শব্দহীন_অনুভূতি পর্ব_৯

শব্দহীন_অনুভূতি পর্ব_৯
#পলি_আনান

নির্জন রাতের আধাঁরে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে হৃদিতা। সামনে থাকা টেবিলের উপর ভারি মোটা বই গুলোর দিকে তাকিয়ে কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আসছে।জীবনটা যখন বুঝতে শিখলো তখন থেকেই ক্যারিয়ারের উপর সম্পূর্ণ ফোকাস করেছে সে।তার খালুজানের শুধু মাত্র মুদি দোকানের ব্যবসায়, সংসারের খচর নেহার পড়ার খচর তার নিজের পড়ার খরচ চালানো হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা।কিন্তু কখনো তার খালুজান ওয়ালীদ অভিযোগ করেন নি ‘হৃদিতা’ এই বাড়ির বোঝা।বরং চুপচাপ সব কিছু নির্বাকে সামলে গেছেন।আসতে আসতে টিউশনি করে টাকা জমিয়ে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে গেছে।কিন্তু বর্তমান সময়টা এমন পরিস্থিতি দাড়িয়েছে পড়াশোনা এই জীবনে তার বৃথা গেছে।আর মাত্র দুইদিন পর পরিক্ষা। এখন তাকে পুরো দমে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বর্তমানে সে দেখছে বিয়ে উপলক্ষে সবার তোড়জোড় ব্যস্ততা।এই আগামী কাল এই রাতেই হয়তো অন্য কারো হয়ে যাবে সে।বিছানার উপর থাকা মোবাইলটা হাতে টেনে নিয়ে সময় দেখে নিলো।রাত নয়টা বেজে সাত মিনিট।গতকাল এই সময়ে হয়তো বিয়ে হয়েও যাবে।

হুট করেই আরাফের কথা মনে পড়লো ছেলেটাতো বসে আছে তার অপেক্ষায়।পরিক্ষার প্রিপারেশন নেওয়া শেষ মূহুর্তে সব পড়া একবার দেখিয়ে দেওয়া কিন্তু এই মূহুর্তে সেই পরিস্থিতি নেই হৃদিতা।

অন্ধকার আচ্ছন্ন রুমটায় হঠাৎ করেই সোডিয়াম আলো জ্বালিয়ে দেয় কেউ।সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুচকে নেয় হৃদিতা।নেহাকে সামনে দেখেই দ্রুত চোখের পানি মুছে নেয়।
– আপু তুমি?কিছু বলবে?
– আমি আর কি বলবো হৃদিতা।আমার কিচ্ছু করার নেই।কত চেষ্টা করলাম তোর বিয়েটা ভাঙ্গার কিন্তু আর কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা।দাদী তো শেষ পর্যায়ে বলেই দিলো বাবাকে ত্যাজ্য করবেন। আর কোন কথা বাড়ানোর সাহস আমার হলোনা।
– আহ!বাদ দাওনা আপু যা হওয়ার হবে। আমি সম্পূর্ণ বিষয়টা এখন আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি।আল্লাহই আমাকে পথ দেখাবেন।

