রৌদ্রমাখা বর্ষা পর্ব-৯ শেষ পর্ব

0
1610

#রৌদ্রমাখা বর্ষা
আলহীনা ইনাম [ছদ্মনাম]

০৯,, (অন্তিম পর্ব)

আফাফের বলা সত্ত্বেও নিদ্র সেখান থেকে না গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আফাফ আবারও চোখ রাঙিয়ে বললো,
‘আপনাকে কি আমি যেতে বলিনি? আশেপাশের লোকজন জড়ো করবো?’

নিদ্র একবার ওর কোলে কাঁদতে থাকা ঝিকিমিকির দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললো,
‘আমাকে একবার ওকে কোলে দেবে?’

আফাফ ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘না।’

‘প্লিজ, আমি সত্যি বলছি, একবার ওকে কোলে দাও। আমি চলে যাবো এরপর।’

আফাফ প্রথমে রাজি না হলেও নিদ্রের অনেক কাকুতি মিনতিতে ঝিকিমিকিকে ওর কোলে দেয়। অদ্ভুতভাবে ঝিকিমিকি একদম শান্ত হয়ে যায় এরপর। নিদ্র পরম স্নেহে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। আফাফ স্পষ্ট লক্ষ্য করলো নিদ্রের চোখে পানি। আফাফের খারাপ লাগছে। কিন্তু সেটাকে পাত্তা দিলো না। আনাবিয়ার সন্তানও ঠিক থাকলে নিশ্চয়ই নিদ্র এতোটা মায়া দেখাতো না। আফাফ সেটাই মনে করে। নিদ্র কিছু সময় পর ওকে আফাফের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে বললো,
‘আমরা আবারও বিয়ে করে সুখী হতে পারতাম আফাফ। হয়তো তোমাকে ভালোবাসতে পারতাম না। তবে সহ্য করে নিতাম।’

‘যেমন আগে দাদুর কারণে সহ্য করেছেন। এভাবে সুখী হওয়া যায়না। সত্যি করে বলুন তো, আনাবিয়ার সন্তান ভালো থাকলে এবং তার সাথে আপনি সুখী হলে আমাদের কথা ভাবতেন?’

নিদ্র ওর কথার প্রত্যুত্তর করলোনা। একপলক ঝিকিমিকির দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে আসতে নিতেই (যেন সে ওর প্রশ্ন থেকে পলায়ন করলো) আফাফ বললো,
‘আপনার মনে হয়নি মিকি আপনার মেয়ে নয়? সবাই তো সেদিন তাই বলছিলো।’

নিদ্র মৃদু হেসে গভীর একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,
‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করি কিনা জানি না। তবে চিনি। তোমার চরিত্র সম্পর্কে আমার কোনোদিনই কোনোপ্রকার সন্দেহ ছিলোনা। আর তোমার আগের প্রশ্নটা। হ্যাঁ, হয়তো আনার সাথে আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে সংসারটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হতো। কোনোপ্রকার ঘাটতি অনুভব করতাম না। হয়তো তখন শুধু আমার মেয়েকেই আমার প্রয়োজন হতো। তোমাকে নয়।’

নিদ্র কথাগুলো বলে আর দাঁড়ালো না। বেরিয়ে আসলো সেখান থেকে। আফাফের খুব জোরে কান্না পাচ্ছে, যেটা ওর হয়ে ওর মেয়ে করে ফেললো। নিদ্র বেরিয়ে যেতেই চিৎকার করে কেঁদে দিলো। আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস না করলেও রক্তের টান আফাফ উপেক্ষা করতে পারে না। আফাফের এটা ভেবেও কষ্ট হচ্ছে, এতোগুলো দিনেও ও নিদ্রের মনে সামান্যতম জায়গা করে নিতে পারেনি। তবে স্বস্তি পাচ্ছে, নিদ্র ওকে বিশ্বাস করে!
আফাফ ঝিকিমিকিকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

