লীলাবালি🌺 পর্ব-৮৩

0
1103

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৮৩
আফনান লারা
.
কুসুমের চুল থেকে একটা ঘ্রাণ আসছিল। তার ভাল করে জানা আছে এ কোনো শ্যাম্পুর ঘ্রাণ হতে পারেনা,এটা কুসুমের গায়ের নিজস্ব ঘ্রাণ যেটা কিনা ওর চুলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।প্রস্তুত হয়ে গেছে নোশা জাগাতে।
নেশা লেগেও গেলো বলে।
অর্ণব মুখটা এগিয়ে ওর চুলে ডুবিয়েছে।এ প্রথম কুসুমকে এমন করে ছোঁয়া,এমন করে তাকে কাছে টেনে নেওয়া,এক আলাদা অনুভূতি।
রাগ,ক্ষোভগুলো এতদিন এই অনুভূতি নিতে দেয়নি।দূরে ঠেলে রেখেছিল।
কুুসুমের চুল ভেজা ছিল বলে সেই ভেজা চুল অর্ণবের মুখটাকে ভিজিয়ে দিয়েছে।সেটা বুঝতে পেরে ওর চুল থেকে মুখ তুলে এবার তার শাড়ীতে মুখ মুছে নিলো সে।
কুসুম তাও ওর পঞ্জাবি ছাড়েনি।তার ধারণা অর্ণবের রাগ যাবেনা,আর তাই এখন একমাত্র উদ্দেশ্য রাগ ধুয়ে মুছে যাওয়া অবধি ধরে রাখবে।
শেয়ালের ডাকটা তীব্র আওয়াজে শোনা গেলো,অর্ণব ভয় পেয়ে পিছোতে গিয়েও পারেনি।কুসুম যে ওকে আঁটশাঁট করে ধরেছে আজ।ছাড়বেনা বলেই ধরেছে।ওর ধরে রাখায় ভয়টা কমলো বলতে একেবারে গায়েবই হয়ে গেছে।
অনেকটা সময় কেটে যাবার পরও যখন অর্ণব খেয়াল করলো ও ছাড়ছেনা কিছুতেই তখন সে বুদ্ধি করে তাকে কোলেই তুলে নিয়েছে।এবার দুহাত ছেড়ে দিয়েছে কুসুম।
কোলে নিয়ে নেবে এটা তার ভাবনার বাহিরে ছিল।হা করে সে ওর মুখের দিকেই চেয়ে আছে এখন।
অর্ণবের ঠোঁটের কোণায় কিঞ্চিত হাসি ভাসমান।তার হাসি বলে দিচ্ছে ও জিতেছে আর কুসুম হেরেছে।

‘তোমার ওজন কম মনে হয়,রাতে খেয়েছিলে ঠিকমত?’

‘হাতের বালা,আর গলার হারটা খুলে রেখেছি সেজন্যে’

‘হাসালে!ওগুলোর আবার ওজন আছে নাকি বোকা!’

‘আমি চাইনা আমাকে কেউ শুকনা বলুক।অপছন্দ’

‘কেন অপছন্দ?’

‘আমি জানি আমি সুন্দর,আমার চেহারা মাশাল্লাহ এটাও জানি,আর আমার চুল ও সুন্দর,ঠোঁট তো একেবারে গোলাপি জবার মতন’

অর্ণব কুসুমকে বিছানায় রেখে কপাল কুঁচকে বললো ‘এসব কে বলেছে তোমায়?এসব তো…’

‘এসব তো আপনার কথা তাই না?’

অর্ণব গলা ঝেড়ে কাশলো তারপর পাশে বসে চুপ করে থাকলো।কোনো উত্তর দিলো না।কারণ এটাই সত্যি

‘রাতে ঘুমিয়ে থেকে বিড়বিড় করে একদিন এসবই বলছিলেন।হুমমম আমি কিন্তু শুনেছি সব।’

‘ভাল করেছো।আর কিছু শুনোনি?’

‘শুনেছি।বলেছেন আমার ঠোঁটের স্বাদ নেই,বেরসিক।আপনি কি তবে?’

