রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
পর্বঃ৩০
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“কিরে বল কি বলবি। কি এমন ইম্পর্টেন্ট কথা আছে তাড়াতাড়ি বল।”
নীল গম্ভীরতার সাথে আরশির দিকে তাকালো। বড় করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে শক্ত গলায় বললো-
” আশু তুই আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবার খুব প্রিয়। আমাদের সকলেরই খুব ভালো ফ্রেন্ড তুই। আর আমি তোকে আমার অনেক কাছের একজন মানুষ মনে করি। কারন আমি তোকে কখনো নিলুর চেয়ে কম কিছু মনে করি নি। নিলু আমার কাছে যতটা ইম্পর্টেন্ট ঠিক ততটাই তুই আমার কাছে ইম্পর্টেন্ট। আমি চাই না তোর কোন ক্ষতি হোক। তাই যা করবি ভেবেচিন্তে করিস। এখন হয়তো মনে মনে তোর প্রশ্ন জাগবে যে আমি আমার নিজের বোনেরই খেয়াল রাখি না তাহলে তোর উপর কেন এতো শাসন করছি!! যদি এমন প্রশ্ন তোর মনে আসে তাহলে শুনে রাখ আমি নিলুর ব্যাপারে সব কিছুই জানি। নিলু কাকে ভালোবাসে, কখন কান্না করে, কখন ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েও হাসিমুখে ঘুরে বেড়ায় সবই আমি জানি। তবে কিছু বলিনা। কারন আমি জানি নিলুর সাথে আদ্রাফকে নিয়ে কথা বললে নিলু খুব বিব্রতবোধ করবে। তাই সব কিছু জেনেও চুপ করে আছি। কিন্তু আমি চাই না নিলুর মতো তুইও কষ্ট পাস। নিলুর মতো তুইও একা একা কান্না কর সেটা আমি চাই না। তাই আগে থেকেই সতর্ক করে দিচ্ছি।”
আরশি নীলের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে নীলের মুখে এমন কঠোর ভাবে কথা বলে শুনে। আরশি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। নীলের মতো দুষ্টু সব সময় হাসিঠাট্টায় মেতে থাকা ছেলেটার ভিতর এতো দায়িত্ববোধ!!! আরশি সন্দিহান কন্ঠে বলল-
“তুই এতো শাসন করা আর বোনদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা কবে থেকে শিখলি নীল??”
“নিলুর কষ্ট দেখে।”
নীল আরশির কাধে হাত রেখে শান্ত গলায় আবারও বললো-
“নিলুর কষ্ট দেখেছি এখন আবার তোর কষ্ট দেখতে পারবো না। আদ্রাফকে কিছু বলিনি কারণ নিলুর কষ্টের পেছনে ওর কোনো দোষ ছিল না। কিন্তু তোর ওই চিঠির মানুষের জন্য যদি কখনো তোকে একটুও কষ্ট পেতে দেখি তাহলে ভাবিস না উনি আমাদের বড় বলে ওনাকে আমি ছেড়ে দিব। আমি সব সময় চেয়েছি তোকে আর নিলুকে ভালো রাখতে কিন্তু আমি পরপর দু বার ব্যর্থ হয়েছি। তোকে আমি ওই নরপশুর কাছ থেকে রক্ষা করতে পারিনি আর নিলুকে ওর ভালোবাসার মানুষ এনে দিতে পারিনি। আমার এই ব্যর্থতা আমাকে ভিতর ভিতর কুড়ে খাচ্ছে আশু। একজন ভাই হয়েও আমি কিছু করতে পারলাম না। জানিস তোদের বাসা থেকে আসার সময় আংকেল আন্টি আমার হাত ধরে বলেছিল আমি যেন তোর খেয়াল রাখি। আমি সেদিন খুব বুক ফুলিয়ে বলেছিলাম আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তোর খেয়াল রাখবো। তাই তোকে সতর্ক করে দিচ্ছে। ওই লোক যদি তোর সাথে কোনো প্রকার খারাপ ব্যবহার করে তাহলে তুই সবার আগে আমাকে জানাবি। আর আমার কাছ থেকে যদি কোনো কিছু লুকিয়ে রাখিস তাহলে একটা থাপ্পড়ও মাটিতে পরবে না মনে রাখিস।”
আরশি ঘাড় বাকিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে গোমড়া মুখে বলল-
“ইশশ আসছে আমাকে হুমকি দিতে!! তোর সাহস কি করে আমাকে এভাবে হুমকি দেওয়ার?? আমার আপন ভাই থাকলেও হয়তো এতো কড়া শাসন করতো না। তুই নিজের চেহারাটা দেখেছিস একবার!! তুই নিজেই একটা বাচ্চা পোলাপান তুই আবার আমাকে শাসন করিস কিভাবে??”
