#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ৪৭
১১৫.
তেহভীনের কথার অর্থ অনেক আগেই বের করতে পেরেছে সিলিভিয়া।কারণটা নিয়ে আর ভাবলো না সিলিভিয়া।মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে সাটার গেইট দিয়ে হেঁটে বের হলো সিলিভিয়া।হাঁটতে হাঁটতে ওয়েলগ্রীন’স’ গ্রোসারি সুপারশপে ঢুকলো।সেখান থেকে প্রয়োজনীয় গ্রোসারি আইটেম কালেক্ট করে বেরিয়ে ডুরেন্ট ওয়ে থেকে ডিওয়াইট ওয়ে দিয়ে সোজা চলে আসলো ‘রিভারিয়া এ্যাপার্টমেন্টের সামনে। কিন্তু গেটের সামনে একটা কালো গাড়ি দাঁড়ানো দেখে অবাক হলো সে, সাথে আরো অবাক হলো
তেহভীনকে দেখে!
হঠাৎ ওহ নো, শিট।’ বলে নিজেকে গালমন্দ করলো সিলিভিয়া।তেহভীন নয় তানজিদ হবে। হুডি দ্বারা মাথা আড়াল করে রাখা তানজিদেরই ফ্যাশন।ভক্তদের দৃষ্টি এড়াতে এই পন্থা অবলম্বন করে সে।তরুণীদের বুকে ঢেউ তুলে দেওয়ার মতো আকর্ষণীয় চেহারা আছে তার। সবচেয়ে বড় কথা, তেহভীনের সাথে ফ্লাইট জার্নি করার সময় দেখলো,অনেকেই তেহভীনকে মি.ট্যানজিড, মি.ট্যানজিড বলে ডাকতে থাকতো। পরে তেহভীনই তাদের ভুল ধারণাটা ভেঙে দিতো। তবে সিলিভিয়া মনে মনে চুপসে যায় না।কারণ তার প্রিয়তম স্বামীও কোন একদিন তাগড়া যুবক বয়সে একটা রোমাঞ্চকর ফিল্মে কাজ করেছে।যদিও সম্পূর্ণ ছদ্মবেশে।তাতে কি?সিলিভিয়ার বিচক্ষণ দৃষ্টি তেহভীনকে চিনে নিলো।
সিলিভিয়াকে এগিয়ে আসতে দেখে মৃদু হেসে তানজিদ এগিয়ে এলো। আশেপাশে মানুষ নেই।এই এলাকায় লোকজনের সমাগম একটু কম। তাই তানজিদের চেহারা উন্মুক্ত রাখতে কষ্ট হয়নি। সিলিভিয়ার সামনে এসে তানজিদ বাংলায় বললো,
— ভালো আছো তুমি?
সিলিভিয়া হালকা হেসে বলল,
— অনেক ভালো,আপনি?
— আমিও ভালো আছি। এটা নাও!
বলেই তানজিদ হাতে থাকা ছোট ছোট সাদা দেখতে মুক্তাপাথরের ন্যায় তৈরি একটা মাঝারি সাইজের ব্যাগ এগিয়ে দিলো।সিলিভিয়া কৌতূহলী হয়ে ব্যাগটা হাতে নিলো।হঠাৎ তার দৃষ্টি বিস্ময়কর আনন্দে জ্বলে উঠলো। ছোট ছোট রং-বেরঙের খরগোশ। যেগুলো ‘রেডউড ন্যাশনাল পার্কে’ দেখে পাগলের মতো পিছুন পিছুন ছুটেছিলো। চঞ্চল দৃষ্টির মনমাতানো হাসি জায়গা পেলো ওষ্ঠকোণে। তানজিদ সিলিভিয়ার হাসিমুখ দেখে স্বস্তিময় হাসলো। বললো,
— যাক, তুমি খুশী হয়েছো দেখে আমারও ভালো।লাগছে।বাট ধন্যবাদটা তুমি তেহভীনকে দিয়ো।তোমার সব পছন্দের কথা তার খেয়াল থাকে।
সিলিভিয়া ঠোঁটের কোণে হাসির ছটা বজায় রেখে বললো,
— আমিই চেয়েছিলান।গ্রীন ফরেস্টের মধ্যে এই কালারফুল খরগোশ দেখতে ভীষণ সুন্দর লেগেছিলো।
গ্রীন ফরেস্টের কথা শুনে হঠাৎ তানজিদের একটা কথা মনে পড়লো।তাই তানজিদ বললো,
— বাই দ্যা ওয়ে, আমার পরবর্তী শুটিং স্পট ইয়োসেমাইট পার্কে।খুব সুন্দর একটা জায়গা। তুমি যাবে?