নিদ্র আবাসিকের থেকে বেরিয়ে টের পেলো ওর আসলে কষ্ট হচ্ছে। এমন অনুভূতি ওর আগে কখনো হয়নি। আফসোস হচ্ছে। শুধু সময়ের সঠিক মূল্যায়ন সে করেনি। মানুষ বরাবরই আসল হীরা রেখে চকচকে কাঁচের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। এটা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। সময় চলে গেলে আফসোস করেও লাভ হওয়ার নয়।
[তাই তো হিরো আলমকে সকলেই চেনে আর ড. জামাল নজরুল ইসলাম স্যারকে কয়জন চেনে? যিনি কিনা একাধারে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতিবিজ্ঞানী এবং বিশ্বতত্ত্ববিদ। তারসাথে আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক একজন ব্যক্তি। (আমি কাউকে ছোট করতে বলছি না। ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। তুলনা করেছি শুধু আমাদের দেশের ভেতর জনপ্রিয়তার দিক বিচারে আর কোনোদিক থেকে না। যেভাবেই হোক- আলোচনায় হোক বা সমালোচনায়, শ্রদ্ধার সাথে হোক বা তাচ্ছিল্যের সাথে, ব্যঙ্গ করতে হোক বা বোধদয় হতে, মানুষ স্মরণ করে কাকে বেশি? এটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত আফসোস। জানি মতভেদ আসবে।)]

[……Suddenly my eyes are open
Everything comes into focus
Blinding
We are all illuminated
Lights are shining on our faces
Blinding……
(Illuminated – Hurts)]

কিছুদিনের ভেতর আফাফ সাফাতকে বিয়ে করে।
নিদ্র একবার ভেবেছিলো মেয়ের জন্য মামলা করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর করেনি।

ঝিকিমিকির পুরো নাম ঝিকিমিকি এস। ‘এস’ দ্বারা কি বোঝায়, এটা কিছু মানুষ কেবল জানে। ঝিকিমিকি জানে তার বাবা কে। সাফাতকে সে সম্মান করে এবং অনেক বেশি ভালোবাসে। আফাফ ঝিকিমিকিকে নিদ্রের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করেনি। শিকদার বাড়িতেও তার অবাধ যাতায়াত। কিন্তু আফাফ আর কোনোদিন সে বাড়িতে পা রাখেনি।

নিদ্র আনাবিয়ার সাথে বিচ্ছেদের পর সাধারণ একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। তাদের সংসারও এখন পরিপূর্ণ। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা না থাকলেও মায়া আছে। আফাফের সাথে সাফাতের সম্পর্কের শুরুটা ছিলো ঠিক বাড়ি থেকে ঠিক করা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের মতো। তারা ধীরে ধীরে একে অপরের সাথে মিশে গিয়েছে। কেউই কারো প্রথম ভালোবাসা হওয়ার দাবি রাখে না ঠিকই তবে শেষ ভালোবাসা হয়ে জীবনের শেষ পর্যন্ত যেতে চায়। তাদের সংসার আলো করে ঝিকিমিকির একটা ছোট্ট বোন আছে, ফারজিন।
আফাফ একটা স্কুলের শিক্ষিকা আর সাফাত সেই কর্পোরেট অফিসের কর্মকতা। দুজনের প্রচেষ্টায় সংসারটা সুন্দর। সাফাত দ্বিতীয় বিয়ে করে তার পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছে, যারা একই শহরে থাকেন। তারাও মেনে নেওয়ার পাশাপাশি ঝিকিমিকিকে পেয়ে ভীষণ খুশি।

আফাফ আজও ভেবে অবাক হয়, সমাজে সাফাতের মতোও মানুষ আছেন! সেদিনই তার সাথে সাক্ষাৎ! সবই পরিকল্পনা, যা বারবারই মনে হয় কাকতালীয়।

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সবচেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী।’
[সূরা আনফাল:৩০]

নিদ্র জানে আফাফ ফিরবে না কখনো তার জীবনে, ওইসব বৈধ বন্ধন, ওইসব অতিউচ্চ, নৈতিক বিধানমালা কখনোই ছিন্ন করে সে ফিরবে না। কখনোই সে সম্পর্ক শুকিয়ে শীর্ণ হয়ে এমনকি খানিকটা উদ্ভট হয়েও ফিরবে না। এ নিয়ে অবশ্য তার আফসোস নেই। ঝিকিমিকি তার কাছে আসে এবং তাকে ভালোবাসে, এটাই অনেক আফাফের থেকে তার প্রাপ্তি হিসাবে। নিদ্রের সংসার পরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তার ঝিকিমিকির প্রতি ভালোবাসা কমেনি নিজের মেয়ে হিসাবে।

