রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী পর্বঃ২৯

রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
পর্বঃ২৯
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“আমাকে দেখা শেষ হয়েছে আরু?”

রৌদ্রর কথায় আরশিকে লজ্জায় আঁকড়ে ধরেছে। ঠিক যেমনটা চোরাবালি আঁকড়ে ধরে তেমন করে। এই লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসা যেন আরশির জন্য খুবই কষ্টদায়ক। হলদেটে গায়ের চামড়া এখন লালচে বর্নে বর্নিত হয়েছে। চোখজোড়া ঘনঘন পলক ফেলছে অস্থিরতায়। রৌদ্রর আরশির অবস্থা দেখে হাসলো। ঠোঁট চেপে হাসলো। গালের মাঝখানের টোলটা দাঁড়ির আবরণে ঘন কালো হয়ে উঠেছে। পকেট থেকে ডান হাত বের করে খানিকটা ঝুঁকে পরলো। আলতো করে আরশির মাথায় হাত রাখলো। শীতল কন্ঠে বললো-

“এবার একদম পারফেক্ট রুদ্রাণী লাগছে। তবে এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ঝলসে দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখিও না রুদ্রাণী।”

রৌদ্র আবারও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুজে দিল। আরশির লজ্জা ভাব কেটে এখন ঝেঁকে বসেছে বিস্ময়বোধক চিহ্ন। “আমাকে রুদ্রাণী লাগছে!!কিন্তু রুদ্রাণী দেখতে কেমন!! আমি আবার কিভাবে ওনাকে ঝলসে দিবো!! আর দুঃসাহসই বা কখন দেখালাম!!” আরশির মনে চলছে এতো এতো বিস্ময়বোধক চিহ্নের ছোড়াছুড়ি খেলা। বিস্ময়কর চাহনিতে তাকালো রৌদ্রর দিকে। প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল-

“কি বলেছেন এগুলো!! একটু সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলুন। আমি তো আপনার কথা বুঝতেই পারছি না।”

রৌদ্র ঠোঁটে হাসি রেখেই বলল-

“বাচ্চাদের এতো কিছু বুঝতে হয় না। কিছু জিনিস আপাতত অজানা থাকুক। এখন আপনি বলুন আমার দিকে এতো বড় বড় চোখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন কেন??”

আবারও একথায় ফিরে আসাতে আরশি অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। অগোছালো ভাবেই বলল-

“কই না তো আমি কেন আপনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকব!! আপনি হয়তো ভুল দেখেছেন।”

“আপনি তো মিথ্যাও বলতে পারেন দেখছি। আমি নিজ চোখেই দেখলাম আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আর এখন আমার মুখের উপরেই মিথ্যে বলছেন!!”

রৌদ্রর কথায় আরশির মেজাজ বিগড়ে গেল। আর সেই সাথেই করে বসলো আরেক বোকামি। রাগে গজগজ করে বলল-

“দেখেছি তো কি হয়েছে!! চোখ আছে বলেই দেখেছি। আর আমি তো আপনাকে না আপনার গালের এই জায়গাটা দেখছিলাম।”

লাস্ট কথাটা আরশি রৌদ্রর গালের টোল পরা স্থানে আঙুল ছুঁয়ে দিয়েই বলল। রাগের মাথায় কি থেকে করেছে আরশি নিজেই জানে না। রৌদ্রর আরশির এমন কাজে থতমত খেয়ে গেল। রৌদ্র ভাবতেই পারেনি আরশি এভাবে হুট করেই তার গাল ছুঁয়ে দিবে। আরশি নিজের বোকামি বুঝতে পেরে আরেক দফা লজ্জা পেল। আকাশসম লজ্কা নিয়েই দ্রুত রৌদ্রর গাল থেকে আঙুল সরিয়ে নিল। কয়েক কদম পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আমতা-আমতা করে বলল-

“মানে আপনার গালের এই জায়গায় কালো হয়েছিল তাই দেখছিলাম। কিন্তু সামনে এসে বুঝলাম এটা টোল।”

রৌদ্র স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আরশির অস্থিরতা দেখছে। আরশির রৌদ্রর কাছ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বলল-

“আপনি এখানে এসেছেন কেন?”