অর্ণব লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে।পাঞ্জাবি ধরে গায়ে ফুঁ দিতে দিতে ছুটে চলে গেছে রুমের বাহিরে।কুসুম ওর চলে যাওয়া দেখে ভাবলো কথাটা সত্যি নাকি মিথ্যা ছিল।

রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যেতেই ধাক্কা লেগে গেলো সাগর ভাইয়ার সাথে।ভাইয়া সেসময়ে পানির জগ হাতে এখান দিয়ে যাচ্ছিল।

‘কিরে!এত রাতে ভাগছিস কেন?কে ছুটাচ্ছে?’

‘না মানে…’

‘কুসুমের থেকে পালাচ্ছিস?একবার বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করস তো আবার ছুটে পালাস।তোর কি হলো বল তো?কোনো টিপস লাগবে?’

‘না না।আমি তো হাঁটাহাঁটি করছিলাম।রাতে ৪০কদম হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য বেস্ট।’

সাগর ওর ঘাঁড়ে হাত রেখে ঝাঁকিয়ে বললো,’আমি অবুঝ না রে ভাই আমার।পালিয়ে বেড়ানোর ছুটা আর হাঁটাহাঁটির ছুটার তফাৎ আমার জানা আছে বুঝলি!!নতুন বর তো।এখন রাতে ছুটবা,দিনে ছুটবা।সারাদিন ছোটার মধ্যে থাকবা।এই সময় পার করে এসেছি হুহ!’

অর্ণব মনে হয় লজ্জা পেতে পেতে এবার বসেই পড়বে নিচে।ভাইয়া যে লজ্জা দিচ্ছে একের পর এক,তাতে করে দাঁড়িয়ে থাকাও সহজ বলে মনে হচ্ছেনা।মন চায় বাসা ছেড়ে পালিয়ে যেতে।
অর্ণব আসছেনা দেখে কুসুম ও এসে হাজির হলো ওখানে।সেখানে সাগর ভাইয়াকে আচমকা দেখে সে দরজার সাথে লেগে মাথা বাঁকিয়ে বললো,’ভাইয়া আপনি এখানে?’

‘পানি নিতে এলাম।তোমার বরকে নিয়ে যাও।নাইট ওয়াকে বের হয়েছেন উনি।বাসায় রাতের বেলা ঘোরাঘুরি করছে।বাবা দেখলে পিঠের মাঝখানে কিল বসিয়ে বলবে,,’চোর”

কুসুম মুখে হাত দিয়ে হাসিটাকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়েছে।
অর্ণব গাল ফুলিয়ে রুমের ভেতর চলে এসে দরজাও লাগিয়ে দিলো।কুসুমের হাসি আর আটকে রইলোনা।বের হয়ে গেছে খিলখিলিয়ে হাসি।অর্ণব সব সময়কার মতন ওর গাল টিপে ধরে বললো,’কি?খুব হাসি পাচ্ছে?’

‘একদম না’

‘তাহলে কি?’

‘আপনার দুঃখে দুঃখিত’

মুখ ছেড়ে কান টেনে অর্ণব ওকে বিছানার কাছে নিয়ে এসে বললো,’ঘুমাও।অনেক জ্বালাও তুমি।যেন আমার শত্রু!আমাকে কেউ খোঁচ মারলে তাকে দাঁত কেলাতে হবে।এত হাসি তার যে মুখে হাত দেওায়া লাগে।আর একদিন খালি ওমন দাঁত কেলিয়ে দেখাও।গালের সাথে নাকটাও টিপে ধরবো।সবাই দেখে বলবে সর্দি হয়েছে’
—-
সকালে সিঙ্গাপুরের বিমানটি বাংলাদেশে এসে পৌঁছে ছে।
ব্যাগ সব বুঝে নিয়ে জুথি এগিয়ে চললো।মা তো একবার এক জায়গা অনেক সময় ধরে দেখে যাচ্ছেন।কতগুলো বছর পর আসলেন।নানু চশমা খুলে মায়ের মতন করে সব দেখছেন আর অবাক হচ্ছেন।তার কিন্তু এই প্রথমবার বাংলাদেশে আসা।

‘আমায় দেন,আমি বয়ে নিয়ে যাই’

একদম সামনে আচমকা একটা লোককে দেখে জুথি থেমে গিয়েছিল।লোকটা ওর হাত থেকে ব্যাগ কেড়ে নিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,’আরে আন্টি!!কেমন আছেন?’