দুজনের মাঝে তৈরি হয় আবার পিনপিনে নিরবতা।অন্ধকার আচ্ছন বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে হৃদিতা চুপ হয়ে যায়।তখনি নেহার ফোনে আরাফের কল আসে।নেহা মোবাইল হাতে নিয়েই অন্য রুমে চলে যায়।
– হ্যা আরাফ বল, কেম আছিস?
– ভালো!তুই?
আরাফের কন্ঠে বিষন্নতার ছোঁয়া।
– ভালো না রে। হৃদিতার জন্য মনটা বড্ড খারাপ লাগছে।মেয়েটার যে কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে আমার চোখের সামনে আমি সহ্য করতে পারছিনা।
নেহার উওরে আরাফ একটা ঢোক গিলে।নেহাকে ফোন করার আসল উদ্দেশ্যেটাই হৃদিতার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া।এইছাড়া আর কোন উপায়ন্ত নেই তার কাছে।
– আচ্ছা মেয়েটার কি পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হবে?
– হ্যা এই এছাড়া আর কি?কোন লোকতো চাইবে না তার ঘরের দুই সন্তান ফেলে রেখে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ভার্সিটি যাক।
– ওহ। আচ্ছা আমি এখন রাখছি।
আরাফ দ্রুত ফোন কেটে দেয়।কান্না গুলো তার দলা পাকিয়ে আসছে।নেহা যদি ঘুনাক্ষরে ও টের পায় তবে কেলেঙ্কারির হয়ে যাবে।
হাতে থাকা সিগারেটটায় আরেক বার টান দিয়ে পাশে শাকীলের দিকে তাকায়।
– সব শেষ রে, কাল কেই হৃদিতার বিয়ে।
– সব শেষ মানে?তুই চাইলে সব সম্ভব।নোমান ভাই কি করতে পারবে যদি তুই হৃদিতাকে বিয়ে করিস।যেখানে ভালোবাসা দৃঢ় যেখানে তৃতীয় ব্যাক্তির হস্তক্ষেপ ভিত্তিহীন।
– কিন্তু হৃদিতাকি আমায় ভালোবাসে?সে তো আমায় ভালোবাসে না আর কোন দিন বাসবেও না মনে হয়।
– ভালোবাসেনা মানে?ডাফারের মতো কথা বলিস না। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ এরেঞ্জ ম্যারেজ হচ্ছে তাদের কি এক জনের সাথে আরেকজনের মাসের পর মাস সম্পর্ক ছিল?অনেকের তো হুট করেই অপরিচিত সম্পূর্ণ অজানা মানু্ষের সাথে বিয়ে হয়। কই তাদের সংসার কি টিকছে না?দিব্য সুন্দর দিন পার করে দিচ্ছে তারা।ভালোবাসা আগে হয়নি পরে হবে।তাই এইসব লেইম এক্সকিউজ আমাকে একদম দেখাবি না। ওকে তুই তো ভীতু, না পেরেছিস ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসার কথা বলতে না পেরেছিস কাছে রাখতে। হৃদিতা ঠিকি বলে তুই একটা হাঁদা রাম। যা করার আমাদের করতে হবে।

শাকীল গড়গড় করে কথা গুলো বলেই কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। নাফিসাকে ফোন করে বেশ কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করে নেয়।কথা বলা শেষ হতেই আরাফের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলে,
– ওই এদিকে আয়। বাইক স্টাট দে।
– কোথায় যাবো আমরা?
-মিশন আছে। মিশনে যাবো।
শাকীলের সহজ উওর তার কাছে এখন আরাফের প্রশ্নের উওর দেওয়া যেন বিরক্তির কারন।
– মিশন!কিসের মিশন?
– “মিশন হৃদিতা” সো লেটস গো!

লাল শাড়িতে আয়নায় নিজেকে দেখছে হৃদিতা। সাজসজ্জা হীন একদম সাধারণ একটি মেয়ে আজ বউ সেজেছে।মাথায় টিকলি চোখে কাজল, গাঢ় টকটকে লাল লিপস্টিকে তার মনে হচ্ছে, প্রকৃতি সৌন্দর্য্য তার ঢেকে দিয়ে সম্পূর্ণ কৃত্রিম সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়েছে।একা রুমে সুফিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে নড়ে চড়ে বসে হৃদিতা।
সুফিয়া হৃদিতার পাশে বসে, গম্ভীর কন্ঠে বলে,
– শোন মেয়ে পরের বাড়িতে যাচ্ছো, এই বাড়ি থেকে আদব কায়দা যা শেখানো হয়েছে তাই প্রয়োগ করবে।মনে রাখবে পরিবারের মানসম্মান এখন তোমার হাতে।যা করেছি, তোমার ভালোর জন্যই করেছি আশা করি বুঝতে পারছো।