সিলিভিয়া প্রস্তাবটা শুনে মৌন থাকলো।সেটা দেখে তানজিদ বললো,
— তুমি যেতে চাইলে আমি তেহভীনকে রাজি করাতে পারি। আসলে ভিনদেশী মানুষের ভীড়ে বাংলা ভাষাটা চর্চা হয়না অনেকদিন।তোমাকে সাথে নিবো শুটিংয়ের ফাঁকে আড্ডা দেওয়ার জন্য।
সিলিভিয়া বললো,
— এলসা যাবে?
এলসার কথা শুনে তানজিদ চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেল বললো,
— এলসার সাথে আমি ডিসকানেকটেড
বহুমাস আগেই।
সিলিভিয়া অবাক হতে গিয়েও হলো না। হালকা হাসলো শুধু। বললো,
— ঠিকাছে,আমি যাবো।তবে আমি সঙ্গে আমার একটা ফ্রেন্ডকে নিতে চাই।
— অফকোর্স নিতে পারো।ইনফ্যাক্ট আমিই বলতাম এ কথা তোমাকে। আচ্ছা আমি তাহলে আসি।ভালো থেকো।
সিলিভিয়া সৌজন্যবোধ রক্ষা করতে বললো,
— ভাইয়া উপরে চলুন।লাঞ্চ করে তারপর যান।
তানজিদ ঈষৎ হেসে হাত বাড়িয়ে স্নেহশীল স্পর্শ দিলো সিলিভিয়ার মাথায়। বললো,
—- আজ নয় সিস্টার।
সিলিভিয়ার খুব ভালো লাগলো তানজিদের আচরণে।একটুর জন্য মনে হয়েছিলো তানজিদ তার নিজের ভাই,ঠিক যেনো সায়মনের অনুরূপ।সিলিভিয়া হেসে বললো,
— ইয়োসেমাইট পার্কে কখন যাবেন?
— আরো দুই সপ্তাহ পর।তোমাকে আগে জানিয়ে রাখলাম। আমি যাওয়ার আগের দিন তোমাকে ইনফর্ম করবো।এখন আসি।
তানজিদ বিদায় নিয়ে গাড়ি চেপে চলে গেলো। সিলিভিয়া সেদিক থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ব্যাগটার দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করলো।কি অদুরে এই খরগোশ গুলো। সিলিভিয়ার নিজের খুশীর আমেজটা ঠোঁটের প্রাণবন্ত হাসি এবং প্রশান্তির নিঃশ্বাস দিয়ে জাহির করলো। সময়টা কিশোরী বয়সের হলে উচ্ছ্বসিত মনে লাফাতো।খিলখিল হেসে খুশীর আমেজটা ধরে রাখতো।এসব ভেবে সিলিভিয়া পথ বাড়ালো নিজের গন্তব্যে।
১১৬.
তেহভীন খেয়াল করলো তার পেছন পেছন কেউ আসছে। লিফটের দরজা মেলে ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে কেউ একজন হন্তদন্ত পায়ে প্রবেশ করলো। তেহভীন ফিরে তাকিয়ে দেখলো কালকের সেই তরুণীটি। বিরক্ত হলো তেহভীন। ফেমেইল পারফিউমের স্মেল সে তেমনটা সহ্য করতে পারে না।সেটা যদি প্রয়োজনের চাইতে মাত্রাতিরিক্ত হয়।সিলভার আর তার সিস্টারও পারফিউম কতো স্মুথলি ইউস করে।কিন্তু এতো এতো পারফিউম ঢালে না গায়ে। ডিজগাস্টিং!
