লাভ রেইন পর্ব-৪

0
2560

#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ০৪

৮.
রাইসার কেক কাটার আয়োজন খুব সুন্দরভাবে শেষ হয়। গেস্ট বলতে সম্পূর্ণ এ্যাপার্টমেন্টের কিছু বাচ্চারা।যাদের বয়স রাইসার সমান। আর অন্যরা রাদিফের নানী,আর দুইজন খালা।রাদিফের ফুফির ফ্যামেলি তো আছে। আর সিলিভিয়ার হোম টিউটর হওয়ার আগে থেকে রুভাইয়াতের সাথে তার পরিচিত।তাই আলাদা স্নেহও করেন সিলিভিয়াকে।

সিলিভিয়া বসে আছে গেস্টরুমে বাইরে মানুষজনের মধ্যে থাকতে তার বেশ অস্বস্তি লাগছে সিলিভিয়ার। তলপেটের ব্যাথাটা আজ দ্বিগুন রূপ ধারণ করেছে। এই মুহূর্তে এমার্জেন্সি একটা হট ওয়াটার ব্যাগের অভাব অনুভব করছে সে। দুইমাস ধরে পিরিয়ড বন্ধ ছিলো সিলিভিয়ার। মাঝে মাঝে অস্বস্তিজনক ব্যাথায় কাতরাতে হয় হতো তাকে। আজ ব্যাথাটা সহ্যের বাইরে চলে গিয়েছে।

ফোন বের করে সময়টা দেখলো সবেমাত্র সাতটা।গেস্টরুমে রাদিফের নানী,খালারা বসে আছেন।সিলিভিয়া উপায়হীন হয়ে দৃঢ়ভাবে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। উদ্দেশ্য রুভাইয়াত আন্টিকে বলে সে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাবে। রাদিফকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এখন সেটা করাও সম্ভব নয়।লিভিং রুমে আরো কিছু অচেনা মুখ দেখে মিঁইয়ে যায় সিলিভিয়া। দাঁতের সাথে দাঁত চেপে কোনমতে দৃঢ়পায়ে এগিয়ে যায় দরজার দিকে।সকলে নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত। দরজা থেকে বেরিয়ে দেখা পেলো তেহভীনের বাবার।ভদ্রলোক সিলিভিয়াকে দেখে মৃদু হাসলো।সিলিভিয়াও প্রতিউত্তরে হাসলো।উনি ভেতরে চলে গেলেন।সিলিভিয়া ফোন বের করে রুভাইয়াতে ফোনে একটা মেসেজ দিয়ে দিলো।

তেহভীন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সিলিভিয়ার কার্যকলাপ লক্ষ করছিলো।রাদিফের রুম থেকে মূল ফটক মুখোমুখি অবস্থায় আছে।তাই যে কেউ যাতায়াত করলে সেটা অনায়াসে এখান থেকে বসে, দাঁড়িয়ে দেখতে পারবে। ঠোঁটে চাপ প্রয়োগ করে সে কিছু ভাবলো দু’মিনিট ধরে। এরপর ফোনটা পকেটে গুঁজে। ব্যাগ থেকে খুঁজে খুঁজে নিজের কালো রঙা হুডিটা বের করলো।অতঃপর দরজা দিয়ে সেও বেরিয়ে গেলো সিলিভিয়ার কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

সিলিভিয়া ততক্ষণে রাস্তায় চলে আসে।এখন গাড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা অটো পেয়ে গেলে হয়। এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়বে জানলে সে কখনো আসতো না।কিছুদূর পায়ে হেঁটে এগোলো সিলিভিয়া।তেহভীন বাইরে এসে দেখলো সিলিভিয়া অনেক দূর চলে পর্যন্ত চলে গেছে। তাই সে লম্বা পায়ে হেঁটে সিলিভিয়ার ধারে চলে গেলো।

— সিলভার! মিস,সিলভার লিসেন টু মি।

তেহভীনের কন্ঠস্বর শুনে সিলিভিয়া আচম্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। সিলিভিয়াকে দাঁড়াতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তেহভিন। মেয়েটা প্রচণ্ড অসুস্থ, দেখে বুঝা যাচ্ছে। তাই তেহভিন নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে ছুটে এসেছে। সিলিভিয়া তখনো তেহভীনের আগমন পথের দিকে চেয়ে আছে। তেহভিন এগিয়ে এসে হাতের হুডিটা এগিয়ে দিয়ে তার ভাষায় বলল,

— আমি জানি তুমি অসুস্থ। চলেন আপনাকে
বাসায় পৌছে দিচ্ছি।

সিলিভিয়া হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।কারণ তার গায়ে শাল আছে। তেহভিন সেটা দেখে বলল,