হৃদিতা নির্বাক ভঙ্গিতে চোখ নামিয়ে বসে আছে।এই মূহুর্তে তাকে যেন পাথরের মতো লাগছে। সুফিয়া তার বলা কথা গুলো শেষ করেই চলে যায়।তখনি হৃদিতার রুমে ডুকে এক জোড়া পা। সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়া পা টি দেখেই চোখ খিচে নেয় হৃদিতা।সে ভেবে নিয়েছে হয়তো ওই লোকটাই এসেছে যার সাথে আজ তার বিয়ে।কয়েক মিনিট নিরবতা দেখে আগের মতো চোখ খুলে সে।পা জোড়া এখনো স্থির সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।পা থেকে ধীরে ধীরে উপরে তাকাতেই তড়িৎগতিতে ঝলকানি খায় সে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে উচ্চারণ করে,
– আ– রা—ফ!
আরাফ আরো কয়েক কদম এগিয়ে আসে হৃদিতার দিকে।ধপধপে সাদা পাঞ্জাবি। হাতের স্লিভটা গোটানো, মাথার চুল গুলো ঠিক ঠাক ভাবে আছড়ানো।আজকের আরাফের সাথে ভার্সিটির আরাফের বেশভূষা এককথায় কোন মিল যেন নেই।আগের এলো মেলো আরাফকে বার বার ঘুছিয়ে দিতে ইচ্ছে হতো হৃদিতার। এলোমেলো চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দেওয়ার আকিঞ্চন জাগতো মনে। কিন্তু আজকের আরাফ সম্পূর্ণ পরিপাটি সুদর্শন যুবক।

– আরাফ তুই এখানে?
হৃদিতার কথায় সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আরাফ ঠোঁট বাকিয়ে বলে,
– কিরে বিয়ে করছিস?অথচ আমি জানি না স্টেঞ্জ!
হৃদিতা মাথা নিচু করে নেয়। তখনি আরাফ তার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে নেয়।আরাফের কান্ডে অবাক চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে সে।হুট করেই একটানে হৃদিতার নাকে থাকা নোজপিনটি খুলে নেয় আরাফ।আচমকা ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে হৃদিতা।
– আহ! আরাফ কি করছিস লাগছে আমার।
– লাগুক এই নোজপিনটা নিশ্চই ওই বাড়ি থেকে দেওয়া।
হৃদিতা চুপ করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। আরাফ তার দিকে সুক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে আছে।কিছুতেই হৃদিতার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে চায় না সে কিন্তু শাকীল আর নাফিসার শিখিয়ে দেওয়া কথা গুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে সে।হৃদিয়ার সামনে যদি নিজেকে দূর্বল সাজায় তবে মাথায় চওড়াই দিয়ে উঠবে এই মেয়ে।তাই কিছুটা উগ্রতা দিয়ে হৃদিতাকে থামিয়ে দেওয়ার পায়তারা করছে আরাফ।পকেট থেকে একটি নোজপিন বের করে হৃদিতার হাতে ধরিয়ে দেয়,
– এই নে এটাই লাগা।মুরব্বিরা বলে এটা স্বামীর চিহ্ন। তো লাগা এবার।
– তোর দেওয়া নোজপিন আমি লাগাবো কেন?
– লাগাতে বলেছি লাগা।বেশি কথা বললে সিনক্রিয়েট হয়ে যাবে এখানে।
হৃদিতা দ্রুত নোজপিন নাকে ঠেসে নেয়।আরাফ তার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকিয়ে বলে,
– শাড়িটা কার দেওয়া নাকি এটাও খুলতে হবে?
– এ..এটা খালুজান দিয়েছে।
– ওকে পারর্ফেক্ট।
– তুই এখানে কেন?
– আজব যার বিয়ে তাকে বলা হচ্ছে সে এখানে কেন?অদ্ভুত তো তুই!
– মানে কি, বিয়েটা আমার, অন্য একটা লোকের সাথে, সে এখনো এলোনা তুই কি যা তা বলছিস আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
– শুনে রাখ যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে না। বিয়েটা এখন আমার সাথেই হবে।

আরাফের কথায় দুই পা পিছিয়ে যায় হৃদিতা। দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে না করতে থাকে,
– না না আমি মানি না।কি হচ্ছে এইসব,হঠাৎ বর পাল্টে গেল কেন?খালুজান, খালামনি কোথায় নেহা আপু কোথায়?ত..তুই ছেলেটা ভালোনা অনেক মেয়ের সাথে প্রেমের নাটক করে আমার সাথে এখন বিয়ের নাটক করতে এসেছিস।তোকে আমার সেদিন সন্দেহ হয়েছিল যেদিন কফি শ….

হৃদিতাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে। তার হাত টেনে শক্ত করে বুকের সাথে ধরে মুখ চেপে ধরে আরাফ।
-খবরদার এইসব কথা বাইরে বের হলে থাপড়িয়ে কান লাল করে দেবো।ভুলেও এইসব কথা বের করবিনা।আরেকটা কথা নোমান ভাইকে তো তোর পছন্দ না তাইনা?নোমান ভাই আজ থেকে তোর ভাসুর!প্রধান অথিতি হিসেবে এসেছে।তোর একটা উলটা কথা বলার শাস্তি কিন্তু অনেক ভয়াবহ হতে পারে।মাইন্ড ইট!
আরাফ হৃদিতাকে ছেড়ে দেয়। সাদা পাঞ্জাবিতে বুকের পাশে হৃদিতার লিপস্টিকের হালকা দাগ লেগে যায় সেদিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসতে থাকে আরাফ।

গত কয়েকঘন্টা যাবৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে হৃদিতার।সবচেয়ে বড় কথা বিয়ের সময় সুফিয়া হৃদিতার পাশেই ছিল কোন মােড়লিপনা করেন নি তিনি।সুফিয়া বাদে বাড়ির সকলের চোখে মুখে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থা।তবে তার মাঝেও হাসির আবেস জড়িয়ে ছিল।বিয়ে থেকে শুরু করে কনে বিদায় পর্যন্ত হয়ে গেলো পুরো বিয়ে বাড়িতে ছেলে পক্ষের লোক ছিল নোমান আর আরাফ।হৃদিতা এখন দাঁড়িয়ে আছে এনায়েত বাড়ির চৌকাঠে।বুকের ভেতরটায় অশান্ত বাতাস বয়ে যাচ্ছে তার পাশেই আরাফ নিশ্চিন্তে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে।এনায়েত বাড়ির প্রত্যাক সদস্যরা দরজার সামনে ভীড় জমিয়েছে। সবার চোখে মুখে আগুনের ফুলকি।

– এইসব কি আরাফ?বর সেজে বউ নিয়ে এলে অথচ পরিবারের কাউকে একটি বার জানালেনা।বাবা মা কি তোমার কাছে পর হয়ে গেছে।
মায়মুনার কথা শুনে ভ্রু-যুগল কিঞ্চিৎ কুচকে দ্রুত ফোন পকেটে পুরে নেয়।
– কেন মা আমি কি বলেছি তোমরা পর হয়ে গেছো?হুট করেই বিয়েটা করেছি।তাছাড়া আমি তো একা করিনি নোমান ভাইও ছিল একটা কাজ থাকায় একটু পর আসবে নোমানভাই, তখন তোমাদের কাছে সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
আরাফের কথা শেষ হতেই জহির ধমক দিয়ে বলে,
– একটা মেয়েকে যে বিয়ে কর আনলে তাকে খাওয়াবে কি?পড়াবে কে?মেয়েদের যা খরচাপাতি আছে সেটা কি তোমার ধারনায় আছে?এত শত বিল পেমেন্ট করবে টা কে?
জহিরের কথা শেষ হতেই আরাফ হৃদিতার চোখে চোখ রাখে,
– কিরে তুই তো মনে হয় বেশি খাস না তাইনা?মোরগের মতো ঠুকিয়ে ঠুকিয়ে অল্প খাস।হাসের মতো খেলে অবশ্য আমকে বাবার বলা কথাটাই ভাবতে হতো।
আরাফের এমন কথায় বিষ্ফরিত চোখে তাকায় হৃদিতা।বিয়ে করে কি এই ছেলের ব্রেন ড্যামেজ হয়ে গেছে না কি? সব বলছে সে?
– লিসেন বাবা,জামা কাপড়ের কথা বলছো?আমার ঘরে আমার টি-শার্ট, টাউজারের স্তুপ পরে আছে তুমি তো জানো সেই সব হৃদিতাকে দিয়ে দেবো।আর পড়া শোনার টাকাটা হবে, আমার বউ যে এই বাড়িতে নতুন এলো তাকে তো তোমাদের হাত ভর্তি করে উপহার দিতে হবে।টাকা দাও আর গয়না দাও সব বেঁচে পড়ালেখা চালিয়ে যাবো।

