#রৌদ্রমাখা বর্ষা
আলহীনা ইনাম [ছদ্মনাম]
০৪,,
পরদিন বিকালে,
আফাফ নিদ্রের সাথে হসপিটালে নিয়াজ শিকদারকে দেখতে যাচ্ছে। নিয়াজ শিকদারের কাছে নিদ্র একা গেলে ওনার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হওয়ার উপক্রম হয়। নিয়াজ শিকদার বেঁচে থাকলেও এখনি সব জানুন, এটা ওরা কেউ চায়না। এতে ওনার উত্তেজনায় শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে পারে।
আফাফ গাড়িতে নিদ্রের পাশের সীটে বসে গতকালকে নাহিনের বলা কথাগুলো ভাবছে। নাহিন বলেছে, প্রতিবছরই মডেলিং প্রতিযোগিতায় একেকজন টপ মডেল হয়ে থাকে। আনাবিয়া এখন উঠতি মডেল। এখন ওর ক্যারিয়ার গড়ে নেওয়ার সময়। নিদ্রকে দ্রুত বিয়ে করার জন্যই ও এখনো অ্যাবোরশন করেনি। নাহিন নিশ্চিত, একবার বিয়ে হয়ে গেলে সুযোগ থাকলে ও অ্যাবোরশন করাবে। আনাবিয়া নিজের ফিগারের প্রতি খুব বেশি সংবেদনশীল এবং সচেতন। আফাফ বিশ্বাস করেনি। শুধু ভেবেছে এটা নাহিনের ধারণা। আফাফ নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও এই চিন্তা মাথায় আনতে পারেনি। আর আনাবিয়া সব গোছানোই পাবে। গতকাল আফাফ ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে, যেটা ওর সন্তান পৃথিবীতে আসার পর কার্যকর হবে। আইনানুযায়ী আফাফ এখনো নিদ্রের স্ত্রী আর সে সম্পর্কে নিদ্রের এখনো কোনো ধারণা নেই। সে আছে নিজের মতো।
নিয়াজ শিকদারের কেবিনে ঢোকার আগে নিদ্র আফাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আগ বাড়িয়ে কিছু বলবে না। তোমার জন্য আমার দাদুর কোনোপ্রকার ক্ষতি, আমি চাই না।’
আফাফ মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।
ওরা নিয়াজ শিকদারের পাশে এসে দাঁড়াতেই নিয়াজ শিকদার ওদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসতে চেষ্টা করলেন। ওনি জেগেই ছিলেন। নিদ্র ওনার পাশে একটা চেয়ারে বসে ওনার একটা হাত মুঠোয় নিয়ে তাতে চুম্বন করলো। নিয়াজ শিকদার চেষ্টা করে ওদের সাথে একটু কথা বলতে পারলেন। নিদ্র বেরিয়ে গেলো এবার কেবিন থেকে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে।
নিয়াজ শিকদার ইশারায় তখন থেকে দাঁড়িয়ে থাকা আফাফকে ওনার পাশে বসতে বললেন। আফাফ ছলছল চোখে একবার ওনার দিকে তাকিয়ে বসলো চেয়ারটায়। নিয়াজ শিকদার হতাশার নিশ্বাস ফেলে বললেন,
‘আমাকে ক্ষমা করে দিস দাদুমণি। আমি তোর জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি।’
আফাফ খানিকটা অবাক হয়েছে। নিয়াজ শিকদারের সামনে ভালো থাকার এতো অভিনয় করার পরও ওনি বুঝতে পারেন সব!
