রৌদ্রদেশে মেঘের বেশে পর্ব-৫

0
808

#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা

[৫]

ফকফকা আলো জিনিয়ার মুখের উপর। চোখমুখ কুঁচকে ফেলল সে চোখ খুলতে পারল না। গায়ের উপর কাঁথা। তার চিরপরিচিত ঘর। বিছানা। জিনিয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। চোখ খুলল ধীরে ধীরে। শুরুতেই ডাকল
‘ আব্বা? আম্মা?
জায়িদ দৌড়ে এল। জিনিয়ার পাশে বসে মাথায় হাত বুলালো। বলল,
‘ আব্বা ঘুম। ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। কাঁদিস না। আম্মা ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
জিনিয়া ভাইয়ের বুকে গুজে গেল। কেঁদে কেঁদে বলল,
‘ আমি,,,,আমি এখানে কি করে এলাম?
জায়িদ বোনের মাথায় ঘনঘন হাত বুলায়। বলে,
‘ তোকে তো সীমান্ত এনে দিয়েছে। পাগলের মতো খুঁজে তোকে পেয়েছে ও। সীমান্ত না থাকলে কি যে হতো? আমি তো কিছুক্ষণ আগেই এলাম। ওকে ফোন করে বলেছিলাম।
জিনিয়া আর ও জোরে কেঁদে দেয়। বলে,
‘ হ্যা হ্যা আমি ওনাকে দেখেছি। ওনিই তো আমাকে কি একটা যেন নাকে ছুড়ে মারল তারপর ওই অন্ধকার ঘরটাতে আমি ? ওনার হাতে রক্তাক্ত রড ছিল।

জায়িদ মাথায় হাত বুলালো। বলল,
‘ অন্ধকার ঘর? ওটা হয়ত কিডন্যাপারদের আবাসস্থল ছিল। তোর চিৎকার শুনলে কিডন্যাপাররা চলে আসত তাই তোকে ও আবার বেহুশ হওয়ার ঔষধ দিয়েছে। তুই বেহুশ হওয়ায় তোকে নিয়ে আসার সুবিধা হয়েছে। আর রড দিয়ে ও হয়ত পিঠিয়েছে।
জিনিয়া গুনগুন করে কাঁদল। কিছুক্ষণ পর বলল,
‘ আব্বা? আব্বাকে ওই লোকগুলো চেয়ারে বেহুশ করে ফেলে রেখেছিল।
জায়িদ বলল,
‘ আব্বা ওই ঘরেই আছে। ঘুমোচ্ছে। এখন আর ডিস্টার্ব করিস না। ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে। আম্মা ও তোর জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। জিনিয়া বলল,
‘ ওই লোকগুলোকে তুমি চরম শাস্তি দেবে। বলো। দেবে।
জায়িদ হাসল। বলল,
‘ শূলে চড়াবো।
জিনিয়া শান্তি পেল। স্বস্তি পেল।
শাওয়ার নিতে গিয়ে দেখল চোখের নিচে দাগ পড়ে গিয়েছে। চেহারায় একরাশ বিষণ্নতা। আব্বার কথাই ঠিক হবে। হসপিটালে নিশ্চয়ই কোনোকিছু চলছে। সীমান্তের সাথে কথা বলতে হবে। উনি কি করে জানলেন আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে? হাতে রডই বা কেন ছিল? কাকে মেরেছে? লোকগুলো কারা?
জাহেদা মেয়েকে দেখে হাউমাউ বিলাপ শুরু করে দেয়। মেয়ের পুরো মুখে চুমু কেটে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে। বলে,
‘ মা কোথায় চলে গিয়েছিলি। একটু বকি বলে এত রাগ তোর?
জিনিয়া মাকে সান্ত্বনা দেয়। বলে,
‘ আমি ফিরে এসেছি আম্মা । কেন ফালতু চিন্তা করো বলোতো?
জাহেদা কেঁদেই গেল।। জিনিয়া শফিক সাহেবের রুমে গেল। বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেল। বলল,
‘ আব্বা তোমার জিনু ফিরে এসেছে দেখো। আব্বা।
শফিক সাহেব উঠলেন না। জিনিয়া মা আর ভাইকে খাইয়ে ঘুমাতে গেল। কিন্তু দু চোখের পাতায় ঘুম ভর করল না। দুশ্চিন্তা খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে। কালকেই সে বাবার সাথে হসপিটালে যাবে। সীমান্তকে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
ঘুম না আসায় পা টিপে টিপে ছাদে গেল জিনিয়া। আকাশের গোলাটে চাঁদ চোখ মেলে চেয়ে রয়েছে তার দিকে। মনে হয় যেন তার আসার অপেক্ষায় ছিল।
অন্য ছাদের এককোণায় দাঁড়ানো চাতক পাখিটির শহরে বৃষ্টি নামল অবশেষে। তার ধারণা কেন যেন অবিশ্বাস্যভাবে সত্য হয়েছে।