সেই রৌদ্রমাখা বর্ষা আজ আবারও এসেছে। আজ নিরের বিয়ে। ১৩ বছরের ঝিকিমিকি সপ্তাহ ধরে শিকদার বাড়িতে আছে। নিজের ছোট ছোট কাজিনদের সাথেও সে মুখর। নিদ্রের দ্বিতীয় সন্তান, ঝিকিমিকির সৎভাই আইমান, নীলাভের মেয়ে নিঝুম ঝিকিমিকির থেকে বেশ ছোট হওয়া সত্ত্বেও ওর সাথে বন্ধুত্ব খুব ভালো। নাহিনও কিছুদিন আগে বিয়ে করেছে।

দুপুরে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আফাফ রৌদ্রমাখা বর্ষার দিকে চেয়ে আছে উদাস দৃষ্টিতে। সাফাত ওর পাশে এসে দাঁড়ালো। আফাফকে জিজ্ঞাসা করলো না ওর চিন্তার কথা। সাফাত জানে সেটা। আফাফের জীবন বদলে দেওয়ার একটা সময় ছিলো এটা। হঠাৎ করেই আফাফ সাফাতের দিকে না তাকিয়ে বললো,
‘মিকিকে এতো ভালোবাসো কেন তুমি? ও তো তোমার …।’

আফাফের কথা শেষ হওয়ার আগেই সাফাত বললো,
‘ও আমার মেয়ে। অপ্রত্যাশিতভাবে হোক বা দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফলাফল, আমার ছোট্ট স্বপ্নঘেরা পরিবারের অংশ সে।’

‘ওকে কি একটু বেশি স্বাধীনতা দেওয়া হয়ে যাচ্ছে না?’

‘ব্যাকডেটেড চিন্তাভাবনা বদলাও। ও ভালো ছাত্রী। নিজের পছন্দে ওকে চলতে দাও।’

আফাফ আর কিছু বললো না। এরপরের কথাগুলো দুজনেরই জানা। ঝিকিমিকিকে নিয়ে একদফা ঝগড়া হবে। এরপর আফাফ অভিমান করে বসে থাকবে আর সেটা ভাঙানোর দ্বায়িত্ব সাফাত আর ঝিকিমিকি দুজনকেই নিতে হবে।

ঝিকিমিকিও রৌদ্রমাখা বর্ষা দেখতে বাগানের ছাউনিতে এসে দাঁড়িয়েছে। অতি অল্প সময়ে সেটা শেষও হয়ে গিয়েছে। ঝিকিমিকি ছড়া কাটেনি। নিরবতার মাঝে জিনিসটা উপভোগ করে। যদিও বৃষ্টি পরবর্তী পরিবেশটা অস্বস্তিকর। ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট নিঝুম বলে উঠলো,
‘আমি তো আবহাওয়াবিদ হতে চাই। ওরা কত্তো সুন্দর আগে আগে সব বলতে পারে! মিকিপু তুমি কি হতে চাও?’

নিদ্র খানিক দূরে দাঁড়িয়ে বাড়ির সাজসজ্জার তদারকি করে যাচ্ছে। বৃষ্টির কারণে সবাই বাড়ির ভেতর বলে গার্ডেনটা নিরব হয়ে আছে অনেকটা। নিদ্র ওদের কথা শুনতে পাচ্ছে। নিঝুমের কথাটা কানে যেতেই নিদ্র স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ালো মিকির উত্তর শুনতে। সেই জেদই কি ধরে রেখেছে সে! দুবছর আগে নিদ্র ওকে এটা জিজ্ঞাসা করায় যে উত্তর পেয়েছে, তাতে নিদ্র বেশ চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরেছিলো।

মিকি মৃদু হেসে গভীর একটা শ্বাস নিয়ে বললো,
‘মানবাধিকার আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে একটা ক্যারিয়ার গড়তে চাই।’

