#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ৪৮
-প্রথম অংশ
১১৭.
মন ভাঙার মতো কষ্টকর কিছু হয়তো এই পৃথিবীতে আর দু’টো নেই। কতো আশা স্বপ্ন নিয়ে এই এয়ারলাইনসের জব নিয়েছিলো এইজি। জব নেওয়ার সপ্তাহখানেক একজন সৌষ্ঠবপূর্ণ এক পুরুষের পেছনে ঘুরেফিরে আজ সব শেষ হলো তার। শুধুমাত্র তেহভীনের জন্য নিজের বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে জব নিয়েছিলো। কিন্তু লোকটা অঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে তিন’বছরের জন্য অন্য ইন্টেরনাল এয়ারপোর্টের অধীনে ট্রান্সফার হয়ে গেলো।কথাটা যতবার মনে পড়ছে,ততবার কান্নার বেগ বাড়াচ্ছে এইজি। যেমনটা মূল্যবান,অথবা প্রিয় জিনিস হারিয়ে কেউ কাঁদে। এইজি মি.মেথেউ এ্যাসপোর্ডের দিকে চেয়ে বললেন,
— ক্যাপ্টেন ট্যাহবিন কেন এমনটা করেছেন আঙ্কল।
কোথাও ট্রান্সফার হওয়ার আগে জানায়নি আপনাকে?
মি.মেথেউ এ্যাসপোর্ড অত্যন্ত দুঃখের সাথে বললেন,
— স্যরি ডিয়ার। এ বিষয়ে টেহভীনের সাথে মিউচুয়েল কোন আলাপ আমার সাথে হয়নি।সাডেনলি,অফিসার্সদের সামনে ট্রান্সফার লেটার দেওয়াতে আমি আলাদাভাবে কিছু বলে তাকে আটকাতেও পারিনি। এক্সট্রেমলি স্যরি!
এইজি চুপচাপ বসে থাকলো।মি.মেথেউ এ্যাসপোর্ড বললেন,
— তবে তুমি চায়লে থ্রী ইয়ার অপেক্ষা করতে পারো আমার সনের জন্য।
—- ইম্পসিবল আঙ্কল! আই কান’ট!
বলেই বসা থেকে উঠে চলে গেলো এইজি। অনেকটা সময় পর চাপা দীর্ঘশ্বাসের উত্তাপটা হালকা মনে হলো মি.মেথেউ এর। টেহভীন তার চোখে বেঁধে রাখা কলো পট্টি উন্মুক্ত করে বুঝিয়ে দিলো। প্যারেন্ট’স দের বিপরীতে তাদের ও চাওয়া-পাওয়া,ভালো লাগা আছে।যা চাইলেও সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না।এইজিকে তেহভীনের জন্য পছন্দ করেছিলেন মি.মেথেউ। লাইফটা এমনি,হিসেব বরাবর কোন কিছুই সময়মতে হয়না।
১১৮.
ক্যালিফোর্নিয়ার ইন্টেরিয়ার সিটি হচ্ছে ‘সান ফ্রেন্সিকো’। আর সান ফ্রেন্সিকো-র এয়ারপোর্ট,’সান ফ্রেন্সিকো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে’ তিন বছরের চুক্তিতে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োজিত হয়েছে তেহভীন। এটাকে একপ্রকার গেস্ট ক্যাপ্টেনও বলা হয়।যিনি বছর কয়েকের জন্য নিজের স্থায়ী কর্মস্থান রেখে অন্য দেশ বা জেলায় এসে নিজে কার্যক্রম চলমান রাখেন। তেহভীনও হুট করে কাউকে না জানিয়ে ট্রান্সফারের আবেদন করে ফেললো। আবেদনপত্রে সম্মতিসূচক সিল পড়তেই, নিজেকে ঘুটিয়ে নিয়ে চলে এলো প্রিয়তমা স্ত্রী’র শহরে। বেশ কয়েক দিন সিলিভিয়ার সাথে যোগাযোগ হচ্ছেনা তেহভীনের। অন্যসময়, অর্থাৎ বিয়ের পূর্বে তেহভীনকে হাজার ফোন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যেতো না।অথচ আজ, সে নিজেই ধুঁকে ধুঁকে মরে প্রিয়তমার অস্তিত্বের খোঁজে নিজ শহর রেখে এই শহরে চলে এলো। ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে সিলিভিয়ার এপার্টম্যান্টে যেতে মোট সময় লাগে এক ঘন্টা চুয়াল্লিশ মিনিট।এতেই এনাফ তেহভীনের জন্য।অন্তত একসপ্তাহ পর তো দেখা হয়ে যাবে।সবচেয়ে বড় কথা যখন ইচ্ছে দেখা করা যাবে।
এক সপ্তাহ পর আজ তেহভীন সিদ্ধান্ত নিলো সিলিভিয়ার সাথে দেখা করতে যাবে ‘রিভিরিয়া এপার্টম্যান্ট।
ডোরবেল বাজতেই দরজা মেলে দাঁড়ালো তানজিদ। দরজার বাইরের কঠিন মুখো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তেহভীনকে দেখে অনেকটা অবাক হলো সে। তেহভীন নিঃশব্দে ভেতরে প্রবেশ করলো,এবং ক্লান্ত শরীরে সোফায় গিয়ে বসে চোখজোড়া বন্ধ করলো। তানজিদ ক্ষীণ হেসে বললো,
— কি ব্যাপার বলো তো। মাসের ভেতরে
এতো এতো ছুটি নিচ্ছো কিভাবে তুমি?