নিয়াজ শিকদার হয়তো ওর মনের কথা বুঝতে পারলো। সামান্য হেসে বললো,
‘ব্যবসায়ী আমি। সারাজীবন মানুষকে ভাঙিয়ে চুরিয়ে খেয়েছি। এই সামান্য বিষয়টা না বোঝার মতো বোকা তো নই। শুধু আফসোস থেকে গেলো। তোর কোলে কাউকে দেখার বড় সাধ ছিলো।’
নিয়াজ শিকদার আবারও দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেললেন। আফাফ শ্রদ্ধার সাথে স্নেহপূর্ণ দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা সেই হার্ট অ্যাটাকের পর থেকে কেমন বাচ্চাদের মতো আচরণ করে মাঝে মাঝে, যার দরুন আফাফের মাঝে ওনার জন্য সম্মানবোধের পাশাপাশি স্নেহের সঞ্চার হয়েছে।
আফাফ ওনার সাধ পূরণের স্বার্থেও নিজের কথা বললো না। নিদ্র ফিরে আসতেই ওনাকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেলো।
যাওয়া আসা, পুরোটা সময় একবারও ওদের ভিতর কথা হয়নি। যেন দুজনেই জড়বস্তু। আফাফ বাড়ির লনে নামতেই ওর ফোন বেজে উঠলো। নিদ্র তখন ফোনে আনাবিয়ার সাথে কথা বলছে। আফাফ নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মা ফোন করেছে। ও কেটে দিলো। আঞ্জুম প্রায় সাথে সাথে আবারও ফোন করলো। আফাফ এবার আর কাটলো না। জরুরি কিছু হয়তো! তবে জরুরি কি সেটা আফাফ জানে।
আফাফ ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে বললো,
‘বলো।’
ওদিক থেকে আঞ্জুমের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। আফাফ খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বললো,
‘কি হয়েছে মা? তোমার কিছু হয়েছে? ভাইয়ার? আলীর? কার কি হয়েছে?’
নিদ্র আফাফকে উত্তেজিত হতে দেখে জানালা থেকে মুখ বাড়িয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালো। আনাবিয়ার কল কেটে দিলো।
আঞ্জুম কান্নার দরুন ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না। আফাফ তাকে শান্ত হতে বললো। সে কোনোমতে থেমে থেমে ফুপিয়ে ফুপিয়ে যতোটা বললো তার সারমর্ম এই যে,
গতকাল রাত থেকে আলী বাড়ি ফেরেনি। কোথায় জুয়া খেলতে গিয়ে হেরে গিয়েছে। আর হেরে গিয়ে টাকা শোধ করতে পারছে না বিধায় ওকে ওরা ছাড়ছে না। ওরা বেশ প্রভাবশালী। এর উপর আলী ওদের সাথে মারপিট করেছে। এখন টাকা না হলে ওরা ওকে মেরে ফেলবে।
আফাফ হতাশার নিশ্বাস ফেলে ঠিকানা চাইলো। আঞ্জুম ঠিক মতো বলতে পারলেন না। আফাফ ফোন কেটে দিয়ে নিদ্রের কাছে ছুটে এসে করুণ কন্ঠে বললো,
‘আমার ভাইকে বাঁচান প্লিজ।’
ব্যাস এতোটুকুই! নিদ্রও বুঝতে পারলো ঘটনা ঠিক কি হয়েছে। এর আগেও ও এমন সমস্যা মোকাবিলা করেছে। নিদ্র কাউকে কল করে আলীর খোঁজ করতে বললো। আঞ্জুম জায়গাটার নাম মিলিয়ে কিছু একটা বলেছিলো। তার সাথে মিলিয়ে জায়গাগুলোতে খোঁজ চালাতেই প্রায় আধা ঘন্টার ভিতর আলীর খোঁজ পাওয়া গেলো। নিদ্র বেরিয়ে যেতে নিতেই আফাফও জেদ করলো ও যাবে। নিদ্র কিছু বললো না দেখে ও নিজ দ্বায়িত্বে নিদ্রের পাশে এসে বসলো।
