বয়ফ্রেন্ডের সাথে বেস্টফ্রেন্ডকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে পাথর হয়ে গেল ইফা।।হাত থেকে টপাটপ রক্ত ঝরছে।।রক্তে সাদা রঙের ফ্লোর,, রক্তিম আকার ধারণ করেছে।।এখনো হাতের মুঠোয় গ্লাসের টুকরো গুলো বন্দী।। হাতের রক্তগুলোর সাথে যোগ দিয়েছে চোখের অশ্রু।। কিন্তু সেদিকে আক্ষেপ নেই তার।। একটু আগের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসছে।।গ্লাস ভাঙার শব্দে ইফার হুঁশ না ফিরলেও,, বাকি দুজনের ফিরেছে।। দাঁতে দাঁত চেপে সবকিছু সহ্য করছে ইফা।।কিছু বলার শক্তি খুঁজে পাচ্ছেনা।।সব কথাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে আটকে আছে।।মুখ অবধি আসছে না।।যেই দুজনকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী ভালোবাসতো,, বেশী ভরসা করতো।।তারা এভাবে ঠকাতে পারে ধারণা ছিল না ইফার। ইফার জানা মতে আজ ছিলো,, তার বয়ফ্রেন্ডের জন্মদিন।।তাই সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বলেছিল আজকে আহিরের সাথে মিট করবে না।। সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই এতোবড় একটা সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে ভাবতে পারে নি।।দূর্বল পায়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে,, হাত ধরে আটকে দিল আহির।।ইনোসেন্স ফেইস করে বললো…
— “প্লীজ এক মিনিট ইফা।।আই ক্যান এক্সপ্লেন”??
আহিরের মুখের দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল ইফা।।এক ঝাটকা দিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল।। অপর হাতে থাকা শপিং ব্যাগগুলো ছুঁড়ে মারলো মুখের উপর।। শার্টের কলার চেপে গর্জে উঠলো সে…
— “কি এক্সপ্লেন করবি তুই?? আমাকে খুকি মনে হয় তোর কাছে।।ভালোবাসি বলে তোর সব দোষ গুণ এড়িয়ে যাবো।। কখনো না”।।
— “ইফা প্লীজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।। তুমি ভুল দেখেছো”??(ইফার হাতের উপর হাত রেখে)
সাথে সাথে ঠাস ঠাস দুটো চড় পড়লো আহিরের গালে।।গালে হাতে দিয়ে বিরক্তিকর চোখে ইফার দিকে তাকিয়ে আছে।।রক্তাক্ত হাত দিয়ে চড় মারাতে কাঁচের কিছু টুকরো ঢুকে গেল আহিরের মুখে।। কোনটা ইফার রক্ত কোনটা আহিরের রক্ত হাজারবার চেয়েও খুঁজে আলাদা করা সম্ভব নয়।। নির্ঘাত নিজের জীবনের সব খরচ ইফা বহন করে।।নাহলে দুটো চড়ের বদলে আঠারো টা চড় পড়তো ইফার গালে।। নিজেকে শান্ত করে আবার কয়েকপা এগিয়ে গেল ইফার দিকে।। ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলো আহিরকে।।পড়তে গিয়েও কোনোরকম সামলে নিলো নিজেকে।।
— “আমার দেওয়া ফ্লাটে থাকছিস,, খাচ্ছিস।। ইভেন্ট তোর শরীরের ড্রেসটাও আমার টাকায় কেনা।। লজ্জা করে নি একবার।। আমার টাকায় বেঁচে থেকে,, আমার সাথে বেইমানি করতে।। সমস্যা নেই,, একবার যখন তোকে চিনে ফেলেছি,,আর কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।। কালকে মধ্যে আমার ফ্লাট খালি করবি।।আর আমার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তো তোর নেই।। তাই ব্যাংক ব্যালেন্স যতটাকা আছে সেটা আবার রিটার্ন ফিরিয়ে নিচ্ছি”।।