আরাফের এমন ইমম্যাচিউর উওরে সবাই বেকুব বনে যায়।আরাফের জেঠিমা হুমায়রা মিটিমিটি হাসছে।আরাফের বাবা মুখটা কালো করে থমথমে মুখ নিয়ে আরাফের চোখে চোখ রাখে,
– তুমি যে কতটা ক্লাস লেস,বোকা, নির্বোধ,মূখ্য, গাধা স্বভাবের তা আজ প্রমান পেলাম। কোন বংশের এই মেয়ে নাকি কোন বংশ নেই?
– আরে বাবা চিনতে পাচ্ছো না এই মেয়ে হলো সেই মেয়ে কয়েকমাস আগে যার প্রশংসা করতে করতে তুমি আমায় ঝেরেছো।মনে নেই ক্লাস টপার হৃদীতা মেহেরীন।
– হোয়াট? এই মেয়ে কি এই বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য?এই মেয়ের কোন ক্লাস আছে। বেয়াদপ ছেলে আজকেই তুই এই মেয়েকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি তোর মুখ আমি আমার বাড়ির ত্রি-সীমায়ায় দেখতে চাইনা।
– আমার ফ্লাট আমায় ফেরত দাও, কথা দিচ্ছি ফিরে আসবো না আর।
– কখনো পাবিনা তুই ওই ফ্লাট।
জহির রাগে হিসহিস করতে করতে চলে যায়।মায়মুনা মুখে ওরনা গুজে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। সবাইকে জেতে দেখে এগিয়ে আসে আরাফের জেঠিমা হুমায়রা।কিন্তু বাধা দিলেন আরাফের ছোট চাচি তানিয়া।
– কি করছেন ভাবী আপনি?যেখানে মেঝো ভাবী তার ঘরের বউকে ঘরে তুলতে চায় নি সেখানে আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন কেন?
– দেখো তানিয়া বাড়ির মুরব্বি বর্তমানে আমি তাই আমার উপর কারো কথা বলার সাধ্য নেই।বিয়ে যখন করেছে তখন নতুন বউকে ঘরে তুলতেই হবে।যদি তোমার মন না চায় তবে চলে যাও এখান থেকে।
হুমায়রার কথায় গা না লাগিয়ে তানিয়া আরাফকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– কি মেয়ে বিয়ে করে এনেছিস?তোর সাথে যায় এই মেয়ে না ক্লাসে যায় না হাইটে যায়।কেমন লাগছে তোদের হাতি আর হরিন যেন জট বেধেছে।
কথাটি শেষ করেই তানিয়া হাসতে থাকে। দূর থেকে আইদা আর আদীব তার মায়ের দিকে বিরক্ত চোখ ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।
– চাচিম্মা, আমার বউয়ের হাইট নিয়ে খোটা দেওয়ার তুমি কে? হৃদিতা তো উচ্চতায় তোমার সমান, তাহলে হাইট নিয়ে ওকে কথা শোনাচ্ছো কেন?বরং আমায় নিয়ে হাসার কথা,বাড়ির বাকি সদস্যদের চাইতেও আমি অস্বাভাবিক লম্বা। বাড়ির ছেলের দোষ লুকিয়ে আরেকজনের মেয়ের ঘাড়ে দোষ চাপাও কেমন মেয়ে তুমি?বাই দা ওয়ে আমি না এই জীবনে এই বাড়ির কোন সদস্যর কথা কান দিয়েছি না পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করেছি।আমি জানি এই বাড়ির প্রতিটা সদস্য নিম্ন মানের বস্তাপঁচা ব্রেন নিয়ে ঘুরে।আজকে না হয় কথা গুলোর জবাব আমি দিয়ে দিলাম বাকি সময় যাকে বলা হয়েছে সে দেবে।

আরাফের কথা শুনে অপমানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না তানিয়া।দ্রুত তাদের সামনে থেকে সরে নিজের রুমে চলে যায়।অবশেষে হুমায়রা বরন করে ঘরে তোলে হৃদিতাকে।

