শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅পর্ব::১০

শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅পর্ব::১০
#ইফা_আমহৃদ

–” ভাই তুই দিন দিন ছ্যাছড়া হয়ে যাচ্ছিস।। দুদিন আগে বললি ,, নিজে উপার্জন‌ না করে বিয়ে করবি না ।।আর এখন বলছিস ,, বিয়ের অভাবে পাগল হয়ে যাচ্ছিস।আচ্ছা তোর জ্বর টর আসেনি তো” !! (করুন সুরে আদ্রিতা)

কথাটা বলেই হাত ছুঁয়ে দিল রৌধিকের ললাটে।।সাথে সাথে মুখ কুঁচকে নিল রৌধিক ।। কপালে রাখা আদ্রিতার সূক্ষ্ম হাতটা ঝাটকা দিয়ে সরিয়ে দিল।।গালে হাত রেখে চিন্তিত মুখে বললো…

— “আদ্রু আমার জ্বর আসেনি ,, ইফার ভূতে পেরেছে।।ওর ইগনোর আমার সহ্য হয় না।। নিজেকে কেমন পাগল পাগল মনে হয়।।বুঝতে পারিনি ,, তাই বিয়ের জন্য নাকোচ করে দিয়েছি।।নাহলে আঙ্কেলের পা ধরে বসে থাকতাম,, যতক্ষন পর্যন্ত না ইফার সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজি হতো”।।

— ”আমি তোর সাথে ইফার আলাদা সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারি।।তুই নাহয় ওর মান অভিমান সব ভাঙিয়ে দিবি” ‌।

এককথায় রাজি হয়ে গেল রৌধিক।।মুখের কোণে ফুটে উঠলো এক তৃপ্তিকর হাসি।।হাসিটা এড়ালো না আদ্রিতার চোখ থেকে।। অবশেষে তার ভাই কারো প্রেমময় নেশায় নিজেকে হারিয়েছে।।অন্তন আরেকটু সময় পাবে অভিমান ভাঙাতে।।
হাতের মুঠোয় থাকা সেল ফোনটার দিকে কিছুক্ষণ গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল আদ্রিতা‌‌।।প্রায় মিনিট দশেক আগে ইভুর সাথে কথা হয়েছে তার।।এখন আবার ফোন করলে কি ভাববে।। বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে কপালের কোণে আলতো স্লাইড করে বললো….”– আমার ফোনে চার্জ নেই ,, তোর টা দিয়ে ডায়াল কর”।।
সন্দিহান চোখে তাকালো রৌধিক।।এক প্রকার আদ্রিতার ফোনটা ছো মেরে নিজের হাতের মাঝে বন্দি করে নিল।।কিছূউ বোঝার আগেই ফোনটা বহির্ভূত হয়ে গেল।। ক্লিনে পরপর দুইবার টার্চ করতেই ইভু-আদ্রিতার নিরূদ্বা এক ছবি ভেসে উঠলো।। পূর্নরায় সাইড বাটনে প্রেস করে ফোনটা আদ্রিতার হাতে ধরিয়ে দিল।।

পরপর পাঁচবার ইভুর নাম্বারে ডায়াল করেও কলটি গৃহিত হলো না।।চরম বিরক্তি হলো রৌধিক।।আদ্রিতার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে অবিলম্বে আবার ডায়াল করলো।।এবার কলটি স্বীকৃত পেল।। সেকেন্ড পেরুবার আগেই শোনা গেল এক মোহনীয় কন্ঠস্বর…

— “দশ মিনিট তেতাল্লিশ সেকেন্ড হলো তোমার সাথে কথা শেষ হয়েছে‌‌।। আবার ফোন করেছো ।।তুমি তো দিনকে দিন ঢেড় রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছ।।তবে এখন হওয়ার দরকার নেই ,, বিয়ে পর হও ‌।।তাহলে রোমান্স টা একটু বেশি হবে”।।

— “ব্রো আমি আদ্রু না রৌধিক ।। তাতে সমস্যা নেই,, চাইলে বিয়ের পর আমার সাথেও রোমান্স করতে পারেন”।।(প্রিন্ট করে রৌধিক)

লজ্জায় মাথা নুইয়ে গেল আদ্রিতার ।।বড় ভাইয়ের সমীপে এইসব উক্তি সমূহ তার মাথা নত করে রেখেছে।।রৌধিকের অগোচরে লজ্জায় কাতর মুখ নিয়ে রুম প্রস্থান করলো‌ সে।।