সাদা শার্ট পড়া ছেলেটিকে দেখে ভ্রু কুঞ্চন হলো জিনিয়ার। এতরাতে সাহিলকে ছাদে দেখে অবাক হলো। বলল,
‘ আপনি এতরাতে এখানে ?
সাহিল শুরুতেই জিজ্ঞেস করল,
‘ তোমার কি হয়েছিল আজ?
জিনিয়া জবাব দিল না। সাহিল ধমকে বলল,
‘ কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
জিনিয়া উত্তর দিল।
‘ না বললে কি করবেন?
সাহিল কিচ্ছু বলল না। ফুলে তাকিয়ে থাকল জিনিয়ার দিকে। জিনিয়া বলল,
‘ ছাদ থেকে যান। আমি একা থাকব।
সাহিল শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
‘ আমাদের ছাদ।
জিনিয়া কাঠ গলায় বলল,
‘ আপনাদের জানি, আমাদের বলিনি।
সাহিল রুক্ষ কন্ঠে বলল,
‘ সমস্যা কি? তুমি আমার উপর কিসের রাগ দেখাচ্ছ মেয়ে? শোনো আমি কোনো মেয়ের সাথে যেচে কথা বলতে যায়না। শুধু তোমার সাথে বলি। তাই বলে তুমি?
জিনিয়া মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে
‘ আমার সাথে কেন বলতে আসেন? কে বলেছে যেচে কথা বলতে আসতে? উদ্ধার করে ফেলেছেন না?
সাহিল মুখ কালো করে চেয়ে থাকে। জিনিয়া তাকে পিঠ করে দাঁড়ায়। নিঃশব্দে পা ফেলে চলে যায় সাহিল। জিনিয়া পিছু ফিরতেই দেখে সাহিল চলে গিয়েছে।
রাগেদুঃখে মাথা নিচু করে রেলিংয়ে হাতের মুঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে বারংবার ।

_____________

সকাল দশটার দিকে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হল জিনিয়া আর তার বাবা। সাথে জায়িদ ও। শফিক সাহেবকে চেক-আপ করাতে হবে। জিনিয়ার অবশ্য অন্য উদ্দেশ্য। জায়িদের কারণে জিনিয়া এদিকওদিক যেতে পারল না। যাও একটু সুযোগ পেল, আর হাতছাড়া করল না। এই কেবিন, ওই কেবিন ঘুরে জানতে পারল সীমান্ত আসেইনি আজ। জিনিয়া হতাশ হলো। একজন নার্স এসে বলল,
‘ সীমান্ত স্যার কফিশপে আছেন। বেশি জরুরি লাগলে পাশের কফিশপে দেখতে পারেন।
জিনিয়া আর একমুহূর্ত ও দেরী করল না। কফিশপে গিয়ে দেখল সীমান্ত একা একাই কফি খাচ্ছে। আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। জিনিয়াকে দেখে হাসল। ডাকল,
‘ জিনিয়া এসো। বসো। শরীর কেমন? কফি অর্ডার করি?
জিনিয়া বলল,
‘ খুব জরুরি কথা আছে আপনার সাথে। এখানে বলা যাবে?
সীমান্ত বলল,
‘ আগে বসো। তারপর না হয় বলবে। কফি খেতে খেতে বলা যাক।
ওয়েটার কফি এনে দিল। জিনিয়া এক ঢোক খেয়ে বলল,
‘ কালকের ঘটনাটার ব্যাপারে কথা ছিল। কালকের কিডন্যাপারগুলো কারা জানতে পেরেছেন? অবশ্য ভাইয়ার পুরো টিম এই কাজে লেগেছে। তারপর ও। কিডন্যাপাররা কেন এসেছিল?
সীমান্ত জিনিয়ার হাতের উপর হাত রাখল। চোখ নামিয়ে আশ্বস্ত করে বলল,
‘ ধীরে।
অস্বস্তি কাটাতে জিনিয়া একটুখানি হাসল। তারপর ধীরে ধীরে সীমান্তের হাতের নিচ থেকে হাতটা সরিয়ে আনল। বলল,
‘ জ্বি। মানে বলতে চাইছিলাম যে, আপনি কিভাবে জানলেন যে আমাকে ওই জায়গা রাখা হয়েছে?
সীমান্ত ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেল। বলল,
‘ একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। ওরা টাকা দাবি করেছে, আমি নাম্বারটা ট্র্যাক করিয়ে তারপর সেখানে পৌঁছায়। অবশ্য আমাকে এতে পুলিশ সাহায্য করেছে।
জিনিয়া বলল,
‘ কিছু মনে করবেন না, তখন আপনার গায়ে শার্ট ছিল না। কেন জানতে পারি?
সীমান্ত কফির মগে চুমুক দেয়। থেমে থেমে বলে,
‘ তুমি ভুল দেখেছ?