— “ইফা তুই…(করুন সুরে সারা)
— “একদম চুপ!! একটু আগে তুই আমাকে ফোন করে কি বলেছিলিস মনে আছে।। সুন্দর ছেলেরা ভালো হয়না।। তাদের গার্লফ্রেন্ডের অভাব হয়না।।আমাকে বলেছিলি যাতে আমি আহিরের সাথে ব্রেকআপ করে দেই।।আর এখন তুই ,,ছিঃ ছিঃ!! এরজন্যই আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলিস,, আজ আমি এখানে আসব কিনা”!!(ভ্রু কুঁচকে ইফা)
কথাগুলো বলে নিচ থেকে পূর্ণরায় শপিং ব্যাগ গুলো তুলে নিল।। উপস্থিত দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।। নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে,, একবার কেন মানুষটিকে পরিক্ষা করে নিল না।। অন্ধের মত কেন বিশ্বাস করলো।। নিজেকে মনে মনে বকতে বকতে লিফটের বাটন প্রেস করলো ।। দরজা খুলেছে কিনা তা না দেখেই ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলো।। দরজার সাথে মাথার সংঘর্ষ লাগার আগেই কেউ একজন হাত রাখলো মাঝখানে।।ভয়ে চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে নিলো ইফা।। মাথায় আঘাত অনুভব না করাতে কিছুক্ষণ পর চোখ খুললো ইফা।। কিন্তু সামনে কিছু নেই ।।দৃষ্টি সরিয়ে পাশে দেওয়ার আগেই শোনা গেল এক অপরিচিত কর্কট কন্ঠস্বর…
— “একটু অপেক্ষা সহ্য হয়না তোমার ।।নাকি চোখে দেখতে পাও না।। স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,,লিফট এখনও 11ফ্লোরে আছে।।আর তুমি বাটন প্রেস করে ঢুকে যাচ্ছ।। আমার মতো একটা মানুষকে তোমার চোখে পড়ে না।।বেশী তাড়া থাকলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যেতে?? এতে হাঁটু ভালো থাকতো।। জাস্ট রেডিকুলারস”।।
লোকটার কাজে প্রথম খুশী হলেও পড়ে মেজাজ বিগড়ে গেলো ইফার।।একটু হেল্প করছে বলে যা নয় তাই বলবে ।। ধন্যবাদ জানাবে শেষ।।না উল্টো কথা শুনিয়ে দিল।।
— “আচ্ছা আপনি সত্যি মানুষ তো।।না মানে এতোবড় একটা হাতির মতো মানুষকে আমার চোখে পড়লো না”।।(ভাবার অভিনয় করে ইফা)
সাথে সাথে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো রৌধিক ।।আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।।একটা ধন্যবাদ দিবে ।।না উল্টো হাতির মতো মানুষ বলে অপমান করছে।। চেঁচিয়ে বললো উঠলো…
— ”ওয়াট ডু ইউ মিন বাই হাতির মতো মানুষ?? আমাকে তোমার কাছে হাতির মতো মানুষ মনে হয়।।তাহলে আমার সন্দেহ টাই ঠিক ছিল,, তোমার চোখে সমস্যা আছে।।আরেকটা কথা ,, এই হাতির মতো মানুষটা যদি তোমার কাপালের সামনে হাত না দিত এতোক্ষণে তুমি হসপিটালে থাকতে”??( ভাব নিয়ে রৌধিক)
— ”অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।।আজ আপনি যদি আমার কপালে সামনে হাত না দিতেন।।আমি শুধু হসপিটালে না একবারে মরেই যেতাম।।প্রথমবার গিনিস বুক আমার নাম উঠতো লিফটের সাথে ধাক্কা লেগে প্রাপ্ত বয়স্ক একজন তরুণী জীবন হারিয়েছে।কতোটা ভালো হতো আপনি বলুন!!এইসব আপনার মাথা ঘুরে ,,লাইক সিরিয়াসলি ”।।
ইউ বলে থেমে গেল রৌধিক ।।শোনা গেল পরিচিতি একটা গলা..