ফোনটা টেবিলের উপর রেখে চারদিকে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে নিল ,, কিন্তু কোথাও আদ্রিতার দেখা মিললো না।।চপল পা ফেলে বেলকেনিতে গিয়ে দাঁড়ালো রৌধিক। কালকে ইফার সাথে দেখা হবে তার।।অনেক কষ্টে ইভুকে রাজি করিয়েছেন।। আজ আর তার ঘুম হবে না। রাতের আকাশে ঝুঁলে থাকা এক খন্ড চাঁদ দেখে সময় পাড় করে দিবে সে।।

_________________

— “ভাইয়া থামবি তুই ।।আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি না ।।তাই এতো সাজানো দরকার নেই”।।(করুন সুরে ইফা)

— “বেশী কথা না বলে চুপচাপ বস তো।।বিয়েতে তোকে এই সামান্য সাজে শ্বশুর বাড়ি পাঠাবো ,, কখনোই না।। তাছাড়া আমি হ্যান্ডসাম বয় ইরফান আহমেদ ইভু,, তার বোন একটু সাজবে না”।। (ইফার চুল আঁচড়ে দিতে দিতে ইভু)

— ”লাইক সিরিয়াসলি ভাইয়া ,, তুই স্যান্ডসাম আর সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে।।আজ পর্যন্ত একটা মেয়েকে পটাতে পারলি না,, আবার হ্যান্ডসাম ।।নিহাত আদ্রু ভাবী তোকে দয়া করে বিয়ে করছে।।কথা না বলে যেটা করছিস ,, তাড়াতাড়ি কর”!!(নাক টেনে ইফা)

— “কি ?? আমি একটা মেয়েও পটাতে পারি নি।।ওকে তাহলে আজ অনেকগুলো মেয়ে একসাথে ইমপ্রেস করে তোকে দেখিয়ে দিবো।।সব মেয়েরা আমার জন্য জাস্ট পাগল” ।।(ভাব নিয়ে ইভু)

— “এটা কিন্তু ভুল বললি তুই।। নিজেকে কখনো আয়নাতে দেখেছিস ।।বাদরের মতো দেখতে আর বলে কিনা হ্যান্ডসাম।।হ্যান্ডসাম দেখতে হলে আমাকে দেখ।।এখনো বিয়ের আসর থেকে মেয়ে তুলে আনতে পারি।।হা হা হা” (রুমে ঢুকতে ঢুকতে ইমতিয়াজ আমহৃদ)

— “চুপ করবে তুমি ।।ছেলে মেয়েদের সামনে কিভাবে কথা বলতে হয় ,, সেই জ্ঞান হলো না”।।(রুমকি)

ইমতিয়াজ আমহৃদ,,রুমকির কন্ঠস্বর শুনে মাথা তুলে তাকালো ইফা ইভু।।তার বাবা মা এসেছে।।রুমকি এগিয়ে এসে ইফার নয়নগোচর থেকে কাজল নিয়ে কানের পেছনে লাগিয়ে দিল।।থুতনি ধরে হালকা তুঙ্গ করে বিরবির করে উচ্চারণ করলো”মাশাআল্লাহ”!!মায়ের কথা শুনে মৃদু হাসলো ইফা।। ইমতিয়াজ আমহৃদ ইফার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন…

— “বড্ড অভিমান করে আছিস বাবা উপরে ।। এতো অভিমান তোর মনে জমে আছে।। কিন্তু বাবা মা একটু সন্তানকে শাসন করবেই ।।এটাই তো রীতি।তাই বলে তুই এভাবে বদলে যাবি।।আমি আমার আগের ইফাকে চাই ,, যার শব্দময় হাসি পুড়োবাড়ি টা আনন্দে ভরিয়ে রাখবে।।হবি ,, সেই ইফা”।।

ইফা চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো।।তার একটু বদলে যাওয়াতে সবকিছু প্রানহীন হয়ে যাবে ,, ভাবতে পারে নি।। ঠোঁট প্রশস্ত করে শব্দ করে হাসলো ইফা।।এক হাতে বাবাকে আলতো বেষ্টিত করে নিল।।আজ থেকে শুরু হবে আবার বাবা মেয়ের মধুর সম্পর্ক।।

