শরতের বৃষ্টি পর্ব-১০

0
2530

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১০

রাগ মানুষের চরম শত্রু। রাগের সময় মানুষ কি করবে, না করবে সেই জ্ঞানটাকে হারিয়ে ফেলে। সাজ্জাদ রেগে আঁখিদের বাসার সামনে গেলো। নিজের রাগটাকে সংযত রেখে কলিংবেল দিলো। আমিনুর রহমান সোফায় বসে টিভিতে খবর দেখছিলো। কলিংবেলের আওয়াজ শুনে তিনি উঠে দরজা খুললেন। দরজার বাইরে সাজ্জাদকে দাড়ানো দেখলে। তাকে এখানে দেখবে এটা সাজ্জাদ আশা করেনি। তবুও মুচকি হেসে সালাম দিলো। আমিনুর রহমান এই সময়ে সাজ্জাদকে এখানে মোটেও আশা করেননি। তিনি সবার মতো সাজ্জাদ কে অতটা পছন্দ করেন না। তিনি মনে করেন ছেলে মানেই বাবা মার দায়িত্ব নিয়ে সংসারের হাল ধরবে। সাজ্জাদের মতো এমন বেকার ঘুরে বেড়াবে না। তবুও তিনি ভদ্রতার খাতিরে সাজ্জাদ সালেমের উওর দিয়ে বললো।

“বাইরে দাড়িয়ে আছো কেনো? ভিতরে এসো?”

“না না আংকেল ভিতরে যাব না।”

মুচকি হেসে কথাটা বলে সাজ্জাদ মনে মনে ভাবলো যা বলতে এসেছে তা বলবে কিভাবে? মিসেস রোকেয়া রহমান হলে সহজেই পটানো যেতো কিন্তু এনাকে? ওনি খুব গম্ভীর মানুষ এনাকে মিথ্যা বলা সহজ হবেনা। আমিনুর রহমান সাজ্জাদকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন।

“কিছু বলবে? কোনো দরকার আছে কি? নিঃসংকোচে বলতে পারো।”

সাজ্জাদ বলবে কি বলবেনা ভেবে বলবে বলেই ঠিক করলো। আমিনুর রহমানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।

“আংকেল! সাদিয়া আর আনিকা মিলে ছাঁদে নুডলস্ এর আয়োজন করেছে। ওরা চিলেকোঠায় মানে ছাঁদের যে রুমটা আছে ওখানেই রান্না করবে। সাদিয়া আঁখি কেও ছাঁদে যেতে বলেছে।”

আমিনুর রহমান কেনো জানি বিষয়টা বিশ্বাস করতে পারলেন না। সাজ্জাদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো।

“সাদিয়া তোমাকে ডাকতে পাঠিয়েছে কেনো? তুমিও কি ওদের সাথে পিকনিক খাবে? সাদিয়া তো যাওয়ার সময়েই আঁখি কে ডাকে যেতে পরতো?”

আমিনুর রহমানের কথা শুনে সাজ্জাদ হালকা ঢোক গিললো। ওর খুব রাগ হলো। প্রফেসর আর উকিলের জ্ঞান একটু বেশি হয়তো। এদের সাথে মিথ্যা বললেও বুঝে শুনে বলতে হয়। সাজ্জাদ মনে মনে রেগে বললো। “যেমন বাপ তেমন তার বেটি। দুজনেরই মাথা ভরা শুধু শয়তানি বুদ্ধি।” সাজ্জাদ কে চুপ থাকতে দেখে আমিনুর রহমানের সন্দেহ আরও গাঢ় হলো। তিনি সজাগ চোখে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে আবারও বললেন।

“কি হলো? চুপ করে আছো কেনো? সাদিয়া তো যাবার সময় ডেকে নিতে পারতো। নিলো না কেনো?”