তেহভীন ফোন হাতে নিয়ে ফোনের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।এইজি তেহভীনের ইগনোর দেখে অস্থির হয়ে উঠলো।তার ড্যাড বলেছিলো তেহভীনের সাথে কথা তাদের রিলেশনটা কনফার্ম করে দিবেন। কথা কি এখনো বলেনি? এইজি প্রচণ্ড অস্থির হয়ে তেহভীনের কাছাকাছি এগিয়ে গেলো। তেহভীন তারপরও নিশ্চিুপ রইলো।বুঝতে পারলো সে একটা অপ্রিতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। এইজি আরেকটু দূরত্ব ঘুচাতে যাচ্ছিলো।তৎক্ষণাৎ তেহভীন তার ডার্ক-ব্লু ক্যাপ্টেন ইউনিফর্মে নিচে পরিহিত সাদা শার্টের নিচ থেকে একটা ‘দ্যা এফএন হাস্টেল’ গানটা বের করলো, যেটি খুবই দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই। যেটা তার ড্যাড তাকে দিয়েছিলো নিজের আত্মরক্ষার জন্য।কিন্তু এই মুহূর্তে একজন সামওয়ান ক্রেজি গার্ল থেকে নিস্তার পাওয়ার ক্ষেত্রে তেহভীন গানটা বের না করে পারলো না,এইজির দিকে তাক করলো। আচমকা তেহভীনের হাতে গান দেখে হকচকিয়ে যায় এইজি। সে মোটেও এমন কিছু আশা করেনি।শান্ত মেজাজি,সহাস্যপূর্ণ মানুষটির শ্বেতমুখ দেখে সে প্রেমে পড়েছিলো।কিন্তু এইজির এ মুহূর্তে মনে হলো তেহভীন কোন শান্ত মেজাজির মানুষ নয় বরং অত্যন্ত ভায়োলেন্ট একজন পুুরুষ।যার এলিগ্যান্ট পার্সনালিটি দেখে সে মুগ্ধ হয়েছিলো। কম্পিত শরীর নিয়ে পিছিয়ে এলো এইজি। কিঞ্চিৎ হেসে বললো,
— আই যাষ্ট ওয়ান্ট টু বি ইউর ফ্রেন্ড।
তেহভীন অত্যন্ত শীতল এবং তেঁজি স্বরে বললো,
— আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু,যাষ্ট স্টে এওয়ে।
লিফটের দরজা মেলতেই তেহভীন হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো। এইজি শক্ত পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে শুধু চলে যাওয়াটা দেখলো। তার জানা মতে সে তেহভীনকে একটুর জন্যও বিরক্ত করেনি।কথা অবধি বলেনি তাহলে রুড হওয়ার কারণটা কি ছিলো?
এইজি তারপরও হাল ছাড়লো না। দৃঢ়পায়ে তেহভীনকে অনুসরণ করতে লাগলো।
তেহভীন সোজা এসে অফিসে উপস্থিত হলো।তামান্নার কেবিনে গিয়ে তার পিসি অন করে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে টাইপ করলো। এরপর পেরিফেরাল যন্ত্রের সাহায্যে লেখাকে কাগজে চাপিয়ে নিলো। অতঃপর বেরিয়ে গেলো এয়ালাইন্স অসিফের সবচেয় সিনিয়র অফিসারদের কাছে। সকলে তখন একটা মিটিং এ ছিলো। তেহভীন সেখানে উপস্থিত হয়ে হাতে চাপানো কাগজের খামটা তাদের দিকে এগিয়ে দিলো। সিনিয়র অফিসার খামটা হাতে নিয়ে কাগজটা বের করে পড়লো। হঠাৎ তেহভীনের এমন সিদ্ধান্তে তাঁরা সকলে প্রচণ্ড বিস্মিত হয়।মানুষ শুধু শুধু কিছু করার স্বীদ্ধান্ত নেয় না।নিশ্চয় এর পেছনে ভালো-মন্দ কোন উদ্দেশ্য রয়েছে? তেহভীনের ক্ষেত্রে তারা শুধু ভালো দিকটা খুঁজলো। মি.মেথেউ এ্যাসপোর্ড পাশে বসে ছিলেন।ছেলের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের বিপরীতে কিছু করতে বা বলতে পারলেন না আজ,হাত-পা একদম বাঁধা অবস্থা যেমন।কারণ উনার কারণটা জানা আছে। এয়ার ভাইস মার্সাল’ ,চিপ মার্সালের দিকে চেয়ে চোখের পলকে সম্মতি দিয়ে দিতে বললেন।অতএব মি.মেথেউ এ্যাসপোর্ড নিজ হাতে ছেলের দেওয়া কাগজটিতে সই করে দিলেন। কারণ তেহভীনের দশবছরের চুক্তি সেই মাসখানেক আগেই শেষ হয়েছিলো। তার সিদ্ধান্তে আর ধরাবাঁধা নেই। তেহভীনের ঠোঁটের কোণে ফুঁটে উঠলো এক চমৎকার হাসি।
১১৬.