জিনিয়া কথা না বাড়িয়ে বলে,
‘ আমি স্পষ্ট দেখেছি আপনার গায়ে শার্ট ছিল না।
সীমান্ত আর না পেরে বলল,
‘ আসলে ওদের সাথে লড়তে গিয়ে ছিড়ে গিয়েছিল। ওরা টেনে ছিড়ে ফেলেছিল।
জিনিয়া বলল,
‘ তাহলে মিথ্যে বলতে যাচ্ছিলেন কেন?
সীমান্ত বলল,
‘ ওই আসলে একটু উইয়ার্ড লাগছিল ব্যাপারটা। তুমি কিছু মনে করোনি তো?
জিনিয়া উত্তর দেয়না। জিজ্ঞেস করে,
‘ আপনি ওদের মেরে রক্তাক্ত করেছিলেন? কিন্তু ওরা কি সেখানে পড়ে ছিল? নাকি পালিয়েছিল। রডে লাগা রক্ত দেখে তো মনেই হচ্ছেনা যে ওরা আর পালাতে পেরেছিল। আপনি নিশ্চয়ই লোকগুলোর চেহারা দেখেছিলেন?
সীমান্ত হা করে তাকিয়ে থাকল। বলল,
‘ তুমি কেমন মেয়ে হ্যা? ল পড়ছ ঠিক আছে? কিন্তু এই কফিশপকে ও তুমি আদালত বানিয়ে দিলে? দেখো জিনিয়া এসব কথা আমরা পরে ও বলতে পারব। অনেক সময় আছে।
জিনিয়া বলল,
‘ কিন্তু?
সীমান্ত জিনিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিল। হাতটাকে নিজের দু হাতের মুঠোয় বন্দী করে জিনিয়াকে বলল,
‘ অনেক মানে অনেক সময় আছে।
জিনিয়া বলল,
‘ সবসময় তো আর এসব বিষয় নিয়ে কথা বলা যায় না।
সীমান্ত বলল,
‘ ঠিক। মনে করো এখনকার সময়টা ও খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন ও বলা যাবেনা।

সীমান্তর চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করল জিনিয়া। একেকজনের চোখের ভাষা কি একেকরকম? আর একেকজনের হাত ধরা ও। জিনিয়া চোখের দৃশ্যপটে ভাসল কত সুন্দর একটি দৃশ্য!