রৌদ্র ছোট্ট করে উত্তর দিল।

“এমনি।”

“আচ্ছা তাহলে আমি যাই, আপনিও যান এখন।”

আরশি আর এক মুহুর্ত দেরি না করে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু তার আগেই রৌদ্রর ডাকে থমকে দাঁড়ালো।

“মিস আরু।”

আরশি পেছন ফিরে রৌদ্রর দিকে তাকালো। নিম্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

“কিছু বলবেন??”

রৌদ্র আরশির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো-

“এভাবে হুটহাট করে একা বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা যেন আর কখনো না শুনি।”

“আপনি একথা কিভাবে জানলেন??”

আরশি কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলো রৌদ্রকে। রৌদ্রর মুখের গম্ভীরতা আরও বারিয়ে বলল-

“আপনার ফ্রেন্ড কাসফিয়া আমাকে ফোন করেছিল। আমি আপনার সাথে কি না জানার জন্য।”

“ওহহ”

“আপনার ফোন কোথায়?? নিশ্চয়ই বাসায় ফেলে এসেছেন!! আজ কিছু বললাম না তবে নেক্সট টাইম যেন এমন বেখেয়ালিপোনা না দেখি। কথা গুলো মাথায় রাখবেন।”

রৌদ্রর এমন শক্ত গলা শুনে আরশি কিছু বলার সাহস পেল না। ভদ্র ভাবে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। রৌদ্র আরশির মাথায় হাত রেখে বললো-

“এখন যাও আর হ্যাঁ নিজের খেয়াল রেখো।”

রৌদ্রর আরশির মাথা থেকে হাত নামিয়ে নিতেই আরশি একটা মেকি হাসি দিয়ে বড়বড় পদক্ষেপ ফেলে চলে গেল। রৌদ্র আরশির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি। আরশি তার ফ্রেন্ডদের কাছে এসে বসতেই নীল জিজ্ঞেস করল-

“কিরে এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে! আর কার সাথে কথা বলছিলি ওখানে??”

আরশি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল-

“ডক্টর মানে চিঠির মানুষ আমার পাশের বারান্দা। আজ আর এসব নিয়ে কোনো কথা বলিস না। আমার এখন আর এসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।”

নীল কিছু বলতে গিয়েও বলল না। সবাই এসব বাদ দিয়ে অন্য আড্ডায় মেতে উঠলো।

——————————

আরশি বিছানায় শুয়ে অস্থিরতায় এপাশ ওপাশ করছে একটু পর পর। দু’দিন ধরে মনে হচ্ছে ঘুম তার সাথে প্রচন্ড অভিমান করেই চলে গেছে। এখন আর ঘুম দু’চোখের পাতায় ধরা দিতে চাইছে না। চোখের পাতা বন্ধ করলেই যেন রৌদ্রর বলা কথা, রৌদ্রর মুচকি হাসি আর গালের সেই অদ্ভুত টোল বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এসবের প্রতি ভয়াবহ বিরক্তি নিয়েই আরশি উঠে বসলো। পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে টাইম দেখলো। রাত একটা বেজে দশ মিনিট। আরশি টাইম দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। ফোনটা ছুরে বিছানার মাঝে ফেলে দিল। এতো রাত হয়ে গেছে অথচ ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছে না আরশি। রাগে গজগজ করে ওয়াশরুমে চলে গেল। চোখেমুখে বেশ কিছুক্ষন পানির ছিটা দিয়ে রুমে চলে আসলো। বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল। বারান্দায় এসে সর্বপ্রথম নজর পরলো মেঝেতে পরে থাকা নীল চিরকুটের দিকে। খুব আগ্রহের সাথেই চিরকুটটা নিয়ে পড়া শুরু করলো।