অনেকটা সময় পর একটা ঘিঞ্জি এলাকায় গাড়িটা প্রবেশ করলো। আর সামনে গাড়ি নিয়ে এগোনো যাবে না। ওরা নেমে হাঁটতে শুরু করলো। আফাফ খেয়াল করেছে ওদের পিছনে আরো কিছু লোক আসছে। ও কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নিদ্র সাথে থাকায় সেটা প্রকাশ না করে বরং সাহস সঞ্চয় করলো। বস্তি ধরনের এলাকা শেষ করে আরো কিছুটা সামনে এগিয়ে একটা বারের দেখা মেলে। সস্তা ধরনের দেখতে মনে হলেও এখানে যে ভয়ংকর কিছু হয়, সেটা বুঝতে সময় লাগে না। দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই অস্ত্রসজ্জিত দুজন জলহস্তীর ন্যায় শরীরবিশিষ্ট লোক চোখে পরে। তারা পাহারা দিচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। এই সন্ধ্যায় বারে আলোর স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও তারা কালো চশমা পরিহিত। ওদের বাঁধা দিতে গেলেও নিদ্রকে চিনতে পেরে ওরা পথ ছেড়ে দেয়।
ওরা ভিতরে ঢুকে দেখতে পায় আলীকে। সে এখনো জুয়ায় মশগুল, তবে সে একা নিজের সাথে খেলছে। আসলে সে খেলছে না৷ ওর সাথে কেউ খেলছে না। নিজের সময় কাটানোর চেষ্টা করছে। কপাল কেটে রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে গিয়েছে। আফাফ এগিয়ে গিয়ে সজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আলী হঠাৎ আক্রমণে নিজেকে সামলাতে না পেরে চেয়ার থেকে পরে গেলো। ও সম্পূর্ণ নেশাগ্রস্ত। তাই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই। থাপ্পড়দাতাকে না দেখে ও বিশ্রী ভাষায় একটা গালি দিলো। আফাফের কান্না পাচ্ছে ওকে এভাবে দেখে। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে ছেলেটা।
নিদ্র ওদের সাথে কথা বলে বিষয়টা মিটমাট করে নিয়েছে। দুজন লোক এসে আলীকে ধরে তুললো। তারা নিদ্রের লোক, যারা এতক্ষণ ওদের অনুসরণ করে আসছিলো। নিদ্র বেরিয়ে গেলো। আর ওরা বেরিয়ে আসার সময় একজন বেশ জোরেই আলীকে বললো,
‘খা** পো, আগে বলতি পারলিনা তোর এমন একখান গরম গরম বোন আছে। তোরে মাফ করি দিতাম।’
কথাটা আফাফের কানে গেলো। আলী ঘোরের মাঝেই হেসে দিয়ে বললো,
‘হ। তোরে কই আর তুই আমার জীবনডা নষ্ট করিস। তুই জানিস ও শিকদার বাড়ির বউ।’
ওরা আরো কিছু বাজে কথা বললো।
আফাফ ওখানে দাঁড়ায়নি ওদের কথা শুনে। কাঁদতে কাঁদতেই বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে। ওদের সাথে তর্ক করবে কার জোরে! রুচিতে বাঁধছে সেখানে দাঁড়াতে। কথাগুলো ওরা ছাড়াও নিদ্রের কানে ঢুকেছে। সে বেশিদূর যায়নি। ওদের কথা শোনার দূরত্বে ও ছিলো। নিদ্র আফাফকে অবজ্ঞা করে ঠিকই, তবে তার এমন অসম্মান সে করে না। ও নিজের মেয়ে বন্ধুদের সাথে রাত কাটায় ঠিকই, তবে জোর করে কিছু করে না। কখনো সে চোখে লালসা নিয়ে কন্ঠে নোংরামি আনে না আর এটা সহ্যও করে না। নিদ্র তখন কিছু না বলে চলে গেলো সেখান থেকে।