সেদিন হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল গলিয়ে ধরার মাঝেই লুকিয়ে ছিল কত বিশ্বাস,ভরসা আর নির্ভরতা। কিন্তু এই দু’হাতের মাঝে তা নেই কেন? জিনিয়া তো এই দুহাতের মাঝে নির্ভরতা চেয়েছিল। তাহলে? সে যা চায় তা কেন এই মানুষটার মাঝে পায়না। আর যার কাছে চায়না তার কাছেই কেন পায়? কেন ঘুরেফিরে একটা জায়গায় এসে সে থেমে যায়? সেই একজনের কাছে গিয়ে কেন মুগ্ধতা আটকে যায়? যার কাছে ধরা দেওয়া যায় না। যাবেনা। কখনোই না।
জিনিয়া চট করে নিজের হাত টেনে নিল। ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল,
‘ আচ্ছা পড়ে কথা হবে।
সীমান্ত পিছু ডাকল।
‘ জিনিয়া কল ধরিও। ৃ
জিনিয়া যেতে যেতে বলে,
‘ আচ্ছা।
কফিশপ থেকে বের হয়ে হসপিটালে যেতেই সামনাসামনি সাহিলের। দুজনেই পড়ে গেল অস্বস্তিতে৷ সাহিলে পকেটে হাতগুজে রাখল। এদিকওদিক তাকাল। জিনিয়া টিস্যু বের করল ৷ সাহিলের দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল,
‘ নিন।
সাহিল নিল না। বলল,
‘ নো থ্যাংকস।
জিনিয়া কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘ নেবেন না মানে, আপনার বাপ নেবে।
সাহিলের হাত ধরল জিনিয়া। হাতে টিস্যু গুজে দিয়ে বলল,
‘ নিন।
সাহিল নাকফুলিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে দেখল জিনিয়াকে। জিনিয়া তার হাতে টিস্যু গুজে দিয়ে চূড়ান্ত ধমক দিয়ে বলল,
‘ ঢং অন্য জায়গায় করেন। অন্তত জিনিয়ার সামনে না। কারণ জিনিয়া আপনাকে আগাগোড়া চেনে। সাহিল কানকাড়া করে শুনল সেই কথা। টিস্যুটি নিল। ধরল। সাথে টিস্যু বাড়িয়ে দেওয়া হাতটাকে ও। জিনিয়া এদিকওদিক তাকিয়ে বলল,
‘ বাহঃ।
সাহিলের অভিব্যাক্তি বুঝা গেল না। জিনিয়া ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ভাসিয়ে রেখে বলল,
‘ কতক্ষণ ধরে রাখতে পারবেন??
সাহিল টিস্যুটি অন্য হাতে নিয়ে বলল,
‘ যতক্ষণ মন চায়।
জিনিয়া হাসল। বলল,
‘ হাত ধরে রাখার সাহস সবাই দেখাতে পারে। কিন্তু মনেরটা কয়জনই বা পারে?
সাহিল টিস্যুটি দিয়ে জিনিয়ার হাতের এপাশ ওপাশ মুছে দিতে দিতে বলে,
‘ বেশি কথা বলোনা। এই হাতদুটো খুব দামী মনে রেখো। যাকে তাকে ধরতে দিয়োনা। অন্যকিছু ধরুক সমস্যা নেই।
জিনিয়া রেগে যায়। হাতটা ছাড়িয়ে নিতে গেলে সাহিল আর ও শক্ত করে ধরে।
‘ অন্যকিছু ধরুক মানে কি?
সাহিল হাসল মৃদু। হাতটা ভালোভাবে মুছে দিয়ে বলল,
‘ মানে কিছুনা। অতকিছু ভাবতে যেওনা। শুধু এতটুকু মনে রেখো, আমি নিজের করিনি মানে এই নয় যে অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছি। সেদিনই দেব, যেদিন আমি আমার মতো কাউকে পেয়ে যাব। সেদিন তোমাকে আমি ছেড়ে দেব। তারআগে তোমার মুক্তি নেই। মনে থাকবে?
জিনিয়ার সাড়া না পেয়ে সাহিল চোখ তুলে তাকায়। বলে,
‘ প্রশ্ন জাগছে? আমি ছাড় দিচ্ছি কেন? ছেড়ে দিচ্ছি কেন?
জিনিয়া উত্তর পাওয়ার জন্য উদগ্রীব। সাহিল টিস্যুটা দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল,
‘ এই প্রশ্নের উত্তর তুমি পাবেনা। কারণ তোমাকে আমি ভালোবাসি বলেই ছাড় দিচ্ছি। তুমি জানো ভালোবাসার অপর নাম কি?
জিনিয়া মিনমিন করে বলল,
‘ কি?
সাহিল বলল,
‘ ভালোরাখা। ভালো থাকতে দেখা। আমি তোমাকে ভালো রাখতে চাই। ভালো থাকতে দেখতে চাই । আর আমার এই চাওয়া পূরণ হবে ছাড় দিলেই।
জিনিয়া সাহিলের হাতের মুঠোয় থাকা নিজের হাতটার দিকে তাকালো। বলল,
‘ আমি কি চাই তা জানতে চাইবেন না?
সাহিল হেসে ফেলল। জিনিয়া বলল,
‘ হাসার কথা বলেছি?
সাহিল আবার ও হাসল। বলল,
‘ তুমি কি চাও তা জেনে আমার কি হবে? অন্যায় আবদার রাখার সামর্থ্য আমার কোনোদিন হবেনা। নইলে অনেক আগেই তুমি আমার হয়ে যেতে।
জিনিয়া নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। বলল,
‘ যান এখান থেকে। আমার সামনে আসবেন না আর।
সাহিল হেসে পকেটে হাত গুজে বলল,
‘ আমি কই আসি? তুমিই তো আসো। এখন আমার দোষ হয়ে গেল?
জিনিয়া বলল,
‘ আপনিই আসেন। আর আসবেন না। নইলে মেরে ফেলব।
সাহিল হাসল। বলল,
‘ ঠিক আছে তোমার হাতেই মরব। আমার ইচ্ছে করে তোমার হাতে মরতে। স্বাদটা ঠিক কেমন হবে বলোতো?
জিনিয়া হাতের ব্যাগ দিয়ে মারল সাহিলের হাতের বাহুতে। তারপর হনহনিয়ে হসপিটালে ডুকে গেল। সাহিল পেট চেপে হাসতে লাগল।