তেহভীন বন্ধ করে রাখা চোখজোড়া মেলে তানজিদের দিকে চাইলো। এরপর বললো,
— ছুটি নয়,ট্রান্সফার নিয়েছি।
এখন থেকে তোমার সাথেই থাকছি।
তানজিদ তেহভীনের কথায় উৎকন্ঠিত হয়ে বলল,
— ওয়াও! দ্যা গ্রেট ফাদার’স বয় তেহভীন,লাস্ট টাইম তুমি কি বলেছিলে? তোমার ভালোবাসার জন্য তুমি ড্যাডকে ছাড়তে পারবে না,কষ্ট দিতে পারবে ন।আমার মতো সেলফিস হবে না।এখন কি হলো?
— শাট-আপ ব্রো। আমি ড্যাডকে রাজি করে এসেছি। আমার হঠাৎ নেওয়া ট্রান্সপারে ড্যাড সম্মতি দিতে বাধ্য হয়।
তানজিদ স্মিত হেসে বললো,
— তোমার ট্রান্সফার হওয়ার রিজন কি তেহভীন?
— বিকজ, মাই হার্ট-বিলাভড ইজ হ্যিয়ার।
তানজিদ হাসলো ছোট করে। তার ভাইটা খুবই পাগল, বিশেষ করে ভালোবাসার মানুষদের সে পাগলের মতো ভালোবাসে। আর যাকে ঘৃণা করে তা পরিমাপ করা যায় না।কতোটা উগ্রময় হয়ে যায় তখন। তানজিদ টান টান হয়ে সোফায় বসে বললো,
— তোমার উচিত তোমার বিলাভড এর কাছে যাওয়া।এখানে কেন এসেছো?
তেহভীন পূনরায় কঠিন’মুখ করে বললো,
গিয়েছি,তাকে পায়নি। ক্যান ইউ ইমাজিন ব্রো,এখন রাত দুটো। অথচ সিলভার তার এপার্টম্যান্টে নেই। আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে। কোথায় যেতে পারে।
তানজিদ কপাল কুঁচকে বলল,
— সে ব্যাপারে তো আমি জানি না।
‘রাববিট বাস্কেট’ দিয়ে আসার পর তার সাথে
আমার আর কথা হয়নি।
তেহভীন ম্লানমুখে ফোনটা বের করলো। পূনরায় ফোন দিলো সিলিভিয়াকে। পূর্বের ন্যায় সুইচড ওফ্ফ আসলো। মন ভেঙে চুরমার হলো তেহভীনেরও। সিলিভিয়াকে সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো। তেহভীনের ম্লান মুখ দেখে তানজিদ বললো,
— আ’ম গ্যাটিং ম্যারেড তেহভীন।
ফোন থেকে চোখ তুলে তাকালো তেহভীন।চেহারায় একরাশ কৌতূহলের চাপ লক্ষ করে তানজিদ হাসলো।বললো,
— নেক্সট উইকে আমার মুভির লাস্ট সিনের শুটিং শেষ হতে যাচ্ছে,এরপরেই ওয়েডিং চেরেমনি। তোমার কাউকে ইনবাইট করার থাকলে করতে পারো।
— স্ট্রেঞ্জ ব্রো। এতো নরমালি কিভাবে বলছো,
আ’ম গ্যাটিং ম্যারেড? মম-সিস তাদের জানাওনি।
— জানিয়েছি। মমের সম্মতি আছে।
ইনফ্যাক্ট আমার উড’বিকে মমের বেশ পছন্দ হয়েছে। নেক্সট উইক মম আসলে সব কনফার্ম হবে।
তেহভীন থমথম মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
— হাহ! আমি বিয়ে করতে না করতে
তুমিও বিয়ে করার জন্য উতলা হয়ে যাচ্ছো৷
তেহভীন বলেই চলে যেতে লাগলো।তানজিদ পেছন থেকে গলা উঁচিয়ে বললো,
— উতলা আমি নয়,তুমি হয়েছিলে। বড় ভাইকে রেখে বিয়ে করে ফেলেছো।
তেহভীন প্রত্যুত্তর করলো না।তার মন-মেজাজের অবস্থা বেগতিক।যেকোন সময় উত্তপ্ত বোম ব্লাস্ট হয়ে যেতে পারে।
১১৯.
ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্ক হচ্ছে আমেরিকার জাতীয় উদ্যান।এটি সেন্ট্রাল ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিম সিরেয়া নেভাডায় অবস্থিত।দক্ষিণ-পূর্বে সিরেয়া জাতীয় উদ্যান এবং উত্তর- পশ্চিমে স্ট্যানিসলস জাতীয় উদ্যানে ঘিরে এটি পরিবেষ্টিত রয়েছে। পাশাপাশি উদ্যান ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক হচ্ছে
আমেরিকার সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান।
আজ ইয়োসেমাইট পার্কে তানজিদের বাকি শুটিংয়ের কাজের সমাপ্তি ঘটে। আজ ফ্রাইডে। সিলিভিয়া তখন একপাশে দাঁড়িয়ে ইয়োসেমাইট পার্কের সবচেয়ে মেজর আকর্ষণ লোয়ার ইউসেমাইট জলপ্রপাত দেখছিলো। তার থেকে কিছুটা দূরে তানজিদ আর জাইমা। বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। মনে মনে তেহভীনকে ভীষণভাবে মিস করছে সিলিভিয়া।না জানি কেমন আছে সে? অথবা,তার খেয়ালও নেই সিলিভিয়া তাকে না জানিয়ে এখানে এসে ঘুরাঘুরি করছে। জানলে নিশ্চয় রেগেমেগে ফায়ার হয়ে যাবে। জলের স্রোত থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তানজিদ আর জাইমার দিকে ছুঁড়লো। ভীষণ আনন্দে দেখাচ্ছে এই কপোত-কপোতীকে৷ সিলিভিয়ার তোড়েই তানজিদের সাথে জাইমার আলাপ হয়।সে আলাপ বন্ধুত্ব পর্যন্ত।আর আজ এখন,এই মুহূর্তে তারা একে অপরের বাগদত্তা।
তায়্যিবা কিছুদিন তেহভীনের থেকে সিলিভিয়াকে আঁড়াল হয়ে থাকতে বলেছিলো। যাতে তেহভীনের ভালোবাসাটা পরিমাপ করা যায়। কিন্তু সিলিভিয়ার এসবের কোন প্রয়োজন ছিলো না। সে জানে তেহভীন তাকে কতোটা ভালোবাসে।এদিকে তেহভীন না জানি ফোন না তুলায় কোন অকাণ্ড ঘটাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, বেবি নিয়ে মহা একটা ঝামেলা বাঁধাবে নিশ্চয় সে। নাকি কিছুই বলবেনা। এবার শাস্তিটা মওকুফ করা যাক। মনে মনে এসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সারি সারি গাছ এবং গাড়ির ফাঁক দিয়ে একজন এদিকে আসতে দেখলো সিলিভিয়া। মানুষটির অবয়ব স্পষ্ট হতেই ভড়কে যায় সিলিভিয়া। দু’কদম পিছিয়ে গেলে পাথরের সাথে পায়ে ব্যাথা পেলো। তারপরও আতঙ্কিত মন নিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। তেহভীনের চেহারা দেখে মায়া হলে ভীষণ।কিন্তু একমাত্র শাশুড়ির কথার অবাধ্য হওয়ার সাহসও তার নেই। তেহভীন এগিয়ে এসে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো। সিলিভিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
— ফাস্ট মিস্টেকটা করলে এই টাইমে ওয়টার ফলস্ দেখতে আসা। সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মোমেন্ট হচ্ছে যখন রেইনবো উঠে।এখন শুধু হোয়াইট ওয়াটার দেখা যাচ্ছে,এনজয়েবল কিছু নয়। সেকেন্ড মিস্টেক,এখানে এসেও তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেই যাচ্ছো। ওয়াটার ফলস্ এর কাছে যাচ্ছো না। কাম…