নীল রাগান্বিত চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠে বলল-
“আরেকটা ফালতু কথা বলবি তো এক থাপ্পড় খাবি। চুপ থাক বেয়াদব মাইয়া।”
রৌদ্র আরশিকে খুঁজতে খুঁজতে অডিটোরিয়ামের দিকে এসে পরেছে। নীল আর আরশির সব কথাই রৌদ্র আড়াল থেকে শুনে ফেলেছে। নীলের কথা গুলো শুনে রৌদ্রর মুখে আপনা আপনিই হাসি ফুটে উঠলো৷ রৌদ্র ওদের দিকে এগিয়ে না গিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওখান থেকেই চলে আসলো। আরশি নীলের সাথে কথা বলে রৌদ্রর কাছে ফিরে আসলো৷ হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিদের মতো ফোনে কথা বলছে রৌদ্র। আরশি সরু চোখে রৌদ্রর কথা বলার ভঙ্গিমা পরোক্ষ করছে। রৌদ্র আরশিকে দেখে চোখের ইশারা সাথে আসতে বলেই হাঁটা শুরু করলো। আরশিও রৌদ্রর পেছন পেছন চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে। ভার্সিটি থেকে বের হতেই রৌদ্র কানের কাছ থেকে ফোন নামিয়ে পকেটে রেখে দিল। আরশির দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল-
“তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠুন আমাকে এখনই হসপিটালে যেতে হবে।”
“তাহলে আমি কেন যাবো আপনার সাথে??”
“আপনিও আমার সাথেই হসপিটালে যাবেন। আমি আমার কাজ শেষ করেই আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিব। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি আমার কেবিনে বসে অপেক্ষা করবেন। এখন আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে বসুন।”
আরশি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে বসে পরলো।
—————————
“কাসফি তোর কাছে ঐ ডক্টরের ফোন নাম্বার আছে??”
“হ্যাঁ আছে কিন্তু তুই কি করবি??”
কাসফিয়া কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলো। নীল নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিল-
“ডক্টরের ব্যাপারটা আমার বেশ সুবিধার মনে হচ্ছে না। তাই ওনার সাথে দেখা করবো।”
কাসফিয়া ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন ভাবলো। চিন্তিত গলায় বললো-
“আমারও কেমন যেন লাগছে। মানে উনি কখনো বাবা হতে পারবে না বলেই কি আশুর সব কথা জেনেও মেনে নিয়েছে না-কি সত্যি সত্যিই আশুকে পছন্দ করে তাই মেনে নিয়েছে!! এই ব্যাপারটাই বুঝতে পারছি না আমি।”
নীল গম্ভীর গলায় বললো-
“হুম সেটা জানতেই দেখা করবো ওই লোকের সাথে। তুই আরশিকে এসব নিয়ে কিছু বলিস না।”
“চিন্তা করিস না আমি আশুকে কিছু বলবো না তবে তোর সাথে আমিও যাবো।”
নীল ভ্রু বাঁকিয়ে সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল-
“তুই গিয়ে কি করবি!!”
“কি করবো মানে কি!! আশু একটা মানুষের প্রতি দিন দিন দুর্বল হয়ে পরছে আর আমি সেই মানুষটার সম্পর্কে সব কিছু জানবো এটাই তো স্বাভাবিক। ডাক্তারের ব্যাপারটা এতদিন স্বাভাবিক মনে হলেও এখন আমার কেন যেন কিছুটা খটকা লাগছে। তাই আমি নিজে ওনার সাথে কথা বলতে চাই আশুকে নিয়ে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুই নিজেই ওনাকে ফোন করে বলিস কাল দেখা করতে। এখন আমি যাই নিলু হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“ওকে যা।”
নীল বেঞ্চি থেকে উঠে দ্রুত পায়ে চলে গেল। কাসফিয়া চুপচাপ বসে আছে একা একা। আদ্রাফ কিছু একটা কাজের জন্য স্যারের সাথে কথা বলতে গেছে তাই বসে বসে আদ্রাফের জন্য অপেক্ষা করছে।
——————————
প্রায় পনেরো মিনিট ধরে রৌদ্রর কেবিনে অপেক্ষা আরশি। রৌদ্র সেই যে পনেরো মিনিট আগে আরশিকে বসিয়ে দিয়ে গেছে এখনো তার আসার কোনো নামগন্ধ নেই। আরশিকে রৌদ্র নিজের চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে আরশি এখনো সেইভাবেই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। খানিকটা সময় পর রৌদ্র কেবিনে এসে আরশির সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
“সরি একটু দেরি হয়ে গেল। আপনি নিশ্চয়ই বোর….”
“ভাইইইই এটা তোমার পাশের বারান্দার মেয়ে না??”
