শরতের বৃষ্টি পর্ব-১১

0
2631

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১১

স্নিগ্ধ সন্ধ্যা। পশ্চিমাকাশে রুপোলী চাঁদ উকি দিয়েছে। পুরো আকাশ জলমল করছে তারা আর চাঁদের আলোয়। আকাশে পাখিদের দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরেছে। আল্লাহ অপরূপ সৌন্দর্য্য সাজিয়েছে এই পৃথিবী। মানুষকে দিয়েছে অনেক সুযোগ সুবিধা। ছাঁদে দাড়িয়ে আছে সাজ্জাদ। পুরো ছাঁদ অন্ধকার। পাশের বিল্ডিং গুলোতে আলো জ্বলছে। হালকা বাতাসে সাজ্জাদদের নয়নতারা ফুল গাছটা নড়ছে। চাঁদের আলোয় আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। গাছটা কদিন আগেও ছোট ছিলো। আজ বড় হয়ে ফুলে পরিপূর্ন হয়ে গিয়েছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে বদলে গেছে গাছটা। তেমনি ভাবে বদলে যায় মানুষের জীবন। সকালে পৃথিবীতে থাকলে বিকালে থাকবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। বাড়িগাড়ি সবেই থাকে শুধু মানুষটাই চলে যায়। সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। শুধু দুদিন আগে আর পরে। সাজ্জাদ ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে এসব ভাবছে। হঠাৎ করে সিঁড়ি দিয়ে কারও উঠার শব্দ পেলো। শব্দ পেয়েই সাজ্জাদ ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। ওর বুঝতে বাকি রইলো না কে আসছে। সাজ্জাদ তাড়াতাড়ি করে ছাদের দরজার পাশে লুকিয়ে পড়লো। আঁখি তাড়াহুড়ো করে ছাঁদে উঠলো। কিন্তু ছাঁদে উঠেই দেখলো পুরো ছাঁদ অন্ধকার। কারও আওয়াজ নেই পুরো ছাদ নিঃতব্দ। আঁখি হালকা ভয় পেলো। রাতে কখনও একা ছাঁদে উঠেনি ও। আনিকা আর সাদিয়াকে না দেখে ভাবলো ওরা হয়তো ওকে ভয় দেখাতে এমন করছে। আঁখি ভয়ে ভয়ে সামনে আগাতে আগাতে হালকা স্বরে ডাকলো।

“আনিকা? সাদিয়া? কই তোরা?”

আঁখি এদিক ওদিক তাকালো। কিন্তু ওদের দেখলো না। এবার একটু রেগে বললো।

“আনিকা এমন ফাজলামি ভালো লাগেনা। বের হ বলছি! নাহলে তোর পিঠে আমি ঢোল বাজাবো।”

এবারও ওদের কোনো শব্দ পেলো না। আঁখি এবার পুরো পুরো ভয় পেয়ে গেলো। ওখান থেকে ফিরে আসবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। এর মাঝেই ছাদের দরজার ছিটকানি লাগানোর আওয়াজ হলো। আঁখি খুব ভয় পেলো। ও ভুতে বিশ্বাস করে না৷ ও জানে এটা কোনো মানুষের কাজ। কিন্তু মানুষটা কেনো এমন করছে? ওর কাছে কি চায়? আঁখি ভয়ে পিছনেই ফিরছে না। সাজ্জাদ দরজা আটকে শব্দ করে হাসলো। হাসির শব্দ শুনে আঁখি বুঝলো ওটা কোনো ছেলেই। আঁখি ভয় লুকিয়ে পিছনে ঘুরে তাকালো। চাঁদের আবছা আলোয় দেখলো টাওজার আর টি-শার্ট পড়া একটি ছেলে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটির কাঠামো দেখে আঁখির বুঝতে একটুও সময় লাগলো না যে ওটা সাজ্জাদ। আঁখির ভয়টা এবার একটু কমে এলো। সাজ্জাদ বুকে হাত বেঁধে আড়াম করে দাড়ালো। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো।

“ও মাই গড! এত সাহসী মহীয়সী নারী মিস চক্ষু! এতটুকুতেই ভয় পেলে গেলো? সাহস কি শুধু আমার সাথে শয়তানি করার জন্যই? মিস চক্ষু যে এত ভীতু এটা কি জাতি জানে?”

