শব্দহীন_অনুভূতি পর্ব_২৩
#পলি_আনান
আরাফ হৃদিতা বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় ভোরে হয়ে যায়।সবার আড়ালে বাড়িতে ঢুকলেও হুমায়রা স্পষ্ট আড়াল থেকে তাদের দেখতে পান।
প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে।সূর্যের প্রখর তাপ জানালা ভেদ করে প্রভার চোখে পরতেই আড়মোড়া কাটিয়ে ঘুম থেকে উঠতে চেষ্টা করে।কিন্তু মাথাটা প্রচন্ড ভারী লাগায় আবারো বিছানায় শুয়ে যায়।কয়েক মিনিট পর তার সৎবিৎ ফিরে এলে পিট পিট করে চোখ খুলে বোঝার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে?সিলিং এর দিকে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে হড়বড় করে উঠে বসে। সামনে তাকিয়ে ফ্লোরে নিয়াজকে দেখতে পায়।তার আর বুঝতে বাকি নেই সে সারা রাত নিয়াজের রুমেই ছিল।দ্রুত বিছানা থেকে নেমে নিয়াজের হাতে হাত রাখতেই ভীতিকর বিস্ময় হয়ে যায় প্রভা।নিয়াজের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা। এক কথায় সারা শরীর শক্ত ঠান্ডা হয়ে আছে।প্রভা ঢোক গিলে নিয়াজের মুখের সামনে দুটো আঙুল দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস চলাচলের পরিক্ষা করে।কয়েক সেকেন্ডে প্রভা বুঝে যায় নিয়াজ মৃত!ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখতে পায় নিয়াজের পেটের দিক থেকে রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে আছে। মদের বোতলের অর্ধ কাঁচ এখনো নিয়াজের শরীরে বিধে আছে।সারা রুমে ছড়িয়ে আছে উটকো গন্ধ।
প্রভা ভয় পেয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে চারিদিকে পরখ করে নেয়।এই মূহুর্তে কেউ যদি দেখে সে নিয়াজের রুমে আছে তবে নির্ঘাত তাকে খুনি হিসেবে ধরা হবে।ভারী মাথাটার ভেতর টনটন ব্যাথার অনুভব হচ্ছে কিন্তু সেদিকে মন না দিয়ে প্রভা দ্রুত রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। পর্দা ঠেলে সামনে অগ্রসর হতেই হুমায়রার সাথে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা লাগে।টাল সামলাতে না পের প্রভা ছিটকে যায় দরজার সাথে।
– আরে কি হয়েছে তোর এমন তাড়াহুড়ো করছিস কেন?
– স-স-সরি আন্টি!
প্রভা আর এক মূহুর্তেও দাড়ালোনা ছুটে চলে যায় নিজের রুমে।ওয়াশরুমে ঢুলেই ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকে।মনে পড়ে যায় কাল রাতের কথা।
মাতাল হয়ে প্রভার সাথে নিয়াজের সম্পর্ক অনেকবার হয়েছে তবে গত কাল নিয়াজের আচরন ছিল অস্বাভাবিক। হয়তো বা অতিরিক্ত মদ গেলায়।নিয়াজের হঠাৎ করেই আচরন পালটে যায়। নেশার মাত্রা তার প্রবল হয়ে যায়।প্রভা নিয়াজের অস্বাভাবিক আচরন দেখে কিছুটা চমকায়।অতঃপর তাদের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ ঝগড়া হয় বিরক্ত হয়ে প্রভা নিয়াজকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মাতাল প্রভা তখনো বুঝতে পারেনি নিয়াজের পেটের এক সাইডে কাঁচ ভেঙে শরীরে বিধে গেছে যার ফলে প্রচন্ড রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
প্রভা নিজেও বিছানায় ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু সকালটা যে এতটা ভয়ংকর হবে কে জানতো?