ফোনের জন্য সর্বদা ব্যাকুল হয়ে থাকা সিলিভিয়া গত কয়েকদিন ধরে তেহভীনের ফোনটা ধরছে না। তেহভীন এতোটা ধৈর্য নেই যে কাউকে এতক্ষণ লাগাতার ফোন দিয়ে যাবে।কিন্তু সিলিভিয়ার জন্য তাকে কমসে কম শতবার কল দিতে হলো। কিন্তু সিলিভিয়া তারপরও ফোন তুললো না দেখে তায়্যিবার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
— মম তুমি সিলভার কে তোমার প্ল্যানের
ব্যাপারে কিছু বলেছিলে?
তায়্যিবা তখন টিবিতে রাশিয়ান একসেন্টের নিউজ দেখছিলেন।তেহভীনের কথায় মনোযোগচ্যুত করে বলল,
— কোন প্ল্যান?
—- স্ট্রেঞ্জ মম! তুমি নিজেই একটা
ইম্পসিবল প্ল্যান আমার মাথায় ঢুকিয়ে,সেটাকে
সাকসেস করতে বলেছিলে।
তায়্যিবা পা টেনে আধশোয়া হয়ে বসে বললেন,
— প্ল্যান দিয়েছিলাম।পরে ভাবলাম কাজটা ঠিক হচ্ছে না। সিলিইভিয়া আমেরিকা এসেছিলো পড়াশোনার জন্য। কিন্তু এখন যদি সে কনসিভ করতে তাহলে ক্ষতিটা তার হবে। তাই আমি লস ভেগাসে থাকাকালীন সময়ে সতর্ক কর দিয়েছি।
তায়্যিবা বলেই টিবিতে চোখ রাখলেন।হতবিহ্বল তেহভীন মায়ের শত্রুতা দেখে আশ্চর্যান্বিত হয় খুব। একটা বেবি নেওয়ার প্ল্যান উনিই তার মাথায় সেট করে দিয়েছিলেন।কিন্তু শেষে আগেই সিলিভিয়াকে সতর্ক করে দিলেন।এখন সরাসরি দোষের তীরটা কার উপর এসে পড়লো।অবশ্যই তার দিকে,কারণ মেডিসিনটা সেই চেঞ্জ করেছিলো তার মমের কথা রাখতে। শিট!
তেহভীন অত্যন্ত করুণ কন্ঠে বললো,
— মম তুমি কাজটা ঠিক করো নি একদম।আমার মম হয়ে আমাকে আমার ওয়াইফের কাছে খারাপ বানিয়ে দিলে।
তায়্যিবা ঠোঁট চেপে হাসি আঁটকালো, এরপর বললো,
—- তুমি আর তামান্না রেডি থেকো সন্ধ্যায়।
বাইরে যাবো।
তেহভীন নিঃশব্দে চলে গেলো।যেতে যেতে সিলিভিয়ার ফোনে ফোন দিলো পূনরায়।আবারও আন-রিচিব্যাল। ক্রুদ্ধ হয়ে তেহভীন অস্পষ্ট কণ্ঠ বললো,
— আই উইল কিল ইউ সিলভার।যস্ট…
(চলবে)
রি-চ্যাক দেওয়া হয়নি,সময় নিয়ে এডিট করে নিবো। খুবই দুঃখীত।