নিদ্র এবারও আগের মতোই একটা ছোট্ট ধাক্কা খেলো। এই বয়সে বাচ্চারা সাধারণত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী পাইলট হতে চায় যেহেতু তারা এইসকল পেশার সাথে বেশি পরিচিত। কিন্তু মিকি সেই ছোট থেকেই প্রথম পেশা হিসাবে এটাই চায়। আর তার লক্ষ্যবদ্ধতা, এটা বেশ একটা অন্যরকমের পছন্দ। এবং এই নিয়ে তার দৃঢ় সংকল্পটি, অন্য কোনো বিকল্প বিবেচনা করতেও তার অনিহাটি, একটু অদ্ভুত, বিশেষ করে কারো জন্য যার এতো কম বয়স! সে এখনো ভোলেনি এবং বয়সের তুলনায় ম্যাচিউরিটি বেশি। মিকির বিধ্বংসী রূপও তাকে মডেলিং বা এধরনের কোনো পেশার প্রতি আগ্রহী করে তুলছে না। মিকির পছন্দটা নিদ্রকে ভাবায়। নিদ্র ভাবে, এটা মিকির নিজের বাবার বিরুদ্ধেই একটা ছোট খাটো শিশু বিপ্লব মঞ্চায়নের কোনো পন্থা নয় তো? এই ক্ষেত্রটি অবশ্যই নিখুঁতভাবে মর্যাদাসম্পন্ন এবং পেশা হিসাবেও লাভদায়ক। আর মিকিও তাকে ভীষণ ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে যতোটা সে সাফাতকে করে। তারপরও নিদ্র নিজের চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। যদিও সে উৎসাহ প্রদানেও নূন্যতম কৃপনতা করে না আর মিকিও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যেন!

[সমাপ্ত]

★Nevermind, আমি কথা বলি একটু বেশি।

*যাদের মনে হয়েছে, আফাফের সাথে একটু বেশি বেশি হয়েছে। অর্থাৎ গল্পটা অতিরঞ্জিত হয়েছে, আমি তাদের চিন্তাধারাকে আঘাত করতে চাই না। আমাদের বাড়িতে কয়েকবছর আগে ‘মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার’ অফিস ভাড়া ছিলো। আমরা মনে করি, সমাজ এগিয়ে গিয়েছে। মেয়েরা অনেক অ্যাডভান্স, এমন কিছু হয়না। কিন্তু আমাদের ধারণা পুরোপুরি ঠিক না। অফিসটায় এমন অনেক মেয়ে আসতো, যাদের জীবন কাহিনীর কাছে আফাফেরটা হাস্যকর। প্রশাসনের বিচক্ষণতার অভাবে অনেক অন্যায় হয় সমাজে। মানুষ দুঃসাহস অনেক বেশি পায়। কিছু কিছু অপরাধে তাদের চুপ থাকা বা অবিচক্ষণতায় আমরা গালাগাল করি ঠিকই। কিন্তু সেগুলো সামনে আসায়। সমাজের আনাচে কানাচে এমন অনেকের জীবনের কাহিনি অজানাই থেকে যায়৷ সেগুলো জানে কয়জন?

*সাফাত ভোটে জিতে গিয়েছে 🥳। যারা নিদ্রকে সাপোর্ট করেছিলেন প্লিজ কিছু মনে করবেন না। প্লিজ, প্লিজ। আমার একপ্রকার অভিমত, ফিমেল লিড ক্যারেক্টর একাও সম্পূর্ণ, তবে গল্পের খাতিরে একজন মেল লিড ক্যারেক্টরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। (আমাকে তো বছরে কয়েকদিন বিয়ে বিষয়ক লেকচার শুনতে হয়, একজন মানুষ জীবনে প্রয়োজন😒। আমি তো Schediaphilic🤗)। আমি নিজেও নিদ্রের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। (কেউ বলবেন না, আমার হাইব্রিস্টোফিলিয়া আছে।😒) অনেকের কাছে হয়তো গল্পটাকে কোনো গল্পের সারাংশ আকার মনে হয়েছে, এজন্য দুঃখিত। গল্পটা চেয়েও বড় করতে পারিনি। কয়েক পর্বে অহেতুক বর্ণনা ছাড়া সবিস্তর আলোচনা ছিলো না। সবকিছু কেমন যেন ছাঁকা ধরনের ছিলো। সংলাপ অপেক্ষা বর্ননা বেশি। গল্পটা হয়তো বড় করা যেতো। তবে আমি শুধু মূল অংশটাকে ফোকাস করেছি। অহেতুক রোম্যান্স বা অন্য কিছু আনিনি। শেষ পর্বে কিছু সুস্থ সম্পর্ক উপস্থাপন করেছি। আমি নিজেও অবাক হয়েছি নিজের প্রভাবিত হওয়ার ক্ষমতা দেখে😓। বর্তমানে যে উপন্যাসটা পড়ছি, তার ধরণ আমাকে প্রভাবিত করে চলেছে! যদিও সেটা রাজনীতি নিয়েই বেশি।

