছেনা। কারা যেন নিয়ে গেছে। আপনারা কেউ সাহায্য করুন। আমার মেয়েকে এনে দিন।
সবাই নিজেদের ভেতর কানাঘুষা করে। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে একেক কথা বলে, কেউ এগিয়ে আসেনা।
কয়েকটা নার্স শফিক সাহেবকে ওই অবস্থায় দেখে দৌড়ে আসে। বলে,
‘ স্যার আপনার কি হয়েছে? এই অবস্থা কেন? আপনার শরীর খারাপ লাগছে আগে বলেননি কেন?
শফিক সাহেব বলে,
‘ তোমরা কোথায় ছিলে আজ?
‘ স্যার আপনিই আমাদের বলেছেন রাতে থাকতে। দিনের বেলা রেস্ট নিতে। আপনি হ্যান্ডেল করতে পারবেন বলেই তো আমাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। স্যার এখন আমাদের চাকরি থাকবেনা। কি অবস্থা হয়েছে আপনার? কি করে হলো এসব?
শফিক সাহেব ঢলে পড়তে পড়তে বলেন,
‘ কিছু জানিনা আমি। আমার মেয়ে নেই। কোথাও নেই।
____________
অন্ধকার রুম। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে। জিনিয়া নিজেকে আবিষ্কার করল অন্ধকার ঘরটিতে। গায়ের ওড়নাটা কোথায়? গায়ের পড়নে শুধু ঢিলা জামাটা আছে। চুলগুলো ক্লিপের বাধঁন থেকে ছুটে গিয়েছে। এলোমেলো চুলে নিজেকে কেমন কেমন যেন লাগছে। দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে সে। ভেতরে ভেতরে কান্নার তান্ডব চললে ও বাহির থেকে তা দেখা যাচ্ছেনা। জিনিয়া ভাঙা গলায় ডাকল,
‘ আব্বা?
কারো কোনো আওয়াজ ভেসে এলোনা। জিনিয়া চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল। রাত হয়েছে বেশ ভালোই বুঝা যাচ্ছে। এত বড় একটা অন্ধকার রুমে শুধু একটি হারিকেন জ্বালানো। দুটি চেয়ার। একটি পালংক। একটি ভাঙা শেলপ। জিনিয়া হেঁটে দরজার কাছাকাছি গিয়ে দরজা ধাক্কাল। চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে বলল,
‘ কেউ কি আছেন? আমাকে সাহায্য করুন। আমাকে বের হতে দিন। শুনছেন?
কারো কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলনা। জিনিয়া আবারও চেয়ারটাতে গিয়ে বসল। চিৎকার করে নিজে নিজেই কাঁদল। বেশকিছুক্ষণের মধ্যে চেয়ারটাতে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পরে দরজা ঠেলে অন্ধকার রুমটিতে ডুকে পড়ল একটি ছেলে। চোখদুটোয় ভাসছে হিংস্রতা।
ছেলেটির হাতে লোহার রড। সেই রড রক্তে মাখামাখি। হাতের উপর রক্তের দাগ। চেয়ারে বসে ঘুমন্ত মেয়েটিকে দেখে লোহার রডটি আর ও শক্ত করে ধরল ছেলেটি। উদম গা বেয়ে ঝরঝর করে ঘাম ঝড়ছে। চোয়াল শক্ত। লোহার রডটি দূরে ফেলায় আওয়াজে জেগে উঠল জিনিয়া। ছেলেটি সাথে সাথে পিছু করে দাঁড়াল। জিনিয়া দৌড়ে গেল।
‘ আমাকে যেতে দিন প্লিজ। কে আপনি? আমি আপনার সাথে কি করেছি? আমার সাথে কেন এমন করছেন?
ছেলেটির তার পকেট থেকে হাত বের করে হাতটা পেছনে দিয়ে জিনিয়ার নাক চেপে ধরল আবার৷ জিনিয়ার অচল মস্তিষ্ক ছেলেটির চেহারা দেখার আগেই নিভুনিভু হয়ে গেল। আবারও জ্ঞান হারাল জিনিয়া। চোখের কোণা ভিজে একাকার। জিনিয়া ঢলে পড়ল ছেলেটির গায়ের উপর। আবদ্ধ হলো ছেলেটির বাহুবন্ধনে। বন্দী হলো বক্ষপিঞ্জরে।
চলবে,
সবার মতামত আশা করছি।