সাজ্জাদ এবার খুবেই রেগে গেলো। কিন্তু তাও নিজের রাগকে সংযত করে জোর পূর্বক হেসে বললো।

“আমি ছাঁদে ফোন টিপতে ছিলাম। সাদিয়া গিয়েই বললো আঁখিকে ছাঁদে যেতে বলতে। আমি বলছি, তুই নিজেই তো আসার সময় বলতে পারতি। পরে ও বললো, ও নাকি অনেক জিনিস পত্র নিয়ে গেছে তাই বেল দিতে পারেনি। ওর হাত বোঝাই ছিলো। এখন নাকি আর নামতেও ইচ্ছে করছেনা ওর। আমি যেহেতু নিচে নামছি তাই আমাকেই বলতে বললো।”

কথাটা শুনে আমিনুর রহমান চুপ থাকলেন। তিনি কি ভাবছেন সেটাই বোঝার চেষ্টা করলো সাজ্জাদ। কিন্তু তার মুখ দেখে বোঝা গেলো না তিনি কি ভাবছেন। সাজ্জাদ তাকে আর ভাবতে না দিয়ে বললো।

“আংকেল আমি আসি। আপনি একটু কষ্ট করে আঁখিকে কথাটা বইলেন। নাহয় সাদিয়া আমার উপর রাগ করবে।”

কথাটা বলেই সাজ্জাদ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। ওকে নামতে দেখে আমিনুর রহমান দরজা আটকে দিলেন। তার দরজা আটকানোর শব্দ শুনে সাজ্জাদ থেমে গেলো। চুপি সারে কোনো শব্দ না করে আবার ছাদের দিকে উঠতে লাগলো। আমিনুর রহমান আঁখিকে ডাকলেন। আঁখি এতক্ষণ আতিকের সাথে ঝগড়া করে সবে একটু পড়তে বসেছিলো এর মধ্যেই ডাক পড়লো। ওর বাবার ডাক শুনে আঁখি একটু বিরক্ত হলো। এমনিতেই পড়তে বসতে মন চায়না। পড়ার সময় যদি ডাকাডাকি করে তখন তো আরও খারাপ লাগে। আঁখি বিরক্তি নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে ওর বাবার কাছে গেলো। দেখলো ওর বাবা সোফায় বসে মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে। আঁখি তার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বললো।

“আব্বু! ডাকছো কেনো?”

আঁখির কথা শুনে আমিনুর রহমান টিভি থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকালো। গম্ভীর মুখে বলে উঠলো।

“সাদিয়া আর আনিকা ছাদে নুডলসের পিকনিক করছে। ওরা খবর পাঠিয়েছে, তোমাকে এক্ষুনি তোমাকে যেতে বলেছে।”

কথাটা শুনে আঁখি এক আকাশ খুশি হলো। এখন ওর নাচ করতে ইচ্ছে করছে। হাসি মুখে ওর বাবাকে বললো।

“আচ্ছা আব্বু! আমি এখনি যাচ্ছি।”

কথাটা বলেই আঁখি নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো। তার আগেই আমিনুর রহমান বললেন।

“শোনো মা!”

কথাটা শুনে আঁখি পিছনে ঘুরে তাকালো। ওর বাবার কথা শুনেই বুঝেছে আজ ওকে কোনো জরুরি কথা বলতে ডেকেছে। আঁখি ওর বাবার সামনে এসে বললো।

“আব্বু বলো!”

“শোনো! বুঝে শুনে পা ফেলবে। কথা বলার সময় ভেবে চিন্তে বলবে। এমন কথা বলবে না, যার জন্য পরে পস্তাতে হয়। বাচালের মতো বেশি কথা বলবেনা। বাচাল ব্যক্তি রাতে কাঠখড়ি সংগ্রহের মতো। রাতে কাঠ খড়ি সংগ্রহ মানে বুঝো?”