সাজ্জাদের কথা শুনে আঁখি কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো। ও বুঝতে পারছেনা সাদিয়া আর আনিকা কোথায় গেলো? সাজ্জাদেই বা এখানে কি করছে? আঁখি চুপ করে এটা ওটা ভাবতে লাগলো। সাজ্জাদ আঁখি কে চুপ থাকতে দেখে সামনে আগাতে আগাতে বললো।

“কি হলো? ভয়ে কি জমে বরফ হয়ে গেলো নাকি?”

আঁখি ওকে আসতে দেখে একটু ভয় পেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে মনে মনে বললো। “বেটা কি বুঝে গেলো নাকি যে, আমি ওর বেলকনিতে কালি ছিটিয়েছে?” পরক্ষনেই নিজেকে গালি দিয়ে বললো। “ধূর আমিয়েই বোকা। বুঝবে কি করে আমিতো তার রুমে যাইয়েই নি।”
আঁখির ভাবনার মাঝেই সাজ্জাদ ওর কাছে এসে পড়লো। সাজ্জাদকে এত কাছে দেখে আঁখি ভয় পেয়ে গেলো। দু পা পিছিয়ে গিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো।

“আপনি? আপনি এখানে কি করছেন? সাদিয়া আর আনিকা কোথায়?”

আঁখির কথা শুনে সাজ্জাদ শব্দ করে হেসে দিলো। ওকে হাসতে দেখে আঁখি অবাক হলো। ওর হাসির কারন বুঝতে পারলোনা। বোকার মতো চেয়ে রইলো। আঁখিকে ভয় পেতে দেখে সাজ্জাদের ভালোই লাগছে। সাজ্জাদ আঁখি দিকে হালকা ঝুঁকে অভিনয় করে বললো।

“পিকনিক খেতে এসেছো? আহা রে বাচ্চাটা পিকনিক খেতে এসেছে! তুমি তো জানো না, তোমায় এখানে পিকনিক খেতে নয় মাইর খেতে ডাকা হয়েছে।”

সাজ্জাদের কথা শুনে আঁখি অবাক হলো। তার মানে সাদিয়া ওর বাবাকে মিথ্যা বলেছে? ভাইয়ের জন্য এমন মিথ্যা বললো? মনেহয় সাজ্জাদ ওকে এমন করতে বলেছিলো। আঁখির খুব রাগ হলো। রেগে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“আপনি আপনার ইচ্ছা পূরনের জন্য সাদিয়াকে ব্যবহার করেছেন? আপনি ওকে দিয়ে আব্বুর কাছে মিথ্যা বলিয়েছেন? বড় ভাই হয়ে মিথ্যা বলা শিখাচ্ছেন?”

সাজ্জাদ ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

“আহারে আমার সত্যবাদী রে! এত সত্য কোথা থেকে আসে? ভাব নেওয়া হচ্ছে না? আমার সাথে তো সারাদিন মিথ্যা বলে বেড়াও এর মাঝেই ভুলে গেছো?”

আঁখি থতমত খেয়ে গেলো। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে বললো।

“আমি কখনই মিথ্যা বলি না। তবে হ্যাঁ বিপদে পরলে মাঝে মাঝে বলি। বিপদে পড়লে মিথ্যা বলা জায়েজ আছে।”

” তাই বুঝি? কে বলেছে এই কথা?”

সাজ্জাদের কথার উওর দিলো না আঁখি। ওর সাথে থাকা মানেই বিরক্তকর কথা শোনা। আবার যে কোনো সময় ছোট খাটো সুনামি বয়ে যেতে পাড়ে। সবসময় বিপদের থেকে এড়িয়ে চলাই ভালো। তাই আঁখি সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বললো।

“আমি আপনার কথার উওর দিতে বাধ্য নই। সামনে থেকে সরুন আমি বাসায় যাবো!”

কথাটা শুনে সাজ্জাদের কোনো হেলদোল হলোনা। ও প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আঁখি ওকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলেই সাজ্জাদ ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো। সাজ্জাদ হঠাৎ সামনে দাড়াতে আঁখি চমকে থেমে গেলো। রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বললো

“কি হলো? সামনে দাড়িয়েছেন কেনো? সরুন!”

সাজ্জাদ ওর দিকে হালকা ঝুকে বললো।

“হিসাব না দিয়ে কোথায় যাচ্ছো? সাজ্জাদ নিশান্ত খান কখনও হিসাব বাকি রাখে না!”