_________________

সবকিছু তদন্ত করে জানা গেল হসপিটালের গুরুত্বপূর্ণ কাগজ আর ফাইলগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শফিক সাহেব যে রিপোর্ট গুলো বানিয়েছিলেন সবগুলো চুরি হয়ে গিয়েছে। লোকগুলো এজন্যই এসেছিল। গোপন সূত্রে এই ও জানা গেছে যে, লোকগুলো কিডনি পাচারের সাথে সম্পৃক্ত।
জিনিয়া এমন খবর শুনে শক্ত হয়ে বসে রইল। হসপিটালে কিডনি পাচার চক্র?
জিনিয়াকে এত ভাবতে দেখে শফিক সাহেব হাসলেন। বললেন,
‘ আম্মা তুমি এসব নিয়ে আর ভাবিও না।
জিনিয়া বলল,
‘ তো কি ভাবব? আব্বা তুমি জানো,,,
শফিক সাহেব জিনিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ সীমান্তর পরিবার থেকে ও মা, আর বড় বোনেরা আসবে। এত ভালো ছেলে আমার হাতের কাছে ছিল, অথচ আমি দেখতে পাইনি?
জিনিয়া বলল,
‘ আব্বা এখন এসব?
শফিক সাহেব বলল,
‘ সাগর এখন দেখছি চুপ মেরে আছে। তাই আমি চাইছি চুপচাপ শুভ কাজটা সেড়ে ফেলতে। তুমি আর বাঁধা দিওনা। সীমান্তকে তো তোমার পছন্দ। তাই না?
অন্যদিন হলে জিনিয়া হ্যা বলত, কিন্তু আজ বলল না। জিনিয়া চলে গেল।

বাঁশের আগায় কঞ্চি বেঁধে বড়ই পাড়তে গেল। সাগর সাহেবকে ডেকে বলল,
‘ আন্কেল বড়ই পাড়ি?
সাগর সাহেব হাসল। বলল,
‘ যত ইচ্ছা!
শফিক সাহেব জিনিয়ার পিছু পিছু এসে বলল,
‘ জিনু মা আমি বাজার থেকে বড়ই আনব। তুমি তখন খেও। এসব না।
সাগর সাহেব খবরের কাগজ ঝেড়ে ফেলে বলে,
‘ ওইই তোর সমস্যা কি শালা? বড়ইয়ে কি আমি বিষ দিয়া রাখছি? কথায় কথায় গুতা মারস ক্যান শালা?
শফিক সাহেব রেগে গেল। বলল,
‘ তোরে কেন আমি গুতো মারব? আমার মেয়ে কেন তোর গাছের বড়ই খাবে? এই গাছ কাটলে কাটবি,নইলে আমি গোঁড়ায় কেটে দিয়ে আসব। আমার মেয়ে দুটো খাবে, সে পাঁচটার গান গাইবে।
জিনিয়া বলল,
‘ উফফ আব্বা। কি শুরু করেছ?
সাগর সাহেবের পিছু নাহিল আর সাজেদ সাহেব চলে আসে। দুজনের কথা কাটাকাটি থামেনা। জিনিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে।
সাগর সাহেব বলে,
‘ আমার ছেলে রাজপুত্র। হুহহ, তোর মেয়ের জন্য কি সে মরে যাচ্ছে ? আমার ছেলের জন্য আমি রাণী আনব। দেখে নিস।
শফিক সাহেব মুখ ভেঙে দেয়। সাগর সাহেব বলে,
‘ ছেঁকে দেখ, তোর মেয়ে ও হয়ত আমার ছেলেকে পছন্দ করে বসে আছে। হয়ত ভালো ও বাসে। তোর ভয়ে বলছেনা। সাহিল বিরক্তি নিয়ে ঝগড়া থামাতে আসতেই থেমে গেল সাগর সাহেবের মুখে অমন কথা শুনে।
শফিল সাহেব জিনিয়াকে জেরা করল।
‘ জিনু তুমি কি সাহিলকে পছন্দ করো??