এলোমেলো শাড়ি চুল নিয়ে, বিধস্ত অবস্থায় মেঝেতে বসে হাটু মুড়িয়ে মাথা নুইয়ে কাদঁছে হৃদিতা। একটু আগেই তাকে ঘরে ডুকতে দেখে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে জহির।কথার ফাঁকে ফাঁকে তার খালুজান ওয়ালীদকে নিয়েও বিভিন্ন কুৎসিত কথা রটান তিনি।আরাফ সবটা শুনছিল কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া করেনি।সেই মূহুর্তে হৃদিতার কলিজা কেউ যেন খুবলে খুবলে খাচ্ছে।নিজের হাজারটা অপমান সহ্য হলেও তার খালা,খালুজানের অপমান কিছুতেই সহ্য হয় না তার।বাবা মায়ের চাইতেও কোন অংশে কম নয় তারা হৃদিতার জীবনে।জহিরের বকবক যখন বেড়েই চলছিল, তখন হৃদিতার চোখ মুখের অস্বাভাবিক অবস্থা দেখে আরাফ আর হৃদিতাকে রুমে পাঠিয়ে দেয় মায়মুনা।তারপর আরাফের সাথে ঝগড়া শুরু হয় হৃদিতার। রাগের মাথায় আরাফকে ধাক্কা দিতে থাকে, বেশ কিছুক্ষন তর্কাতর্কি হয় তাদের মাঝে।নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আরাফ দ্রুত বেরিয়ে যায় রুম থেকে।রাগের মাথায় হৃদিতাকে এমন কোন আঘাত দিতে চায়না সে যার দরুন সারা জীবন কথাটার দাগ লেগে থাকবে।
আরাফ বেরিয়ে যাওয়ার পরেই নিজের উপর রাগ মেটায় হৃদিতা।হাতে থাকা চুড়ি গুলো খুলে দূরে ছুড়ে মারে। মাথার চুল গুলোর সব ক্লিপ ফুল খুলে ফেলে দেয়।একপর্যায়ে কাদঁতে কাদঁতে মেঝেতে বসে যায়।
আরাফ নিঃশব্দে এগিয়ে আসে হৃদিতার দিকে।তার হাতে “হৃদি”। এলোমেলো চুল মাথা নুইয়ে কাদঁতে থাকা মেয়েটিকে দেখে বড্ড মায়া লাগে তার। শাড়িটা এলোমেলো ভাবে ছুয়ে আছে তার শরীরর যার কারনে পেট পিট কিছুটা উন্মুক্ত। আরাফ দ্রুত তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।হৃদিতার পাশে বসে তাকে কয়েকবার ডাকতে থাকে। কিন্তু হৃদিতার কোন সারা শব্দ নেই। সে এখনো কাদঁছে।উপায়ন্তর না পেয়ে আরাফ হেচঁকা টেনে দাড়া করায় হৃদিতাকে।আচমকা হাতে টান পরতে নিজেকে সামলাতে পারেনি হৃদিতা। চোখ তুলে আরাফের দিকে তাকাতেই নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
– এই ছাড় আমাকে,আমাকে ধরার সাহস কোথায় পেলি তুই?
– হিসসসসস!
আরাফ দ্রুত হৃদিতার কানের পেছনে এলোমেলো চুল গুলো গুযে দেয়।চোখের নিচে লেপ্টে যাওয়া কাজন গুলো বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে দেয়।ঠোটেঁর কোনে লেগে থাকা লাল লিপস্টিকের উপর গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আরাফের দৃষ্টিতে হৃদিতা দূরে সরে আসতে নিলেই ঘোর কাটে আরাফের।
– যা ওয়াশরুমে জামা কাপড় আছে পাচঁ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসবি।পরসূ দিন এক্সাম আছে পড়া বাকি পড়তেব হবে।
– মানে কি? তোর কি ধারনা আমি মশকারা করছি তোর সাথে? এখন পড়তে এসেছিস তুই?
– না একদম না। বরং মশকারি তুই করছিস।তুই কি ভেবেছিলি আজকে রাতে তোকে আদর করবো। উহুহ!ভুল। পাচঁ মিনিট টাইম দিলাম দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আয় পড়তে বসবো।যেতে বলেছি যাবি,
যাবি মানে যাবি।
আরাফ ধাক্কা দিয়ে হৃদিতাকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়।
পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে ভারি শ্বাস ছেড়ে আরাফ,সে মনে মনে বলে,
– বেশি দিন তো নয় এই তো সেদিন আবারো দেখতে চেয়েছিলাম তোর লেপ্টানো চোখের কাজল আজ আবার নতুন করে নতুন রূপে তোকে পেলাম।ইসস সহযে যদি সব কিছু পাওয়া যেত তবে আমি আর বেপরোয়া হয়ে উঠতাম না।
#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here