‘ভাল,তোমায় তো ঠিক!’

‘আরে আমি মিরাজ,আপনি হয়ত চিনবেননা।মৃন্ময়ী চিনে।তাই না?’

‘মিরাজ ভাইয়া আপনি?আপনার দাঁড়ি এত বড় হলো কবে?আর টুপি এমন করে পরেছেন কেন?ভাল করে চেহারাই তো দেখতে পারছিনা,কণ্ঠ টাও কেমন বেসুরে বেসুরে।মনেই হচ্ছেনা আপনি মিরাজ ভাইয়া’

‘কতদিন পর আসলে।চিনবে কি করে?চলো যাই,অনেক দেরি হয়ে গেলো’

মা জুথির দিকে চেয়ে ফিসফিস করে বললো,’কোন মিরাজ?’

‘আমাদের বাসার উপরের তলায় যে থাকে,পিন্টু আঙ্কেল?ঐ পরিবারের ছোট ছেলে মিরাজ ভাইয়া’

‘আচ্ছা বাবা তুমি জানলে কি করে যে আমরা আজ ফিরছি?’

‘বাহ রে!আন্টি আপনার আম্মু তো ফেসবুকে পোস্ট দিলো।ট্রেভেলিং টু বাংলাদেশ।তার সাথে তো আমার এড আছে’

জুথির নানু জিভে কামড় দিয়ে সানগ্লাস্টা ভাল করে পরে নিছেন।জুথি কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’নানু চৌদ্দ গুষ্টিকে জানাবে আজ আমরা বাংলাদেশে এসেছি’

এয়ারপোর্ট থেকে জুথিদের বাসা অনেকদূর না।তাই কিছুদূর হাঁটার পর তারা সিএনজি নিলো।
এখন সমস্যা হলো আম্মু আর নানু উঠার পর আর ব্যাগপত্র নেওয়ার পর সিএনজিতে জুথির জায়গা হচ্ছিলনা।

‘আরেহ আন্টি যেখানে মিরাজ সেখানে হবেনা কেউ নারাজ!
আমি আছিনা?জুথিকে নিয়ে আমি অন্য একটা সিএনজিতে আসতেছি।আপনারা যান,টাটা’

তারা চলেও গেলো।এদিকে জুথি বারবার মিরাজের মুখটা দেখার চেষ্টা করছে।মিরাজ ততই ক্যাপ দিয়ে মুখটা ঢাকছে।সিএনজি ধরিয়ে সে ভেতরে ঢুকে গেলো।জুথি সন্দেহের চোখে তাকাতে তাকাতে সেও বসলো পাশে।মাঝে আরও একজনের জায়গার মতন খালি রেখেছে সে।
জ্যামে পরার পর জুথি খেয়াল করলো মিরাজ আস্তে আস্তে কাছে আসছে।

‘এ্যাই আপনি সত্যি মিরাজ ভাইয়া?’

‘জুথি তুমি আমায় চিনলেনা?এত সন্দেহ?’

‘মিরাজ ভাইয়ার হাইট অনেক কম।আর আপনি তো দেখি বিশাল লম্বা।সন্দেহ না করে উপায় আছে?’

‘তুমি তো অনেকদিন আমায় দেখোনি।আয়ুর্বেদ খেয়ে দুই ফুট উচ্চতা বাড়িয়েছি।পছন্দ হচ্ছে আমায়?’

‘আপনাকে আমি আগেও পছন্দ করতাম না।এখনও করিনা।
আর আপনি এমন কাছের দিকে আসতেছেন কেন?দূরে যান।’

মিরাজ ক্যাপটা আরেকটু টেনে হাত নিয়ে জুথির পিঠের পেছনে রেখেছে।জুথি নড়ে বসে আড় চোখে তাকালো।
সন্দেহ খুব গাঢ় হচ্ছে।কে হতে পারে এটা?
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here