আঁখি নাড়ালো। মানে ও বুঝে নি। আমিনুর রহমান আঁখিকে ইশারা করলেন সোফায় বসার জন্য। আঁখি ওর বাবার সামনের সোফায় বসে পড়লো। তিনি নড়েচড়ে বসে আবারও লাগলেন।

“রাতে অন্ধকার থাকে। তখন কাঠ কাটতে গেলে পোকামাকড় কামড় দিতে পারে, সাপে কাটতে পারে। তুমি মারাও যেতে পারো। বাঁচাল ব্যক্তিও তেমন। কথা বলতে বলতে এমন কথা বলে ফেলতে পারে যা দ্বারা তার অনেক ক্ষতি হতে পারে। শোনো মা! মুখের কথা কিন্তু বন্দুকের গুলির চেয়েও ধারালো। বন্দুকের গুলিও ফেরানো সম্ভব কিন্তু মুখের কথা ফেরানে যায়না। নিরব থাকা মানেই তোমার ঠকে যাওয়া নয়। সম্মান রক্ষাত্রে অনেক সময় নিরব থাকাও ভালো। আপন ভেবে কাউকে সব গোপন কথা বলে দিও না। শোনো! আপন মানুষেই পিছন থেকে ছুরি মারে৷ যারা তোমার গোপন বিষয়ে জানে না তারা কখনও তোমাকে আঘাত করতে পারবেনা। সবাইকে আপন ভাবলেই সবাই আপন হয়না। বড় হয়েছো যে কোনো বিষয়ে বুঝে সিদ্ধান্ত নিবে। রাগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না। রাগের সময় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে। তাই রাগের বশে সিদ্ধান্ত নিলেই অনেক সময় ভুল হওয়ার চান্সেই বেশি। রাগকে সংযত রাখার চেষ্টা করবে। যেনে রাখো রেগে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া।”

এতটুকু বলে থামলেন আমিনুর রহমান। আঁখি এতক্ষণ মন দিয়ে ওর বাবার কথা শুনলো। তিনি যা বললেন তার প্রতিটা কথাই সত্যি। আঁখি বুঝতে পারলো সবসময় রাগ করাটা ওর ঠিক হয়না। এখন থেকে সাজ্জাদের সাথে বুঝে কথা বলতে হবে। আমিনুর রহমান আঁখির দিকে তাকিয়ে বললেন।

“যা বললাম তা মনে থাকবে তো?”

আঁখি নিঃশব্দে মুচকি হাসলো। ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“আমি সবসময় তোমার কথা মেনে চলার চেষ্টা করবো। কথায় আছে বাবা মায়েই সন্তানের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। তোমাদের না দেখলে এটা কখনই বুঝতে পারতাম না।”

আমিনুর রহমান আঁখি কথা শুনে মুচকি হাসলেন। তার হাসিতে সামনের দুটো দাঁত হালকা দেখা গেলো। তিনি খুব বেশি হাসেন না গম্ভীর হয়ে থাকেন। তিনি হাসছেন মানে আঁখির কথায় অনেক খুশি হয়েছেন। আঁখি এটা দেখে খুবেই খুশি হলো। আমিনুর রহমান ওকে বললেন।

“এবার তুমি যেতে পারো। ওরা অনেকক্ষণ আগে তোমাকে ডেকেছে। সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়াটা ভালো গুনের মধ্যে একটি। তাড়াতাড়ি যাও!”

কথাটা শুনে আঁখি মুচকি হাসি দিয়ে উঠে ওর রুমে গেলো। একটু পরিপাটি হয়ে চুলগুলো বেধে নিলো। সিল্কের ওড়নাটা মাথায় দিয়ে রুমে থেকে বের হলো। ড্রইং রুমে ওর বাড়ার সামনে এসে বললো।

“আব্বু! আমি যাই!”

কথাটা বলেই আঁখি দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো। আমিনুর রহমান ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে টিভি দেখতে মন দিলেন। আঁখি খুব খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে ছাদের দিকে যেতে লাগলো। ও তো আর জানেনা ছাঁদে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে!

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

(পর্বটা ছোট হওয়ার জন্য সরি। কেমন লাগছে জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here