হুমায়রার চিৎকারে হুড়মুড় করে বাড়ির সবাই নিয়াজের রুমে যায়।মাইশা নিয়াজের লাশ দেখেই চিৎকার দিয়ে মুখে হাত দিয়ে মেঝেতে বসে যায়।তাকে সামলাতে দ্রুত হৃদিতা এগিয়ে যায়।নোমান নিজের ভাইয়ের এমন পরিস্থিতি দেখে পাথর বনে যায়।হুমায়রা এক তালে বিলাপ দিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
– ওই মেয়ে কাল নাগিনী।আমার বোনেরে খাইছে দুলাভাইরে খাইছে এখন আমার ছেলেটারেও খাইছে। আল্লাহরে এই মাইয়ারে কেন এই বাড়িতে আসতে দিলাম রে।
হুমায়রার কথায় চমকায় বাড়ির সবাই।সবার জানা মতে লন্ডনে বাড়িতে আগুন লাগার ফলে প্রভার মা বাবা মারা যায়। তবে এইসব কি বলছে হুমায়রা।নোমান তার মাকে টেনে আনতে গেলে তিনি আরো রেগে যান।
– তোর কারনে, শুধু তোর কারনে এই মেয়ে এই বাড়িতে আসতে এত আশকারা পায়।যে মেয়ে বারো বছরে মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে নিজের মা বাবাকে মেরে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে এক্সিডেন্ট কেস সাজাতে পারে সে মেয়ে ঠিক কতটা চতুর তা আমি ভালো করেই জানি।আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দে আমার বুকে। আমার নিয়াজকে ফিরিয়ে দে।
হুমায়রার কথা গুলো শুনে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির সবাই।নোমান কথা ঢাকতে বার বার তা মাকে ইশারা করছে যেন চুপ থাকে।কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেজা চুল টি-শার্ট গায়ে দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসে প্রভা।নিয়াজের লাশের দিকে তাকিয়ে মাথা নুইয়ে নেয়।এক কদম দুই কদম করে পিছিয়ে যেতেই তার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে আরাফের ছোট চাচা জসীম।
– এই মেয়ে পালাচ্ছিস কোথায়।খুন করে পার পেয়ে যাবি ভেবেছিস।ভাই পুলিশকে ফোন করো,
জসীমের কথা শুনে দ্রুত আরাফের বাবা পুলিশকে ফোন করে।আইদা,আদীভ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে।এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পরে নি তারা।
কেটে গেছে সূর্যের আলোকিত একটি দিন।সন্ধ্যায় সবাই লিভিং রুমে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।নোমান কপালে আঙুল দিয়ে কিছু একটা ভাবছে।
জসীম মুখ দিয়ে চ এর মতো শব্দ করে আরাফের বাবা জহিরের দিকে তাকায়,
– পোস্ট মার্টাম রিপোর্ট আসতে তো দুই তিনদিন সময় লাগবে, কিন্তু পুলিশের ধারণা কি?
– নিয়াজের গ্লাসে বিষাক্ত মাদক ছিল।যার প্রভাব আগে থেকেই তার শরীরে পৌছে যায়।তাছাড়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই এমনটা হয়েছে।সবচেয়ে বড় কথা নিয়াজের মদের গ্লাসে প্রভার আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।
-মেয়েটা কত ডেঞ্জারাস ভাবতে পারছো তোমরা।ভাবী না বললে তো জানতেই পারতাম না এই মেয়ে এতটা ডেঞ্জারাস ,নিজের মা বাবাকে ও ছাড় দিলো না।
– এটা শুনেই চমকে যাচ্ছো মেয়েটা লন্ডনে কি করে যানো?ব্লাকমেইল!
– ব্লাকমেইল?
– হুম।ব্লাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার কাজ।গত কয়েকদিন আগেই টাকা না দেওয়ায় একজন ক্লাইন্ট কে লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করে।এবং আঘাতটা এতটাই গুরুতর হয় বেচারা কোমায় চলে যায়।সব তথ্য তার দলের লোকেরা ফাস করে দিয়েছে।
– কিন্তু দলের লোকেরা এইসব কথা ফাস করলোই বা কেন?