আফাফ সারা রাস্তাই কেঁদেছে। তবে নিঃশব্দে। ওর ভাইও ওদের কথার কোনো প্রতিবাদ না করে বরং মজা লুটলো! ওর ঘৃণা হচ্ছে আলীর প্রতি। আফাফের অবাক লাগে। এতো বড় পৃথিবীতে কেউ কি ওর সাথে নেই! নিদ্র ওকে কাঁদতে দেখেও কিছু বললো না।
বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। হেডলাইটের আলোয় তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। বৃষ্টির, কণার ন্যায় ফোঁটাগুলো যেন সেই আলোয় মাখামাখি।
আলী আর আফাফকে আফাফের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আফাফের উদ্দেশ্যে নিদ্র বললো,
‘রাতে ওই বাড়িতে ফিরতে চাইলে দশটার ভিতর আনার ফ্ল্যাটে চলে এসো।’
আফাফ শুধু দূর্বল ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো। আনাবিয়ার অ্যাপার্টমেন্টটা ও চেনে। ওর বাড়ি থেকে কয়েক কদম এগিয়ে একটা কলোনি। সেখানেই আনাবিয়ার অ্যাপার্টমেন্ট। আলীকে নিদ্রের দুজন লোক কোনোমতে ধরে ওদের বাড়ির ভিতর নিয়ে গেলো। আফাফের মায়ের উদ্যোগে এই বাড়িটা তৈরি করা হয়েছে। অবশ্যই সেটা নিদ্রের টাকায়। বেশ বড় আর সুন্দর বাড়িটা। সামনে ছোট একটা বাগানসহ একতলা বাড়ি।
নিদ্র সেখান থেকে আবারও সেই এলাকায় গেলো। ওর হিসাব তখনো মেটেনি। ওরা যে ভুল করেছে, সেটা ওদের বোঝানোটা নিদ্র নিজের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করছে।
মাত্র একঘন্টা পরের ঘটনা, পাশের সস্তা হাসপাতালটায় বেশ কয়েকজন মাথা-হাত-পা, ভাঙা-কাটা-ফাটা লোক ভর্তি হয়েছে। বারটা পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
আঞ্জুম প্রথমে কিছু সময় কান্নাকাটি করে থেমে গিয়েছে। আফাফের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছে। আলোচনার একপর্যায়ে বললো,
‘আফাফ মা, তোকে একটা কথা বলার ছিলো।’
আফাফ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ‘হু’ বললো।
আঞ্জুম পূর্ণ উৎসাহে বললো,
‘আফতাবের বয়স তো ভালোই হয়েছে। এখন তো একটা বিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।’
আফাফ ওনার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘তুমি ঠিক বলেছো। আমিও কিছুদিন থেকে ভাবছি এই কথাটা।’
আঞ্জুম যেন এবার আরো উৎসাহ পেলেন। আর সেই উৎসাহকে উসকে দিলো আফাফের ওনার কথায় সম্মতি। ওনি দম নিয়ে বললেন,
‘তা তোর ভাইটা তো স্হায়ী কিছু করে না। মানে চাকরি বাকরি কিছু তো করে না। আয় রোজগারের জায়গা নেই। কোনো ভালো ঘরের মেয়ে আসবে, বল।’
আফাফ এবারও বললো,
‘এটাও সত্যি। আমি একারণেই তোমাকে সবসময় বলি, ওদের কিছু করতে বলো। আজকে দেখো, ওদের বেপরোয়া, উশৃংখল জীবন, ওদের জীবনটাই কেড়ে নিচ্ছিলো। তোমার ছেলেরা তোমার প্রশ্রয় পেয়ে পেয়ে এতো অস্পর্ধা হয়েছে ওদের। ওদের লাগাম টানো এবার মা।’
আঞ্জুম আফাফের কথার পাত্তা না দিয়ে বললো,
‘শোন না, আফতাব গত সপ্তাহে বলছিলো, ওরা কয়েকজন বন্ধু মিলে কোন একটা ব্যবসা শুরু করতে চায়। এতে নাকি রাতারাতি প্রচুর লাভ করা যায়।’
‘তা ভাইয়াকে করতে বলো। কিছু তো করুক। এভাবে কতোদিন বেকার বসে থাকবে?’