— আপনার কাপড়ে রক্ত লেগে আছে।এবং সেটা দৃশ্যমান।এটাকে গিট মেরে পড়ুন।

সিলিভিয়া হকচকিয়ে চোখ যায় তেহভীনের কথা শুনে। কয়েক কদম পিছিয়ে। কেমন আড়ষ্টভাব চলে আসলো হঠাৎ সিলিভিয়ার মধ্যে। তেহভিন সেটা আঁচ করতে পেরে বলল,

— ইট’স ওকে,আপনি বিব্রতবোধ করবেন না।

তেহভীন সিলিভিয়াকে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। পিরিয়ডের মতো সমস্যা টা তার জন্য নরমাল।তার বোনের ব্যাপারেও সে জানে। এমনতো নয় আমি উনাকে টিজ করছি। আই ওয়ান্ট টু হেল্ফ হার।’
তেহভীন চুপচাপ সিলিভিয়ার কাছে গিয়ে হালকা ঝুঁকে তার হুডিটা কোমড়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে এনে পেটের মাঝে আলতোভাবে গিট লাগিয়ে দিলো। এতে কামিজের উপর লেগে থাকা রক্তিম আভা আর দৃশ্যমান হবেনা। তেহভিন নিজেও একটা প্রশান্তির শ্বাস নিলো। এত কিছুর মাঝে নীরব স্রোতা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো সিলিভিয়া।চোখ দিয়ে পানি চলে আসে তার।এমন অকোয়ার্ড সিচুয়েশনে আজ প্রথম পড়েছে সে।নিজে আগে থেকে একটু সাবধান থাকতো আগে থেকে তাহলে এমন পরিস্থিতি হয়তো আসতো না কখনো।বাইরে থেকে যতেষ্ট শক্ত মেয়ে হলেও,আজ এই মুহূর্তে নিজেকে খুব দূর্বল মনে হচ্ছে সিলিভিয়ার। তেহভীন মৃদ্যু হেসে বলে,

— আই হেল্ফড ইউ এজ এ ফ্রেন্ড!
ডোন্ট বি প্যানিক। চলুন আপনার বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।

অনেক্ষণ পর সিলিভিয়া বলল,
— আপনি ফিরতে পারবেন? পথ চিনবেন।

— অবশ্যই চিনবো না।আপনি যাওয়ার সময় লোকেশন বলবেন তখনি চিনে নিবো। আপনি আসুন।

দু’জনের পায়ের গতি বাড়িয়ে সামনের দিকে ছুটলো।একজন অটোচালককে থামিয়ে অটোতে উঠে বসলো সিলিভিয়া। তেহভীন মাঝখানে বেশ দূরত্ব রেখে বসলো। সেটা দেখে সিলিভিয়ার আতঙ্কিত মনটা হালকা হলো একটু। হঠাৎ একটা প্রশ্ন মাথায় এসে ঠুকলো তার।তেহভীন তো তার পরিচিত কেউ নয়,তারপরও কেন সাহায্য করেছে। ফরেনার মানুষ গুলো কি এমনই হয়?নাকি তেহভীন ছেলেটা ব্যাক্তিগতভাবে ভীষণ দয়ালু এবং মানবতাবাদী। সিলিভিয়ার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো,সে বলল,

— আপনি আমাদের দেশে আগে এসেছিলেন?

— তোমাদের কান্ট্রিতে আমি অনেকবার এসেছি।প্রতিবার হলিডে এখানে এসে কাটিয়েছি।কিন্তু এবারে কোন হলিডে তে আসিনি আমরা।একটা সমস্যায় পড়ে হুট করে সবাইকে চলে আসতে হলো।

সিলিভিয়া একটু আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলো,

— কি সমস্যা?

তেহভীন প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলল,

— তুমি কিন্তু দেখতে খুব প্রিটি।তোমাকে প্রথমে যেদিন দেখেছি,সেদিন খুবি সুইট লেগেছিলো আমার কাছে।

অসহ্য ব্যাথার মাঝেও সিলিভিয়া তেহভীনের কথায় হাসলো।তেহভীন মজা করছে সেটা আন্দাজ করতে বেগ পেতে হয়নি সিলিভিয়াকে। প্রিটি লাগবে তো তাদের, যাদের গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা।শ্যামলা মেয়েদের আজকাল কেউ পছন্দ করেনা।আর তাকে নাকি প্রিটি লাগছে। হাস্যকর কথাবার্তা।

— আমার মতো মেয়েদের কখনো প্রিটি লাগেনা।বরঞ্চ গায়ের রঙ ময়লাটে বলে অখ্যায়িত করা হয়।

(বাকি অংশ কাল দিবো আজ অসুস্থবোধ করছি।জানিনা কি লিখেছি।পর্বটা অগোছালো লাগছে। লিখে ফেলেছি তাই আর এডিট করতে ইচ্ছে করছেনা)
গল্পটা লেখার সময় অনেক আগ্রহ ছিলো।এখন আর আগ্রহ পাচ্ছিনা।নাকি রাইটার্স ব্লকে আছি জানিনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here