– হা হা হা বোকা নাকি তুই? বুঝতে পারছিস না কেন?অলরেডি তার দলের তিনজন সদস্য ওই দেশের জেল খানায়।প্রভাকেও ধরার জন্য সব প্রমান কালেক্ট করা হচ্ছিলো তখনি সব তথ্য ফাস হয়ে যায় আর এইসব তথ্য জোগাড় করে মাইশার বেস্ট ফ্রেন্ড রিক।সে গোয়ান্দা বিভাগের অফিসার।
– কোন দেশের আর এত কিছু আমাদের অজানায়।ওহ গড!
– বাংলাদেশের।
সবাই চকিতে তাকায় মাইশার দিকে।নোমান এতক্ষন সব কথা শুনে ঘামছিল কিন্তু মাইশার কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলো না।এই মেয়েকে যতটা সহজ ভেবেছিল ততটা সহজ এই মেয়ে না।
মায়মুনার ভেতরটা প্রশান্তির হাওয়া বইছে।একটা উচিলায় ছেলের সংসারটা বেঁচে গেছে। অন্যদিকে নিয়াজের জন্য মনটা ভার হয়ে আছে শত হোক ছোট বেলা থেকেই এই ছেলে তার সামনে বড় হয়েছে। আজ তার মৃত্যু পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মায়মুনা সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলতে শুরু করে,
– আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছিলি নোমান।আল্লাহ বাঁচিয়েছেন বিয়েটা যদি হয়ে যেত কোনদিন এই মেয়ে আমার ছেলের গলায় ছুরি চালাতো কে জানে।
বাড়ির সবাই মায়মুনার কথায় সায় দেন।তানিয়া এতদিন প্রভার দলে ভিড়লেও আজ প্রভার কান্ড কীর্তি দেখে দলপাল্টে ফেলেন।
– তা ঠিক বলেছো ভাবী। বাড়ির বউ হিসেবে হৃদিতাই ঠিক। এবার ওদের ডিভোর্স নামের ঝামেলাটা বিদায় করো।
হৃদিতা বেগবান দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকায়।আরাফ তার হাত আলতো করে ছুঁয়ে অভয় দেয়।মাইশা তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।
মায়মুনা উঠে গিয়ে নিজের গলার চেন হৃদিতাকে পড়িয়ে দেয়।
– আমার ছেলের বউ! এই কথা বলতে আমার আর কোন আপস নেই।
মায়মুনার কথায় সবাই সায় দিলেও।হুমায়রা কিড়মিড় করে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে।হুমায়রার দিকে একপলক তাকিয়ে দ্রুত লিভিং রুম থেকে উঠে যায় নোমান।
মাইশা সেদিকে তাকিয়ে গোপনে হাসে।
– মি.নোমান এনায়েত তুমি চলো ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায় খেলা এখনো বাকি।
লেখনীতে পলি আনান
গভীর রাত নিস্তব্দ একা রুমে বসে সিগারেট ফুঁকছে আরাফ।ভাইয়ের মৃত্যুর শোক অন্যদিকে প্রভার এই দূর্দশা মাথার ভেতরে চিন্তার পোকারা ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে।তখনি নোমানের রুমে প্রবেশ করে মাইশা।তাকে দেখে নোমান কিছুটা বিচলিত হলেও নিজেকে ধাতস্ত করে নেয়।
– তুমি।এখানে?
মাইশা প্রত্যুওর করলো না।সোজা নোমানের সামনে বসে তার হাটুতে মাথা রাখে।কান্না সুরে বলে,
– আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না নোমান কোথা থেকে কি যে হয়ে গেলো।প্রভা এটা কি করলে পারলো বলতো?তুমি সবচেয়ে বেশি প্রভাকে সাপোর্ট করতে আর প্রভা কি না তোমার ভাইকে মেরে দিলো।ইসস নিয়াজের প্রচন্ড মাত্রায় রক্তক্ষরণ হয়েছে ভাবতেই আমার গা কেঁপে উঠছে।
মাইশা ঝরঝর করে কেঁদে দেয়।তার মাথায় হাত রেখে নোমান বলে,
– বেইমান! বেইমানকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। যাইহোক তার শাস্তি সে পাবে তুমি একদম কেঁদোনা।
মাইশা থামে নোমানের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে সেন্টার টেবিলে থাকা মদের বোতল থেকে, মদ গ্লাসে ঢেলে নোমানের দিকে বাড়িয়ে দেয়।নিজেও একটি গ্লাস হাতে তুলে নেয়।
– নাও একটু রিলেক্স ফিল হবে।
নোমান মুচকি হেসে গ্লাসে চুমুক দেয়।এভাবে কেটে যায় প্রায় আধা ঘন্টা।নোমানকে একের পর এক মদের নেশাত মাতাল করে দেয় মাইশা।নোমানের নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেছে। সোফায় মাথা হেলান দিয়ে কি যেন বিড়বিড় করছে তখনি সুযোগ বুঝে মাইশা ভিডিও রেকড করতে শুরু করে।
– নোমান তুমি কি মাইশাকে সত্যি ভালোবাসো?