‘আসলে, শুরু করতে ইনভেস্ট না কি যেন বলে, সেটা করা লাগবে। আর এতে ওর ভাগে পয়ষট্টি লাখ বেঁধেছে। মানে ব্যবসা শুরু করতে টাকাটা লাগবে। আর এরপরের মাসের থেকেই নাকি লাভ আর লাভ। খুব তাড়াতাড়ি সেই টাকা উঠে লাভ শুরু হয়।’
আফাফ হতভম্ব হয়ে ওর মায়ের দিকে তাকালো। ছোট ছেলের এমন অবস্থা, কিছুক্ষণ আগে ডাক্তার এসে ওকে চেক আপ করে গিয়েছে। এরমধ্যেও ওর মা টাকার কথা বলছে। আফাফ ভাবতেও পারেনি ভাইয়ের বিয়ের কথা বলতেও টাকার কথা তুলবে। তাহলে ও সায় দিতো না। ও মনে করতে পারছে না, ওর বিয়ের পর ওর মা এই টপিকটা বাদ দিয়েছে কবে। ও হয়তো গুনে বলতে পারবে, আঞ্জুম ওর সাথে এই টপিকের বাইরে কতোবার কথা বলেছে, যেমন করে ও নিদ্র ওর উদ্দেশ্যে কতোগুলো শব্দ ব্যয় করেছে ও বলতে পারে। আঞ্জুম তাঁর পান খেয়ে লাল হয়ে যাওয়া দাঁতগুলো বের করে হেসে দিয়ে তাকিয়ে আছে আফাফের দিকে। তার গলায় মোটা স্বর্ণের চেইন, ঠিক জমিদার গিন্নিদের মতো। হাতে মোটা চুড় আর রুলি। আংটি পরা আঙ্গুল গোনার থেকে খালি আঙ্গুলের সংখ্যা দ্রুত আসবে। কানের দুলটাও লক্ষনীয়। আফাফ কখনো ওর শ্বাশুড়ি বা চাচি শ্বাশুড়িকে বাড়িতে কেন, কোনো অনুষ্ঠানেও এতো ভারী গহনা পরতে দেখেনি। ওনারা বয়সের সাথে ব্যক্তিত্বের মিশেলে সাজে। চলাফেরায় আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলে। বাড়ির ভিতর আফাফ শুধু অবজ্ঞার শিকার হয় ঠিকই, তবে তা ভদ্রতার সাথে। হৃদয় মিষ্টি করে তোলা ভদ্রতা প্রদর্শন করেন তারা।
আফাফের কখনোই ওর বিয়ের পরের আঞ্জুমের সাজ পোশাক ভালো লাগে না। তাকে বলেও কোনো লাভ হয়নি।
আঞ্জুম আফাফের কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে আবারও বললো,
‘আফাফ সোনা, তুমি তো জানোই আমাদের অবস্থা অতোটা ভালো না। আফতাবের স্বপ্ন এটা। ও নিজে ব্যবসা করবে। তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলছি?’
আফাফ এক মূহুর্ত স্থির দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আধ খাওয়া চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিয়ে বললো,
‘আমাকে ফিরতে হবে। আসছি আমি।’
আঞ্জুম দ্রুত ওর হাত ধরে বললেন,
‘আফাফ, তুমি এটা করতে পারো না। ওরা তোমার ভাই। তুমি এতো সুখে থাকবে আর ওদের কষ্টটা তোমার সহ্য হবে? তোমরা তিনজনই আমার সন্তান। একজন ভালো আর একজন খারাপ থাকাটা একটা মায়ের জন্য কতোটা পীড়াদায়ক, সেটা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা আছে? তোমাকে এতো ভালো অবস্থানে বিয়ে দেওয়া হয়েছে আর ওদের সামান্য একটু সাহায্য করতে তোমার এতো সংকোচ? এতোটা স্বার্থপর তুমি! এই আফাফকে তো আমি চিনি না। আমি মানুষ করতে পারিনি তোমাকে। নিজের ভাইদের দিকে একটুও তাকাবে না তুমি!’
বলতে বলতে কেঁদে দিলেন আঞ্জুম।
#চলবে
*ভুলত্রুটি আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং।
গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।