*আমি কোনোমতেই অস্বীকার করতে পারবো না আপনাদের সাপোর্ট আর রেসপন্স আশাতীত পেয়ে আমি উচ্চাকাঙ্খী হয়ে উঠছি। সহজ বাংলায়, লোভী😑। এখন পরবর্তী গল্প লিখতে মানসিক সক্ষমতা অর্জন করতে হবে ধাক্কা সামলাতে। আপনাদের নিরবতা মেনে নিতে। এধরণের প্লটে আগে লিখিনি কখনো। ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন আশা করি।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
আল্লাহ হাফেজ।

Wait……,মুড পাল্টে ফেলুন।
সারাদিনের হাবিজাবি আজগুবি চিন্তাভাবনা এখনো শেষ হয়নি আমার😌।

#Utmost_Psychopaths-02

01.1,,

ছোট্ট ভাড়া বাড়িটা থেকে বেরিয়ে ভার্সিটির পথে কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে থমকে দাঁড়ালো জিহাদ। কাঁধের ব্যাগটা ঠিক থাকা সত্ত্বেও কাঁধে ঠিক করতে করতে চোখের চশমাটার মাঝে আঙ্গুল দিয়ে ঠিক করে নিলো। চোখের মণি কয়েকবার ঘুরলো আশেপাশে থেকে পালানোর পথ খুঁজতে। ব্যাগটা খামচে ধরে মোচড়াচ্ছে। নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গালের পাশ বেয়ে গড়িয়ে নামছে। জিহাদ নিজেকে সান্ত্বনা দিলো, এরা ওকে সন্দেহ করেনি। সবকিছু ঠিক আছে। শুধু স্বাভাবিক থাকতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
জিহাদ সামনে পা বাড়িয়ে পুলিশের গাড়িটা অতিক্রম করে যেতেই কেউ ওকে পিছন থেকে ডাক দিলো। জিহাদ অনুভব করতে পারছে ওর হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। ঠোঁট কাঁপছে। নিজেকে কোনোমতে শান্ত করে পিছনে ফিরে স্মিত হাসার চেষ্টা করলো। অফিসার ওর দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ‘তুমি জিহাদ শেখ?’

‘জি।’ ভদ্র মিষ্টি কন্ঠে বললো সে।

‘আকসা জুবায়েরকে চেনো?’

‘কে…কে আকসা?’ শুকনো ঢোক গিলে বললো জিহাদ।

‘তোতলাচ্ছো কেন? প্রখ্যাত মডেল তারকা আকসা জুবায়ের যিনি তিনদিন আগে নিখোঁজ হয়েছেন। আজ তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।’

‘আহ, এটা দুঃখজনক।’ জিহাদ নিজের সমস্ত ইচ্ছাশক্তি একত্র করে কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে বললো নিচের দিকে তাকিয়ে।

অফিসার ওর ফিনোটাইপ খেয়াল করছেন।
‘তুমি যেতে পারো।’ তিনি বললেন।

জিহাদ চমকে উঠে জোরপূর্বক হেসে পিছনে ঘুরতে নিতেই অফিসারকে একজন বলে ওঠে, ‘স্যার এইডাই সেই মালডা।’

কথাটা জিহাদের কানে যেতে না যেতেই জিহাদ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই দৌড়াতে শুরু করে। অফিসারও আর থেমে থাকেনি। কুকুরের মতো ধাওয়া করে ওকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয়।

01.2,,

প্রথমে স্বীকার না করলেও রিমান্ডে নেওয়ায় জিহাদ স্বীকার করে নেয় আকসাকে হত্যা করার কথা, যেটা ওর ভাষ্যমতে ছিলো শুধুই দূর্ঘটনা। পিটিয়ে কৌশলে টর্চার করে রক্তাক্ত করার পর জিহাদ বলতে শুরু করে। সে বলে,
‘স্যার বিশ্বাস করেন, আমি সত্যি ওকে মারতে চাইনি। এটা দূর্ঘটনা ছিলো। ও স্বীকারই করছিলো না যে ও আমাকে ভালোবাসে।’

অফিসার ওর চুলের মুঠি টেনে ধরে মাথা তুলে মুখের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
‘ও তোকে ভালোবাসে!! শালা বা***। তোর কি যোগ্যতা আছে? নিজেকে দেখেছিস কখনো আয়নায়? ওর মতো ফেমাস মডেল কোন বা* ছিঁ** তোর দিকে ফিরে তাকাবে? হারা** ফকিরের বাচ্চা!’