মাইশার কথায় মাথা তুলে তাকায় নোমান।তার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,
– ভালোবাসা? সে তো আমার জীবনে নেই।আর আমি চাই না।আমি কাউকে ভালোবাসি না আর ভালোবাসতে চাইনা।নোমান শুরু শরীর চেনে শরীর।তার কাছে এইসব ভালোবাসা মূল্যহীন।
মাইশা নিজেকে শান্ত রাখে। কয়েকটা ঢোক গিলে বলে,
– তাহলে তাকে বিয়ে করতে চাইছো কেন?
– ওই যে বললাম শরীর!ওই মেয়ে অসম্ভব ধূর্ত। এত সহযে তাকে কবজায় আনা আমার পক্ষে সম্ভব না তাই বিয়ে বিয়ে নাটক খেললাম।বিয়ের এক মাস পরেই ছুড়ে ফেলে দিতাম।
নোমান কথাটা বলেই বিকট শব্দে হাসতে থাকে।তার হাসি দেখে মাইশাও মুচকি হাসে।মনে মনে বলে,
– আমি তোর প্রেমে কোন দিন পড়িনি নোমান। আমার যে কিছু হিসেব বাকি আছে তাই তো এত বাহানা।
মাইশা কিছুক্ষন চুপচাপ নোমানের দিকে তাকিয়ে থাকে।নোমানের হাসি থামতেই শান্ত কন্ঠে বলে,
– পায়েলের কথা মনে আছে তোমার?
– প.পায়েল!কোন পায়েল?
– ভুলে গেলে চার বছর আগে যাকে একা নির্জন পোড়া বাড়িতে……
মাইশার কথা শেষ হওয়ার আগেই নোমান হাসলো।
– মনে থাকবে না। অবশ্যই মনে আছে।
– সেই মেয়েকে ধর্ষণ করে কোথায় লাশ গায়েব করেছিলে তুমি?
মাইশা আরেকটা গ্লাস তুলে দেয় নোমানের হাতে। নোমান সেই গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে,
– কোথায় আবার পোড়া বাড়ির পশ্চিমের বাগানে একটা গর্ত আছে সেখানে ফেলে মাটি আর পঁচা পাতা দিয়ে আড়াল করে রেখছি।
মাইশার চোখে অশ্রু কণারা ভাসমান।চোখ বন্ধ করতেই টুপটাপ তার হাতে নেত্রবারি গড়িয়ে পরে।
– কেন মেরেছিলে তাকে? কি অন্যয় ছিল তার?
নোমান স্থিত হতে মাথা হেলান দিয়ে রাখে।এই মূহুর্তে তার সম্পূর্ণ বোধ শক্তি ফুরিয়ে আসছে।মাইশা দ্রুত ওড়নার আড়াল থেকে একটা দলিল বের করে এবং নোমানকে সই করতে বলে। নোমান হেলেদুলে সেখানে সাইন করে দেয়।মাইশা সস্তির শ্বাস ছাড়ে।
– এ-এ-এটা কিসের পেপার?
– কিছু না তুমি বললে না তো পায়েলকে কেন মেরছো?