এতোগুলো কথা এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে বলে ক্ষ্যান্ত হয়না তেহভীন।হাত ধরে এগোতো চাইলো সামনের দিকে। হঠাৎ সিলিভিয়া বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো। বলল,
— আ’ম স্যরি তেহভীন! আমি যাবোনা সেখানে,
আমার ভয় করে।
সিলিভিয়ার স্যরি বলার ধরণ দেখে হেসে ফেললো তেহভীন। স্যরিটা বলেছে সে এতদিনের করা অপরাধের জন্য,শেষের লাইনটা শুধুমাত্র বাক্যপূর্ণের জন্য। তেহভীন কিছু না বলে পূনরায় হাতটা টানলো।এবার সিলিভিয়া নিজেকে সামলাতে পারে না। তেহভীনের চওড়া বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো।সিলিভিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— আ’ম স্যরি।এক্সট্রেমলি স্যরি তেহভীন।
আশেপাশে অনেক মানুষজন নিজেরদের মতো সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত হয়ে আছে। আর তেহভীন ব্যস্ত হয়ে আছে নিজের মধ্যাকার রাগ,অভিমান,অস্থিরতা নিঃসৃত করতে। দু’টো সপ্তাহ পর সিলিভিয়া তার এতো কাছে। তেহভীনের কতোটা ভালো লাগছে সেটা সে বলে বুঝাতে পারবে না। যদিও তার মম কাজটা একদমি ঠিক করেছে। তেহভীনের সাথে ছোটবেলা থেকেই এমন করে এসেছেন তায়্যিবা। তেহভীন এলোমেলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা পছন্দের জিনিসগুলো লুকিয়ে তাকে কাঁদাত, একসময় বেশি পাগলামি করলে দিয়ে দিতো।কোন মা তার নিজের সন্তানের সাথে এমন করে? অথচ এসবের মাঝে তার মম একটা শিক্ষা দিতো তাকে। যে প্রিয় জিনিসের কদর করতে হয়,যত্নে রাখতে হয়,ভালোবাসতে হয়। আর নয়তো অবহেলা,অনাদরে মূর্ছে যায়।
তেহভীন এখন সর্বশান্ত হলেও,সিলিভিয়াকে দেওয়ার জন্য পার্সনাল পানিশমেন্ট থেকেই যায়। তেহভীন সিলিভিয়াকে পাঁজা কোলে তুলে নিতে চাইলে,সিলিভিয়া বাঁধা দেয়। হেঁটে যাবে বলতেই,তেহভীন সিলিভিয়ার হাত ধরে এগিয়ে গেলো ফলস্ এর দিকে।সকলের যখন দূর থেকে দেখতে ব্যস্ত,তেহভীন তখন সবাইকে উপেক্ষা করে সিলিভিয়াকে নিয়ে এগিয়ে গেলো। যাওয়ার পথে তেহভীন রাগান্বিত দৃষ্টি ছুঁড়লো তানজিদের দিকে। তানজিদের পরনে তখন শুটের কাস্টিউম। হাস্যকর ভঙ্গিমায় হাত তুলে সে বললো,
— মম ইজ অলওয়েজ মম!
— এন্ড এ চিটার ব্রাদার ইজ
অলওয়েজ দ্যা এলডার ব্রাদার।
তেহভীনের কথায় তানজিদ আর জাইমা হেসে ফেললো। জাইমার ভীষণ পছন্দ হলো তেহভীনের শেষ কথাটা।হোয়াট এ বিউটিফুল আর্গোমেন্ট৷মনে মনে এই প্রসংশাটা করলো জাইমা।
ভয়ংকর সুন্দর জলপ্রপাতের মধ্যে নিজেদের অদৃশ্য করে ফেললো তেহভীন। জলপ্রপাতের মোহনীয় সুদৃশ্যমান দৃশ্য দেখতে মত্ত সিলিভিয়ার পেছনে এসে দাঁড়ালো সে। বড়সড় একটা পাথরের উপর তাদের পা’জোড়া ঠাঁই নিয়েছে। মাথার উপর ঝপঝপ শব্দ তুলে জলপ্রপাতের পানি গড়িয়ে পড়ছে। পানি ভীষণ ঠাণ্ডা হাওয়ায় কয়েক মিনিটের মধ্যে শীত লাগতে শুরু করলো সিলিভিয়ার। তেহভীন সেটা বুঝতে পেরে সিলিভিয়ার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে বললো,
— কাজটা তুমি একদম ঠিক করো নি সিলভার।
সিলিভিয়া শীতল চোখে তাকিয়ে থাকলো তেহভীনের মুখের দিকে। চেহারায় বিষাদপূর্ণ আমেজ। কম্পিত হাত তুলে তেহভীনের গালে রেখে বললো,
— আ’ম স্যরি।
— ইট’স অলরাইট!