জিনিয়া চুপসে গেল এমন প্রশ্নে। সাগর সাহেব বললেন,
‘ লজ্জায় বলছেনা হয়ত,কিন্তু ঠিকই করে। ঠিকই ভালোবাসে। আরেহ আমি বুঝি,কিন্তু তুই বুঝিস না। কেমন বাবা তুই? এজন্যই বলে জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায়না৷
শফিক সাহেব জিনিয়ার হাত চেপে ধরল। জিনিয়ার হাত নিজের মাথার উপর দিয়ে বলল,
‘ আমার দিব্যি জিনু, সত্যি করে বলবে তুমি সত্যি সাহিলকে ভালোবাসো? পছন্দ করো? সত্যি বলবে? আমার দিব্যি।
জিনিয়া কেঁদে দেয়। সাহিলের দিকে তাকাতেই সাহিল চোখ সরিয়ে নেয়।
জিনিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আব্বা আই হেইট দিস ফাইট। রিয়েলি হেইট। স্টপ দিস ফাইট আব্বা। প্লিজ স্টপ।
শফিক সাহেব জিনিয়াকে বলে,
‘ সত্যিটা বলো জিনু। নইলে আজ থেকে আর আব্বা ডাকবেনা আমায়। আমি তারমানে তোমার আব্বা নই? জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায়না।
জিনিয়া অশ্রুসজল নয়নে একবার বাবার দিকে তাকায় একবার সাহিলের দিকে। মাথা নেড়ে বলে,
‘ ভালো বাসিনা। একটু ও না।
জিনিয়া আর দাঁড়াল না। চলে গেল দৌড়ে। শফিক সাহেব হো হো করে হেসে সাগর সাহেবকে বলল,
‘ দেখলি কি বলল সে? দেখলি?
সাহিল এসে দাঁড়াল সাগরের সামনে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ আমি ও তো বাসিনা। বাবা তুমি কি পাগল?
আমি যদি বাসতাম তাহলে তুলে নিয়ে আসতাম।
শফিক সাহেব হা করে থাকে। সাহিল তাকে বলে,
‘ আন্কেল আপনিই বলুন, আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি আপনার মেয়েকে ভালবাসি? মনে হয়?
শফিক সাহেব মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘ তাই তো মনে তো হয়না। সীমান্তর চোখে যা দেখি তা তো তোমার চোখে দেখিনা। তারমানে সব মিথ্যা? তোমার বাবার খেলা সব? আচ্ছা?
সাহিল হাসল। বলল, ঠিক। বাবা শুধু শুধু বাজে কথা বলে।
সাহিল হাসল জোরে জোরে। ছাদের দরজার কাছে গিয়ে থেমে যাওয়া মেয়েটা এলোমেলো সুরে কেঁদে ফেলে। সাহিল দেখে, সে দেখতে পায় একটুখানি ওড়নার আঁচল। আর ও জোরে হাসে সে।
আর ও জোরে জোরে বলে,
‘ আমি বাসিনা। মাথা খারাপ?

চলবে,

আজ সারাদিন বেকার। তাই বেকারত্ব কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। সবাই টাংকু দেবেন😒😒😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here