– সে একটা বিশ্রি ঘটনা।পায়েল মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে পছন্দ করে প্রভা।কিন্তু ছেলেটা ভালোবাসে পায়েলকে।কিন্তু লন্ডনে প্রভা কিছুতেই তার পথ থেকে পায়েলকে সরানোর রাস্তা পায় না। তাই তার আবদার পায়েল যখন বিডিতে এসেছে তখন তার পথের কাঁটা যেন আমি দূরে সরিয়ে দি।কিন্তু মেয়েটাকে দেখে কন্ট্রোল করতে পারিনি।
নোমান আবারো হাসতে থাকে।মাইশা তার চোখ বন্ধ করে নেয়।ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙ্গেচুরে গুড়িয়ে দিতে।
– কিন্তু প্রভার লাভ হলো কি?সে তো একটা পর্যায়ে ওই ছেলেকে লুট করে ছেড়ে দেয়।এতে তো তার ভালোবাসা প্রকাশ পায় না।
– দূর… কিসব প্রশ্ন করো তুমি। প্রভার কাজ এটাই,বড় বড় ঘরের ছেলেদের সাথে লিভিং করে ব্লাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া যেমনটা করেছে পায়েলের বয়ফ্রেন্ডের সাথে।
– কিন্তু আরাফের সাথে প্রভার বিয়ে দিতে চাইছো কেন?
মাইশা আর কোন উওর পেলোনা তার আগেই নোমান ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে।চোখের পানি মুছে মাইশা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।মোবাইলটা হাতে তুলে নোমানে দিকে তাকিয়ে বলে,
– কাল থেকে তোমার জীবনে জাহান্নাম শুরু নোমান এনায়েত প্রস্তুত হও!
সকালে নোমানের যখন চোখ খুলে তখন তার সামনে কয়েকজন পুলিশ দেখতে পায়।তাদের দেখেই ভড়কে যায় সে।
– আ–আপনারা?
– চলুন থানায়। অনেক বছর জালিয়েছেন সমান তালে।রাজনৈতির দোহায় দিয়ে চাঁদা বাজি লুটপাট। হত্যাকান্ড কম করেন নি।এবারের কেস একদম স্টং। ধর্ষণ এবং হত্যা মামলা স্বীকারক্তি মূলক জবান বন্ধি আছে।উপর মহল থেকে নির্দেশ আছে আপনাকে দ্রুত এরেস্ট করার।
– হোয়াট?আমার সাথে টক্কর দেওয়ার সাহস কার হলো।
পুলিশ সহ বাড়ির সবার ভিড় ঠেলে সামনি এগিয়ে আসে মাইশা।
– আমার!আমার সাহস হয়েছে।
– ম-মাইশা তুমি?
– হ্যা আমি। মনে আছে পায়েলের কথা আমি সেই পায়েলের বোন।আমার চাচ্চুর মেয়ে পায়েল।তাকে ছোট থেকে আমি আর আমার বাবা মানুষ করি কিন্তু তার মৃত্যু এত জঘন্য কারনে হবে তা আমি মানতে পারিনি। তাই তো এত নাটক করে তোমার কাছে এলাম ভালোবাসার দোহায় দিলাম।
– মানে কি?তুই আমার সাথে আড়ালে বেইমানি করেছিস!