তোমাকে দেখার পর রাগ চলে গেছে।
এতদিন মনে হয়েছিলো তোমাকে হাতের
কাছে পেলে একদম মেরে ফেলবো।
বলে তেহভীন হাসলো। সিলিভিয়া মাথা নিচু করলো। মিঁইয়ে যাওয়া স্বরে বললো,
— আমরা এখনে,কিভাবে জেনেছো?
— জানিনি! তবে আমার সেন্স বলছিলো
তুমি আমার ব্রাদারের সাথে আছো। যখন শুনলাম
ব্রাদার লাস্ট সিনের শুটিংএ তার ফিয়ন্সে কে নিয়ে আসবে,তখনি সন্দেহ হলো। দ্যান ব্রো কে ফলো করে এখানে চলে আসলাম।
— কিন্তু আমর এখানে এসেছি আজ তিনদিন,
তুমি…?
—- আমি এখানে আসিনি, এন্ট্রি গেটের আগে ইয়োসেমাইট ভেলী পর্যন্ত এসেছিলাম।তোমাদের এখানে দেখে ফিরে গিয়েছি।কারণ আমার ডিউটি ছিলো।
কপাল কুঁচকে সিলিভিয়া জিজ্ঞেস করলো,
— কিসের ডিউটি?
তেহভীন এবার সিলিভিয়ার কোমড়ে হাত রেখে ঘনিষ্ঠভাবে কাছে টেনে এনে বললো,
— আমি লন্ডন থেকে চলে এসেছি তিনবছরের
জন্য। বিকজ,আই ক্যান্ট লিভ উইথআউট ইয়্যূ!
— হোয়াট? এটা কিভাবে পসিবল?
তেহভীন সিলিভিয়াকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘকায় কেশে ঠোঁট বুলিয়ে দিয়ে বললো,
— আমার জন্য পসিবল,ট্রান্সফার নিয়েছি। এন্ড ড্যাড আমাদের রিলেশনটা মেনে নিয়েছেন সিলভার। ফ্রম নাও উই আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট!
— ইম্প্রেসিভ সুইটহার্ট!
তোমার জন্য কিছুই ইম্পসিবল নয়,তাই না?
— ইয়েস সুইটহার্ট!
জলপ্রপাতের পাশে খানিকটা ফাঁকা জায়গায় সিলিভিয়াকে নিয়ে এলো তেহভীন, কয়েকদিন দূরত্বের কষ্ট ঘুচাতে হালকা আদূরে স্পর্শ দিয়ে নিজেকে ক্ষ্যান্ত করলো সে। সিলিভিয়া শুধু মৃদু সায় দিয়ে,নিজেকে সামলে রাখলো ছোটখাটো একটা টর্নেডো থেকে।
তেহভীন আর সিলিভিয়াকে রেখেই তানজিদ সবাইকে নিয়ে চলে গেলো ক্যাম্পে। তানজিদ ফ্রেস হয়ে চেঞ্জ করে তেহভীনের জন্য অপেক্ষা করবে।কারণ পাশেই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে প্রাচীন ঐতিহাসিক সৌন্দর্যের সবচেয়ে দৃষ্টিগোচর স্থান “মর্নিং গ্লোরি পুল’ আর ” আর্টিস্ট পয়েন্ট”। বর্ণময় মৃত্তিকার প্রোক্ষাপটে জলপ্রপাতের অসাধারণ দৃশ্য। সুদৃশ্যমান দর্শনীয় স্থানগুলোর দর্শন শেষে তারা সকলে ফিরে যাবে নিজেদের ব্যাক্তিগত জীবন গুছিয়ে নিতে।
(চলবে)
দুঃখীত দেরী হওয়ার জন্য…