জিহাদের চোখ মুখ মূহুর্তে শক্ত হয়ে এলো। পারলে এক্ষুনি অফিসারকে খুন করে ফেলবে ও। চেয়ারের সাথে বাঁধা থাকায় পারলোনা। ওর চোখে মুখে রাগ দেখে অফিসার ওর চুল ছেড়ে ওকে আবারও ইলেক্ট্রিক শক দিলেন। ককিয়ে উঠলো জিহাদ। ওনি আবারও বলতে বললেন। জিহাদ আবারও বললো,
‘শপিংমলে প্রথম আকসার সাথে আমার দেখা হয়। আমার হাত থেকে থিসিস পেপার পরে গেলে হঠাৎই একটা হাত ছড়িয়ে পরা পেপারগুলো গুছিয়ে তুলে দেয়। ও মুচকি হেসেছিলো। বলুন, কেউ ভালো না বাসলে সাহায্য করে? মুচকি হাসে? এরপর আমি ওর পিছু নিয়েছি। ও ভালোবাসতো আমাকে। বিশ্বাস করুন। এরপর প্রায়ই কথা হয়েছে হঠাৎ হঠাৎ। কেউ কথা বলে ভালো না বাসলে? আমি সেদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওকে, স্বীকার করে নিক আমাকে ও ভালোবাসে। ও করেনি। বরং বলেছে, ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। ও মিথ্যা বলেছিলো আমি জানি। এরপর হোটেল প্রাইমারের পার্কিং এরিয়া থেকে ওকে আমি অপহরণ করেছিলাম। শুধু বলেছিলাম একবার স্বীকার করতে। ও করেনি। আমি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি আর ওর ঘাড় ধরে সজোরে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা দিই। ওর মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত পরছিলো। বুঝতে পারিনি ধাক্কাটা এতো জোরে হবে আর ও মারা যাবে।’

অফিসার ওকে আরো কয়েকবার লাঠি দিয়ে ইচ্ছামতো পেটালেন। ও নিস্তেজ হয়ে আসতেই বেরিয়ে গেলেন সেল থেকে।

01.3,,

অফিসার কোনোমতে মানতে নারাজ জিহাদ মানসিকভাবে অসুস্থ। পুলিশ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফিরোজ তাকে বললেন, জিহাদ Erotomania’য়(এরোটোম্যানিয়া) আক্রান্ত। যেখানে রোগী মনে করেন, তাকে কেউ ভালোবাসে। আর সেই কেউ অবশ্যই তার থেকে সামাজিক মর্যাদায় অনেকটা উপরে অভিজাত কেউ। সেই ব্যক্তি যদি রোগীকে সাধারণ সৌজন্যও প্রদর্শন করে থাকে, রোগী সেটাকেও মনে করেন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তার ‘না’ কেও তিনি মনে করেন সাংকেতিক ভাষা তার প্রতি। জিহাদ এর থেকেও বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছে ওর অনিয়ন্ত্রিত রাগের কারণে।

অনেক বোঝানোর পরও অফিসার মানলেন না। জিহাদের গরীব বাবা একজন উকিল ঠিক করেছিলেন জিহাদের পক্ষে। তার মাধ্যমেই বিষয়টা কোর্টে উপস্থাপন করা হয় এবং জিহাদকে মানসিক হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসা দিয়ে ওর যাবজ্জীবন হয়েছে।

★★★

02,,

ভোরবেলা বাড়িতে পুলিশ আসায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছে স্বপ্ন। সে সবে ঘুম থেকে উঠে সকালের চা খাচ্ছিলো প্রভাতের আলো পত্রিকায় চোখ বুলাতে বুলাতে। পুলিশ ঘরে ঢুকেই বললেন,
‘মৃদুলা চৌধুরী বাড়িতে আছেন?’