– কেন তুমি করো নি।বিয়ের পর তো আমায় ছুড়ে ফেলে দিতে।মনে আছে সেদিন সন্ধ্যার কথা আমি বাবা আর পায়েল বিডিতে এসেছিলাম চাচা চাচি এবং আমার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে। কিন্তু এর পরের দিন গ্রামের পোড়া বাড়িতে ঘুরতে গেলে তুমি তাকে ধরে নিয়ে যাও। আমি পায়েলকে খুঁজতে খুঁজতে বাগানের দিকটায় যাই।তখন প্রায় রাত, কিন্তু যা দেখলাম তা আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি।কয়েকটা ছেলে মিলে পায়েলকে গাড়িতে তুলে নেয়।বিবস্ত্র পায়েলের দিকে তাকিয়ে আমার সারা শরীর অসাড় হয়ে যায়।
আমি তোমায় দেখেছিলাম সেদিন তুমি নিজেই নির্দেশ দিয়েছিলে পায়েলকে গুম করার। সেখানেই আমি সেন্সলেস হয়ে যাই।তারপর তোমার বিষয়ে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে বুঝতে পারি এত সহযে তোমায় ধরতে পারবো না।আমি বাবা মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছিলাম।তখন আমার বন্ধু রিক এসে আমার পাশে দাড়ায়। আর শুরু হয় তোমার সম্পর্কে জানা। জানতে পারি প্রভা তোমার বোন। কিন্তু প্রভাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম পায়েল আমায় তার সর্ম্পকে অনেকবার বলেছে।প্রভা বার বার হুমকি ধামকি দিয়ে পায়েলের ক্ষতি করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি।অবশেষে বিডিতে এসে আমার বোনটার জীবনের সমাপ্তি ঘটলো।কয়েকমাস পরে জানতে পারি পায়েলের বয়ফ্রেন্ডকে প্রভা বিয়ে করেছে।আবার কয়েকমাস পর শুনি তাদের ছাড়া ছাড়ি হয়ে যায়।যানতে পারি প্রভার ব্লাকমেইলের কথা।
প্রভাকে শায়েস্তা আর তোমাকে হাত করতে এত নাটক সাজিয়েছি।কিন্তু আফসোস মাঝ থেকে প্রভার কারনে নিয়াজ মরে যায়।মনে আছে আমি বলেছিলাম, তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আমি বিডিতে আসবো।আসলে তোমার বিষয়ে অনেকটা হেল্প করেছে আমায় আরাফ!আরাফের সাথে আমার পরিচয় হয় তোমার সাথে পরিচিত হওয়ার ঠিক কয়েক সাপ্তাহ আগে তত দিনে আমরা ভালো বন্ধু হয়ে যাই।
মাইশার কথা শুনে চমকে যায় নোমান।সে অবাক হয়ে আরাফের দিকে তাকালে আরাফ ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।
মাইশা আরাফের কথা হাসি দেখে শব্দ করে হেসে দেয়।
– একদম হাসবে না আরাফ।তোমার হাসিও বন্ধ করছি।
মাইশার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না আরাফ। ভ্রু কুচকে মাইশার দিকে তাকালে সে বলে,
– তুমি তো তোমার জেঠিমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?একদম নিজের মায়ের চেয়েও বেশি।তোমার বাবা-মা , ছোট চাচা অনেক কষ্ট করে এই বাড়ির জন্য,ব্যাবসার জন্য, কিন্তু এই বাড়িতে এসেই জেঠিমাকে আমার মোটেও ভালোলাগে নি। তিনি সবার সাথে হাসি মুখে চললেও আড়ালে বিষ নিয়ে ঘুরে।নোমান তার বাবা মা মিলে এই বাড়ি শুধু মাত্র তাদের নামে লিখে নেয়।যেখানে বাড়ির ভাগ হবে তিন ভাইয়ের নামে।এবং কি আরাফের ভালো হুমায়রা কোন দিন চাননি।
তোমার মায়ের থেকে জানতে পারি তোমার দাদীমা বেশ ভালোবাসতো তোমার মাকে আর তাই তিনি হিংসায় জ্বলে পুড়ে যান।তিনি কোন দিন তোমাদের ভালো চাননি।অন্যর গিবত হিংসায় থাকতে থাকতে তার দুই ছেলে নোমান এবং নিয়াজ একজন ও আর্দশ মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি।যাই হোক এই নাও তোমাদের বাড়ির দলিল এখানে নোমানের সই আছে এবার এই বাড়ির সম্পূর্ণ মালিক তিন ভাই।আমার কাজ এখানেই শেষ।
মাইশার কথা শুনে কেঁদে দেন হুমায়রা।হিংসার আগুনে তিনি এতটাই জ্বলেছেন কখনো নিজ স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝেন নি।আরাফ তার জেঠিমায়ের দিকে তাকিয়ে দুচোখের পানি ছেড়ে দেয়।
পুলিশ নোমানকে নিয়ে যায়। নোমান আর মাইশা আরেকবার চোখাচোখি হয়।বাড়ির সবাই স্তব্দ হয়ে গেছে। আরাফ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে নেয়। লজ্জা ঘৃণা তার ভেতরটা তাকে বার বার জখম করছে।
#চলবে….