সাজ্জাদের কথা শুনে ওর দিকে কপাল কুচকে তাকালো। কি বলে লোকটা? ও তো সাজ্জাদের থেকে ককনও ঊার নেয়নি। বাকি থাকলো আবার কিভাবে? ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে আঁখি জিজ্ঞাসা করলো।

“আপনি আমার কাছে কোনো টাকা পান? আমার তো মনে পড়ছে না। আমার মেমোরি যথেষ্ট ভালো। তাছাড়া আমার আব্বুর যথেষ্ট টাকা আছে। আমি কারও কাছ থেকে কখনও ধার নেই না।”

“সাট আপ! আমার বেলকনি নোংরা করার অধিকার তোমায় কে দিয়েছে।”

সাজ্জাদ রেগে কথাটা বললো। আঁখি হঠাৎ করেই কথাটা হালকা ঢোক গিললো। সাজ্জাদ ওকে কেনো বলছে? কিভাবে জানলো ও করেছে? আঁখি মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বললো।

“ঠিক করে কথা বলুন মি সাজগাজ! আমি আপনাদের বাসায় আজ যাইনি। আপনার রুমে যেতে আমার বয়েই গেছে।”

আঁখির কথা সাজ্জাদের কর্নপাত হলো না। ও জানে এই কাজ আঁখি ছাড়া কেউ করতে পারেনা। ওটা যে আঁখিই করেছে এটা সাজ্জাদের কাছে জলের মতো পরিস্কার। আঁখির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

“একদম মিথ্যা কথা বলবে না। একটু আগে তো বেশ ভাষন দিচ্ছিলে মিথ্যে কথা বলা ঠিক না। এখন মিথ্যা বলছো কিভাবে? বেয়াদ্দব মেয়ে কোথাকার।”

সাজ্জাদের রাগ দেখে আঁখি চুপসে গেলো। মুখ বাকিয়ে মনে মনে বললো। “আমি মিথ্যা কোথায় বললাম? আমি তো রুমে যাইনি। কিন্তু আমি করেছি এটা কিভাবে বুঝলো?”
সাজ্জাদ রেগে বললো।

“এই মেয়ে চুপ করে আছো কেনো? এখন গিয়ে আমার বেলকনি পরিস্কার করে আসবে!”

কথাটা শুনে আঁখি ঢোক গিললো। মনে মনে একটু ভয় পেলো। কিন্তু কিছুতেই হেরে যাওয়া যাবেনা। মনে সাহস যুগিয়ে রাগ নিয়ে বললো।

“আমি কেনো পরিস্কার করবো? না দেকে মিথ্যা অপবাদ দিবেন না মি. সাজগাজ! এগুলো ঠিক না..”

কথাটা পুরোপুরি শেষ করতে পারলো না আঁখি তার আগেই সাজ্জাদ রেগে ওর দু বাহু খামছে ধরলো। সাজ্জাদের রাগ দেখে আঁখি ভয় পেয়ে গেলো। করন আগে সাজ্জাদ ওর সাথে এমন ব্যাবহার করেনি। এর আগে কখনও ওকে স্পর্শ করেনি। আঁখি ভয়ার্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। সাজ্জাদের চোখ লাল হয়ে আছে। রাগে সাজ্জাদ কি করছে না করছে তা বুঝতে পারছে না। সাজ্জাদ রেগে আঁখির চোখের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

“একদম কথা বলবেনা! তুমি ছাড়া এটা কেউ করতে পারে না। আমি জানি ওটা তোমারি কাজ। এখন গিয়ে চুপচাপ আমার বেলকনি পরিস্কার করে আসবে। মুখ দিয়ে একটা শব্দ বের হলেও খবর আছে।”

সাজ্জাদের রাগ দেখে আঁখি অনেক ভয় পেয়ে গেছে। ভয়ের চোটে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে দিলো। সাজ্জাদ এবার ওকে ছেড়ে দিলো। ছেড়ে দিতেই সাজ্জাদের খেয়াল হলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে জিব দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে আঁখির থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। আঁখি মাথা নিচু করে চুপচাপ সামনে আগাতে লাগলো।

ইনশাআল্লাহ চলবে…….

(রি-চেইক করিনি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন প্লিজ। আর হ্যাঁ নাইছ নেক্সট না লিখে একটু গঠনমূলক মন্তব্য কইরেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here