‘জি। তাকে কেন দরকার?’ (স্বপ্ন)

‘হুজ ওভার দেয়ার ডার্লিং?’
মৃদুলা ফোলা চোখে ঢলঢলে পায়ে দোতলার করিডরে দাঁড়িয়ে কথাটা বললো। অনেকরাত পর্যন্ত ড্রিংক করায় এখনো ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না।

‘ওনারা তোমাকে চায় সোনা। নিচে এসো।’
স্বপ্ন বললো।

মৃদুলা টলতে টলতে কয়েক সিঁড়ি নেমে ভালো করে চোখ ডলে তাকিয়ে পুলিশ দেখে বললো,
‘এই বাস্টার্ডগুলো আমার বাড়িতে কী করছে?’

অফিসার শান্ত কন্ঠে বললেন,
‘ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিসেস স্বপ্ন চৌধুরী।’

মৃদুলার ঘুম যেন ছুটে পালিয়েছে। স্বপ্নও অবাক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
‘হোয়াট! ও কি করেছে যে আপনারা ওকে অ্যারেস্ট করবেন?’

‘ওনি নিজের খালাতো বোন সুমিকে হত্যা করেছেন।’
অফিসার কথাটা বলতে বলতে একজন মহিলা কনস্টেবল মৃদুলার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিলো। মৃদুলা তেজ দেখাতে গেলে আরেকজন এসে ওকে অপর পাশ থেকে ধরে।

‘ইম্পসিবল। মৃদু এমনটা করেনি। ওদের মধ্যেকার সম্পর্ক অনেক ভালো ছিলো।’
স্বপ্ন উত্তেজিত হয়ে বললো।

অফিসার মোবাইল থেকে একটা ভিডিও অন করলেন। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, রাতে দুজনে একসাথে ড্রিংক করছে। হঠাৎই সুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। হয়তো মদে কিছু মেশানো ছিলো। এরপর মৃদুলা নিজের ব্যাগ থেকে একটা ছুড়ি বের করে সযত্নে সুমির গলার ধমনিটা কেটে দিলো। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে মৃদুলার শরীর রাঙিয়ে দিলো। মৃদুলা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে, ওর গায়ে পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দেহটা সোজা করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
অফিসার বললেন, কে ভিডিওটা পাঠিয়েছে ওনি জানেন না।

মৃদুলাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় ও একভাবে গালিগালাজ করে যাচ্ছে। স্বপ্ন ব্যথিত দৃষ্টি নিয়ে ওর পিছনে পিছনে আসছে। মৃদুলাকে পুলিশ ভ্যানে তোলার সময় ও চিৎকার করে বললো, ‘আমার উকিলকে কল করো স্বপ্ন। ওই ভিডিও করা স্ক্রাউন্ডেলকে খুঁজে বের করো।’

স্বপ্ন কান্নাভেজা কন্ঠে বললো, ‘শিওর হানি। প্লিজ ডোন্ট ওয়ারি। আই উইল হ্যান্ডেল এভরিথিং।’

পুলিশ ভ্যানটা চলে গেলো আর স্বপ্ন নিজের চোখ মুছে স্মিত হাসলো। সেরাতেই স্বপ্ন তার প্রেমিকা ইরিনাকে নিয়ে লুক্সেমবার্গের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করলো।
প্লেনে উঠে স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলে ভাবছে, আসলে ও কতোটা ধূর্ততার পরিচয় রেখেছে। মৃদুলা ওর প্রতি প্রচন্ড পজেসিভ। স্বপ্ন ওকে বিয়ে করেছিলো শুধু ওর সম্পদের জন্য। বাংলোটা বেঁচে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভারী করে আর ওর যা যা প্রোপার্টি ছিলো সবটা নিয়ে ওকে বলেছিলো, ওর খালাতো বোন সুমি স্বপ্নকে ভালোবাসে। মৃদুলাকে সরিয়ে ওর জীবনে আসতে চায়। ব্যস! আধ পাগল মেয়েটা নিজের বোনকেই খুন করলো। ভিডিওটা স্বপ্ন করেছিলো। এখন মৃদুলার ফাঁসিও হতে পারে আবার যাবজ্জীবনও হতে পারে। আর স্বপ্ন এখন নিজের একমাত্র ভালোবাসা ইরিনার সাথে নিজের স্বপ্নের পথে।

[The End]
Sayonara.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here