— ”লিফটে মাত্র একজন আসতে পারবেন?? যেকোনো একজন চলে আসুন”।।
দমে গেল ইফা।। সে পরে এসেছে ,, তাই তাকে পড়েই যেতে হবে।।অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল…– যান??রৌধিক ইফার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো…– তুমি যাও।।এমন কথা শুনে দুজনে মুচকি হেসে দিল,, একটু আগে কিভাবে একে অপরের সাথে উঠে পড়ে ঝগড়া করছিলো,, আর এখন সাপোর্ট করছে।।লিফট ম্যান দ্বিতীয় বার তাড়া দিলে,, রৌধিককে রেখে ইফা দ্রুত উঠে পড়লো লিফটে।। রৌধিকের কিছু বোধগম্য হওয়ার আগেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল ।।ভেতর থেকে শোনা গেল এক কাষ্ঠহাসির শব্দ।।সাথে কিছু কথা….
— “একটু আগে কি জানো বলছিলেন?? সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে হাঁটু ভালো থাকে ,, তাহলে একটা কাজ করুন।।আপনি বরং এবার সিঁড়ি বেয়ে নেমে যান।। আপনার হাঁটু ভালো থাকবে”!!( ইফা)
লিফট অলরেডি টু ফ্লোরে চলে গেছে।। আবার কখন লিফট আসবে ,, তার হিসেব নেই।।আর অপেক্ষা না করে,,, সিড়ি দিয়ে নেমে গেল রৌধিক!!!
_________________
— ”আঙ্কেল আমার গাড়ির কাঁচ কে ভেঙেছে”??(ইফা)
— “মারিয়া দিছে??(গার্ড)
— “আঙ্কেল কিসব বলছেন আপনি?? কে মারিয়া?? কিসের মারিয়া??মারিয়া কি দিছে?? আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি,, আমার গাড়ির কাঁচ কে ভেঙ্গেছে?? মারিয়ার খবর নয়!! আজব”!!(বিরক্তিকর কন্ঠে ইফা)
— ”আমি তো সেটাই বলিতেছি,, আপনার গাড়ির কাঁচ কালো শার্ট পড়া একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে”??
— ”ছেলেটা ভেঙ্গে ফেললো আর আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন?? তাহলে আপনাকে কেন রাখা হয়েছে ??আটকালেন না কেন”??
— ”বাইকের কন্টোল হারিয়ে আপনার কাঁচের উপর মারিয়া দিয়াছে?? সবকিছু বুঝিবার আগেই হইয়া গেল, আমি কিছু করিতে পারি নাই”।।
— “যে ছেলেটা আমার গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গেছে।।সে এখন কোথায়”??
— “এখন এপার্টমেন্টের ভেতরে আছে?? যায় নাই”।।
একবার মনে হচ্ছে,, আহির গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গেছে ।। পরক্ষনে আবার মনে হচ্ছে না।।ইফা নামার আগে সিঁড়ি বেয়ে নেমে কাঁচ ভেঙ্গে আবার পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।। সবকিছু কেমন কাকতালীয়।।
এখন ছেলেটাকে ফোর্স করলে হয়তো কিছু টাকা ধরিয়ে দেবে ।।এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবে না।। কিন্তু এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে কোনো রুপ ঝামেলায় জড়াতে চায় না ইফা।।হাতে থাকা শপিং ব্যাগগুলো গার্ডের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,”” এগুলো কোনো অসহায় কে দিয়ে দিবেন”।। তারপর দ্রুত গাড়িতে উঠে বেরিয়ে গেল বাড়ির উদ্দেশ্যে।।মনটা একটুও ভালো নেই।।গাড়ির কাছে এসে চোখ কপালে ইফার।। গাড়ির দুটো কাঁচ ভাঙ্গা।। এইচএসসি পরীক্ষার পর গাড়িটা তার ভাই ইভু গিফ্ট করছিল।।গাড়িটার জন্য অনেকবার বায়না ধরেছিলাম বাবার কাছে।। ব্যস্ত নগরীতে ইফার জন্য গাড়ি কিনতে তিনি নারাজ।। বাবাকে যখন অনেকবার বলেও তিনি নাকোচ করলো ।।তখন ইভু শর্ত দিয়েছিল,, এইচএসসি তে প্লাস আসলেই,,পছন্দের গাড়ি কিনে দিবে।। মাঝে মাঝে রিকন্ডিশনে গিয়ে পছন্দের গাড়িটা দেখে আসতো।।বাকি সময় শুধু পড়াশোনা করতো।।
শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅পর্ব::০১
#ইফা_আমহৃদ
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,, ধন্যবাদ)