আচমকা নির্বানের কথা শুনে আরশি আর রৌদ্র দুজনেই চমকে উঠলো। আরশি জড়োসড়ো হয়ে মাথায় নিচু করে ফেলল। অভ্যাসগত ভাবেই অস্বস্তিতে হাত কচলাতে লাগলো। রৌদ্র কিছু বলার আগেই নির্বান কেবিনের দরজা থেকে এগিয়ে আসলো। প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়েই আবার বলল-
“কি হলো কিছু বলছো না কেন!! উনি তোমার চেয়ারে বসে আছে কেন??”
রৌদ্র গম্ভীর গলায় বললো-
“তোর এতো কিছু না জানলেও চলবে।”
নির্বান সন্দেহের দৃষ্টিতে কিছুক্ষন আরশি আর রৌদ্রকে দেখে বলল-
“ভাই!!! তোমরা নিশ্চয়ই প্রেম করছো তাই না!! আর এই কারনেই তুমি একা একা হাসতে, অদ্ভুত আচরণ করতে!! আমাকে আগে বললে না কেন?? তুমি এটা ঠিক করলে না ভাই।”
নির্বানের কথায় আরশি বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। নির্বান আবারও হতাশ হয়ে বলল-
“ইশশ ভাই তুমি জানো আমি প্রথম দেখেই ওনার উপর ক্রাশ খেয়েছিলা। আর তুমি শেষে কি-না আমার ক্রাশের সাথেই প্রেম শুরু করলে?? ভাই তোমার কি একটুও কষ্ট লাগলো না তোমার ছোট্ট ভাইয়ের এই ছোট্ট একটা ক্রাশকে চুরি করতে!! আর এই যে কি যেন নাম আপনার বলেছিলেন!! আরশি?? তুমি এটা একদমই ঠিক করলে না। চিঠি আমি লিখে দিলাম কিন্তু আমার প্রেমে না পরে তুমি আমার এই গম্ভীর ভাইয়ের প্রেমে পরলে কিভাবে??”
নির্বানের কথা শুনে আরশির জান যায় যায় অবস্থা। এই ছেলে ইচ্ছে করেই তাকে লজ্জায় ফেলছে সেটা আরশির আর বুঝতে বাকি রইলো না। রৌদ্র নির্বানের পিঠে জোরে একটা চাপড় মেরে বলল-
“নির্বান দুষ্টামি বন্ধ কর। নাহলে এক্ষুনি মামার কাছে ফোন করে বিচার দিব।”
“হুহ্ তুমি কি বিচার দিবে!! আমি নিজেই আরশির শাশুড়ীকে ফোন করে সব কিছু বলে দিব।”
রৌদ্র নির্বানের কান ধরে টান দিতেই নির্বান চেচিয়ে বলে উঠলো-
“আরে ভাই ব্যথা পাচ্ছি তো। ছাড়ো প্লিজ। আচ্ছা আর কিছু বলবো না।”
রৌদ্র নির্বানের কান ছেড়ে দিয়ে বলল-
“আবার এসব আজেবাজে কথা বলা শুরু করলে তোর কপালে মাইর আছে।”
নির্বান মিনমিনিয়ে বলল-
“আমি তো আমার ভাবির সাথে একটু মজা করছিলাম। উনি যে কি পরিমান লজ্জা পায় তা তো আমি প্রথম দিন বুঝে গিয়েছিলাম। ওইদিন লজ্জায় তাড়াহুড়ো করে আমার সামনে থেকে পালিয়ে গিয়েছিল তাই আজ একটু সুযোগ পেয়েছি তার লজ্জা কাটানোর। দেখো ভাই এখনো কিভাবে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। ভাই তুমি কি সত্যিই এই বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করো না কি!!!”
নির্বানের কথা শুনে আরশির মনে হচ্ছে এখানে আসাই তার জীবনের বড় ভুল। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হবে জানলে কখনই এখানে আসতো না। আরশি লজ্জায় মাথা নুয়ে রেখেছে। আর হাত কচলাতে কচলাতে হাত লাল করে ফেলেছে। রৌদ্র আরশির দিকে তাকিয়ে আরশির এমন অবস্থা দেখে নির্বানকে ধমকের স্বরে বললো-
“নির্বান চুপ কর তো। আর মিস আরু আপনি তো মনে হচ্ছে এখনই হাতের চামড়া উঠিয়ে ফেলবেন মনে হচ্ছে।”
চলবে…
[দুঃখিত। অসুস্থ থাকায় আজ গল্প দিতে দেরি হয়ে গেল। আর আজকের পার্ট অনেক অগোছালো করে লিখেছি জানি। এই জন্য সবাইকে সরি। রিচেক করা হয়নি হয়তো অনেক ভুল হবে। ভুলের ক্ষমা করবেন।]