প্রিয় রুদ্রাণী,

জানো তো লজ্জায় যখন তোমার হলদেটে গাল গুলো লালচে বর্নের হয়ে ওঠে তখন তোমাকে একদমই রুদ্রাণীর মতো দেখায়। আর যখন তোমার আঙুল দিয়ে আমার গাল ছুঁয়ে দিলে তখন মনে হলো সত্যিই রুদ্রাণী রেগেছে। ভয়ংকর রেগেছে। আমাকে তার তপ্ত দাহনে ঝলসে দেওয়ার মতো ক্রোধ তার মনে জায়গা করে নিয়েছে। হুটহাট করে লজ্জায় শেষ বিকেলের শান্ত-শীতল রোদ আর কখনো রাগান্বিত হয়ে দুপুরের উত্তপ্ত সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করে ওঠো। রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণীর অনুভূতি গুলো মিছিল শুরু করে দিয়েছে। রুদ্রাণীর এই অনুভূতি গুলোর প্রধান কারন কি হতে পারে তোমার জানা আছে!!!

[বিঃদ্রঃ পাখিগুলো রুদ্রাণীকে বড্ড মিস করছে। রুদ্রাণীর দেখা না পেয়ে সব গুলো পাখি চুপচাপ হয়ে গেছে। আপনি নিজের লজ্জাবোধ মনের এক কোণে লুকিয়ে রাখুন। যাতে করে আগের মতো বারান্দায় এসে পাখিগুলোর সাথে সময় কাটাতে পারেন। আমার নামে যত অভিযোগ আছে তা শোনার জন্য তো তারাই আপনার একমাত্র সঙ্গী। তাই তো পাখিটা কতো সুন্দর করে “অসভ্য” বলা শিখেছে।]

ইতি,
রৌদ্র

চিরকুটটা পড়েই আরশির হার্টবিট কয়েকটা মিস হয়ে গেল। বেসামাল হয়ে পরেছে তার মনের সকল অনুভূতি গুলো। লজ্জায় মিয়িয়ে যাচ্ছে আরশি। এ কেমন অনুভূতি!! আগে তো কখনো এমন হয় নি। আরশি নিজেকে সামলাতে পারছে না। এই নীল চিরকুট আর তার মধ্যে লেখা প্রতিটি লাইন, প্রতিটি অক্ষর খুব করে তাকে কাছে টানছে। আরশি রেলিঙের উপর হাত রেখে আকাশে দিকে তাকিয়ে পর পর কয়েকবার শ্বাস নিল। নিস্তব্ধ এই শহরে নিজেকে এখন মুক্ত পাখির মতো লাগছে। মনের মধ্যে চলছে হাজারো প্রশ্নের ছড়াছড়ি। কোনো প্রশ্নের উত্তরই আরশির জানা নেই।

——————————

ক্লাস শেষে বাহিরে আসতেই দেখলো রোদ্র দাঁড়িয়ে আছে। আরশি কাসফিয়াকে বলল-

“কাসফি তুই আদ্রাফের সাথে চলে যা। ডক্টর হয়তো আমাকে বাসায় পৌঁছে দিবে।”

“আচ্ছা তুই গিয়ে দেখ কি বলে।”

আরশি রৌদ্রর কাছে আসতেই রৌদ্র শান্ত গলায় বললো-

“চলুন আমার সাথে।”

“কোথায়??”

“এখন থেকে আপনি আমার সাথেই আসা যাওয়া করবেন। বেশি কথা না বলে এখন চলুন।”

আরশি কিছু বলার আগেই নীল আরশির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। এভাবে আরশিকে হাত ধরে নিয়ে যেতে দেখে রৌদ্রর চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ সংযত করার চেষ্টা করছে। নীল আরশিকে অডিটোরিয়ামের কাছে নিয়ে আসলো। আরশিকে তার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে গম্ভীর গলায় বললো-

“আশু তোর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।”

আরশি খানিকটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল-

“কি এমন ইম্পর্টেন্ট কথা যে তুই ডক্টরের সামনে থেকে আমাকে টেনে নিয়ে আসলি!! কি বলবি তাড়াতাড়ি বল দেরি হলে ডক্টর আবার আমাকে কথা শোনাবে।”

নীলের মুখের গম্ভীরতার রেশ আরও বেড়ে গেল। আরশির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।

চলবে….

[যত বড়ই করেই লেখি না কেন আপনারা বলেন “আরও বড় চাই” “ছোট হয়েছে”। প্রিয় পাঠকগণ একটু অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন তো কতটা বড় করে লিখলে আপনাদের মন ভরবে!!😒 ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here