..
তৈরি হয়ে ড্রয়িং রুম পর্যন্ত আসতেই ইফার চোখ চড়কগাছ ।।সোফায় আরামসে বসে আছে আদ্রিতা রৌধিক।। মন খারাপ দেখে ইভু ইফাকে,, জোর করে মেলায় যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছে।।ইফার বরাবরই নাগরদোলায় উঠতে ভালো লাগে।। তবুও প্রথমে ইফা বিনা বাক্যে অসম্মত জানায়।।ইভু অনেক বুঝিয়ে রাজি করায় ।।যদি ঘুনাক্ষরেও জানতো রৌধিক কিংবা আদ্রিতা যাবে তাহলে ,, নাকোচ করে দিতো।।ইফা স্বাভাবিক ভাবেই আদ্রিতার সাথে বিহেব করলো।।কথার মাঝে একবার আড়চোখে রৌধিকের দিকে তাকিয়ে ছিল ,, সে প্রথম থেকেই তৃষ্ণার্থ ভাবে ইফার দিকে তাকিয়ে ছিল।।বিধায় দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেল।। কাকতালীয় ভাবে ইফার সাথে রৌধিকের জামার রং ম্যাচ করে গেছে।। আজ রৌধিক নীল রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি।। চুলগুলো কপালের কাছে কার্ল করা,, হাতে ব্যান্ডের ওয়াচ।।নীলাভ চোখ দুটো ইফার চোখের দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।। গাড়িতে উঠার সময় বাঁধল আরেক বিপত্তি ।।রৌধিক আগে থেকেই দুটো রিক্সা ভাড়া করে এনেছে।।ইভু আর আদ্রিতা মহা খুশী ,, বিকেলের নরম রোদে প্রিয়শ্রীর হাতে হাতে রেখে নিরিবিলিতে পাশাপাশি বসে থাকার মজাই আলাদা।। কিন্তু ইফা চরম বিরক্ত,, কারন তার পাশের মানুষটিকে সে বিন্দু পরিমাণ সহ্য করতে পারে না।।ইফা মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।।রৌধিক হাঁটুর উপর কনুই এর ভর রেখে গালে হাত দিয়ে ইফার দিকে তাকিয়ে আছে।।ইফার খোলা চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে গেছে।। এলোমেলো চুলগুলো রৌধিকের মুখের উপর আঁচড়ে পড়ছে‌।আর সে ইফার মাতাল করা স্মেলটা হাসি মুখে অনুভব করছে ।। দুজন মানুষের মধ্যে এতোটাই দূরত্ব যে ,, আদ্রিতা আর ইভু অনায়াসেই বসতে পারবে।। মিনিট দশেক রিক্সা ভালো রাস্তা দিয়ে অতিবাহিত হওয়াতে কারো কোনো সমস্যা হলো না। ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে চলতে শুরু করলে ,, আংশিক ঝাঁকুনি শুরু হলো।।ক্রমশ ঝাকুনির কম্পন বাড়তে শুরু করলো।।পড়ে যেতে নিলেই হাত বাড়িয়ে রৌধিকের হাত স্পর্শ করলো।।রৌধিকের ধ্যান ভাঙতেই দুহাতে ইফার হাত শক্ত করে ধরে নিজের দিকে টান দিলো।। আকস্মিক ঘটা এমন পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ইফা।। হঠাৎ হাতে টান পড়াতে গিয়ে পড়লো রৌধিকের বুকের।। পাঞ্জাবী চেপে ধরে ,, ভয়ে আখি জোড়া বার বেষ্টন করে,, বার কয়েক শ্বাস টেনে ট্রোম থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলো ইফা।। ধুকপুকানির শব্দে নয়ন খুলে রৌধিকের চিবুকে নিজেকে আবিষ্কার করলো সে ।।রৌধিকের কাঁধে হাত রেখে সরে আসতে নিলে কোমড় চেপে ধরে থামিয়ে দিল সে।।কোমড়ে থাকা হাতটা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বললো…

— “এটা কোন ধরনের অসভ্যেতামো ।।হাত সরান” ??

— “মুচড়ামুচড়ি অফ করে শান্ত হয়ে বস।।পৌঁছে গেলে আমি নিজেই হাত সরিয়ে ফেলবো।।আর এর আগে যদি এক ইন্ধি নড়াচড়া করো ,, তাহলে ধাক্কা মেরে এখানে ফেলে চলে যাবো।।তখন দেখাবো অসভ্যেতামো কাকে বলে ,,কত প্রকার ও কী কী?? মাইন্ড ইট”।।(দাঁতে দাঁত চেপে রৌধিক)

রৌধিকের কথায় স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে ইফা।।ক্ষনেক্ষনে রিক্সায় ঝাকুনি অনুভব হয় ,,তখন শক্ত করে রৌধিক ইফার কোমড় চেপে ধরছে।। যাতে বারবার কেঁপে উঠলো সে।।পড়নের ওরনা চেপে সেই স্পর্শ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে সে।।
ইফার এমন ভঙ্গিমায় ঠোঁট চেপে হাসছে রৌধিক।।হালকা শব্দ হীন উচ্চারণ করলো সে…– ”পাগলা টা আমার”।।।।

চলবে…🎀🎀

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here